হত্যার এই পদ্ধতি সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সামরিক অফিসারদের বেশ ভাবিয়ে তুললো। সুলতান আইয়ুবীর জন্য জীবন উৎসর্গকারী এক দেহরক্ষীর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে নেশা ও সম্মোহনের মাধ্যমে সুলতানের ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য প্রস্তুত করার ভয়ানক খেলা যারা খেলতে পারে, তারা কত ভয়ংকর, নিষ্ঠুর ও বেপরোয়া বুঝতে কষ্ট হয় না কারো। আল্লাহর রহমত আছে বলেই সুলতান অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন। তাদের পরবর্তী আক্রমণ কোনদিক থেকে আসবে তাই নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই অফিসারদের।
এই ঘটনার কয়েকদিন পর।
সুলতান আইয়ুবী দামেশকের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ও সামরিক অফিসারদের এক সম্মেলন ডাকেন।
এরা সবাই ক্ষিপ্ত ছিল খলিফা আস সালেহ ও তার আমীর উজিরদের ওপর। কারণ তারাই সুলতান আইয়ুবীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। ফেদাইন গ্রুপকে তারাই ভাড়া করেছিল গুপ্তহত্যার জন্য।
সকলেই ভেবেছিলেন, সুলতান এ ব্যাপারেই সম্মেলন ডেকেছেন। কিন্তু সুলতান আইয়ুবী সে বিষয়ে কোন আলোচনাই করলেন না। যেন তার এ ব্যাপারে কোন চিন্তাই নেই।
তখন পর্যন্ত গোয়েন্দা বিভাগ শত্রুদের তৎপরতার যে সব সংবাদ দিচ্ছিল তিনি সে সম্পর্কে সম্মেলনে তার প্ল্যান পরিকল্পনার বিষয় সকলকে জ্ঞাত করালেন। তার পরিকল্পনা ও তৎপরতার মধ্যে কোন উত্তেজনার আভাসও ছিল না।
যখন তিনি ভাষণ শেষ করলেন তখন সকলেই উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘আপনার ওপর যে হত্যা প্রচেষ্টা হলো, এ ব্যাপারে আপনি কি পদক্ষেপের কথা চিন্তা করছেন তা তো কিছুই বললেন? এর দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে চাই।’
সুলতান আইয়ুবী হাসিমুখে বললেন, ‘রাগ, উত্তেজনা ও আবেগের বশবর্তী হয়ে কখনো কোন কিছু করবেন না। শত্রুরা আপনাদেরকে উত্তেজিত করার জন্য এমন কিছু করতে বাধ্য করবে চায়, যাতে জ্ঞান বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে রাগ ও আবেগের বশে চলতে গিয়ে আপনারা ভুল করে বসেন।
আমার সমস্ত পরিকল্পনা ও তৎপরতা ওদের অশুভ তৎপরতা মোকাবেলার লক্ষ্যে। কোন ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপার এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় স্বার্থ থেকে আমার দৃষ্টিকে অন্য দিকে ফেরাতে চাই না।
ওদের সাথে আমাদের সংঘাত জাতীয় স্বার্থের কারণে। আমার জীবন, আমার সত্ত্বা এবং তোমাদের প্রত্যেকের জীবন ও সত্ত্বা, সবকিছুই ইসলাম ও মুসলিম জাতিসত্ত্বা রক্ষার জন্য। এর জন্য আমরা সকলেই জীবন কোরবানী করার শপথ নিয়েছি। যুদ্ধের ময়দানে মারা যাই বা শত্রুর ষড়যন্ত্রের মৃত্যুবরণ করি, দুই অবস্থায়ই আমাদের মৃত্যু হবে শাহাদাতের।
শাসক ও মুজাহিদ বাহিনীর মধ্যে পার্থক্য এই যে, শাসকগোষ্ঠী শুধু তার সরকার রক্ষা ও তার ব্যক্তিগত স্বার্থ সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে। আর মুজাহিদ তার দেশ ও জাতির জন্য জীবন কোরবান করে।
