প্রথম দিকের কঠোরতায় সুদানীদের তৎপরতা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ফলে চোরাচালানীরা এ কাজ ফেলে অন্যদিকে মন দিয়েছিল।
এতে করে সৈন্যদের অবসর ও আলসেমী বেড়ে গেল। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা, তাদের মনে নানা কু-প্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
তাদের কোন কাজও ছিল না, কোন চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থাও ছিল না। সীমান্তের এ এলাকাটি ছিল এমন, এখানে ঋতুবৈচিত্রও চোখে পড়তো কম।
আদিগন্ত বালির মাঠ ও প্রান্তর, কোথাও দু’একটি টিলা, এ ছাড়া আর কিছুই দেখার ছিল না তাদের। যেন এই আবহাওয়া ও পরিবেশ শতাব্দী ধরে চলে আসছে। এখানে আকাশের রঙ বদল হয় না। যেসব মুসাফিররা পথ চলে একই রকম তাদের পোষাক-আশাক, একই রকম তাদের চলার ধরন।
এসব দেখতে দেখতে সিপাইদের মনে বিরক্তি ধরে গেলো। টহলদার বাহিনী এখন আর ডিউটির সময় মুসাফিরদের তল্লাশী চালায় না। ওরা কোথেকে আসছে, কোথায় যাচ্ছে এসব প্রশ্নও করে না অনেক সময়। বড়জোর একঘেয়েমী দূর করার জন্য মাঝে মধ্যে কোন কাফেলাকে থামিয়ে গল্প-গুজব করে কিছুটা সময় কাটায়। আর মুসাফিররাও কিছুটা বিশ্রামের সুযোগ নিয়ে নেয় এই ফাঁকে।
যে সব ফাঁড়ির পাশে গ্রাম আছে, সেসব গ্রামে গিয়ে গল্পগুজব করে মন হালকা করে আসতো কোন কোন সিপাই। দেশের সীমান্ত রক্ষীদের এই অবস্থা দেশের জন্য খুবই মারাত্মক ছিল। মানুষের মন আনন্দ ও শান্তির কাঙাল। কোন কাফেলা রাত কাটানোর জন্য কোথাও ক্যাম্প করলে, সৈন্যরা সেখানে গিয়ে ওদের আনন্দ ফুর্তির সাথে একাত্ম হয়ে যেতো। এমনকি পার্শ্ববতী গ্রামের আনন্দ অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে শুরু করলো।
এভাবে খোলামেলা মেলামেশার ফলে সীমান্ত রক্ষী ও সৈন্যদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মন থেকে সব ভয় ভীতি দূর হয়ে গেল। তাদের কমাণ্ডারও সিপাইদের মতই মানুষ, তারাও সময় কাটানো এবং চিত্ত বিনোদনের জন্য ফৌজি মেজাজ রেখে সহজ সরল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গেল।
সুলতান আইয়ুবী দামেশক রওনা হওয়ার সময় ব্যস্ততা ও টেনশনের কারণে সীমান্ত রক্ষীদের বদলীর ব্যাপারে কোন আদেশ দিয়ে যাননি ঠিক, কিন্তু তিনি আশ্বস্ত ছিলেন জেনারেল আলকিন্দি অভিজ্ঞ অফিসার, এসব ব্যাপারে নিশ্চয়ই তিনি খেয়াল দেবেন।
সুলতান আইয়ুবীর যাওয়ার পর তার ভাই তকিউদ্দিন – সেনাবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি আলকিন্দিকে জিজ্ঞেস করলেন, “সীমান্তে যে সৈনিকরা পাহারা দিচ্ছে ওরা কতদিন ধরে ওখানে আছে?”
আলকিন্দি উত্তর দিল, “তারা অনেক দিন ধরেই সেখানে ডিউটি করছে।”
“সীমান্তে কি আরও বেশী টহল বাহিনী পাঠানোর দরকার আছে?” তিকিউদ্দিন জিজ্ঞেস করলেন, “আর, পুরাতন দল কায়রো এনে নতুন দল কি পাঠানো দরকার?”
