তিনি এ প্রশ্নের জবাব দিলেন না। কারণ তিনি কোথায় যাচ্ছেন এ কথা রাজিয়া খাতুনকে তিনি জানাতে চাচ্ছেন না। এ ব্যাপারটা তিনি গোপনই রাখতে চান। তিনি তো আর জানেন না যে, সুলতান আইয়ুবীর এক মহিলা গোয়েন্দার সাথে কথা বলছেন তিনি!
‘ও কথা তুমি এখন জানতে চেয়ো না। আমি তোমাকে যে অনুরোধ করলাম তার কি করবে বলো?’
রাজিয়া খাতুন তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘আপনি যখনই বলবেন তখনই মীমাংসার জন্য আমি সুলতান আইয়ুবীর কাছে যাব। আমার বিশ্বাস, তিনি আমার আবেদন অগ্রাহ্য করবেন না।’
ইয়াজউদ্দিন মাথা নত করে রাজিয়া খাতুনের কামরা থেকে বেরিয়ে গেলেন। রাজিয়া খাতুনের নিজস্ব দাসী ভেতরে প্রবেশ করে বললো, ‘মোহতারাম আমীরকে খুব অস্থির ও বিন্ন মনে হলো। ব্যাপার কি আপনি কিছু জানেন?’
এই দাসীও রাজিয়া খাতুনের বিশ্বস্ত অনুচর ছিল। তাই সে এ ধরনের প্রশ্ন করার সাহস পেলো।
‘ঈমান ও সৎকর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে মানুষের এ অবস্থাই হয়।’ রাজিয়া খাতুন বললেন, ‘শাসক শ্রেণী যখন জাতি থেকে পৃথক হয়ে বাদশাহ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায় তখন তারা গাছের ছিন্ন শাখার মতই মূলের সাথে সংযোগ হারায়। তাদের ভাগ্যে তখন এমন বিপর্যয়ই দেখা দেয়।’
রাজিয়া খাতুন আরো বললেন, ‘খৃষ্টানরা আমার স্বামীকে তাদের গোলাম বানানোর জন্য মদ ও নারীর প্রতি লোভাতুর করে তুলেছিল। তার ধমনীতে এই মিষ্টি বিষ ঢুকিয়ে তারা তাকে অকেজো করে দিয়েছে।
নইলে তিনি ছিলেন যুদ্ধের মাঠের রাজা। তার তলোয়ার খৃষ্টানদের কচু কাটার মতই টুকরো টুকরো করে ফেলতো। কিন্তু তার সেই সাহস আজ ইতিহাস হয়ে গেছে। সে আজ নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য আমার মত এক নারীর কাছে সাহায্য চাচ্ছে।
ক্ষমতার নেশা এভাবেই মানুষকে পাল্টে দেয়। বাঘ হয়ে যায় ভেড়া। পরাজয়ই হয় তার ললাট লিখন। যখন কোন বাহিনীর সেনাপতি ক্ষমতার জন্য লোভাতুর হয়ে পড়ে তখন তার বাহিনীও দ্বীন ও ধর্ম থেকে অনেক দূরে সরে যায়। আর সেই সুযোগে তাদের কাঁধে চেপে বসে শত্রুপক্ষ।’
সেই যুবতী পরিচারিকা রাজিয়া খাতুনের কামরা থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়ির দিকে না গিয়ে ফাহাদ যেখানে থাকে সে দিকে হাঁটা ধরলো। সে ফাহাদকে বলতে চাচ্ছিল, ‘ইয়াজউদ্দিন আরমেনিয়ার শাহের সাথে সাক্ষাত করার জন্য অচিরেই হারজাম রওনা হচ্ছে। এ খবর জলদি সুলতান আইয়ুবীকে পৌঁছে দিন।’
কিন্তু ফাহাদ যেখানে থাকে সেখানে গিয়ে দেখতে পেলো তার কামরায় তালা মারা। ফাহাদ সেখানে নেই।
ফাহাদ প্রকাশ্যে ছিল এক উটের রাখাল। সে তার উটে করে ব্যবসায়ীদের মালামাল বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিত।
তার উটগুলো যেখানে থাকে সেখানে ছুটে গেল পরিচারিকা। কিন্তু সেখানেও তাকে পাওয়া গেল না। সেখানে অন্য রাখালরা তাদের উট নিয়ে খদ্দেরের আশায় বসেছিল। তাদের একজনকে পরিচারিকা কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ফাহাদ কোথায়?’
