» » সামনে বৈরুত

বর্ণাকার

‘আমি তোমাকে শামসুন নেছার সাথে কথা বলতে দেখেছি।’ উনুশী আমের বিন উসমানকে বলল, ‘এই মেয়েটি কি আমার চেয়ে বেশি সুন্দরী?’

ওরা তখন মুশেলে। শামসুন নেছার অনুরোধে আমের পরিকল্পিতভাবে মেয়েটির প্রেমের ফাঁদে পা দেয়ার অভিনয় করছিল। মধ্য রাতের একটু পরে উনুশী পা টিপে টিপে আমেরের কামরায় এসে প্রবেশ করলো। তার চোখে মুখে অনুযোগের কালিমা।

‘ওই মেয়ের কথা আর বলো না! ‘আমেরও বিরক্তির স্বরে জওয়াব দিল, ‘সে শাহজাদী আমাকে তার চাকর মনে করে। যখন তখন আমার ওপর হুকুম চালায়। সে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমাকে সেই হুকুম মানতে বাধ্য করে।’

আমের না থেমে বলেই চললো, ‘তোমাকেও আমি ভয় পাই। কারন তোমাকেও আমি শাহজাদীর মতই ক্ষমতাবান মনে করি। অবশ্য শান্তনা এতটুকু, ভালবাসার অধিকার দিয়ে তুমি সে ভয় কিছুটা দূর করেছো। তারপরও আমার ভয় যায় না। কত রকম ভয় যে আমাকে তাড়া করে বেড়ায়!

কখনো ভাবি, তুমি আমাকে পুতুল বানিয়ে খেলছো না তো? আবার ভাবি, যদি কোন সামরিক অফিসার আমাদের অভিসারের খবর জেনে যায় তাহলে কারাগারের কোন অন্ধ প্রকোষ্ঠে আমার ঠিকানা হবে?’

‘যদি কেউ তোমাকে কারাগারে পাঠায় তবে জেনে রেখো, মুশেলের প্রতিটি ইট তার বুকে গিয়ে আঘাত হানবে।’

উনুশী আমেরের একটি হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আবেগ ভরা কন্ঠে বললো, ‘তুমি ভাবছো আমি তোমাকে ধোঁকা দিচ্ছি। এ ব্যাপারে তোমাকে আমি কি বলবো! আমি নিজেই তো এক মোহন ধোঁকা। আমার অস্তিত্ব এক অনুপম ধোঁকা ছাড়া আর কি! কেউ কি আমাকে মানুষ মনে করে! সবাই ভাবে পরী। পরী তো উড়াল দেবেই। তাই কেউ তাকে আপন ভাবে না। তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, তুমি আমাকে অন্ততঃ একটু রক্ত-মাংসের মানুষ মনে করো। আমাকে তোমার সেবা করার সামান্য সুযোগ দাও।’

উনুশী আপনভোলা মানুষের মতই পড়েছিল আমেরের কোলের ওপর। সে তখন হারিয়ে গিয়েছিল আমেরের মাঝে। তার হাতের চাপাকলির মত আঙ্গুলগুলো বিলি কাটছিল আমেরের চুলে। উনুশী তাকে উজাড় করে আমেরের হাতে সঁপে দিতে চাচ্ছিল। কিন্তু আমেরের অবস্থা ছিল ভিন্ন।

আমের ছিল অবিবাহিত এক তরুণ যুবক। তার সুগঠিত শরীর ও অঙ্গসৌষ্ঠব প্রথম নজরেই যুবতীদের দৃষ্টি কেড়ে নিত। কিন্তু সে ছিল এক মুমিন মুসলমান। সে তার ঈমানের হেফাজতের জন্য মনে মনে বার বার আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছিল। মনে মনে বলছিল, ‘আয় বারিতালা, তুমি আমাকে ধৈর্য ও সংযম দাও। এই কঠিন পরীক্ষায় আমাকে টিকে থাকার শক্তি দাও।’

উনুশীর স্পর্শে যখনি তার মনে হতো ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে, তখনি সে চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা শুরু করে দিত।

চাঁদ গড়িয়ে গড়িয়ে ক্রমে দূরে সরে গেল। শেষ হয়ে এলো উত্তাপহীন রাতের আয়ু। তারাগুলো ক্রমে নিস্তেজ হয়ে গেল। আমরের কোল থেকে মাথা তুলে প্রেমে মাতাল উনুশী বেরিয়ে গেল কামরার বাইরে।

