» » ছোট বেগম

বর্ণাকার

সুলতান যখন ফোরাতের কূলে বসে এই আলাপ করছিলেন, সুলতানের বিশ্বস্ত সেনাপতি হাবিবুল কুদ্দুস তখন কায়রো থেকে দূরে পাহাড় ঘেরা এক ভয়ংকর স্থানে পুরাতন মহলের ধ্বংসস্তুপের এক কামরায় বসে মিশরে বিদ্রোহ ঘটানোর পরিকল্পনা করছিলেন।

পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সেই ধ্বংসস্তুপের মধ্যে সে রাতে তারা আনন্দ ফুর্তিতে মেতে উঠছিল। যদি বাইরের কেউ সে সময় সেখানে আসতো তবে তারা ভয়ে পালিয়ে যেতো। তারা ভাবতো, জ্বীন পরীরা সেখানে আনন্দ নৃত্য করছে। যে সুন্দরী মেয়েরা নাচছিল তাদের কেউ মানুষ না ভেবে ভাবতো পরী।

ওখানে মানুষ ছিল মাত্র আটজন। হাবিবল কুদ্দুস ও এক খৃস্টান তো প্রথম দিন থেকেই ছিল। আর ছিল দুই রূপসী ও এক পাহারাদার। মিশরী ও সুদানী দু’জন যোগ দিলে তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় সাত-এ। আর আছে হাবিবুল কুদ্দুসের স্ত্রী জোহরা।

বিদ্রোহের নীল নকশা ও পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। হবিবুল কুদ্দুস ও জোহরা সবার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সেখানে কেউ শত্রু নেই। ফলে সেখানে পাহারায় সতর্কতারও কোন প্রয়োজন বোধ করলো না কেউ।

তাদের একজনকে হাবিবুল কুদ্দুস শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু এটা তখনকার ঘটনা যখন হাবিবুল কুদ্দুস তাদের পরিকল্পনা জানতেন না। এখন আর সেখানে পাহারার প্রয়োজন ছিল না, কারণ এই সেনাপতি এখন তাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। তাঁকে তারা গোপনে পরীক্ষা করে দেখেছে, বিদ্রোহের ব্যাপারে তিনি সত্যি দৃঢ়সংকল্প।

রাতে পুরো দলটিই আনন্দে মেতে উঠলো। একেবারে উৎসবের আমেজ। রাজকীয় খানাপিনার আয়োজন করা হয়েছে সবার জন্য। মদের পাত্রগুলো হাতে হাতে ফিরছে। দুই মেয়ে প্রাণ খুলে নাচছে, গাইছে।

হাবিবুল কুদ্দুসও উৎসবে শরীক হয়েছেন। তার সামনে তুলে ধরা হলো সুরার পাত্র। তিনি অবজ্ঞা ভরে ফিরিয়ে ‍দিলেন সে পাত্র। এ নিয়ে আর জোরাজুরি করলো না কেউ।

উৎসবে হাজির জোহরাও। মেয়েরা হাতে তুলে নিল সুরাপাত্র। পাত্র তুলে দেয়া হলো জোহরার হাতেও। সে হাত পেতে তা গ্রহণ করলো কিন্তু পান না করে কৌশলে তা ফেলে দিল সবার অলক্ষে।

খৃস্টান লোকটি মিশর ও সুদান থেকে আগত লোক দু’জনের সাথে কথা বলছিল। সুদানী বললো, ‘জোহরা মেয়েটাকে বলে দাও, ও যেন খুব সতর্কতার সাথে হাবিবুল কুদ্দুসের দিকে নজর রাখে। নইলে যে কোন সময় মত বদলে ফেলতে পারে সেনাপতি।’

জোহরা অন্য মেয়েদের মতো নির্লজ্জ আচরণ না করলেও আনন্দ উৎসবে সক্রিয় অংশগ্রহন করেছে যাতে তার ব্যাপারে কারো মনে কোন সন্দেহ সৃষ্টি না হয়।

মধ্যরাত পর্যন্ত সবাই এ আনন্দ মাহফিলে কাটিয়ে দিল। মদের নেশায় যখন চোখগুলো ঢুলুঢুলু তখন একে একে উঠতে শুরু করলো জলসা থেকে।

মিশরী ও সুদানী দু’জন চলে গেল তাদের কামরায়। মেয়েরাও নিজেদের কামরার দিকে পা বাড়াল। কেউ কেউ নেশায় বেহুশ হয়ে ওখানেই পড়ে রইলো। জোহরা হাবিবুল কুদ্দুসকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো।

তিনিও সেখান থেকে উঠে গেলেন। জোহরা সেখান থেকে বেরিয়ে মেয়েদের কামরার দিকে গেল। কামরা খালি, দু্’জনের কেউ কামরায় নেই।

