‘আমি ছিনতাই করিনি বরং ছিনতাইকারীদের থেকে আপনাকে মুক্ত করতে এসেছি।’
‘কেন আপনি আমাকে মুক্ত করবেন? তাতে আপনার লাভ?’
‘লাভ তো অবশ্যই কিছু আছে। সে কথাই আপনাকে বলতে চাই। সে জন্যই তো আপনার কাছে ছুটে এসেছি।’
‘তাতে বুঝা যাচ্ছে, অপহরণকারীরা জানতো আমাকে তোমার দরকার। তাই তারা অপহরণ করে তোমাকে খবর দিয়েছে। তাতে কি এটাই প্রমাণ হয় না যে, তুমিই তাদের দিয়ে আমাকে অপহরণ করিয়েছো?’
‘যদি আপনি এমনটি মনে করেন তাতেও আমার করার কিছু নেই। সত্যি আপনাকে আমার বিশেষ প্রয়োজন। আমার বুকে এমন কিছু কথা আছে যা আপনার বুকে দেয়া দরকার।’
‘সে কথা তুমি আমাকে কায়রোতেও বলতে পারতে!’
‘যদি আমি সে কথা কায়রোতে আপনার সঙ্গে বলতাম তবে দু’জনেই কায়রোর কারাগারে বন্দী থাকতাম।’ খৃস্টান বললো, ‘কারণ সেখানে আলী বিন সুফিয়ান ও পুলিশ সুপার গিয়াস বিলকিসের গোয়েন্দারা দ্বারে দ্বারে ও পদে পদে তল্লাশী চালাচ্ছে।’
হাবিবুল কুদ্দুসের চেতনা ও জ্ঞান সম্পূর্ণ ফিরে এসেছিল। তাঁর মস্তিষ্ক নেশার ঘোর থেকে মুক্ত হয়ে আবার স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারছিল। তিনি বুঝতে পারলেন, তিনি এখন খৃস্টান দুর্বৃত্বদের হাতে পড়ে কোন দুর্গম স্থানে অবস্থান করছেন। তিনি গলার স্বর ও ভঙ্গি পাল্টে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি ক্রুসেডার, নাকি সুদানী?’
‘আমি মিশরের লোক।’ লোকটি উওর দিল, ‘আর আপনিও মিশরী। আপনি ইরাকী, সিরিয়ান বা আরবী নন। মিশর মিশরীয়দের। এটা নূরুদ্দীন জঙ্গী বা সালাউদ্দীন আইয়ুবীর বংশগত জায়গীরদারী নয়। এটা ইসলামী রাজ্য, এখানে আল্লাহর শাসন থাকবে। তবে তার দায়িত্ব ও ব্যবস্থাপনা এবং শাসনকার্য পরিচালনা করবে মিশরীয় মুসলমানরা। আপনি কি মনে করেন, মিশরের উপর শাসন চালানোর জন্য বাগদাদ বা দামেশক থেকে লোক আমদানী করতে হবে?
সালাউদ্দীন আইয়ুবী নিজে ইরাকী, শাসক হয়েছেন মিশরের। এখন সিরিয়ার সাথে তাকে যুক্ত করে নিজের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চাচ্ছেন।’
‘তুমি কি মিশরকে সালাউদ্দীন আইয়ুবীকে পয়গম্বর মনে করেন না। তবে তাকে আপনি নিজের মুরশিদ বা নেতা মনে করেন।’ খৃস্টান লোকটি বললো, ‘আমি তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলবো না। কারন সুলতান আইয়ুবীর মধ্যে অনেক ভাল গুন আছে। আমিও তাঁকে আপনার মতই যোগ্য মনে করি।
কিন্তু আমাদের চিন্তা করতে হবে, তিনি আর কতকাল জীবিত থাকবেন? তাঁর পরে তাঁর সন্তান বা ভাইয়ের হাতে শাসন ক্ষমতা যাবে। তারা তো আর সালাউদ্দীন আইয়ুবীর মত হবে না, তখন মিশরের ক্ষমতা চলে যাবে আরেক ফেরাউনের হাতে।’
‘আমাকে দিয়ে তুমি কি কাজ উদ্ধার করতে চাও?’