উনুশীর সমগ্র সত্ত্বায় জড়িয়েছিল আমেরের অস্তিত্বের নেশা। সেই নেশার ঘোরে পর পর কয়েক রাত সে আমেরের কামরায় কাটিয়ে দিল। আর তখনি সে উপলব্ধি করলো, তার সারা জীবনের সব অভিজ্ঞতা সব ভুল। পুরুষ মাত্রই পশু নয়, এখনো পৃথিবীতে এমন পুরুষ আছে, যাদের মানুষ হিসাবে গণ্য করা যায়।

উনুশীর জীবনে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। এ জীবনে সে এমন আর একজন পুরুষও পায়নি, যার মধ্যে ভোগের তৃষ্ণা ছিল না। আগুনের কাছে মোম যেমন গলে যায়, আলো দেখলেই তাতে যেমন ঝাঁপিয়ে পড়ে পতঙ্গ, তেমনি তার রুপের আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাদশাহ থেকে ফকির সবাই। তাদের চোখে সে দেখেছে কামনার লেলিহান শিখা। কিন্তু আমের এক ব্যতিক্রমী পুরুষ। তার চোখের তারায় আছে মায়ার অঞ্জন, কিন্তু কামনার লেশমাত্র নেই সেখানে।

উনুশী ভেবে পায় না, কি করে এমনটি সম্ভব? সে এক নারী এবং অভিঞ্জ নারী। পুরুষ মানুষের রক্তের গতিও সে টের পায়। পুরুষের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে দিতে পারে তার অন্তরের গহীন গোপন খবর। কিন্তু সত্যি কি পারে? না, পারে না। অন্তত আমেরের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কোন কাজে লাগেনি তার। সে টের পেতো তার স্পর্শে আমেরের রক্তে অদ্ভুদ এক ভূকম্পন শুরু হয়ে গেছে। যে ভূকম্পন শুরু হলে পুরুষ মানুষ আত্মনিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। তখন সে আর মানুষ থাকে না, পশু হয়ে যায়। কিন্তু কি এক আশ্চার্য ক্ষমতাবলে আমের অদ্ভুত দক্ষতায় নিজের ওপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এনে তার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে, ‘আমার আর এসব মুসলমান আমীর ও শাসকদের মোটেই ভাল লাগে না। এরা শাসক নয় শোষক। জনগনের রক্ত শোষন করে এরা শুধু অত্যাচার আর ভোগ বিলাসেই মত্ত থাকে।’

‘আমারও এদের প্রতি ঘৃণা ধরে গেছে। এরা চরিত্রহীন, লম্পট। এদের অন্তরে একরত্তি মায়া মমতা নেই। তাদের সব ভালবাসা গিলে ফেলেছে মদ ও গদির মোহ।’

আমের আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় তার উদ্দেশ্যের দিকে। বলে, ‘খৃস্টান শাসকদের আমি কোনদিন দেখিনি। তবে আমার মনে হয় তারা আমাদের শাসকদের চেয়ে অবশ্যই ভাল হবে।’

উনুশী বলে, ‘তারা ভাল হলেই কি মন্দ হলেই কি! গাছে খেজুর রেখে গোঁফে তা দিয়ে লাভ কি, বলো?

‘কেন, এমন কি হতে পারে না, লড়াই করতে করতে একদিন তারা এখানেও এসে পড়লো। মুসলমানদের সাথে তাদের তো হামেশাই লড়াই হচ্ছে। যদি এমন কখনো হয় তবে মনে রেখো, আমি দল ত্যাগ করে তাদের আশ্রয়ে চলে যাবো।’

এভাবেই একটু একটু করে অগ্রসর হচ্ছিল আমের বিন উসমান। প্রশ্ন করে করে জেনে নিচ্ছিল উনুশীর বুকে লুকিয়ে থাকা গোপন খবর।