জোহরা মিশরী ও সুদানী লোক দু’জন যেখানে থাকে সেখানে গেল। কামরা ভেতর থেকে বন্ধ। ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছে নারী ও পুরুষের জড়িত কন্ঠ। সমস্ত পরিবেশটাই বেহুশ মাতালদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।

জোহরা জানতো এই দুস্কৃতকারীদের অস্ত্রসস্ত্র কোথায় থাকে। সে একটি বর্শা, একটি তলোয়ার, দু’টি ধনুক ও ব্যাগ ভর্তি তীর উঠিয়ে নিল।

হাবিবুল কুদ্দুস তার অপেক্ষাতেই দাঁড়িয়ে ছিল নির্দিষ্ট জায়গায়। জোহরা সেখানে পৌঁছলে তিনি জোহরার হাত থেকে তলোয়ারটি নিয়ে নিলেন। একটি ধনুক ও তীর কোষ নিজে কাধেঁ নিয়ে অপর ধনুক ও তীর কোষ জোহরার কাঁধে লটকে দিলেন। বর্শাটা জোহরার হাতেই রইলো।

‘চলো এদেরকে হত্যা করে ফেলি।’ জোহরা হাবিবুল কুদ্দুসকে বললো।

‘না, এখন এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেড়িয়ে যাওয়া উচিত।’ তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে নদী পর্যন্ত নিয়ে যাও।’

জোহরা নদী পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা ভাল করে দেখে রেখেছিল। ‍যদি এ রাস্তা তার দেখা না থাকতো তবে তাদের পক্ষে সেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব হতো বলে মনে হয় না।

জোহরা আগে, হাবিবুল কুদ্দুস তার গা ঘেঁষে পা টিপে টিপে এগিয়ে যাচ্ছিল নদীর দিকে। তাদের কান দুটো বনের প্রতিটি নড়াচড়া লক্ষ্য করছিল। হাবিবুল কুদ্দুস তার তলোয়ার খাপে না ভরে হাতে নিয়ে এগুচ্ছিল। জোহরা এগুচ্ছিল তার হাতের বর্শা বাগিয়ে।

জোহরা তার স্বামীকে নৌকা পর্যন্ত নিয়ে গেলো। নৌকাটি পাহাড়ের আড়ালে নালার খানিকটা ভেতরে যেখানে পানি জলাশয়ের রূপ নিয়েছিল সেখানে বাঁধা ছিল।

দু’জনেই নৌকা খুলে শান্তভাবে তাতে চড়ে বসলো। তারা অতি ধীরে ধীরে বৈঠা মারতে লাগলো যেন শব্দ না হয়। প্রতিটি মুহূর্ত তাদের কাটছিল ভয় ও আতঙ্ক এর মধ্যে। মনে হচ্ছিল এই বুঝি টের পেয়ে গেল ষড়যন্ত্রকারীরা। এই বুঝি অদৃশ্য থেকে ছুটে এলো কোন তীর।

কিন্তু না, সব আশঙ্কাকে ভিওিহীন ও অমূলক প্রমাণ করে নৌকা পাহাড়ের সংকীর্ণ নালা বেয়ে নদীর দিকে এগিয়ে চললো।

সংকীর্ণ নালা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সামনেই নদী। নদীর কলতানের শব্দ শুনতে পাচ্ছে ওরা। হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘আল্লাহকে স্মরণ করো। মনে হচ্ছে ওদের ফাঁকি দেয়া সম্ভব হবে। এখন আর বৈঠার শব্দ শুনতে পাবে না ওরা। তুমিও একটা বৈঠা হাতে নাও।’

হাবিবুল কুদ্দুস জোহরাকে বললেন, ‘তুমি জিহাদে অংশ নেয়ার ইচ্ছা করেছিলে। আল্লাহ তোমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে।’

‘আপনার কি মনে হয় আমরা এখন বিপদ মুক্ত?’

