» » পরিণাম-পর্ব

বর্ণাকার

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ

বাদশা গোলাপজানের পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত পুত্র, নবীন যুবক, স্কুলে পড়ে। এ সকল পাঠক অবগত আছেন। সে রোজ রাত্রিতে প্রতিবাসী, সমবয়সী ও সমপাঠি দানেশদিগের বাড়িতে পড়িতে যাইত এবং রাত্রিতে সেইখানেই থাকিত। গতকল্য গিয়াছিল; কিন্তু অধিক রাত্রিতে দানেশদিগের বাড়িতে কুটুম্ব আসার শয়নস্থানের অভাবে তাহারা রাত্রিতেই বাদশাকে রাখিয়া গিয়াছিল।

বাদশা দানেশদিগের বাড়ি হইতে অত্র রাত্রিতে বাড়িতে আসিয়া মা বাপের বিরক্তির ভয়ে নিঃশব্দে বৈঠকখানায় নুরল এসলামের অপর পাশে শয়ন কারিয়াছিল।

ধাত্রী যাইয়া যখন নুরল এসলামের হত্যার আয়োজনের কথা আনোয়ারার নিকট বলিল, তখন আনোয়ারা প্রথমে ভীতচিত্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িল, শেষে ধাত্রীকোলে পুত্র রাখিয়া, অসীম সাহসে বাহির বাটীতে যাইয়া স্বামীকে নিঃশব্দে জাগরিত করিল এবং তাঁহাকে সঙ্গে করিয়া আতুর ঘরে লইয়া আসিল। বাদশা যে নুরল এসলামের পাশে যাইয়া শয়ন করিয়াছিল, তাহা নুরল এসলাম বা আনোয়ারা কেহই জানিতে পারে নাই। আনোয়ারা স্বামীকে সূতীকাগৃহে লইয়া আসিবার অব্যবহিত পরেই গোলাপজান স্বামীসহ বহির্বাটিীতে উপস্থিত হয়। যাহা হউক, অতঃপর থানায় সংবাদ দেওয়া হইল। দারোগা আসিলেন, নুরল এসলামের জবানবন্দীতে সমস্ত প্রকাশিত হইয়া পড়িল, অপ্রত্যাশিতরূপে পুত্র নিহত হওয়ায় গোলাপজান একেবারে অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। তাহার চিত্তের সমস্ত শক্তিও হিতাহিত জ্ঞান বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছিল। যন্ত্রচালিত পুতুলের ন্যায় সেও সমস্ত দোষই স্বীকার করিল। লাশসহ আসামীদ্বয়কে মহকুমায় চালান দেওয়া হইল।

তথা হইতে তাহারা দায়রায় সোপর্দ হইল। জর্জ সাহেব বিচারান্তে হত্যাকারীদ্বয়ের প্রতি যাবজ্জীবন দীপান্তর বাসের দণ্ডাজ্ঞা প্রদান করিলেন। নুরল এসলাম যথাসময়ে টাকা ও নবপ্রসূত স্ত্রীসহ নিজালয়ে আসিলেন।