এদিকে উনুশীও কোন আহাম্মক মেয়ে ছিল না। সে প্রকৃতিগতভাবেই ছিল বেশ চালাক চতুর। তার ওপর গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর জন্য সে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে এখানে এসেছিল। কিন্তু মানুষের জীবনে এমন কিছু সময় আসে, যখন তার বুদ্ধি বিবেক সকল কিছু লোপ পেয়ে যায়। তখন সে সাধারণ মানুষের চেয়েও সাধারণ হয়ে যায়। সে এমন সব ভুল করে বসে, যা কোন স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে না। যে উনুশী চোখের ইশারায় রাজা-বাদশাহদেরকেও নিজের পুতুল বানানোর ক্ষমতা রাখতো সেই উনুশী নিজেই পুতুল সেজে বসেছিল। আমের বিন উসমান সেই পুতুলের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছিল প্রয়োজনীয় সব গোপন তথ্য। মানুষের অন্তর সব সময়ই পবিত্র প্রেমের কাঙাল থাকে। মানুষের কাছে মানুষ একান্তভাবে যে জিনিসটি চায় তার নাম ভালবাসা। ভোগের সমুদ্রে ডুবে থাকলেও এ তৃষ্ণা তাতে নিবারণ হয় না। ভোগে তৃপ্তি খোঁজে মানুষ কিন্তু ভোগ মানুষের মনে অতৃপ্তি আরো বাড়িয়ে তোলে। উনুশী ভুগছিল সেই অতৃপ্তিতে। পবিত্র প্রেমের তৃষ্ণায় আকুল হয়েছিল তার অন্তর। আমেরের পবিত্রতা তাকে আমেরের গোলাম বানিয়ে দিল। এক রাতে সে নিজেকে মেলে ধরলো আমেরের কাছে। আমেরের পাতা জালে পা দিয়ে ফাঁস করে দিল সব গোপন তথ্য। সে কি মিশন নিয়ে এখানে অবস্থান করছে অকপটে বলে দিল তা।

আমের তাদের ষড়যন্ত্রের কাহিনী শুনে শিউরে উঠল। সে এতদিন কল্পনাও করতে পারেনি, মুসলমানদের সামনে কতটা ভয়ংকর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।

উনুশী তখনো তার কোলে মাথা রেখে বলে যাচ্ছে তার জীবন কাহিনী। সে ভুলে গেছে খৃস্টানরা তাকে এখানে কি কঠিন দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে। কারন সে তখন কোন গোয়েন্দা ছিলনা, ছিল না কোন ষড়যন্ত্রকারী। সে তখন নিরেট এক প্রেমিকা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

মদের নেশা কতটা তীব্র হয় সে অভিজ্ঞতা ছিল উনুশীর, কিন্তু ভালবাসার নেশা কতটা তীব্র হত পারে সে সম্পর্কে তার কোন ধারনাই ছিল না। সুদানী পরী গ্রামের এক সহজ সহজ বালিকার মত নিজেকে মেলে ধরেছিল আপন প্রেমিকের কাছে।

রাত শেষ হয়ে এলো। উনুশী তার বুকের সমস্ত গোপন তথ্য আমেরের বুকে ঢেলে দিয়ে বেরিয়ে গেল কামরা থেকে।

বেশ কিছুদিন হয়ে গেল ইসহাক তুর্কী বৈরুত এসেছে। নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সে পুরোপুরি সচেতন। ইতোমধ্যে সে খৃস্টান নাইটের বিশ্বস্ত বন্ধুতে পরিনত হয়ে গেছে। নাইটের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে খৃস্টানদের পরিকল্পনা সম্পর্কে সে এমন সব তথ্য অনায়াসে পেতে লাগলো, স্বাভাবিক অবস্থায় যা সংগ্রহ করতে তা প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হতো।

সে জানতে পারল, এই নাইট সম্রাট বিলডনের সেনাবাহিনীর এক পদস্থ কর্মকর্তা। ব্যক্তিগতভাবে এ নাইট খুবই উচ্চাভিলাষী। তার ইচ্ছা, আগামী লড়াইতে সে এমন দক্ষতা প্রদর্শন করবে, যাতে তার ওপর কোন এলাকার শাসনভার অর্পন করতে সম্রাট বাধ্য হন। সে ভাবেই তিনি তার বাহিনীকে সাজাচ্ছিলেন। আর তার এ কাজে তাকে সর্বোতভাবে সাহায্য করছিল ইসহাক তুর্কী।

এই নাইট একবারও চিন্তা করলো না, কোন সাধারণ সৈনিকের পক্ষে এমন নৈপুন্য প্রদর্শন এবং এমন দূরদর্শী আচরণ করা সম্ভব নয়। একজন অপরিচিত লোককে বন্ধু বানিয়ে নেয়া এবং তার কাছে নিজের এবং সেই সাথে সম্রাট বিলডনের সামরিক পরিকল্পনা প্রকাশ করে দেয়াটা সঙ্গত হবে না, এমন চিন্তাও তার মাথায় জাগেনি কখনো।

লোকটি যদি বেশি উচ্চাভিলাষী না হতো এবং ক্ষমতা লাভের নেশায় অন্ধ না হতো তাহলে ইসহাকের তৎপরতায় তার মনে সন্দেহ জাগাটাই স্বাভাবিক ছিল। তখন সে ভাবতো, এ লোক মুসলমানদের গোয়েন্দা নয়তো?

