শহরের বিপুল সংখ্যক মুসলিম যুবক যুবতী কিভাবে সালাহুদ্দীনের সহযোগিতায় আসতে পারে সে জন্য স্বতঃস্ফুর্তভাবে আলাপ আলোচনায় মেতে উঠল। মুসলমানদের মহল্লাগুলোতে লোকজন জোট বেঁধে জটলা করতে থাকলো।
কাঠের তৈরী মজবুত ফটক লোহার পাতে মোড়া, বাইরে থেকে নিক্ষিপ্ত অগ্নি গোলায় আগুন লাগল না।
পাঁচিলের ওপর থেকে ফটক লোহার পাতে মোড়া, বাইরে থেকে নিক্ষিপ্ত গোলায় আগুন লাগল না।
পাঁচিলের ওপর থেকে ছোড়া তরে কামানধারীদের কয়েকজন শহীদ হয়ে গেলেন। কামানগুলো পেছনে সরিয়ে নেওয়া হল।
শেষ পর্যন্ত সৈন্যদেরকে পাঁচিলের ওপর তীর নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হল।
খ্রীস্টান সৈন্যরা উপরে থাকায় মুসলমানদের বেশী ক্ষতি হচ্ছিল। দেয়ার ভাংগার যন্ত্র নিয়ে আটজনের একটা দল প্রাচীরের দিকে এগিয়ে গেল। পাঁচিলের তীর বৃষ্টি তাদের শহীদ করে দিল।
রাতের প্রথম প্রহর। ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন রিনির আব্বা। এসেই শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর আবার ডিউটিতে যেতে হবে।
তিনি খবর পেয়েছেন শহরের মুসলমান অধিবাসীরা ভয়ংকর কোন ষড়যন্ত্র করছে। ওদের চলাফেরা এবং হাবভাব মোটেই সুবিধের নয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এখন থেকে ওদের প্রতিটি বাড়িতেই নজর রাখতে হবে। সেভাবেই তিনি চারদিকে গোয়েন্দা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি শুয়ে পড়ার খানিক বাদে দরজার নক করল কেউ। এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল রিনি।
বাইরে একজন মুসলমান দাঁড়িয়ে আছে। চেনে তাকে রিনি। খ্রীস্টানরা তাকে ভীষণ পছন্দ করে।
দরজা খুলতেই লোকটি বলল, ‘আপনার আব্বা কোথায়? তাকে ডাকুন। গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আছে, এখুনি আপনার আব্বাকে তা জানানো দরকার’।
‘আব্বা তো এইমাত্র শুয়েছেন। রাতেই নাকি আবার বেরোবেন। তাকে তো এখন ডাকা যাবে না’।
‘আমার কথা বুঝতে চেষ্টা করুন। খুবই জরুরী সংবাদ, এখুনি তাকে বলা দরকার’।
‘আমাকে বলো, আব্বা উঠলেই তাকে আমি তা পৌঁছে দেবো’।
‘আজ রাতে কিছু মুসলিম যুবক ও যুবতী পাঁচিল ভেংগে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে’।
‘তুমি কি করে জানলে এ কথা?’
রিনির প্রশ্নে জবাবে লোকটি বললো, ‘আমি ওদের বন্ধু সেজে সব জেনে এসেছি। রাস্তার মোড়ে যে গরীব মুচিকে দেখতে পান সে আসলে মুচি নয়, সে সালাহুদ্দীনের একজন গোয়েন্দা। ওরই পরামর্শে যুবকরা এ পরিকল্পনা নিয়েছে’।
‘পাঁচিলের কোন দিকে আঘাত হানতে পারে সে ব্যাপারে বলেছে কিছু?’
‘আস্তাবলের পেছনে উত্তর দিকের ময়লা ফেলার পাশের দেয়াল স্যাতস্যাতে হয়ে আছে। ওখানে যে বড় গাছটা আছে সেখানে বেশ অন্ধকারও থাকে রাতে। ওখান দিয়েই ওরা প্রথমে চেষ্টা করবে বলেছে’।
‘তুমি এসব মুসলিম যুবকদের নাম জানো? কারা কারা আছে এ দলে না জানলে ওদের গ্রেফতার করবে কিভাবে?’