আস সালেহ ও তার আমীর উজিররা তাদের বাদশাহী ও ক্ষমতা রক্ষা করতে চায়। এই নিয়ম আল্লাহর বিধানের পরিপন্থি, অতএব তারা পরাজিত হতে বাধ্য। কোন ছোটখাট বিষয় নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সময় ও শক্তি অপচয় করার সুযোগ নেই আমাদের। তাদের সার্বিক ও চূরান্ত পরাজয়ই আমাদের সকল তৎপরতার লক্ষ্য।’
সুলতান আইয়ুবী তাঁর গোয়েন্দাবাহিনীর শাখা প্রধান হাসান বিন আবদুল্লাহকে বললেন, ‘এমন বেওয়ারিশ পুরাতন দালান কোঠার ধ্বংসাবশেষ যেখানে আছে, যার কোন প্রয়োজন নেই, সেগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দাও।’
তিনি আরও নির্দেশ দিলেন, ‘মসজিদে এমন খুৎবা প্রদান করা হবে, যার বিষয় হবে আল্লাহ তায়ালা ইহকাল ও পরকালের মালিক। আর অদৃশ্যের খবর একমাত্র তিনি ছাড়া কেউ জানেন না। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মাঝখানে কোন দালালের সুপারিশের প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ সকল বান্দার আবেদনই শোনেন। এমনকি বান্দারা যা প্রকাশ না করে গোপন রাখে, আল্লাহ তাও জানতে পারেন। তাই কোন লোকের সামনে নত হওয়া, তাকে সিজদাহ করা শুধু নাজায়েজই নয়, সম্পূর্ণ হারাম ও গুনাহের কাজ।
মুসলমানদের দায়িত্ব হচ্ছে, মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে উদ্ধার করা, ব্যক্তিপুজা থেকে মানুষকে রক্ষা করা।
আমার এ কথার মানে এ নয় যে, তোমরা ধর্মীয় নেতাদের শ্রদ্ধা করবে না, আলেম ওলামাদের ভক্তি করবে না। মুরব্বীদের অবশ্যই শ্রদ্ধা করবে, আলেম ও নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধা করবে, তবে তা সর্বাবস্থায় শরীয়তের সীমার মধ্য থেকে হতে হবে।’
তিনি আরো বললেন, ‘তোমরা সৈন্যদের এই উপদেশই দাও, যেভাবে তারা যুদ্ধের ময়দানে নিজেদের দেহ শত্রুর অস্ত্রের আঘাত থেকে বাঁচায়, প্রতিরোধ করে, তেমনিভাবে নিজের অন্তর এবং বিবেককেও শত্রুদের অপপ্রচার ও মতবাদ থেকে রক্ষা করো। এ আঘাত তলোয়ারের আঘাত নয়, কথার আঘাত। শরীরের আঘাত মিলিয়ে যায়, আহত শরীর নিয়েও যুদ্ধ করা যায়, কিন্তু মন ও চিন্তায় যদি আঘাত লাগে, তবে শরীর অকেজো হয়ে যায়।
তোমরা নেশার প্রভাব দেখতে পেয়েছ, কেমনভাবে আমার দেহরক্ষীই আমার ওপরব আক্রমণ করেছিল। কিন্তু যখন নেশার ঘোর কেটে গেল তখন সে নিজেও বিশ্বাস করতে পারলো না, সত্যি সে আমাকে আঘাত করেছে।
মন এমনি এক জিনিস, একে পবিত্র না রাখলে কোন কিছুই আর পবিত্র থাকে না। যখন শত্রুর কথার তীর তোমার মনকে তার বশীভূত করে নেবে তখন তোমার মূল সম্পদ ঈমানের ঘরই ফাঁকা হয়ে যাবে।
এ জন্যই সশস্ত্র লড়াইয়ের চাইতে সাংস্কৃতিক লড়াই অধিক গুরুত্বপূর্ন। সশস্ত্র লড়াইয়ের সৈনিক হিসাবে তোমাদের এ কথা সর্বক্ষণ মনে রাখতে হবে, অস্ত্র লড়াই করে না, লড়াই করে জিন্দাদীল মুজাহিদ, অস্ত্র তার হাতিয়ার। যদি তোমার মধ্যে লড়াই করার সদিচ্ছা ও আগ্রহ শেষ হয়ে যায়, তবে অস্ত্রের মজুদ কোনদিন তোমাকে বিজয় এনে দেবে না। ঈমানকে সর্বক্ষণ সতেজ ও সজীব রাখার জন্য সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য।