সে জানালো, ‘ফাহাদ এক মুসাফিরের মাল নিয়ে অমুক জায়গায় পৌঁছে দিতে গেছে। জায়গাটির নাম শুনেই চিনলো পরিচারিকা। মুশেল শহরের ভেতরেই জনাকীর্ণ এক বাজারের ঠিকানা এটা। বাজারের পাশে বিশাল মাঠ। ওই মাঠে ব্যবসায়ীদের মালামাল নিয়ে যায় উট চালকরা। সেখান থেকে দোকানের কর্মচারীরা এসে নিয়ে যায় তাদের মালামাল। কখনো উট চালকরাও দোকানে মাল পৌঁছে দেয়।
পরিচারিকার বিশ্রামের কোন অবকাশ ছিল না। দায়িত্ব তাড়া করে ফিরছিল তাকে। সে ওই বাজারের দিকে হাঁটা দিল এবং এক সময় সেই মাঠে গিয়ে হাজির হলো।
সেখানে পৌঁছেই সে ফাহাদের উটটিকে দেখতে পেলো। উটের পিঠে তখনো বেশ কিছু মাল। সে ওখানে ফাহাদকে দেখতে পেলো না বরং দেখলো এক লোক উটের পাশে বসে আছে। সে লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ফাহাদ কোথায়?’
লোকটি বললো, ‘সে দোকানে মাল পৌঁছে দিতে গেছে।’
পরিচারিকা সেখানে অপেক্ষা করা ঠিক মনে করলো না, সে উটের কাছ থেকে সরে এলো। তার চোখ তখন চারদিকে ঘুরে ফিরছে। সেই চোখ বেকারার হয়ে খুঁজছে ফাহাদকে।
পরিচারিকা সেখান থেকে সরে গেলেও উটের দিকে একটি চোখ তার সার্বক্ষণিক লেপ্টে ছিল। একটু পর সে দেখতে পেলো ফাহাদ ফিরে এসেছে তার উটের কাছে।
সে বাকী মাল উট থেকে নামাতে লাগলো। লোকটি তখনও উটের পাশে বসা। পরিচারিকা সাবধানতার কারণে ওই লোকের সামনে আর যেতে সাহস পেলো না। সে অপেক্ষা করতে লাগলো।
তার ইচ্ছা, মাল পৌঁছে দেয়ার পর ফাহাদ যখন তার উট নিয়ে লোকটির কাছ থেকে সরে পড়বে তখন সে তার সাথে দেখা করবে।
উটের কাছে বসা লোকটি খেয়াল করলো, মেয়েটি ফাহাদকে খুঁজে না পেয়ে সরে গেলেও মাঠ থেকে বিদায় নেয়নি। সে এমনভাবে ঘোরাফেরা করছে যাতে সহজেই বুঝা যাচ্ছে, সে কাউকে খুঁজছে। কাকে খুঁজছে মেয়েটি? এই মেয়েকে আমি এর আগে কোথায় দেখেছি!
মেয়েটিকে ওই লোকের খুবই পরিচিত মনে হলো। হঠাৎ তার মনে খচ করে একটি প্রশ্ন বিদ্ধ হলো, মেয়েটি কোন গোয়েন্দা নয় তো? যদি তাই হয় তাহলে এ মেয়েটিকে অনুসরণ করলে তো একাধিক গোয়েন্দাকে পাকড়াও করার একটা মওকা পাওয়া যেতে পারে।
লোকটি পরিচারিকার ওপর নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিল। তখনই তার মনে পড়ে গেল, এ মেয়েকে সে মহলে দেখেছিল। লোকটি ইয়াজউদ্দিনের মহলে সম্প্রতি কাজ নিয়েছে। কিন্তু সে ইয়াজউদ্দিনের লোক ছিল না, সে ছিল খৃষ্টানদের গুপ্তচর।
সে মুশেলের মুসলিম পরিবারের সন্তান হলেও খৃস্টানদের সাথে তার ভাগ্য জুড়ে দিয়েছিল। খৃস্টানরা তাকে দুটো দায়িত্ব দিয়েছিল। তার প্রথম কাজ ছিল ইয়াজউদ্দিনের দিকে নজর রাখা, যেন তিনি কখনো সুলতান আইয়ুবীর দিকে ঝুঁকে না যান। ফলে কারা ইয়াজউদ্দিনের কাছে আসা-যাওয়া করে এটা জানা যেমন তার জন্য জরুরী ছিল তেমনি তিনি কখন কাদের সাথে কি আলোচনা করেন, তা জানাও তার দায়িত্ব ছিল।