কিন্তু উনুশীর মতো চৌকস গোয়েন্দা যেভাবে মানুষের স্বভাবগত দুর্বলতার বশে অসহায় হয়ে আমেরের দাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল, উচ্চাভিলাষে সেই নাইটও তেমনি ইসহাক তুর্কীর চিন্তাধারার কাছে অসহায় হয়ে পড়লো।

একদিন রাতে হঠাৎ নাইট ইসহাক তুর্কীকে ডেকে বললো, ‘তৈরী হয়ে নাও, অনেক দূরের পথে যাত্রা করতে হবে।’

ইসহাক তুর্কী সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুত হয়ে বললো, ‘আমি তৈরী।’

নাইট ইসহাক তুর্কীকে নিয়ে বৈরুত থেকে বেরিয়ে এলো। ইসহাক তুর্কী জানতে চাইল, ‘কোথায় যাবেন?’

নাইট বললো, ‘চলো, যেতে যেতে বলছি।’

শহর থেকে বেরিয়ে এল দুই অশ্বারোহী। নাইট বললো, ‘দ্রুত পথ চলতে হবে আমাদের। আমাদের বাহিনী অভিযানে বেরিয়ে পড়েছে। অনেক দূর এগিয়ে গেছে তারা। নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে ওদের থামতে বলেছি। ওদেরকে ময়দানে সাজিয়ে দিয়েই আবার আমরা ফিরে আসবো।’

নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে ইসহাক তুর্কী দেখতে পেলো, নাইটের অশ্বারোহী বাহিনী ও পদাতিক বাহিনী নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তারা কেউ ক্যাম্প করেনি, বরং পরবর্তী হুকুমের জন্য সটান দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে নাইটের জন্য।

নাইট বিভিন্ন বাহিনীর কমাণ্ডার ও তার অধীনস্ত অন্যান্য নাইটদের ডেকে সৈন্যদের থেকে পৃথক এক জায়গায় জড়ো করলো। তারপর তাদের কে কোথায় অবস্থান করবে এবং কার কি দায়িত্ব একে একে সব বুঝিয়ে দিল।

সব শেষে বললো, ‘তোমাদের যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হলো এবং যাকে যে স্থানে অবস্থান নিতে বলা হলো আশা করি তোমরা তা বুঝতে পেরেছো। এ ব্যাপারে কারো কিছু আর জানার আছে?’

এক নাইট বললো, ‘না। তবে কতদিন এখানে আমাদের থাকতে হতে পারে?’

নাইট বললো, ‘সেটা অনিশ্চিত। তবে একমাস বা তারো কিছু বেশিদিন থাকতে হতে পারে তোমাদের। কায়রো থেকে আজই আমাদের এক গোয়েন্দা এসেছে। তার কাছ থেকে আমরা নিশ্চিত খবর পেয়েছি, সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী সরাসরি বৈরুত অবরোধ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

আমাদের ধারনা ছিল, প্রথমে তিনি দামেশকে আসবেন। সেখান থেকে যাবেন হলব ও মুশেলে, নিজের বাহিনীর সাথে সেখানকার সৈন্য শামিল করে নিতে। তারপর সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে তিনি আমাদের মোকাবেলায় আসবেন।

কিন্তু গোয়েন্দা নির্ভরযোগ্য তথ্যের বরাত দিয়ে বলেছে, হলব ও মুশেলের বাহিনীকে গাদ্দারী করার সুযোগ তিনি দিবেন না। তিনি তাদেরকে আর আস্থায় নিতে পারছেন না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রথমেই তিনি বৈরুত আঘাত হানবেন। এরপর বৈরুত থেকে ফিরে গিয়ে গাদ্দার মুসলমান শাসকদের শায়েস্তা করবেন তিনি।

যদি এমন নিশ্চিত খবর পাওয়া না যেত তবে বৈরুতেই আমরা তার মোকাবেলা করতাম। আমাদের মিত্র মুসলিম শাসক, যাদের সাথে আমাদের গোপন চুক্তি হয়েছে, সময় মতো তারা আইয়ুবীকে পিঠ দেখিয়ে সরে পড়তো। কেউ কেউ আরেকটু আগ বাড়িয়ে আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে পড়তো যুদ্ধে।