প্রতিপক্ষ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালায় মেয়েদের দিয়ে। তোমরা জেনেছো, এই নেশা ওরা প্রয়োগ করেছিল একটি সুন্দরী মেয়ের সাহায্যে। এই মেয়েদেরকেও ওরা নেশার সামগ্রী বানিয়ে নিয়েছে। এরা ওই মেয়েদের নিয়ে নেশায় নেশায় নেশাময় ভুবন তৈরির চেষ্টা করবে, আর তোমাদের কাজ হবে এই নেশার জগত থেকে মুক্ত থাকা, জাতিকে এই নেশার জগত থেকে সরিয়ে আনা।
এ কথাও মনে রেখো, এই নেশা ওরা এই জন্যই ছড়াতে চায়, যাতে তোমাদেরকে গোলাম বানাতে পারে ভেড়ার পালের মত তাড়িয়ে বেড়াতে পারে ইচ্ছামত।
বাঁচতে চাইলে তোমরা তোমাদের দায়িত্বের অনুভূতি তীক্ষ্ণ করো, মুসলমানদের জাতীয় চেতনাবোধ ও শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি জাগ্রত করো। আমি বার বার তোমাদের বলি, তোমরা আল্লাহর খলিফা, তাঁর প্রতিনিধি- এ কথা কখনো ভুলে যেয়ো না। সমগ্র বিশ্ব মানবতার ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব, আল্লাহর তামাম সৃষ্টির মঙ্গল ও কল্যাণ সাধনের দায়িত্ব তোমাদের।
এত বড় সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তায়ালা অন্য কোন প্রাণী, অন্য কোন জাতিকে দান করেননি। কোন অর্বাচীন, অবিবেচক ও অসতর্ক ব্যক্তি এই দায়িত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে না। এর জন্য চাই কঠিন দায়িত্ববোধ, চাই জাতীয় সম্মান রক্ষার সুকঠিন অঙ্গীকার।
উম্মতে মুহাম্মদীর প্রতিটি সদস্যের মধ্যে এই চেতনাবোধ, এই দায়িত্বানুভূতি তাদের ঈমানের সাথে সংযুক্ত করে দাও। তাহলে আর কোন নেশা ওদের ওপর চেপে বসতে পারবে না। বিষে বিষ ক্ষয় হয়। সাংস্কৃতিক হামলার মোকাবেলায় সাংস্কৃতিক তৎপরতা বাড়াও। আল্লাহ প্রেমের নেশা জাগাও অন্তরে। তাঁর সৃষ্টি সেবার মধ্য দিয়ে বিকশিত করো সে প্রেম। এসব তুচ্ছ নেশা তখন তোমাদের স্পর্শ করতেও ভয় পাবে।’
সুলতান আইয়ুবী আক্রমণের যে প্ল্যান পরিকল্পনা তৈরী করেছিলেন, সে অনুসারে দুর্গের পরে দুর্গ জয় করে অগ্রসর হওয়ার জন্য তৈরী হলো মুজাহিদ বাহিনী। মজবুত ও বিখ্যাত কেল্লা হিসেবে হেমস, হলব ও হেমাতের সুনাম ছিল। তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল সুদৃঢ়। কেল্লাগুলোও ছিল শহর থেকে দূরে।
আরও কিছু দুর্গ ছিল পাহাড়ী ও দুর্গম এলাকায়। এই প্রচন্ড শীতে যে এলাকায় অভিযান পরিচালনার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারে না।
পাহাড়ের উপরে বরফের পুরো আস্তর পড়েছিল। হিমেল বাতাসে মৃত্যুর হাতছানি। কেল্লার ভেতর শত্রুসেনারা উষ্ণ আরামে বিভোর। তারা জানে, এ সময় মানুষ তো দূরের কথা, কোন পাখিও ডানা মেলবে না আকাশে, প্রাণীরা পা ফেলবে না রাস্তায় হিম-শীতলতায়। তাই তারা নিরুদ্বিগ্ন, দুশ্চিন্তাহীন।
তাদের খ্রিস্টান উপদেষ্টারাও তাদের উপদেশ দিয়েছে, ‘শীতকালটা পার কর যুদ্ধের পরিকল্পনা ছাড়াই। শীত গেলে আইয়ুবীর বিরুদ্ধে আমরা এক যোগে ঝাপিয়ে পড়বো। নাস্তানাবুদ করে দেবো তার যুদ্ধবাজ বাহিনীকে।’
এদিকে সুলতান আইয়ুবীর অটুট পণ, শীতকালেই যুদ্ধ করবেন তিনি। কারণ গোয়েন্দারা তাকে যে সংবাদ সরবরাহ করেছে তাতে এটাই যুদ্ধ যাত্রার মোক্ষম সময়।