তার দ্বিতীয় দায়িত্ব ছিল মহলে যারা কাজ করে তাদের দিকে নজর রাখা। বিশেষ করে তাদের কেউ সুলতান আইয়ুবীর অনুচর কিনা তা খতিয়ে দেখা। তার মনে পড়লো, ভোরে এ মেয়েকেই সে ডাক্তারের কাছে দেখেছে। মেয়েটি তখন ব্যথায় কান্ত্রাচ্ছিল। পরে তাকে ডাক্তারের কাছ থেকে অষুধ নিয়ে চলে যেতেও দেখেছে।
কিন্তু এই মেয়ে রাজিয়া খাতুনের সাথে দেখা করে এখন বিশেষ দায়িত্ব পালন করছে এ কথা তার জানা ছিল না। মেয়েটির এখনকার চলাফেরায় অসুস্থতার কোন ছিটেফোটাও নেই। এত অল্প সময়ে মেয়েটি সুস্থ হয়ে এখানে আসার কথা নয়। নিশ্চয়ই অসুস্থতা ছিল তার ভান, কোন বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য মহল থেকে বেরোনো দরকার ছিল বলেই তাকে এ অভিনয়টুকু করতে হয়েছে। ফলে এখন আর সন্দেহ নয়, সে নিশ্চিত মনে ধরে নিল, এ মেয়ে গোয়েন্দা।
মেয়েটির চোখ তখনো ফাহাদের চলে যাওয়া রাস্তার দিকে। একটু পর সে দেখতে পেলো ফাহাদ তার উটের দিকে ফিরে আসছে। সে আরো লক্ষ্য করলো, উটের পাশে বসা লোকটি তখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে সে আরো সাবধান হয়ে গেল।
সে ফাহাদের পথের পাশে চলে এলো এবং ফাহাদের পাশ ঘেষে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আলতো করে চোখ টিপে তাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে গেল। এতেই যা বুঝার বুঝে নিল ফাহাদ।
গোয়েন্দা তাদের দিকে তাকিয়েছিল কিন্তু সেদিকে তাকালো না পরিচারিকা। ফাহাদ তাড়াতাড়ি তার উটের কাছে গেল এবং উটের লাগাম ধরে মেয়েটি যে পথে এগিয়ে গেছে সেদিকে চলতে লাগলো।
অনেক লোকজনই সে পথে যাতায়াত করছিল। ফাহাদ মেয়েটির কাছে গেল। কিন্তু মেয়েটি থামলো না বা তাকে কিছু বললো না। সে আগের মতই নির্বিকারভাবে হাঁটতে লাগলো, যেন অন্যমনস্ক হয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
ফাহাদও মেয়েটির দিকে মনযোগ না দিয়ে একই পথে হেঁটে চললো। মেয়েটি তার দিকে না তাকিয়েই তাকে উদ্দেশ্য করে অনুচ্চ কণ্ঠে বললো, ‘মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোন। কিন্তু সাবধান, আমার দিকে তাকাবে না।’
ফাহাদ কান খাঁড়া করলো। পরিচারিকা অনুচ্চ কণ্ঠেই তার কথা শেষ করলো। কিছু দূর তারা পাশাপাশি হেঁটে গেল। মেয়েটি ফাহাদকে শুনিয়ে বললো, ‘যা বললাম তা সমাধা করে সেখানে চলে আসবে যেখানে আমরা সুযোগ পেলেই একসাথে একান্তে বসে কথা বলি। তবে এখনি নয়, কেননা এখন আমি জরুরী দায়িত্ব পালন করছি। এমন কিছু করা আমাদের উচিত নয় যাতে আমি আমার দায়িত্ব থেকে গাফিল হয়ে যাই।’
মেয়েটি তার দিকে না তাকিয়েই বললো, ‘তুমি নিশ্চয়ই জানো সুলতানের সেনাবাহিনী এখন কোথায়?’
‘হ্যাঁ, জানি।’ ফাহাদ উত্তর দিল, ‘আমি এখনিই যাত্রা করবো।’
‘আল্লাহ হাফেজ।’ মেয়েটি বললো।
‘ফি আমানিল্লাহ!’
