» » ছোট বেগম

বর্ণাকার

ওরা হাঁটতে হাঁটতে ঝর্ণার কাছে চলে এসেছিল। এক মেয়ে তাকে বললো, ‘আমরা কারা সে পরিচয় তুমি অবশ্যই পাবে। তবে তার আগে দেখতে হবে তুমি আমাদের সাথে থাকার যোগ্য কিনা?’

‘তোমাদের সাথে থাকতে গেলে কি যোগ্যতার দরকার?’

‘তুমি আমাদের সাথে ওই ঝর্ণার পাশে গিয়ে কাপড় চোপর খুলে রেখে এ জলাশয়ে গোসল করতে পারবে?’

‘ওই পশুটার কাছ থেকে যদি আমাকে মুক্ত করতে পারো তবে তোমরা যা বলবে তাই করতে পারবো।’ জোহরা বললো।

এ সময় এক লোক সেখানে হাজির হয়ে জোহরাকে বললো, ‘কামরায় বিকালের নাস্তা দেয়া হয়েছে। সেনাপতি আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।’

জোহরা চলে গেল স্বামীর কাছে। হাবিবুল কুদ্দুসের সাথে যে খৃস্টান কথা বলছিল সে কামরা থেকে বেরিয়ে গেল। হাটঁতে হাটঁতে সে চলে এলো মেয়েদের কাছে।

মেয়েরা তাকে দেখে খুশীতে হাততালি দিল। উচ্ছল আনন্দে কলকলিয়ে বললো, ‘কেল্লা ফতে সরদার। এ মেয়েটা আমাদের ভালই কাজে লাগবে বলে মনে হচ্ছে। সে তার বুড়ো স্বামীকে ভীষণ ঘৃণা করে।

তুমি আদেশ ‍দিলে তাকে আমরা আমাদের মত করে গড়ে তুলতে পারি। তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো মেয়েটি অসম্ভব রূপসী। তার মধ্যে চঞ্চলতা ও দুষ্টুমী ভাবও আছে। তাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ‍দিতে পারলে তীরের মতই লক্ষ্য ভেদ করতে পারবে সে।’

‘কিন্তু হাবিবুল কুদ্দুস তো বলেছে, এই স্ত্রীর উপর তার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে এবং এ মেয়ে তার যোগাযোগ রক্ষার কাজ ঠিক মতই করতে পারবে।’ খৃস্টানটি বললো, ‘কিন্তু যদি তোমাদের কথা সত্যি হয় এবং এ মেয়ে সত্যি সত্যি তাকে ঘৃণা করে তবে তো তা খুবই ভয়ের কথা। এ মেয়েবত তবে আমাদের ধোঁকা দিতে পারে এবং আমাদের সবাইকে ধরিয়ে দিতে পারে।’

‘তার ঘৃণার কারণটা তুমি বুঝবে না। ‍এটা তার বয়সের দোষ। একজন যুবতী মেয়ে কখনোই একজন বুড়োকে ভালবাসতে পারে না। সেনাপতির বউ বলে প্রকাশ্যে গর্ব করলেও অন্তরের দহন তাতে চাপা পড়ে না। হাবিবুল কুদ্দুসের চাইতেও সহজে আমরা এই মেয়েকে আমাদের দলে টেনে নিতে পারবো।’

‘এতো তাড়াহুড়োর কিছু নেই। খাচায় বন্দী পাখি এক সময় পোষ মানবেই, ও নিয়ে আমি ভাবি না। আমাদের টার্গেট মেয়েটা নয়, হাবিবুল কুদ্দুস। আসল সুখবরটা তাহলে আমার কাছ থেকে শোন।

এ লোক আমাদের জালে পড়ে গেছে। সে আমাকে মিশরী এবং দেশপ্রেমিক মুসলমান বলে বিশ্বাস করেছে। সে আমাদের পরিকল্পনা মত কাজ করতেও রাজী হয়েছে।’

‘আর মেয়েটির ব্যাপারে তোমার কি ফয়সালা?’