“না।’ আলকিন্দি উত্তর দিল, “সুলতান এদের যে আশায় পাঠিয়েছিলেন, ওরা সে প্রত্যাশা পূরণ করেছে। এরাই তো দেশের শস্য, সম্পদ, পশু ও অন্ত্রশস্ত্ৰ বিদেশে পাচার রোধ করেছে। সীমান্ত এখন তাদের নখদর্পনে চলে এসেছে। সন্দেহজনক লোককে দূর থেকে তারা সনাক্ত করে ফেলতে পারবে। গন্ধ শুকে ধরে ফেলতে পারবে দুশমন। এমন অভিজ্ঞ দলকে সরিয়ে নতুন দল পাঠালে পারদর্শী হতেই তাদের লেগে যাবে বছর খানেক। তারচেয়ে যারা আছে তারাই থাক। এসব আস্থাভাজনরা যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ আমরা টেনশন ও ঝুঁকি মুক্ত থাকতে পারবো।”
তকিউদ্দিন এই উত্তরে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। কারণ তাঁকে তো আর কেউ বলেনি, “ডাল মে কুছ কালা হ্যায়!”
আলকিন্দি রাতে ঘরে বসে তার মামাকে বলছিলো, সীমান্ত রক্ষীরা এখন অকেজো হয়ে গেছে। আমার চেষ্টা সফল হয়েছে, আমি তাদের বদলি হতে দেইনি। তারা সীমান্তবতীর্ণ এলাকার লোকদের সাথে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। তাদের পেট এখন সব সময় ভরা থাকে। খাওয়া-পরা নিয়ে তাদের কোন অভিযোগ নেই। আমি প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার তাদের ঘরে পৌঁছে দেই।
কিন্তু একটি অভাব এখনো রয়ে গেছে তাদের। এ জন্য তারা ক্ষুধার্তা নেকড়ের মত হয়ে থাকে। কোন কাফেলা সামনে পেলেই তাদের নারীদের মুখ খুলে দেখে।”
“এ অভাবও তাদের বেশী দিন থাকবে না। আমরা তাদের এ ক্ষুধাও মেটানোর ব্যবস্থা করতে পারবো।”
তিনি যার সঙ্গে কথা বলছিলেন, সে একজন সুদানী, সম্পর্কে তার পাতানো মামা। সে এখানে এসেছে মেহমান হয়ে। তাদের জন্য নিয়ে এসেছে বিস্তর উপটৌকন। তার আপন মামার একটা চিঠিও আছে সাথে।
সে আলকিন্দিকে বললো, “তোমার ভাগ্যই ভাল। সুদানীরা তোমার কাছ থেকে যত সাহায্য পাবে ততই খুলে যাবে তোমারও ভাগ্য। এ সুযোগে ভালই ‘দাও’ মারতে পারবে তুমি।’
“কিন্তু আমি ওদের কতটুকুই বা সহযোগিতা করতে পারবো!”
“আরে বলো কি! তোমার হাতেই তো সব চাবিকাঠি। শোন, ওরা গোপনে মিশরে কিছু সৈন্য পাঠাতে চায়। তুমি যদি এ সৈন্যদের কোন প্রকারে মিশরে ঢুকিয়ে দিতে পারো, তুমি তো দুদিনেই রাজা বনে যাবে!’
আলকিন্দি বললো, “এ আর এমন কঠিন কি কাজ! আপনি শুধু আমাকে জানাবেন, কখন আসতে চায় ওরা। আমি সব ব্যবস্থা করে রাখবো।”
আলকিন্দি সেই কয়েকজন সেনাপতির অন্যতম, যাদের ওপর সুলতান আইয়ুবী ভরসা ও বিশ্বাস রাখতেন। আলকিন্দি তার কাজকর্ম ও আচরণে সে যে মিশর সরকারের অনুগত নয় এমন কোন সন্দেহ করার অবকাশ রাখেনি। আলী বিন সুফিয়ানকে পর্যন্ত সে ধোঁকার মধ্যে ফেলে রেখেছিলো।
তার প্রতি এই বিশ্বাস ও আস্থার কারণ ছিল, সে কঠোর হাতে চোরাচালান বন্ধ করেছিল এবং গত দুই আড়াই বছর ধরে চোরাচালান পুরোপুরি বন্ধ আছে। এই সুনামটাই তাকে সন্দেহের উর্ধে নিয়ে গিয়েছিলো।
সীমান্ত জুড়ে এ বিশ্বস্ত ব্যক্তিটির রহস্যময় তৎপরতার খবর কেউ জানতে পারলো না।
সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মিশর থেকে বিদায় নেয়ার সময় থেকে আলকিন্দি তকিউদ্দিনকে আশ্বাস দেয়, “সুদানের দিক থেকে যে কোন তৎপরতার বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন। সুদানের কোন অপতৎপরতা তো দূরে থাক, সুদানের কোন পক্ষীও মিশরের সীমানায় প্ৰবেশ করতে পারবে না।”
