» » গোপন বিদ্রোহী

বর্ণাকার

এক ফোটা রক্তও না বিলিয়ে দেশের কর্তৃত্ব পাওয়ায় ওরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূল্য বুঝে না। বিনামুল্যে ক্ষমতা পেয়েছে বলে দেশের জন্য কোন দরদ নেই ওদের।

এই জন্যই কঠিন দায়িত্ব কাঁধে নিয়েও ওরা বিলাসিতা ও সুখের সাগরে হাবুডুবু খেতে পারে। ক্ষমতা ও গদির জন্য নিজের ঈমান বিক্রি করে দিতে পারে। জাতির প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের কন্থ রুদ্ধ করার পায়তারা করতে পারে।

সুলতান বলছিলেন, ‘আমাদের প্রিয় নবী (সা) ও তার প্রিয় সাহাবীরা শরীরের ঘাম ও রক্ত ঝরিয়ে অর্ধ পৃথিবীতে ইসলামের আলো জ্বেলেছিলেন। তাদের উত্তরসূরিরা সেই আলো বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন অসীম ত্যাগ ও কোরবানির বিনিময়ে। কিন্তু আজ? আজ শয়তান আবার আল্লাহর বান্দাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। অন্যায় ও অসত্যের ফেতনা আবার ছোবল হানতে শুরু করেছে মুসলমানদের মন মগজে। সেই ফেতনার কারনেই আমরা আজ পরস্পরের রক্ত ঝরাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি।’

সুলতান আবার একটু থামলেন। এই ফাঁকে এক উপদেষ্টা বললো, ‘কাফেরদের আগে গাদ্দারদের নির্মূল করা প্রয়োজন। যদি আমরা সত্যের ওপর থেকে থাকি তবে আল্লাহ আমাদের অবশ্যই বিজয় দান করবেন। যেহেতু আমাদের চেতনায় সত্য ও সততার আগুন আছে তাই আমরা ব্যর্থ হবো না, হতে পারি না।’

‘তুমি ঠিকই বলেছো।’ সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘এ অঞ্চলের শাসন ক্ষমতা খৃষ্টানদের হাতেই থাকুক, আর নামধারী মুসলমানদের হাতেই থাকুক, জনগনের ভাগ্যের তাতে কোন পরিবর্তন হবে না। জুলুম, নির্যাতন আর সন্ত্রাসের রক্ত-নদীতেই ডুবে থাকতে হবে তাদের। খৃষ্টানদের আধিপত্য কবুলকারী গাদ্দার মুসলিম শাসকেরা খৃষ্টানদের মতই মজলুম জনতার ওপর শোষণের ষ্টীমরোলার চালাবে।’

আইয়ুবী ঠিকই বলেছিলেন। পরবর্তীতে ইতিহাসে আমরা তার অসংখ্য নজীর দেখেছি। স্পেনে মুসলমানদের পতন হলো কেন? হয়তো অনেকেই বলবে, কাফেরদের ষড়যন্ত্রের কারণে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হলো কিভাবে? সফল হলো, মুসলমানরা নিজেরাই কাফেরদের ষড়যন্ত্রের বস্তু ও অস্ত্রে পরিণত হয়েছিল বলে। মুসলমানরা তাদের দোসর হিসাবে কাজ না করলে, গাদ্দারীর মূল্য ও পুরষ্কার না নিলে, স্পেনে মুসলমানদের পতন হতো না।

জিন্দাদীল ঈমানদার শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্পেনে যে ইসলামের বিজয় নিশান উড়েছিল, সেই নিশান ধুলায় লুটিয়ে পড়েছিল আবু আব্দুল্লাহর মত গাদ্দারের কারণে।

কাফের ও খৃষ্টানরা মুসলিম আমীরদেরকে ধন সম্পদ ও ইউরোপের সেরা সুন্দরীদের ভেট দিয়ে তাদেরকে হতগত করেছিল। তাদের প্ররোচনায় তারা নিজেদের সেনাবাহিনীকেও অপ্রয়োজনীয় মনে করেছিল।

দেশের জনগন ও ঈমানের আলোয় আলোকিত মুজাহিদরা যখন এই আত্মঘাতি পদক্ষেপের বিরোধিতা করলো, তখন সেই বিলাসপ্রিয় নেতারা তাদেরকেই অপরাধী সাব্যস্ত করেছিল। এভাবেই খৃষ্টানরা মুসলমানকে দিয়ে ইসলামের পতাকাবাহী কাফেলাকে স্তব্ধ করে দিয়ে পরে সেই গাদ্দার নেতৃবৃন্দ ও চেতনাহীন মুসলমানদেরকে স্পেনের মাটি থেকে উচ্ছেদ করে তাদের রক্ত ধোয়া মাটিতে খৃষ্টান সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।

