» » ভণ্ডপীর

বর্ণাকার
🕮

একই সারিতে বেশ কয়েকটি আস্তাবল ছিল। প্রথম অস্তাবলটি পুড়ে দ্বিতীয়টিতেও আগুন লেগে গেল। সৈন্যরা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল সেদিকে।

সুলতান আইয়ুবীর সৈন্যরা মেনজানিক দিয়ে পেট্রোলমাখা সলতের মুখে আগুন জ্বালিয়ে নিক্ষেপ করেছিল এই অগ্নিপিণ্ড। ফলে মাটিতে পড়েই আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রথমে দুটি অগ্নি তীর ছোঁড়া হয়েছিল পরীক্ষামূলকভাবে। ফলে সেগুলো মাটিতে পড়ার আগেই নিভে গিয়েছিল। সে জন্য কেল্লার সৈন্যরা বুঝতে পারেনি কি ঘটছে। কিন্তু কেল্লাতে আগুন লাগার পর ওরা বুঝতে পারে তারা যে কোন শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু কারা আক্রমণ করতে পারে? অনেক ভেবেও তারা এ প্রশ্নের সদুত্তর পেলো না।

কেল্লায় ততোক্ষণে কিয়ামত শুরু হয়ে গেছে। দূর্গের ভেতর এতোক্ষণ যে অন্ধকার দানা বেঁধে ছিল সেখানে আলোর নাচন শুরু হয়ে গেল। পাহারাদারদের হাক ডাক ও চিৎকারে জেগে উঠলো ঘুমন্ত সৈন্যরা।

কেল্লার অধিপতি শরাফুদ্দিনকে জাগানো হলো। তিনি জানালা দিয়ে তাকিয়েই দেখতে পেলেন আগুনের লেলিহান শিখা। অভাবিত ধ্বংসের তাণ্ডব দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বাইরে ছুটে এলেন।

শারফুদ্দিন ছিলেন সাহসী ও বীর সেনাপতি। কিন্তু সে রাতে খৃষ্টানদের পাঠানো মদ ও মেয়ে তাকে এমন অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল যে তিনি ঠিকমত পা উঠাতে পারছিলেন না। মরুভূমির কঙ্করময় পাহাড়ী এলাকায় ক্লান্তিহীন যুদ্ধের বীর সেনাপতি শারফুদ্দিন তখন এক অক্ষম ব্যক্তির মত পা টেনে টেনে ছুটছেন। তার মাথার চিন্তা তখনো এলোমেলো। তিনি কি নির্দেশ দেবেন যেন নিজেই জানেন না।

ডিউটিরত এক কমাণ্ডার পাঁচিলের ওপর থেকে দৌড়ে নেমে এসে তার মুখোমুখি হয়ে বললো, “দূর্গ আক্রান্ত হয়েছে। আমরা এখন অবরোধের মাঝে পড়ে আছি।’

‘কোন হতভাগা আমার ঐ দুর্ভেদ্য দূর্গ অবরোধ করেছে?’ শারফুদ্দিন বেশ তেজের সাথেই কথাটা বললেন।

‘সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী।’ কমাণ্ডার উত্তর দিল, ‘বাইরে থেকে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, কেল্লার দরজা খুলে দাও, নইলে সমস্ত দূর্গ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হবে।’

সুলতান আইয়ুবীর নাম শোনা মাত্র শারফুদ্দিনের নেশা কেটে গেল। এ অবস্থায় কি করবেন তিনি ভেবে পেলেন না। কতক্ষণ চুপ থেকে কমাণ্ডারকে বললেন, ‘দরজা খুলে দাও। আমি নিজেই বাইরে গিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাব।

কিছুক্ষণ পর। কেল্লার ফটক খুলে দেয়া হল। শারফুদ্দিন সামরিক পোশাক পরে বাইরে বেরিয়ে এলেন। তার সাথে মশালবাহী সেন্ট্রি।

সুলতান আইয়ুবী তার এক সেনাপতিকে বললেন, ‘যাও, এগিয়ে গিয়ে তাকে সসম্মানে এখানে নিয়ে এসো।’

শারফুদ্দিন নিজেই সুলতানের বাহিনীর দিকে এগুচ্ছিলো। আইয়ুবীর কমাণ্ডার এগিয়ে তাকে অভ্যর্থনা করলো।

সুলতান আইয়ুবী যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলেন। তিনি শারফুদ্দিনকে অভ্যর্থনার জন্য এক পাও সামনে অগ্রসর হলেন না।