‘না, আমরা এখনও বিপদ মুক্ত হইনি। নৌকা ফোরাতের স্রোতে পড়লে বিপদ আরো বাড়বে। এত ছোট নৌকা সেই প্রবল তরঙ্গের ঝাপটা কেমন করে সইবে তাই ভাবছি।’

জোহরা একটা বৈঠা নিয়ে পানিতে ফেললো। হাবিবুল কুদ্দুসের সাথে সমান তালে সে বৈঠা চালাতে লাগলো। দু’জনে বৈঠার ঘায়ে নৌকা এগিয়ে চললো তরতর করে। অল্পক্ষণ পরেই নৌকা নালা থেকে বেরিয়ে স্রোতস্বিনী ফোরাতের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।

হাবিবুল কুদ্দুস শক্ত হাতে হাল ধরে নৌকার গতি থামাতে চেষ্টা করলো। চিৎকার করে বললো, ‘বৈঠা রেখে পাটাতন আঁকড়ে ধরো জোহরা।’

জোহরা ভয় পেয়ে বৈঠা রেখে পাটাতন আকঁড়ে ধরলো। তাকিয়ে দেখলো, নৌকা তীরের মত মাঝ নদীর দিকে ছুটে চলেছে। হাবিবুল কুদ্দুস সর্ব শাক্তি দিয়ে নৌকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করলো। সে নৌকার মুখ ভাটির দিকে ঘুরিয়ে ধরলো। শেষ পর্যন্ত নৌকা মাঝ নদীতে না গিয়ে তীর ধরে ছুটে চললো ভাটির দিকে।

ওদের দৃষ্টি থেকে পাহাড়ের কালো ছায়ারা ভূতের ধীরে ধীরে পিছনে সরে যেতে লাগলো। দেখতে দেখতে সুউচ্চ পাহাড় শ্রেণী ছোট হয়ে এলো।

নদীতে তখন ভরা জোয়ার। উত্তাল ঢেউয়ের মাতামাতিকে অগ্রাহ্য করে লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটছে নৌকা। প্রচণ্ড ঢেউ এসে গ্রাস করে ফেলতে চাচ্ছে ক্ষুদে নৌকাটি। যখন নৌকা ঢেউ এর ভেতর ঢুকে যায় তখন চারদিকে পানি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। নিচে পানি, মাথার ওপর পানি, মনেহয় পানিময় দুনিয়া।

ভয় ও আতঙ্কে জোহরা চিৎকার দিতেও ভুলে গেল। ভাবলো, পানি নয়, এ তো মৃত্যুদুত আজরাইল।

পরক্ষনে ঢেউয়ের চূড়ায় চড়ে বসে নৌকা। ঢেউয়ের ঝাপটায় ছিটকে আসা পানিতে ভেসে যায় পাটাতন। হাবিবুল কুদ্দুস নৌকাটি তীরের দিকে নেয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকেন।

নদীর মাঝখানে প্রবল স্রোতের বেগ ও ঢেউ। এ ছোট্ট নৌকা নিয়ে মাঝনদীতে যাওয়ার কথা পাগলেও ভাববে না। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে বাচঁতে হলে তাদের নদীর ওপারে চলে যাওয়া উচিত। মাঝ নদীর সেই স্রোত ও ঢেউয়ের মোকাবেলা না করে ওপারে যাওয়ার কোন উপায় নেই।

হাবিবুল কুদ্দুস জানতেন এ ঢেউয়ের কথা। কিন্তু তা এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে ভাবেন নি তিনি। নদীর তীর ধরে এগুনোর মাঝেও বিপদের আশংকা আছে। কোন পাথরে আঘাত লেগে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে নৌকা। ওরা যে পালিয়েছে দুশমন যদি তা কোন মতে টের পায় তবে ঘোড়া নিয়ে ওরা ছুটে আসতে পারে তীর ধরে। মোট কথা, বিপদ সর্বত্র গুখরো সাপের মতোই ফনা তুলে আছে।

প্রবল স্রোতের টানে ভাটির দিকে তীব্র বেগে ছুটছিল নৌকা। উত্তাল তরঙ্গ দোলায় উপর নিচে উঠানামা করছিল। একবার হারিয়ে যাচ্ছিল ঢেউয়ের ভেতর আবার ভেসে উঠছিল দুই বিস্মিত নর-নারীর চোখের সামনে।

হাবিবুল কুদ্দুস জোহরাকে বললেন, ‘ভয় পেও না। আমরা ডুববো না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ যখন খৃস্টান দুর্বৃওদের কবল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দিয়েছেন, এই উত্তাল তরঙ্গেও তিনিই আমাদের রক্ষা করবেন।’

‘আপনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না।’ জোহরা বললো, ‘ডুবে গেলেই বা কি? কাফেরদের জাহান্নাম থেকে তো উদ্ধার পেয়েছি।’

হাবিবুল কুদ্দুস শক্ত হাতে হাল ধরে পিছন ফিরে তাকালেন পাহাড়ের দিকে। এখন পাহাড়টিকে মাটির উপরে ছোট্ট এক ঢিবির মতো দেখাচ্ছে। তিনি আকাশের দিকে তাকালেন। তারপর আবেগের সাথে বললেন, ‘আমি এই স্থানটি চিনি। এই পাহাড়ী অঞ্চল ও বিজন মরু প্রান্তরে আমি আমার বাহিনীকে যুদ্ধের ট্রেনিং দিয়েছিলাম। কিন্তু তখন নদীর দিকে আসিনি।