‘যদি আপনি আমার কথা বুঝে থাকেন তবে আমি আপনাকে বলবো, আপনি কি করতে পারেন।’ খৃষ্টান লোকটি বললো, ‘যদি আপনার মনে আমার সম্পর্কে সন্দেহ থাকে তবে তা আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। প্রথমে আপনার মনের সন্দেহ দূর হওয়া দরকার। আপনি ধীরস্থিরভাবে চিন্তা করে নিন।’
লোকটি বললো, ‘আপনি এইমাত্র জেগেছেন। ফেদাইন হতভাগাদের দেয়া হাশিশের ক্রিয়া এখনও আপনার উপরে কাজ করছে। আগে আপনি সুস্থ হোন, তারপর ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন আমার কথা।
এখন আর কথা নয়। আমি আপনার কাছে খাবার পাঠাচ্ছি, আগে খেয়ে নিন। কয়েকদিন ধরে শয়তানরা আপনার গোসলেরও কোন ব্যবস্থা করেনি দেখছি।
আমি আপনাকে এক ঝর্ণার ধারে পাঠাচ্ছি। আগে পুরোপুরি সুস্থ হোন। ভালভাবে চিন্তাভাবনা করেই যে কোন কাজের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তাতেই মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত থাকে বলে আমার বিশ্বাস।’
লোকটি সেখান থেকে উঠে অন্য কোথাও চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে এক লোক এসে বললো, ‘আমার সাথে চলুন, আহারের পূর্বে গোসলটা সেরে নিবেন।’
বিরান মহলের সেই কামরা থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। তাকে এমন এক রাস্তা দিয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো যে রাস্তা দুই পাহাড়ের সংকীর্ণ ফাটলের মধ্য দিয়ে চলে গেছে।
তারা কিছু দূর যাওয়ার পর একটু ফাঁকা জায়গা পাওয়া গেল এবং তার সামনেই দেখা গেল স্বচ্ছ এক ঝরণা। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার পানি যেখানে পড়ছিল সেখানে বেশ কিছুটা জায়গা নিয়ে তৈরী হয়েছিল একটি গভীর জলাশয়। তারপর সেই পানি জলাশয় থেকে একটি প্রশস্ত নালা বা খাল দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল ফোরাতের দিকে।
ঝর্ণার পানি ছিল খুবই স্বচ্ছ। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন পাহাড়ী ঝর্ণার পানি যেখানে পড়ছে সেখানে দু’টি মেয়ে প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় একে অন্যের দিকে হাত দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে।
এ দৃশ্য দেখে হাবিবুল কুদ্দুস থেমে গেলেন এবং নিজের মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলেন। হাবিবুল কুদ্দুসের সঙ্গে লোকটি বললো, ‘কি হলো, থামলেন কেন? চলুন।’
মেয়ে দু’টি আওয়াজ শুনে ওদের দেখতে পেয়েই চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে পাড়ে উঠে এলো এবং পড়িমড়ি করে ছুটে সেখান থেকে পালিয়ে গেল।
তিনি এই নির্জন ও বিরান অঞ্চলে এমন সুন্দরী পরীর মত মেয়েদেরকে জ্বীন পরী বা ভূত বলে ধারনা করলেন। সেনাপতি হাবিবুল কুদ্দুস মেয়েদের চিৎকার শুনে নিজের অজান্তেই আবার ফিরে তাকালেন ওদিকে। কিন্তু তিনি দেখতে পেলেন সেখানে কোন মেয়ে নেই।
তিনি চারদিকে তাকালেন। সর্বত্রই শুধু পাহাড় ও বিরান মহলের ধ্বংসাবশেষ। নিজের সাথে আসা লোকটিকে ছাড়া আশেপাশে তিনি আর কাউকে দেখতে পেলেন না।
তিনি থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। তাঁর সাথে আসা লোকটি ‘চলুন’ বলেই খানিকটা এগিয়ে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। হাবিবুল কুদ্দুস দ্রুত এগিয়ে গেলেন তার কাছে এবং তাকে কোন কিছু বুঝার সুযোগ না দিয়েই ঝট করে নিজের দৃঢ় বাহু দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরলেন।
লোকটি ঘটনার আকস্মিকতায় রীতিমত ঘাবড়ে গেল। হাবিবুল কুদ্দুসের দৃঢ় হাতের চাপে তার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে এলো।