শারফুদ্দিন সুলতান আইয়ুবীর কাছে এসে অশ্বপৃষ্ঠ থেকে নামলেন এবং পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে সুলতানের দিকে এগিয়ে গেলেন তাকে আলিঙ্গন করতে। সুলতান আইয়ুবী নিরাসক্ত মন নিয়ে আবেগহীনভাবে তার সাথে মুছাফেহা করলেন।

‘শারফুদ্দিন!’ সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘তোমার সৈন্য ও যুদ্ধাস্ত্র ছাড়া কেল্লাতে যা কিছু আছে তা নিয়ে যাও। সকালের সূর্য উঠার আগেই সব কিছু নিয়ে এখান থেকে সরে যাও তুমি, আর কোন দিন এদিকে আসবে না।’

তিনি তার এক সেনাপতিকে আদেশ দিলেন, ‘কিছু সৈন্য নিয়ে কেল্লার ভেতরে যাও। লক্ষ্য রাখবে, কেল্লা থেকে সৈন্য ও কোন অস্ত্রশস্ত্র যেন বাইরে না যায়। এ ছাড়া কেল্লায় রক্ষিত সোনাদানা ও মূল্যবান যা কিছু শারফুদ্দিন নিতে চায় নিতে দাও।’

তিনি তাকে আরো বললেন, ‘কেল্লায় কত সৈন্য আছে গণনা করো এবং তাদের মধ্যে যারা আমাদের সাথে শামিল হতে চায় তাদেরকে নিজের সৈন্যদের অন্তর্ভূক্ত করে নাও। আর যারা আমাদের সাথে অন্তর্ভুক্ত হতে চাইবে না তাদের আলাদা করে এক জায়গায় জড়ো করে। ওদের ব্যাপারে আমি পরে আমার ফায়সালা জানাচ্ছি।’

‘আমি আপনার গোলাম, সুলতান।’ শারফুদ্দিন বললেন, “কেল্লা ও সৈন্য আপনার থাকবে, আমাকেও আপনি আপনার বাহিনীতে শামিল করে নিন এবং আমাকে এ কেল্লায় আপনার এক অনুগত সৈন্য হিসাবে থাকার সুযোগ দিন।’

‘তোমার যদি কেল্লারই দরকার হতো তবে বাঁধা দিতে, যুদ্ধ করতে।’ সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘তোমার মত কাপুরুষ ও বেঈমানের এত বড় কেল্লার দায়িত্বে থাকা উচিত নয়।’

‘মাননীয় সুলতান! আমি কি আপনার সাথে মোকাবেলা করতে পারি?’ শারফুদ্দিন বললেন, ‘আমি যখন শুনলাম, আপনি এসেছেন, সঙ্গে সঙ্গে আমি বাইরে চলে এসেছি। মুসলমানের বিরুদ্ধে কিভাবে আমি অস্ত্র হাতে নেই।’

‘যেমন করে আগে হাতে নিয়েছিলে!’ সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘শারফুদ্দিন, আমার সাথে আর প্রতারণা করার চেষ্টা করো না। আমি জানি তুমি খৃষ্টানদের বন্ধু! শুধু নামে মুসলমান হলেই কেউ ইসলামের বন্ধু হয় না। স্বার্থের টানে যারা আপন ধর্ম ও জাতির বুকে ছুরি চালাতে পারে তুমি তো তাদেরই একজন।

তোমার চোখে এখন খৃস্টানদের দেয়া রঙিন চশমা। তাই নিজের চেহারা তুমি দেখতে পাচ্ছো না। তুমি ছিলে এ জাতির এক বীর সেনানী। কিন্তু ঈমান বিক্রি করে যেদিন তুমি বিলাসিতা ও আমোদ ফুর্তি কিনে নিয়েছে সেদিন থেকেই তুমি আমড়া কাঠের ঢেকিতে পরিণত হয়েছো। মদ ও নারী তোমার মধ্যের সব শক্তি শুষে নিয়েছে। লড়াই করার হিম্মত এখন তুমি কোথায় পাবে?

