অষ্টম পরিচ্ছেদ
অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যভাগে নুরল এসলাম কোম্পানির কার্যে কলিকাতা গমন করিলেন। পরামর্শানুযায়ী বৈকালে আব্বাস ও খাদেম রতনদিয়ায় উপস্থিত হইল। ঘন ঘন বাড়ি আসায় সালেহার স্বামী-ভক্তি বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। খাদেম স্ত্রীর সাহায্যে নুরল এসলাম সাহেবের স্ত্রীকে দেখার সময় ঠিক করিয়া আব্বাস আলীর সহিত যথাসময়ে পূর্বকথিত বৈঠকখানা ঘরে প্রবেশ করিল। আব্বাস আলী নিঃশব্দে আড়ার উপর উঠিয়া বসিল। বাঞ্ছিতরত্ন নয়নগোচর হওয়ায়, আব্বাস সঘননিঃশ্বাসে কাঁপিতে লাগিল। খাদেম দেখিল আব্বাস পড়িয়া যায়; এ জন্য সে আব্বাসকে দেওয়ালের কাঠ চাপিয়া ধরিতে ইঙ্গিত করিল। আব্বাস তাহাই করিল। কিয়ৎক্ষণ পরে নামিয়া আসিয়া উভয়ে খাদেমের নূতন বৈঠকখানায় যাইয়া উপবেসন করিল। অতঃপর কথা আরম্ভ হইল।
খাদেম। কেমন দেখলে?
আব্বাস। বলিয়া বুঝাইতে পারিব না। তুমি কিরূপ দেখিয়াছিলে?
খাদেম। ভাবী উত্তরমুখে চৌকির উপর বসিয়া আছেন, তাঁর চুলগুলি কাঠের আলনায় রূপার দাঁড়ে করিয়া রৌদ্রে ছড়ান রহিয়াছে।
আব্বাস। আমিও প্রথমে সেইরূপ অবস্থায় দেখিলাম; শেষে তিনি চুলগুলি গোছাইয়া দক্ষিণমুখে বাগানের দিকে তাকাইলেন। তাঁর চুল প্রায় মৃত্তিকা স্পর্শ করিল। ওই সময়ে আমি তাঁহাকে দেখিয়া অবশ হইয়া কাঁপিতেছিলাম। তুমি কাঠ ধরিতে ইশারা না করিলে, আমি ধপ করিয়া মাটিতে পড়িয়া যাইতাম। ভাই খাদেম, তোমার সেইদিনের কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। বাস্তবিক স্ত্রীলোক যে এত সুন্দর আছে, জানি না! আরব্যোপন্যাসে অনেক সুন্দরী স্ত্রীলোকের অদ্ভুত কাহিনী পাঠ করিয়াছি, কিন্তু এমন রূপ, এমন চুলের কথা কোথাও পাই নাই।
খাদেম। নুরল এসলাম ভাইয়ের জীবন সার্থক, এমন রত্ন লাভ করিয়াছেন।
আব্বাস। খাই খাদেম, এ রত্ন যে স্পর্শ করে নাই, তার জীবন বৃথা।
খাদেম একটু দম ধরিয়া থাকিয়া কহিল, “হাজার টাকা ব্যয় করিলেও পারবে না।”
আব্বাস। পাঁচ হাজার!
খাদেম। ও কথাই বলিও না।
আব্বাস। ভাই কথায় বলে, টাকায় বাঘের চোখ মেলে। টাকায় কি না হয়?