হলব ও হারান থেকে প্রায় পঞ্চাশ মাইল দূরে খৃস্টানদের সামরিক হেড কোয়ার্টার। ওরা যুদ্ধ নয়, কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা তৎপরতাই চালাতো বেশী। হেড কোয়ার্টারের ইনচার্জ রাশভারী লোক হলেও কূটনৈতিক তৎপরতায় ছিল অসম্ভব দক্ষ। সুলতান আইয়ুবীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি যুদ্ধ করার পরিবর্তে তার মূল টার্গেট ছিল, মুসলিম বিদ্রোহী গ্রুপ ও বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদেরকে উস্কে দেয়া।
সুলতান আইয়ুবীর বিরুদ্ধে কিভাবে তাদের ঐক্যবদ্ধ ও সহযোগীতা করা যায়, বসে বসে সেই পরিকল্পনাই তৈরি করছিল সে।
সে হিসেব করে দেখলো, মুসলমান বড় বড় আমীর ও উর্ধতন সামরিক অফিসারদের একটা বড় গ্রুপকে এরই মধ্যে কব্জা করা গেছে। তাদের সহযোগিতার জন্য তাদের কাছে সামরিক উপদেষ্টাও পাঠানো হয়েছে।
কোথাও কোথাও তার পাঠানো সামরিক অফিসাররা ওখানকার মুসলিম সৈন্যদের সামরিক এবং গেরিলা ট্রেনিং দিচ্ছে।
মুসলমানদের ইসলামী চেতনা বিনষ্টের জন্য কয়েকজন খৃস্টান পন্ডিতকে ভূয়া আলেম সাজিয়ে মুসলিম এলাকায় ধর্মীয় ফেতনা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আমীরদের বিলাসিতা ও আমোদ-স্ফূর্তির সব রকমের উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে।
খৃস্টান গোয়েন্দারা বিভিন্ন আমীরের দরবারে নানা ভাবে জায়গা করে নিয়েছে। তাদের মাধ্যমে আমীরদের তৎপরতা এবং স্থানীয় জনগণের আবেগ উচ্ছাস সম্পর্কে প্রতিটি খবর খৃস্টান হেড কোয়ার্টারে পৌঁছে যাচ্ছে।
হারান থেকে গুমাস্তগীনের খৃস্টান উপদেষ্টার পাঠানো সংবাদ বাহক সেই সামরিক হেড কোয়ার্টারে গিয়ে পৌঁছলো।
সে যখন ওখানে পৌঁছে তখন খৃস্টানদের দুই প্রসিদ্ধ জেনারেল এবং শাসক সম্রাট রিমান্ড ও রিজন্যাল্ট সেখানে বৈঠক করছিল।
রিমান্ড সম্প্রতি সুলতান আইয়ুবীর বাহিনীর হাতে মার খেয়ে যুদ্ধ না করেই সুকৌশলে যুদ্ধের ময়দান থেকে সরে পড়েছিল। সেই অভিজ্ঞতাই বর্ণনা করছিলো সম্রাট রিজন্যাল্টের কাছে। সম্রাট রিজন্যাল্টের মনেও থেকে থেকে বেদনাদায়ক এক স্মৃতি বার বার ভেসে উঠছিল। মনে পড়ছিল সুলতান নূরুদ্দিন জঙ্গীর কথা।
সুলতান আইয়ুবীর কবল থেকে রিমান্ড তো ফিরে আসতে পেরেছে, কিন্তু নূরুদ্দিন জঙ্গী! জঙ্গী তো আমাকে যুদ্ধের ময়দানে থেকে আমার বাহিনীসহ ধরে নিয়ে তার কারাগারে বন্দী করে রেখেছিল!