তুমি মিথ্যা বলছে, লড়াই করার সাহস নেই বলেই তুমি এখন কাপুরুষের মত হাতিয়ার সমর্পন করেছে। যদি তোমার মধ্যে সামান্য ব্যক্তিত্ব ও লজ্জাবোধ থাকতো তবে বিনা যুদ্ধে তুমি আমার হাতে এ কেল্লা তুলে দিতে না।’

‘মহামান্য সুলতান!’ শারফুদ্দিন বিগলিত কণ্ঠে অনুনয় করে বললো, ‘আমি কেল্লার কর্তৃত্ব চাই না, আমাকে শুধু দয়া করে এ কেল্লায় থাকতে দিন।’

সুলতান আইয়ুবী তাঁর এক সেনাপতিকে বললেন, ‘একে কেল্লার মধ্যে নিয়ে যাও এবং বন্দী করে রাখো। এতেই তার আশা পূরণ হবে।’

তিন চারজন সৈন্য এগিয়ে গেল শারফুদ্দিনের দিকে। শারফুদ্দিন বন্দী হওয়ার কথা শুনে সুলতান আইয়ুবী দিকে দু’কদম এগিয়ে করজোড়ে বললেন, ‘আমার ওপর রহম করুন সুলতান। আমাকে অন্তত মুশেল যাওয়ার অনুমতি দিন।’

‘হ্যাঁ, ইয়াজউদ্দিন তোমার বন্ধু!’ সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘সেখানে যাওয়াই তোমার জন্য মঙ্গলজনক হবে। যাও, আমি তোমার আবেদন মঞ্জুর করলাম, তুমি সেখানেই চলে যাও।’

সাঞ্জার দূর্গ সুলতান আইয়ুবীর পূর্ণ দখলে চলে এলো। তিনি তকিউদ্দিনকে কেল্লার অধিপতি করে তাকে কেল্লা বুঝে নেয়ার হুকুম দিলেন।

সাঞ্জার দূর্গের কাছেই আরো একটি কেল্লা ছিল। তিনি শেষ রাতের দিকে সে কেল্লা অবরোধ করার কথা মনে মনে চিন্তা করে রাতের অবশিষ্ট অংশ সাঞ্জার দুর্গেই কাটালেন।

রাত তখনো শেষ হয়নি। তখনো অন্ধকার লেপ্টে ছিল পৃথিবীর শরীরে। তিনি তকিউদ্দিনের বাহিনী বাদে অবশিষ্ট সৈন্যদের অভিযানে বেরিয়ে পড়ার হুকুম দিলেন।

সঙ্গে সঙ্গে অভিযানে বেরিয়ে পড়লো ক্লান্ত মুজাহিদরা। বিজয়ের আনন্দ তাদের সব ক্লান্তি মুছে দিয়েছিল। নতুন বিজয়ের পুলক শিহরণ তাদের জোগাচ্ছিল উদ্দাম প্রাণাবে।

এলাকাটার নাম আমিদা। এটা দজলা নদীর পারের এক প্রসিদ্ধ জনবসতি। এ জনবসতির সরদার মুসলমান হলেও পার্শবর্তী অন্যান্য আমীরদের মত সেও গোপনে খৃষ্টানদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। এই জনপদের নিরাপত্তার জন্যই সে ওখানে গড়ে তুলেছিল একটা দূর্গ।

সুলতান আইয়ুবী দূর্গটি অবরোধ করে নিলেন। দূর্গের সৈন্যরা মোকাবেলা করার চেষ্টা করলো। স্থানীয় জনগণও প্রবল বিক্রমে এগিয়ে গেল সৈন্যদের সাহায্যে। এটাকে তারা নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ মনে করলো। বাধ্য হয়ে সুলতানকে অবরোধ দীর্ঘ করতে হলো।

তিনি চাইলে প্রবল আক্রমণ করে সহজেই দূর্গটি দখল করে নিতে পারতেন। কিন্তু তাতে লোক ক্ষয় হতো। তিনি যথাসম্ভব কম রক্তক্ষয় করে জয়ী হতে চাচ্ছিলেন। তাই তিনি অবরোধ দীর্ঘায়িত করলেন।

অষ্টম দিনে সরদার অস্ত্র সমর্পন করতে বাধ্য হলেন। সুলতান আইয়ুবী সে এলাকা ও দুর্গের অধিপতি নিয়োগ করলেন কারার সুলতানের পুত্র নুরুদ্দিনকে।

রায়াদী চারজন খৃস্টান সেনার অধীনে পথ চলছিল। নিয়মিত অষুধ সেবনের ফলে তার জখম ভাল হয়ে গিয়েছিল। খৃষ্টানরা তার আরাম আয়েশের প্রতি যথেষ্ট যত্নবান ছিল। কিন্তু যে রাতে সে তার জীবন কাহিনী পাহারাদারদের কাছে খুলে বললো এবং তাদের কাছে তার উদ্দেশ্য ও সংকল্প স্পষ্ট করে ব্যক্ত করলো সে দিন থেকে তারা তাদের ব্যবহার পাল্টে ফেললো।

এখন তারা আর আগের মত তার সাথে খোলামেলা কথা বলে না। তারা তার দিকে বাঁকা চোখে তাকায়। রায়াদী বুঝতে পারে সে চোখের ভাষা। সেখানে খেলা করছে লোভ, মুগ্ধতা ও সন্দেহ।