‘যদি মেয়েটি হাবিবুল কুদ্দুসকে ধোঁকা ‍দিতে রাজি থাকে তবে তাকে আমি অন্যভাবে কাজে লাগাবো। আগে মেয়েটিকে যাচাই করে দেখি। তুমি রাতে কিছুক্ষনের জন্য তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। তারপর মেয়েটিকে আমার কামরায় রেখে কোন বাহানায় বাইরে চলে যাবে।’

বৈকালিক নাস্তা শেষ হওয়ার পর মেয়েরা গিয়ে পুনরায় তাকে নিয়ে এলো। তারা হাসতে খেলতে ও গল্প গুজব করতে লাগলো জোহরাকে সঙ্গে নিয়ে। জোহরাকে তারা আগের চেয়ে খোলামেলা বেপর্দা করে ফেললো। রাতে খাওয়ার পর আবার তারা গল্পগুজবে মেতে উঠলো। মেয়েরা তাকে নিয়ে এলো নিজেদের কামরায়। এক মেয়ে গিয়ে খৃস্টান লোকটিকে খবর ‍দিল, ‘মেয়েটাকে আমাদের কামরায় নিয়ে এসেছি। আপনি ওখানেই তার সাথে দেখা করুন।’

খৃস্টান লোকটি সেখানে গেল। সে জোহরার সঙ্গে গল্প জুড়ে দিল। মেয়েরা এক ফাঁকে তাদের একা রেখে বাইরে চলে গেল।

খৃস্টান লোকটি তার সঙ্গে গল্প করছিল আর তাকে গভীরভাবে লক্ষ্য করছিল। এক সময় সে তার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলো এবং তার বাহু ধরে নিজের দিকে আকর্ষণ করলো।

জোহরা তার বাহু থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে বললো, ‘আমি এত সাধারণ ও সস্তা মেয়ে নই যে, সামান্য ইশারাতেই আপনার কোলে গিয়ে পড়বো।’

খৃস্টান লোকটি জোহরার এমন স্পষ্ট কথায় বেজার না হয়ে বরং বেশ খুশিই হলো। বুঝলো, মেয়েটির মধ্যে ব্যক্তিত্ব আছে। এমন মেয়েই দরকার যে সহজে কারো হাতের খেলনা হয় না। লোকটি জোহরার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে তার সাহস ও বুদ্ধিমত্তা দেখে চমৎকৃত হলো। গোয়েন্দাগীরিতে এমন মেয়েদেরই প্রয়োজন। সে মেয়েদের সাথে একমত হলো, এমন মেয়েকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিলে সে তীরের মতই নিশানা ভেদ করতে সমর্থ হবে।

লোকটি আলাপ করে বুঝলো, স্বামীর প্রতি এ মেয়ের যথার্থই ঘৃণা আছে। তবে নিরূপায় বলেই সে মুখ ফুটে বা আচরণের মাধ্যমে তার অবজ্ঞার কথা প্রকাশ করে না। আর তাই হাবিবুল কুদ্দুস মনে করেন, এ মেয়ে তার জন্য পাগলপারা।

লোকটি জোহরাকে বললো, ‘তুমি তোমার মনের ভাব এখনি ওর কাছে প্রকাশ করতে যেও না। আমি ওর থেকে তোমাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করবো। তোমাকে এমন জীবন দান করবো যাতে তুমি রাজকুমারীর মত জীবন যাপন করতে পারো। তুমি এখানেই বসো, আমি তোমার বান্ধবীদের তোমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

সে কামরা থেকে বের হয়ে গেল। মেয়েদের কাছে গিয়ে বললো, ‘তোমরা ঠিকই বলেছো। মেয়েটি আসলেই চালাক চতুর ও কাজের মেয়ে। তাকে তোমরা পাশে পাশে রেখে গড়ে তোলার চেষ্টা করো।’

সে আরো বললো, ‘হাবিবুল কুদ্দুস তাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে। এই মেয়েকে ‍দিয়েই আমি হাবিবুল কুদ্দুসকে বশে রাখবো এবং আমার কাজ আদায় করে নিবো।

মেয়েটিকে তোমরা বুঝাও, সে যেন হাবিবুল কুদ্দুসকে উন্মাদিনীর মত ভালবাসার অভিনয় করে যায়। তাহলে তিনি তাঁর বিশ্বাসী কমাণ্ডারদের সাথে এই মেয়ের মাধ্যমেই যোগাযোগ করিয়ে দেবেন আমাদের।

তোমাদের কাজ হলো এই মেয়েকে জালে আটকে রাখা। তাকে জীবনের এমন রঙিন স্বপ্ন দেখাবে যাতে সে মনে মনে রাজকুমারী বনে যায়। আর কিভাবে তাকে এ কাজের জন্য প্রস্তুত করতে হবে তা তো তোমাদের ভালো করেই জানা আছে।’

জোহরা অন্তর থেকেই স্বামীকে ভালবাসতো। এখানে এসে তার সে ভালবাসা বহুগুন বেড়ে গেল। খৃস্টান মেয়েরা ভাবলো, জোহরা তাদের নির্দেশে হাবিবুল কুদ্দুসের সাথে প্রেমের অভিনয় ভালই করছে।