‘আমি সব জেনে এসেছি’।
লোকটি অভিযানকারীদের নাম বলর রিনির কাছে। বলল, ‘ওসমান এদের দলনেতা’।
ওসমানের নাম শোনা মাত্র রিনির ভেতরটা কেঁপে উঠল। কিন্তু মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘সালেমের ছেলে ওসমান তো! ঠিক আছে, আমি বলবো আব্বাকে’।
‘কিন্তু ওনি যদি আরো কিছু জানতে চান? আমি কি একটু পর আবার এসে ঘুরে যাবো?’
‘ঠিক আছে এসো’।
লোকটি বলল, ‘তারচে বরং আমি একটু বসি, যাতে উনি উঠলেই দেখা করতে পারি’।
‘আব্বা তো মাত্র শুয়েছেন, কতক্ষণ বসে থাকবে তুমি? তারচে বরং ঘুরেই আসো’।
কিন্তু লোকটা যেতে চাইছে না। পুরস্কার পাবার এই সুযোগ সে কিছুতেই হারাতে রাজি নয়। সে দরজার সামে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।
রিনি দেখলো এ তো মহা বিপদ। কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বললো, ‘এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কথা বললে আব্বার ঘুম ভেংগে যেতে পারে। চলো বাইরে থেকে হেঁটে আসি’।
এত বড় অফিসারের সুন্দরী মেয়ের সাথে একটু সময় কাটানোর লোভ সংবরণ করতে পারল না লোকটা। রিনি দরজা টেনে বাইরে বেরিয়ে আসতেই পোষা কুকুরের মত সে রিনির সাথে সাথে চলল।
হাঁটতে হাঁটতে একটা কুপের কাছে চলে এল ওরা। কুপটি গভীর করে খোঁড়া হয়েছিল। থামল রিনি। উঁকি দিয়ে বলল কুয়োর ভেতর।
মুসলমানদের গোপন তৎপরতার সংবাদ বলে যাচ্ছিল লোকটি। সেও গলা বাড়িয়ে চাইল কুয়োর ভেতর। রিনি দেহের সমগ্র শক্তি দিয়ে তাকে ধাক্কা দিল। সোজা কুয়োয় গিয়ে পড়ল তার দেহ। তার কলজে ফাটা চিৎকার ‘ধড়াম’ শব্দের সাথে শেষ হয়ে গেল।
রিনি ভীষণ খুশি। ওসমানের মৃত্যুর সংবাদ ও কুপের গহীনে ডুবিয়ে দিতে পেরেছে।
❀ ❀ ❀ ❀ ❀
এক ছুটে ওসমানের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছল রিনি। তার মায়ের সাথে আল নূরের প্রসঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করল। ওসমানের কথা জিজ্ঞেস করলে তার মা বললেন, ‘সেই যে সন্ধ্যায় বেরিয়েছে এখনও ফেরেনি’।
হয়ত অভিযানে চলে গেছে, ভাবল রিনি। বেরিয়ে এল ওসমানের বাড়ি থেকে।
তার আশংকা হলো অন্য কোন ‘সোর্স’ সেনাবাহিনীকে সংবাদটি দিয়ে থাকতে পারে। যেখানে দেয়াল ভাংগা হবে রিনি সেদিকে ছুটল। ওসমানকে সে বাঁধা দেবে। বলবে, তোমাদের আজকের অভিযানের কথা সবাই জেনে গেছে।
রিনি পাঁচিলের কাছে গিয়ে দেখল কেউ নেই। ও এদিক ওদিক চাইতে লাগল।
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ তাকে জাপটে ধরে অন্ধকারে নিয়ে গেল। লোকটি ক্রাকের একজন সেনা সদস্য। ও পিতার পরিচয় দিয়ে নিজের নাম বললো। রিনিকে ওখান থেকে চলে যেতে বললো সৈন্যরা।
কিন্তু ও যাবে না। ও বুঝতে পারছে ওসমানদের ধরার জন্যই সৈন্যরা এখানে এসে লুকিয়ে আছে।
রিনি সৈন্যদেরকে এখান থেকে যেতেও বলতে পারছে না। থাকতেও দিতে পারছে না। ওরা থাকলে ওসমানকে বাঁচানো কষ্ট হবে। কিন্তু ওযে যে কোন মূল্যে ওসমানকে বাঁচাতে চায়।
একজন সৈন্য বললো, ‘খবর মিথ্যে নয়। ওই যে ওরা আসছে’।
চমকে উঠল রিনি। চিৎকার দিয়ে বললো, ‘ওসমান ফিরে যাও’।
কমাণ্ডার ওর মুখ পেচে ধরে বললো, ‘মেয়েটা মনে হয় ওদের গুপ্তচর। ওকে বন্দী করো’।