রায়াদীও নিজেকে গুটিয়ে নিল। সেও তাদের সাথে খাতির জমানোর চিন্তা বাদ দিয়ে আপন মনে বিভোর হয়ে গেল। খৃষ্টান সৈন্যদের বলা সেই বাক্যগুলো বার বার তার কানে বাজতে লাগলো, ‘তোমাকে খোদাই তিরস্কৃত ও বহিস্কৃত করেছে। কোন সওয়াবের কাজ তো তুমি করোনি যে আল্লাহ তোমার সহায় হবেন।’

যখনই তার এ কথা মনে হতো তখনই তার অস্থিরতা বেড়ে যেতো। শারিরীক অবস্থা ভাল থাকলেও এই কারণে তার মনের আবেগ ছিল বড়ই উদ্বেগময়। তার মনে পড়ে যেতো তার স্বপ্নের রাজকুমারের কথা। যে লোক তাকে পবিত্র করার জন্য হজ্জে নিয়ে যাচ্ছিল। তার কথা স্মরণ হলেই অস্থিরতা পেয়ে বসতো রায়াদীকে। হায়, হেজাজের কাফেলা এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে আর সেই সাথে হারিয়ে গেছে তার স্বপ্নের রাজকুমার। যখন সে খুব অধীর হয়ে উঠতো তখন সে ভাবতো, আল্লাহ তার পাপের শাস্তিই তাকে দান করছেন। কিন্তু কি করে এ পাপের ক্ষমা পাওয়া যায় তা যে তার জানা নেই।

রায়াদীকে নিয়ে চার রক্ষী তাদের গন্তব্য স্থানের অনেক কাছে চলে এসেছে। তারা এখন মুশেলের এলাকা অতিক্রম করছে। এলাকাটা মুসলিম অধ্যুষিত হলেও তাদের মনে এ শান্তনা ছিল, মুশেলের শাসক ইয়াজউদ্দিন তাদের বন্ধু।

তারা মুশেলের এলাকায় প্রবেশ করার পর পরই তারা এক উটের আরোহীর সামনে পড়ে গেল। আরোহী তাদের দেখে তার উট থামালো। রক্ষীরা খেয়াল করে দেখলো, তার মাথা ও মুখ কালো পাগড়ীতে ঢাকা। শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে নেকাবের ফাঁক দিয়ে। লোকটির দৃষ্টি রায়াদীর উপর জমে আছে।

খৃস্টান সৈন্যরা সামরিক পোষাকে ছিল না, ফলে তাদের দেখে কারো পক্ষে বলা সম্ভব ছিল না যে এরা খৃষ্টান সৈন্য। তারা সাধারণ মুসাফিরের বেশে পথ চলছিল। চার পুরুষ ও এক নারীর ছোট্ট এক কাফেলা।

‘ওই উটের আরোহীর চোখের দৃষ্টি দেখেছো?’ এক খৃস্টান রক্ষী তার সাথীকে বললো।

‘খুব গভীরভাবে দেখেছি।’ সঙ্গের সৈনিকটি জবাব দিল, ‘আমি এই দৃষ্টি ভালভাবেই চিনি। এখন আমাদের খুব বেশী সাবধান হতে হবে। এই মেয়েটি এতই সুন্দরী যে, তাকে পাওয়ার জন্য যে কোন ডাকাত বড় রকমের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করবে না। এ চাহনি বলছে, আমরা মরু ঈগলের নজরে পড়ে গেছি।’

ওরা পথ চলছে। পথ চলছে সেই উটের আরোহীও। অভিন্ন পথে যাত্রা ওদের, তাই আরোহীকে তারা বলতে পারছিল না, ‘তুমি আমাদের অনুসরণ করছো কেন?’ কিন্তু তার চোখ ও চলার গতি বলছিল, এ লোক তাদের অনুসরণ করছে।

কখনো আরোহী তাদের কাছাকাছি হতো আবার কখনো পিছিয়ে পড়তো। এভাবেই তারা সারাদিন পথ চললো। সন্ধ্যার সময় তারা এক পাহাড়ী এলাকায় প্রবেশ করলো।

পাহাড়ী এলাকায় প্রবেশ করার পর পরই তারা সেই উটের আরোহীকে হারিয়ে ফেললো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো খৃস্টান রক্ষীরা। রাতে দুই পাহাড়ের মাঝখানে পছন্দ মত জায়গা দেখে তারা ঘোড়া থামালো এবং খানা পিনার ব্যবস্থা করলো। খাওয়া দাওয়া সেরে তার নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়লো।