জোহরা সুযোগ পেলেই মেয়েদেরকে বুঝাতে চাইতো, এই বুড়ো স্বামীকে সে কোন কালেই ভালবাসেনি। তাদের অনুরোধে ভালবাসার অভিনয় করলেও এখন সে তার স্বামীকে আগের চাইতেও বেশী ঘৃণা করে।

মেয়েরা তাকে তাদের কাছে রাখে। একান্ত অন্তরঙ্গ বান্ধবীর মতই তাকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে যায়। তাকে নিয়ে ঝর্ণার জলাশয়ে সাতাঁর কাটে মনের আনন্দে।

প্রথম দিকে গোসলের সময় বিবস্ত্র হতে ইতস্তত করতো জোহরা। মেয়েরা তাকে বুঝালো, ‘এতে কোন অপরাধ নেই। জীবনকে উপভোগ করতে শেখো। এমন লাজুক হয়ে থাকলে তুমিতো ভীতুর ডিম হয়ে যাবে। আর যারা ভীতু তারা জীবনে কিছুই অর্জন করতে পারে না।’

খুব দ্রুত জোহরা সাহসী হয়ে উঠলো। সে ওদের মত বিবস্ত্র হয়ে পানিতে ঝাঁপ দিতে শিখলো। ওদের মত স্বল্প বসনে পুরুষদের সাথে মেলামেশা করতে শিখলো। শেষে এ সব বিষয় তার দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলো।

রাতটি সে স্বামী হাবিবুল কুদ্দুসের সাথেই কাটায়। কিন্তু দিনের অধিকাংশ সময় তার কাটে মেয়ে দুটির সাথে। মাঝে মাঝে খৃস্টান লোকটির সঙ্গেও বন্ধুর মত গল্প করে।

জোহরা চার পাঁচ দিনের মধ্যেই মেয়ে দুটির মত অসভ্য হয়ে গেল। তার দুষ্টামী ও নির্লজ্জতা দেখে মেয়েরা এবার তার সামনে মেলে ধরতে শুরু করলো তাদের রহস্যময় জীবনের কথা।

ইতিমধ্যে খৃস্টান লোকটি হাবিবুল কুদ্দুসের সাথে বসে বিদ্রোহের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেললো। হাবিবুল কুদ্দুসও এ পরিকল্পনা গ্রহণে তাকে অনেক তথ্য দিয়ে সাহায্য করলো। যে সব তথ্য জানা না থাকলে তাদের পরিকল্পনা সফল হতো না বলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো খৃস্টান লোকটি।

হাবিবুল কুদ্দুসের প্রতি এখন এ লোকের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস জন্মে গেল। হাবিবুল কুদ্দুস মিশরের সেনাদলের কয়েকজন বড় বড় সামরিক অফিসারের নাম বললো যারা সালাউদ্দিন আইয়ুবীর সেনাদলে থাকলেও তারা মূলত আইয়ুবী বিরোধী। তারা মনে করতো, আইয়ুবীর মতই একটি বিশাল বাহিনী পরিচালনা করার মত ক্ষমতা ও দক্ষতা তাদের আছে, কিন্তু আইয়ুবীর বর্তমানে তাদের সে দক্ষতা প্রদর্শনের কোন সুযোগ নেই।

খৃস্টান লোকটি হাবিবুল কুদ্দুসকে সব সময় বলতে লাগলো, ‘একজন দেশপ্রেমিক মিশরীয় মুসলমান বলেই আইয়ুবীর বিরুদ্ধে আমার অবস্থান। আইয়ুবীর মতাদর্শের সাথে আমার কোন সংঘাত নেই। মিশরকে স্বাধীন করতে পারলে আমাদের জাতীয় ঐক্যের ভিত হবে ইসলাম। তখন যদি আইয়ুবী চান, আমরা স্বাধীন দেশের সেনা পাঠিয়ে তাকে ফিলিস্তিন উদ্ধারেও সহায়তা করতে পারি।’

সে যে একজন খৃস্টান ষড়যন্ত্রকারী সে কথা সে বেমালুম চেপে গেল। কারন সে ভেবে দেখলো, হাবিবুল কুদ্দুসকে এ পথেই ব্যবহার করা অধিক সহজ।

জোহরা ততদিনে মেয়েদের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে নিয়েছে। বলতে গেলে এখন সে তাদেরই একজন হয়ে উঠেছে। তার কথাবার্তা বা চলন বলন দেখে ওদের থেকে আলাদা করা অসম্ভব। সে যে কোন ভদ্র ঘরের সন্তান এবং একজন সেনাপতির বেগম এ কথা তাকে দেখে বুঝার কোন উপায় নেই। অথচ হাবিবুল কুদ্দুস তাকেই তার সবচেয়ে অনুগত ও বিশ্বস্ত বেগম মনে করতেন।

