সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
সপ্তাহবাদ আনোয়ারা রতনদিয়ায় রওয়ানা হইতে প্রস্তুত হইল। সে পতির ঋণশোধের জন্য যে সকল অলঙ্কার সয়ার হাতে দিয়াছিল, তাহা এবং নবাব স্ত্রীর নিকট বিক্রিত, পরে ঘটনাচক্রে জজকোর্ট হইতে ফেরতপ্রাপ্ত সেই নীলাম্বরী ও বেনারসী শাড়ী হামিদা সই-এর সম্মুখে উপস্থিত করিল। আনোয়ারা দেখিয়া কহিল, “সই, একি! এ সকল যে ঋণশোধের জন্য দেওয়া হইয়াছিল?” হামিদা স্মিতমুখে বিলোল কটাক্ষে কহিল, “আমি অতশত জানি না—তোমার সয়া কহিলেন, ‘মৃতসঞ্জীবনী বৈষ্ণবী ব্রতের সময় কোন উপঢৌকনাদি দিবার সুযোগ পাই নাই। এক্ষণে এই সকল বস্ত্রালঙ্কারগুলি উপায়নস্বরূপ তাঁহাকে দিয়া দাও।” আনোয়ারার মুখ লজ্জায় রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল। হামিদা নিজদিগের দেওয়া নূতন একখানি মূল্যবান শাড়ী সইকে পরিধান করিতে দিয়া, অলঙ্কারগুলি যা যেখানে সাজে নিজ হস্তে পরাইয়া দিল। অবশিষ্ট বস্ত্রালঙ্কার একটি বাক্সে পুরিয়া তাহার সঙ্গে দিল। আনোয়ারা খোকাকে ক্রোড়ে লইয়া তিনটি আকবরী মোহর তাহার হাতে দিল। অনন্তর সোহাগভরে তাহার মুখচুম্বন করিয়া পাল্কীতে উঠিল।
আনোয়ারা রতনদিয়ায় আসিবার এক সপ্তাহ পর, ডাকপিয়ন তাহার নামে একটি বাক্স পার্শ্বেল বিলি করিয়া খুলিল। দেখা গেল সুন্দর একটি মূল্যবান বাক্সের ভিতর সোনার জেল করা একটি কোরান শরীফ ও বিচিত্র কারুকার্যখচিত একখানি জায়নামাজ। প্রত্যেক পদার্থেরই গায়ে লেখা আছে—”প্রীতি উপহার”। নুরল এসলাম স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “পার্শ্বেলের পৃষ্ঠে তোমার নাম, জিনিসের গায়ে ‘প্রীতি উপহার’ ব্যাপারখানা কি?”
আনোয়ারা ক্ষীরোৎসবে সমাগত ভদ্রমহিলাগণকে নামাজ-রোজা সম্বন্ধে যেভাবে উপদেশ দিয়াছিল, তৎসমস্ত কথা স্বামীর নিকট খুলিয়া বলিল।
নুরল। চন্দ্রের সুধাময় কিরণে যেমন ভূবন আলোকিত হয়, তোমার গুণ ও মাহাত্ম্যে দেখিতেছি তেমনি নারীজাতির হৃদয় ধর্মালোকে আলোকিত হইতে চলিয়াছে।
আনো। চন্দ্রের হৃদয় অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিন্তু সূর্যকিরণ সংযোগে ঐ রূপ প্রভাময় হইয়া থাকে।
নুরল। তথাপি সুধাংশুর সুধামাখা জ্যোতি—বিরহসন্তাপনাশিনী ও প্রাণতোষিণী।
আনোয়ারা প্রেমকোপে স্বামী গা টিপিয়া দিল।