নিয়ম মতো এক সিপাই পাহারায় থাকলে বাকীরা ঘুমিয়ে গেল। মাঝ রাতে সে যখন ঘুমাতে যাবে তখন অন্য সঙ্গীকে ডেকে তার হাতে তুলে দেবে পাহারার দায়িত্ব।

সঙ্গীরা ঘুমিয়ে আছে। ঘুমিয়ে গেছে রায়াদী। একা বসে বসে বাড়ীর কথা কল্পনা করছিল সিপাই এ সময় সে কিসের যেন শব্দ শুনতে পেল। মনে হলো কোন শিয়াল ছুটে যাচ্ছে বা পাথর গড়িয়ে পড়ছে। সিপাই সতর্ক হয়ে গেল।

সে কান খাঁড়া করে রইলো। আবারও শব্দ শোন গেল। সে সঙ্গী এক সিপাইকে জাগালো এবং তার কানে কানে বললো, ‘কিসের যেন শব্দ শুনতে পাচ্ছি।’

সঙ্গী উঠে বসলো। সেও শুনতে পেলো পাথর গড়িয়ে পড়ার আওয়াজ। দু’জনই সতর্ক হয়ে ধনুকে তীর জুড়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। দুইজন দুই দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল।

ঘন অন্ধকার ভরা রাত। পাহাড়ের খাঁজে অন্ধকার ছিল আরো গাঢ়। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এখন আর কোন শব্দও শোনা যাচ্ছে না।

রাতের নিস্তব্ধতার মাঝে হঠাৎ পাশেই কোথাও ছাগলের ডাকের মত ভ্যা ভ্যা শব্দ শোনা গেল। দুই সৈন্যই সচকিত হয়ে সেদিকে তাকালো।

অন্ধকারের মধ্যে এই সামান্য নড়াচড়া কারো নজরে পড়ার কথা নয়, কিন্তু দেখা গেল অকস্মাৎ দুটি তীর দু’জনের পার্শ্বদেশ ভেদ করেছে। তাদের অন্য সাথী দু’জন সারাদিনের ক্লান্তিতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

তারা দুজন তীর খেয়ে যখন চিৎকার দিয়ে উঠলো ঘুমন্ত সৈন্যরা জেগে উঠলো সে চিৎকারে। তারা হুড়মুড় করে উঠে বসল। এ সময় কারো পদধ্বনি শোনা গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি মশাল জ্বলে উঠলে। মুহূর্তে সাত আটজন লোক তাদের ঘিরে ফেললো ওদের মধ্যে একজনের মাথায় পাগড়ী বাঁধা এবং চেহারা নেকাবে ঢাকা। এ লোককেই ওরা দিনের বেলায় উটের পিঠে দেখেছিল। রায়াদীরও ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। সে গভীর দৃষ্টিতে দেখছিল ডাকাতদের।

রক্ষী দু’জনের একজন তলোয়ার টেনে নিতে যাচ্ছিল, কিন্তু যুদ্ধ করার সুযোগ সে পেল না। সাত আটটি বর্শা তার ও তার সাথীর দেহকে ঝাঁঝরা করে দিল।

রায়াদী দাঁড়িয়ে দেখছিল এ দৃশ্য। রক্ষীরা লুটিয়ে পড়লে সে ভয়ে কাঁপতে লাগলো। আক্রমণকারীরা এবার তার দিকে মশাল তুলে ধরলো। তার দেহ ভরা ছিল রূপের চমক। তার সাথে এসে মিশলো ভীতা বনহরিণীর ভয়ার্ত চাহনি। মশালের উজ্জ্বল আলোয় সে রূপের দিকে তাকিয়ে আগন্তুকদের মনে হলো তারা কোন রহস্যময় পরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এমন রূপ দুনিয়ার কোন মানুষের হতে পারে না।

কালো পাগড়ীওয়ালার ইঙ্গিতে তাদের সামনে হাজির করা হলো কয়েকটি ঘোড়া। পাগড়ীওয়ালা রায়াদীকে বললো, ‘ঘোড়ায় চড়ে বসো।’

সঙ্গে সঙ্গে হুকুম তামিল করলো রায়াদী। এবার পাগড়ীওয়ালা এবং অন্যান্যরাও ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসলো। পাগড়ীওয়াল রায়াদীকে বললো, ‘আমার পাশে পাশে চলো।’

তাদের ঘোড়া দু’টি পাশাপাশি চলতে লাগলো। বাকীরা পিছু নিল তাদের। লোকটি রায়াদীকে বললো, ‘তোমার সম্পর্কে কিছু কি বলবে আমাদের? তোমার পরিচয়, ঠিকানা?’