জোহরা, আমরা এখন সোজা কায়রোর দিকে যাচ্ছি। নীল নদের স্রোত আমাদের দ্রুত কায়রোর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাও জোহরা। এটা আল্লাহর অপরিসীম দয়া ও মদদ।’

‘আল্লাহ আমাদের নিয়ত ভাল করেই জানেন। আমরা তার দ্বীনের জন্য বাচঁতে চাই, মরলেও দ্বীনের জন্যই মরতে চাই। ফলে আমাদের বাচা বা মরায় কোন পার্থক্য নেই। শুধু দোয়া করুন, তিনি যেন আমাদের কবুল করেন। এখান থেকে কায়রো কতদূর?’

‘কায়রো এখনো অনেক দূর।’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘কিন্তু কায়রো পৌঁছার আগেই আমাদের এক জায়গায় থামতে হবে। পথে কায়রোর আগেই নদীতে একটা বাঁক পড়বে।

সেখানে আমাদের একটি সেনা ছাউনি আছে। নদীতে পাহাড়া দেয়ার জন্য তাদের কাছে শক্ত এবং বড় নৌকাও আছে। আমি তোমাকে সেই শিবিরে রেখে সেখানকার সৈন্য নিয়ে ওই পাহাড়ে অভিযান চালাবো। আমি এই দুর্বৃও কাফেরদের গ্রেফতার করবো।’

‘আপনি অভিযানে যাবেন আর আমি বসে থাকবো শিবিরে? না, তা হবে না। আল্লাহ যখন সুযোগ দিয়েছেন তখন আমিও আপনার সাথে জেহাদের ময়দানেই ছুটে বেড়াবো। দয়া করে আমাকে একাকী রেখে আপনি কোথাও যাবেন না।’

কিন্তু তারা তো ততোক্ষণে জেনে যাবে আমাদের পালিয়ে আসার কথা। তারা নিশ্চয়ই সচেতন হয়ে উঠবে এবং আমার জন্য প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষা করবে। ওখানে তোমার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি আমার মত এক মুজাহিদকে দুশমনের কবল থেকে উদ্ধার করে এনেছো, এ কি কম বড় কৃতিত্বের কথা? আল্লাহ তোমাকে এর জাযা দান করুন।’

‘আমি আশা করি কাল দুপুর পর্যন্ত তাদের কেউ জেগে উঠবে না।’ জোহরা বললো, ‘আমি নিজ হাতে তাদেরকে প্রচুর মদ পান করিয়েছি। সেই মদের মধ্যে মেশানো ছিল এক প্রকার গুড়ো পাউডার।’

‘গুড়ো পাউডারটা আবার কি জিনিস?’

‘হাশিশ। যেই মেয়েরা আমাকে তাদের দলের একজন বানাতে চেয়েছিল গতকাল তারা আমাকে হাশিশ দেখিয়েছিল এবং তার ব্যবহার শিখিয়েছিল।

তারা একটা কৌটা খুলে হাশিশের পাউডার দেখিয়ে বললো, ‘কোন লোককে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হলে এর সামান্য অংশ সরবত বা পানির সাথে মিশিয়ে অথবা খাবারের সঙ্গে খাইয়ে দিলে তাতেই সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। তখন তাকে যেখানে খুশি নিয়ে যাও, সে কিছুই টের পাবে না।

রাতে যখন আনন্দ উৎসব চলছিল তখন হাশিশের কৌটা থেকে কিছু পাউডার আমি মদের সুরাহীর মধ্যে ঢেলে দিলাম। মেয়েদের কথা যদি সত্যি হয়, তবে যে পরিমাণ হাশিশ মিশিয়েছি তাতে আগামী কাল সন্ধ্যার মধ্যে তাদের চেতনা ফিরে আসবে না।’

হাবিবুল কুদ্দুস আবার পিছন ফিরে তাকালেন পাহাড়ের দিকে। অন্ধকারের জন্য এখন আর পাহাড় দেখা যাচ্ছে না। নৌকা অনেক কিনারে চলে এসেছে। এখানে ঢেউয়ের প্রচণ্ডতা কম। হাবিবুল কুদ্দুস আবেগ ভরা কন্ঠে বললো, ‘আমি তোমাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছিলাম জোহরা। আমি তোমাকে যে দুনিয়ার সন্ধান নিতে বলেছিলাম, সে দুনিয়া রহস্যময়। সে দুনিয়া বড় বিচিত্র বর্ণিল কিন্তু পাপের কালিমায় ভরা। তুমি আমার জন্য বিরাট কোরবানী দিয়েছো জোহরা।’