মেয়েটি একদিকে ঘুরলো। সেদিকে একটা গলি ছিল। সে ঘুরতে গিয়ে দেখতে পেলো লোকটি তখনো তার পিছনে আসছে। তখনি তার মনে হলো, এ লোককে সে আগেও কোথাও দেখেছে। কোথায় দেখেছে সে কথা ভালমত স্মরণ করতে গিয়ে তার মনে পড়ে গেলো, এ লোককে সে মহলেই দেখেছে। লোকটি মহলেই চাকরী করে।
হঠাৎ করেই তার মনে ভীষণ ভয় ঢুকে গেলো। এ লোক কি তবে আমাকে অনুসরণ করছে। আমাকে কি সে সন্দেহ করেছে? আমি যে এক গোয়েন্দা সে পরিচয় কি তবে ফাঁস হয়ে গেল? প্রশ্নগুলো এক সাথে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লো তার চেতনায়।
সে লোকটির উদ্দেশ্য পরখ করার জন্য এক গলি থেকে আরেক গলিতে ঢুকে গেল। এভাবে সে দুতিনটি গলিতে মোড় ঘুরেও দেখতে পেলো লোকটি তার পিছু ছাড়েনি। আগের মতই লোকটি তার পিছনে লেগে আছে।
মেয়েটি লোকালয়ের বাইরে এক পার্কে চলে গেল। সে লোকও তার পিছনে পিছনে লোকালয় থেকে বাইরে চলে এলো।
মেয়েটি কিছু দূরে এক গাছের ছায়া ও ঝোপের পাশে বসে পড়লো। লোকটি এবার তাকে রেখে সামনে চলে যেতে বাধ্য হলো। মনে হয় লোকটি ভেবেছে, মেয়েটি কারো অপেক্ষায় সেখানে বসে আছে। মেয়েটি সেই লোকের চলে যাওয়া দেখলো বসে বসে। সে বহু দূরে চোখের আড়ালে চলে গেলে মেয়েটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
মেয়েটি ছিল যথেষ্ট সতর্ক ও সাবধান। সে শীঘ্রই ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে গেল এবং ঝোঁপের ভেতর দিয়ে বসে চুপি চুপি অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে একটি গলির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।
সে লোকও কিছু দূর গিয়েই এক গলিতে ঢুকে গেল এবং একটু পর অন্য রাস্তা ধরে ফিরে এলো সেখানে। লোকটির আশা ছিল, সে মেয়েটির পাশে কোন লোককে বসে থাকতে দেখবে। কিন্তু সে ঝোঁপের কাছে এসে দেখলো মেয়েটি সেখানে নেই। সে এদিক ওদিক তাকালো, কিন্তু মেয়েটির কোন চিহ্নই খুঁজে পেলো না আশেপাশে।
ততক্ষণে মেয়েটি তার বাড়ীর কাছে পৌঁছে গেছে।
সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী আরমেনিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। তাঁর মনে হচ্ছিল, তিনি তার জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি গ্রহণ করেছেন। খৃস্টানদের সম্মিলিত বাহিনী যে কোন সময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার উপর আক্রমণ চালাতে পারে। কিন্তু তিনি একা। শুধু একমাত্র আল্লাহ তাঁর সহায়।
মুসলমান আমীররা গোপনে তাঁর বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে। তারা নিজ নিজ রাজ্য ও গদি রক্ষার আশায় তাদের ঈমান খৃস্টানদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এর আগে গৃহযুদ্ধেও এরা লিপ্ত হয়েছিল খৃস্টানদের উস্কানি ও সহযোগিতায়।
এখন সুলতান আইয়ুবী শক্তি প্রয়োগে তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে সংকল্প নিয়ে বেরিয়েছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যেসব রাজ্য বাগদাদের খেলাফতের বশ্যতা স্বীকার করবে না এবং ফিলিস্তিন মুক্ত করার জন্য খলিফার অনুমতি নিয়ে আমি যে অভিযান চালাচ্ছি তাতে শরীক হবে না তাদের আমি স্বাধীনও থাকতে দেবো না।