রায়াদী নিজের সম্পর্কে সমস্ত ঘটনা ওদের খুলে বললো। এখন আর ওর মনে কোন ভয়ভীতি নেই। তার মনে হলো, এরা শত্রু নয়, বন্ধু। আল্লাহ তার পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তাকে মুক্ত করার জন্যই এদের পাঠিয়েছেন। তাই কোন রকম রাখঢাক না করে সব কথাই সে ওদের বলে দিল।

রায়াদীকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হলো, সেটা কোন মহল বা বাড়ী নয় বরং একটি চারকোণা তাঁবু। তার অর্ধেকটা মাটির উপর ও বাকিটা গর্তের মধ্যে। ত্রিপলের তাঁবুর নিচে ফুলদার মোটা রেশমী কাপড়ের সামিয়ানা। ভেতরে কার্পেট বিছানো। তাঁবুর ভেতর একটি প্রশস্ত পালংক পাতা। মশালের আলোয় এটাকে ঠিক তাঁবু মনে হচ্ছিল না, মনে হচ্ছিল প্রমোদ মঞ্চ। পালংকের পাশে মদের সুরাহী রাখা। সেখানে তিন জন লোক বসে আছে।

রায়াদী শীঘ্রই জানতে পারলো, এরা খৃষ্টান। হঠাৎ যে আশা তার মনে জেগেছিল হঠাৎ করেই আবার তা নিভে গেল। সে মনে মনে বলতে লাগলো, না, আমার মুক্তির জন্য এদেরকে আল্লাহ পাঠাননি। এরাও ডাকাত। লোকের হাত বদল হলেও ভাগ্য তার ঠেকে আছে একই জায়গায়।

তাঁবুর বাসিন্দারা যখন রায়াদীকে দেখলো তখন তারা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেল। তারা অপলক চোখে তাকে দেখতে লাগলো। কালো মুখোশধারী তার পাগড়ী খুলে ফেললো। সঙ্গীদের দিকে গর্বের দৃষ্টি হেনে বললো, “এমন উপহার কি কোনদিন দেখেছো? এমন অপ্সরা সুন্দরী? জানো, এ মেয়ে নর্তকী।’

রায়াদী নিরবে দাঁড়িয়েছিল। তাঁবুর ভেতর মশালের উজ্জ্বল আলো। রেশমী কাপড়ের সামিয়ানার নিচে দাঁড়িয়ে ছিল রায়াদী। পায়ের নিচে মনোরম কার্পেট। আলোকিত তাঁবুর ভেতর দাঁড়ানো যুবতী রায়াদীকে সত্যি অপূর্ব সুন্দর ও যাদুময় দেখাচ্ছিল। তার চেহারায় কোন ভীতি বা শংকা ছিল না। বরং রাজহংসীর মতই দৃপ্ত পায়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে।

তাকে বলা হলো, ‘বসো।’

সে পালংকের ওপর বসলে তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তুমি কোথেকে আসছো?”

রায়াদী তার জীবন কাহিনী আরো একবার শোনালো।

তার জীবনের করুণ কাহিনী শুনে কেউ আকৃষ্ট হলো বলে মনে হলো না। কারণ সেখানে সহানুভূতি প্রকাশের মত কোন লোক ছিল না। তারা প্রশ্ন করলো, ‘তোমরা কোথায় যাচ্ছিলে?’

এ প্রশ্নের উত্তরে সে বললো, ‘আমাকে কোন এক খৃস্টান সম্রাটের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।’

‘কারা নিয়ে যাচ্ছিল? যারা তোমার সাথে ছিল তারা কি সৈনিক ছিল?’

‘হ্যাঁ, আমাদের মুসলিম কাফেলা লুট হওয়ার পর আমি জানতে পারি, তারা কোন সাধারণ ডাকাত ছিল না। তারা ছিল খৃস্টান সেনাবাহিনীর নিয়মিত ফৌজ। এবার তাঁবুর ভেতরের তিনজনই তাকালো তাকে ধরে আনা লোকটির দিকে। তারা তার চোখের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বললো, ‘তুমি কি তবে কোন খৃষ্টান সৈন্যকে হত্যা করেছো?’

ওই তিন জনেরই একজন ছিল ওদের কমাণ্ডার। সে লোকটির রাগ যেন তখন সপ্তমে। সে কঠিন চোখে যুবকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘এই মেয়েটিকে হস্তগত করার জন্য তোমরা কয়জনকে খুন করেছে?’