সুলতান আইয়ুবী ঈমানী চেতনাদীপ্ত এক মুজাহিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন অসম্ভব প্রতিভাধর এক সমর বিশারদও। তিনি তার সেনাবাহিনীকে এমনভাবে বিন্যস্ত করে রেখেছিলেন, তার দখলকৃত কোন কেল্লাতে শত্রুরা আক্রমণ করার চিন্তাও করতে পারছিল না।

আইয়ুবীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে প্রতিপক্ষ যেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলছিল নিজেদের শক্তি ও ক্ষমতানুযায়ী, তেমনি তৎপর ছিলেন সুলতান আইয়ুবীও। কেল্লাতে তিনি অল্প সংখ্যক সৈন্যই মোতায়েন রাখলেন। কারণ তিনি কেল্লার মধ্যে থেকে যুদ্ধ করার পক্ষপাতি ছিলেন না। এর পরিবর্তে পাহাড়ী এলাকার সমস্ত রাস্তায় ও প্রান্তরে এবং পর্বত চুড়ায় তীরন্দাজদের তিনি বসিয়ে রেখেছিলেন।

যে সব রাস্তা সরু তার পাশে পাহাড় চুড়ায় ভারী পাথর জমিয়ে লোক বসিয়ে রেখেছিলেন, শত্রুরা কাছে এলে তাদের ওপর যেন সে পাথর গড়িয়ে দেয়া যায়। দামেশকসহ বিভিন্ন পথে কমান্ডো সৈন্যদের বসিয়ে রেখেছিলেন শত্রুর সে কোন হামলা মোকাবেলা করার জন্য।

হিম্মতের সর্বোচ্চ এবং প্রশস্ত শৃঙ্গটি ছিল টিলার মত। টিলার চূড়াটি শিংয়ের মত দু’দিকে বিভক্ত হয়ে গেছে। সেটাকে সুলতান আইয়ুবী একটি ফাঁদ বানালেন। সেনাপতিদের বুঝিয়ে দিলেন, শত্রু বাইরে থেকে যুদ্ধ শুরু করলে কিভাবে এ ফাঁদ ব্যবহার করে শত্রুদের শায়েস্তা করতে হবে।

সুলতান আইয়ুবী সমগ্র এলাকা এমনভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলেন, শত্রুদের ইচ্ছে মত তিনি যে কোন দিকে হাকিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া তিনি কমান্ডো বাহিনীকে ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে দূর দুরান্ত টহলে পাঠিয়ে দিলেন।

অন্যদিকে সুলতানের গোয়েন্দা বিভাগও ছিল সমান সক্রিয়। সমগ্র এলাকায় যেমন গোয়েন্দারা ছড়িয়েছিল, তেমনি সক্রিয় ছিল শত্রুদের কেল্লার মধ্যেও। তারা দুশমনের প্রতিটি গতিবিধির সংবাদ তাৎক্ষনিকভাবে সুলতানকে পাঠানোর ব্যবস্থা করে রেখেছিল।

গোয়েন্দা মারফত তিনি জানতে পেরেছিলেন, তথাকথিত খলিফা আল মালেকুস সালেহ তাঁর গভর্নর হারান কেল্লার অধিপতি গুমাস্তগীন ও মুশালের শাসক সাইফুদ্দিনকে সাহায্যের জন্য ডেকে পাঠিয়েছেন।

জানা গেছে, তারা উভয়েই কিছু শর্ত আরোপ করে সাহায্য দিতে রাজী হয়েছে। এসব শর্ত না মানলে তারা খলিফার ডাকে সাড়া দেবে না।

গোয়েন্দারা এ কথাও জানিয়েছে, এসব মুসলমান শাসক ও আমীর প্রকাশ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকলেও তাদের অন্তরে পরস্পরের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব। প্রত্যেকেই যুদ্ধ করে নিজের রাজ্য ও এলাকা বাড়ানোর চেষ্টায় আছে। আর খৃষ্টানরা তাদেরকে সাহায্য দেয়ার চেয়ে উৎসাহ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করতে চায়। বিশেষ করে খৃষ্টানদের আগ্রহ হচ্ছে, যে করেই হোক, মুসলমানরা যেন একে অন্যের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়ে যায়।

‘শামস বখত ও সাদ বখতের কোন সংবাদ এখনও আসেনি?’ হাসান বিন আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন সুলতান।