কিন্তু সে সুযোগ আর পাওয়া গেল না। ওসমানরা এসে পড়েছে। ওরা লড়াই করার জন্য দাঁড়িয়ে গেল। পেছনে খ্রিষ্টান সৈন্য, সামনে ওসমানদের গ্রুপ। ওদের হাতে বর্শা, খঞ্জর এবং দেয়াল খোদাই করার যন্ত্রপাতি।
ওসমানের এ অভিযানে যুবকরা ছাড়াও দলে ছিল এগার জন যুবতী।
কমাণ্ডোর মধ্য থেকে একজন চিৎকার দিয়ে বললো, ‘মুজাহিদ, পালিয়ো না। প্রতিটি মেয়েকে রক্ষা করার জন্য একজন করে থাকো, বাকীরা লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়ো’।
দু’দলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হল। খ্রিষ্টানরা ছিল সংখ্যায় অধিক। কমাণ্ডো সদস্যরা একজন একজন করে শহীদ হতে লাগল।
যুদ্ধের মাঝে হঠাৎ হঠাৎ ধ্বনিত হচ্ছিল রিনির কণ্ঠ, ‘ওসমান পালিয়ে যাও। পালিয়ে যাও ওসমান’।
খুব বেশী সময় লাগলন না। অল্পক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি খ্রিষ্টানদের আয়ত্বে চলে এলো।
খ্রিষ্টান কমাণ্ডার বললো, ‘মেয়েদের মেরো না, ওদের জীবিত গ্রেফতার করো’।
লড়ে যাচ্ছে ওসমান। একজন খ্রীস্টান সৈনিক তরবারী নিয়ে এগিয়ে গেল তার দিকে। ওসমানের হাতে খঞ্জর।
আচম্বিত সৈন্যটার পিঠে খঞ্জর আমূল বিদ্ধ হল। মৃত সৈনিকের তরবারী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল রিনি। ওসমানের সাহায্যে এগিয়ে গেল দ্রুত। কিন্তু কয়েকজন সৈনিক দ্রুত ছুটে এসে ঘিরে ফেলল তাদের।
রিনি তরবারীটি এগিয়ে ধরল ওসমানের দিকে। তরবারী হাতে পেয়েই ওসমান প্রবল বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়ল ওদের ওপর। চোখের পলকে দুজন সৈন্য লুটিয়ে পড়ল মৃত্যুর কোলে।
রিনিও তার হাতের খঞ্জর ফেলে দিয়ে একটি তলোয়ার তুলে নিল। আক্রমণকারীরা মুহুর্তে সরে গেল নিরাপদ দূরত্বে।
এখানে ওখানে লড়ে যাচ্ছিল মুজাহিদরা। খ্রিষ্টান কমাণ্ডার পেছনে সরে পড়া মেয়েদের ধরার জন্য একটা গুপকে পাঠিয়ে দিল। ওরা এগিয়ে গেল মেয়েদের দিকে।
দুজন মেয়ে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ময়লার স্তূপের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল।
সেখান থেকে ওরা দেয়াল ঘেষে অন্ধকারে লুকিয়ে এক পা এক পা করে এগুলো খ্রিষ্টান কমাণ্ডার যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেদিকে।
কমাণ্ডার পাঁচিল থেকে হাত পাঁচেক দূরে একটা পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে যুদ্ধের অবস্তা পর্যবেক্ষণ করছিল। মেয়ে দুজন সন্তর্পনে এসে কমাণ্ডারের ঠিক পেছনে পৌঁছে গেল।
অল্পক্ষণের মধ্যেই নয়জন যুবতী ও এগারজন যুবকের দলটির ওপর আঘাত হানল খ্রিষ্টানরা। প্রথকে এগিলে গেল এগারজন যুবক। লড়াই করতে করতে ওরা সবাই শহীদ হয়ে গেল।
এবার এগিয়ে এল মেয়েরা। ধরা না দিয়ে তারাও ঝাপিয়ে পড়ল খ্রিষ্টানদের ওপর। দেখতে দেখতে ওদের সাতজন শহীদ হয়ে গেল।
ওসমান ও রিনি তখনো লড়ে যাচ্ছে একদল খ্রীষ্টানের সাথে। হঠাৎ একজন সৈনিকের তরবারীর আঘাত ঠেকাল সে নিজের তরবারী দিয়ে। এ সময় পাশ থেকে তাকে আঘাত করল আরেকজন।
রিনির হাত থেকে তরবারী ছুটে গেল। চিৎকার দিয়ে আহত রিনি এক দিকে কাত হয়ে পড়ে গেল।
রিনির চিৎকার শুনে ওসমান সামান্য সময়ের জন্য ঘাড় ফিরিয়ে ছিল সেদিকে। একটা তরবারী ওসমানের বুক এফোড় ওফোড় করে দিল। শহীদ হয়ে গেল ওসমান।