কালো মুখোশপরা যে লোক রায়াদীকে ধরে এনেছিল সে জবাব দিল, ‘ওদের দেখে খৃস্টান বলে মনে হচ্ছিল না, সৈন্য তো নয়ই।’

‘কিন্তু এ মেয়ে কি মিথ্যে বলছে? মিথ্যে বলে তার লাভ?’

যুবক আমতা আমতা করে বললো, ‘তোমরাই তো আমাকে বলেছিলে দুতিনটা মেয়ে জোগাড় করতে, যাতে এই বিরান পাহাড়ী এলাকায় নিরানন্দ সময়টা একটু আনন্দময় করা যায়। হঠাৎ এই মেয়েটি আমার চোখে পড়ে গেল। আমি তো ওদের চারজনকেই মুসলমান বলে সন্দেহ করেছিলাম। তাদের হত্যা না করে মেয়েটিকে হস্তগত করা সম্ভব ছিল না।’

‘তোমার সাথে আর কে ছিল?’

‘আমার দুই সঙ্গী আর মুশলের পাঁচজন মুসলমান ছিল যাদেরকে এখানে পাহারার কাজে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

‘যদি একথা প্রকাশ হয়ে যায় যে, তুমি সম্রাটের উপহার তার রক্ষীদের হত্যা করে ছিনিয়ে এনেছে, তার পরিণাম কি হবে জানো?’

লোকটি মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইলো। সহসা এক ব্যক্তি তাঁবুর মধ্যে প্রবেশ করে বললো, ‘এ গোপন কথা কোন দিন প্রকাশ হবে না। আপনারা ভয় পাচ্ছেন আমরা মুসলমানরা এ কথা প্রকাশ করে দেবো, কিন্তু আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এমনটি কখনও হবে না।’

‘এ লোক কে?’

‘ও আমার খুবই বিশ্বস্ত এক সঙ্গী।’ কালো পাগড়ীওয়ালা উত্তর দিল, ‘ও মুশেলের এক মশহুর আলেম এবং খুবই বিশ্বাসযোগ্য ও জ্ঞানী লোক।’

‘আমি আপনাদেরই লোক।’ লোকটি বললো, ‘মুশেল ও আশপাশের এলাকার যে সব গোপন তথ্য আপনাদের কাছে যায় সেগুলো আমার এবং আমার সঙ্গীদের সংগৃহীত।’

তাকে আরও কিছু কথা জিজ্ঞেস করা হলো। সে এমন ভঙ্গিতে সে সব কথার উত্তর দিল যে, সবাই তাকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবতে বাধ্য হলো! কেউ সামান্যতম সন্দেহও করলো না যে, এ লোক সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর এক সাংঘাতিক ও দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা হতে পারে, যার আসল নাম হাসান ইদরিস।

আল্লাহ তার চেহারায় ও শারিরীক গঠনে এক অদ্ভুত সরলতা দান করেছিলেন। তার মধ্যে এমন সম্মোহনী ক্ষমতা ছিল যে, কেউ দেখলে মোটেই তাকে উপেক্ষা করতে পারতো না। তার ভাষা ও কথা বলার ভঙ্গিতে ছিল যাদুকরী শক্তি। লোকজন মোহগ্রস্তের মত তার কথা শুনতো। সে ভাল অভিনয় করতে পারতো এবং নিজের কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে কথা বলায় পারদর্শী ছিল।

সে বুঝতে পেরেছিল, কথিত দরবেশের সাথে মুশেলের আমীর ইয়াজউদ্দিনের গভীর সম্পর্ক আছে। সে নিজেকে দরবেশের একজন ভক্ত হিসাবে জাহির করলো। মুশেলবাসীর মত সেও মেনে নিল, দরবেশের কাছে আসমান থেকে ইশারা আসে। তিনি আসমানী ইশারা পেয়ে যেদিন ইয়াজউদ্দিন ও তার সৈন্য বাহিনীকে অভিযানের হুকুম দেবেন সেদিন মুশেলবাসীর ভাগ্য খুলে যাবে। তারা যেদিকেই পা বাড়াবে সেদিক থেকেই বিজয় এসে তাদের পদচুম্বন করবে। আর এ সৈন্য বাহিনী একের পর এক বিজয় লাভ করে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে।