আইয়ুবী হুশিয়ার লোক। তাই সে আমাদের পরিকল্পনা আঁচ করতে পেরে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছে যুদ্ধের ছক। সে সরাসরি আমাদের অবরোধ করতে ছুটে আসছে।

তোমরা জানো, আইয়ুবীর অবরোধ মানেই এক ভয়ংকর ব্যাপার। অবরোধ করার পর সে একটি কথাতেই দাঁড়িয়ে থাকে, ‘অস্ত্র সমর্পন করো এবং আনুগত্য মেনে নাও’। এ ছাড়া আর কোন শর্তই তার মুখে আসেনা এবং কানেও ঢোকে না। কিন্তু ঈশ্বরের কৃপায় এবার আমরা আগেভাগেই তার অভিযানের খবর পেয়ে গেছি।’

ইসহাক মনযোগ দিয়ে নাইটের কথা শুনছিল। সে কথা শুনছিল আর ভেতরে ভেতরে ঘামছিল। সে খুবই অবাক হলো এই ভেবে, তাহলে মুসলিম বাহিনীতেও তারই মত গোয়েন্দারা ঢুকে পড়েছে? কিন্তু আলী বিন সুফিয়েনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তা কি করে সম্ভব।

ইসহাক তুর্কী জানে, মুসলমানদের মধ্যে গাদ্দারের অভাব নেই। অর্থ, সম্পদ আর ক্ষমতার মোহে ঈমান বিকিয়ে দেয়া লোকের তালিকা অনেক দীর্ঘ। কিন্তু সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী কখনো এই জাতীয় লোকদের কাছে ঘেঁষতে দেন না। বিশেষ করে আলী বিন সুফিয়ানের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা ফাঁস করে দেয়ার মত অবস্থানে কখনোই কোন লোক যেতে পারে না।

ইসহাক তুর্কী এ খবর শুনে দ্রুত কায়রো পৌঁছার জন্য পেরেশান হয়ে উঠলো। তার ইচ্ছে করছিল, এখনি এখান থেকে একটি ঘোড়া নিয়ে সে ছুটে পালায়। আইয়ুবী যদি সত্যি সত্যি সরাসরি বৈরুত অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তবে খৃস্টানরা এখানে যে প্রস্তুতি নিচ্ছে সে খবর এখনি তার জানা দরকার। নইলে তিনি রমলার মত বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে পড়বেন।

নাইট তখন বলছে, ‘এই সংবাদ আমাদের হাতে এক বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে। এতদিন আইয়ুবী আমাদের ওপর কমাণ্ডো হামলা চালাতো, এবার তার কৌশল আমরা তার ওপরই প্রয়োগ করবো। বৈরুতের চারদিকে আমরা তার জন্য ওঁৎ পেতে থাকবো। এরই মধ্যে আমাদের বাহিনী বিভিন্ন দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের অশ্বারোহী বাহিনীকেও দূর দূরান্তে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু আমরা সুলতানের বাহিনীকে স্বাগত জানাবো না। সুলতানকে স্বাগত জানাবে বৈরুতে আমাদের সে সামান্য সৈন্য থাকবে, তারা। তারা শহরের ফটক বন্ধ করে ভেতর থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আর অামরা তখন সুলতান যেভাবে অতর্কীতে আমাদের বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তেমনি ঝাঁপিয়ে পড়বো। চারদিক থেকে সুলতানকে এবার পিষে মারবো।’

এক কমাণ্ডার প্রশ্ন করলো, ‘জনাব, এটা কি জানতে পেরেছেন, তিনি কোন দিক থেকে আসছেন?’

‘এখনও নিশ্চিতভাবে তা জানা যায়নি।’ নাইট বললো, ‘তবে সমর বিশেষজ্ঞরা অধিকাংশই ধারনা করছেন, তিনি এদিক দিয়েই ঝুঁকিটা নেবেন।’

‘আমাদের সামনে দিয়ে তিনি যখন তার বাহিনী নিয়ে যাবেন, তখন কি আমরা তাকে কিছুই বলবনা?’ এক নাইট দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো।

‘না।’ সম্রাট বিলডন নির্দেশ দিয়েছেন, রাস্তায় তাকে কোন বাধা দেয়া যাবে না। তাকে পিছু হটে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না। তাকে অনেক ভেতরে আসার সুযোগ দিতে হবে এমনকি বৈরুতের উপকন্ঠে যেতে দিতে হবে তাকে। কারণ এবার আমরা তাকে পিষে মারতে চাই।’

‘আপনার তো জানা আছে, বৈরুত ভূমধ্যসাগর তীরে অবস্থিত। আমি যতদূর জানি, সুলতানের নৌবাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী। যদি তারা নৌপথে আক্রমন করে?’