অপরদিকে তারই প্রশ্রয়ে ও সহযোগিতায় সুদানের একদল হাবশী সৈন্য গোপনে মিশর আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
এসব হাবশীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মিশরে প্রবেশ করে। তারা অতি গোপনে সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে কায়রোর সন্নিকটে একত্রিত হয়। তাদের ইচ্ছা, সুযোগ মত কোন এক রাতে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে তারা মিশর দখল করে নেবে।
নীলনদ সুদূর দক্ষিণ থেকে প্রবাহিত হয়ে সুদানের মধ্য দিয়ে মিশরে ভেতরে প্রবেশ করেছে। মিশরের মাটিতে প্রবেশ করে নীলনদ এক জায়গায় বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে ঝিলের মত এক জলাধার সৃষ্টি করেছে। সেখান থেকে একটু এগিয়ে সামনে পাহাড়ী এলাকায় প্রবেশ করেছে। তারপর সেই পানি জলপ্রপাতের আকারে আবার নেমে গেছে নিচে।
এ জলপ্রপাতের পার্শ্ববতী এলাকার নাম আসোয়ান। সুলতান আইয়ুবীর শাসনকালে আসোয়ানের আশেপাশের অঞ্চলগুলোর ভৌগোলিক অবস্থা ছিল ভিন্ন রকম।
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পাহাড়ী উপত্যকা, মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পর্বতমালার সুউচ্চ শৃঙ্গ।
এ অঞ্চলের ওপর ফেরাউনের বিশেষ কৃপাদৃষ্টি ছিল। ফেরাউন সম্রাটরা পাহাড়গুলো কেটে ছেটে সাইজ করে মূর্তি তৈরী করেছিলো। এ সব মূর্তির মধ্যে সবচেয়ে বিশাল মূর্তি ছিল “আবু সাম্বালের মূর্তি।
অন্যান্য পাহাড় কেটেও বানানো হয়েছিল মন্দির এবং ইবাদতখানা। এগুলোর উঁচু মিনার ও মন্দিরের চূড়া দূর থেকে দেখা যেত।
কোনটাতে আবার ফেরাউনের মুখ বানানো ছিল। কোথাও পাহাড় কেটে তৈরী করা হয়েছিল সুরম্য বাসস্থান, সুন্দর সুন্দর কামরা, আঁকাবাঁকা পেঁচানো গোলক ধাধায় ভরা সুড়ং পথ।
ফেরাউনদের ছিল অঢেল ধনরত্ন। এই সম্পদের অহমিকায় তারা নিজেদের ভাবতো সর্বেসর্বা। শক্তি ও ক্ষমতার গর্বে এসব সম্রাটরা নিজেদের ‘খোদা” বলে দাবী করতো। এই বিস্ময়কর গোপন জগত তারা কি জন্য বানিয়েছিলো সে রহস্য উদ্ধার করা কঠিন। কিন্তু এই মূর্তি ও খোদাই করে পাহাড়ের নিচে মহল তৈরী করতে তাদের বহু সময় অতীত হয়ে গিয়েছিল। মনে করা হয়, সম্পদের সুরক্ষা ও ফেরাউনদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যই তারা এই বিপুল ব্যয় ও কর্মযজ্ঞে মেতে উঠেছিল।
জনসাধারণকে এসব ফেরাউনদের সামনে সিজদা করতে হতো। খোদার নির্দেশের মতই তাদের প্রতিটি আদেশ মান্য করতে হতো। ফেরাউনের সামনে সম্পূর্ণ অসহায় দরিদ্র, নিপীড়িত ও ক্ষুধার্তা প্রজাদের দিয়ে কাটানো হতো এসব পাহাড়।
এখন সেখানে কোন মূর্তি নেই, কোন মহলও নেই, নেই কোন পাহাড়ও। এখন সেখানে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত আসোয়ান বাঁধ ও বিল। এই বাঁধ তৈরীর সময় সেখানকার বিশাল মূর্তি খোদাই পাহাড়গুলো বড় বড় ক্রেন ও ড্রেজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়। ফেরাউনের যুগের স্মৃতি স্বরূপ ‘আবু সাম্বালের’ মূর্তি রেখে বাকি সমস্ত পাহাড় ও টিলা ডিনাইমাইট দিয়ে উড়িয়ে গুড়ো করে দেয়া হয়।
মজলুম জনতার খুন ও ঘাম দিয়ে তৈরী পাহাড় সমান মূর্তিগুলোর এই করুণ পরিণতি এবং মানুষের আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির এই বিপুল বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ যদি দেখতে পেতো ফেরাউন, তবে তার ‘খোদা’ হওয়ার সাহস চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যেতো।