সেনাপতি এক হাতে পিছন থেকে তার গলা পেঁচিয়ে ধরে অন্য হাতে তার পেটে ও বুকে ভীষণ জোরে ঘুষি চালালেন।
হাবিবুল কুদ্দসের বেদম মারের চোটে লোকটি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রায় মরতে বসেছিল, কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত ঘুষি বন্ধ করে তার নুয়ে পড়া মাথাটি উঁচু করে ধরলেন এবং হাতের চাপ ছেড়ে দিলেন। লোকটি ভুস করে দম ছাড়লো।
হাবিবুল কুদ্দুস আবার তার গলা টিপে ধরে তাকে টেনে নিয়ে এক ঘন ঝোঁপের মধ্যে ফেলে দিলেন এবং দ্রুত সেখান থেকে পালালেন।
পাহাড়ের পাশ দিয়ে একটি সরু রাস্তা সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। চারদিকে চোখ বুলাতে গিয়ে আগেই রাস্তাটি দেখেছিলেন তিনি। পেছনে মহলের ধ্বংসাবশেষের দিকে না গিয়ে তিনি সেই রাস্তা দিয়ে ছুটলেন। কিছু দূর গিয়ে পাহাড়ের বাঁক ঘুরেই থমকে দাড়াঁলেন তিনি। সেখানে এক লোক বর্শা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
লোকটি হাবিবুল কুদ্দুসকে দেখলো। তার মধ্যে বিস্ময় বা ভয় কোনটাই নেই। যন্ত্রচালিতের মত সে শুধু একটি কথাই বললো, ‘ফিরে যান।’
হাবিবুল কুদ্দুস ছিলেন নিরস্ত্র। এর হুকুম অমান্য করলে লোকটি যে তাকে শিকারী পশুর মতই বর্শাবিদ্ধ করে মহলে ফিরিয়ে নেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় খালি হাতে তার সাথে লাগতে যাওয়া নিরর্থক ভেবে তিনি মাথা নত করে পিছনে ফিরলেন।
তিনি মাত্র কয়েক পা এগিয়েছেন এই সময় খৃস্টান প্রহরী তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালো এবং হেসে বললো, ‘আমি আপনাকে জ্ঞানী মনে করেছিলাম।’ খৃস্টান প্রহরী তাকে আরো বললো, ‘আপনি এ ধ্বংসাবশেষ থেকে বের হতে পারবেন না। আহাম্মকি না করে গোসল করে নিন। আসুন আমার সঙ্গে।’
তিনি সেই ঝর্ণার পানিতে গোসল করে কাপড় পাল্টে চলে এলেন। খৃস্টান প্রহরী তাঁকে মহল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেল। পথে তিনি খৃস্টানটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওই মেয়েগুলো তোমাদের সাথেই আছে?’
‘এমন জনশূন্য বিরান স্থানে কিছু আলো তো সঙ্গে রাখাই দরকার।’ খৃস্টানটি বললো, ‘আপনার কি তিনটি স্ত্রী নেই? বাড়ীতে যার এক সাথে তিন স্ত্রী দরকার হয় এমন জনশূন্য বিরান প্রান্তরে তার কি কোন মেয়ে মানুষের দরকার হতে পারে না?
আপনার যদি প্রয়োজন না থাকে ভাল কথা, কিন্তু যদি আপনি এই নির্জন স্থানে একাকীত্বের কষ্ট পান তবে এই মেয়েদের যাকে খুশী ডাক দেবেন, আপনার কষ্ট তারা দূর করে দেবে।’
মহলে প্রবেশ করলে এক মেয়ে নাস্তা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তার কামরায় এলো। হাবিবুল কুদ্দুস এ মেয়েটিকে আগেও দেখেছেন। মেয়েটি তার সামনে নাস্তা রেখে নিজেও তার পাশে বসে গেল। কামরায় খৃস্টান নেতা ছিল, সে বাইরে চলে গেল। মেয়েটি তার পাতে খাবার তুলে দিতে লাগলো এবং তার সাথে আপনজনের মত গল্প জুড়ে দিল। মেয়েটির কথার যাদু ও অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলেন হাবিবুল কুদ্দুস। খাওয়া শেষ হওয়ার পরও গল্প চলতে লাগলো তাদের।
অনেকক্ষন পর খৃস্টান নেতা ফিরে এলে মেয়েটি সেখান থেকে উঠে চলে গেল। হাবিবুল কুদ্দুস অনুভব করলেন, মেয়েটি চলে যাওয়ায় তার বেশ খারাপ লাগছে।
‘আপনি স্বাধীন মিশরের প্রধান সেনাপতি হবেন।’ খৃস্টান তাঁকে বললো, ‘আপনার বাহিনীতে যে তিন হাজার পদাতিক সৈন্য, দুই হাজার অশ্বারোহী ও দুই হাজার তীরন্দাজ আছে তারা আপনার একান্ত অনুগত ও ভক্ত। আপনি তাদের সাহায্যে মিশরের শাসন ক্ষমতা দখল করতে পারবেন।’
‘সালাউদ্দিন আইয়ুবী আক্রমন চালালে আমি কি এই বাহিনী দিয়ে মিশরকে তাঁর আক্রমন থেকে বাঁচাতে পারবো?’