‘নতুন কোন খবর নেই।’ হাসান বিন আব্দুল্লাহ উত্তর দিলেন, ‘তারা খুব সাফল্যের সাথেই কাজ করছে। গুমাস্তগীন কোন একশনে গেলে এ দুই সেনাপতিই সামাল দিতে পারবে বলে আমি মনে করি। তাদেরকে সেভাবেই কাজ করতে বলা হয়েছে।’

আলী বিন সুফিয়ানের সহকারী হাসান বিন আবদুল্লাহ সুলতান আইয়ুবীর বর্তমান অভিযানে গোয়েন্দা প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আলী বিন সুফিয়ানকে সুলতান রেখে এসেছিলেন তাঁর অনুপস্থিতিতে বিশেষভাবে মিশরের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখার জন্য। মিশরের বাইরে দামেশক ও অধিকৃত অঞ্চলের দায়িত্ব ছিল হাসানের ওপর।

সুলতান আইয়ুবী হাসানের সাথে যে শামস বখত ও সাদ বখতকে নিয়ে আলাপ করছিলেন, ওরা দু’জনই ছিল গুমাস্তগীনের সেনাপতি।

গুমাস্তগীন সম্পর্কে তো আগেই বলা হয়েছে, লোকটা ছিল শয়তান প্রকৃতির। দায়িত্ব ও পদমর্যাদায় সে একাধারে প্রাদেশিক গভর্নর ও হারান দুর্গের অধিপতি।

আইয়ুবীর অভিযানের খবর পেয়েই সে কেল্লার সৈন্যদের সংহত করে কেল্লার ভেতরে ও বাইরে প্রচুর সৈন্য সমাবেশ ঘটালো। খেলাফতের অধীন এবং খলিফার আদেশের বাধ্য ও অনুগত হওয়ার পরও সে তার নিজস্ব রাজনীতিতে এতটাই সক্রিয় ছিল যে, রাজনীতিতে তার মত ধুরন্ধর ও দক্ষ সেখানে আর কেউ ছিল না।

চতুর রাজনীতিবিদ হিসাবে সে এতটাই মশহুর ছিল যে, স্বয়ং খলিফাও তাকে ঘাটাতে সাহস পেতো না। খলিফার অনুমোদন ছাড়াই সে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিত, স্বাভাবিকভাবে যা কোন গভর্নর বা কেল্লা প্রধান নিতে পারে না।

সে গোপনে খৃষ্টানদের সাথে আলাদাভাবে মৈত্রী চুক্তি করে রেখেছিলো। এ মৈত্রী চুক্তির পিছনে ছিল এক বিরাট ইতিহাস। ভাগ্যের বিরল সহায়তা ছিল এ চুক্তির পেছনে।

মরহুম নুরুদ্দিন জঙ্গীর ওফাতের সময় রাজা রিজনেল্ট বন্দী ছিলেন তার কেল্লায়। সুলতান নুরুদ্দিন জঙ্গীর মৃত্যুর পর গুমাস্তগীন খৃষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করার আশায় কারো আদেশ ও পরামর্শ ছাড়াই গোপনে সমস্ত খৃষ্টান কয়েদীদের মুক্ত করে দেয়। বিনিময়ে তাদের কাছে দাবী করে শুধু বন্ধুত্ব। বন্দী মুক্তির বিনিময়ে সে মুক্তিপন আদায় করতে পারতো এবং খৃষ্টানরা খুশী মনেই টা দিতে রাজীও হতো। কিন্তু সে টাকা-কড়ি, সোনা-দানা কিছুই না নিয়ে কেবল তাদের বন্ধুত্বের দাবী জানায়। তার আচরণে সম্রাট রিজনেল্ট এবং অন্যান্য বন্দী খৃষ্টানরা সন্তুষ্ট হয়ে অঙ্গীকার করে, আইয়ুবীর মোকাবেলায় যখন তার সাহায্য দরকার হবে তখন তারা তাকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করবে। এ আশ্বাসটুকুই ছিল তার বড় চাওয়া-পাওয়া।

তার দুই সেনাপতি বুদ্ধি, যোগ্যতা ও রণকৌশলে খুবই পারদর্শী। গুমাস্তগীন তাদের খুব বিশ্বাস করতো। এরা ছিল আপন দুই আপন ভাই। একজনের নাম শামস বখত, অন্য জনের নাম ছিল সাদ বখত। এরা ছিল ভারতীয় মুসলমান।