সুলতান আইয়ুবীর যুগে এ অঞ্চল ছিল পার্বত্য টিলা ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ। উঁচুনিচু অঞ্চলের চেহারা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে পর্বতগাত্রের ছোট বড় অসংখ্য গুহায় লুকিয়ে থাকতে পারতো অসংখ্য সৈন্য। এমন দুৰ্গম ও রহস্যে ভরা সীমান্ত অঞ্চল আসোয়ানের দিকে সুলতানের ছিল বিশেষ ঝোঁক। এখান থেকেই নীলনদ বয়ে গেছে মিশরের সমতল ভূমিতে।
সুদানীদের গোপন যাতায়াত এই নদী পথেই চলতো। তারা নৌকাযোগে ভাটির দেশ মিশরে অনায়াসেই প্ৰবেশ করতে পারতো। এই নদী পথে কড়া দৃষ্টি রাখার জন্য সুলতান আইয়ুবী একটি চৌকস প্রহরী ফাঁড়ি স্থাপন করেছিলেন। এই ফাঁড়িটা নদী থেকে একটু দূরে গোপন জায়গায়। সে কারণে ফাঁড়ি থেকে সরাসরি নদীর দৃশ্য দেখা যেত না, আবার নদী থেকেও ফাঁড়ি দেখা যেত না। এই দূরত্ব ভেবে চিন্তেই রাখা হয়েছিল, যেন নদী পথে গোপনে চোরের মত যাতায়াতকারী চোরাচালানী বা শক্ররা মিশরে প্রবেশ ও মিশর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নিশ্চিন্ত থাকে, কেউ তাদের দেখতে পাচ্ছে না, ধরতেও পারবে না।
টহলদার সৈনিকরা গোপন পাহারায় তাদের দিকে দৃষ্টি রাখতো। দুই অশ্বারোহী সবসময় নদীর তীরে টহল দিয়ে বেড়াতো, নির্দিষ্ট সময়ে ডিউটি পরিবর্তন হতো তাদের।
মিশরে সুলতান আইয়ুবীর অনুপস্থিতির সুযোগে সেখানে ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে উঠতে থাকে। টহলদার প্রহরীদের পাহারায় দেখা দেয় শিথিলতা। তারা দিনের বেলায় নদী পথে দৃষ্টি রাখার জন্য বেরিয়ে এসে একটু ঘোরাঘুরি করে ইচ্ছেমত চলে যায় এখানে ওখানে। ডিউটি নয়, যেন ওরা প্ৰমোদ ভ্রমণে বেরিয়েছে।
এগিয়ে গেলে একটি সবুজ শ্যামল বাগান ও বনভূমি পড়ে। ওখানকার মনোরম দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয় যে কোন মানুষের। বিশ্রামের জন্য এরচেয়ে সুন্দর জায়গা আর হয়না। সেখানে বৃক্ষের কোমল ছায়া, সবুজ ঘাসের গালিচা আর নদীর ঝিরঝির বাতাসে সহজেই ঘুম এসে যায়।
টহলরত অশ্বারোহীরা প্রায়ই সেখানে গিয়ে আরাম ও বিশ্রাম করে। দীর্ঘদিন কোন সুদানী চোরাচালানী, দুষ্কৃতকারী বা গুপ্তচরদের আনাগোনা দেখতে না পেয়ে তারা বড় শান্তিতে আছে।
আগে তারা অনেক গুপ্তচর, স্মাগলার ও দুষ্কৃতকারী অহরহ পাকড়াও করতো। সেই ধরপাকড়ের ফলে বন্ধ হয়ে যায় ওদের তৎপরতা, বিরাণ হয়ে যায় নদীর সেই পারাপারের পথ। তাই পাহারা দেয়ার গরজ হারিয়ে ফেলে প্রহরীরা। ওই বাগানে গিয়ে আরাম করে ডিউটির সময়।
বাগানে যাওয়া এখন এই আশ্বারোহীদের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু এক সময় বাগানে যাওয়ার আকর্ষণও পানসে হয়ে উঠল তাদের কাছে। নদী পাড়ের সবুজ শ্যামল বাগান এখন আর তাদের আকর্ষণ করে না। প্রতিদিন একই দৃশ্য তাদের কাছে বৈচিত্র্যহীন ও একঘেয়ে হয়ে উঠলো। তবু তারা সেখানে যায়। তাকিয়ে দেখে বন বিড়াল, বাঘদাস, ও অন্যান্য মরুপ্রাণীর নদীতে নেমে পানি পান করার দৃশ্য। প্রহরীদের দেখলেই ওরা ছুটে পালিয়ে যায়।
কখনো জেলেদের মাছ ধরা নৌকা ভেসে উঠে তাদের চোখের সামনে। ওরা এগিয়ে গিয়ে জেলেদের ডেকে জিজ্ঞেস করতো, “এই, তোমরা কোথাকার লোক? পরিচয় কি?”