একদিন এক সংবাদদাতা খবর দিল, ‘হলবের মসজিদের ইমামগণকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন তাদের খুৎবায় সুলতান সালহউদ্দিন আইয়ুবীর সাম্রাজ্য লিপ্সার কাহিনী প্রচার করে। তিনি পাপী, গোনাহগার, ক্ষমতালোভী। তিনি অহংকারী এবং ইসলামী ক্ষেলাফতের শত্রু। খলিফার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে সে মুরতাদ হয়ে গেছে। মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড।
অতএব আইয়ুবীকে হত্যা করে ইসলামী খেলাফতকে রক্ষা করা এখন ফরজ। যারা সরাসরি এ জেহাদে শরীক হতে পারবে না, তারা যেন এ জেহাদকে সাহায্য সহযোগীতা দেয়। যাদের এ সামর্থ্যও নেই তারা যেন এ জেহাদে সাফল্যের জন্য দোয়া করে। যারা এটাও করবে না, তারা মুসলমান থাকবে না।’
খুৎবায় তারা যেন আরও বলে, ‘সুলতান আইয়ুবী বিলাসপরায়ণ, চরিত্রহীন।’ তাদের আরও বলা হয়েছে, ‘যদি খুৎবায় খলিফার নাম না নেয়া হয় তবে সে খুৎবা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আর অসম্পূর্ণ খুৎবা দেয়া যেমন পাপের কাজ, শোনাও তেমনি পাপ।’
সরাইখানা, যাত্রী ছাউনি এমনকি হাটবাজারেও এ ধরনের কথা প্রচার করা হচ্ছে। ‘সুলতান আইয়ুবী বিলাসপরায়ণ, চরিত্রহীন, ক্ষমতালিপ্সু। সুলতান আইয়ুবী কাফের।’
সংবাদদাতা আরো বললো, ‘এই সাথে জনমনে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
খলিফা আস সালেহর সৈন্য সংখ্যা অল্প ছিল, কারণ তার অর্ধেকের বেশী সৈন্য সেনাপতি তাওফিক জাওয়াদের নেতৃত্বে সালহউদ্দিন আইয়ুবীর সাথে একাত্ব হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং আস সালেহর স্বার্থপর আমীর ও উজিররা জনগণকে যুদ্ধের জন্য উস্কানি দিতে লাগলো।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে খ্রিস্টানদের কার্যকরী সহায়তা পেল ওরা। খ্রিস্টানদের সহযোগীতা আদায়ের জন্য যেসব এলাকায় খ্রিস্টান বাসিন্দা বেশী ছিল সেখান থেকে হলব, মুশাল ও বিভিন্ন পল্লী এলাকায় তাদের পুনর্বাসন করা হলো। সেই সাথে তাদের নির্দেশ দেয়া হলো, তারা যেন এই এলাকার লোকদের মাঝে সুলতান আইয়ুবীর বিরুদ্ধে উস্কানী ও মিথ্যা প্রচারনা চালায়।
গোয়েন্দাদের রিপোর্ট থেকে আরো জানা গেল, হলবের নাগরিকদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। হলববাসী সবার মুখেই এখন অস্ত্রের ভাষা। যুদ্ধের উন্মাদনার সাথে সাথে জনগণের মধ্যে অস্থিরতা ও ভিতির ভাবও ছড়িয়ে পড়লো।
ফলে স্থানীয় মুসলমানদের মন দুশ্চিন্তা এবং ভীতিতে ছেয়ে গেল। তারা বলাবলি করছিল, ‘মুসলমান আপোষে ভাই ভাই যুদ্ধ করবে, এটা কিয়ামতের পূর্ব লক্ষণ।’
কিন্তু তাদের কথা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর বিরুদ্ধের যুদ্ধের প্রচারণার অন্তরালে হারিয়ে যাচ্ছিল। কারণ এসব কথা খ্রিস্টানদের পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী ছিল।
মুসলমান মুসলমান আপোষে যুদ্ধ করা পাপ এ কথা বলায় কয়েকটা মসজিদ থেকে আগের ইমাম ও খতিবকে বহিষ্কার করা হলো।