ঐতিহাসিক কামালুদ্দিন তার আরবী গ্রন্থ ‘তারিখুল হলব’-এ এদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এরা দু’জন একই মায়ের সন্তান ছিল। নুরুদ্দিন জঙ্গীর শাসনকালে ভারত থেকে ওরা বাগদাদ আসে। জঙ্গী তাদের যোগ্যতা ও ঈমানদারী দেখে সেনাবাহিনীর উচ্চ পদে নিয়োগ করেন। জঙ্গীর মৃত্যুর সময়য় ওরা হারান দুর্গে ছিলেন।’

কাজী বাহাউদ্দিন শাদ্দাদও তার ডাইরীতে এদের নাম উল্লেখ করেছেন।

আরবী ভাষায় কারো নামের সাথে পিতার নাম উল্লেখ থাকে। সে জন্য এ দুই ভাইয়ের নাম এভাবে উল্লেখ আছে, শামস ইবনে রেজা ও সাদ ইবনে রেজা। কিন্তু রেজা কে ছিলেন তার কোন উল্লেখ কোন ইতিহাসে নেই।

ইতিহাসে এদের দু’জনের নাম উল্লেখ করার কারণ একটি বিশেষ ঘটনা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ছিল সমসাময়িক ইতিহাসে খুবই উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যময়। এ সুবাদেই তাঁরা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল।

ঘটনাটা হচ্ছে, হারানে কার্যত স্বৈরাচারী শাসক গুমাস্তগীনের শাসনই চলতো। সে তার এক তোষামোদী ও কুকর্মের দোসর ইবনুল খবিশ আবুল ফজলকে হারানের প্রধান বিচারকের পদে নিয়োগ করে।

ইসলামে বিচারক তিনিই হতে পারেন, যিনি বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও ন্যায়বিচারের সাহস ও যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু আবুল ফজল গুমাস্তগীনের সব অন্যায় অবিচারের দোসর ও তোষামোদকারী হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।

বিচারের নামে তার অবিচারের অসংখ্য কাহিনী সেনাপতি শামস বখত ও সাদ বখত জানতো। কিন্তু তারা সামরিক বিভাগের লোক বলে উভয়েই এ ব্যাপারে নীরব থাকে।

বিচার বিভাগ তাদের এখতিয়ারভুক্ত নয় বলে এসব অবিচারের বিরুদ্ধে তাদের করার কিছু ছিল না। স্বভাবতই তারা তার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল, কিন্তু এ ব্যাপারে মুখ ফুটে কখনোই কিছু বলেনি।

গুমাস্তগীনের ওপর এ কাজীর যেমন প্রভাব ছিল, তেমনি প্রভাব ছিল এ দুই সেনাপতির। কারণ তাদের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বই ছিল প্রভাব বিস্তারকারী।

সুলতান আইয়ুবী নুরুদ্দিন জঙ্গীর মৃত্যুর পর যখন মাত্র সাতশ অশ্বারোহী নিয়ে মিশরের সাথে সিরিয়াকে একীভুত করলেন, তখনই তিনি সিরিয়ার বিভিন্ন রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে তার ঝানু গোয়েন্দাদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। জঙ্গীর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত যেসব দেশ ইসলামী খেলাফতের অধীনে ছিল, তাদের অনেকেই তার মৃত্যুর পর নিজেদেরকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বসে। গুমাস্তগীন কার্যত স্বাধীনতা ঘোষণা না করলেও কার্যত স্বাধীনভাবেই শাসন কার্য নির্বাহ করছিল।

সুলতান আইয়ুবী যখন আর রিস্তানের পাহাড় চূড়ায়, তখনকার ঘটনা। এ সময় আইয়ুবীর এক তুর্কী গোয়েন্দা আনতানুস হারানে গিয়ে পৌঁছে। সে খুবই সুশ্রী ও সুন্দর চেহারার যুবক ছিল। তুর্কী ভাষা ছাড়াও সে ভাল আরবী বলতে পারতো।

সে গুমাস্তগীনের কাছে গিয়ে বললো, ‘তার পরিবার পরিজন ও বংশের লোকেরা সবাই জেরুজালেম বাস করতো। জেরুজালেম তখন খৃষ্টানদের অধিকারে। খৃষ্টানরা মুসলমানদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার ও উৎপীড়ন শুরু করছিল। যাকে ইচ্ছা ধরে নিয়ে বেগার খাটাচ্ছিল।

সে বললো, ‘আমার দুটি বোন ছিল অসাধারন সুন্দরী। একদিন খৃষ্টানরা আমার দুই বোনকেই এক সাথে তুলে নিয়ে গেল।