এখন আর তাও জিজ্ঞেস করে না। নৌকার মাঝি মাল্লা ও জেলেরা এখন আর কুলে ভিড়ার প্রয়োজন বোধ করে না।
প্রহরীরা বসে বসে গল্প করছিল। একঘেয়ে জীবনের কথা, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্জন মরুভূমীতে একাকী জীবন কাটানোর কথা বলছিল ওরা আফসোস করে। তাদের বন্ধু ও সাখীরা মিশরের বিভিন্ন শহর- কায়রো, সেকেন্দারিয়া ও অন্যান্য শহরে কেমন আরামের জীবন কাটাচ্ছে! আর তারা এই জঙ্গল ও মরুভূমিতে পড়ে আছে বিরস বদনে। তাদের কণ্ঠে অসন্তোষ ও বিদ্রোহের ভাব ফুটে উঠে।
দু’জন প্রহরী সেই মনোরম বাগানে যাচ্ছিল। দূর থেকেই ওরা দেখতে পেল, সেখানে চার পাঁচটি উট বাঁধা রয়েছে আর আট দশজন লোক সেখানে বসে বিশ্রাম করছে। চারজন লোক নদীতে নেমে গোছল করছে।
এ দৃশ্য দেখে প্রহরী দু’জন সেখানে এগিয়ে গেল। তারা অবাক হলো, লোকগুলোর বেশভুষা দেখে। আরো অবাক হলো, যাদেরকে ওরা গোছল করতে দেখেছিল, ওরা কেউ পুরুষ নয়, চারজনই যুবতী।
এতে প্রহরীদের একটু সংকোচবোধ হলো। হালকা চিকন কাপড়ে বুক বেঁধে ডুবাচ্ছিল ওরা। গভীর পানিতে নামেনি, কোমর সমান পানিতে দাঁড়িয়ে ডুবাচ্ছে। তাদের দেহের রঙ খুব যে ফর্সা তা নয়, তবে অসম্ভব লাবন্যময়। এমন লাবন্য, যেখান থেকে চোখ ফিরানো কষ্টকর।
মিশরের মেয়েদের তুলনায় এরা অনেক বেশী আকর্ষনীয়। তারা বার বার ডুব দিচ্ছে আর ভেসে উঠেই ফেটে পড়ছে খিল খিল হাসিতে।
অশ্বারোহী দু’জনের মনে হলো, এরা কেউ মাটির মানুষ নয়, এরা আকাশ থেকে নেমে আসা কোন জলপরী, নয়তো ফেরাউনের রাজকন্যা, মমির খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছে।
দুই প্রহরী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের দেখতে লাগলো। হঠাৎ মেয়েগুলোর চোখে পড়ে গেল ওরা। ওদের দেখেই মেয়েরা তড়িঘড়ি লজ্জা ঢাকায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তাই দেখে লজ্জা পেল প্রহরীরাও। ওরা দু’জন সেখান থেকে সরে পড়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াল।
বসে থাকা লোকগুলো এতক্ষণ তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিল। তাদের ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ দেখে দুজন লোক তাড়াতাড়ি উঠে অশ্বারোহীদের কাছে এগিয়ে গেল। মেয়ে চারটি ওদের দেখেই দ্রুত নদীর কিনারে উঠে এক ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।
মেয়েগুলো চোখের আড়ালে গেলে অশ্বারোহীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যেন বুকের মধ্যে আটকে থাকা ভয় ভুস করে বেরিয়ে গেল সুযোগ পেয়ে।
সীমান্ত প্রহরী হিসাবে ওদের ভয় পাওয়ার কিছু ছিল না। কিন্তু লুকিয়ে মেয়েদের রূপসুধা পান করার অপরাধবোধই তাদের ভীত করে তুলেছিল। লোক দু’জন এগিয়ে এসে বুকে তাদেরকে সালাম দিলো। পরণে মরুচারী বেদুঈনদের পোষাক। বললো, “আমরা কায়রোর ব্যবসায়ী। সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলো থেকে মালামাল ক্রয় করে শহরে নিয়ে বিক্রি করি।”
“এটা তো কায়রো যাওয়ার রাস্তা নয়!” এক অশ্বারোহী বললো।
“এই মেয়েদের বড় শখ হলো, তারা নদী দেখতে দেখতে যাবে।” একজন উত্তরে বললো, “আমাদের কেনাকাটা শেষ, এখন তেমন তাড়া নেই। ভাবলাম, ওদের শখ মিটুক, আমরাও কাজের ফাঁকে একটু বেড়ানোর সুখ নিয়ে নেই।”
“ভালই তো সুখে আছো দেখছি। এক সাথে রথ দেখা কলা বেচা দুটোই সেরে নিচ্ছো।”
“একটু সুখের জন্যই তো মানুষ এত কষ্ট করে। ব্যবসার কাজে বলতে গেলে তো সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকি। তাই বলে কি আমাদের সাধ-আহলাদ বলতে কিছু নেই? দুটো রাত এই সুন্দর পরিবেশে কাটানোর লোভ ছাড়ি কি করে!”