ত্রিপলীর খ্রিস্টান শাসক রিমান্ড প্রচুর ধনরত্ন ও অর্থ-সম্পদ নিয়ে আস সালেহকে সহযোগীতা করার জন্য যেসব উপদেষ্টা পাঠিয়েছিল তাদের পরামর্শেই পরিচালিত হচ্ছিল এসব তৎপরতা।
এসব উপদেষ্টার মধ্যে গোয়েন্দাবাহিনীর অভিজ্ঞ অফিসার যেমন ছিল তেমনি ছিল সন্ত্রাসী গ্রুপের লোকও। এই উপদেষ্টারা হলবে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে খ্রিস্টান-মুসলিম সম্মিলিত বাহিনীর কমান্ডিং দায়িত্ব অর্পণ করা হলো।
দু’দিন পর। আরেক গোয়েন্দা এসে হাসান বিন আবদুল্লাহকে খবর দিল, ‘খ্রিস্টান ষড়যন্ত্রকারীরা সুলতানের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেছে। এতে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে মুসলমানদের মধ্যে। বিভিন্ন মসজিদে সুলতানের বিরুদ্ধে খুৎবা দেয়া হচ্ছে। তাতে সুলতানকে কাফের, মুরতাদ ও ক্ষমতালিপ্সু বলে প্রচার করা হচ্ছে। যে সব মসজিদের ইমামরা এসব খুৎবাদানে বিরত রয়েছে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে ইমামতি থেকে।’
সে আরো জানালো, ‘হলবের এক মসজিদের ইমাম তার খুৎবায় বিভিন্ন রকম বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি সমবেত মুসল্লিদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘ভাইসব, জাতির সামনে এক সংকটময় সময় উপস্থিত। একদিকে খলিফা আইয়ুবীর বিরুদ্ধে জেহাদে শামিল হওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছেন, অন্যদিকে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী প্রস্তুতি নিচ্ছেন লড়াইয়ের। দু’দলই আজ মুখোমুখি এবং দু’দলই দাবী করছে ইসলামের স্বার্থে আমরা যে তাদের সহযোগিতা করি।
ফলে কে যে আসলে ইসলামের স্বপক্ষে এ নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি। আমরা অবশ্যই ইসলামের স্বপক্ষ শক্তিকে সহায়তা করতে চাই এবং তা করা আমাদের ইমানের দাবী। কিন্তু আমরা কার পক্ষ নেবো? কে ইসলামের জন্য অস্ত্র ধরেছেন? খলিফা বা সুলতান এদের একজন ইসলামের পক্ষে হলে অন্যজন অবশ্যই ইসলামের শত্রু। কিন্তু কে সে?
প্রিয় মুসল্লি ভাইয়েরা আমার! যদি দুদল মুসলমান একে অন্যের বিরুদ্ধে সঙ্ঘাতে লিপ্ত হয়, তবে শরীয়ত অনুযায়ী মুসলমানদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের বিরোধ মিটিয়ে দেয়া। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন কোন অভিভাবক নেই, যার কথা ওরা শুনবে। এখন সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে অভিভাবকরা, ফলে শালিশের কোন অবকাশ নেই এখানে। সংঘাত অনিবার্য। তাই, কে ইসলামের স্বপক্ষে আর কে নয়, তা নির্ধারণ করা আজ জরুরী হয়ে পড়েছে।
ভাইসব, বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামের ঝান্ডার নিচে সমবেত হতে হবে আমাদের। এই বিভ্রান্তি থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে, যদি দেখেন দু’দল মুসলমানই ইসলামের জন্য লড়াই করছে বলে দাবী করে, তবে তাদের মধ্যে সেই দলই ইসলামের স্বপক্ষে, ইসলাম বিরোধি শক্তির সাথে যাদের আঁতাত নেই। যারা নিজেদের বিজয়ের জন্য অমুসলমানের কাছে যাহায্যের জন্য হাত বাড়ায় না। যদি দেখেন, অমুসলমানরা কোন পক্ষকে অস্ত্র দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, সৈন্য দিয়ে বা জনবল দিয়ে সাহায্য করছে, তবে তারা যতই নামাজ রোজার পাবন্দী হোক, লেবাসে-সুরতে পরহেজগারী লোক দেখাক, তারা ইসলামের শত্রু।