জোহরা তখনো জানতো না এই বিজন পাহাড় ও ধ্বংসাবশেষটি কোথায় অবস্থিত। একদিন সে কথায় কথায় মেয়েদের জিজ্ঞেস করলো, ‘এই বিরান ধ্বংসস্তুপ ও পাহাড় ঘেরা ক্ষুদ্র পরিবেশ ছাড়া কি আর কোন দুনিয়া নেই? খোলামেলা প্রান্তর, মরুদ্যান বা কোন শহর?’

মেয়েরা বললো, ‘থাকবে না কেন? দাঁড়াও, কাল তোমাকে এক সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাব।’

পরদিন সত্যি সত্যি তারা তাকে ওই এলাকা থেকে দূরে এক জায়গায় নিয়ে গেল। পাহাড়ের সংকীর্ণ রাস্তা অতিক্রম করে এক ঝিলের পাশ দিয়ে যখন তারা আরও সামনে এগিয়ে গেল তখন তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো নীলনদের উত্তাল ঢেউ।

নীলনদ থেকে একটি নালা ভেতরের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল, এতোক্ষন তারা সেই নালার পাশ দিয়েই হেটে এসেছে। নীলনদের পানি সেই নালা দিয়ে পাহাড়ে প্রবেশ করেছে। আবার পাহাড়ী ঝর্ণার পানিও সেই নালা দিয়েই নীলনদে এসে পড়েছে। জোহরা দেখতে পেল নালার মুখে একটি নৌকা বাঁধা। নৌকার পাটাতনে পড়ে আছে দুটো বৈঠা। নদী ও নালার সঙ্গমস্থলটা অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত।

ওরা সেখানে পৌঁছে ঘাসের উপর লুটোপুটি খেল। হাসাহাসি ও খেলাধুলায় মেতে উঠলো।

‘এখানে ফেরাউনের রাজকন্যারা খেলা করতো।’ এক মেয়ে বললো।

‘আর তোমরা দু’জন যেন নব্য ফেরাউনের কন্যা।’ জোহরা হেসে বললো, ‘তাই তো বলি তোমাদেরকে রাজকন্যার মত লাগছে কেন?’

‘তোমার রূপের কাছে আমরা তো নস্যি। অমন ঢলোঢলো অঙ্গ আর যৌবন নিয়ে আমাদের টিটকারী মারছো! আরে, তুমি যদি রাজকন্যা হও তবে বড়জোড় তার প্রেতাত্না হতে পারি।’ চোখ উল্টে বললো অন্য মেয়েটি।

‘শোন জোহরা।’ এক মেয়ে তাকে বললো, ‘নিশ্চয়ই তুমি জেনেছো, তোমার বৃদ্ধ স্বামী এখানে কেন ‍লুকিয়ে আছে এবং তোমাকেই বা কেন এখানে নিয়ে আসা হয়েছে?’

‘সে তো তিনি প্রথম দিনেই জানিয়ে দিয়েছেন।’ জোহরা বললো, ‘আমিও তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু তিনি কেন যে কাজে নামছেন না!

যখনি আমি তাকে তাড়া দেই, তিনি বলেন, ‘সবুর করো রাণী, কাজটা জটিল। সাবধানে এগুতে হবে। একবার ফেঁসে গেলে সব ভেস্তে যাবে। তখন তুমিও রাণী হতে পারবে না, আমার মাথায়ও রাজমুকুট জুটবে না। তাই ভালোমতো চিন্তা ভাবনা করে আটঁঘাট বেঁধে নামতে হবে।’

তিনি বলেছেন, পরিকল্পনা হয়ে গেছে। এখন আবার পুরো পরিকল্পনাটা খতিয়ে দেখছি কোথাও কোন ত্রুটি রয়ে গেল কিনা? ভেবো না, শিগগিরই কাজে নেমে পড়বো।’

‘তাহলে তুমি এটাও জানো, আমরা স্বাধীন মিশরের রাজকুমারী হতে যাচ্ছি?’

‘হ্যাঁ। তা তো জানিই।’ জোহরা মুখ ভার করে বললো, ‘তোমাদের কপাল ভালো, তোমরা হবে স্বাধীন মিশরের রাজকুমারী। আর আমাকে আমার বুড়োহাবড়া স্বামীর রংমহল আলো করে বসে থাকতে হবে।’

জোহরা মন খারাপ করে বললো, ‘তোমরা বলছো, তোমাদের কথা মত কাজ করলে আমাকে তার বন্ধন থেকে মুক্তি দেবে। কিন্তু কেমন করে তা সম্ভব? তিনি তো তখন হবেন দেশের সর্বেসর্বা। তার হাত থেকে তোমরা আমাকে কেমন করে রক্ষা করবে?’