“কি বললে! তোমরা এখানে আরো দুদিন থেকে যাবে?”
‘ওরকমই ইচ্ছে। চলুন, আমাদের মালসামান পরীক্ষা করে দেখবেন। এবার বহু টাকার মাল কিনেছি, দেখলেই বুঝতে পারবেন, ব্যবসায়ী হিসাবে আমরা মন্দ নই।”
অশ্বারোহীরা ঘোড়া দুটো এক গাছের সাথে বেঁধে লোক দুটোর সাথে ওদের ক্যাম্পে গিয়ে হাজির হলো।
দু’জন সরকারী প্রহরীকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে নত হয়ে সালাম করলো। ওদের, এরপর একে একে এসে মুসাফাহা করলো।
একজন বললো, “আমরা কি এখনি মাল-সামানের মুখ খুলে দেখাবো?”
প্রহরীরা একে অন্যের দিকে চাইল। একজন বললো, “তার আর দরকার নেই। মালপত্র কিছুই আমাদের দেখানো লাগবে না।’
ব্যবসায়ীরা গল্প জুড়ে দিল প্রহরীদের সাথে। কথায় কথায় একজন সুলতান আইয়ুবীর সৈন্যদের অশেষ প্রশংসা করলো। এক যুবক অশ্বারোহী সৈনিকদের দেখিয়ে বললো, “আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সৈন্য বিভাগে ভর্তি হই। তাহলে আমারও আপনাদের মত সুন্দর স্বাস্থ্য থাকতো!’
‘সুন্দর স্বাস্থ্য হলেই কেউ বড় যোদ্ধা হয় না।” বললো আরেক যুবক, উনাদের জিজ্ঞেস করে দেখো, বীরত্ব ও কঠিন দায়িত্ববোধই সৈনিকদের সাফল্যের চাবিকাঠি।”
“হ্যাঁ, তাই। সাহস ও নিষ্ঠা ছাড়া কেউ সৈনিক হতে পারে না।’
এভাবেই চলছিল তাদের খোশালাপ। তারা এমন কোন কথা বললো না, যাতে তাদের নিয়ে সৈনিকদের মনে কোনরকম সন্দেহ জাগতে পারে।
ততক্ষণে সেই মেয়েরা কাপড় পরে চুল আচড়ে সেজোগুজে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। কিন্তু তারা একটু লজ্জিত ও সংকোচ ভরা মনে সামান্য তফাতে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল।
এ বিরাণ মরুভূমিতে দীর্ঘ দুই আড়াই বছর পর বাইরের কোন কাফেলা দেখলো সৈনিকরা। যে কাফেলায় আছে ভরা যৌবনের যুবতী চার মেয়ে। তাদের লাবন্যময় চেহারার ছবি বুকে সেঁটে রইল তাদের। ইচ্ছে করছিল না, এদের সঙ্গ ছেড়ে এখনি এখান থেকে চলে যায়।
ওরা আপন পরিচিত নারীর সাথে এই মেয়েদের বিভিন্ন রূপ কল্পনা করে মিলিয়ে নিতে চাইলো। এরা এমন নারী, যাদেরকে মা হিসাবে কল্পনা করা যায় না। বোন বা স্ত্রী হিসাবেও নয়। কন্যা তো নয়ই।
দু’জনেই কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখছিল। মেয়েরা নতুন দু’জন পুরুষ মানুষ দেখে একটু লজ্জাবোধ করছিল এবং আড় চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে মুখ লুকিয়ে হাসছিল। তাদের লাজুক লাজুক ভাব ও আড়াল হওয়ার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল, এরা কোন অভিজাত বংশের আদুরে কন্যা।
কাফেলার লোকদের আন্তরিক ব্যবহার ও প্রশংসা শুনে এ দুই সীমান্ত প্রহরী বিগলিত হয়ে গেল। লজ্জাবতী মেয়েদের লাবন্যময় রূপ ও যৌবনের আকর্ষণ তাদের মনে সৃষ্টি করল মোহগ্ৰস্ত মুগ্ধতা। ডিউটির কথা ভুলে গিয়ে ওরা ওখানেই পড়ে রইল।