‘সুদানী মুসলমান, যারা এক সময় মিশরের সেনাবাহিনীতে ছিল, তারা আমাদের সাথে থাকবে।’ খৃস্টানটি বললো, ‘সালাউদ্দিন আইয়ুবীর সৈন্যদের মধ্যেও যারা মিশরের অধিবাসী, তাদের কাছে আমি এ খবর পৌঁছে দেবো। তাদের জানাবো, এটা গৃহযুদ্ধ নয়, বরং এটা মিশরকে স্বাধীন করার এক চূড়ান্ত প্রচেষ্টা।’ খৃস্টান লোকটি আরো বললো, ‘আপনি আপনার বাহিনী দিয়ে বিদ্রোহ করাবেন। আপনাকে সামরিক সাহায্য দেয়ার ব্যবস্থা আমি করবো।’
কিভাবে এই বিদ্রোহ তিনি সংগঠিত করবেন তার একটি নীলনকশা হাবিবুল কুদ্দুসের সামনে তুলে ধরলো খৃস্টান নেতা। বিস্তারিত আলোচনার পর জিজ্ঞেস করলো, ‘এবার বলুন, এ পরিকল্পনা আপনার কেমন লাগছে?’
হাবিবুল কুদ্দুস বিষয়টিকে আর হালকাভাবে নিতে পারলেন না। তিনি এটুকু বুঝলেন, খৃস্টানরা আটঁঘাট বেঁধেই এ কাজে নেমেছে। অতএব এ পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়ন করবেই।
তিনি খৃস্টান নেতার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে বসে রইলেন। খৃস্টানটি আবার বললো, ‘কি ভাবছেন?’
‘ভাবছি, তুমি যে পরিকল্পনা দিলে তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?’
খৃস্টানটি বুঝে নিল টোপ গিলতে শুরু করেছেন হাবিবুল কুদ্দুস। অনেকক্ষন পর হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘যদি আমি কায়রো ফিরে যেতে না পারি তবে আমার বাহিনীকে কেমন করে বিদ্রোহে রাজি করাবো?’
‘আপনাকে ফিরে যেতে হতে না।’ খৃস্টানটি বললো, ‘আপনি এখান থেকেই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। আপনার খুব বিশ্বাসভাজন কাউকে আপনি চিঠির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠাবেন। সে চিঠি পৌঁছানো এবং তার মাধ্যমে কাজ উদ্ধার করার ব্যবস্থা আমিই করতে পারবো।’
‘কিন্তু আমি যদি তাতে রাজি না হই?’
‘অমন কথা বলবেন না।’ খৃস্টানটি বললো, ‘আপনি আমার এক প্রাণপ্রিয় সাথীকে হত্যা করেছেন। সেই অপরাধে আমি আপনাকে হত্যা করতে পারতাম। কিন্তু মিশরের স্বার্থে আমি আমার সব রাগ ও ক্ষোভ দমন করে নিয়েছি। দয়া করে আপনি আমাকে আবার উত্তেজিত করে তুলবেন না।’
লোকটি বললো, ‘আপনি যদি আমার কথা না মানেন তবে আমাকে আপনার ও আপনার পরিবারের সাথে হিংস্র আচরণ করতে হবে।’
‘তবে তো আমাকে এখানে দীর্ঘ দিন থাকতে হবে।’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন।
‘কিছু সময় তো লাগবেই।’ খৃস্টানটি উওর দিল, ‘এখানে আপনার কষ্ট হয় এমন কিছু ঘটতে দেবো না আমি। আপনার যখন যা প্রয়োজন হয় বলবেন, আপনার সব প্রয়োজন আমি পূরণ করে দেবো।’
‘তবে আমার একটা প্রয়োজন আপাতত মিটিয়ে দাও।’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘তুমি আমাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য দু’টি মেয়েকে নিয়োজিত করেছো। কিন্তু আমি পাপ থেকে বাঁচতে চাই। এমনও হতে পারে, এই সুন্দরীদের মোহে পড়ে আমি আমার দায়িত্ব ভুলে যেতে পারি। তার চেয়ে একটি ব্যবস্থা করো, আমার ছোট বিবি জোহরাকে এখানে এনে দাও। তাতে লাভ হবে এই যে, তাকে দিয়েই আমি সংবাদ আদান প্রদানও করতে পারবো।’
‘তাহলে যে তাকেও ছিনতাই করতে হবে।’ খৃস্টান লোকটি বললো, ‘যদি তাকে আমি বলি যে, আপনি তাকে ডাকছেন, সে তো আমার কথা বিশ্বাস করবে না। বরং আমাকে ধরিয়ে দেবে। তার বদলে আমি আপনাকে যে জিনিষ দিচ্ছি তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। সংবাদ বা যোগাযোগের জন্য অন্য কোন বিশ্বস্ত লোকের নাম ঠিকানা বলুন।’
‘তারচেয়ে তুমি আমাকে বিশ্বাস করে নাও।’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘তুমি আমাকে কায়রো পৌঁছে দাও। আমি তোমার কাছে ওয়াদা করছি, এক মাসের মধ্যেই আমি সেখানে বিদ্রোহ ঘটাবো।’
‘এটা অসম্ভব! এ হতে পারে না।’ খৃস্টানটি উত্তেজিত কন্ঠে বললো, ‘সম্মানিত সেনাপতি! আমি যা করছি সেটা মিশরের ভালোর জন্যই করছি। আর এর মধ্যে আপনারও কল্যাণ নিহিত আছে। আমি অথবা আমার সংগঠন কোন ব্যক্তিই মিশরের শাসক হতে পারবো না। আপনি বুঝতে চেষ্টা করুন, মিশর স্বাধীন হলে তার দায়িত্ব ও শাসনভার আপনাকেই গ্রহন করতে হবে।’
‘আমি তোমার কথা ভাল করেই বুঝতে পেরেছি।’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘আর এখন আমি চিন্তা ভাবনা করেই কথা বলছি। আমার ছোট বিবি জোহরার কাছে সংবাদ পৌঁছে দাও। তাকে বলো, আমি তাকে আমার কাছে আসতে বলেছি। সে যে কাজ করতে পারবে তা আর কেউ পারবে না। কারন তার বাপ আমার বাহিনীতে আছে। তার আসার পর দেখবো, এই পরিকল্পনা কিভাবে সফল করা যায়।’
এক বুড়ি ভিখারিনী একদিন জোহরাকে পথে থামিয়ে দিল। বুড়ি দু’তিন দিন ধরেই লক্ষ্য করছে, জোহরা হাবিবুল কুদ্দুসের বাড়ী থেকে দুপুরে তার মা বাবার বাড়ী চলে যায় আর সন্ধ্যায় ফিরে আসে।
সেদিন জোহরা বাপের বাড়ী যাওয়ার জন্য পথে বেড়িয়েছে। এক ভিখারিনী তার পথ আগলে হাত প্রশস্ত করে বললো, ‘সেনাপতি হাবিবুল কুদ্দুস আপনাকে ডেকেছেন। এই চিঠি তার নিজের হাতের লেখা। নিশ্চয়ই তার হাতের লেখা আপনি চিনতে পারছেন?’
জোহরা কাগজটি হাতে নিয়ে তাঁর কাছে লেখা হাবিবুল কুদ্দুসের চিঠিটি পড়লো। এ চিঠি যে তার স্বামীরই হাতের লেখা তাতে কোন সন্দেহ নেই।
চিঠি পড়া শেষ হতেই ভিখারিনী তার চোখে চোখ রেখে বললো, ‘তিনি যেখানেই যান না কেন, স্বেচ্ছায় একাকীই গেছেন। এতবড় ক্ষমতাবান লোককে কেউ ধরে নিয়ে যেতে পারে না।
তিনি শুধু আপনাকেই চান। তিনি বলেছেন, ‘জোহরাকে ছাড়া এ চিঠি আর কারো হাতে দেবে না। আর তাকে বলবে, সে যেন তোমার সাথে আমার কাছে চলে আসে। তিনি এ চিঠির প্রসঙ্গ কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন।’
এও বলেছেন, ‘জোহরাকে বলবে, সে যেন তোমাকে বিশ্বাস করে। সে যদি এ চিঠি বিশ্বাস না করে তোমাকে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে বা থানায় সংবাদ পাঠায় তবে আমি ও জোহরা দু’জনেই মারা পড়বো।’ আমার কথা বিশ্বাস করুন, হাবিবুল কুদ্দুসের কাছে আপনার যাওয়া দরকার।’
‘আমি তোমার কথা কেমন করে বিশ্বাস করি?’ জোহরা ভীত-চকিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, ‘বলো, এমন কথা আমি কেমন করে বিশ্বাস করি?’
‘আমি ভিক্ষুক নই।’ ভিখারিনী বললো, ‘এটা আমার ছদ্মবেশ। আমিও আপনার মত ধনীর দুলালী। আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ও পবিত্র। বিশ্বাস না করলে কি ক্ষতি হবে সে কথা আপনার স্বামীই বলে দিয়েছেন। আপনি কি জানেন না, তিনি আপনাকে কতটা ভালবাসেন? এই হাতের লেখা কি তার নয়? তাহলে কেন অযথা সন্দেহ পোষণ করে নিজের ও স্বামীর বিপদ ডেকে আনবেন?’
‘কিন্তু তিনি নিরুদ্দেশ হতে গেলেন কেন? আমি তো এর কিছুই বুঝতে পারছি না।’
‘তিনি নিরুদ্দেশ হয়েছেন এক মহৎ ও বিরাট উদ্দেশ্য নিয়ে। সব কথা আমিও জানি না, আর যা জানি তাও আপনাকে বলতে পারবো না। কারন সে তথ্য প্রকাশ করার অনুমতি তিনি আমাকে দেননি। তিনি শুধু বলেছেন, দেশ আজ এক মহা ষড়যন্ত্রে পড়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্যই তাকে নিরুদ্দেশ হতে হয়েছে।’
মেয়েটি তাকে আরও অনেক কথাই বললো। জোহরা তার কথায় এটুকু বুঝলো যে, ঘটনা যাই হোক, তার স্বামী এখনো জীবিত আছেন। তিনি যে কারণেই নিরুদ্দেশ হোন না কেন, তার জীবন ও দেশের স্বাধীনতা আজ হুমকির সম্মুখীন। ফলে সে মেয়েটির প্রস্তাবে রাজী হল। ওকে বললো, ‘তুমি সন্ধ্যার সময় অমুক জায়গায় অপেক্ষা করো, আমি চলে আসবো।’
জোহরা ওকে বিদায় দিয়ে বাপের বাড়ী চলে গেল। সারাদিন সে চিন্তা করলো। শেষে সন্ধার একটু আগে প্রতিদিনের মতই বাড়ী ফেরার নাম করে রাস্তায় নামলো। কিন্তু আজ তার গতি বাড়ীর দিকে ছিল না, ছিল সেই দিকে, যেখানে দুপুরের দেখা মেয়েটিকে থাকতে বলেছিল।
কিন্তু ওখানে পৌঁছে সে দুপুরের ভিখারিনীর কোন হদিস পেলো না। সে মহা দুর্ভাবনায় পড়ে গেল। চিন্তা করতে লাগলো, কাউকে কিছু না জানিয়ে তার এভাবে চলে আসাটা কি ঠিক হচ্ছে?
কিন্তু যেখানে স্বামীর জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন, সেখানে যদি তাকে জীবনের ঝুঁকিও নিতে হয় তাতে পিছপা হতে পারে না জোহরা। কারন তার পিতা ও স্বামী উভয়েই তাকে মুজাহিদ হওয়ার প্রেরণা দিয়েছে। সামনে যাই ঘটুক না কেন, তা মেনে নেয়ার জন্য সে নিজের মনকে বুঝাতে লাগলো।
সূর্য যখন ঠিক ডুবতে বসেছে তখন সেখানে এক বোরকাওয়ালী যুবতী এলো। এই মেয়েই দুপুরে বুড়ি সেজেছিল। মেয়েটি তাকে বললো, ‘চলুন।’
জোহরা তাকে অনুসরণ করলো। তারা শহর ছেড়ে গ্রামে নেমে এলো। ততোক্ষণে রাতের আধাঁর গিলে ফেলেছে সেই গ্রামের বাড়িঘর ও বৃক্ষরাজি। রাস্তার পাশে এক বৃক্ষের আড়ালে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল দু’জন লোক।
একটু পর সেই নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গেল ওরা। মেয়েটি গাছের কাছে পৌঁছতেই বিড়ালের ডাক ডাকলো দুই বার। এটা ছিল এক গোপন সংকেত। সংকেত পেয়ে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এলো সেই দুই লোক।
মেয়েটি তখন আর ভিখারিনীর ছদ্মবেশে ছিল না। সে এখন এক সুন্দরী যুবতী নারী। সে জোহরাকে বললো, ‘আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ওদের সাথে চলে যাও, মনে কোন ভয় রাখবে না।’
জোহরাকে একটি অশ্বের পিঠে আরোহন করানো হলো। লোক দু’জনও দুই ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে বসলো। তারপর অন্ধকারের মধ্যেই অপরিচিত দুই লোকের সাথে অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো জোহরা।
জোহরা এমন এক সফরে যাত্রা করলো যে পথের মঞ্জিল তার জানা নেই। মেয়েটি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। জোহরাদের ঘোড়ার পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেলে সে একাকী শহরের পথে ফিরে চললো।
অনেক রাত পর্যন্ত পথ চললো ওরা। জোহরা পথঘাট কিছুই চেনে না। রাত বলে সে আশেপাশে কিছু দেখতেও পাচ্ছে না। কোথায় যাচ্ছে, কতদূর যেতে হবে কিছুই জানা নেই তার। তবু তার চলার বিরাম নেই।
রাত তখন অর্ধেকেরও বেশী পার হয়ে গেছে। এক পাহাড়ের কোলে থামলো ওরা। একজন আরেকজনকে বললো, ‘ওর চোখ বাঁধা প্রয়োজন।’
এই মধ্য রাতে অন্ধকার পথে যেখানে জোহরা কোন দিকে যাচ্ছে তাই জানে না, সেখানে হঠাৎ করে তার চোখ বাঁধার কি দরকার পড়লো বুঝতে পারলো না জোহরা। কিন্তু সে একা এবং অসহায়। তাদের বাঁধা দেয়ার কোন ক্ষমতাই নেই জোহরার। তাই সে কোন বাঁধা দিল না। ওরা তার চোখে কালো কাপড়ের পট্টি বেঁধে দিল।
জোহরা যেদিন বাড়ী থেকে পালালো তার দুই দিন পর ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেল। সবাই জানলো, সেনাপতি হাবিবুল কুদ্দুসের ছোট বিবিও নিখোঁজ হয়েছে।
গোয়েন্দারা সন্দেহ করলো, তাকেও ছিনতাই করা হয়েছে। কিন্তু সন্দেহ থেকে তো কোন নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসা যায় না। তাই আসলে কি ঘটেছে বলতে পারলো না কেউ।
লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, ‘তিনি হয়তো খৃস্টান বা সুদানীদের সাথে মিলিত হয়েছেন। তার স্ত্রী জোহরাও হয়তো তাঁর কাছেই চলে গেছে।’
কিন্তু আলী বিন সুফিয়ান ভাবছিলেন অন্য কথা। একজন সেনাপতির অন্তর্ধানের পর তার পরিবারের প্রতি গোয়েন্দাদের যে নজরদারী ছিল তার ফাঁক গলে কেমন করে তার স্ত্রী হারিয়ে যেতে পারে? সে পালিয়ে যাক বা অপহৃত হোক, গোয়েন্দাদের সে ফাঁকি দিতে পেরেছে, এতে তো কোন সন্দেহ নেই?
কায়রোতে যখন এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছিল ততোক্ষণে জোহরা হাবিবুল কুদ্দুসের কাছে পৌঁছে গেছে। তার চোখের পট্টি যখন খোলা হলো তখন সে দেখতে পেলো তার স্বামী হাবিবুল কুদ্দুস তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
সেদিন সারা রাত এবং পরের দিনও অর্ধদিবস তাদের রাস্তায় কাটাতে হয়েছে। রাস্তায় শুধু আহারাদির সময় তার চোখ খুলে দেয়া হতো। তার সঙ্গে আসা দু’জন পুরো পথে তার সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহার করেনি, অপ্রয়োজনীয় কথাও বলেনি। বরং তাকে আরো শান্তনা দিয়ে বলেছে, ‘আপনি ভয় পাবেন না। আপনার হেফাজতের জিম্মা আমাদের।’
হাবিবুল কুদ্দুসকে দেখতে পেয়ে তার দেহে প্রাণ ফিরে এলো। খৃস্টান লোকটিও হাবিবুল কুদ্দুসের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। তাই নিজের আবেগকে সংযত করে সে কোন মতে বললো, ‘আপনি কেমন আছেন?’