আমি তখন বাড়ী ছিলাম না। বাড়ী এসে দেখতে পাই, আমার ভাই এবং বাবাকেও ওরা ধরে নিয়ে গেছে বেগার খাটাতে। যখন বুঝলাম, ধরতে পারলে আমাকেও ওরা বেগার ক্যাম্পে নিয়ে যাবে, তখন আমি দেশ থেকে পালিয়ে আসি। এখন আমার কোন আশ্রয় নেই, ঠিকানা নেই, বাঁচার মত কোন সঙ্গতিও নেই। এখন আমার একটি কাজ দরকার।’

গুমাস্তগীনকে সে আরো বললো, ‘আমার পরিবারের ওপর যে অত্যাচার করা হয়েছে আমি তার প্রতিশোধ নিতে চাই। আমি সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে চাই।’

তার অবস্থা এমন করুণ দেখাচ্ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল, জেরুজালেম থেকে সে পায়ে হেঁটে এত দূর চলে এসেছে। ক্ষুধা ও ক্লান্তিতে তাকে আধ মরা দেখাচ্ছিল।

গুমাস্তগীন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো এই যুবককে। ক্লান্তি ও অবসন্নতার মাঝেও তার সুগঠিত শরীর ও প্রশস্ত বুক বলছিল, সৈনিক হিসাবে এ যুবক খুবই চৌকস হবে।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঘোড়সওয়ারী ও তীরন্দাজীতে কোন অভিজ্ঞতা আছে তোমার?’

‘এখন আমার একটু বিশ্রাম ও খাওয়া প্রয়োজন।’ ক্লান্ত কণ্ঠে বললো সে, ‘ঘুম থেকে উঠে আমি ইনশা আল্লাহ‌ আপনার সব প্রশ্নেরই সন্তোষজনক জবাব দিতে পারবো আশা করি।’

গুমাস্তগীন এক প্রহরীকে ডেকে তার খাওয়া দাওয়া ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে বললো। খাওয়া দাওয়ার পর দীর্ঘ এক ঘুম থেকে যখন সে উঠলো, তার চেহারায় ক্লান্তি ও অবসাদের কোন চিহ্ন ছিল না।

পরদিন গুমাস্তগীন দরবার শেষে তাকে নিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে নিয়ে গেল। সেখানে আগে থেকেই ঘোড়া ও তীর ধনুক নিয়ে অপেক্ষা করছিল গুমাস্তগীনের এক বডিগার্ড। তিনি ওখান থেকে একটা তীর নিয়ে বললেন, ‘এই নাও, এটা দিয়ে তুমি তোমার পছন্দ মত যে কোন একটা লক্ষ্যভেদ করো।’

সে তীর হাতে নিয়ে দেখলো, পাশের একটি গাছের ওপর ছোট্ট এক চড়ুই পাখি বসে আছে। সে সেই পাখিকে নিশানা করলো, তীরটি পাখিকে নিয়ে গাছ থেকে একটু দূরে মাটিতে গিয়ে পড়লো।

সে আরও একটি তীর চাইলো। তীরটি নিয়ে সে অশ্বপৃষ্ঠে উঠলো। বললো, ‘ঘোড়া ছুটিয়ে আমি যখন কাছে আসবো তখন কোন জিনিষ শূন্যে ছুঁড়ে দেবেন।’

ঘোড়া নিয়ে ময়দানে ছুটে গেল যুবক। গুমাস্তগীনের বডিগার্ড দৌড়ে গিয়ে একটি খাবার প্লেট নিয়ে এলো, প্লেটটা ছিল চিনামাটির।

আনতানুস ঘোড়া নিয়ে দূরে ছুটে গেল। সেখান থেকে তীর বেগে ছুটে আসছিল ঘোড়া, আনতানুস ধনুকে তীর জুড়লো। বডিগার্ড প্লেটটি শুন্যে ছুঁড়ে দিলে আনতানুস ছুটন্ত অশ্ব থেকে তীর বর্ষণ করলো। প্লেটটি শুন্যে খান খান হয়ে ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে।

কেউ জানতো না, আনতানুস একজন সুদক্ষ গোয়েন্দা ও দুর্ধর্ষ কমান্ডো। প্রতিটি যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহারে যেমন সে পারদর্শী তেমনি উস্তাদ অশ্ব চালনায়। তার সুগঠিত দেহ, বলিষ্ঠ শরীর, আকর্ষণীয় চেহারা, ফর্সা গায়ের রং ও চমৎকার নৈপুণ্য দেখে গুমাস্তগীন খুব আকৃষ্ট হলো। সাধারন সৈন্যদের সাথে না দিয়ে গুমাস্তগীন তাকে তার বডিগার্ডের দলে নিয়ে নিল।