ইসলাম বিরোধী শক্তি ইসলামের বিনাশ সাধনের জন্য সব সময় মুসলমানদের মধ্য থেকে এমন একদল লোককে কিনে নিতে চায়, ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে যাদের কাজে লাগানো যায়। কেউ না বুঝে, কেউ লোভ-লালসায় পড়ে তাদের সহযোগী হলে তাদেরকে তারা সেই সংগ্রামী কাফেলার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়। মিথ্যা ফতোয়া দেয়া, অহেতুক অপবাদ দেয়া ও নানারকম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ইসলামী শক্তির অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়ার কাজে কাফেরদের সরাসরি হস্তক্ষেপের চাইতেও এ পদ্ধতি বেশী কার্যকরী হয় বলে দুশমন এ ব্যাপারে খুবই আগ্রহী থাকে।
আপনারা জানেন, ইসলামী খেলাফতের হকদার সেই, যিনি আমাদের মাঝে জ্ঞানে, যোগ্যতায়, বিচক্ষণতায়, দূরদর্শিতায়, ঈমানী শক্তি ও আমলে সবচেয়ে প্রবল। ইসলামে রাজতন্ত্র নেই, তাহলে মরহুম জঙ্গীর নাবালক সন্তান কি করে খেলাফতের দাবীদার হয়? তাকে সহায়তা দানের জন্য তার দরবারে এখন খ্রিস্টান উপদেষ্টারা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে কিসের জন্য? কেন খ্রিস্টান শাসক রিমান্ড তার সাথে সামরিক সহযোগিতা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়? অতএব, এটা পরিষ্কার, খলিফার বাহিনী ইসলাম বিরোধী শিবিরে অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীকে সহায়তা করা আমাদের জন্য ফরজ হয়ে গিয়েছে।’
গোয়েন্দা বললো, ‘যেদিন তিনি এ বক্তব্য দেন, সে রাতেই কে বা কারা তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় হুজরাখানায় খুন করে ফেলে রেখে যায়।’
❀ ❀ ❀
দামেশক। সুলতান আইয়ুবী দু’তিনদিন ধরে ক্রমাগত সৈন্যদের প্রস্তুতি ও মহড়া পরিদর্শন করলেন। গোয়েন্দাদের কাছ থেকে সর্বশেষ রিপোর্ট সংগ্রহ করলেন। রাতে খালি গায়ে শীতের মধ্যে সৈন্যদের যুদ্ধ করা দেখলেন।
কাছেই পাহাড়ী এলাকা। এরপর তিনি সৈন্যদের নিয়ে গেলেন সেই পাহাড় ও মরুভূমিতে। সেখানে তাদের এগিয়ে যাওয়া, ও পালিয়ে আসা প্রত্যক্ষ করলেন। দেখলেন অভ্যস্ত ঘোড়াগুলোর পাহাড়ে উঠা নামার দৃশ্য। অশ্বগুলো এমন দ্রুত ও অভ্যস্ত ভঙ্গিতে উঠা নামা করছিল যে, সুলতান নিজেও অভিভুত হয়ে পড়লেন।
ওদিকে খ্রিস্টান গোয়েন্দাদের কল্যাণে হলবে এ খবর পৌঁছে গেল। খবর পাওয়ার সাথে সাথেই কনফারেন্সে মিলিত হলো খৃষ্ট-মুসলিম সম্মিলিত বাহিনীর কমান্ডার ও সেনাপতিরা। সুলতান আইয়ুবীর সৈন্যরা রাতেও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এ সংবাদে তারা তেমন বিচলিত হলো না। তারা তাচ্ছিল্যের সুরে বলতে লাগলো, ‘আইয়ুবীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
অন্যজন বললো, ‘আমাদের কাছে আসুক, তাঁর মাথার চিকিৎসা হয়ে যাবে।’
