» » দূর্গপতন

বর্ণাকার

পীর সাহেব বললেন, তোমরা আমার থেকে ত্রিশ কদম পিছিয়ে দাড়াও। তারা পীরের কাছ থেকে গুণে গুণে ত্রিশ কদম পিছিয়ে দাউালো।

ধনুকে তীর লাগাও!

চারজনেই কোষ থেকে তীর বের করে ধনুকে লাগালো।

আমার বুকের মাঝখানে নিশানা করো।

তারা ধনুকে তীর টেনে নিশানা করলো।

‘তোমরা ভয় পেয়ো না, আমি মারা যাব এ চিন্তা করে নিশানা নষ্ট করো না, শক্ত করে তীর টেনে সোজা আমার বুক বরাবর ছেড়ে দাও।

তারা ধনুক নামিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

‘আমার বুকে নিশানা করো, তীর চালাও। পীর সাহেব বললেন, নতুবা তোমরা যেখানে দাড়িয়ে আছো সেখানেই ভস্ম হয়ে যাবে।’

তীরন্দাজরা মৃত্যুর ভয়ে আবার ধনুক উচু করে ধরল এবং তার বুক বরাবর নিশানা করলো। দর্শকরা রুদ্ধশ্বাসে তাকিয়ে রইল এই জীবন্ত নাটকের দিকে। মিউজিকের মিষ্টি সুর থেমে গেল। সবার মনে শংকা ও বেদনার দুঃসহ ভার। তারা কি করবে, কি তাদের করা উচিত, কিছুই ভেবে পেল না |

অকস্মাৎ চারটি তীরই শাঁ করে ছুটে এসে পীর সাহেবের বুকের মধ্যে বিধে গেল। দর্শকরা চোখ বন্ধ করে ফেলল। যখন তারা আবার চোখ খুলল, দেখল, তিনি সেখানেই দাড়িয়ে আছেন এবং তার ঠোট উদ্ভাসিত হয়ে আছে প্রসন্ন হাসিতে।

পীর সাহেব এবার বললেন, চারজন খঞ্জর হাতে সামনে আসো। তীরন্দাজরা সরে যাও।

তীরন্দাজরা বিস্ময়ে বোবা হয়ে গিয়েছিল। পীর সাহেবের কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে বিহব্বল হয়ে সরে গেল ওখান থেকে।

চারজন খঞ্জরধারী একদিক থেকে সামনে এগিয়ে এলো। তাদের আদেশ দেয়া হলো, খঞ্জর হাতে নাও এবং আমার থেকে দশ কদম দূরে গিয়ে দাড়াও।

তারা হুকুম তামিল করল। পীর সাহেব বললেন, তোমরা কি ওখান থেকে আমার বুকে খঞ্জর নিক্ষেপ করতে পারবে?”

চারজনই হ্যা সূচক মাথা নাড়ল। পীর সাহেব বললেন, তাহলে তোমরা এখন একত্রে আমার বুকে খঞ্জর ছুড়ে মারো।’

চারজনই পূর্ণ শক্তি দিয়ে খঞ্জর নিক্ষেপ করলো। ছুরি চারটি নিমিষে পীর সাহেবের বুকে বিদ্ধ হয়ে গেল, একটাও খুলে পড়ল না। পীর সাহেব আগের মতই দাড়িয়ে হাসতে লাগলেন।

দর্শকের ভীড়ের মধ্য থেকে মারহাবা! মারহাবা! ধ্বনি উঠল। কেউ একজন বলে উঠল, নিশ্চয়ই তার হাতে মৃত্যুর ফেরেশতা বন্দী আছে।’

‘আমি অমর কিনা এ প্রশ্ন যে করেছিলে, তুমি কি সে প্রশ্নের উত্তর পেয়েছো? বললেন পীর সাহেব।

এক মরুচারী বেদুইন দৌড়ে তার কাছে এল এবং তার পায়ের কাছে সিজদায় পড়ে গেল। ‘মেহেরবানী করে আমায় ক্ষমা করুন। আমি আপনাকে প্রশ্ন করে যে অমার্জনীয় অপরাধ করেছি তার থেকে আমাকে মুক্তি দিন।’

পীর সাহেব বুকে তাকে টেনে তুলে বললেন, যাও, তোমার ওপর খোদার রহমত হোক।

ভীড়ের মধ্য থেকে একজন বুড়োমত লোক উঠে দাঁড়ালো এবং পীর সাহেবের পায়ের কাছে এসে বসে পড়ে বললো, আপনি কি মৃতের দেহে জীবন ফিরিয়ে দিতে। পারেন? খোদা আমাকে একটাই ছেলে দিয়েছিল, ভরা যৌবনে এসে ছেলেটি মারা গেল। লোক মুখে শুনেছি, আপনি মৃতকে অনেক দূর থেকে এসেছি। আমার এই বৃদ্ধ বয়সের প্রতি পীর সাহেবের পা ধরে কাদতে লাগলো।

কোথায় তোমার ছেলের লাশ?