কাফেলার একজন বললো, “আমরা এখানে থাকবো কি থাকবো না, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। অচেনা জায়গা, সঙ্গে মেয়েরা, বিপদাপদের কথা তো বলা যায় না!” লোকটি বললো, “আপনাদের দেখে মনে সাহস এলো।”
‘আরে না না, এ এলাকায় ভয়ের কোন কারণ নেই। এখানকার শান্তি শৃংখলার পরিস্থিতি যথেষ্ট ভাল।”
“এটা আপনাদের সততা, যোগ্যতা ও নৈপুণ্যের ফল। আরে, রাজা ভাল তো দেশ ভাল। আপনারা আছেন বলেই দেশের মানুষ একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারছে, নির্বিঘ্নে পথ চলতে পারছে।”
“অমন করে বলবেন না, এটা তো আমাদের দায়িত্ব।”
“দায়িত্ব থাকলেই ক’জন আর এমন নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে!” লোকটি বললো, “আপনাদের যদি অসুবিধা না হয়। আমাদের আতিথ্য গ্ৰহণ করুন, আমরা খুবই খুশী হবো।”
দীর্ঘ দিন যাবত নিরানন্দ জীবন কাটাতে কাটাতে হাঁপিয়ে উঠেছিল ওরা। এ আমন্ত্রণ ওদের কাছে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতই মনে হলো। দু’জনেই রাজি হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে।
কাফেলার এক লোক ছিপ নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে গেল। আরো দু’তিনজন সঙ্গী হলো ওর। বড়শীতে টোপ গেথে পানির ওপর মাছের খাদ্য ছিটিয়ে দিল লোকটি। মাছেরা ভীড় করলো এসে সেখানে। লোকটি ছিপ ফেললো সে টোপের ভেতর।
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে বাকীরা দেখছিল তার কাজ।
মাছ বড়শীর টোপ গিললো, আটকে গেল বড়শীতে, সঙ্গে সঙ্গে লোকটি বড়শী টেনে মাছটি ডাঙ্গায় তুলে ফেললো। যারা তামাশা দেখছিল তারা ছুটে গিয়ে ধরে ফেলল মাছটি। এভাবে সে একটার পর একটা অনেকগুলো মাছ ধরে ফেললো।
এক লোক মেয়েদের ডেকে বললো, “এই, মাছ নিয়ে যাও, ভাল মত তেল মশলা দিয়ে আগুনে ভেজে নাও, দেখবে খেতে দারুণ লাগবে।”
চারজন মেয়েই আনন্দে ছুটে গেল সেখানে। মাছ এনে কেউ কুটে ধুয়ে পরিষ্কার করলো, কেউ মশলা পিষলো, কেউ বা উনুন জ্বলিয়ে রান্না শুরু করলো। সিপাইদের জীবনে এমন আনন্দময় পিকনিক উপভোগ করার সুযোগ কোন দিন হয়নি।
অশ্বারোহী সৈনিকরা ফাঁড়িতে যে একঘেয়ে জীবন কাটাচ্ছিল, সে জীবনে ক্ষণিকের জন্য হলেও নেমে এলো আনন্দের জোয়ার।
যদিও তাদের খাবার দাবার যথেষ্ট উন্নত ছিল তবু প্রতিদিনের রুটিন বাধা খাবারে কোন বৈচিত্ৰ্য ছিল না। নীল নদের পাড়ে বাগানের ফুল্ল হাওয়ায় বসে নদীর তাজা মাছ ভেজে খাওয়ার স্বাদ আলাদা।
মাছ ভাজছে মেয়েরা, চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে মাছ ভাজার সুস্বাদুঘাণ। জিভে পানি এসে গেল সৈনিক দু’জনের।
সবাই মিলে খেতে বসলো, চমৎকার রান্না হয়েছে। পুরুষরা খাচ্ছে, মেয়েরা পরিবেশন করছে। এক সৈনিক খুব তারিফ করলো রান্নার। পরিবেশনকারী মেয়েটি লজ্জিতভাবে প্রশংসাটুকু উপভোগ করলো।