আমাদের ভাগ্য ভাল যে, তিনি আমাদেরকে হারান দূর্গে রেখেছিলেন এবং হারান দূর্গের অধিপতি গুমাস্তগীনের উচ্চাভিলাষ তাকে গাদ্দার বানাতে পেরেছিল।
বাগদাদের খেলাফতের আওতায় সুলতান নূরুদ্দিন জঙ্গীর অধীনে এ দূর্গের অধিনায়ক ছিল গুমাস্তগীন। নূরুদ্দিন জঙ্গীর ওফাতের পর গুমাস্তগীন নিজেকে স্বাধীন শাসক বলে ঘোষনা করে।
নিজেকে শাসক হিসাবে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সে খৃস্টানদের বন্ধুত্ব কামনা করে এই বন্ধুত্ব ঘনিষ্ট করার আশায় সম্রাট রিজন্যাল্টেসহ সমস্ত খৃস্টান কয়েদীকে মুক্ত করে দেয়।
সুলতান নূরুদ্দীন জঙ্গীর ইচ্ছা ছিল, রিজন্যাল্টের মুক্তির বিনিময়ে খৃস্টানদের সাথে সমস্ত অমীমাংসিত বিষয়ে সন্তোষজনক ফায়সালা করে নেবেন। কিন্তু জঙ্গীর মৃত্যু সব কিছু বানচাল করে দিল। তার অধীনস্ত আমীররা বিলাসিতা ও ক্ষমতালোভী হয়ে উঠার কারণে জঙ্গীর সব পরিকল্পনা উলট-পালট হয়ে গেল।
খৃস্টানরা ইসলামী সাম্রাজের মৌলিক ভিত্তি চুরমার করে দিয়ে ক্ষমতালোভী আমীরদেরকে আঙুলের ইশারায় নাচাতে লাগলো। ইসলামী দুনিয়ায় নেমে এলো দুর্যোগের ঘনাঘটা। মুসলিম আমীরদের কাছে যেসব খৃস্টান উপদেষ্টা থাকতো তাদের মূল কাজ ছিল গোয়েন্দাগিরি করা। তারা মূলতঃ ক্রুসেড বাহিনীর ভিআইপি চর।
হারান থেকে সংবাদ বাহক খৃস্টান হেড কোয়ার্টারে গিয়ে পৌঁছলে সম্রাট রিমান্ড ও রিজন্যাল্ট তাকে ভিতরে ডেকে নিল। বললো, ‘বলো, কি খবর নিয়ে এসেছো?’
সে হারানের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করে বললো, ‘হলব থেকে আল-মালেকুস সালেহ গুমাস্তগীন ও সাইফুদ্দিনকে যে উপঢৌকন পাঠায় তার সাথে ছিল খলিফার গোপন চিঠি। সে চিঠির মূল বক্তব্য হলো, ‘তারা তাদের সেনাবাহিনীকে সম্মিলিত কমান্ডে এনে আইয়ুবীর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে চায়।’
‘খুবই খুশীর খবর! আইয়ুবী পরাজিত হলে তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করে মরুক আর ক্ষমতায় যাক, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’
‘কিন্তু সেখানে এক দূর্ঘটনা ঘটে গেছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, গুমাস্তগীনের দুই জাদরেল সেনাপতি এখন তারই কারাগারে বন্দী।’
‘স্ট্রেঞ্জ! কেন, কি অপরাধে তাদের বন্দী করা হয়েছে?’ অবাক হয়ে জানতে চাইলেন দুই সম্রাট।
‘সে এক অদ্ভুত ঘটনা। এ দুই সেনাপতি সহোদর দু’ভাই। খলিফার দরবার থেকে যখন উপহার সামগ্রী ও চিঠি হারানে এসে পৌঁছে তখন গুমাস্তগীন আরাম করছিলেন। উপহার সামগ্রীসহ দূত প্রধান সেনাপতি শামস বখতের কাছে রিপোর্ট করে। ওখানে তখন তার ছোট ভাই সেনাপতি সাদ বখতও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্য উপঢৌকনের সাথে দু’জন সদ্য যৌবনা যুবতীও পাঠিয়েছিলেন খলিফা আল মালেকুস সালেহ।
কাজী ইবনুল খাশিবের চরিত্র তো আপনাদের ভালই জানা আছে। তিনি ওখানে গিয়ে মেয়ে দুটিকে তার হাতে তুলে দেয়ার দাবী জানালে ওরা আপত্তি জানায়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে ওরা দু’ভাই মিলে কাজীকে হত্যা করে। তারপর মেয়ে দু’টিকে ওরা মুক্তি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেয়।
এ ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে তারা স্বীকার করে, তারা দু’জনই সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সমর্থক। গুমাস্তগীনের সেনাপতি হওয়ার পরও তাদের আনুগত্য ছিল আইয়ুবীর প্রতি।
এ দুই সেনাপতি সুদূর হিন্দুস্তান থেকে এসেছে। ইচ্ছে করলে ওরা পালিয়ে যেতে পারতো, কিন্তু কেন যে যায়নি, আমাদের কাছে সেটা এখনো এক রহস্য। গুমাস্তগীন দু’জনকেই কারাগারে আটকে রেখেছে।’
‘কি অবাক করা কথা বলছো তুমি! মনে হচ্ছে রূপকথার গল্প শোনাচ্ছো?’
