রাত কেটে গেল। পরের দিন চেঙ্গিসের কাছে একটি লোক এলো। লোকটি তার দলেরই এক গোয়েন্দা। সে তাকে বলল, ‘মধ্য রাতের পর তুমি ইমাম সাহেবের কাছে চলে এসো। সেখানে জরুরী আলোচনা আছে।’
দিন কেটে গেল। রাত হলো। চেঙ্গিস ও ভিক্টর সম্রাট রিমাণ্ডের ভোজ সভায় তাদের ডিউটিতে চলে গেল। অনেক রাতে ডিউটি শেষ হলে ওরা ওখান থেকে ওদের কামরায় ফিরে এলো।
চেঙ্গিস এখনও ভিক্টরকে বলেনি, একটি মেয়ে তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে চাচ্ছে। ডিউটি থেকে ফিরেই সে ভিক্টরকে বললো, ‘পোষাক পাল্টে আমি ইমাম সাহেবের কাছে যাচ্ছি।’
ভিক্টর বললো, “ঠিক আছে যাও।’ সে তাকে কিছু তথ্য দিয়ে বললো, ‘এগুলো ইমাম সাহেবকে বলো।
রাশেদ চেঙ্গিস তার পোষাক পরিবর্তন করলো। কৃত্রিম দাড়ি লাগালো মুখে। মাথায় পাগড়ী পরে চেহারা লুকাল। তারপর কামরা থেকে বেরিয়ে অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে গেল।
তাদের বাসা থেকে কিছু দূর এগিয়ে গেলেই একটি পার্ক। পার্কের ভেতর দিয়ে মসজিদে যাওয়ার সংক্ষিপ্ত রাস্তা আছে। সেই রাস্তা ধরে হাঁটা ধরল রাশেদ চেঙ্গিস।
বাগানটি হরেক রকম ফুল গাছে ভরা। নিচে সবুজ ঘাসের জাজিম। তার মাঝখান দিয়ে পায়ে চলা পথ। ফুল গাছগুলোতে ফুটে আছে হরেক রঙের ফুল। লাল, নীল, হলুদ। গাছে গাছে সবুজ সতেজ পাতা। কিন্তু এখন এসব কিছুই দেখার উপায় নেই। শুধু দেখা যায় ছোট বড় কালো ঝোপগুলো মাথা মুড়ে বসে আছে।
পার্কের আশেপাশে কোন জনবসতি নেই। মানুষের নিত্যদিনের সান্ধ্য কোলাহল থেমে গেছে অনেক আগেই। এখন সবকিছুই কেমন সুনসান, নিঝুম, নিরব।
বাগানের মধ্য দিয়ে হাঁটছে রাশেদ চেঙ্গিস। এমন সময় এক গাছের আড়াল থেকে একটি ছায়া বের হয়ে তার দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। চেঙ্গিস লোকটিকে দেখতে পেয়েই তার কৃত্রিম দাড়ি খুলে ফেলল। সে ভাবল, হয়তো কোন পরিচিত পাহারাদার ডিউটিতে আছে, তার গলার স্বর চিনে ফেলতে পারে। এ অবস্থায় দাড়ি দেখলে লোকটি বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে। তার মনে সন্দেহ উঁকি দেবে। তখন সে যদি চ্যালেঞ্জ করে বসে তাহলে বিপদ আছে।
সে তার চলার গতি ধীর করে দিয়ে আস্তে ধীরে পা ফেলে চলতে লাগলো।
ছায়াটি একেবারে তার কাছে এসে বলে উঠলো, ‘আমি তোমাকে বলিনি, আমি নিজেই তোমাকে খুঁজে নেবো৷ কি, ঠিক বলিনি?’ কণ্ঠটি একটি নারীর।
কণ্ঠটি চিনে ফেলল রাশেদ চেঙ্গিস। এই তো সে মেয়ে, যে তার সাথে অন্তরঙ্গ হওয়ার চেষ্টা করেছিল!
‘মহলের ব্যস্ততা মাথাটা একেবারে খারাপ করে দিয়েছে।’ চেঙ্গিস বললো, ‘তাই একটু হাওয়া খাওয়ার জন্য এদিকে চলে এলাম।’
‘আমি তোমার কামরাতেই যাচ্ছিলাম। মেয়েটি বললো, ‘যাক, ভালই হলো। তোমাকে পথেই পেয়ে গেলাম। জায়গাটা মন্দ নয়, কি বলো? ফুলের সৌন্দর্য দেখতে না পারলেও ফুলের সুবাস তো পাবো।’
‘হ্যাঁ, তা ঠিক।’ হাঁটতে হাঁটতেই বললো চেঙ্গিস।
‘বসবে, না কি চলতেই থাকবে?’ মেয়েটি বলে উঠল, ’আমি কিন্তু সুরাহী ও পিয়ালা সঙ্গে নিয়ে এসেছি।’ হাসি মুখে বলল মেয়েটি।
রাশেদ চেঙ্গিস দাঁড়ালো। একবার ভাবলো, সে কোথায় থাকে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু পরক্ষণেই বাতিল করে দিল চিন্তাটা। বলল, ‘তুমি যাঁর আশ্রিতা তিনি তোমাকে খুঁজবেন না?”