‘হ্যাঁ, তিনি নৌবাহিনীও ব্যবহার করতে পারেন।’ নাইট বললো, ‘সে অবস্থায় আমাদের করণীয় কি তা নিয়েও আমাদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, নৌ পথে আমরা তাকে বাধা দেব না।

তাকে আমরা সাগর তীরে নামার সুযোগ করে দেব। তারপর এমনভাবে তাদের জাহাজগুলো ধ্বংস করবো বা ধ্বংস না করে দখল করে নেবো, যাতে তারা আর ওই পথে পালিয়ে যেতে না পারে।’

এরপর নাইট উপস্থিত কমাণ্ডারদের উদ্দেশ্য করে বললো, ‘বন্ধুগন, তোমরা জানো, যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যদের বিস্তারিত পরিকল্পনা জানানোর নিয়ম নেই। আইয়ুবীর ওখানে যেমন আমাদের গোয়েন্দা আছে, তেমনি আমাদের এখানেও আইয়ুবীর গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে। সৈন্যদের মুখের কথা সুলতানের কানে চলে যাবে।

তাই তোমাদেরকে সৈন্যদের থেকে আলাদা করে পুরো ব্যাপারটা জানিয়ে দিলাম। এতে তোমাদের নিজস্ব পদ্ধতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন সহজ হবে।

কিন্তু সৈন্যদের কাছ থেকে এ পরিকল্পনা গোপন রাখতে হবে। সুলতান এ পরিকল্পনার কথা জানতে পারলে তিনি যুদ্ধের ছক আবার পাল্টে ফেলবেন। তাতে আমাদের এ প্রস্তুতি মাঠে মারা যাবে।’

‘আপনার কি জানা আছে, যেসব মুসলমান শাসক আমাদের সাথে গোপন চুক্তি করেছেন তারা এ অবস্থায় কি ভাবছেন? তারা আবার বিগড়ে যাবে নাতো?’

‘তাদের দিক আমাদের কোন ভয় নেই।’ নাইট বললো, ‘হলবের শাসক এখন মুশেলে এসে গেছে আর মুশেলের শাসক গিয়ে দায়িত্ব নিয়েছে হলবের। তাদের এ পরিবর্তন আমাদের ইচ্ছানুসারেই হয়েছে। সেখানকার অবস্থা আমাদের নিয়ন্ত্রনে আছে।

বরং এমন আশাও করা যায়, আমরা যদি চাই তবে ওইসব শাসকরা গোপনে তাদের সৈন্য আমাদের বাহিনীতে দিয়ে দেবেন। সুতরাং সুলতান আইয়ুবী এবার মুসলিম শাসকদের কাছ থেকে কোন সাহায্য পাচ্ছে না, এ ব্যাপারে তোমরা নিশ্চিত থাকতে পারো।’

পরের দিন। ইসহাক তুর্কীকে আজ খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। সুলতান আইয়ুবীকে কিভাবে ঘায়েল করবে এ নিয়ে নানা পরিকল্পনা পেশ করছিল নাইটের সামনে। নাইটও উৎফুল্ল। ইসহাক তুর্কী খুবই সন্তুষ্ট নাইটের তৎপরতায়। আইয়ুবীকে এবার সে এক হাত দেখে নেবে।

সে এই আনন্দ ধরে রাখতে না পেরে নাইটকে বললো, ‘এতদিনে আমার আশা পূরনের একটি সুযোগ সৃষ্টি হলো। আপনার পরিকল্পনার কোন জুড়ি হয় না। এবার ঘুঘুকে ফাঁদে পড়তেই হবে।’

কথায় কথায় ইসহাক তুর্কী নাইটের কাছ থেকে আরো কিছু তথ্য আদায় করে নিল। নাইট টেরও পেল না, সে নিজের অজান্তে একজন সতর্ক গোয়েন্দার হাতে তুলে দিচ্ছে অমূল্য তথ্য।

উৎসাহের সাথে তথ্য আদায় শেষ হতেই চিন্তায় পড়ে গেল ইসহাক তুর্কী। দ্রুত এ খবর কায়রো পাঠানো দরকার। এখানে আর এমন কেউ নেই, যাকে এ দায়িত্ব দেয়া যায়। যেতে হলে তাকেই যেতে হবে এবং রওনা করতে হবে এখুনি।