‘আমি আপনার জন্য নয়, ইসলামের গৌরবের জন্য এ কোরবানী দিয়েছি।’ জোহরা বললো, ‘আমি আপনার কাছে এ জন্য কৃতজ্ঞ যে, আপনি আমাকে পবিত্র দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দিয়েছেন। পাপের আকর্ষণীয় জগতে পা রেখেও আমি যে আমার পবিত্রতা রক্ষা করতে পেরেছি, মনে হয় আপনি তা বিশ্বাস করতে পারছেন না।

সত্যি এ এক অভিনব বিচিত্র জগত। মনে হয়, এতসব ঘটনা বাস্তবে ঘটেনি, সবই আমার স্বপ্ন বা অলীক কল্পনা। আপনি বুদ্ধি করে আমাকে এখানে না আনলে আমি এই জগতের কিছুই জানতে পারতাম না।’

‘আর ওরা যদি তোমাকে বিশ্বাস করে আমার সঙ্গে একাকী রাতে থাকার সুযোগ না দিত তবে আমিও তোমাকে বলতে পারতাম না, আমি কেন তোমাকে ডেকেছি।’

‘আমিও জানতে পারতাম না, এরা আপনাকে দিয়ে বিদ্রোহ করানোর জন্য ছিনতাই করে এখানে নিয়ে এসেছে। তবে আমাকে এই মেয়েরা নির্লজ্জ হতে বাধ্য করেছে।’

‘কিন্তু তুমি তো এইসব ট্রেনিং পাওয়া মেয়েদেরও টেক্কা মেরেছো। ওদের মনে কোন রকম সন্দেহ না জাগিয়েই ওদেরকে বুঝাতে পেরেছো, তুমি আমাকে ঘৃণা কর এবং সুযোগ পেলেই তুমি ওদের সঙ্গে পালিয়ে যেতে প্রস্তুত।’ হাসি মাখা কন্ঠে বললেন হাবিবুল কুদ্দুস।

হাসি দেখা দিল জোহরার ঠোঁটেও। বললো, ‘আপনি যখন বললেন, ওই মেয়েদের চরিত্র খারাপ এবং আরো বললেন, তাদের সাথে মিশে যেতে, আমি প্রথমে একটু ভয়ই পেয়ে ছিলাম। কারণ আমি কল্পনাও করতে পারিনি, আমি তাদের ধোঁকা দিতে পারবো। কিন্তু আশ্চর্য হলাম যখন দেখলাম সব বিনা চেষ্টাতেই হয়ে গেল।’

এটাই আল্লাহর কুদরত। তিনিই তোমাকে সাহায্য করেছেন। শত চেষ্টা করেও যা তুমি করতে পারতে না, আল্লাহ তোমাকে ‍দিয়ে তাই করিয়ে নিয়েছেন। তোমাকে সফলতাও দান করেছেন।’

‘যদি ওই মেয়েরা আমাকে নদী পর্যন্ত রাস্তা না দেখাতো তবে আমরা সেখান থেকে বেরই হতে পারতাম না। আপনি কি আমাকে এই কারনেই এখানে ডেকে এনেছিলেন?’

‘না!’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘এ পথ তোমার আসার পরে এমনিতেই সৃষ্টি হয়ে গেছে। আমি অন্য রকম চিন্তা করেছিলাম। আমার মুক্তির জন্যই তোমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। অর্থাৎ তোমাকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে তোমার ঘনিষ্ঠতা দেখে আমার মনে নতুন চিন্তা এলো। তাই তোমাকে খুলে বললাম নতুন পরিকল্পনা। আর তুমিও চমৎকার কাজ করে দেখালে।

তুমি এত সুচারুরূপে কাজ সমাধা করতে পারবে, ধারনা করিনি আমি। তুমি আমার আশার চাইতেও বেশী করেছো। তোমার সাহস ও বুদ্ধিমত্তায় আমি অভিভূত।’

‘আমার ধারণা ছিল, ওরা খুব চালাক ও সাবধান। তাই আমিও সতর্ক ছিলাম। তবে আমার সফলতার কারণ আমি মনে করি আমাদের মহৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আমাদের ঈমান ছিল অটুট। নিজের জ্ঞান বুদ্ধিকে আমরা কাজে লাগিয়েছিলাম নিবিড় করে। তাই আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছেন। আল্লাহর সাহায্য ছিল বলেই আমরা ওদেরকে বোকা বানাতে পেরেছি। মিশরী লোকটি নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করলেও আমি প্রথম ‍দিনই জানতে পেরেছিলাম, লোকটা খৃস্টান। আমরা যে খৃস্টানদের ষড়যন্ত্রের জালে ফেঁসে আছি এ কথা আমার সব সময়ই মনে ছিল।’