এই ঘোষণা কার্যকরী করার জন্য তিনি ইতিমধ্যেই কয়েকটি কেল্লা অধিকার করে তার নিয়ন্ত্রণ ভার নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। সেসব কেল্লার অধিপতি ও আমীররা তার বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে।
এখন তিনি সেই শাসক ও আমীরদের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন যারা কিছুটা শক্তিধর। সুলতান আইয়ুবী খৃস্টানদের দিকে তাঁর মূল দৃষ্টি অক্ষুন্ন রেখেই এই অভিযানে বেরিয়েছেন। এতে তাঁর বীরত্ব ও কৌশল প্রকাশ পেলেও এই দ্বিমুখী শত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো যে কত বড় ঝুঁকি প্রতিটি পদে পদে তিনি তা টের পাচ্ছিলেন।
‘যদি তোমাদের ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য সৎ হয় তবে তোমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ সুলতান আইয়ুবী আল খালিদের দিকে অভিযানের সময় এক স্থানে ক্যাম্প করে সেখানে তার সেনাপতি ও কমাণ্ডারদের বললেন, ‘আমি জানি তোমরা কি চিন্তা করছো? যদি তোমাদের মধ্যে কেউ আমার এই সিদ্ধান্তে একমত হতে না পারো, যদি ভাবো খৃস্টানদের তরফ থেকে ঝুঁকি থাকার পরও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি ভুল করেছি, তাদের আমি বলবো, আমি সঠিক পথেই আছি এবং সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি।
আমি তাদের এ কথা বলবো না, তোমরা তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার এ আদেশ মেনে নাও এবং তোমরা যাকে ভুল সিদ্ধান্ত মনে করছে তা সফল করার জন্য শর্তহীনভাবে কাজ করো। আমি তাদের বলবো, তোমরা আগে আমার উদ্দেশ্যটা বুঝতে চেষ্টা করো। অন্তর থেকে সমস্ত ভয় ভ্রান্তি দূর করে এসো আমরা আমাদের মঞ্জিল ও লক্ষ্য বানিয়ে নেই জেরুজালেম তথা বায়তুল মুকাদ্দাস।
আমাদের প্রথম কেবলা পূনরুদ্ধারের জন্য আল্লাহ আমাদের এক কঠিন পরীক্ষায় নিক্ষেপ করেছেন। আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা বিশ্বাসঘাতক ও গাদ্দার হয়ে গেছে বলেই আজ আমাদের ঘরে-বাইরে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত হয়ে আমরা খৃস্টানদের দিকে এগিয়ে যেতে পারতাম।
তাতে বাস্তব অবস্থা এই হতো, যেখানে আমরা পৌঁছতে চাই তার দখল থাকতো আমাদের দুশমন খৃস্টানদের হাতে আর আমরা যে ঘরে ছিলাম তার মালিকানা হস্তগত করে বসে থাকতো খৃস্টানদেরই দোসর একদল গাদ্দার। আমরা হয়ে পড়তাম ঠিকানা বিহীন। মরুভূমি আর পাহাড় পর্বতই হতো আমাদের ঠিকানা।
তাই দুশমনের দিকে হাত বাড়াবার আগে আমি নিজের ঘরকে হেফাজত করতে চাই। যাদের বায়তুল মুকাদ্দাস প্রয়োজন নেই, যাদের প্রয়োজন শুধু গদি ও বাদশাহী তাদের হাত থেকে আমি রক্ষা করতে চাই এ জাতিকে। এ চাওয়া কোন অপরাধ হতে পারে না।
স্মরণ রেখো বন্ধুগণ! যদি আমরা এ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হই তবে যখন ইতিহাস লেখা হবে তখন তাতে লেখা হবে ‘অমুক’ যুগের সৈন্যবাহিনী অযোগ্য ও কাপুরুষ ছিল। পরাজয়ের গ্লানি সর্বদা সৈন্যদের নামেই লেখা হয়। তাই এই অপবাদ তোমাদের ঘাড়েই বর্তাবে।
শাসক শ্রেণী যদি কাফেরদের সাথে গোপন বা প্রকাশ্য বন্ধুত্ব গড়ে তোলে এবং তাদের সাথে জোটবদ্ধ থাকে, তবু ভবিষ্যত প্রজন্ম সেনাবহিনীকেই অভিশাপ দেবে। তারা বলবে, জাতির রক্ষক সেনাবাহিনী সেদিন কি চোখে ঠুলি পরে বসেছিল?’