বৃদ্ধ চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালো এবং একদিকে হাত তুলে কাউকে ইশারায় ডাকলো।

চারজন লোক কাফনে ঢাকা একটি লাশ এনে পীর সাহেবের সামনে রাখলো। লাশটি আনা হলো কাঠের খাটিয়ায় করে। তারা যখন তার সামনে লাশটি রাখলো তখন তিনি বললেন, ‘একটি মশাল আনো, লাশটি উঠাও আর সমস্ত লোকদের দেখাও, এটা জীবিত না মৃত।

লাশটির মুখ থেকে কাফনের কাপড় সরিয়ে সবার সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে আনা হলো। একজন মশাল হাতে লাশের সাথে সাথে থাকল। সবাই দেখলো, লাশের চেহারা সাদা, ফ্যাকাশে সবার দেখা শেষ হলে লাশটি আবার পীর সাহেবের সামনে এনে রাখা হলো।

মিউজিকের সুর বদলে গেল। আগের চেয়েও করুণ সুর মুচ্ছনা ও বেদনার রেশ ছড়িয়ে পড়ল আকাশে বাতাসে। পীর সাহেব দু’বাহু আকাশের দিকে তুলে বলতে থাকলেন, ‘জীবন ও মৃত্যুর মালিক হে খোদা, তুমি তোমার বেটা ঈসাকে শুলের হাত থেকে বাচিয়েছো। যদি তোমার বেটা ও তার ক্রুশচিহ্ন সত্য হয় তবে আমাকে সেই শক্তি দান করো যেন আমি এই হতভাগ্য বৃদ্ধের সন্তানকে জীবন দিতে পারি।

তিনি ঝুঁকে লাশের কাফনে হাত বুলাতে লাগলেন আর মুখ দিয়ে বিড় বিড় করে মন্ত্র পড়তে লাগলেন। লোকজন সে মন্ত্রের কোন শব্দ বুঝতে পারলো না, তবে এক সময় দেখতে পেল, পীর সাহেবের হাত দুটি থরথর করে কাপছে। মনে হলো কাফনের ভেতরে লাশটাও নড়ছে। পীর সাহেব তার হলো। এক সময় দেখা গেল কেবল লাশ নয়, পুরো খাটিয়া কাঁপছে।

মানুষ ভয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরল। মেয়েদের মধ্য থেকে কেউ একজন চিৎকার করে উঠল। তারা এক ভয়ানক বিভৎস দৃশ্যের সামনে বসেছিল। পীর সাহেবের বুকে তখন চারটি তীর ও চারটি খঞ্জর বিধে আছে আর তিনি এই তীর ও খঞ্জর বুকে নিয়েই একজন মৃত মানুষকে জীবিত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। এই দৃশ্য এতই ভীতিজনক ছিল যে, ভয়ে কয়েকজন মুর্ছা গেল।

হঠাৎ কাফন শুদ্ধ লাশ খাটিয়ার ওপর সোজা হয়ে বসে পড়লো। পীর সাহেব নিজ হাতে কাফন খুলে দিলে লোকটি চোখ মেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো, আমি কি পবিত্র জগতে পৌছে গেছি?”

না! পীর সাহেব বললেন, ‘তুমি এখনো দুনিয়াতেই আছো, যেখানে তুমি জন্ম নিয়েছিলে। যাও, তোমার বাবার বুকে বুক মেলাও। তিনি যুবককে হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে দিলেন।

পিতা এগিয়ে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরলো এবং অধীর হয়ে তার মুখে চুমো দিতে লাগল। তার চোখ থেকে আনন্দাশ্র গড়িয়ে পড়ছিল। এক সময় আবেগ একটু সামলে নিয়ে পীর সাহেবের পায়ের কাছে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। বসে থাকা জনগণ উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গেল।

তারা এ অভাবিত দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে পরষ্পর কানাকানি করছিল। তারা নিজের চোখে জীবনের সবচে জড়ানো একটি লাশ তাদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। পীর বাবা অসাধ্য সাধন করতে পারেন, মুর্দাকে জিন্দা করতে পারেন, এ দৃশ্য দেখার পরও এ কথা কে অবিশ্বাস বা অস্বীকার করবে?