‘বোকা মেয়ে! এই নিয়ে ভাবছো তুমি? আরে আমরা যদি শাহজাদী হই তুমি আমাদের সাথে থাকবেনা ভাবলে কি করে? বরং তোমার যা রূপ তাতে তোমাকে শাহজাদী বানিয়ে আমরা হবো রাজকন্যার বান্ধবী, কি বলিস রে সই?’ ওদের সম্পর্ক এখন তুই-তোকারী পর্যায়ে নেমে এসেছে। জোহরা বললো, ‘কিন্তু কেমন করে? দেখ, আমাকে খুশী করার জন্য মিছেমিছি বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলবি না।’

‘মিথ্যে গল্প বানাতে যাবো কেন? তাহলে শোন আমরা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু ভাবছি, তোকে এখনি বিষয়টা বলা ঠিক হবে কি না? তুই তো আবার বুড়োর খাস প্রেমিকা, যদি মুখ ফসকে তার সামনে বলে ফেলিস?’

‘যদি বলেই ফেলি তাহলে তোদের তো কোন ক্ষতি দেখি না। তোরা কি মনে করেছিস আমি এতই বোকা যে, আমার ফাঁসির দড়ি আমিই বাঁধবো? ভয় নেই, আমি অত কাঁচা মেয়ে নই। তোরা কি ভেবেছিস আমাকে খুলে বলতে পারিস।’

‘আমরা যা ভেবেছি তা সফল করতে হলে তোকেও কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। প্রয়োজনে কিছুটা নিষ্ঠুরতা দেখাতে হবে। কাউকে হত্যা করতে হলে তখন তো আবার মায়া মমতা এসে তোর হাত খামছে ধরবে না?’

‘সেটা সময় হলে দেখতে পারবি।’ জোহরা বললো, ‘আমি এক সৈনিক ‍পরিবারের কন্যা। আমার বাপ সৈনিক, ভাই সৈনিক। তারা আমাকে শিখিয়েছে, উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য কাউকে খুন করা নিষ্ঠুরতা নয়, বরং ওটা কর্তব্য। আর যে সৈনিক নিজের কর্তব্য ঠিক মতো করে না, সে নিজেই নিজেকে হত্যা করার জন্য যথেষ্ট। আমি এই পৃথিবীতে আরো কিছুদিন বাচঁতে চাই, তাই নিজেকে খুন করার কোন ইচ্ছা আপাততঃ আমার নেই।’

‘তাহলে সবুর কর। তোর মুক্তির ব্যবস্থা আমরা অবশ্যই করবো।’

পরের দিনও জোহরা মেয়েদের সাথে নদীর পাড়ে চলে গেল। প্রথমদিন মেয়েরা যে রাস্তায় তাকে নদীর তীরে নিয়ে গিয়েছিল, সে রাস্তাটি ছিল প্রাকৃতিক, বহু পুরানো এবং খুবই সংকীর্ণ।

অনেক কাল সে পথে লোক চলাচল করে না বলে রাস্তার চিহ্ন জায়গায় জায়গায় মুছে গিয়েছিল। এমন গোপন পথ সহজে কারো পক্ষে খুঁজে পাওয়া যেমন কষ্টকর তেমনি একবারের যাতায়াতে তা মনে রাখাও সহজসাধ্য ছিল না। পথটি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এগিয়ে গেছে। ঝোপঁঝাড় ও লতাপাতায় হারিয়ে গেছে পথের নিশানা।

জোহরা সে পথটি মনের আয়নায় গেথে নিতে চাচ্ছিল। তাই সে ‍দ্বিতীয় দিনের মত সে পথে তাদের নিয়ে নদী দেখতে এলো। এসে বুঝলো, একা এলে সে কিছুতেই রাস্তা খুঁজে নদী পর্যন্ত পৌঁছতে পারতো না।

নদী তীরে পৌঁছে জোহরা তাদের বললো, ‘চলো নৌকায় চড়ে নদী ভ্রমণ করি।’

মেয়েরা তাকে বাঁধা দিয়ে বললো, ‘মেয়েদের একা নৌকায় চড়া বারণ আছে। এখানে কোন পুরুষ নেই যে কোন দুর্ঘটনায় পড়লে তারা এসে আমাদের উদ্ধার করতে পারবে।’