‘না, না, এটা কোন গল্প নয় এবং ঘটনা এখানেই শেষও নয়! সেখানে আরো অবাক করা ঘটনা ঘটে গেছে। যেদিন এ ঘটনা ঘটে তার আগের রাত।
গুমাস্তগীনের মহলে জমজমাট আসর চলছিল। আসরে উপস্থিত ছিল গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সামরিক অফিসার ও আমাদের সকল উপদেষ্টা এবং কমান্ডাররা।
গুমাস্তগীনের মহলেরই এক মেয়ে সে রাতে আমাদের এক খৃস্টান কমান্ডারকে গোপনে মাহফিল থেকে উঠিয়ে নিয়ে তাকে সুকৌশলে হত্যা করে।
ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই সে মেয়ে এবং গুমাস্তগীনের এক বিশ্বস্ত গার্ড রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। তারা কোথায় পালিয়েছে এখনো তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। তবে সবারই ধারনা, তারা সুলতান সালাহউদ্দিনের কাছে চলে গেছে।’
এতবড় দুঃসংবাদ দুই সম্রাটের কাউকেই তেমন বিচলিত করতে পারলো না। তারা বরং এ খবরে বেশ মজাই পেলো। রিমান্ড হেসে বললো, ‘এই মুসলমান জাতটা এমন যৌনপ্রিয় যে, কি আর বলবো! তাদের আমীর-ওমরা ও ক্ষমতাধরদের এই এক অস্ত্র দিয়েই ঘায়েল করা যায়। নইলে গুমাস্তগীনের মত ক্ষমতাধর দূর্গাধিপতির কাজীই বা মরতে যাবে কেনো, আর তার দুই বিশ্বস্ত সেনাপতিই বা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর পক্ষে চলে যাবে কেন? আমার বিশ্বাস, ঐ দুই সুন্দরী আইয়ুবীর গোয়েন্দা ছিল এবং তাদের মোহে পড়েই কাজীকে হত্যা করে মেয়ে দু’টিকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিল তারা।
মেয়ে দু’জনকে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তারা হয়তো গুমাস্তগীনের সোনাদানা হাতিয়ে নেয়ার জন্য ফিরে এসেছিল, পরে আর যেতে পারেনি, ধরা পড়ে গেছে। এ ভুলের মাশুল দিতে গিয়েই তারা এখন গুমাস্তগীনের কারাগারে বন্দী হয়ে আছে।’
‘আমার মনে হয় আপনি ঠিকই বলেছেন। গুমাস্তগীনের অন্দর মহলের যে মেয়েটি নিখোঁজ হয়েছে, হয়তো তার সাথে গার্ডের প্রেম ছিল। পালাবার সময় আমাদের কমান্ডারের চোখে পড়ে যাওয়ায় তাকে খুন করতে বাধ্য হয়েছে তারা।’
‘সত্যি, মুসলিম আমীর ওমরা ও দূর্গাধিপতিদের অন্দর মহলগুলো এক রহস্যময় দুনিয়া। ওদের সাথে যুদ্ধ করার প্রয়োজন নেই। আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এ জাতি বিলাসিতা ও আমোদ-স্ফূর্তি করতে করতেই একদিন বিলীন হয়ে যাবে।’
দুই সম্রাট যখন কথা বলছিল, দূর্গের বিচক্ষণ কমান্ডার চুপ করে শুনছিল ওদের কথা। এবার সে মুখ খুললো, ‘আমি বিনয়ের সাথে দু’টি কথা বলতে চাই। আপনারা বলেছেন, উপঢৌকন হিসেবে প্রাপ্ত মেয়েদেরকে হারান থেকে ভাগিয়ে নিয়ে সুলতান আইয়ুবীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে, এ কথা আমি মেনে নিতে পারছি না।
আমি দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা বিভাগের কাজ পরিচালনা করে আসছি। শত্রুদের সামরিক গোপন তৎপরতার তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও আমার গোয়েন্দারা আরো কিছু কাজ করে যাচ্ছে। শত্রুদের সামরিক কর্তা ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ক্রিয়া-কলাপ, তাদের সামরিক কৌশল এসব সম্পর্কেও ওরা নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করে হেড কোয়ার্টারে পাঠাচ্ছে।
আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, নারীর নেশা ও মদের নেশার ক্ষেত্রে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী যেমন পাথর, তেমনি কঠিন তার পদস্থ সামরিক অফিসাররা।
এ কারণেই বার বার বিষ প্রয়োগের চেষ্টা করেও তাকে হত্যা করা যায়নি। সুন্দরীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টাও বার বার ব্যর্থ্য হয়েছে।
এ ধরনের স্বভাব প্রকৃতির মানুষ আবেগের বশবর্তী হয় না। তারা সংকল্পে অত্যন্ত কঠিন ও দৃঢ় হয়। তারা যে মিশনে নামে সে উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত তারা নিরলস কাজ করে যায়।
আমাদের শত্রু হলেও এ কথা আমি অস্বীকার করতে পারবো না, সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর মধ্যে এ গুণ যথেষ্ট পরিমাণেই আছে। এ জন্যই তিনি তার প্রতিটি পদক্ষেপে সফলতা ছিনিয়ে নিতে পারেন।
সব সময়ই তাঁর মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করে। তিনি এমন বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং এমন অবিশ্বাস্য কাজ করতে পারেন, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। ফলে আমাদের ভাগ্যে নেমে আসে দুর্ভাগ্যজনক পরাজয়।
আমি তাঁর সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করেছি তাতে বুঝেছি, তিনি আত্ম দমনে অসম্ভব পারদর্শী এবং নিজের প্রয়োজন সম্পর্কে একেবারেই উদাসীন। পার্থিব লোভ লালসার উর্ধে তার জীবন।
তিনি তার অনুসারী এবং সৈনিকদেরও এই সুন্দর ব্যবহার শিক্ষা দিতে পেরেছেন। তিনি তাদের মনে এমন ঈমানী চেতনা ও জযবা তৈরী করতে পেরেছেন, মরুভূমিতে বসবাসকারী সৈন্যরা এই পাহাড়ী অঞ্চলে কঠিন বরফ ও তুষার ঝড়ের মধ্যেও পাহাড়ের মতই অটল হয়ে যুদ্ধ করতে পারছে। তাদের ঈমানী চেতনা দৃঢ় না হলে ওখানে বসে যুদ্ধ করা তো দূরের কথা, সেখানে টিকে থাকাই অসম্ভব হতো ওদের পক্ষে।
যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের সৈন্যদের মধ্যে এমন দৃঢ় মনোবল তৈরী করতে না পারবো, ততক্ষণ আমাদের পক্ষে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না।’ একটু থামলো সে।
সম্রাট রিমান্ড তার কথায় বিরক্ত না হয়ে বললো, ‘আর দ্বিতীয় বিষয়টি কি?’
‘দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, মুসলমানদের মধ্যে যে সব আমীর ও উজির নারী আসক্ত হয়েছে সেটা আমাদের মিশনের কৃতিত্ব।
ইহুদী পন্ডিতরা শত শত বছরের গবেষনার পর এই সিদ্ধান্তে এসেছে, মুসলমানদের পরাজিত করার জন্য জরুরী হচ্ছে তাদের ঈমানী জযবা ও চারিত্রিক শক্তি নষ্ট করা। ক্ষমতার লোভ ও নারী এ কাজে সবচেয়ে সফল অস্ত্র হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। আর যেখানে এ দুটো অস্ত্র কাজ করবে না, সেখানে ধর্মীয় বিভেদ ও তাদের ফেরকাগত সমস্যাকে উস্কে দিয়ে ফায়দা হসিল করতে হবে।
ইহুদীদের এই আবিষ্কার পরীক্ষিত ও অত্যন্ত সফল প্রমাণিত হয়েছে। তাদের দেয়া পেসক্রিপশন অনুযায়ী এ ওষুধ প্রয়োগ করে আমারও বেশ সফলতা পেয়েছি। এ সাফল্যের মূল কৃতিত্ব সেই ইহুদী পন্ডিতদের। আমরা নারী ও সম্পদের মোহ সৃষ্টি করে বহু মুসলমান নেতা ও যোদ্ধাকে বিকল করতে পেরেছি। তাদেরকে নৈতিক ও চারিত্রিক দিক থেকে দুর্বল করার জন্য চঞ্চলা সুন্দরী যুবতীদেরকে আমরা যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দিয়েই তাদের কাছে পাঠিয়েছি। আমার মনে হচ্ছে, এখন ওরাও আমাদের পথ ধরেছে। আমাদের অনুকরণে নিজেরাই নিজেদের কাছে উপহার হিসেবে নারী পাঠাতে শুরু করেছে।’
‘এ জাতিকে দুনিয়ার বুক থেকে মিটিয়ে দেয়ার জন্য আমরা ঠিক পথই ধরেছি।’ রিজন্যাল্ট বললেন, ‘এই জাতি নিজেদের হাতেই শেষ হয়ে যাবে। আমার বন্ধু রিমান্ডকে স্বসৈন্যে পিছু হটাতে সমর্থ হয়ে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী হয়ত উল্লসিত, কিন্তু তার তো জানা নেই, রিমান্ড তার চোখের সামনে থেকে সরে গেলেও যুদ্ধের ময়দান থেকে সরে যায়নি।
মুসলিম জাতির বুকের ওপর সে নতুন ময়দান তৈরী করেছে। এ ময়দানে যে যত নড়াচড়া করুক, পাঁজরের হাড় ভাঙবে শুধু মুসলমানদের।
এখন আর আমাদের সমর ক্ষেত্রে যুদ্ধ করার প্রয়োজন নেই, এখন আমরা গোপন সেক্টরে লড়াই করবো, মুজাহিদের তলোয়ার যার মোকাবেলা করতে পারবে না। এ সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে জিততে হবে আমাদের। আর এ লড়াইয়ের বিজয়ই আমাদেরকে দিতে পারে স্থায়ী সাফল্যের গ্যারান্টি।’
‘এই মিশনটি এখন খুব জোরদার করা প্রয়োজন।’ হারান থেকে ফিরে আসা সংবাদ বাহক নিজেও একজন অভিজ্ঞ সামরিক ও গোয়েন্দা অফিসার। তিনি বললেন, ‘আমি আপনাদেরকে গুমাস্তগীনের আভ্যন্তরীন যে ঘটনাবলী শুনিয়েছি এতেই প্রমাণিত হয়, সেখানে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর গোয়েন্দা ও কমান্ডোরা শুধু উপস্থিতই নয়, বরং গুমাস্তগীনের মহলের মধ্যেও তাঁর কমান্ডোরা পূর্ণ মাত্রায় সক্রিয় রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
‘গুমাস্তগীন, সাইফুদ্দিন ও আল মালেকুস সালেহের ঐক্যবদ্ধ সামরিক জোটের বিরুদ্ধে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর গোয়েন্দা ও কমান্ডো বাহিনী যদি কোন পদক্ষেপ নেয়, তাতে আমাদের কি ক্ষতি? আমরা কেন ওদের নিরাপদ রাখতে যাবো?’ বৈঠকে উপস্থিত অন্য এক জেনারেল বললো, ‘আমরা তো তাদের ধ্বংসকেই ত্বরান্বিত করতে চাই। সে ধ্বংস আমাদের দ্বারাই হোক অথবা তাদের কোন ভাইয়ের দ্বারাই হোক।’
তিনি আরো বললেন, ‘সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও কোন মুসলমানই আমাদের পকৃত বন্ধু হতে পারে না। যদি কেউ এমনটি মনে করেন, তবে বুঝতে হবে তিনি প্রকৃত ক্রুসেডপন্থী নন অথবা কেন এ ক্রুসেড চলছে তার মর্ম তিনি বুঝতে পারছেন না।’
‘আপনি ঠিকই বলেছেন। আমাদের শত্রুতা নূরুদ্দিন জঙ্গী বা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সাথে নয়। আমাদের লড়াই মুসলিম উম্মাহ তথা ইসলামের বিরুদ্ধে।’ বললেন সম্রাট রিমান্ড।
জেনারেল বললো, ‘সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীকে সামনে পেলে আমি তাকে স্যালুট জানাবো। তিনি কেবল বীর যোদ্ধাই নন, অসম্ভব রণকুশলী এক সেনাপতি। তার সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন শত্রুতা নেই, সংঘাতটা হলো আদর্শিক।
প্রতিটি মুসলমান আমাদের শত্রু, প্রতিটি মুজাহিদ আমাদের প্রতিপক্ষ। যারা ইসলামের সুরক্ষা ও প্রসার চায় তারাই ক্রুশের দুশমন। আমাদের সংঘাত এই ক্রুশের দুশমনদের সাথে।’
সম্রাট রিজন্যাল্ট বললেন, ‘একদিন আমরা সবাই মরে যাবো, সালাহউদ্দিন আইয়ুবীও চিরকাল বেঁচে থাকবে না। কিন্তু আমাদের এ যুদ্ধ শেষ হবে না।, এ লড়াই চলতেই থাকবে।
এ লড়াইয়ের অংশ হিসাবেই আমরা মুসলমানদের মধ্যে নানা কুসংস্কার সৃষ্টির চেষ্টা করছি, যা তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ইসলামের মূল চেতনা, চরিত্র ও মানবিক মূল্যবোধ থেকে সরিয়ে রাখবে। আমাদের এ পদ্ধতি কার্যকর হলে মুসলমানরা তাদের নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, আদর্শ ও সভ্যতা হারিয়ে ফেলবে।
ওরা যদি নিজেদের সাংস্কৃতিক আইডেন্টিটি হারিয়ে নিজেদের জীবনধারা আমাদের সাংস্কৃতির রঙে রঙ্গিন করে তোলে, তবে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের তো আর কোন প্রয়োজন থাকে না!’