বাবা সন্তানকে নিয়ে দর্শকদের ভীড়ের মধ্যে এগিয়ে গেল এবং সামনের দিকে একটু জায়গা নিয়ে বসে পড়ল। ‘

আমি আর কোন মুর্দাকে জিন্দা করবো না। পীর সাহেব বললেন, জীবন ও মৃত্যু খোদার হাতে, এ কাজ অন্য কারো করা উচিত নয়। আমি যে খোদার প্রেরিত দূত এটা দেখানোর জন্যই খোদার কাছ থেকে এ অনুমতি নিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি যে তোমার দূত এটা প্রমাণ করার জন্য দেহে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারি। খোদা আমার প্রার্থনা কবুল শক্তি দিয়ে ধন্য করেছেন।

তুমি কি যুদ্ধে নিহত সৈন্যকে জিন্দা করতে পার?

জনতার মধ্য থেকে একজন জিজ্ঞেস করলো।

না! যুদ্ধে মরা সৈন্যদের ওপর খোদা এতই অসন্তুষ্ট যে, তাকে আর দ্বিতীয়বার জীবন দেন না। পরবতী জীবনে তাকে দোজখের আগুনে নিক্ষেপ করেন। খোদার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে মানুষ হত্যা করবে এ জন্য খেদা মানুষ সৃষ্টি করেননি। বরং মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন এ জন্য যে, সে এ পৃথিবীতে আরো মানুষ আসার পথ তৈরী করবে। এ জন্যই আজ যে ছেলে, কাল সে বাবা হয়। সেই ছেলের ঔরসে আবার নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করে। একদিন সেও আরার বাবা হয়ে যায়। এভাবেই পৃথিবীতে আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি মানুষের বৃদ্ধি ঘটতে থাকে।

মানুষ যেন এ কাজে উৎসাহিত হয় সে জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে চারটি স্ত্রী রাখার জন্য বলেছেন। সন্তান জন্মদানের এ প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত থাকার নামই এবাদত। নারী ও পুরুষের এটাই জীবনের আসল কাজ। তারা সন্তান পয়দা করবে সেই সন্তান আবার বাচ্চা জন্ম দিতে সচেষ্ট হবে, তার ছেলেও বাপের মত সক্রিয় হবে এ কাজে। এভাবেই আল্লাহর সৃষ্টির ধারাকে বেগবান করে তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হবে।

পীর সাহেব যখন তার কেরামতি দেখাচ্ছিলেন, তখন দু’জন লোক টিলার পিছন দিয়ে লুকিয়ে যেখানে রঙ-বেরঙয়ের তাবু টানানো ছিল সন্তপনে সেদিকে এগিয়ে গেল। এই লোক দু’জন ছিলেন ইমাম সাহেব ও মাহমুদ বিন আহমদ। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সাদিয়া এখানেই কোথাও আছে। সাদিয়াকে খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যেই তাদের এ অভিযান। –

তাবুর কাছে পৌছে তারা দেখতে চাইল, তাবুগুলোতে কি আছে এবং সাদিয়াকে এর কোনটিতে লুকিয়ে রেখেছে কিনা!

তাবুর চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার মাত্র তিনটি তাবুর ভেতর আলো দেখা যাচ্ছে। তিনটি তাবুরই পর্দা দুদিক থেকে আটকানো, ভিতরে কি হচ্ছে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তাবুগুলোর চারদিকে পাহারা তেমন জোড়ালো মনে হচ্ছে না। এদিক ওদিক তাকিয়ে তারা আশপাশে কাউকে দেখতে পেল না। অন্ধকারে দৃষ্টি বেশি দূর যায় না, তাই পাহারাদার থাকলেও দেখার উপায় নেই।

পা টিপে সামনে এগুলো দু’জন। তাবু থেকে বেশ কিছুটা দূরে দু’তিনজন লোকের কথা শোনা গেল। ওরা দেখে ফেললে বিপদ হবে ভেবে তারা তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে সামনে এগুলো। তাবুর একেবারে পাশে এসে থামল দু’জন।

তাবুর ওপাশ থেকে বাজনার সুর ভেসে আসছে। কিন্তু কোথায় বসে বাজনাদাররা এ সুর তুলছে তা ওরা দেখতে পেল না।

তারা সবেমাত্র তাবুর কাছে পৌছেছে, এখনো কোন ৷ তাবুতে হানা দেয়নি, এমন সময় একটি তাবুর মধ্যে মেয়েলি কণ্ঠ এবং হাসাহাসির শব্দ শুনতে পেল।

ইমাম সাহেব ও মাহমুদ অনুমান করলো, যে তিনটি তাবুতে আলো জুলছে তারই কোনটা থেকে এ শব্দ ভেসে এসেছে। তারা সেই শব্দ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেল।

তাবুর কাছে গিয়ে লুকিয়ে থেকে ওরা মেয়েদের কথা শোনার চেষ্টা করলো। একটি নারী কণ্ঠ বলছে, এখানেও খেলা বেশ ভালই জমে উঠেছে, কি বলিস?”