‘কি যে বলো! আমাকে খোঁজার মত সময় কি তার আছে? নতুন ফুলের মধু ছাড়া তার রাত কাটে না। সে আছে তার মত, আমি আমার মত। ওর কথা মনে করিয়ে দিয়ে তুমি এ মধুর সময়টা মাটি করো নাতো!’
রাশেদ বুঝে নিল, এই মেয়ে এখন আবেগে বিভোর হয়ে আছে। বড় বিপদের ঝুঁকি নিয়ে সামনে চলছে মেয়েটা, কিন্তু কোন বিপদকেই পরোয়া করার অবস্থা নেই তার। চেষ্টা করলে তার কাছ থেকে হয়তো কিছু গোপন তথ্য আদায় করা যাবে। চেঙ্গিস তাকে বললো, ‘আর ভাবছো কেন, শীঘ্রই তো তুমি তোমার প্রভুর কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।’
‘এটা কি করে সম্ভব।’ মেয়েটি অবাক হয়ে বলল।
‘কেন, তুমিই বললে সে লোক সেনাবাহিনীর অফিসার। তারা তো অচিরেই যুদ্ধের ময়দানে যাত্রা করবে।’
‘হ্যাঁ, সে লোক বিলডন সাহেবের এক জেনারেল।’ মেয়েটি উত্তরে বললো, ‘কিন্তু সে আমাকে এবং অন্যান্য মেয়েদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবে। ফলে তুমি যা ভাবছে তেমনটি আর হবে না। তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সোজা ব্যাপার নয়।’
‘কবে তোমরা যাত্রা করছে, আর কোথায় যাবে?‘
‘তা জানি না। তবে সুলতান আইয়ুবীর বিরুদ্ধে খুব তাড়াতাড়িই অভিযান শুরু হবে বলে মনে হয়।’
‘সালাহউদ্দিন আইয়ুবী এখন কোথায়?’ চেঙ্গিস প্রশ্ন করলো।
‘সেটা আমি কি করে বলব?” মেয়েটি উত্তরে বললো, ‘তবে তুমি যদি জানতে চাও, খোঁজ নিয়ে তোমাকে জানাতে পারবো।’
রাশেদ চেঙ্গিস তাকে আরও কিছু প্রশ্ন করলো। যে সব প্রশ্নের উত্তর মেয়েটির জানা ছিল তা সে খুলে বললো। আর যা জানে না সেগুলো জেনে এসে বলবে বলে ওয়াদা করলো। মেয়েটি বললো, “কে যুদ্ধ করলো, কে মরলো, কে বাঁচলো তা নিয়ে তোমার কি?”
“দেখো, যুদ্ধ যে করে সেই শুধু মরে না, যুদ্ধ সবার জন্যই দুঃখ বয়ে নিয়ে আসে।’
মেয়েটি আবেগের স্বরে বললো, ‘আমাকে সে যুদ্ধের ময়দানে যেতে বললেও আমি যাব না। আমি তো তার স্ত্রী নই। আমি আমার মালিকের কেনা দাসীও নই, রক্ষিতা মাত্র। সুলতান আইয়ুবী এখন আর আমার কি ক্ষতি করবে? আমার যারা আপন, যারা আমার ধর্মের ভাই, তারাই আমাকে এমনভাবে লাঞ্ছিত করেছে, যা আমি জীবনেও ভুলতে পারবো না। আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, পবিত্র ক্রুশের নাম ভাঙিয়ে যারা আমার ওপর এ নির্যাতন করেছে, তাদেরকে আমি বিষ দিয়ে হত্যা করি।’
তারা উভয়েই বাগানের এক বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো। মেয়েটি দু’জনের মাঝখানে পিয়ালা রেখে তাতে মদ ঢেলে একটি পিয়ালা চেঙ্গিসের দিকে এগিয়ে ধরলো। বললো, ‘এমন নির্জন নিঝুম রাত আর বাগানের এই পরিবেশ, এ তো যুদ্ধের আলাপের জন্য নয়, ভালবাসার কথা বলার জন্য। নাও, একটু পান করো। ভুলে যাও পৃথিবীর সব দ্বন্দ্ব কোলাহল। এসো হৃদয়ের ভায়োলিনে ভালবাসার গান শুনি।’
চেঙ্গিস মহা বিপদে পড়ে গেলো। সে আজ দেড় বছর যাবত এই মদের কারবারের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে। নিজ হাতে কত মেহমানকে মদ পান করিয়েছে, কিন্তু সে নিজে কখনও মদ স্পর্শ করেনি। এমন পাপময় পরিবেশে মাঝে মধ্যে যেখানে বিরাট আকর্ষণীয় দাওয়াত এসে যায়, সেখানেও সে নিজেকে সংযত রেখেছে। ঈমানকে নষ্ট হতে দেয়নি। কিন্তু এখন এমন এক নারীর পাল্লায় পড়ে গেল, যার মাধ্যমে সে তার দায়িত্ব পালনকে আরও সহজ করতে চায়। কিন্তু মুশকিল হলো, এই নারী তাকে মদ পান করতে বলছে। ভয় হচ্ছে, যদি এই আবেগময়ী নারীর ভালবাসা প্রত্যাখ্যান করে তবে সে হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে।