ফলে জোহরার নৌকায় চড়া হলো না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল, মেয়েরা বললো, ‘চল ফিরে যাই।’

হাবিবুল কুদ্দুসের উপর এখন আর আগের মত নিষেধাজ্ঞা জারী নেই। তিনি তাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন, তিনি এখন স্বাধীন মিশরের প্রত্যাশী এবং ‍সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর গদি দখল করতে বদ্ধপরিকর।

খৃস্টান লোকটি বিদ্রোহের সময় নিয়ে কথা বলতে এলে তিনি বললেন, ‘চাঁদের দিকে খেয়াল রেখো। অমাবশ্যার রাতে বিদ্রোহ ঘটবে। এর তিন দিন আগে তুমি জোহরাকে নিয়ে কায়রো যাবে। তবে কায়রো ঢুকবে রাতের বেলা। আর জোহরাকে ছদ্মবেশে সাজিয়ে নেবে।

জোহরাকে বলে দেবো সে কেমন করে আমার লোকদের সাথে দেখা করবে এবং তাদেরকে তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। আমি কয়েকজন অফিসারের নামে চিঠি দেবো। তুমি সেই চিঠি দেখিয়ে বাকী কাজ তাদের পরামর্শ মত আঞ্জাম দেবে।’

এরপর থেকে সেই লোক আর তার সাথে বিদ্রোহ নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করে না। তবে জোহরার সঙ্গে এ নিয়ে সেনাপতির আলোচনা হয় গভীর রাতে, খুবই গোপনে ও নিচু কন্ঠে, যাতে তাদের এ আলোচনা আর কারো কানে না যায়।

দুদিন পরের কথা। ধ্বংসস্তুপের গোপন মহলে হাবিবুল কুদ্দুসের কক্ষে আরো দু’জন নতুন লোক এলো। তাদের একজন ‍সুদানী ও অপরজন মিশরী। তারা হাবিবুল কুদ্দুসের সাথে সাক্ষাত করে বললো, ‘বিদ্রোহের ব্যাপারে আপনার সাথে কিছু আলাপ করতে চাই।’

তিনি লোক দু’জনকে চিনলেন না, তবে অনুমান করলেন তারা সামরিক বিশেষজ্ঞ। তাদের কাছে মিশর, সুদার ও আরবের ম্যাপ ছিল এবং কিছু কাগজপত্রও ছিল। তারা সেই ম্যাপ মেলে ধরে হাবিবুল কুদ্দুসের সাথে দীর্ঘ সময় নিয়ে বিদ্রোহের বিষয়ে শলাপরামর্শ করলো।

হাবিবুল কুদ্দুস এ ব্যাপারে শুধু আগ্রহই প্রকাশ করলেন না, বরং তাদেরকে এমন সব পরামর্শও দিলেন, যা তারা চিন্তাও করেনি।

তারা হাবিবুল কুদ্দুসের আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে সুলতান আইয়ুবীর কয়েকজন সেনাপতি ও কমাণ্ডারের নাম বললো, যারা মিশরের সেনাবাহিনীতে থাকলেও গোপনে সুলতান আইয়ুবীর বিরুদ্ধে ছিল। তারা জানালো, ‘এরা আমাদের সাথে আছে। আপনি অভিযানের সময় যে কোন ব্যাপারে এদের ওপর নির্ভর করতে পারবেন।’

হাবিবুল কুদ্দুসের কাছে এ তথ্যটুকুর মূল্য ছিল অনেক। তিনি চিন্তা করে পেলেন না, আলী বিন সুফিয়ানের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এরা কি করে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার সাহস পেলো।

তারা হাবিবুল কুদ্দুস কে আরো জানালো, মিশর সীমান্তে মিশরের যে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী আছে সেখানেও আমরা ফাঁক খুজে পেয়েছি। সময় মত ওখানেও আমাদের লোকজন সক্রিয় হয়ে উঠবে। আপনি শুনে খুশি হবেন, সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর একটি ফাঁড়ির সৈন্যদের সেদিন এমন নির্দেশ দেয়া হবে যাতে তারা অন্যত্র ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এক ফাঁকে সুদানের কিছু সৈন্য ভেতরে প্রবেশ করবে এবং তারা আপনাকে সম্ভাব্য সাহায্য সহযোগিতা করবে।’

‘বিদ্রোহ সফল হওয়ার পর মিশরের শাসক কে হবেন?’ হাবিবুল কুদ্দস জিজ্ঞেস করলেন।

‘এ ব্যাপারে আমরা আলাপ আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, যেহেতু প্রধান সেনাপতি আপনি থাকবেন এবং আপনার নেতৃত্বেই এই বিপ্লব সাধিত হবে সে জন্য আমীরও আপনিই হবেন।’ মিশরের লোকটি বললো।