অন্য মেয়ের গলা, হুহ! এমন আহাম্মক ও মূৰ্খ জাতি পৃথিবীতে আর একটা আছে কি না সন্দেহ।

মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য হারমান ভালই চাল চেলেছে। আর-রবার্ট পারেও বাবা!”

এমন চমৎকার ভিলকিবাজীর খেলা আমি আর দেখিনি। সে যেভাবে সবকিছু ম্যানেজ করে, দেখলে মনে হয় একেবারেই বাস্তব। আমারই তো ধাঁধা লেগে যায়।

যা বলেছিস! এত বিশ্বাসযোগ্য করে ধোকা দেয়ার মধ্যে একটা আর্ট আছে। রবার্ট সেটা ভালই রপ্ত করেছে। এই আহাম্মকদের বিপদগামী করা তার কাছে কোন ব্যাপারই না।”

অন্য একটি মেয়ে বললো, ওই মেয়েটার খবর কিরে?”

কোন মেয়েটা?

ঐ যে আমাদের নতুন অতিথি।’

নতুন মেয়েটার কথা বলছিস! মানতেই হবে, ওই মেয়ে আহা রে! ময়না আজ সারাদিন যা কেদেছে!’ বললো অন্য একটি মেয়ে।

আর কান্না লাগবে না। আজ রাতেই তার কান্না বন্ধ হওয়ার অসুধ দেয়া হবে। অন্য এক মেয়ে বললো, “পীর সাহেব এলান করেছেন, আজ রাতে যেন টিয়া পাখিকে সাজিয়ে উনার তাবুতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

তাই তো! এতবড় কেরামতি দেখানোর পর রবার্টের তো একটু পুরস্কার পাওয়াই উচিত।

আহা রে! মেয়েটা একেবারে কইতরের বাচ্চা! দুনিয়ার স্বাদ আহলাদ মনে হয় এখনো চেখেই দেখেনি!’ মেয়েটি মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ করলো।

একেই বলে কপাল! প্রথম রাতেই রবার্টের হাতে! রবার্ট পারেও বাবা!

মেয়েরা এ কথায় খিল খিল করে হেসে উঠল। একজন বললো, ঠিক বলেছিস। মেয়েদের সুখের জন্য আল্লাহ যে কি চিজ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, রবার্টের হাতে না পড়লে তা বুঝাই যায় না!”

এভাবে মেয়েরা অশ্লীল আলাপ চালিয়েই যেতে থাকল। ইমাম সাহেব ও মাহমুদ বুঝল, এ নতুন পাখি সাদিয়া ছাড়া আর কেউ নয়। তারা আরও বুঝল, সরলমতি মুসলমানদের বিপথগামী করার জন্য এ এক জঘন্য চক্রান্ত। এ কোন পীর নয়, তার কেরামতি ও মোজেজা আসলে এক ধরনের ভিলকিবাজী খেলা। অশিক্ষিত মুসলমানদের ঈমান ক্রয়ের জন্যই সে মুর্দাকে জিন্দা করার খেল দেখায়।

ইমাম সাহেব মাহমুদের কানে কানে বললো, এই মেয়েদের অশ্লীল কথাবার্তা ও শরাবের গন্ধই বলে দিচ্ছে, এরা কারা, আর কি করছে? ওরা মুসলমানদের ঈমান ক্রয়ের জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছে। কায়রোতে এখনি এ খবর পাঠাতে হবে।

মাহমুদের মধ্যে পীরের ব্যাপারে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল এ আলোচনা শোনার পর তা মুহুর্তেই কেটে গেল। সে বলল, ‘আমি তো ভেবেছিলাম, ইনি কামেল পীর হলেও হতে পারেন।

ইমাম সাহেব বললেন কেউ মৃতকে জীবিত করতে পারে না। এ পীরের ব্যাপারে আমি এমনটাই সন্দেহ করেছিলাম। এই রহস্যময় ব্যক্তি মানুষের মধ্যে পীরের ব্যাপারে যে ভক্তি ও শ্রদ্ধা আছে তাকে ব্যবহার করে লোকদের বিভ্রান্ত করছে। এ ধরনের অলৌকিকতা ও কেরামতির অবকাশ ইসলামে নেই। আল্লাহর নবীর চেয়ে অধিক কামেল কোন মানুষ দুনিয়ায় আসেনি। যেখানে আমাদের প্রিয় নবী ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য অসংখ্য ময়দানে সরাসরি লড়াই করেছেন সেখানে জেহাদের পথ ছেড়ে যারাই মোজেজার আশ্রয় নেবে, মনে রাখবে ওরা ইসলামের দুশমন।

অথচ তাদেরই আমরা আমাদের পীর বানিয়ে তাদের হাতে বাইয়াত নিয়ে আমাদের ঈমান তুলে দিয়েছি ওদের হাতে। ওরা যা সঠিক বলে তাকেই আমরা সঠিক মনে করি, ওরা যে পথে চালায় সেই পথে এগিয়ে চলি আমরা। আর মনে করি আমরা ইসলামের সরল সঠিক পথেই এগিয়ে চলেছি।

দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের জন্য অস্ত্র অপরিহার্য। আল্লাহর রাজত্বে পশুত্ব আর বর্বরতা যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্যই ইসলাম এসেছে। পৃথিবীতে দুষ্টের রাজত্ব থাকবে অথচ মুসলমানের হাতে অস্ত্র থাকবে না, অন্তরে জেহাদের জযবা থাকবে না, এটা হতে পারে না। যিনি মুসলমানদের জেহাদের জন্য ডাক দিতে পারেন তিনিই হতে পারেন মুসলিম সমাজের নেতা।

যারা মুসলমানদের হাতের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হাতে তুলে দেয় তসবি, আল্লাহকে ভয় করার আহবান না জানিয়ে অলৌকিক মুজেজা দেখিয়ে তার ক্রোধকে ভয় করতে শেখায়, সে লোক কামেল তো নয়ই, বরং সে ধোঁকাবাজ, প্রতারক। ইসলামকে পুঁজি করে সে নিজের আখের গোছাতে চায়। এ ধরনের লোক সব যুগে, সব কালে ছিল, আছে এবং থাকবে। মুসলিম জাতিকে এদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে এবং কেউ যেন বিভ্রান্ত না হতে পারে সে জন্য অন্যকে সতর্ক করতে হবে।’ .

ওরা মেয়েদের সেই তাবুর কাছ থেকে সরে এল। অন্য যে তাবু দু’টােতে বাতি জ্বলছে সেদিকে এগিয়ে গেল এবার। এর মধ্যে একটি তাবু বেশ বড়। তাবুটির কাছে গিয়ে থামল ওরা। টিলার সাথে সংলগ্ন এবং প্রায় সমান্তরাল ছিল এই তাবুটি। টিলার চড়াই ও তাবুর মাঝখানে মাত্র হাত দুয়েক টেনে এনে মাঝখানে রশি দিয়ে বাধা হয়েছে। বাঁধে ঢিল পড়ায় মাঝখানে এক চিলতে একটু ফাঁক হয়ে আছে। সেই ফাঁক দিয়ে ভেতরে উকি দিল ওরা। . .

ভেতরে একটা বড়সড় আরাম কেদারা ও ডাবল বিছানা। চেয়ারটি গদি মোড়া এবং মনোরম মখমল কুপড়ে ঢাকা। বিছানায় মোটা তোষকের ওপর সুদৃশ্য চাদর। এক পাশে বিশাল একটি মোমদানিতে দুটি মোমবাতি জুলছে। বিছানার শান শওকত দেখে মনে হচ্ছে, কোন ধনাঢ্য সরদার বা আমীরজাদার তাবু। তাবুতে দু’জন মহিলার একজন সাদিয়া। অন্য মেয়েটি সাদিয়াকে কনের সাজে সাজাচ্ছে। সাদিয়ার মুখ ফ্যাকাশে। নিঃশব্দ কান্না ঝরে পড়ছে সে মুখ থেকে।

আজকের এই দিনে তুমি কাদছো?’ মহিলাটি তাকে শান্তনা দিয়ে বললো, একটু পরই তুমি আনন্দ সাগরে সাঁতার দেবে। খুশির বন্যা বয়ে যাবে এই তাবুর ভেতর। তরপর দেখবে তুমি আর নিজেকেই চিনতে পারছো না। তুমি যে কত ভাগ্যবতী সেটা তখন বুঝবে। স্বগীয় পীর মাটির পৃথিবীতে বসবাস করতে এসে তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছে। এ তো তোমার সৌভাগ্য! তিনি তো শুধু তোমার জন্যই এ গ্রামে এসেছেন।

আজ থেকে মাসখানেক আগে তিনি গায়েবী চোখে তোমাকে দেখেন। সেই থেকে এখানে আসার জন্য পেরেশান হয়ে যান তিনি ! তোমার কাছে আসার জন্য ক্রমাগত বিশ দিন একনাগাড়ে পথ চলেছেন তিনি। আল্লাহর কি অশেষ মেহেরবানী যে তিনি যদি না আসতেন তাহলে তোমার বিয়ে হতো কোন মরুচারী রাখালের সাথে, নয়তো কোন নারীর দালালের কাছে তুমি বিক্রী হয়ে যেতে।

সাদিয়ার ওপরে এসব কথার কোন প্রভাব পড়ছে কিনা বুঝা গেল না। তবে সে মেয়েটির কথার কোন প্রতিবাদ না করে চুপচাপ শুনে যাচ্ছিল।

মাহমুদ উত্তেজিত হয়ে উঠল। ইমাম সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘অস্থির হয়ো না, সাদিয়াকে যখন পাওয়া গেছে তাকে নিশ্চয়ই উদ্ধারও করা যাবে। আরেকটু।অপেক্ষা করো, দেখিই না এরপর কি ঘটে।

বেশীক্ষণ তাদের অপেক্ষা করতে হলো না। মঞ্চ থেকে কে যেন ঘোষণা করলো, ‘খোদার প্রেরিত পুরুষের হে ভক্তকূল! যার হাতে আমাদের জীবন ও মৃত্যু, যার চোখ গোপন রহস্য দেখতে পারে, অন্ধকার রাতে যিনি আকাশে ঘুরে বেড়ান, এখন তিনি খোদার সাথে দেখা করতে যাবেন। তোমরা এখন কেউ আকাশের দিকে তাকাবে না, তিনি এবং তার সঙ্গীরা যে তাবুতে থাকেন সেদিকে কেউ যাবে না। এই অন্ধকার রাতে কেউ টিলার ওপরও চড়বে না।

যদি আমার নির্দেশ অমান্য করে কেউ আকাশের দিকে তাকাও তার চোখ চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যাবে। যদি কেউ তাবু বা টিলার দিকে যেতে চেষ্টা করো তবে পঙ্গু হয়ে যাবে তোমাদের হাত-পা। যে যেখানে আছো, বসে বসে আল্লাহর জিকির করো। আগামীকাল রাতে তিনি তোমাদের মনের গোপন ইচ্ছা ও আশা আকাঙ্খার কথা বলবেন এবং আল্লাহর হুকুমে তোমাদের ইচ্ছা পূরণ করবেন।

ইমাম সাহেব ও মাহমুদ সেখানেই দাড়িয়ে রইল। তাবুর মধ্যে যে মহিলা সাদিয়াকে সাজাচ্ছিল সে আরেকবার উপদেশ, ‘শোন মেয়ে, তিনি আসছেন। তার সামনে বেয়াদবী করবে না।’

তিনি এসে গেলেন এবং সামনের দিক দিয়ে তাবুতে প্রবেশ করলেন। ইমাম সাহেব ও মাহমুদ অবাক হয়ে দেখলো, এখনো তার বুকে চারটি তীর ও চারটি খঞ্জর বিধে আছে।

সাদিয়া এ দৃশ্য দেখে দুহাতে মুখ ঢেকে ভয়ে চিৎকার করে উঠল। পীর সাহেব বললেন, ভয় পেয়ো না সুন্দরী, এই মোজেজা আমাকে খোদাই দান করেছেন। আমি তীর ও ছুরির আঘাতে মরি না। সে সাদিয়ার সাথে গা লাগিয়ে বসলো।

‘আমি এমন ভিলকিবাজী একবার কায়রোতে দেখেছিলাম। ইমাম সাহেব মাহমুদকে কানে কানে বললেন, তুমিও ভয় পেয়ো না, আমি জানি তীর ও ছুরি কোথায় বিদ্ধ হয়ে আছে।

পীরবেশী প্রতারক তাবুর পর্দা রশি দিয়ে বাধলো। এদিকে ইমাম সাহেব ও মাহমুদ পিছন থেকে আস্তে করে তাবুর পর্দার বাঁধন খুলে ফেললো। প্রতারক লোকটি আবার গিয়ে সাদিয়ার পাশে বসতেই তারা দু’জন পা টিপে টিপে তাবুর ভেতর প্রবেশ করলো। হঠাৎ লোকটার কি সন্দেহ হলো, সে পিছন ফিরে চাইল এবং সঙ্গে সঙ্গে মাহমুদ ও ইমাম সাহেবকে দেখে উঠে দাঁড়াল।

মাহমুদ হাতের খঞ্জর বাগিয়ে চাপা কণ্ঠে গর্জে উঠলো, চুপ, একদম চুপ। তারপর সাদিয়ার দিকে ফিরে বললো, ‘এক কোণায় সরে যাও।