একদিকে ঈমানের দাবী, অন্যদিকে দায়িত্ব পালনের হাতিয়ার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়, কোনটা রাখবে সে? ব্যাপারটা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে গেল চেঙ্গিস। কর্তব্যের খাতিরে দু’এক ঢোক পান করবে, নাকি এমন দামী হাতিয়ার মেয়েটাকে হারানোর ঝুঁকি নেবে, বুঝতে পারল না। শেষ পর্যন্ত সে বলেই ফেলল, ‘কিন্তু আমি তো পান করা পছন্দ করি না
‘খোদা তোমাকে পুরুষের সকল সৌন্দর্য, বীরত্ব ও আকর্ষণীয় দেহসৌষ্ঠব দান করেছেন।’ মেয়েটি বললো, ‘কিন্তু মদকে অস্বীকার করে তুমি প্রমাণ করলে, তুমি এক সুন্দর প্রাণহীন পাথর।’
কিছুক্ষণ দুজনের মধ্যে এই নিয়ে বাদানুবাদ চললো। শেষে চেঙ্গিস মেয়েটার মন রক্ষার জন্য তার হাত থেকে পিয়ালা নিয়ে নিল।
চেঙ্গিস কম্পিত হাতে পিয়ালা মুখে লাগালো এবং ধীরে ধীরে পিয়ালা খালি করে দিল। জীবনে এই প্রথম সে মদ পান করলো। কিছুক্ষণ পরই সে অনুভব করলো, তার চোখের সামনে সবকিছু কেমন উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। তার চিন্তা ভাবনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আশপাশের ঝোপগুলো মনে হচ্ছে উড়ছে। আর তখনি তার মনে হলো, সে নিজেও উড়ছে! সে খুব উৎফুল্ল বোধ করলো। তার মনে হতে লাগল, সে এক আনন্দ নগরে প্রবেশ করেছে।
রাশেদ চেঙ্গিস ছিল অবিবাহিত যুবক। নারী দেহ স্পর্শের অভিজ্ঞতা তার ছিল না। যৌবনে পা দিয়েই সে গোয়েন্দাগিরীতে ঢুকে পড়েছিল। গোয়েন্দা অভিযানের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাই ছিল তার একমাত্র আনন্দের বিষয়।
অবিবাহিত থাকায় তার কোন পিছু টান ছিল না। ফলে সে ছিল বেপরোয়া ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। কিন্তু এখন এই গভীর রাতে বাগানের পুষ্পিত ঘ্রাণের ভেতর এক সুন্দরী নারী তাকে মদ পান করিয়ে দেহের সাথে দেহ লাগিয়ে বসে আছে। সে তাকে নানা আভাসে ও ইঙ্গিতে প্রলুব্ধ করতে চাচ্ছে। কিন্তু সেই ইঙ্গিত বুঝার মত মনমানসিকতা তার ছিল না। অবিবাহিত হওয়াই তাকে যেন বাঁচিয়ে দিল। অজ্ঞতা ও আনাড়িপনাই সম্বল হয়ে দাঁড়াল তার।
সেই নারী তাকে পাপের দিকে ডাকছিল। তার কাছে ভালবাসা ভিক্ষা চাচ্ছিল। কিন্তু নেশাগ্রস্ত রাশেদ চেঙ্গিসের স্বভাবে কোন পাপ ছিল না। তাই সে এই খৃষ্টান মেয়ের কোন আহবানই বুঝতে পারছিল না।
মেয়েটি এবার আরো সক্রিয় হলো। আগের রাশেদ চেঙ্গিস আর থাকতে দিল না তাকে। প্রেমিক এক রাশেদ চেঙ্গিস তৈরীতে মনযোগী হল সে। রাত ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যেতে লাগলো।
সে যখন মেয়েটির কাছ থেকে বিদায় নেয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো, মেয়েটি বললো, ‘তুমি আমাকে যুদ্ধের ব্যাপারে কিছু কথা জিজ্ঞেস করেছিলে। আমার তো সবটা জানা নেই। যদি তুমি চাও তবে আমি আগামী কাল রাতে সে উত্তর সংগ্রহ করে আনবো।’
সহসা চেঙ্গিসের মধ্যে সেই আগের চেঙ্গিস জেগে উঠলো, যে চেঙ্গিস সুলতান আইয়ুবীর গোয়েন্দা। সঙ্গে সঙ্গে তার দায়িত্বের কথা স্মরণ হলো। সেই সাথে তার মনে পড়লো, সে এক সুন্দরী নারী ও মদের নেশায় মত্ত আছে, যার থেকে তাকে সাবধান হতে হবে।