তিনি উপস্থিত সেনা কমাণ্ডারদের লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি এবং একদিন তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন আমাদেরকে সে দায়িত্ব যথাযথ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করতে হবে। প্রয়োজনে সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন কোরবান করতে হবে।
ইসলামী খেলাফতের কেন্দ্র থেকে যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তাদের প্রতি আমার কোন দয়ামায়া নেই, থাকতে পারে না। যদি আমরা এখন পৃথক পৃথক রাজ্য গঠনকে অনুমোদন করি এবং এতেই সন্তুষ্ট হয়ে যাই, যদি শত্রুদের বন্ধুত্ব ও মিলনকে প্রতিরোধ না করি তবে একদিন এই মিলন ইসলামের ধ্বংস ও বিনাশের মূল কারণ হয়ে দেখা দেবে।
বন্ধুরা! তারপর আসবে সেই সময়, যখন পৃথিবীতে নামে মাত্র ইসলামী রাজ্য থাকবে, কিন্তু তার শাসন চলবে ব্যক্তির খেয়াল খুশী মতো। আল্লাহর কালাম নয় রাষ্ট্র চলবে শাসকের ইচ্ছামাফিক। আর এই শাসকরা আমোদ ফুর্তিতে মত্ত থাকবে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তারা বন্ধু বানাবে শক্তিধর শক্রকে। নিজের রাজ্যের সীমানা ঠিক রাখার জন্য তাদের ঈমানকে তারা নিলামে তুলে দেবে।
শক্রদের শক্তিধর রাজ্যের সরকারকে খুশী ও সন্তুষ্ট রাখার জন্য মুসলিম রাজ্যগুলো নিজেদের মধ্যে লড়াই করবে। কাফের ও খৃস্টানদের সাথে শত্রুতা নিঃশেষ হলেও নিজেদের মধ্যে শক্রতা অব্যাহত থাকবে যুগের পর যুগ। এ শত্রুতা কখনো নিঃশেষ হবে না। এভাবেই আমরা একে অপরকে দেউলিয়া বানিয়ে এবং নিজেরা দেউলিয়া হয়ে মনের আশা পূরণ করবো ইহুদী ও নাসারাদের।
তখন চামচিকা লাথি মারবে হাতির গায়ে আর সিংহ ইঁদুরের ভয়ে গর্তে লুকাবে। মুসলিম সরকার ও শাসক প্রজাদের কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়বে। রাজনীতিবিদ ও শাসকরা সম্মানহীন ও ঘৃণার পাত্রে গণ্য হবে।
তাই এই বিচ্ছিন্ন রাজ্যগুলোকে আজই এক পতাকার তলে শামিল করতে হবে আমাদের। এতে যে পরিমাণ ত্যাগ ও কোরবাণী দরকার হাসি মুখেই তা বরদাশত করার জন্য তোমরা কি প্রস্তুত আছো?’
কমাণ্ডাররা আবেগের সাথে সম্মিলিত কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘আমরা প্রস্তুত সুলতান!’
‘আমি এ কথা তোমাদের এ জন্যই বার বার বলছি, যাতে জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তোমাদের কারো মনেই কোন অস্পষ্টতা না থাকে। সুলতান আইয়ুবী বললেন, নিজের সংকল্পের কথা বার বার স্মরণ করতে হয়। তাতে কথাগুলো অন্তরে গেঁথে থাকে এবং এই স্মরণই তাকে বাঁচিয়ে রাখে যুগের পর যুগ।’
সুলতান বললেন, ‘এমন যেন না হয়, ইসলামী জাগরণের বিপক্ষে যার অবস্থান এবং যে আমাদের দুশমনের মিত্র তার সামনে তোমার তলোয়ার ঝুঁকে যায়। মনে রেখো, জাতির ঐক্য বিনষ্টকারী ভাই শত্রুর চেয়েও ভয়ংকর ও ক্ষতিকর।
তোমরা জানো, আমি আল খালিদ অবরোধ করতে যাচ্ছি। সামনেই আল খালিদ। তাই এখানেই আমাদের শেষ বিরতি ও শেষ ক্যাম্প। অবরোধের ব্যাপারে তোমাদের কার বাহিনী কোথায় থাকবে আগেই বলেছি।