সাদিয়া সাথে সাথে তাবুর এক কোণে সরে গেল। ইমাম সাহেব লোকটার-পিছনে গিয়ে চাদর উঠিয়ে ছুড়ে মারল লোকটার মাথার ওপর। রবার্ট যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল; কিন্তু অস্ত্রধারী মাহমুদের দিকে নজর থাকায় সে ইমাম সাহেবকে বাঁধা দিতে পারল না, তার আগেই ইমাম সাহেবের ছুড়ে মারা চাদরে তার আপাদমস্তক ঢেকে গেল। সাদিয়া তাবু খাটানোর সমেভ রবার্টকে শক্ত করে বেঁধে ফেললো। ইমাম সাহেব সাদিয়াকে বললো, সাদিয়া, আলোটা নিভিয়ে দাও।

সাদিয়া চট করে আলো নিভিয়ে দিলে অন্ধকার ঘিরে ধরলো ওদের। অন্ধকার একটু সয়ে এলে ইমাম সাহেব প্রথমে সাদিয়াকে তাবুর বাইরে যেতে আদেশ দিলেন। সাদিয়া বাইরে গেলে মাহমুদ বন্দীর পিঠে খঞ্জরের খোঁচা দিয়ে বললো, কোন কথা নয়, যা বলছি তাই করো, নইলে যমের ঘরে পাঠিয়ে দেবো।’ í

ইমাম সাহেব বন্দীর বাহু ধরে বললেন, “চলো।’ –

ইমাম সাহেবের নির্দেশিত পথ ধরে আগে আগে চললো পেছনে বন্দীর পিঠে খঞ্জর ধরে এগিয়ে চলল মাহমুদ। যেদিক দিয়ে তারা তাবুতে প্রবেশ করেছিল সে দিক দিয়েই বের হয়ে টিলার উল্টো পাশে চলে এল ওরা। রবার্ট তাবুর চারদিকে কোন ঝুঁকির সম্মুখীন হয়নি বলে স্রেফ রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া এর আর কোন গুরুত্ব ছিল না তাদের কাছে।

ওদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে গিয়েছিল। ফলে সরে-পড়ার গোপন রাস্তা মাহমুদ আগেই ঠিক করে রেখেছিল। তার ওপর ঘোর অন্ধকার ওদের জন্য ছিল রহমত স্বরূপ। ফলে সহজেই ঢিলেঢালা পাহারার ফাঁক গলে নিরাপদে বেরিয়ে এল ওরা ওই এলাকা থেকে।

টিলা থেকে নেমেই ওরা গ্রামের পথ ধরলো। তবে সোজা পথে না গিয়ে একটু ঘুর পথে এগোলো ওরা চাদর দিয়ে চোখ মুখ ঢাকা থাকায় রবার্ট ঠিক ঠাহর করতে পারলো না ওরা কোন-পথ দিয়ে কত দূর এগুচ্ছে।

অভিযান এত সহজে এতটা সাফল্য লাভ করেছে যা মাহমুদের ধারনায়ও ছিল না। ওদের এ অভিযানের টার্গেট করার সুযোগ পাওয়াকে মাহমুদ উপরি পাওনা বলে গণ্য করলো। তারা যখন মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করলো তখন মধ্য রাত পেরিয়ে গেছে।

ইমাম সাহেবের হুজুর খানায় প্রবেশ করল ছোট দলটি। তখনো সাদিয়া আগে, ইমাম ও রবার্ট মাঝখানে আর মাহমুদ খঞ্জর হাতে সবার পেছনে।।

রবার্টের মুখোমুখি দাঁড়ালো মাহমুদ। মসজিদের সীমানার গেট এবং হুজরাখানার দরজা বন্ধ করে এলেন ইমাম সাহেব ! কামরায় ঢুকে বললেন, মাহমুদ, ওর বাঁধন খুলে দাও।

মাহমুদ লোকটার বাঁধন খুলে দিল। এখন পর্যন্ত তার বুকে তীর ও ছুরিগুলো ঝুলছে। সাদিয়াও হুজরাখানাতেই থাকলো। ওর নিখোজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে মুসলিমবেশী খৃস্টানরা ওদের বাড়িতে হামলা করতে পারে বলে আশংকা করলেন ইমাম সাহেব। তিনি নতুন করে কোন ঝুঁকি নিতে চাইলেন না। যদিও এ খবর এখন জানাজানি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এমন সফল তেলেসমাতি খেল দেখানোর পর দলনেতা বিশ্রামে থাকবে, ফলে কেউ এখন তাকে বিরক্ত করবে না এটাই স্বাভাবিক।

সবাই জানে, তিনি এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন এবং আনন্দ ফুর্তিতে মেতে আছেন। কেউ তাকে সেই আনন্দের আসর থেকে উঠিয়ে বন্দী করে নিয়ে,যাবে এ কথা কারো কল্পনায়ও আসার কথা নয়। ভোরে যখন দেখবে, তাদের নতুন শিকার সাধের ময়না পাখি সরদারকে নিয়ে উড়ে গেছে, তখন তাদের অবস্থা ও ভূমিকা কি হবে ভাবছিলেন ইমাম সাহেব।