এভাবে নানারকম হাসি তামাশার মধ্য দিয়ে শেষ হলো তাদের কনফারেন্স।
দামেশকে আস সালেহর গোয়েন্দা ছিল, শেখ মান্নানের খুনী চক্র ছিল কিন্তু তারা কেউ সুলতানের এই যুদ্ধ প্রস্তুতিকে স্বাভাবিকের বাইরে কিছু মনে করে নি।
সম্রাট রিমান্ড তাঁর একজন দক্ষ গোয়েন্দাকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন, সুলতান আইয়ুবীর প্রতিটি তৎপরতার রিপোর্ট তাকে নিয়মিত তাকে সরবরাহ করতে হবে। তার কাছ থেকে রিপোর্ট পেয়েই তিনি হলবে কনফারেন্স ডাকিয়েছিলেন। কিন্তু কেন সুলতান এরকম তৎপরতা চালাচ্ছেন তা তিনি নিজেও বুঝে উঠতে পারলেন না।
সুলতান আইয়ুবীর গোয়েন্দা দল হলব ও মুসালে জালের মত ছড়িয়ে ছিল। তাদের কেন্দ্রীয় কমান্ডও তখন হলবেই আত্মগোপণ করেছিলেন। তিনি একজন আলেমের বেশে সেখানে অবস্থান করছিলেন এবং গোয়েন্দাদের সংগৃহীত সমস্ত তথ্য একত্র ও যাচাই বাছাই করে তা আবার গোপনে দামেশকে পাঠিয়ে দিতেন।
তিনি বিপদের সময় তাদের আত্মগোপন করার ব্যবস্থা করে দিতেন। প্রকাশ্যে তিনি ছিলেন সুলতান আইয়ুবীর একজন চরম বিদ্বেষী ও ঘোর সমালোচক। অনেক সময় সুলতানকে গালমন্দ করতেও কসুর করতেন না।
সেখানে লোকেরা তাকে খুবই সম্মান ও শ্রদ্ধা করতো। আমীর, উজির ও উচ্চশ্রেণীর লোকেরাও তাঁকে সম্মানের চোখে দেখতো। তাঁর গোয়েন্দারা গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানেই ছড়িয়ে ছিল। আল মালেকুস সালেহের মহলের বডিগার্ডদের মধ্যেও তাঁর গোয়েন্দা ছিল।
দু’জন গোয়েন্দা বিশেষ প্রহরী হিসেবে খলিফার কেন্দ্রীয় কমান্ডের সেই অফিসে থাকতো, সে অফিস কক্ষে তাদের যুদ্ধের পরামর্শ সভা বসতো।
খৃস্টান গোয়েন্দাদের কমান্ডার বললো, ‘প্রথমে দামেশকে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে এবং সুলতান আইয়ুবীর গোয়েন্দাদের জোর অনুসন্ধান চালিয়ে খুঁজে বের করতে হবে।’
সুলতান আইয়ুবীর যে দু’জন গোয়েন্দা হলবের হাই কমান্ডের পাহারাদার ছিল তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল খলিল। সে যেখানে পাহারায় ছিল সেখানকার হলরুমেই আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মানে নাচ গানের আসর বসতো। হলরুমটি ছিল সাজানো গোছানো।
যখন হলবের আমীর ও উজিররা খৃস্টানদের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলো তখন এ হলরুমটি আরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো হলো। নাচ গানের আয়োজনেও আনা হলো বৈচিত্র।
নাচের জন্য যোগাড় করা হলো বাছাই করা সুন্দরী নর্তকী। যৌবনের সম্পদে পরিপূর্ণ এ মেয়েরা নাচ গানে ছিল বেজায় পটু। এ নর্তকীর মধ্যে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হলো কয়েকটি খৃস্টান মেয়ে। এ মেয়েরাও পেশাগত নর্তকী হিসাবেই জায়গা পেল এ আসরে।
এরা ছিল মুলত খৃস্টান গোয়েন্দা। আস সালেহের উজির ও আমীরদের আঙ্গুলের ডগায় নাচানোর জন্যই এদেরকে আমদানি করেছিল খৃস্টানরা।
তাদের দায়িত্ব ছিল, বিশেষ বিশেষ আমীর ও সামরিক অফিসারদের নিয়ন্ত্রণে ও চোখে চোখে রাখা। তারা খোঁজ রাখবে, সুলতান আইয়ুবীর কোন ভক্ত ও তাবেদার তাদের সংস্পর্শে আসে কিনা। এ ছাড়াও উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারদের মনে খৃস্টানদের প্রতি ভালবাসা ও ক্রুসের প্রতি সম্মান দেখানোর অভ্যাস সৃষ্টি করার দায়িত্ব ছিল এদের।