সে মেয়েটিকে বললো, ‘তোমার মত আমারও যুদ্ধ বিগ্রহে সাথে কোন সম্পর্ক নেই। আমি আরাম ও শান্তিতে জীবন কাটাতে চাই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যদি আমার মনীব যুদ্ধে যায় তবে আমাকেও তার সঙ্গে যেতে হতে পারে। যদি আগে জানতে পারি, আমাদের সেনাবাহিনী কোন দিকে ও কত দূর আক্রমণ করতে যাচ্ছে, তবে সেই ভাবে আমি প্রস্তুত হয়ে যেতে পারবো। কতটুকু মদ সঙ্গে নিতে হবে, চাকর-বাকর কেমন নিতে হবে, এইসব ঠিক করতে পারবো।’
“ঠিক আছে, কাল রাতে তোমাকে সব আমি জানিয়ে দেবো,’ বলল মেয়েটি।
রাত প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। চেঙ্গিস ফিরে এসে ভাবল এত রাতে ভিক্টরকে জাগানো উচিত হবে না। তার দুঃখ হচ্ছিল এই ভেবে, আমি তো ইমাম সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিলাম। মাঝ পথে মেয়েটি আমাকে আটকে দিল। হায়, হায়, মেয়েটি আমাকে কোত্থেকে কোথায় নামিয়ে নিল। রাতের তখন শেষ প্রহর। খৃষ্টানদের বিলাস জীবনে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠার কোন অভ্যাস ছিল না। চেঙ্গিস ইচ্ছা করলে তখনো ইমাম সাহেবের কাছে যেতে পারতো। কিন্তু মদের গন্ধ নিয়ে মসজিদে যেতে সঙ্কোচ হচ্ছিল তার। পরে ইমাম সাহেব আবার কি ভেবে বসেন!
তাছাড়া তার নিজের মনেও চেপে ছিল এক পাপের বোঝা। যে মদ হারাম, যা পান করা পাপের কাজ, সেই মদ আমি পান করেছি!
মেয়েটির কথাও স্মরণ হলো তার। মেয়েটির ভালবাসার আকুতি ও উন্মাদনা নেশার মত তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। যদিও মেয়েটি তাকে পাপের সাগরে ডুবাতে পারেনি, কিন্তু তার দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটিয়েছে, এ জন্য তার আফসোস হচ্ছিল।
সে শুয়ে পড়ল, কিন্তু চোখে তার ঘুম এলো না। একবার মেয়েটির হাসিমাখা মুখ ভেসে উঠছিল তার হৃদয়পটে, আবার মেয়েটির প্রতি সৃষ্টি হচ্ছিল রাগ ও ক্ষোভ। কারণ এ মেয়ে তাকে তার দায়িত্ব পালন করতে দেয়নি।
এভাবে আকর্ষণ ও বিকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলো মেয়েটি। যতই ভাবছিল ততই মেয়েটি তার হৃদয়ে গেঁথে যাচ্ছিল। মেয়েটির কথা তার যতবার মনে পড়ছিল, ততই তার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাচ্ছিল তার।
আবার ইমাম সাহেবের কথা মনে হলেই অনুশোচনা হচ্ছিল। তিনি নিশ্চয়ই অপেক্ষা করেছেন। হয়তো দুশ্চিন্তা করছেন আমার কথা ভেবে। নিশ্চয়ই কোন জরুরী বিষয় ছিল, যে জন্য তিনি আমাকে খবর দেয়ার ঝুঁকি নিয়েছিলেন। এইসব অনুশোচনা করতে করতেই এক সময় ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল রাশেদ চেঙ্গিস।
সূর্য অনেক উপরে উঠে গেছে। তখনো তার ঘুম ভাঙেনি দেখে ভিক্টর তাকে জাগিয়ে দিল। বলল, ‘কাল কখন ফিরেছো? আমি তো কিছুই টের পাইনি! ইমাম সাহেবের সাথে এত দীর্ঘক্ষণ কি আলোচনা করলে? কেন ডেকেছিলেন তিনি?’ রাশেদ চেঙ্গিস ধড়ফড় করে উঠে বসল। মনে পড়ে গেল তার কাল রাতের কথা। সে মাথা নিচু করে বসে রইল, ভিক্টরের প্রশ্নের কোন জবাব দিল না।
ভিক্টরই আবার মুখ খুলল। বলল, ‘কই, কথা বলছে না কেন? কোন সমস্যা?’ তার কণ্ঠে উদ্বেগ।
‘না! তেমন কিছুই হয়নি।’ ভিক্টরকে হতভম্ব করে দিয়ে চেঙ্গিস বলল, ‘কাল আমি মসজিদ পর্যন্ত যেতেই পারিনি।’
“কি বলছো তুমি! কি হয়েছিল? কেউ অনুসরণ করেছিল?’ বিস্ময় ও উদ্বেগ ভিক্টরের কণ্ঠে, ‘রাশেদ, কাল রাতে কি ঘটেছিল সব আমাকে খুলে বলো তো!’
সে ভিক্টরকে সমস্ত ঘটনাই খুলে বলল। মেয়েটির সাথে পরিচয় থেকে শুরু করে গত রাতের মদ পানের কাহিনী পর্যন্ত। শেষে বললো, ‘যদি আমি মদ পান না করতাম তবে মেয়েটির কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পরেও আমি ওখানে যেতে পারতাম। কিন্তু মুখে মদের গন্ধ নিয়ে মসজিদে যাওয়ার সাহস আমার হলো না।’
দায়িত্বে গাফলতির জন্য মরমে মরে যাচ্ছিল রাশেদ চেঙ্গিস। তার চেহারা হয়ে উঠেছিল বর্ষা রাতের থমথমে আকাশের মত। সেখানে বাসা বেঁধেছিল রাজ্যের মালিন্য ও বিষন্নতা।
এ রকম দায়িত্বহীনতার পরও ভিক্টর তাকে গালাগালি করল না। বরং তাকে শান্তনা দিয়ে বলল, ‘যদি দায়িত্ব পালনের স্বার্থে মেয়েটার হাত থেকে দুই ঢোক মদ গিলেই থাকো, আল্লাহর কাছে মাফ চাও, তিনি তোমাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। তবে তওবা করো, ভবিষ্যতে আর কোনদিন মদ পান করবে না।’ ভিক্টর তাকে সাবধান করে আরো বললো, ‘কিন্তু ইমাম সাহেবের কাছে না যাওয়াটা তোমার মস্ত বড় অপরাধ হয়েছে। এটা তোমার মোটেই উচিত হয়নি। ইমাম সাহেব নিশ্চয় সারা রাত অধীর হয়ে তোমার অপেক্ষায় জেগেছিলেন! যাক, দিনে যাওয়া তো সম্ভব নয়, আজ রাতে অবশ্যই যাবে। গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইবে। তবে সব কথা তাকে বলার দরকার নেই। শুধু বলো, বিশেষ অসুবিধার কারণে কাল যেতে পারোনি।’
‘কিন্তু মেয়েটা তো কাল খবর নিয়ে আসবে বলেছে।’ বলল রাশেদ চেঙ্গিস।
ভিক্টর তাকে বললো, ‘দেখো চেঙ্গিস! তুমি আনাড়ী বা অবুঝ নও! নিজে ভাল মত বুঝতে চেষ্টা করো, মেয়েটির আসল উদ্দেশ্যটা কি? সে কি তোমাকে আসলেই মনেপ্রাণে ভালবাসে, নাকি ছলনা করছে? সে কি তোমাকে তার দেহের ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যম বানাতে চায়, নাকি তুমি গোয়েন্দা কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায়। তোমাদের মধ্যে যে কথা হয়েছে তাতে তোমাকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। তুমি যেভাবেই বলো না কেন, যুদ্ধের ব্যাপারে তুমি উৎসাহ বা আগ্রহ দেখিয়েছো, এটা বুঝতে কোন আনাড়ি গোয়েন্দারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। মেয়েটি যে ক্রুসেডদের গোয়েন্দা নয়, তাই বা তোমাকে কে বলল? তাই এ ব্যাপারে তোমাকে খুবই হুশিয়ারীর সাথে অগ্রসর হতে হবে।’
‘আমি যে গোয়েন্দা তা তো এখানকার কাকপক্ষীও জানে না। এমনকি শয়তানেরও এটা জানার কথা নয়।’ বলল রাশেদ চেঙ্গিস। ‘কিন্তু আমি তোমাকে এ কথা বলা জরুরী মনে করছি, মেয়েদের ছলনার যাদুতে ফেরাউনের মত সম্রাটের সিংহাসনও মাটিতে মিশে গেছে। শুধু তাই নয়, আপন জাতির দিকেই একবার তাকিয়ে দেখোনা। খৃস্টানদের পাঠানো সুন্দরী মেয়েদের ছলনার যাদুতে মিশরে বিদ্রোহ পর্যন্ত ঘটেছে। সুলতান আইয়ুবীর প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত আছে বলেই তিনি বেঁচে গেছেন। নইলে তাঁর একান্ত বিশ্বস্ত সেনাপতিরা বিশ্বাসঘাতক হওয়ার পর তাঁর বাঁচার কোন কথা ছিল না।’
‘আমি কোন আনাড়ী গোয়েন্দা নই ব্রাদার ভিক্টর।’ রাশেদ চেঙ্গিস বললো, ‘এই মেয়েটিকে নির্যাতীত বলেই মনে হয়। সে কোন পতিতা নয়। সে কোন রাজকন্যা না হলেও নিশ্চয়ই কোন অভিজাত ঘরের সন্তান। আমার মনে হয়, সে পবিত্র ভালবাসাই পাওয়ার পিয়াসী। সে আমার কাছে দৈহিক ভালবাসা দাবী করেনি, আর করবে বলেও মনে হয় না। কিন্তু তার পবিত্র ভালবাসা প্রত্যাখ্যান করে তাকে আরও মজলুম বানাতে চাই না। তাই বলে তুমি ভেবো না, আমি তার গোলাম হয়ে যাবো। প্রয়োজনীয় গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য তার যতটুকু সান্নিধ্যে যাওয়া দরকার, তার সাথে আমি শুধু ততটুকুই ঘনিষ্ট হবো।’
‘কিন্তু এ বড় কঠিন রোগ ভায়া, তুমি নিজেও টের পাবে না কখন থেকে তাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতে শুরু করেছ।’
‘হ্যাঁ, ভিক্টর!’ চেঙ্গিস উত্তর দিল, ‘তুমি ঠিকই বলেছো। শুরুতে আমি এটাকে একটা খেলাই মনে করেছিলাম। ভেবেছিলাম, খেলতে খেলতে যদি কিছু তথ্য পেয়ে যাই মন্দ কি! কিন্তু এখন তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, মেয়েটি সত্যি আমার অন্তরের মধ্যে গেঁথে গেছে। ’
‘যে অন্তরে গেঁথে যেতে পারে সে কিন্তু পায়ের শিকলও হয়ে যেতে পারে চেঙ্গিস!’ ভিক্টর বললো, ‘আমি তোমাকে এর চেয়ে বেশী আর কি বলতে পারি। তুমি যে পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে এখানে এসেছো, তোমার সবটুকু ভালবাসা তাতেই উজাড় করে দেয়া উচিত। দায়িত্বের চেয়ে অন্য কিছুকে অধিক ভালবাসলে তার পরিণাম ফল ভয়াবহ হতে পারে।’
“আরে, আমি তো তোমাকে বললামই, দায়িত্ব পালনের জন্যই আমি তার সাথে সম্পর্ক গড়তে চাচ্ছি, দায়িত্বকে আমি অবহেলা করলাম কই?’
‘শোন, কল্পনা ও বাস্তবতা এক জিনিস নয়। আলো ও কালোর মধ্যে প্রভেদ অনেক, কিন্তু তাদের দূরত্ব এক চুলের অধিক নয়। বিবেক ও আবেগের মাঝখানে বা ঈমান ও নির্বুদ্ধিতার মাঝখানে যে প্রাচীর আছে তুমি যদি সেই প্রাচীরের ওপর দিয়েই হাঁটতে শুরু করে, তবে যে কোন সময় তুমি একদিকে কাত হয়ে পড়ে যেতে পারো। এ এমনই এক সূক্ষ্ম রেখা যার ওপর দিয়ে হাঁটা যায় না। শেষে এমন না হয়ে যায়, তার কাছ থেকে গোপন তথ্য নিতে গিয়ে তুমি নিজেই গোপন হয়ে যাও।’
রাশেদ চেঙ্গিস হো হো করে হেসে উঠে ভিক্টরের উরুতে থাবা মেরে বললো, ‘এমন হবে না বন্ধু! তুমি দেখে নিও, এমনটি কখনো হবে না!’
‘আর একটি কথা। ভিক্টর বললো, “মদের সম্পর্ক থাকে শয়তানের সাথে। যেসব গুণ শয়তানের মধ্যে থাকে সে সব গুণ মদের মধ্যেও থাকে। মেয়েটিকে খুশী করতে গিয়ে সেই পরিমাণ পান করো না, যে পরিমাণ পান করলে তোমার স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পায়।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে, তোমার এ উপদেশের কথা আমি স্মরণ রাখবো। আজ রাতেই ইমাম সাহেবের সাথে আমি দেখা করবো এবং তাকে জানাবো, গতকাল বিশেষ কারণে আমি তার সাথে দেখা করতে পারিনি।’ চেঙ্গিস বললো।
‘আর এখনি বাজারে যাও। যাতে ইমাম সাহেব জানতে পারেন, তুমি সহিসালামতে আছো।’ ভিক্টর বললো।
তাদের দু’চার জন সঙ্গীর বাজারে দোকান ছিল। ছোটখাট সংবাদ তাদের দ্বারাই পৌঁছানো যেতো। অবশ্য অতি দরকারী ও গোপনীয় সংবাদ তাদের দিয়ে পৌঁছানো হতো না।
‘তুমি এখন কি করবে? চলো দু’জনেই ঘুরে আসি।’ বলল চেঙ্গিস।
রাশেদ চেঙ্গিস ও ভিক্টর দু’জনেই বাজারের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
পরের রাতে চেঙ্গিস তার ডিউটি থেকে একটু আগেই বিদায় নিল। সে তার কামরায় গিয়ে ডিউটির পোষাক পরিবর্তন করলো। মুখে কৃত্রিম দাড়ি লাগিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লো। সে ভয় পাচ্ছিল, যদি মেয়েটি হঠাৎ তাকে দেখে ফেলে! সে ইমাম সাহেবের সাথে দেখা করে ফেরার পথে মেয়েটির সাথে দেখা করবে বলে ঠিক করল।
আজো সে বাগানের সেই সংক্ষিপ্ত পথেই মসজিদের দিকে রওনা দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে সবুজ ঘাস ও বৃক্ষ শোভিত বাগানে গিয়ে প্রবেশ করল। সে দ্রুত হাঁটছিল, কিন্তু আজও সামনে থেকে কাউকে আসতে দেখলো। চেঙ্গিসের পালাবার কোন পথ ছিল না। কি মনে করে সে সাবধানে দাড়ি খুলে ফেললো। শীঘ্রই সামনের লোকটি তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “আজ যে খুব তাড়াতাড়ি চলে এলে! আমার ভালবাসার টানে বুঝি?’
‘তুমিই বা এত জলদি কি মনে করে?’ চেঙ্গিস জিজ্ঞেস করলো, “এখনও তো রাত বারোটার ঘন্টা পড়েনি!’
‘আমার মন বলছিল, তুমি মধ্য রাতের ঘন্টা বাজার আগেই চলে আসবে।’ মেয়েটি বললো। ‘কিন্তু আমি আশা করিনি, তুমি এত তাড়াতাড়ি আসবে।’
চেঙ্গিস বললো, ‘আমি একটা কাজে যাচ্ছিলাম, ফেরার পথে তোমার সাথে দেখা করতাম।’
‘যদি তোমার কাজ খুব জরুরী হয়, তবে যাও।’ মেয়েটি বললো, ‘আমি সারারাত তোমার জন্য এখানে অপেক্ষা করবো।’
‘এখন তো আমি এখান থেকে নড়তেও পারবো না।’ চেঙ্গিস বললো, ‘তোমার চুলের ঘ্রাণ আমাকে পাগল করে দিয়েছে।’
কথাটা সে মুখে বলল ঠিকই, কিন্তু নিজেকে সে স্বাভাবিক ও সচেতন রাখলো।
একবার ভাবল, ইমাম সাহেবের কাছ থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তাটা বাতিল করে দিল। সে সন্দেহ করলো, ইমামের কাছে রওনা দিলে যদি মেয়েটা পিছু নেয়। সুতরাং ভালবাসার দাবীকে প্রাধান্য দিয়ে সে সেখানে বসে পড়ল।
মেয়েটা সুরাহী থেকে মদ ঢেলে একটি পিয়ালা চেঙ্গিসের দিকে বাড়িয়ে ধরল। চেঙ্গিস মদ পান করতে চাইল না। বলল, ‘না না, আমার এখন পান করার ইচ্ছে নেই।’
মেয়েটি বলল, ‘তুমি যদি আমাকে বিষের পিয়ালা দাও তবুও তা পান করতে আমি প্রস্তুত। আর তুমি আমার কাছ থেকে মদ নেবে না?”
চেঙ্গিস কণ্ঠে আবেগ এনে বললো, ‘মদ দিয়ে কি করবো সুন্দরী। তোমার রূপের নেশার কাছে সব নেশাই যে ম্লান হয়ে যায়!’
‘তুমি দেখছি মুসলমানদের মত কথা বলছো! ওদের ধর্ম তো মদকে হারামই করে দিয়েছে। কিন্তু একজন খৃষ্টান হয়ে তুমি কেন মদকে ঘৃণা করো?’
‘মদের নেশা তোমার ভালবাসা ও সৌন্দর্যের কাছে হার মেনে যায়, তাই।’ চেঙ্গিস বললো, ‘তুমি যেমন অঢেল ধনরত্ন ও বিলাসিতার গায়ে লাথি মেরে আমার মত এক নগন্য কর্মচারীর কাছে ছুটে এসেছো, আমার মনও তেমনি কোন কৃত্রিম জিনিস গ্রহণ করতে চায় না। মদের নেশার চেয়ে এই প্রেমের নেশা অনেক বেশী খাঁটি এবং দীর্ঘস্থায়ী।’
তার এ কথায় হয়তো মিথ্যের কিছু মিশেল ছিল কিন্তু যতই সময় যেতে লাগলো তার বুদ্ধি-বিবেকের ওপর মেয়েটি ততই প্রাধান্য বিস্তার করতে লাগলো। তারপর মেন মুহূর্ত এসে গেল যে, সে নিজেই পিয়ালা উঠিয়ে বলল, “দাও, আরও দাও।’
মেয়েটি তার পিয়ালা পূর্ণ করে দিল। সে ধীরে ধীরে পান। করতে লাগলো আর ক্রমেই মেয়েটির মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে লাগল।
‘আমরা আর কতদিন এমন গোপনে চোরের মত মেলামেশা করতে থাকবো?’ মেয়েটি বললো, ‘আমার কথা একটু চিন্তা করো, ভেবে দেখো আমি কেমন কষ্টের মধ্যে আছি। আমার দেহের মালিক অন্য কেউ আর মনের মালিক তুমি। তোমার ভালবাসা তার প্রতি আমার ঘৃণা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমি তাকে আর সহ্যই করতে পারছি না। এসো, আমরা এখান থেকে পালিয়ে যাই।’
‘কোথায় যাবো?’ চেঙ্গিস প্রশ্ন করলো।
‘এই পৃথিবীটা বিশাল ও অনেক প্রশস্ত! মেয়েটি বললো, ‘আমাকে এখান থেকে বের করো, তারপর তোমার হাত ধরে আমি পৃথিবীর অপর প্রান্ত পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত।’
‘আচ্ছা যাবো।’ চেঙ্গিস বললো, ‘কটা দিন সবুর করো, আমি একটু গুছিয়ে নিই। ভাল কথা, আমার প্রশ্নের উত্তর এনেছো?”
‘হ্যাঁ, এনেছি।’ মেয়েটি বললো, ‘আমাদের সৈন্য জড়ো হচ্ছে।’ সে কার সৈন্যবাহিনী কোথায় জড়ো হবে, তারা কি করতে চায় সব খবরই তাকে খুলে বলল। কিন্তু কবে তারা রওনা দেবে এই খবরটাই সে তাকে দিতে পারল না। কারণ কবে তারা রওনা দেবে সে সংবাদ এখনও জানতে পারেনি মেয়েটি। চেঙ্গিস তার কাছ থেকে খুঁটে খুটে সব জেনে নিল।
সে যখন সেখান থেকে উঠলো, তখন রাত প্রবেশ করছিল দিনের ভেতর, আর মেয়েটি প্রবেশ করছিল চেঙ্গিসের অন্তরে।
‘আমি ইমাম সাহেবের কাছে যদিও পৌঁছতে পারিনি কিন্তু আমি মেয়েটির কাছ থেকে অনেক নতুন তথ্য সংগ্রহ করে এনেছি।’ চেঙ্গিস ভিক্টরকে বললো, ‘সে আমার ফাঁদে পড়ে গেছে, এখন সে আমার হাতের খেলনা।’
‘আমার তো ধারণা হচ্ছে, তুমিই তার ফাঁদে আটকে গেছো।’ ভিক্টর তাকে বললো, ‘তোমার কথাই প্রমাণ করছে, তার তীর তোমার হৃদয়ে বিধে গেছে।’
‘আমি তো তোমার কাছে স্বীকারই করেছি, সে আমার মনের গভীরে আসন গেড়ে বসেছে।’ চেঙ্গিস বললো, ‘সে এ কথাও বলে দিয়েছে, সে আমার সঙ্গে পালিয়ে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু আমিই তাকে বলেছি, আরও কিছু দিন অপেক্ষা করো। আমি তাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাবো। আমি আশা করছি, ক্রুসেড বাহিনীর পরিকল্পনা জেনে সে তথ্য আমি নিজেই কায়রো নিয়ে যাবো আর ওই মেয়েটিও থাকবে আমার সঙ্গে।’
‘তাকে কখন বলবে যে তুমি মুসলমান আর তুমি এখানে গোয়েন্দাগিরী করতে এসেছ?’
‘মিশরের মাটিতে প্রবেশ করে!’ চেঙ্গিস উত্তর দিল, ‘এখানে তাকে সামান্যই বলবো!’