প্রথমে মনে হলো, পালিয়ে যায়। এটা তেমন কঠিন কোন কাজ নয় একজন গোয়েন্দার জন্য। কিন্তু তখনি মনে হলো, পালিয়ে যাওযার সাথে সাথেই নাইট বুজে ফেলবে, সে একজন গোয়েন্দা ছিল। তখন তারা তাদের পরিকল্পনা পাল্টে ফেলবে। এরপর তারা কি পরিকল্পনা নেয় সে তথ্য জানা না থাকলে আইয়ুবীকে আবার অন্ধকারে পথ চলতে হবে। অর্থাৎ এখন সুলতান যে তিমিরে আছে সেই তিমিরেই থাকতে হবে তাকে। সুলতানকে এ অবস্থায় ফেলা কিছুতেই ঠিক হবে না।

হঠাৎ তার মাথায় এক বুদ্ধি কেলে গেল। সে ভাবলো, নাইটকে তো আগেই জানিয়েছি, আমি আমার পরিবার দেশে ছেড়ে এসেছি। ওদের বলে এসেছি, কোথাও একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে পারলেই তোমাদের এসে নিয়ে যাবো। এখন তো আমার ঠিকানা হয়ে গেছে। তাছাড়া তাদেরকে এখন বের করে আনতে না পারলে মুসলমানরা তাদের ওপর নির্যাতন চালাতে পারে। অতএব, যুদ্ধের আগেই ওদেরকে আমি এখানে নিয়ে আসতে চাই।

সে নাইটকে বললো, ‘দেখুন,এক-আধ মাস পরেই আমরা বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি। তখন ময়দান ছেড়ে বাড়ী যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। এমনও তো হতে পারে, যুদ্ধে আমি মারা যেতে পারি। তাই আমি চাচ্ছিলাম, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই ওদেরকে এখানে নিয়ে আসি। যাতে আমার মৃত্যুর পর মুসলমানরা আমার স্ত্রী-কন্যাদের লাঞ্ছিত করতে না পারে।’

বাহানাটা ন্যায়সঙ্গত ছিল। নাইট নিজেও দু’দিন আগে ওকে বলেছিল, ‘রবার্ট, এবার তোমার বউ-বাচ্চাদের কাছে নিয়ে এসো।’

তাই তার কথা শুনে নাইট বিন্দুমাত্র সন্দেহ করলোনা। বরং বললো, ‘তাহলে দেরী না করে আজই রওয়ানা হয়ে যাও এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে এসো।’

ইসহাক তুর্কীর তাড়া নাইটের চাইতে অনেক বেশি ছিল। সে আর কাল বিলম্ব না করে নাইটের দেয়া তাজাদম আরবী ঘোড়া নিয়ে তখনি কায়রোর উদ্দেশ্যে বৈরুত ত্যাগ করলো।

ইসহাক তুর্কী ভাবছিল, কায়রো যাওয়ার আগে তার হলব ও মুশেল যাওয়া দরকার। সেখানকার সর্বশেষ অবস্থা কি এটা যেমন জানা দরকার তেমনি হলবে গিয়ে তার রিপোর্ট করাও দরকার। কারণ তার উর্ধতন গোয়েন্দা অফিসার হলবেই অবস্থান করছেন।

হলবের কথা মনে হতেই তার মনে পড়ে গেল মহিয়সী রাজিয়া খাতুনের কথা। তার জানা মতে, তিনি এখন হলবেই আছেন। আর তিনি হলবে থাকলে তার দাসীও হলবেই আছে। এই দাসীই তাকে মহলের অভ্যান্তরে কি ঘটছে তার প্রকৃত তথ্য দিতে পারবে।

সে তার অন্যান্য সাথীদের কথা স্মরণ করলো। তারা নিশ্চয়ই বসে নেই। বসে থাকার লোক তারা নয়। ওখানে গিয়ে তাকে নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে না, সাথীদের সাথে দেখা হলেই সব খবর সে পেয়ে যাবে।

অনুমতি পাওয়ার পর আর দেরী করেনি ইসহাক। সে রাতেই বেরিয়ে পড়েছিল। বৈরুত থেকে বেরিয়ে দুরন্ত বেগে ছুটছিল মুশেলের দিকে।

সে ছিল দক্ষ অশ্বারোহী। ঘোড়াও ছিল বেশ তাজাদম। তার ইচ্ছে করছিল এক মাসের রাস্তা একদিনে অতিক্রম করতে। যদিও তা সম্ভব নয় তবু সে এমন তীব্রগতিতে ছুটছিল, দূরপাল্লার কোন মুসাফির কখনো এমন জোরে ঘোড়া ছুটায় না।