ইমাম সাহেব মাহমুদকে বললেন, মাহমুদ, পীর সাহেবের গায়ে অস্ত্রপাতি মানায় না, উনার শরীর থেকে ওগুলো খুলে নাও।

মাহমুদ প্রথমে তীর ও পরে খঞ্জরগুলো টেনে বের ‘হুজুর, দয়া করে আপনার আলখেল্লাটা একটু খোলবেন? মোজেজার রহস্য উন্মোচিত হলো।

রবার্ট শরীর থেকে আলখেল্লাটা খুললে মোজেজার রহস্য উন্মোচিত হল। দেখা গেল আলখেল্লার ভেতরে গলা থেকে উরু পর্যন্ত নরম শোলার কাঠ লাগানো। তার নীচে শক্ত চামড়া। শোলাগুলো এই চামড়ার সাথে আঠা দিয়ে আটকানো। এমন মজবুত ও নিপূণভাবে এ শোলা লাগানো ছিল, বাইরে থেকে দেখে কিছুই বুঝার উপায় ছিল না। তীর ও খঞ্জরগুলো এই শোলার মধ্যে শক্তভাবে আটকে ছিল।

অপহৃত হলেও রবার্টের মনে কোন ভয় ভীতি ছিল না। সে বরং এটা উপভোগ করছিল। তার ধারনা, এটা একটা সাধারণ ডাকাতির ঘটনা। টাকা পয়সার লোভেই ওরা তাকে অপহরণ করেছে। সে মনে মনে চিন্তা করছিল, যদি তাই হয় তবে ওদেরকে উপযুক্ত সম্মানী দিয়ে দলে টেনে নেবে, কারণ এদের সাহস আছে।

সে ইমাম সাহেব ও মাহমুদকে লক্ষ্য করে বললো, তোমাদের চাহিদা কি বলো। স্বর্ণ, ঘোড়া ও উট যা চাইবে এখুনি আদায় করে দেবো। আর যদি আমার সাথে যোগ দাও তবে এত অঢেল সম্পদের মালিক বানিয়ে দেবো তোমাদের, যা তোমরা কল্পনাও করোনি।”

দুঃখিত হুজুর, আমাদের তো এসব কিছুই চাই না’, বললেন ইমাম সাহেব।

‘তাহলে আমাকে কি জন্য ধরে এনেছো? এসব পাগলামীর মানে কি? আমার ভক্তবৃন্দ টের পেলে তোমাদের কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছো? যদি বাঁচতে চাও তবে জানাজানি হওয়ার আগেই আমাকে যেতে দাও।”

দুঃখিত, তাও তো পারছি না। আপনাকে এখন মুক্তি দেয়া সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে! এবারও জবাব দিলেন ইমাম সাহেব।

তাহলে তোমরা কি চাও? কেন আমাকে ধরে এনেছো?

‘আমরা অনেকদিন ধরেই আপনার মত লোকদের খুঁজছিলাম। হাতের কাছে পেয়ে গেলাম, তাই ধরে আনলাম।

কিন্তু কেন খুঁজছিলে? আমি কি ক্ষতি করেছি তোমাদের? আপনি আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করেছেন। এত বড় ক্ষতি, যা কোনদিন পূরণ হবার নয়।’

কি সব হেয়ালী করছো! আমি এ সবের কিছুই বুঝতে পারছি না! বরার্টের চেহারায় চিন্তার ভাঁজ পড়ল।

সবই বুঝবেন, একটু অপেক্ষা করুন।’

ইমাম সাহেব মাহমুদকে বললেন, মাহমুদ, উনার সাথে খোশগল্প করার সময় নেই আমার হাতে। তুমি জলদি যাও, সেনা ফাড়ি থেকে সমস্ত সৈন্য নিয়ে দ্রুত চলে আসবে।”

তিনি ফাড়ির দূরত্ব, দিক এবং সংকেত বলে দিলেন। আর অন্য দু’জন গোয়েন্দার নাম ও ঠিকানা দিয়ে বললেন, ‘এদেরকে এখুনি আমার কাছে পাঠিয়ে দিও।’

এতক্ষণে রবার্টের টনক নড়লো। এরা কারা এবং কেন তাকে ধরে এনেছে বুঝতে আর কিছুই বাকী রইল না তার। তার সব জারিজুরি যে ফাঁস হয়ে গেছে এবং জীবনের অন্তিম লড়াই তার সামনে উপস্থিত। একথা মনে হতেই সে শিউড়ে উঠল।