তিনি আরো বললেন, ‘আমরা সে যুগে হয়তো বেঁচে থাকবো না, দেখতেও পাবো না এর সাফল্য। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি, যদি আমরা আমাদের এই মিশন চালু রাখতে পারি, তবে সে দিন বেশী দূরে নয়, ইসলাম শুধু নামেই বেঁচে থাকবে, কিন্তু প্রকৃত ইসলাম কোথাও থাকবে না। ইসলামের প্রেতাত্মা চারদিকে কেঁদে বেড়াবে।
মুসলমান নামে শুধু মুসলমান থাকবে। তাদের কোন স্বাধীন রাজ্য থাকলেও তা হবে পাপ ও জঞ্জালের আখড়া। কারণ ইহুদী ও খৃস্টান বুদ্ধিজীবীরা সম্মিলিতভাবে তাদের মধ্যে পাপের বীজ বপন করে যাচ্ছে। তাদের পূণ্যের ঘর শূন্য করে আমরা তা পাপ দিয়ে ভরে দেবো।’
হারান থেকে আগত অফিসার বললো, ‘কিন্তু আমি এসেছিলাম অন্য এক আবেদন নিয়ে। গুমাস্তগীন এখনই আইয়ুবীকে আক্রমণ করতে চায় এবং এ জন্য সে আমাদের সাহায্য চেয়েছে। এ পয়গাম দিয়েই আমাকে পাঠিয়েছে সে। এ ব্যাপারে তাকে গিয়ে কি বলবো?’
ওদের মধ্যে এ বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা পর্যালোচনা হলো। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, গুমাস্তগীনকে বাস্তবে কোন সামরিক সাহায্য দেয়া হবে না, তবে তাকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে রাখতে হবে।
তাদেরকে আশ্বস্ত করতে হবে, তারা তিন বাহিনী তিন দিক থেকে আক্রমণ করে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীকে আর রিস্তান পাহাড়ে অবরোধ করলে, আমরা আমাদের সৈন্য বাহিনী নিয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাবো। সম্রাট রিজন্যাল্ট বললেন, ‘কিন্তু বাস্তবে আমরা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করবো। দূর থেকে তাকিয়ে দেখবো সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ও সম্মিলিত বাহিনীর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। আর রিস্তান পাহাড়ের বরফগলা পানি আইয়ুবীর সৈন্যদের রক্তে লাল হয়ে গড়িয়ে নামবে নিচের দিকে, আর পাদদেশে তিন দিকে তিন বাহিনী আইয়ুবীর সৈন্যদের তোপের মুখে যখন মুখ থুবড়ে পড়বে, আমাদের কাজ হবে তখন, কে পরাজিত হয় তাকিয়ে তাকিয়ে তাই দেখা।
এরপর শুরু হবে আসল খেলা। ক্লান্ত-শ্রান্ত বিজয়ী দলের ওপর আঘাত হানবো আমরা। এখানে সম্রাট রিমান্ড আছেন। আমি অনুরোধ করবো, তিনিই এই বিজয় অভিযানে অংশ নিয়ে গৌরবের হকদার হবেন।’
‘নিশ্চয়ই!’ সম্রাট রিমান্ড সানন্দে এই প্রস্তাব কবুল করে বললেন, ‘এ ধরনের একটি সুযোগেরই তো অপেক্ষায় ছিলাম আমি। দোয়া করুন, প্রভু যিশু যেন এবার আমাদের সহায় হোন।’
এ বৈঠকে আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, হলব, হারান ও মুশালের বাহিনীর জন্য সামরিক উপদেষ্টা ছাড়াও তাদের আশ্বস্ত করার জন্য তীর-ধনুক ও গোলা-বারুদের একটি করে চালান পাঠিয়ে দেয়া হবে তিন বাহিনীর কাছেই। এ ছাড়া প্রত্যেক বাহিনীর জন্য পাঠানো হবে দু’শো করে ঘোড়া।