সেই পাহাড়ী অঞ্চল অনেক পিছনে ফেলে এসেছিল ওরা। নীলনদের গতি তখনো তীব্র। নৌকা প্রকৃতির দয়ার উপর উঠানামা করছিল। হাবিবুল কুদ্দুস চেষ্টা করছিলেন তীরের কাছাকাছি থাকতে কিন্তু বড় বড় ঢেউ বারা বার ঠেলে নৌকা মাঝনদীতে নিয়ে যাচ্ছিল।

স্রোতের টানে নৌকা এগুচ্ছিল দ্রুত গতিতে। হাল ধরে বসে থাকা ছাড়া হাবিবুল কুদ্দুসের করার কিছুই ছিল না। জোহরার কাজ ছিল পাটাতন আকড়ে ধরে নিজেকে রক্ষা করা। দাঁড় টানা বা বৈঠা চালানোর কোন অবস্থা ছিল না, প্রয়োজনও ছিল না।

সামনে নদী কিছুটা চাপা। দুই দিকের পাহাড় এগিয়ে আসার ফলে সংকীর্ণ হয়ে গেছে নদী। ফলে নদীর বেগ ও স্রোত সেখানে তীব্র আকার ধারণ করেছে।

হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘জোহরা সাবধান হও। সামনে বাঁক আছে। এই বাঁকের পরেই আমাদের সেনা ক্যাম্প। কিন্তু বাঁকে স্রোত খুব প্রচণ্ড। নৌকার তাল সামলানো কঠিন। আর যদি নৌকা ঘুর্ণিপাকে পড়ে যায় তাহলে মুহুর্তে তলিয়ে যেতে পারে।’

ওরা বাঁকের কাছাকাছি চলে এলো। হাবিবুল কুদ্দুস নিজের সমস্ত মনোযোগ একত্র করে শক্ত হাতে বৈঠা ধরলেন। প্রচণ্ড আক্রোশে ফুঁসছে নদী। ঢেউ ভাঙার অবিরাম শব্দ বিকট আওয়াজ তুলছে।

ভুস করে নৌকা ঢুকে গেল স্রোতের চক্রে। হাবিবুল কুদ্দুস স্রোতের সাথে দিক বদল করলো নৌকার। নৌকা বিদ্যুৎ বেগে এগিয়ে গিয়ে এক ঘূর্ণিচক্রে পড়ে ঘুরতে লাগল চড়কির মত। মুহূর্তে করণীয় ঠিক করে ফেললো হাবিবুল কুদ্দুস। নৌকার হাল ছেড়ে দিয়ে জোহরাকে নিয়ে লাফ দিল। পলকে দেখতে পেলো ঘূর্ণিপাকের কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নৌকা। সঙ্গে সঙ্গে সেই পাঁকে অদৃশ্য হয়ে গেল তাদের দুঃসময়ের একমাত্র বাহন নৌকাটি।

ওদের ভাগ্য ভালো, সময় মত লাফিয়ে পড়ে হাবিবুল কুদ্দুস সর্বশক্তি নিয়োগ করে চক্রের বাইরে চলে যেতে পেরেছিলেন।

‘জোহরা!’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘তুমি শক্ত করে আমার গলা জড়িয়ে ধরে পিঠের উপর শুয়ে পড়ো।’

জোহরা তাঁর দুই কাঁধ দু্’হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে পিঠের উপর চড়লো। হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘খুব শক্ত করে ধরে থাকবে, যেন সামান্যও শিথিল না হয়। নইলে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্রোতের টানে হারিয়ে যাবে।’

নৌকা ঘুর্ণিপাকে পড়ায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জোহরাকে নিয়ে লাফিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সৌভাগ্যক্রমে দেহের সর্বশক্তি নিয়োগ করে পাঁকের বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। কিন্তু প্রচণ্ড ঢেউ আর স্রোতে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তখনো। এক হাতে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন জোহরাকে, অন্য হাতে চেষ্টা করছিলেন ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে। জোহরা তার কাঁধ আকড়ে ধরলে একটু দম নেয়ার সুযোগ পেলেন হাবিবুল কুদ্দুস।

এখানে নদীর দুই পাড়েই পাহাড়। জোহরা সাঁতার জানতো না, সে শুধু আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগলো।

হাবিবুল কুদ্দুস তার ভার পিঠে নিয়ে সেই উত্তাল ঢেউ ও স্রোতের মধ্য দিয়ে সাঁতরে চললেন তীরের দিকে। তার সবচেয়ে বড় ভয়, স্রোত টেনে নিয়ে যে কোন সময় শক্ত পাথরের উপর আছরে ফেলতে পারে। সে জন্য তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন নিজের ও জোহরার মুখটা পানির উপর রাখতে। কিন্তু প্রবল ঢেউ বার বার তাদের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। তখন আর কিছু দেখতে পাচ্ছিল না তারা।