খ্রিষ্টান কমাণ্ডার তাকিয়েছিল ওসমানের পড়ন্ত দেহের দিকে।
ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকা যুবতী দুজন বিদ্যুৎ বেগে এসে ঝাপিয়ে পড়ল তার ওপর। এক সাথে তার পিঠে আমূল বসিয়ে দিল দুটো খঞ্জর। কমাণ্ডার কোনো রকম বাঁধা দেয়ার সুযোগই পেল না। তার আগেই দেহ থেকে প্রাণ বায়ু উড়ে গেল তার।
সব শেষ। বেঁচে এছে দু’জন আহত যুবতী। খ্রিষ্টান সৈন্যরা তাদের ঘেরাও করে ফেলল। একজন বলল, ‘অস্ত্র ফেলে দাও। যুদ্ধ শেষ। তোমাদের সবাই মারা পড়েছে। বাঁচতে চাইলে আত্মসমর্পন করো’।
যুবতী সৈনিকদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমরা অনেক আগেই আত্মসমর্পণ করেছি, তবে তোমাদের কাছে নয়, আল্লাহর কাছে। তোমরা সরে দাঁড়াও। আমাদের চলে যেতে দাও’।
কমাণ্ডার সঙ্গীদের বলল, ‘খবরদার, ওদের কেউ হত্যা করো না। ওদের নিরস্ত্র করে বন্দী করো। আমাদের জানতে হবে ওদের সাথে আর কারা কারা আছে’।
সৈন্যরা তাদের ঘেরাও সংকুচিত করে আনল। যুবতী দু’জন একজন তাকাল অন্যজনের দিকে। এরপর দু’জনই পলকে হাতের খঞ্জর নিজের বুকে বসিয়ে দিল। সৈন্যরা যখন তাদের ধরল, দেখা গেল দুজনই মারা গেছে।
আহত রিনিকে গ্রেফতার করল সৈন্যরা। তাকে নিয়ে আসা হল সেনা হেডকোয়ার্টারে। তার ক্ষতে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দেওয়া শেষ হলে একজন সেনা অফিসার এসে কামরায় ঢুকল।
‘তুমি পাঁচিলের পাশে কি করছিলে? ওখানে গিয়েছিলে কেন?’
রিনি তার এ প্রশ্নের কোন জবাব দিল না।
অফিসার আবার তাকে একই প্রশ্ন করলে তার জবাবে ও আবোল তাবোল বকতে লাগল।
ডাক্তার এগিয়ে এলেন অফিসারের কাছে। বললেন, ‘মেয়েটার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ওকে কোন প্রশ্ন করে লাভ হবে না’।
দূর্গের দেয়াল ভাংগার আশা শেষ হয়ে গেছে। শহীদ হয়ে গেছে অভ্যন্তরের মুসলিম কমাণ্ডো মুজাহিদরা। কিন্তু সুলতান দূর্গ পদানত করার সংকল্পে অটল।
বললেন, ‘আমরা আমাদের সর্বস্ব বাজী রেখেছি। কয়েকজন আত্মত্যাগী ভাইকে আমরা হারিয়েছি ঠিক, কিন্তু নিজেরা তো এখনো নিঃশেষ হইনি।
ত্যাগের পরীক্ষায় পাশ করতে পারলে বিজয় আমাদের হবেই। কারণ বিজয়ের মালিক আল্লাহ, আর আল্লাহ মোটেও দুর্বল নন। আমাদের ঈমানই আমাদের বিজয়ের গ্যারান্টি।
কেবল তো অবরোধের দ্বিতীয় দিন গেল, আগামী কালও সূর্য উঠবে, এবং তারপর দিন, তারপর দিনও। বিজয়ের আগ পর্যন্ত আমার আমাদের ধৈর্য ও ত্যাগের পরীক্ষা দিয়েই যেতে থাকবো।
প্রাসাদের ভেতর যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসলেন খ্রিষ্টান সম্রাটগন। একজন বললেন, ‘মানুষ যত হুশিয়ারই হোক একবার না একবার ভুল সে করেই। এবার যে ভুল সালাহুদ্দীন করেছে তার মাশুল তাকে দিতে হবেই’।
‘কি ভুল করেছে সে?’ প্রশ্ন করলেন অপর এক সম্রাট।
‘অতীতের প্রতিটি লড়াইয়ে সালাহুদ্দীন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। আমরা ঠিকমত প্রস্তুত হওয়ার আগেই বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে সে। কিন্তু এবার তাকে আমারা বাগে পেয়েছি। এবার তাকে মুখোমুখি লড়তেই হবে’।
অন্য এক সম্রাট বললেন, ‘আরে শুধু কি তাই? এবার আমরা যে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি সেটা বলবেন না?’