রিজার্ভ বাহিনী আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কমাণ্ডো বাহিনী ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখবে। আমি আশংকা করছি, খৃষ্টান বাহিনী আরমেনিয়ার সৈন্যদের অবরোধ মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসতে পারে। কমাণ্ডো বাহিনী খৃস্টান সৈন্যদের আসার পথ বন্ধ করে রাখবে।
গোয়েন্দাদের রিপোর্ট অনুসারে খৃষ্টানদের আক্রমণের ভয় না থাকলেও এই সতর্কতা আমাদের অবলম্বন করতে হবে।’
তিনি আরো বললেন, ‘আমরা আর্মেনিয়ানদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চাই না। আমি শুধু আরমেনিয়ায় শাহের নিকট থেকে কিছু শর্ত আদায় করতে চাই। আমি খবর পেয়েছি, ইয়াজউদ্দিন শাহ আরমানের কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠিয়েছে। আমরা যদি আরমেনিয়ানদের ওপর চেপে বসতে পারি তবে শাহ আরমান ইয়াজউদ্দিনকে সাহায্য করতে সাহস পাবে না।
কিন্তু যদি এমন হয় যে, আরমেনিয়ার সৈন্যবাহিনী ও দেশের নাগরিকবৃন্দ সম্মিলিতভাবে আমাদের মোকাবেলা করে এবং কোন কারণে আমাদের পিছু হটতে হয় তখন ইয়াজউদ্দিনও আমাদের উপর আক্রমণ চালাতে পারে। শুধু তাই নয়, আমরা পিছু হটছি দেখলে হলবের আমীর ইমাদউদ্দিন তার পার্শ্ববর্তী ছোট ছোট আমীর ও কেল্লাদারদের সংগঠিত করে আমাদেরকে তাদের পদতলে পিষে মারার জন্য ছুটে আসবে।’
তিনি বললেন, এই ভয় ও পরিণতির কথা মনে রেখে আমাদের প্রাণপণে যুদ্ধ করতে হবে। আমি তোমাদের যুদ্ধের নকশা দেখিয়ে দিয়েছি। যদি কারও কোন সন্দেহ থাকে তবে সমাধান করে নাও। মনে রেখো, এই অবরোধ ও যুদ্ধ আমাদেরকে কঠিন বিপদে ফেলতে পারে, আবার এই যুদ্ধ আমাদের অগ্রযাত্রার পথও খুলে দিতে পারে।’
তিনি এই ভাষণ দিচ্ছিলেন রাতের প্রথম প্রহরে। তিনি যখন তাঁর সেনাপতি ও কমাণ্ডারদেরকে যুদ্ধের নির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন তখন তার সামনে পড়েছিল যুদ্ধের নকশা।
এক প্রহরী তাঁবুর মধ্যে ঢুকে তার কানে কানে কিছু বললো। সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘জলদি তাকে ভেতরে পাঠিয়ে দাও।’
প্রহরী তাঁবুর পর্দা উঠিয়ে মাথা বের করে ইশারা করলো, ক্লান্ত ফাহাদ ঢুকলো তাঁবুর মধ্যে। সে মুশেল থেকে এ পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পথ চলেছে।
সীমাহীন পরিশ্রমে তার চেহারা ভেঙ্গে পড়েছিল। তার ঠোঁট শুকিয়ে গিয়েছিল, চোখ ঢুকে পড়েছিল গর্তের ভেতর।
গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হাসান বিন আবদুল্লাহ তাঁবুতে বসেছিলেন। ফাহাদকে দেখেই তিনি বলে উঠলেন, ‘মনে হচ্ছে তুমি বিশ্রাম ছাড়াই সফর করেছো?”
সুলতান আইয়ুবী ফাহাদকে বললেন, ‘একটু বসো, বিশ্রাম করো।’ তারপর তিনি প্রহরীর দিকে তাকিয়ে প্রহরীকে বললেন, ‘এর জন্য এখানেই খানা নিয়ে এসো।’
প্রহরী বেরিয়ে গেল। তিনি আবার ফাহাদের দিকে ফিরে বললেন, ‘আগে কিছু খেয়ে নাও, এরপর তোমার সাথে কথা বলবো।’
‘সংবাদ এমন জরুরী ছিল যে, বিশ্রামের কোন সুযোগ ছিল না।’ ফাহাদ তখনো জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছিল, ‘আমার ঘোড়াটিকে বোধ হয় বাঁচাতে পারবো না। আমি খাওয়ার আগেই আপনাকে সেই জরুরী সংবাদ শোনাতে চাই।’
“ঠিক আছে, কি এমন জরুরী সংবাদ বলো?’