দু’জন করে বডিগার্ড গুমাস্তগীনের মহলের দরজায় পালা করে ডিউটি দিত। কিছুদিনের মধ্যেই মহলে গার্ড দেয়ার ডিউটি পেল আনতানুস। সপ্তাহের সাত দিনই সেখানে তার ডিউটি থাকে।

মুসলিম আমীরদের রীতি অনুযায়ী গুমাস্তগীনের মহলেও চলতো সৌন্দর্যের লীলাখেলা। হারেমে ছিল বারো-চৌদ্দজন সুন্দরী।

আনতানুস প্রথম দিন গিয়েই মহলের চারদিক, মহলে প্রবেশের সব দরোজা, প্রতিটি কামরা ও কামরার কোথায় কি আছে দেখে নেয়। সে সেখানকার সমস্ত চাকর চাকরানী ও নারী পুরুষকে বলে, ‘মহলের প্রতিরক্ষার জন্য আমাদের নিয়োগ করা হয়েছে, সে জন্য পুরো বাড়ীর কোথায় কি আছে সব খোঁজখবর ও বিষয় সম্পর্কে আমাদের জানা থাকা দরকার।’

সে যখন কামরাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিল, এক যুবতীর সাথে দেখা হয়ে গেল তার। এ মেয়ে গুমাস্তগীনের নতুন এক বেগম, অন্দর মহলের শোভা বর্ধনকারীদের অন্যতম।

সে আনতানুসকে ডাঁটের সাথে জিজ্ঞেস করলো, ‘কে তুমি, এখানে কি করছো?’

‘আমি এখানকার নতুন গার্ড!’ সে উত্তর দিল, ‘দেখছি, এ মহলে কোন কোন পথে আসা যাওয়া করা যায়। আর এখানে যারা থাকে তাদেরও চিনে রাখা দরকার।’

‘গার্ড তো এখানে আগেও ছিল, কেউ তো কোনদিন ভেতরে আসেনি!’ মেয়েটি বললো, ‘তোমার এভাবে মহলে ভেতর আসা ঠিক হয়নি।’

‘এটা আমার দায়িত্ব। যদি অন্দর মহল থেকে কোন মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়, জবাবটা কে দেবে, তুমি না আমি? কেল্লার মালিক যদি সে সুন্দরীর পরিবর্তে আমার বোনকে দাবী করে বসে, তখন?’

‘ও, তার অর্থ তুমি এখানে ডিউটি করার সময়ও নিজের বোনের হেফাজতের চিন্তাতেই ব্যস্ত থাকো? ধন্য তোমার বোনেরা, এমন ভাই ক’জনের ভাগ্যে জোটে! মেয়েটি একটু হেসে কিছুটা তিরস্কারের সুরেই বললো।

সঙ্গে সঙ্গে আনতানুসের চেহারা বেদনায় মলিন হয়ে উঠলো। দুঃখ ভারাক্রান্ত স্বরে সে বলে উঠলো, ‘আফসোস! যদি আমি তাদের রক্ষা করতে পারতাম! আমি তো এক নাদান ভাই, যে তার বোনদের জন্য কিছুই করতে পারেনি!’

মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সে আরো বললো, ‘যদি সেদিন আমি তাদের রক্ষা করতে পারতাম তবে তোমাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আমি এতটা পেরেশান থাকতাম না। তোমাদের নিরাপত্তার চিন্তায় অস্থির হয়ে আমাকে মহলের ভেতরও আসতে হতো না, আর তুমিও আমাকে এ নিয়ে তিরস্কার করতে পারতে না।’

মেয়েটি সমবেদনার সুরে বললো, ‘দুঃখিত, আমি বুঝতে পারিনি আমার কথায় তুমি কষ্ট পাবে।’

আনতানুস তার চেহারায় উদাসভাব নিয়ে বললো, ‘আমি আমার বোনদের রক্ষা করতে পারিনি বলেই তোমাদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। সেও ঠিক তোমার মতই ছিল। দয়া করে আমাকে আমার কাজে বাঁধা দিও না।’

সে অন্ধকারে তীর ছোঁড়ার মত মেয়েটির আবেগের ওপর যে তীর নিক্ষেপ করলো, সে তীর ব্যর্থ হলো না। মেয়েটি প্রশ্ন করলো, ‘তোমার বোনদের কি হয়েছে? কেউ কি তাদের হাইজ্যাক করে নিয়ে গেছে?’