শিঘ্রই তারা বাঁক পেরিয়ে নদীর সংকীর্ণ মুখ থেকে প্রশস্ত এলাকায় গিয়ে ঢুকলো। হাবিবুল কুদ্দুসের বাহু ও পা ততোক্ষনে শিথিল ও নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে। তিনি তার শেষ শক্তি প্রয়োগ করে বাঁচার চেষ্টা করছিলেন।

তিনি অনুভব করলেন, জোহরার বাহু বন্ধন শিথিল হয়ে আসছে। তিনি জোহরাকে ডাকলেন, কিন্তু কোন সাড়া পেলেন না। তার বাহু সম্পূর্ণ ঢিলা হয়ে গেলো।

তিনি বুঝতে পারলেন, জোহরার নাক মুখ দিয়ে সমানে পানি ঢুকছে। অজ্ঞান জোহরাকে বাঁচানো ও তাকে নিয়ে সাঁতার দেয়া কঠিন হয়ে গেল হাবিবুল কুদ্দুসের জন্য। তারপরও তিনি এক হাত দিয়ে জোহরাকে ধরে রাখলেন এবং অন্য হাত দিয়ে প্লাবনের গতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালালেন।

স্রোতের বেগ আগের চাইতে এখানে কম ছিল। কিনারা তখনো দূরে। ঢেউয়ের চাপ কম থাকায় সাঁতার দেয়া সহজ হয়ে উঠলেও এতটা পথ জোহরাকে নিয়ে সাঁতরে পার হওয়া তার কাছে অসম্ভব বলেই মনে হলো। তিনি সাহায্যের আশায় চিৎকার দিতে শুরু করলেন।

তিনি তীরের দিকে আরো কিছু দূর এগিয়ে গেলেন। হঠাৎ তার আড়ষ্ট হাত থেকে ফসকে গেল জোহরা। তিনি ডুব দিয়ে আবার তাকে ধরে ফেললেন। এ সময় একটি নৌকা তাদের কাছে এসে গেলো। তিনি জোহরাকে ধরে সাঁতার বাদ দিয়ে কেবল ভেসে থাকার চেষ্টা করলেন। এ সময় তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন, ‘আপনি কে?’

নৌকাটিকে দেখতে পেলেন তিনি। একদম কাছে এসে গেছে। তিনি উওর না দিয়ে থাবা দিয়ে ধরে ফেললেন নৌকার কাঠ। আস্তে করে বললেন, ‘আগে একে আমার পিঠের উপর থেকে উঠিয়ে নাও।’

নৌকার সিপাইরা তার পিঠ থেকে জোহরাকে টেনে নৌকায় তুলে ফেললো। জোহরা তখনও অজ্ঞান। নৌকাটি তাদেরই ছিল, কারণ ‍সুলতান আইয়ুবী এখানে একটি সেনা ক্যাম্প করেছিলেন নদীতে পাহারা দেয়ার জন্য।

তারা হাবিবুল কুদ্দুসের চিৎকার শুনে ছুটে এসেছিল কোন বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করতে। কিন্তু তারা জানতো না তাদেরই এক সেনাপতি সাহায্যের জন্য ডাকছে।

জোহরাকে তোলার পর তারা তাকেও টেনে নৌকায় তুলে নিল। তারপর তাদের নিয়ে গেল সেনা ফাঁড়িতে।

ক্যাম্পে গিয়ে তিনি বললেন, ‘আমি সেনাপতি হাবিবুল কুদ্দুস। আগে মেয়েটির জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করো। কিভাবে কি ঘটেছে আমি সব বলছি।’

ফাড়ির কমাণ্ডার তাঁকে চিনতে পারলেন এবং তাকে এভাবে দেখতে পেয়ে খুবই বিস্মিত হলেন। জোহরা তখনো বেহুশ হয়ে পড়েছিল। হাবিবুল কুদ্দুসের নির্দেশ পেয়ে কমাণ্ডার জোহরাকে মাটিতে শুইয়ে দিলেন এবং তার পেটে ও পাশে প্রবল চাপ দিলেন। চাপ খেয়ে জোহরার মুখ ও নাক দিয়ে হরহর করে বেরিয়ে এলো পানি।

হাবিবুল কুদ্দুস উঠে বসলেন। জোহরার জ্ঞান তখনও ফেরেনি। তিনি কমাণ্ডারকে বললেন, ‘দুটি বড় নৌকায় দশ জন করে বিশ জন সৈন্য দাও।’