নাচ গানের সাথে থাকতো শাহী ভোজের ব্যবস্থা। ভোজের সময় পুরোদমে চলতো শরাব পান। সোরাহীর পর সোরাহী শূন্য হয়ে যেত।
নেশায় যখন ঢুলুঢুলু হয়ে যেত মেহমানদের চোখগুলো, তখন জোড়ায় জোড়ায় বিভিন্ন কামরায় ঢুকে পড়তো আমন্ত্রিত মেহমানবৃন্দ।
এই হলরুমেই যুদ্ধের আলোচনা ও পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হতো। হলরুমের প্রধান দরজায় দু’জন প্রহরী কোমরে তলোয়ার ঝুলিয়ে, হাতে বর্শা নিয়ে একভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতো। চার ঘণ্টা পর পর বদল হতো প্রহরীদের ডিউটি। অধিকাংশ সময়ই খলিল ও সুলতান আইয়ুবীর অপর গোয়েন্দার ডিউটি এক সাথেই পড়তো।
এখান থেকে তারা অনেক তথ্য সংগ্রহ করতো আর সে সব তথ্য তাদের কমান্ডারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিত দামেশকে।
এক সন্ধ্যায় এ জলসায় এলো এক নতুন নর্তকী। মেহমানরা একে একে আসছে। নর্তকী ও গায়িকার দল এবং অন্যান্য মেয়েরাও আসছে দল বেঁধে।
খলিল ও তার সঙ্গী এদের সবাইকে জানতো ও চিনতো। দূর দূরান্তের কেল্লার অধিপতিরাও আসতো এ আসরে। হঠাৎ তারা লক্ষ্য করলো, একজন অপরিচিত মেহমান তাদের পাশ কেটে হলরুমে ঢুকছে।
লোকটির পরিচয় উদ্ধারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল খলিল। অল্পক্ষণের মধ্যেই পরিচয় পেয়েও গেল। এ লোক ছিল রিমান্ডের গোয়েন্দা বিভাগের চৌকস ও ঝানু এক অফিসার।
এ লোক কেন এসেছে, কি করে তা জানার তাগিদ অনুভব করলো খলিল।
কিছুক্ষণ পর সে আরও একটি নতুন মুখ দেখলো। না, একেবারে নতুন নয়, গত তিন চার বছর ধরেই সে এই মেয়েকে দেখছে।
খলিল তার সঙ্গীর সাথে ডিউটি শেষ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল, কোত্থেকে মেয়েটি তাদের সামনে এসে পড়লো।
হতচকিত হয়ে থমকে দাঁড়ালো ওরা। এই মুখটি কেন যেন খলিলের চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। কিন্তু সে ভাবলো, চেহারার মত চেহারাও তো থাকতে পারে। সে মেয়েটির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
কিন্তু মেয়েটি তাকে গভীরভাবে লক্ষ্য করলো এবং তার দিকে এগয়ে এল। খলিল ও তার সঙ্গী যে এসব খেয়ালই করেনি এমনি একটি ভাব নিয়ে সরে গেল সেখান থেকে।
দ্বিতীয় দিনও এমন হলো। ওরা ডিউটি শেষ করে রওনা হতেই মেয়েটি সামনে পড়লো তাদের। খলিল মেয়েটিকে নর্তকী মনে করলেও তার চেহারা থেকে শাহজাদীর জৌলুস ঝরে পড়ছিল।
খলিল একজন পাহারাদার মাত্র, তাঁর সাথে সম্পর্ক করার জন্য এমন মেয়ের তো আগ্রহী হওয়ার কথা নয়! তাহলে সে কি চায় তার কাছে? কেন তার পথ আগলে দাঁড়াতে আসে? প্রশ্নটি ভাবিয়ে তুললো তাকে।
এমন সুন্দরী, শাহজাদীর মত যার রুপ জৌলুস, সে কি আসলেই কোন নর্তকী, নাকি কোন আমীরের আদুরে কন্যা! এসব ভাবতে ভাবতে হঠত করেই তার সেই মেয়ের কথা স্মরণ হলো, যে মেয়ের চেহারা তার হৃদয়ের অনেক গভীরে লুকিয়ে রেখেছিল সে এতোদিন!
❀ ❀ ❀