এক জেনারেল বলে উঠলো, ‘তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, পাঠানো ঘোড়াগুলো যেন আমাদের সৈন্য বাহিনীর পরিত্যাক্ত ঘোড়া হয়।’
‘হ্যাঁ, যেসব ঘোড়া আমাদের কোন কাজে আসবে না, কিন্তু বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখতে সুস্থ সবল, সেগুলোই পাঠানো হবে।’
রিজন্যাল্ট বললেন, ‘সেই সঙ্গে তাদেরকে বিলাসিতা ও আনন্দ-স্ফূর্তির সামগ্রীও পাঠাতে হবে আর বলতে হবে, যখনই তাদের কোন অস্ত্রের প্রয়োজন হয়, তারা যেন আমাদের সাথে যোগাযোগ করে, তাদের সে প্রয়োজন আমরাই পূরণ করে দেবো।’
অফিসার কিছুটা অবাক হয়ে বললো, ‘তাদের অস্ত্রের জোগান আমরা দিতে যাবো কেন?’
‘আহম্মক, এটাও বুঝো না? তখন তারা নিজেরা অস্ত্র তৈরীর কষ্টে না গিয়ে আমাদের ওপর নির্ভর করবে। আর এভাবেই তারা কষ্টে না গিয়ে আমাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। শেষে এমন অবস্থা হবে, তারা অস্ত্রের জন্যও চাতকের মত আমাদের দিকেই চেয়ে থাকবে। এ সাহায্য সহযোগিতার জোগান দেবে আমাদের উপদেষ্টারা। এভাবেই আমরা তাদের অভিভাবক ও প্রভু সেজে বসবো!’
অন্য এক কমান্ডার বললো, ‘এ সাহায্য পাঠানোর আগে সালাহউদ্দিনকে হত্যা করার জন্য শেখ মান্নানের যে নয়জন ফেদাইন ঘাতককে পাঠানো হয়েছে তাদের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করলে হতো না! তারা তো শপথ করে বলেছে, আইয়ুবীকে হত্যা না করে ওরা কেউ জীবন নিয়ে ফিরে আসবে না।’
‘তাদের ওপর ভরসা করে লাভ নেই। যুদ্ধ লাগলে যে ব্যাপক মুসলিম নিধন হবে, কেবল আইয়ুবীকে হত্যা করে সে সাফল্য আমরা কিছুতেই অর্জন করতে পারবো না। ফেদাইনদের কাজ ফেদাইনরা করুক, এদিকে যুদ্ধ শুরুর কাজও অব্যাহত থাকুক।’ বললেন রিজন্যাল্ট।
সে দিনই দু’শো ঘোড়া, হাজার হাজার ধনুক ও তীর এবং প্রচুর গোলা বারুদের বহর নিয়ে হারানের দিকে যাত্রা করলো অফিসার। রওনা করার সময় ওকে বলে দেয়া হলো, ‘গুমাস্তগীনকে বলবে, এমন বিশাল আকারের সাহায্য আমরা বরাবর পাঠাতে থাকবো। সম্মিলিত বাহিনী যেন সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর ওপর আক্রমণ চালাতে বিলম্ব না করে।’
একই সাথে হলব এবং মুশালেও এ প্রস্তাব এবং সাহায্য সামগ্রী পাঠিয়ে দেয়া হলো।
সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী তার হেড কোয়ার্টারে বসেছিলেন। আনতানুস ও ফাতেমা গিয়ে পৌঁছলো সেখানে।
ফাতেমার জীবনে এ ছিল এক ব্যতিক্রমী সফর। গুমাস্তগীনের অন্দর মহলের সুখ সাচ্ছন্দ্য পেছনে ফেলে এক খৃস্টান কমান্ডারকে হত্যার অপরাধে পালাতে হয়েছে তাকে। ভাগ্যই তাকে গুমাস্তগীনের গার্ড বাহিনীর সদস্য, সুলতান আইয়ুবীর বিশ্বস্ত গোয়েন্দা আনতানুসের সঙ্গী বানিয়ে দিয়েছে।
আনতানুস গোয়েন্দা হিসাবে খারাপ ছিল না, কিন্তু অতি আবেগ তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। তারও ভাগ্য ভাল, ধরা পড়ার পর সেনাপতি শামস বখত ও সাদ বখতের আন্তরিক সহযোগিতা ও কৌশলের কারণে ফাতেমাকে নিয়ে সে পালাতে সক্ষম হয়।