‘যদি ছিনতাইকারী কোন মুসলমান হতো, কিংবা আমার বোন কোন মুসলমানের সঙ্গে বেরিয়ে যেতো, তবে আমার কোন আফসোস থাকতো না।’ সে বললো, ‘মনকে এই বলে প্রবোধ দিতাম, সে তাকে বিয়ে করে নিয়েছে অথবা কোন আমীরের মহলে আশ্রয় পেয়েছে। কিন্তু আমার একটা নয়, দুটো বোনকেই খৃষ্টানরা ধরে নিয়ে গেছে। আমি তাদের রক্ষা করতে পারিনি।’

মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো, ‘তারা কোত্থেকে কিভাবে হাইজ্যাক হলো?’

সে জেরুজালেমের সেই কাহিনী ও তার পালিয়ে আসার লোমহর্ষক এক বর্ণনা দিয়ে মেয়েটির আবেগের ওপর আঘাত হানলো। মেয়েটির চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছিল, তার কথার তীর মেয়েটির বুকে ঠিক মতই বিদ্ধ হচ্ছে। সে আরো বললো, ‘আমি সেখান থেকে পায়ে হেঁটে এখানে এসেছি। আমি সৈন্য বাহিনীতে ভর্তি হয়েছি শুধু আমার বোনের নয়, এমন আরও যেসব বোনদের খৃষ্টানরা লাঞ্ছিত করেছে তার প্রতিশোধ নিতে।

সে মেয়েটিকে আরও অনেক আবেগময় কথা শোনালো, যেসব কথা মেয়েটার অন্তরে গিয়ে বিধলো।

আনতানুস ভালমতোই জানতো, মহলের এসব রক্ষিতা মেয়েরা খুব আবেগী হয়। চারিত্রিক দিক থেকেও এরা থাকে দুর্বল স্বভাবের। কারণ সুস্পষ্ট, যদি একটি পুরুষের এক ডজন কিংবা তার চেয়েও বেশী স্ত্রী ও রক্ষিতা থাকে, তবে কোন নারীই আশ্বস্ত হতে পারে না, স্বামী কাকে বেশী ভালবাসে। ফলে, এরা থাকে ভালবাসার কাঙাল।

যুবতী মেয়েরা হয় আরো আবেগী। হেরেমের আশ্রিতা এসব মেয়েরা জানে, কয়েক বছর পর তার চাহিদা থাকবে না, জীবনেরও কোন মূল্য থাকবে না তার।

আনতানুস এটাও জানে, হেরেমের মেয়েরা তাদের স্বপ্ন ও ভালবাসাকে দাবিয়ে রাখে। তারা স্বামী বা মালিকের যুবক বন্ধুকে বা কোন যুবক চাকরকে দিয়ে তাদের প্রেমের নেশা পূর্ণ করে।

গোয়েন্দাগিরীর জন্য হেরেমের কোন মেয়ের বন্ধুত্ব তার বিশেষ প্রয়োজন ছিল। এ মেয়েটিকে সে ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায় কিনা সেটাই বাজিয়ে দেখতে চাচ্ছিল সে। তাই মেয়েটা হঠাৎ আনতানুসের সামনে এসে পড়ায় মেয়েটির আবেগ নিয়ে একটু খেলে দেখলো।

গুমাস্তগীন ছিল বিলাসপ্রিয় শাসক। নিয়মিত মদের আসর বসতো তার মহলে। হেরেমের এসব মেয়েরা সে আসর গুলজার করে তুলতো।

মদ ও নারীর নেশায় যখন কেউ পড়ে তখন তার কথায় কোন বাঁধন থাকে না। সুতরাং গোপন তথ্য এসব মাহফিল ও আসর থেকেই জানা যায় বেশী।

আনতানুস ও তার সঙ্গীরা আলী বিন সুফিয়ানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছিল। দক্ষ গোয়েন্দা বাহিনী যেন নিশ্চিন্তে ও নির্ভাবনায় দায়িত্ব পালন করতে পারে সে জন্য আলী তাদের সব প্রয়োজন পূরণ করতেন। কখনো কোন অভিযোগ করার সুযোগ দিতেন না তাদের। সুলতান আইয়ুবীও তাদেরকে প্রচুর অর্থ ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিতেন, যাতে তাদের মনে কোন কষ্ট ও অভিযোগ না থাকে।