তিনি সুবিধাজনক অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, ‘আমাদের যে ফৌজ বাইরে আছে তাদেরকে আমরা দুভাবে ভাগ করে নেবো। এক ভাগ থাকবে সালাহুদ্দীনের ফৌজের চোখের সামনে, আরেক ভাগকে সরিয়ে নেবো দূরে।
এরপর সালাহুদ্দীন যখনি দূর্গে হামলা করবে তখন পাঁচিলের ওপর থেকে তার মোকাবেলা করবে আমাদের ভেতরের ফৌজ।
সালাহুদ্দীনের চোখের সামনে বাইরে আমাদের যে ফৌজ আছে ওরা তখন পাশ থেকে আঘাত হানবে সালাহুদ্দীনের বাহিনীর ওপর। ফলে সে সেদিকেও মনযোগ দিতে বাধ্য হবে। অন্যান্য বারের মত বেপরোয়াভাবে একদিকে আর ছুটে যেতে পারবে না।
এরপর আমরা চলবো। সেই চাল, যা সে এতদিন আমাদের ওপর চেলেছে। সালাহুদ্দীন ভাবতেও পারবে না আমাদের আরেকটা বাহিনী তাদের ঠিক পেছনে ওঁৎ পেতে আছে।
দু পক্ষের সাথে লড়াই করে তারা যখন ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়বে তখন অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসবে আমাদের মূল বাহিনী।
তারা অতর্কিত পেছন থেকে ঝাপিয়ে পড়বে সালাহুদ্দীনের সেই ক্লান্ত শ্রান্ত বাহিনীর ওপর। সে হামলার মোকাবেলা করার সাধ্য সালাহুদ্দীনের কিছুতেই হবে না’।
ফ্রান্সের সম্রাট বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। জীবনে এমন সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। সত্যি, এবার ওকে বাগে পাওয়া গেছে’।
জামানীর সম্রাট বললেন, ‘ঠিক, বার বার ঘুঘু এসে খেয়ে যেতে দেবো নাকো আর ধান’।
এরপর সেনাপতিদের নিয়ে বসলেন সম্রাটগণ। তাদেরকে বললেন এব পরিকল্পনার কথা। সেনাপতিরা একমত হলেন সম্রাটদের এ প্রস্তাবের সাথে।
সম্রাটদের সামনে তারা সম্মিলিতভাবে প্রতিজ্ঞা করল, ‘কিছুতেই আমরা এ দূর্গ সালাহুদ্দীন আইউবীর হাতে তুলে দেবো না। পবিত্র যিশুর কসম, এ দেহে প্রাণ থাকতে সালাহুদ্দীনের সাধ আর পূরণ হতে দেবো না আমরা’।
একদিকে সালাহুদ্দীনের সংকল্প আর অন্য দিকে খ্রিষ্টানদে প্রতিজ্ঞা। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা কইতে রাজি নয়। কেউ পিছু হটতেও রাজি নয়। এক নাজুক ও জটিল সময় উভয়ের সামনে। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ও সংঘাতপূর্ণ হতে পারে এ ধারণাও নে কারো।
সবাই অপেক্ষা করতে থাকল, দেখা যাক আগামী কাল কি ঘটে?