ইয়াজউদ্দিনের বিশ্বাস ও তৎপরতা সম্পর্কে তার স্ত্রী বেগম রাজিয়া খাতুন আইয়ুবীর গোয়েন্দাদের তথ্য সরবরাহ করে যাচ্ছিলেন। এই মহিয়ষী মহিলা এক সময় সুলতান নূরুদ্দিন জঙ্গীর বেগম ছিলেন এবং এখনো সুলতান আইয়ুবীর মতাদর্শে বিশ্বাসী। মহলের সংবাদ তিনিই আইয়ুবীর গোয়েন্দাদের জানাতেন। তিনি তার বিশ্বস্ত খাদেমা মারফত আগেই জানিয়েছিলেন, ইয়াজউদ্দিন খৃষ্টানদের জালে আটকা পড়ে গেছে। সে খৃস্টানদের ষড়যন্ত্রে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছে যে, স্বাধীনভাবে চিন্তা করার শক্তিও এখন তার আর নেই।

দরবেশ ইয়াজউদ্দিনের মহল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি খবর পাঠালেন, ‘এ লোক কোন দরবেশ নয়, খৃস্টানদের এক চর মাত্র। লোকটা মনে হয় পাগল, কারণ সে এমন সব কথা বলছে যা ইসলামী বিশ্বাসের পরিপন্থী। সে বলছে, সে আকাশ থেকে ইশারা পায়। এটা চরম ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়।’

রাজিয়া খাতুন গোয়েন্দাদের বললেন, ‘এ দরবেশের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। দরকার হলে তাকে হত্যা করতে হবে।’ রাজিয়া খাতুন সন্দেহ প্রকাশ করে বললেন, ‘খৃষ্টানরা পাহাড়ের মধ্যে কিছু একটা করছে। তোমরা খোঁজ নাও তারা সেখানে কি করছে? তারপর সে খবর দ্রুত সুলতান আইয়ুবীকে পৌঁছে দাও।’

হাসান ইদরিস কৌশলে দরবেশের রহস্যময় জগতে প্রবেশের সুযোগ করে নিল। কয়েকটি ঘটনায় সে যে খৃস্টানদের আস্থাভাজন তার প্রমাণ পেশ করায় সবার মধ্যেই এ বিশ্বাস দৃঢ় হলো যে, এ লোকের ওপর নিশ্চিন্তে আস্থা স্থাপন করা যায়। কিন্তু তারপরও তাকে পাহাড়ের মধ্যেই থাকতে হতো। পাহাড়ের বাইরে অন্য কোথাও যাওয়ার অনুমতি ছিল না তার। কারণ সেখানে এমন কিছু গোপন ব্যাপার স্যাপার ছিল যা নিজেদের মধ্যেও জানাজানি হোক তা চাইতো না দরবেশ।

মূল রহস্য লুকিয়েছিল দরবেশের তাঁবু থেকে দূরে পাহাড়ের আরো ভেতরে। সেখানে পাহাড়ের অনেকগুলো উঁচু উঁচু টিলা ছিল। সেই সব টিলার আড়ালে ছিল পাহাড় ঘেরা প্রান্তর।

হাসান ইদরিস দরবেশের সাথে দেখা করার সুযোগ খুঁজছিল। কিন্তু তেমন কোন সুযোগ সে পাচ্ছিল না। কারো কাছে নিজের অভিপ্রায় ব্যক্ত করবে তেমন অবস্থাও নেই। কাউকে এ কথা বললেই তাকে সন্দেহ করে বসবে। তাই সে চুপে চুপে সুযোগের অন্বেষায় ছিল। সে জানতো, সুযোগ এক সময় না এক সময় আসবেই। সে সুযোগ এনে দিল রায়াদী।

রায়াদীকে অপহরণ করার জন্য কালো মুখোশধারী যাদের বাছাই করেছিল হাসান ইদরিস ছিল তাদেরই একজন।

রায়াদী সেই নিম্নভূমির সামিয়ানার নিচে আরামপ্রিয় তিন খৃস্টানের বিলাসিতার সামগ্রীতে পরিণত হলো। এই তিন জনের যে সরদার সে রায়াদীকে বিনোদনের সামগ্রী ছাড়াও বেশ গুরুত্ব দিতে লাগলো তার আভিজাত্যপূর্ণ আচরণের জন্য। তাই সে চাইতো না এ মেয়ে অন্যের খেলার বস্তুতে পরিণত হোক।

রায়াদীর সৌন্দর্যের প্রভাব ও ব্যক্তিত্ব তাকে মোহিত করলো। তার মনে হলো, এ মেয়ে কেবল রাজ নর্তকীই নয়, সম্রাট বা অভিজাত শ্রেণীর কারো অন্তরঙ্গ সান্নিধ্যে জীবন কাটিয়েছে, যে কারণে তার মধ্যে জন্ম নিয়েছে এই ধরনের ব্যক্তি।