‘শাহ আরমান এখন তার রাজধানীতে নেই।’ ফাহাদ বললো, ‘তিনি এখন হারজাম নামক স্থানে তাঁবু করে আছেন। ইয়াজউদ্দিন তার সাথে সাক্ষাত করতে সেখানে যাচ্ছেন। জানা গেছে, সেখানে তারা আমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী গ্রহণ করবে।
কিভাবে আপনার অগ্রযাত্রা প্রতিহত করা যায় তার উপায় নির্ধারণের শলাপরামর্শ করার জন্য শাহ আরমান ইয়াজউদ্দিনকে হারজামে দাওয়াত করেছেন। শাহ আরমানের সাথে হারজামে দুই ডিভিশন সৈন্য আছে, আর ইয়াজউদ্দিনের সাথে থাকবে তিন ডিভিশন সৈন্য।’
‘এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা দুই গাদ্দারের মধুর মিলন।’ সুলতান আইয়ুবী হেসে বললেন, ‘এখন বলো মুশেলে খৃস্টানদের তৎপরতা কেমন চলছে।’
‘খৃষ্টানরা এখন অনেক নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।’ ফাহাদ উত্তর দিল, ‘তারা পাহাড়ের গুহায় যুদ্ধের যে সাজ সরঞ্জাম জমা করেছিল তা ধ্বংস করা হয়েছে এ সংবাদ আপনি আগেই পেয়েছেন। সেখানকার অধিবাসীদের মনে ভূয়া দরবেশ যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিল আমরা তার অনেকটাই দূর করে দিয়েছি।’
শাহ আরমান ও ইয়াজউদ্দিন হারজামে বৈঠকে বসছে এ খবর তুমি কেমন করে কার কাছ থেকে জানলে?’ সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘তার মানে আমি জানতে চাচ্ছি, এ সংবাদের সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা কতটুকু?’
‘মোহতারেমা রাজিয়া খাতুনের সংবাদ কখনও মিথ্যা হতে পারে না।’ ফাহাদ বললো, “এ খবর আপনার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন।’
আল্লাহ এই মহিয়সী মহিলাকে তার আপন করুণা ধারায় সিক্ত করে রাখুন। সুলতান আইয়ুবীর কণ্ঠ আবেগে ভারী হয়ে উঠলো।
‘আর রাজিয়া খাতুন আপনাকে সালাম জানিয়ে বলতে বলেছেন,’ ফাহাদ বললো, ‘ইয়াজউদ্দিনের পা যুদ্ধের আগেই ভেঙ্গে গেছে। তার উপর এখন ভয় ও আতংক চেপে বসে আছে। যদিও তিনি এক পায়ে কোন মতে দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু তার অবস্থা বড়ই নাজুক। এখন সামান্য আঘাতেই তিনি হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে যাবেন।’
‘মুশেলে কোন সামরিক তৎপরতা আছে?’ সুলতান আইয়ুবী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি?’
‘খৃষ্টান গোয়েন্দা ও উপদেষ্টাদের তৎপরতা আছে।’ ফাহাদ উত্তর দিল, ‘কোন যুদ্ধের আলামত চোখে পড়লো না। ইয়াজউদ্দিন খৃষ্টানদের কাছ থেকে কি ধরনের সাহায্য চাচ্ছে তা তো আপনি ভাল করেই জানেন।
খৃষ্টানদের মজুত অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তার সে আশার গুড়ে বালি পড়েছে। শহরে আমাদের কমাণ্ডোরা সফলতার সাথেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাজিয়া খাতুন ও তার মেয়ে শামসুন নেছার মাধ্যমে কেল্লা ও মহলের ভেতরের সব সংবাদ এবং গোপন তথ্যও আমরা ঠিক মতই পাচ্ছি।’
সুলতান আইয়ুবী ফাহাদের পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘সাবাস নওজোয়ান! তুমি যে সংবাদ এনেছে তা যে কত মূল্যবান তা আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না।’
তিনি সৈনিকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘আমাদের এ বন্ধু যে খবর নিয়ে এসেছে তাতে যুদ্ধের ছক আমাদের পাল্টাতে হবে। আরেকটু বিলম্বে এলে এ খবর পাওয়ার আগেই হয়তো আমরা আল খালিদ অবরোধ করে বসতাম। কিন্তু এখন যুদ্ধের এমন এক পরিকল্পনা আমার মাথায় এসেছে যাতে খুন খারাবীর সম্ভাবনা খুবই কম।’
তিনি সেনাপতিদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমাদের সৈন্যরা পরিকল্পনা অনুযায়ী আল খালিদের দিকেই এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমি তাদের সাথে আল খালিদ অবরোধ করতে যাবো না। আমি একটি শক্তিশালী কমাণ্ডো বাহিনী নিয়ে গোপনে হারজামের পথ ধরবো। আমাদের বন্ধুরা টের পাওয়ার আগেই আমি তাদের ওপর চড়াও হতে চাই।’