পুরুষদের আহারের পর খেতে বসলো মেয়েরা। পুরুষরা ঘাসের ওপর বিছানা পেতে আরাম করতে লাগলো।
মেয়েরা খাচ্ছে, আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে ওদের। যখনি চোখে চোখ পড়ে লাজুক চোখ দুটো লজ্জায় নামিয়ে নেয়। এই লুকোচুরি ও লজ্জার সৌন্দর্যই আলাদা। এর আকর্ষণ এমন সুতীব্ৰ যে, বার বার এ ফাঁদে পড়তে চায় ব্যাকুল মন। মেয়েদের খাওয়া হয়ে গেলো। সৈন্যরা কাফেলার দু’তিনজন পুরুষের সাথে এক বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় গল্প করছিল, হঠাৎ এক সৈনিকের দৃষ্টি গেল তাদের ঘোড়ার দিকে।
এক যুবতী তার ঘোড়ার গর্দান ও কেশরে আদর করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হাত দিয়ে জীন নাড়াচাড়া করছে আর গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখছে ঘোড়াটিকে।
ঘোড়ার মালিক সৈনিকটি মেয়েটির কার্যকলাপ আগ্রহের সাথে লক্ষ্য করছিল। মেয়েটি ঘোড়ার গায়ে ও গর্দানে আদর করে চোখাচোখি হয়ে গেল ওর সাথে। ওর চোখে চোখ পড়তেই মেয়েটি একটু হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
ঘোড়ার মালিক তাকিয়ে রইল মেয়েটির দিকে। কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছে না। এমন সুন্দরী মেয়ে জীবনে আর কখনও দেখেনি সে। মেয়েটির প্রতি ক্ৰমেই সে দুর্বল হতে লাগলো।
বয়ষ্ক এক লোক বসেছিল সৈন্যদের পাশে। বললো, “এই মেয়েদের ঘোড়ায় চড়ার খুব শখ। ঐ যে দেখছো মেয়েটা ঘোড়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, সবচেয়ে বেশী আগ্রহ ওর। তুমি কি ওদের এ আকাঙ্খাটুকু পূরণ করবে?”
‘খুশীর সাথেই আমি ওদের এ শখ পূরণ করবো।” সিপাইটি বললো। সে উঠে তার ঘোড়ার কাছে গেল। মেয়েটি সংকোচে সরে গিয়ে একটু দূরে দাঁড়াল।
‘লজ্জা কিসের, এসো! আমি তোমাদের প্রত্যেকেরই শখ পূরণ করে দেবো। এসো ঘোড়ার পিঠে তুলে দেই।” সিপাহী বললো।
বুড়ো বললো, ‘আরে, এদের দেখে লজ্জা পাচ্ছে কেন? এরা আমাদের গর্ব ও অহংকার। দেশের অতন্দ্র প্রহরী। তোমাদের ইজ্জত ও সম্মানের রক্ষক। এরা না থাকলে তো তোমাদের ইজ্জত-সম্মান খৃস্টান ও সুদানীরা কবেই শেষ করে দিতো!’
মেয়েটি সংকোচ মাখা পায়ে ঘোড়ার কাছে এগিয়ে গেল। সিপাহী তার পা রেকাবে উঠিয়ে দিয়ে বললো, “হ্যাঁ, এখানে পা রেখে উঠে পড়ো।”
সে মেয়েটিকে উঁচু করে ধরে তাকে ঘোড়ায় উঠে বসতে সাহায্য করলো।
এ সময় ক্যাম্পের দিক থেকে তার বন্ধু ডেকে বললো, “এই, কি করছো?”
সে ওদিকে তাকাতেই সহসা ঘোড়া ছুটতে শুরু করলো। মেয়েটি চিৎকার জুড়ে দিলো। সিপাইটি ফিরে দেখলো, ঘোড়া পূর্ণ বেগে চলতে শুরু করেছে।
ঘোড়ার ওপর মেয়েটি এদিক-ওদিক দোল খাচ্ছে। প্ৰাণপণ চেষ্টা করছে টিকে থাকার।