কোন গোয়েন্দা শত্রু এলাকায় ধরা পড়ে মারা গেলে সুলতান আইয়ুবী তার পরিবারকে এত অর্থ দান করতেন যে, তার পরিবার ভবিষ্যতে কোন অভাব অনটনের শিকার হতো না। কারো মুখাপেক্ষী হওয়ার চিন্তা থাকতো না বলে তারা মন প্রাণ ঢেলেই গোয়েন্দা কাজে সক্রিয় থাকতো এসব গোয়েন্দারা।

আনতানুস মেয়েটির ওপর এমন প্রভাব বিস্তার করলো, মেয়েটির চেহারা বলছিল, সে তার প্রেমে পড়ে গেছে। আনতানুস যখন সেখান থেকে বিদায় নিচ্ছিল, মেয়েটি তাকে চাপা গলায় বললো, ‘পেছনের দিকে একটা বাগিচা আছে, শেষ রাতের দিকে ওদিকেও একটু টহল দিও। অনাহুত কেউ প্রবেশ করতে চাইলে ওদিক দিয়েই ঢুকতে চেষ্টা করবে আগে।’

মেয়েটির ঠোঁটে তখন অর্থপূর্ণ হাসির রেখা। আনতানুস সে হাসির অর্থ বুঝতে পেরে নিজেও হেসে ফেললো। তারপর মেয়েটির দিকে আরেকবার তাকিয়ে হাসি মুখে বেরিয়ে এলো প্রাসাদ থেকে।

রক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব মালিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দেহরক্ষী থেকে শুরু করে বাড়ী পাহারা দেয়াও এদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।

সে দিনই রাতের বেলা। কেল্লার ভেতর মহলের গেটে বর্শা হাতে ফিটফাট পোশাক পড়ে দাঁড়িয়ে ছিল আনতানুস। ধোপদুরস্ত পোশাক ও চকচকে বর্শা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা আনতানুসকে দেখাচ্ছিল বীরপুরুষের মত।

সঙ্গী গার্ড বললো, ‘তোমাকে একেবারে অফিসারের মত লাগছে।’

রাতের শেষ প্রহর। আনতানুস সঙ্গীকে বললো, ‘তুমি থাকো, আমি একটু চারদিকটা চক্কর দিয়ে আসি।’

সে ঘুরতে ঘুরতে বাগানে চলে এলো এবং ওখানে পায়চারী করতে লাগলো।

বাড়ীটা ছিল রাজমহলের মত। ভেতর থেকে গান-বাজনা ও নাচের ঝংকার ভেসে আসছিল। আনতানুস আসরের মেহমানদের এরই মধ্যে দেখে নিয়েছে। আমন্ত্রিত মেহমানদের মধ্যে দু’তিনজন খৃস্টানও ছিল।

সে বাগানে কিছুক্ষন পায়চারী করলো। একসময় পিছন দরোজা দিয়ে বেরিয়ে এলো সেই মেয়েটি। আনতানুস কে দেখতে পেয়েই দ্রুত তার কাছে এসে দাঁড়ালো।

‘তুমি এত রাতে কি জন্য এখানে এসেছো?’ মেয়েটি কাছে আসতেই আনতানুস তাকে জিজ্ঞেস করলো।

‘আর তুমিই বা কেন বাগানে ঘুরাঘুরি করছো?’ মেয়েটি পালটা প্রশ্ন করলো।

‘তোমার আদেশ পালনের জন্য।’ আনতানুস উত্তর দিল, ‘তুমিই তো বলেছিলে, রাতের শেষ প্রহরে বাগানে টহল দিতে!’

‘তাই! তুমি তো দেখছি খুব দায়িত্ববান লোক!’

আনতানুস এর কোন জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘এমন করে সরগরম আনন্দময় জলসা ছেড়ে বাইরে চলে এলে যে!’

‘সেখানে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে!’ মেয়েটি বললো, ‘শরাবের গন্ধে আমার মাথা ঘুরে যায়, বমি বমি ভাব হয়।’

‘তোমার মদের নেশা নেই?’

‘না!’ মেয়েটি বললো, ‘আমি এখানকার কোন কিছুতেই অভ্যস্থ হতে পারিনি।’

মেয়েটি একটি পাথরের বেঞ্চের ওপর বসলো। বললো, ‘বসো, তোমার সাথে গল্প করি।’

আনতানুস বললো, ‘কেউ যদি দেখে ফেলে!’

‘যারা দেখবে তারা তো মদের নেশায় চুর হয়ে আছে’ মেয়েটি বললো, ‘পাশে বসো আর তোমার বোনের গল্প বলো, আমি শুনি।’