সুলতান আইয়ুবীর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হাসান বিন আবদুল্লাহ তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সুলতানের কাছে গেলেন।
আনতানুস সমস্ত ঘটনা সবিস্তারে সুলতানকে বললো। কিন্তু তার কথা শুনে সুলতান আইয়ুবী খুশী হতে পারলেন না।
তার এই অতি উৎসাহী ও আবেগ তাড়িত কর্মকান্ড, বিশেষ করে শামস বখত এ ব্যাপারে তাকে সাবধান করার পরও তার সতর্ক না হওয়াটা মারাত্মক অপরাধ। গোয়েন্দা বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী এ জন্য তার কঠোর সাজা হতে পারতো।
কিন্তু একটি কারণে সুলতান তাকে ক্ষমা করে দিলেন। যে কৌশলে সে গুমাস্তগীনের দেহরক্ষী হতে পেরেছিল, তাতে তার দক্ষতা ও নৈপূণ্য ফুটে উঠে। একজন দূর্গ প্রধানের বিশ্বস্ততা অর্জন সহজ ব্যাপার নয়, নিঃসন্দেহে এটা একটা প্রশংসনীয় বিষয়।
তাছাড়া ফাতেমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে গুমাস্তগীনের অন্দর মহলে প্রবেশের ক্ষেত্রেও সে অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছে।
একজন ঝানু গোয়েন্দা হওয়ার জন্য যে বুদ্ধি, সাহস ও কৌশল দরকার, সবই আছে এ যুবকের। কেবল যদি সে তার আবেগের ঘোড়ার লাগামটা আরেকটু টেনে ধরতে পারে তবে এ যুবক ভবিষ্যতে গোয়েন্দা জগতে নাম করতে পারবে। এদিকটি বিবেচনা করেই সুলতান আইয়ুবী আনতানুসের অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন।
তাকে আদেশ দিলেন, ‘তোমাকে আবার সেনাবাহিনীতে ফিরে আসতে হবে। কারণ গোয়েন্দাগিরি করার মত সংহত আবেগ এখনও তোমার তৈরী হয়নি। কি করে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং সামরিক শৃংখলা বজায় রাখতে হয় আয়ত্ব করতে পারোনি তুমি।’
ফাতেমাকে বললেন, ‘আর তোমার এ যুদ্ধের ময়দানে থাকার দরকার নেই। তুমি দামেশকে চলে যাও। আমি তোমার দামেশকে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
‘আমি আনতানুসের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাই।’ ফাতেমা বললো।
‘হ্যাঁ! তাই হবে।’ সুলতান বললেন, ‘কিন্তু বিবাহ অনুষ্ঠান দামেশকেই হবে। যুদ্ধের ময়দান গাজী ও শহীদ হওয়ার জায়গা। এখানে বিয়ে শাদীর ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।’
‘সুলতান মুহতারাম!’ আনতানুস বললো, ‘আমি আপনাকে অসন্তুষ্ট করেছি, সে কারণে আমি স্থির করেছি, যতক্ষণ আপনাকে সন্তুষ্ট করতে না পারবো ততক্ষণ আমি বিয়ে করবো না।’ সে ফাতেমাকে বললো, ‘তুমি সুলতানের আদেশ মতো দামেশকে চলে যাও। সেখানে তোমার থাকা-খাওয়ার কোন অসুবিধা হবে না। আল্লাহর মর্জি হলে তোমার বিয়ে আমার সাথেই হবে।’
সে আবার সুলতান আইয়ুবীর দিকে ফিরে বললো, ‘মুহতারাম সুলতান! আমি আপনার কমান্ডো বাহিনীতে যোগ দিতে চাই। অতর্কিতে দুশমনের ওপর ঝাপিয়ে পড়ার প্রশিক্ষণ নেয়া আছে আমার।’
তাকে কমান্ডো দলে যোগ দেয়ার অনুমতি দেয়া হলে আনতানুস সেখান থেকে এমনভাবে বিদায় হলো যে, সে একবারও ফাতেমার দিকে ফিরে তাকালো না।