হাবিবুল কুদ্দুস হেসে জোহরার একটি হাত ধরে বললেন, ‘এরা আমার বন্ধু! এখানে তুমি নিজেকে বন্দী মনে করবে না। তুমি খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছো। এখন খাওয়া দাওয়া করো। রাতে আরাম করে একটা ঘুম দাও, দেখবে সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। কাল সকালে তোমাকে আমি বলবো, কেন তোমাকে এখানে ডেকে এনেছি।’
‘কোন বিপদ!’ জোহরার শঙ্কিত প্রশ্ন।
‘আরে না। তুমি সব সময় বলতে, তুমি পুরুষের মত খোলা ময়দানে যুদ্ধ করতে চাও। আমার এই বন্ধুরা তোমাকে সে রকম একটা সুবর্ণ সুযোগ দিতে চাচ্ছে। সবই জানতে পারবে। এত উতলা হওয়ার কিছু নেই। যাও, ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।’
মেয়ে দু’টি তাকে পথ দেখিয়ে খাওয়ার রুমে নিয়ে গেল।
জোহরা বধু হলেও এখনও পূর্ণ যুবতী। তার রূপ ও সৌন্দর্য তে রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। একহারা দেহের গড়ন। স্বভাবে বন্য হরিণীর চঞ্চলতা ও ক্ষিপ্রতা সহজেই অন্যের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। সন্ধ্যার একটু আগে হাবিবুল কুদ্দুসের কামড়ায় এলো সেই মেয়েরা, যাদেরকে হাবিবুল কুদ্দুস জলাশয়ে প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় গোসল করতে দেখেছিলেন। তারা তাঁর কামরায় এসে নির্বিবাদে জোহরাকে বান্ধবীর মত টেনে বাইরে নিয়ে গেল।
এই বিরান ধ্বংশপ্রাপ্ত মহলটা ছিল দেখতে ভয়ংকর স্থান। কিন্তু মেয়ে দুটো এখানেই থাকতো। তারা যে কেবল কামরা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতো তাই নয়, পুরুষদের মনোরঞ্জনের দিকেও খেয়াল রাখতো তারা।
জোহরা যে কামরায় ছিল সেখানে ধ্বংসাবশেষের কোন চিহ্নই ছিল না। উচ্চবিত্তের বিলাসী সামগ্রী দিয়ে ঘরটা রুচিস্নিগ্ধভাবে এ মেয়েরাই সাজিয়ে দিয়েছিল।
জোহরাকে কামরা থেকে বের করে নেয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই সে ওদের সাথে একেবারে মিশে গেল। তাদের মধ্য থেকে এক মেয়ে জোহরাকে বললো, ‘তোমার মত এমন ফুলের কলিকে তোমার মা বাবা কেমন করে এই বুড়ো লোকের হাতে তুলে দিল। তারা কি খুবই নিষ্ঠুর? নাকি তিনি তোমাকে খরিদ করে এনেছেন?’
‘হ্যাঁ,’ জোহরা রাগান্বিত কন্ঠে বললো, ‘তিনি আমাকে খরিদ করেছেন। সেনাপতি মানুষ তো, ক্ষমতা ও সম্পদের অভাব নেই। সেই ক্ষমতাবলে আমাকে তার হেরেমে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আমার তো আর সেই শক্তি নেই যে, পালিয়ে যাবো।’
‘যদি কোথাও আশ্রয় পাও তবে পালিয়ে যাবে?’ প্রশ্ন করলো মেয়েটি।
‘যদি সে আশ্রয় বর্তমান জীবনের চেয়ে উন্নত হয় তবে পালাবো না কেন, অবশ্যই পালিয়ে যাবো।’ জোহরা বললো, ‘তিনি আমাকে এখানে কেন ডেকেছেন? তিনি কি আমাকে এখানে বিক্রি করে দেবেন? তোমরা কারা? তোমরা এখানে কেন? তোমাদেরও কি কেউ এখানে বিক্রি করে দিয়ে গেছে?’
‘হ্যাঁ, আমাদেরকেও এখানে বিক্রি করা হয়েছে। তবে তাতে আমরা অখুশি নই। বরং এতে আমাদের জীবন ধন্য হয়ে গেছে। যদি তুমি চাও তোমাকেও আমাদের সাথে নিতে পারি। আমরা এখানে রাজকুমারীর মত আছি। এত সুখে আছি যা জীবনে কোনদিন কল্পনাও করিনি।’