সে আরো বললো, ‘সালাউদ্দিন আইয়ুবী অবশ্যই আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন। প্রথম ধাক্কায় ক্ষমতা দখল করতে না পারলে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সে জন্য এমন একজনের নামে এই স্বাধীনতার ডাক দিতে হবে যার প্রতি সেনাবাহিনী ও জনগন আস্থাশীল হতে পারে।

আমরা গভীর পর্যালোচনা করে সবাই এ ব্যাপারে একমত হয়েছি, মিশরে এ ক্ষেত্রে আপনার কোনো বিকল্প নেই। তাই আমরা সবাই চাই, আমাদের প্রথম আমীর আপনিই থাকবেন।’

‘যুদ্ধকালীন অবস্থায় কোনো বেসামরিক লোককে গদীতে বসানো ঠিক নয়। তাই আপনার ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করেনি।’ বন্ধুর কথার সূত্র ধরে বললো সুদানী লোকটি।

এ কথা শুনে হাবিবুল কুদ্দুসের বুক ফুলে উঠলো এবং বলিষ্ঠ প্রত্যয় নিয়ে তিনি ঘাড় সোজা করে বসলেন।

‘আশা করি এ ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি থাকবে না। খৃস্টানরা আইয়ুবীর চির শত্রু। সেই হিসাবে আইয়ুবীর বিরুদ্ধে যারাই দাঁড়ায় তাদেরকে তারা সাহায্য করে কোন শর্ত ছাড়াই। আমরা খৃস্টানদের সাথেও যোগাযোগ করেছি। তারাও আমাদের সাহায্য করবে বলে ওয়াদা করেছে।’ সুদানী বললো।

‘বিনিময়ে ওরা কি মূল্য নেবে?’ হাবিবুল কুদ্দুস প্রশ্ন করলেন।

‘বিনিময়ে ওরা কিছুই চায় না। আমরা সম্মিলিত ভাবে সুলতান আইয়ুবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মিশরের স্বাধীন করলেই ওরা খুশী।’ মিশরের লোকটি বললো, ‘তারা মিশর চায় না, চায় মিশরকে ঘাঁটি বানিয়ে আইয়ুবী যে ফিলিস্তিন দখলের পাঁয়তারা কষছে তার হাত থেকে রক্ষা পেতে। আমরা যে পরিমাণ সাহায্য চাইবো তাই নিয়ে তারা মিশর ছুটে আসতে প্রস্তুত। তবে তাদের সাথে কথা হয়েছে, মিশরের বিদ্রোহ সফল হলে অর্থাৎ মিশর আইয়ুবীর কবল থেকে মুক্ত হয়ে গেলে তারা ফিরে যাবে।

তাদের বলা হয়েছে, যদি তারা মিশরের উপর সামরিক অভিযান চালানোর চিন্তা মাথায় নিয়ে আসে তবে মিশরের সৈন্যরা তা বরদাশত করবে না। এমনটি করলে মিশরের সৈন্যরা আইয়ুবীর সাথে মিলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।’

সব শুনে হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘প্রস্তুতি মোটামুটি ভালই মনে হচ্ছে। এখন বাকী কাজ সুচারু রূপে সমাধা হলেই হয়।’

হাবিবুল কুদ্দুস তাদের দু’জনকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘আমার অধীনে যে সাত হাজার সৈন্য আছে তারা আমার ইশারায় যে কোন সময় জীবনবাজি রাখতে প্রস্তুত। সময়মত বিদ্রোহের সূচনা তারাই করবে। আমাদের যারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তাদের সাথে কিভাবে সমন্বয় করা যায় এখন সেটাই ঠিক করা দরকার।’

‘হ্যাঁ, এটা করতে হলে আগে ‍সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার আপনি কোথায় থেকে এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেবেন এবং কি পদ্ধতিতে বিদ্রোহ পরিচালনা করবেন?’

‘সবচেয়ে উত্তম হতো যদি আমি সশরীরে ফিরে গিয়ে সরাসরি নেতৃত্ব হাতে নিতে পারতাম।’ হাবিবুল কুদ্দুস বললেন, ‘কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, আমার সেখানে ফিরে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ আমাকে পেলেই প্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো, এতদিন আমি কোথায় ছিলাম?