তিনি কমাণ্ডারকে জানালেন সেই দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল ও ধ্বংসপ্রাপ্ত মহলের কথা। বললেন, ‘ওখানে এখনি অভিযান চালাতে হবে। সেই পাহাড়ী অঞ্চলের দুর্ভেদ্য ভগ্নাবশেষের মধ্যে কয়েকজন খৃস্টান দুর্বৃও বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। তাদের পাকড়াও করতে হবে। এমনও হতে পারে, সেখানে তাদের আরও কিছু লোক আছে, যাদের আমরা দেখিনি।’

‘নৌকা নিয়ে উজান ঠেলে ওখানে পৌঁছতে অনেক সময় ব্যয় হয়ে যাবে।’ কমাণ্ডার বললো, ‘আমরা স্থলপথে যেতে পারি না?’

‘স্থলপথে যাওয়ার রাস্তা আমার জানা নেই।’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন।

‘আমার জানা আছে।’ কমাণ্ডার বললো, ‘স্থলপথে যাওয়া অনেক সহজ হবে।’

‘ঠিক আছে। তাহলে বিশ জন অশ্বারোহীকে তৈরী হতে বলো।’

কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশ জন অশ্বারোহী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে হাজির হলো হাবিবুল কুদ্দুসের সামনে। তার জন্য ব্যবস্থা করা হলো শুকনো কাপড়ের। তিনিও পোশাক পাল্টে প্রস্তুত হলেন। ততোক্ষণে জ্ঞান ফিরে এলো জোহরার। কিন্তু সে খবর না নিয়েই তিনি ঘোড়ার পিঠে চেপে বসলেন।

বিশজন অশ্বারোহীর অগ্রভাগে হাবিবুল কুদ্দুস ও সেনা ক্যাম্পের কমাণ্ডার। প্রভাতের আলো তখনো স্পষ্ট হয়নি। যখন তারা পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশ করলো তখন তিনি হুকুম দিলেন, ‘ঘোড়া এখানেই রাখো। অশ্বখুরের আওয়াজ তাদের কানে পৌঁছুক, চাই না আমি।’

নিরবতার খাতিরে অশ্বগুলো পাহাড়ের বাইরে রেখে পায়ে হেঁটে অগ্রসর হলো তারা। নদীতে সাঁতরানোর কারনে হাবিবুল কুদ্দুসের অবস্থা ছিল কাহিল। তবুও তিনি দুর্বল শরীর নিয়েই হাঁটতে লাগলেন সৈনিকদের সাথে। আবেগ ও আক্রোশ তার শরীরের দুর্বলতা দূর করে দিয়েছিল।

তিনি এখনো জানেন না, ক্যাম্পে তাঁর স্ত্রীর জ্ঞান ফিরেছে কি না। তা দেখার মত সময় তার হাতে ছিল না। তিনি তখন অনুভব করছিলেন দুর্বৃওদের ধরার ব্যাগ্র ব্যাকুলতা।

তিনি পাহাড় ও জঙ্গলের আঁকাবাঁকা গোলক ধাঁধাঁর রাস্তা অতিক্রম করে দ্রুত সেই মহলে পৌঁছতে চাচ্ছিলেন, যেখানে রাতে তাদের হাশিশ মেশানো মদ পান করানো হয়েছিল। কিছু দুর যেতেই তার সামনে ভেসে উঠলো সেই পুরাতন ধ্বংসাবশেষ ও মহল। মহলে প্রবেশ করলেন হাবিবুল কুদ্দুস ও তার বাহিনী। তাদের সামনে প্রথমেই পড়লো সেই খৃস্টান নেতা। তখনও নেশায় তার পা টলমল করছিল। তাকে গ্রেফতার করা হলো। পরিপূর্ণ জ্ঞান ফিরে আসার আগেই গ্রেফতার হওয়ায় সে বুঝতে পারলো না কি ঘটেছে। সে গালাগালি ও বকবক শুরু করে দিল।

বাকীদেরও বেহুশ অবস্থায় পাকড়াও করা হলো। মেয়ে দু’টিকে পাওয়া গেল মিশরী ও সুদানী লোক দুটির রুমে। ওদেরও বন্দী করা হলো। মহলে যত আসবাবপত্র ও সোনা রূপা ছিল উঠিয়ে নিল সৈনিকরা। তারপর সবাইকে অশ্বপিঠে চাপিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে আসা হলো।

ক্যাম্পে ফিরেই হাবিবুল কুদ্দুস খোঁজ নিলেন স্ত্রী জোহরার। জানতে পারলেন জোহরার জ্ঞান ফিরেছে।