সে পথ চলছিল আর আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছিল, সে পৌঁছার আগেই যেন সুলতান আইয়ুবী অভিযানে বেরিয়ে না পড়েন।

ঘোড়া দ্রুত ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও সে পথে থামতে প্রস্তুত ছিল না। সে তখন ঘোড়ার গতি সামান্য কমিয়ে তাকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দিত। কিছুক্ষণ পর আবার বাড়িয়ে দিত ঘোড়ার গতি।

একদিন অনেক রাতে ক্লান্ত ঘোড়ার পিঠে বসেছিল ক্লান্ত পথিক। ঘুমে তার চোখ ঢুলুঢুলু করছিল। যখন আর কিছুতেই বসে থাকতে পারলো না, তখন সে চলন্ত ঘোড়ার পিঠের ওপর জিন আঁকড়ে শুয়ে পড়লো। ঘুমন্ত সওয়ারী পিঠে নিয়ে ঘোড়া একা একাই এগিয়ে যাচ্ছিল সামনে।

রাত তখনো শেষ হয়নি। এক সময় তার ঘুম ভেঙ্গে গেল ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সে চোখ মেলে দেখলো, অন্ধকার তখনো কাটেনি। সে তড়িঘড়ি উঠে বসে আবার লাগাম তুলে নিল হাতে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বুঝলো, ঘোড়া ঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।

তারার আলো ম্লান হয়ে এসেছিল। ইসহাক তুর্কী বুঝতে পারলো, রাত আর বেশি বাকি নেই।

ইসহাক তাড়া না করে মামুলি গতিতেই বিরামহীনভাবে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।

এক সময় অন্ধকার বিদীর্ণ করে ছুটে এলো ভোরের নরম আলো। সুনসান পথঘাট। আশপাশে কোন বস্তি বা লোকালয় নেই, তাই কোথাও থেকে আজানের সুর ভেসে এলো না। কিন্তু ফজরের সময় হয়ে গেছে বলে এক জায়গায় সে ঘোড়া থামিয়ে দিল।

ঘোড়াকে সবুজ ঘাসের স্তুপে ছেড়ে দিয়ে নামাজ আদায় করে নিল ইসহাক। গোড়াটি ঘাস খাচ্ছে দেখে মায়া লাগলো তার, নিজেও একটি গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে জিরিয়ে নিল কিছুক্ষণ। এতে একটু বিশ্রাম নেয়ার সময় পেল ঘোড়াটিও।

একটু পর ইসহাক সামান্য কিছু শুকনো খাবার দিয়ে নাস্তা সারলো। নিজে পানি পান করে ঘোড়াটিকেও সামান্য পানি পান করিয়ে আবার চেপে বসলো ঘোড়ার পিঠে।

কড়া রোদ উঠলো। পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে এগিয়ে চললো ঘোড়া। এভাবে অনেক পাহাড়ের টিলা মাড়িয়ে, মরুভূমির প্রান্তর মাড়িয়ে দুর্বার বেগে এগিয়ে চললো ইসহাক তুর্কী।

দিন গড়িয়ে রাত এলো, রাত গড়িয়ে এলো দিন। বিরামহীনভাবে পথ চলতে চলতে একদিন অপারাহ্নে ক্লান্ত মুসাফিরের চোখের সামনে ভেসে উঠলো মুশেলের মিনার।

খৃস্টান নাইটের দেয়া আরবী ঘোড়ার পিঠে বসে মুশেলের সেই সুউচ্চ মিনারের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো ইসহাক তুর্কী।

ঘোড়ার গতি কমিয়ে দিল ইসহাক। দিনের আলোয় সে শহরে প্রবেশ করতে চায় না। মাগরিবের নামাজের সময় হলে যখন সবাই সান্ধ্য ব্যস্ততা ও নামাজে দাঁড়াবে, মুশেল প্রবেশের জন্য সে ঠিক সেই সময়টি বেছে নিল।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। শহরের উপকন্ঠে ঘোড়ার পিঠে বসে সে ভাবছিল, শহরে কোন বড় রকমের পরিবর্তন ঘটে যায়নি তো? আমাদের ঘাটিটি নিরাপদ ও অক্ষত আছে তো? সোজা সেই মসজিদের দিকে এগিয়ে গেল, যার ইমাম এথানকার গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান।