» » চারদিকে চক্রান্ত

বর্ণাকার

সবাই ছুটে এলো। মেয়েটি চিৎকার করে বলতে লাগলো, ‘ঘোড়ায় লাগাম নেই। আমি পড়ে যাচ্ছি। বাঁচাও আমাকে৷” সৈনিকের পাশেই তার সাথীর ঘোড়া দাঁড়ানো ছিল, সে দ্রুত লাফিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসলো এবং জোরে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল।

মেয়েটির লাগামহীন ঘোড়া তীর বেগে ছুটছে। মেয়েটি ঘোড়ার পিঠে শুয়ে পড়ে খামছে ধরেছে তার পিঠ। চোখের পলকে মেয়েটিকে নিয়ে সামনের পাহাড়ী টিলার ওপারে অদৃশ্য হয়ে গেল ঘোড়া।

সিপাহী তার ঘোড়ার গতি সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে গেল। তার ভয় হলো, মেয়েটি হয়ত ঘোড়ার পিঠ থেকে গড়িয়ে পড়ে যাবে। সে কল্পনার চোখে দেখতে পেল, মেয়েটি গড়িয়ে পড়েছে ঘোড়া থেকে। তার পা আটকে আছে রেকবে। সেই অবস্থাতেই তাকে টেনে নিয়ে ছুটছে ঘোড়া।

হয়তো এরই মধ্যে তার পায়ের হাড় ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে গেছে, পাথরে বাড়ি খেতে খেতে মাথা থেতলে গেছে।

ও আর কিছু ভাবতে পারছিল না। ঘোড়া নিয়ে সে টিলা অতিক্রম করলো। লোকজনের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল মেয়ে এবং সৈনিক উভয়েই। লোকগুলো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

সামনে উন্মক্ত মাঠ। সৈনিক দেখতে পেল, এখনো ঘোড়ার পিঠ আকড়ে আছে মেয়েটি। দেহে প্ৰাণ ফিরে এলো তার। আরোহীকে নিয়ে প্রাণপণ ছুটছে ঘোড়া।

আরও কিছু দূর গিয়ে ঘোড়া মোড় ঘুরে আরেক টিলার আড়ালে চলে গেল। আবার চোখের আড়াল হয়ে গেল ঘোড়া।

সৈনিকের কানে তখনও মেয়েটির চিৎকার ও ঘোড়ার পদধ্বনি ভেসে আসছে।

সিপাহীও সামনে গিয়ে মোড় নিল, কিন্তু অবাক কাণ্ড, কোথাও ঘোড়ার অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে না। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মেয়েটির কোন চিৎকার ধ্বনিও শোনা যাচ্ছে না আর।

মেয়েটির চিৎকার এবং অশ্বপদধ্বনি শুনতে না পেয়ে সিপাহী ভাবলো, ঘোড়া হয়ত কোন আরোহীসহ কোন গিরিখাদে পড়ে গেছে।

সে ঘোড়ার গতি সামান্য কমিয়ে এগিয়ে গেল। আরেকটু এগুতেই সহসা পাহাড়ের আড়াল থেকে শোনা গেল মেয়েটির ডাক, ‘এদিকে এসো, জলদি আমার কাছে এসো।”

যুবক সৈনিক আওয়াজ লক্ষ্য করে যখন তার দিকে তাকালো রাজ্যের বিস্ময় এসে জমা হলো তার চোখে। সে দেখলো, শান্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে ঘোড়া। তার পিঠে ততোধিক শান্ত মনে হাসি মুখে বসে আছে মেয়েটি। সম্পূর্ণ অক্ষত।

তার চেহারায় কোন ভয় ও আতংকের লেশমাত্রও নেই। বরং সে মুখে লেগে আছে মোহিনী হাসির আভা। যুদ্ধজয়ী বীরের মত উদ্ভাসিত সে হাসি।

সিপাহী একবার ভাবলো, ঘোড়া নিয়ে পালিয়ে যাই। এ কোন মানুষ নয়, নিশ্চয়ই কোন পরী কিংবা প্ৰেতাত্মা হবে। তাকে ধোঁকা দিয়ে নির্জন গোপন প্ৰান্তরে নিয়ে এসেছে। এখন সে আমার রক্ত পান করবে।

কিন্তু মেয়েটির সৌন্দর্যের সুষমা তাকে পাগল করে দিল। তার মিষ্টি হাসির সম্মোহনী শক্তি যেন সৈনিকটির ঘোড়াকে টেনে নিয়ে গেল তার কাছে। ভয়ে যুবকের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল।

যুবক সৈনিক তার কাছাকাছি পৌঁছতেই খিলখিল করে হেসে উঠল মেয়েটি। ‘তুমি না পুরুষ। আইয়ুবীর সেনাবাহিনীর চৌকস এক যোদ্ধা! তবে তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছে কেন? আমি তো এক নারী ছাড়া আর কিছু নাই!’

মেয়েটি তার পাশে গিয়ে তার হাত তুলে নিল নিজের হাতে। বললো, “ঘোড়াটি আসলে লাগামহীন ছিল না, আমিই ঘোড়াকে তাড়া করে চিৎকার দিয়ে বলছিলাম, আমার ঘোড়া লাগামহীন হয়ে গেছে, আমি পড়ে যাব, মরে যাব। আমি জানতাম, তুমি আমার পেছনে ছুটে আসবে। তোমার চেহারাই বলছিল তুমি আমাকে চাও।”

সৈনিক কোন কথা বলল না, অবাক চোখে তাকিয়ে রইল মেয়েটির দিকে। মেয়েটিই আবার বললো, “আমি আনাড়ী সওয়ারী নই। নিজেই তো দেখলে অশ্ব চালনায় কতটা পটু আমি।”

“তবে তুমি আমাকে ধোঁকা দিলে কেন?” সিপাহী জিজ্ঞেস করলো।

মেয়েটি পালটা প্রশ্ন করল, ‘তুমি কেন তোমার চোখে নেশার আগুন নিয়ে তাকালে আমার দিকে! তোমার চাহিনীর তীর দিয়ে কেন আমাকে আহত করলে?’

এ প্রশ্নের কোন জবাব ছিল না সৈনিকের মুখে। মেয়েটিই আবার মুখ খুললো, “তোমার চাহিনীর তীরবিদ্ধ হয়ে যখন আমি তোমার দিকে তাকালাম, তখন আমার মনেও নেশার ঘোর লেগে গেল। তোমার মত সুঠামদেহী সুন্দর যুবককে দেখে হৃদয় আমার ওলট-পালট হয়ে গেল। আমি তো এসব কথা সবার সামনে বলতে পারি না, তাই মনের কথা বলার জন্য তোমাকে একটু নিরালায় নিয়ে এলাম।”

সৈনিক এতক্ষণে একটিমাত্র শব্দ উচ্চারণ করলো, “আশ্চর্য!”

মেয়েটি বললো, “তুমি যে বুড়োর সাথে কথা বলছিলে, সে বৃদ্ধই আমার স্বামী। এখন তুমিই একটু বিবেচনা করো, আমার স্বামীর বয়স আর আমার যৌবনটা কি মিলমিশ খাওয়ার মতো?

আমার সঙ্গে যে মেয়েগুলো আছে তাদের মধ্যেও আরো একজনের অবস্থা আমার মতই। সেও এক বৃদ্ধের স্ত্রী হয়ে জীবন কাটাচ্ছে।

মেয়েদের দুর্ভাগ্য, তারা তাদের পছন্দমত পুরুষ বেছে নিতে পারে না। যার সঙ্গে তোমরা মেয়েদের বেঁধে দাও, তার সঙ্গেই তার সারাটা জীবন কাটাতে হয়। একটু প্ৰতিবাদ করারও সুযোগ নেই আমাদের।

এই বুড়ো আমাকে খুশী করার জন্য সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু নারীর সুখ কোথায় তা এই বুড়ো বুঝবে কি করে?”

সিপাহীর ভয় কিছুটা দূর হলো। মুখ দিয়ে কথা বেরোলো তার, “আর বাকী মেয়ে দুটো?”

‘ওরাও বিবাহিত, কেউ কুমারী নেই।’ মেয়েটি উত্তরে বললো, “তারা যুবক স্বামীকে সাথে নিয়ে ভ্রমণের আশায় আমাদের সঙ্গ নিয়েছে।”

‘এখন তুমি কি করতে চাও?’

“আমি বাঁচতে চাই। যে যৌবন আল্লাহ আমাকে উপভোগ করার জন্য দিয়েছেন, তা এভাবে বিনষ্ট করতে চাই না আমি। আমাকে বাঁচাও তুমি।”

“যদি তোমাকে ওরা চুরি করে বা ছিনতাই করে নিয়ে আসতো তবে আমি ওদেরকে আমাদের ফাঁড়িতে নিয়ে যেতে পারতাম। ওদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারতাম তোমাকে।” সিপাহী বললো, “কিন্তু তুমি একজনের বিবাহিতা স্ত্রী।’

“আমি ঐ বুড়োকে স্বামী বলে মানিনা। বুড়ো আমাকে জোর করে আমার অমতে বিয়ে করেছে।” মেয়েটি বললো, ‘আমি তাকে ঘৃণা করি। যখন তোমাকে দেখলাম, তখন আমার ঘৃণা আরও বেড়ে গেল।”

সে আবেগময় স্বরে বলতে লাগলো, “তোমাকে প্রথম দেখেই আমার মনে হলো, এই তো তোমার জীবন সাখী! আল্লাহ তোমাকে এই সুন্দর যুবকের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।”

“দেখো, তুমি যেমন বলছো, তেমন সুন্দর আমি নই।” সিপাহী বললো, “কেন মিথ্যে আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে? তোমার আসল উদেশ্য কি বলো তো?”

“একমাত্র আল্লাহই জানেন, আমার অন্তরে কি ঝড় বইছে!” মেয়েটি বললো, ‘যদি তুমি আমার ভালবাসাকে প্রত্যাখ্যান করো, তবে আমার জীবন সম্পর্কে আমাকে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রেখো, আমি আর আমার স্বামীর কাছে ফিরে যাবো না। তুমি আমাকে নিরাশ করলে আমি সোজা নদীর দিকে ঘোড়া ছুটাবো। এই অশ্বসহ আমি ঝাঁপিয়ে পড়বো নদীতে। পরে আল্লাহর কাছে গিয়ে বলবো, এই যুবক আমার হত্যাকারী।”

এ সৈনিক সালাহউদ্দিন আইয়ুবী নয়, আলী বিন সুফিয়ান বা তকিউদ্দিনও নয়। সে এক সাধারণ সৈনিক। তার পেশীবহুল শরীরে যৌবনের জোয়ার, কিন্তু মরুভুমির হাহাকার ছাড়া এ জীবন আর কিছুই পায়নি। না একটু আনন্দ, না একটু সুখ। তার এ নিরানন্দ জীবনে অপ্রত্যাশিত আনন্দ যদি এসেই যায়, সে তা পায়ে ঠেলবে কিসের জোরে? কোথেকে পাবে সেই মনোবল আর শক্তি?

মেয়েটির অসহ্য যৌবন, লাবন্যময় সৌন্দৰ্য সুষমা এবং আবেগদীপ্ত কথা তাকে একেবারে বশীভুত করে ফেললো। সে বললো, “দেখো, আমি এক সাধারণ সিপাই আর তুমি শাহজাদীর মত অনন্যা। মখমলের বিছানা ছেড়ে আমার সঙ্গে এই বালির বিছানায় তুমি কেমন করে বাঁচবো?”

“মখমলের বিছানা আর ধন-সম্পদ কখনো কোন নারীর কষ্ট দূর করতে পারে না। যদি তাই হতো। তবে আমার স্বামীর চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আর কেউ হতে পারতো না। তিনি আমার পদতলে তার সমস্ত ধন-সম্পদ ঢেলে দিয়েছেন। কিন্তু আমি যে অসহ্য যৌবন যন্ত্রণা ভোগ করছি, সম্পদ দিয়ে কি এ যন্ত্রণার উপশম হবে? বালি দিয়ে নদীর জোয়ার আটকানো যায়, কিন্তু সম্পদ দিয়ে যৌবন জোয়ার বাঁধা যায় না।

জীবনভর স্বপ্ন দেখেছি কোন সৈনিকের ঘরণী হওয়ার। আমার বাবা সৈনিক, বড় দুই ভাইও। তারা দামেশকে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন।

আমাকে এই বৃদ্ধের হাতে তুলে দিয়েছে আমার মা। হরিণের দুশমন তার নরম গোশত, আর গরীব ঘরের সুন্দরী মেয়েদের দুশমন তার রূপ-যৌবন। নইলে কি আর বাবার বয়সী বুড়ো আমাকে কিনে আনতো!

আমার স্বামী জানে না, আমি ভাল ঘোড়া চালাতে জানি। কিন্তু অশ্ব চালনায় সেনাবাহিনীতে আমার বংশের যথেষ্ট খ্যাতি ও সম্মান রয়েছে। আমারও সাধ ছিল, আমি সুলতান আইয়ুবীর সেনা দলে ভর্তি হবো। যদি তা সম্ভব না হয় তবে কোন সৈন্যের স্ত্রী হয়ে সে সাধ মিটাবো।

তুমি বালির কথা বলেছো, আমি এই বালি ও পাথরের উপরেই জন্ম নিয়েছি। বেড়ে উঠেছি বালির ওপর খেলা করতে করতে, আবার এই বালিতেই একদিন আমার রক্ত-মাংস মিশে যাবে। আমার সব সুখ-আনন্দ তো এই বালিতেই লুকিয়ে আছে।’

“কিন্তু আমি তোমাকে কেমন করে সাহায্য করবো?” চিন্তিত কণ্ঠে সিপাইটি বললো।

“চলো, ফিরে যেতে যেতে কথা বলি।” মেয়েটি বললো, ‘এতক্ষণে দলের লোকেরা নিশ্চয়ই আমাদের খুঁজতে বেরিয়ে গেছে। যেতে যেতেই বলবো, আমি কি প্ল্যান নিয়েছি।”

দু’জন যাত্রা করলো। মেয়েটি বলতে লাগলো, “আমি তোমাকে এ কথা বলবো না যে, আমাকে তুমি সাথে নিয়ে চলো। এটা বলা অন্যায় হবে। আগে আমাকে আমার স্বামীর কাছ থেকে মুক্ত হতে হবে। তাকে তালাক দেয়া সম্ভব নয়, সে শক্তি বা ক্ষমতা আমার নেই। তার হাত থেকে বাঁচার একটিই পথ, কৌশলে তাকে হত্যা করা। এটা এমনভাবে করতে হবে, যাতে তাকে হত্যা না বলে স্বাভাবিক মৃত্যুই মনে হয়। না, ভয় পেয়ো না, এ হত্যাকাণ্ড তোমাকে করতে হবে না। যা করার আমিই করবো।”

“তুমি মেয়ে মানুষ, তুমি কেমন করে তাকে হত্যা করবে?” বিস্মিত হয়ে বললো সৈনিক।

“ভয় পেয়ো না, দেখো আমি তা ঠিকই পেরে যাবো। তাকে যখন মদ পান করাবো। তখন তার সাথে একটু বিষ মিশিয়ে দেবো। এরপর তাকে নিয়ে যাব নদীর তীরে। নেশার ঘোরে টলতে টলতে সে যখন পথ চলবে তখন সুযোগ বুঝে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেবো।

দম আটকে সে মারা গেলে আমি চিৎকার করে লোকজনকে ডাকবো “বাঁচাও, বাঁচাও” বলে। লোকজন যখন তাকে উপরে তুলে আনবে ততক্ষণে সব শেষ। আমি বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়বো।

লোকজনকে বলবো, মদ খেয়ে তিনি আমাকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। নদীর ধার দিয়ে হাঁটছিলাম আমরা। হঠাৎ মাথা ঘুরে তিনি নদীতে পড়ে গেলেন। আমি চিৎকার করে তোমাদের ডাকলাম, কিন্তু তোমরা তাকে আর জীবিত তুলতে পারলে না।’

ব্যাস, সবাই আমার কথা বিশ্বাস করবে। কারণ এখনো মাঝে মধ্যে আমরা এভাবে হাঁটতে বেরোই। এরপর হয়তো কিছুদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। হয়ে যাবো।”

“তোমার কাছে কি কোন বিষ আছে?” সিপাই আশ্চৰ্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো। মেয়েটি হো হো করে হেসে উঠলো। বললো, “তুমি বোকা সিপাই। আমরা কায়রো থেকে দূরে এই নীলনদের পাড়েই বাস করি। সেখান দিয়ে এই নদী কুলকুল বয়ে চলেছে। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য এই মাছ। মাছের পিত্ত বিষে পূর্ণ থাকে। তুমি তো দেখেছ এখানেও আমরা মাছ ধরে রান্না করে খেয়েছি। আমি মাছের পিত্তের বিষ কয়েক ফোটা শিশিতে ভরে রাখবো। তারপর তা বুড়োর শরাবের সাথে মিশিয়ে দেব।’

“কিন্তু দলের লোকেরা তোমাকে আমার সাথে বিয়ে দেবে কেনো?” যুবক জিজ্ঞেস করলো। “সে মরে গেলেই আমি মুক্ত হয়ে যাব। পরে ওরা আমাদের বিয়েতে বাঁধা দিতে আসলে বলবো, “তোমরা কেউ আমার অভিভাবক নও। নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করার বয়স আমার হয়েছে।” তখন কেউ আর কোন বাঁধা দিতে পারবে না। শেষে আমার সিদ্ধান্তই কার্যকরী হবে, তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যাবে।”

“তোমাকে আমি কোথায় খুঁজে পাবো? তোমরা তো আর ততদিন এখানে থাকবে না।”

“শোন, এখানে আমরা আরো কয়েকদিন থাকবো। বুড়োকে আমি এখানেই খুন করবো। তখন তোমাকে অনুরোধ করবো আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে। তুমি আমাকে বাড়ী পৌঁছে দেয়ার সুযোগে চিনে আসবে আমাদের বাড়ী। আর শোন! যে কদিন এখানে থাকি আমার সঙ্গে নিয়মিত দেখা করবে।”

“আমি তো শুধু ডিউটির সময় এখানে আসতে পারবো।” সিপাইটি বললো, “আমাদের সেনা ক্যাম্প এখান থেকে অনেক দূরে। ডিউটির সময় ছাড়া আমরা ঘোড়া ব্যবহার করতে পারি না।’

“আবার কখন ডিউটি পড়বে তোমার?”

“আমার ডিউটি এই সঙ্গীর সাথেই আগামী কাল মধ্যরাতে। তখন আমি তোমার সাথে দেখা করতে পারবো।”

“তোমরা আমাদের ক্যাম্পে এসো না। বাগানের বাইরে যে বড় বট গাছটি আছে তার নিচে অপেক্ষা করো। আমি ওখানেই তোমার সাথে দেখা করবো। তারপর তোমাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবো, যেখানে কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না। সেখানে দু’জনে বসে প্ৰাণ খুলে কথা বলবো, কেউ জানতে পারবে না। আমাদের এই গোপন অভিসারের খবর।”

চলতে চলতে মেয়েটি সৈনিকের হাত চেপে ধরলো। সেন্ট্রি দাঁড়িয়ে তাকালো তার দিকে। মেয়েটি তার চোখ সেন্ট্রির চোখে গভীর ভাবে গেথে দিল। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে সিপাহীর আর কোন সন্দেহ রইলো না, এ মেয়ে সত্যি তার প্রেমে পড়ে গেছে।

সে মেয়েটির হাতে চুমু খেয়ে গভীরভাবে তা বুকে চেপে ধরলো।

টিলার মোড় ঘুরেই ওরা কাফেলার লোকজনকে দেখতে পেল। লোকগুলো তাদের খুঁজতে যাচ্ছিল, দেখতে পেয়ে দৌড়ে এলো তাদের কাছে। ওরাও ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে এলো দু’জন।

মেয়েটির বৃদ্ধ স্বামী গিয়ে জড়িয়ে ধরলো সিপাইকে। ভয়ে তখনো তার গলার স্বর কাপছে। অন্যরাও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলো।

মেয়েটি বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথাই বললো ওদের। লোকজনকে শোনালো তাকে উদ্ধার করার এক লোমহর্ষক কাহিনী। বললো, “এই সিপাই নিজের জীবন বিপন্ন করে আমাকে উদ্ধার করতে ঝাপিয়ে না পড়লে আমার কপালে নিৰ্ঘাত মরণ লেখা ছিল।

ঘোড়াটি যখন আমাকে নিয়ে পাহাড়ী খাদে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিল ঠিক সে সময় এই বীর সিপাই তার ঘোড়া নিয়ে গিয়ে সামনে দাঁড়ায়। ফলে ঘোড়াটি আর লাফিয়ে পড়তে পারেনি, কিন্তু তার ধাক্কায় সৈনিকটির ঘোড়ারই এক পা খাদে পড়ে গিয়েছিল, আরেকটু হলেই জীবন সাঙ্গ হতো এ যুবকের।”

ডিউটি শেষে দুই সিপাই সেনা ক্যাম্পে ফিরে যাচ্ছে। একজন বললো, “দোস্ত, আজ যা দেখালি না তুই! মেয়েটা যেভাবে তোর গুণ গাইছিল, মনে হয় তোর জন্য দিওয়ানা হয়ে গেছে। আসলে কি ঘটেছিল রে?”

অভিযোগ অস্বীকার করলো না সিপাই। মোটামুটি খুলেই বললো সবকিছু। তার প্রতি মেয়েটির আকর্ষণের কথাও স্বীকার করলো। কিন্তু বুড়োকে খুন করে তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে, এ কথাটুকু বললো না।

বন্ধুর কথায় উৎসাহিত হয়ে সেও তাকে শোনালো নতুন এক কাহিনী। বললো, “তোমরা যখন টিলার ওপারে অদৃশ্য হয়ে গেলে তখন আমরা সবাই সেদিকে তাকিয়ে আছি, একটি মেয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।

সবাই উৎকণ্ঠিত হয়ে তাকিয়েছিল তোমাদের হারিয়ে যাওয়া পথের দিকে, মেয়েটি তাকিয়েছিল আমার দিকে। বুড়ো বললো, “চলো এগিয়ে দেখি।”

বুড়োর কথায় লোকজন এগুতে শুরু করলে মেয়েটি আমাকে বললো, “আপনি যাবেন না?”

আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, চলো।”

সবাই এগিয়ে যাচ্ছিল, আমরাও হাঁটা ধরলাম। মেয়েটি খুব ধীরে ধীরে হাটছিল। লোকেরা আমাদের পিছনে ফেলে অনেক দূরে এগিয়ে গেল। অন্য মেয়ে দুটোও সামনে চলে গিয়েছিল। মেয়েটি আমার সাথে কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে আমার কাছে প্ৰেম নিবেদন করলো। আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “আবার কবে দেখা হবে?

আমি তাকে বলেছি, আগামী কাল মধ্যরাতে আবার আমার ডিউটি পড়বে এখানে।”

“মেয়েটি কি বলে প্ৰেম নিবেদন করলো রে?”

“মেয়েটি বললো, তাকে এক বৃদ্ধের সাথে বিয়ে দেয়া হয়েছে। এই বৃদ্ধকে সে চায় না। সে আমার সাথে পালিয়ে গিয়ে নতুন করে ঘর বাঁধতে চায়।’

দু’জনের ঘটনা প্রায় একই রকম। তারা দু’জনেই এই সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো। কেমন করে এ মেয়েদের পাওয়া যায়, এই তাদের চিন্তা।

তারা ঠিক করলো, যদি মেয়েরা তাদের স্বামীকে হত্যা করতে না পারে। তবে তারা নিজেরাই তাদের হত্যা করবে। কিন্তু কেমন করে হত্যা করবে। তার কোন সুরাহা করতে পারলো না।

দুই সিপাই রঙিন স্বপ্লের জাল বুনতে বুনতে তাদের ক্যাম্পে গিয়ে পৌঁছলো। ক্যাম্পে গিয়ে তারা কমাণ্ডারের কাছে রিপোর্ট দিল, অমুক স্থানে কায়রোর এক বণিক কাফেলা ক্যাম্প করেছে। তাদের আসবাবপত্র ও মালামাল চেক করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তারা প্রকৃতই ব্যবসায়ী, কোন সন্দেহভাজন বা শক্ৰ দল নয়।”

সৈন্যরা কাফেলার বর্ণনা দিতে গিয়ে বণিকদের সুন্দরী মেয়ে চারটির কথাও বললো।

ক্যাম্পের কমাণ্ডার আগের রিপোর্ট তেমন মনোযোগ দিয়ে শোনেননি। কিন্তু মেয়েদের কথা বলতেই তিনি এদিকে মনোযোগী হলেন। তিনি প্রশ্ন করে মেয়েদের সংখ্যা, বয়স, রূপ, গঠন, গায়ের বর্ণ, আকৃতি সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শোনলেন। সিপাইরা তার মনের ভাব বুঝতে পেরে চুপ করে রইলো।

কমাণ্ডারের কাছে বসেছিল একজন অপরিচিত সৈন্য। সে এই ক্যাম্পের লোক নয়, পাশের ক্যাম্পের। ওই ক্যাম্পটি এখান থেকে আট দশ মাইল দূরে। সে তার কমাণ্ডারের কাছ থেকে এ ক্যাম্পের কমাণ্ডারের জন্য জরুরী চিঠি নিয়ে এসেছে। চিঠিতে আজ সন্ধাতেই ওই ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দেয়া হয়েছে এ ক্যাম্পের কমাণ্ডারকে। বলা হয়েছে, “বিশেষ কাজ আছে, অবশ্যই চলে আসবেন।”

কমাণ্ডার চিঠি বাহককে বললো, “একটু অপেক্ষা করো, যাবো যখন দু’জনে এক সাথে যাওয়াই ভালো।”

এইমাত্র সূর্য ডুবিলো। মাগরিবের নামাজ পড়েই কমাণ্ডার আগত সৈনিকটিকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা করলো।

যখন তারা অপর ক্যাম্পে গিয়ে পৌঁছলো তখন নিকষ রাতের আঁধার সারা প্রকৃতিকে জড়িয়ে নিয়েছে।

এই ক্যাম্পটি ছিল খুবই সুন্দর জায়গায়। এক কমলার বাগানের ভেতর। পাশেই ছিল শস্য শ্যামল বাগান ও ক্ষেতখামার।

সন্ধ্যার পর পরই আলোকমালায় সাজানো হলো ক্যাম্প।

রাতের জন্য ক্যাম্পের সৈন্যদের অবকাশ দেয়া হলো ডিউটি থেকে। সবাই আনন্দ উৎসব শুরু হওয়ার আশায় একস্থানে জটলা করে বসেছিল।

মশালের আলোয় স্থানটি আলোকিত হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পের কমাণ্ডার জটলার কাছে নেই। তিনি আসেননি বলেই এখনো শুরু হয়নি অনুষ্ঠান।

আগত কমাণ্ডার এখানকার দায়িত্বশীলের সাথে দেখা করার জন্য ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকে গেলো। দেখলো, কমাণ্ডারের সামনে বসে আছে দুজন মেয়ে ও তিনজন মরুচারী বেদুইন। তাদের পাশে পড়ে আছে বাজনার সাজ-সরঞ্জাম ও তবলা।

মেহমানরা সবাই এসে পৌঁছলে কমাণ্ডারের নির্দেশে খানা পরিবেশন শুরু হলো। খাওয়া শেষ হলে কমাণ্ডার মেহমানদের উদ্দেশ্যে বললো, “বাইরে চলুন সবাই। আপনাদের জন্য আরো কিছু আপ্যায়নের ব্যবস্থা আছে।”

মেহমানরা বাইরে এলো। বাইরের খোলা মাঠ মশালে মশালে আলোকিত করে তোলা হয়েছে। মেহমানদের জন্য এক পাশে বিছানো হয়েছে ফরাশ।

কমাণ্ডার তার এক সৈন্যকে বললো, “বাজনাদার ও মেয়েদের নিয়ে এসো।”

বাজনাদার ও মেয়েরা এলে এক মেহমান জিজ্ঞেস করলো, “এ লোকগুলো কারা, এখানে কি হচ্ছে?”

“এই মেয়েরা নর্তকী ও গায়িকা।” কমাণ্ডার উত্তর দিল, “এদের সাথে বাজনাদারও আছে। এদিক দিয়েই যাচ্ছিল ওরা। পানি পান করার জন্য এখানে থামলে আমি এদের পরিচয় পেয়ে থামিয়ে দিলাম। বললাম, আজ রাতে এখানেই থেকে যাও। আমার সৈন্যদের জীবন একঘেয়ে হয়ে উঠেছে, ওদের একটু আনন্দ দিয়ে যাও।’

“আমার কিন্তু এসব ভাল লাগছে না।” মেহমান কমাণ্ডারকে বললো, ‘সীমান্তে প্রহরায় নিয়োজিত সিপাইদের আমোদ-স্ফূর্তিতে ডুবিয়ে দিলে তাদের চরিত্র নষ্ট হয়ে যাবে, দায়িত্বে অবহেলা আসবে।”

“এ ছাড়াও সৈন্যরা নষ্ট হচ্ছে।” মেজবান কমাণ্ডার বললো, “আমাদের অন্য সাখীরা আজ শহরে আরাম-আয়েশ্যে জীবন কাটাচ্ছে। আর আমরা বেওয়ারিশ কুকুরের মত মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছি। তোমাকে কি তোমার সিপাইরা উত্যক্ত করে না? বলে না, এখানে থাকবো না, আমাদের অন্যত্র বদলী করে দিন।’

মেহমান বললো, ‘সিপাইদের মাথায় চড়ার সুযোগ দিতে হয় না, ওদেরকে সৈনিকের মতই রাখতে হয়।”

“আমি তো আমাদের সেনাপতির কাছেও আবেদন করেছি, “আমাদের ওপর একটু দয়া করুন, আমাদের অন্য কোথাও বদলী করুন।” মেজবান কমাণ্ডার বললো, “তিনি এখনো তার কোন উত্তর দেননি। আমি আরও বলেছি, “আমাদের সেই সেক্টরে পাঠিয়ে দিন, যেখানে কঠিন লড়াই হচ্ছে। নিষ্কর্ম জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছে এখানকার সৈন্যরা, এদেরকে এখান থেকে সরিয়ে দিন। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি, এখন অন্যদের পাঠান।”

মেহমান কমাণ্ডারও ঠিক এই বিষয়টিই চিন্তা করছিলেন। কমাণ্ডারের সামান্য ভুল ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনতে পারে। শক্ৰদের উপরে বিদ্যুতের মত ঝাঁপিয়ে পড়া মুজাহিদরা এখন মানসিক বিষন্নতায় ভুগছে, এটা ভাল কথা নয়। ডিউটি ফেলে তারা নাচ-গান ও স্ফূর্তিতে ডুবে গেলে সীমান্ত রক্ষা করবে কারা, কারা প্রতিরোধ করবে চোরাচালানী ও বিদেশী দুস্কৃতকারী?

রাত ক্রমশ: বেড়ে চলেছে। পালাক্রমে নাচছে মেয়েরা। তারা ক্লান্ত হয়ে পড়লে বাজনাদাররা গান শুনিয়ে সাময়িক বিশ্রাম দেয় ওদের।

আবারো একটি মেয়ে উঠে দাঁড়ালো। নৃত্যের তালে তালে উন্মাতাল বাজনা বাজছে। উল্লাসে ফেটে পড়ল সৈন্যরা। চিৎকার করে নাচের প্রশংসা করছে ওরা। আনন্দে টাকা পয়সা ছুড়ে মারছে।

কিন্তু মেয়েরা নাচ থামিয়ে হাত জোড় করে এই বলে ক্ষমা চাইল, মাফ করবেন আমাদের। নাচ আমাদের নেশা এবং পেশা। কিন্তু যারা দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে সীমান্ত পাহারা দেয়। তাদের একটু আনন্দ দেয়ার পরিবর্তে আমরা কোন মূল্য গ্ৰহণ করতে পারবো না। আপনাদের দেখে আমাদের মধ্যে যে দেশপ্রেম জেগে উঠেছে, টাকা পয়সা দিয়ে আমাদের সেই দেশপ্ৰেমকে অপমান করবেন না আল্লাহরাওয়াস্তে।’

বাজনাদাররাও বাজনা থামিয়ে বলে উঠলো, “দেশরক্ষা বাহিনী যদি আমাদের নাচগানে খুশী হন, এটাই আমাদের বড় পাওয়া। দেশের জন্য আমরা কিছু করতে না পারি, দেশ রক্ষায় নিয়োজিত ভাইদের একটু সেবাও কি করতে পারবো না?’

দলের সর্দার উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “আমি আমার যন্ত্রী ও নর্তকীদের দেশপ্ৰেম দেখে অভিভুত। আমি ঘোষণা করছি, আপনাদের যখন ইচ্ছা আমাদের ডেকে পাঠাবেন, এর জন্য কখনো কোন মূল্য দিতে হবে না আপনাদের।”

উপস্থিত সৈনিকরাও অভিভূত হলো ওদের এই আন্তরিকতা দেখে। এখানে দর্শকদের মধ্যে বসে ছিল দুই ক্যাম্পের দুই সামরিক কমাণ্ডার। তাদের পদমর্যাদা যদিও তেমন উচ্চ নয়, তবুও তারা একেকটি ক্যাম্পের ইনচার্জ।

দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যে যে দুরদর্শিতা ও সতর্কতা প্রয়োজন তার কিছুই তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। তাদের মনে দায়িত্বের কোন অনুভূতি আছে, এমনটিও মনে হচ্ছিল না তাদের আচরণে।

এই দায়িত্বশীল কমাণ্ডাররা এ কথা খতিয়ে দেখলো না, এই নর্তকী ও বাজনাদারেরা আসলে কারা? এরা কোথেকে এসেছে আর কোথায় যাবে? বাজনাদাররা যে পরিচয় ও বক্তব্য দিয়েছে, সে বক্তব্য কতটুকু সত্য ও গ্রহণযোগ্য? তাদের এই আগমন কোন ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা তাও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করলো না। এমনকি বেদুঈন পোষাকে দর্শকের মধ্যে কিছু বহিরাগত লোক বসেছিল, এই লোকগুলো কারা এবং কোথেকে এসেছে তাও তলিয়ে দেখার কথা ভাবলো না এই কমাণ্ডাররা।

যে কোন অবস্থায় ক্যাম্পের সেন্ট্রিবক্সে চারজন পাহারাদার থাকে। কিন্তু কখন যে তারা সেন্ট্রিবক্স ছেড়ে নাচের আসরে চলে এসেছে এ খবরও হয়তো জানে না কমাণ্ডার। অথবা জানলেও নাচ দেখায় তারা এতটাই বিভোর, ও নিয়ে কিছু চিন্তা করার মত সময় ছিল না তাদের।

ক্যাম্পের কিছু দূর দিয়ে রাতের আধারে কালো বর্ণের কমবেশী পঞ্চাশজন লোক একে অন্যের পিছনে লাইন দিয়ে সুদানের দিক থেকে এগিয়ে এলো। এদের আগে আগে যাচ্ছে দু’জন লোক। পিছনের লোকেরা এদের অনুসরণ করছে এবং এদের ইঙ্গিতে কখনো থামছে, কখনো এগিয়ে যাচ্ছে।

ইঙ্গিত পেয়ে লোকগুলো থামল। সামনের দু’জন আধারে কোথায় কি শব্দ হচ্ছে শোনার চেষ্টা করলো ওরা। এরপর শেয়ালের লম্বা ডাক ছাড়লো। এ ডাকের অর্থ কি কাফেলার লোকেরা তা বোঝে। পেছনের লোকগুলো এ শব্দ শোনার সাথে সাথে আবার সামনে অগ্রসর হতে থাকলো।

আবার সামনে থেকে শিয়ালের হুক্কা হুয়া শব্দ ভেসে এলো।

থেমে গেলো লোকগুলো। আবার কিছুক্ষণ পর শিয়ালের সেই লম্বা ডাকে চলতে আরম্ভ করলো।

দূর থেকে ক্যাম্পের নাচগান ও বাজনার অস্পষ্ট শব্দ শুনতে পাচ্ছিল ওরা। সামনেই পাহাড়ী এলাকা। কালো রাতের অদৃশ্য হয়ে গেল।

তাদের হাতে ছিল বর্শা, সঙ্গে তলোয়ার ও খঞ্জর। এ ছাড়াও ছিল চার পাঁচটি করে ধনুক এবং প্রচুর তীর।