স্ত্রীর মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি, আমি যে স্বেচ্ছায় শত্রুদের দলে চলে গেছি এ কথা আলী বিন সুফিয়ান গিয়াস বিলবিসকে রিপোর্ট করেছেন। ফলে কায়রো গেলে তারা আমাকে বন্দী করে ফেলবে। তাতে আমাদের খেলা শুরু হওয়ার আগেই সব পণ্ড হয়ে যাবে।

আমি আসলে একটা বিরাট ভুল করে ফেলেছি। আমার স্ত্রীকে এখানে ডেকে আনা ঠিক হয়নি। যদি সবার এরকম সহযোগিতা পাবো জানতাম তবে তাকে ডেকে আনতাম না। এখন তাকে ফেরত পাঠালে তার সঙ্গেও ভাল ব্যবহার করা হবে না। সে জন্য আমাকে এখানেই থাকতে হবে।

তোমরা যে তথ্য দিলে তাতে আমাকে নতুন করে একটু চিন্তা করতে দাও। তোমাদের সাথে কোন কোন কমাণ্ডারকে ভিড়িয়ে দিলে ভালো হবে ভেবে দেখি।’

হাবিবুল কুদ্দুসের এ আলোচনা শোনার পর তার ব্যাপারে আর কারো কোন সন্দেহ রইল না যে তিনি অচিরেই বিদ্রোহ করবেন।

‘হলবের অবরোধ কোন খেল তামাশার ব্যাপার নয়।’ সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী ফোরাত কূলে বসে তার সেনাপতিদের বললেন, ‘তোমাদের সকলেরই মনে থাকার কথা, আমরা আগেও একবার এ শহর অবরোধ করতে গিয়ে হলবের বাসিন্দাদের দিয়ে প্রচণ্ড বাঁধা প্রাপ্ত হয়েছিলাম। শেষে বাধ্য হয়ে আমাদের অবরোধ উঠাতে হয়েছিল। সেটা হলবের বাসিন্দাদের বীরত্ব। তারা আমাদের ফিরে আসতে বাধ্য করেছিল।

এখন আর সে অবস্থা নেই, তবুও আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। এখান থেকে যাদের সৈন্য দলে ভর্তি করা হয়েছে তাদের উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না। মিশর থেকে সামরিক রসদ ও সাহায্য চাইতে হবে। ভাবছিলাম হাবিবুল কুদ্দুসের বাহিনীই নিয়ে আসবো।’

এই কথা বলে সুলতান আইয়ুবী নিরব হয়ে গেলেন। তার চেহারার রঙ পাল্টে গেল। তিনি ধীরস্থির কন্ঠে বললেন, ‘আমি মেনে নিতে পারছি না, হাবিবুল কুদ্দুসের মত বিশ্বস্ত সেনাপতি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। তবে সে গেল কোথায়?

আমি যখন মিশর থেকে যাত্রা করলাম তখন সে আমাকে বলেছিল, ‘আপনি মিশরের চিন্তা মন থেকে দূর করুন। খৃস্টান ও সুদানীরা যদি আপনার অনুপস্থিতিতে মিশরে আক্রমণ চালায় তবে আমার তিন হাজার পদাতিক ও দুই হাজার অশ্বারোহী বাহিনীই তাদের আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারবে।’

সে আরো বলেছিল, ‘আর ‍যদি কেউ মিশরে বিদ্রোহ করে তবে তার মাথা আর দেহের সাথে থাকবে না। আমরা আল্লাহর সৈনিক, কিন্তু সে আল্লাহর দুশমন।’

‘মনে হয় তার এ সব গুণ লক্ষ্য করে শত্রুরা তাকে অপহরণ করেছে।’ এক সেনাপতি বললো, ‘কারন তার সৈন্যদের উপর তার গভীর প্রভাব রয়েছে। এই কারণে তিনি নিজেকে যথেষ্ট শক্তিশালী মনে করেন। শত্রুরা আমাদেরকে সেই শক্তি থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে।’

‘যদি তাকে পাওয়া না যায় তবে তার বাহিনীকেই আমি এখানে নিয়ে আসবো।’ সুলতান আইয়ুবী বললেন, ‘কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তাদের নিয়ে আসা সম্ভব না। কারণ মিশরের প্রতিরক্ষা তাতে দূর্বল হয়ে পড়বে। সেখানে নতুন ফৌজ পাঠাতে হবে।

কিন্তু ভয় ও আশংকার কারণ হচ্ছে এটাই যে, বাইরের আক্রমণের চেয়ে ভেতরে কেউ বিদ্রোহ করে বসে কিনা। কারণ অচেনা বেঈমান গাদ্দারের দল ভেতরে বসে আছে। তারাই তো ফিলিস্তিনকে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।’