বারজেস ঝানু গোয়েন্দা হলেও নিয়মিত লড়াইয়ের ব্যাপারে তার তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না। তবু তিনি এ অভিযানের নেতৃত্ব নিলেন। কারণ, তিনিও মনে করছিলেন মুসলমানরা দুর্বল নয় একথা বুঝানোর জন্য এ অভিযানের যে প্রয়োজনীয়তার কথা যুবকরা বলেছে, সে কথায় যুক্তি আছে।
কি করতে হবে তিনি সবাইকে বুঝাতে লাগলেন। দু’টি সমস্যা সামনে এলো। প্রথমতঃ আগুন লাগানো এবং দ্বিতীয়তঃ প্রাসাদ আক্রমণ করা।
সিদ্ধান্ত হলো, এ অভিযানের সূত্রপাত ঘটাবে মেয়েরা। তারা সেখানে গিয়ে সেন্ট্রির কাছে কোন উর্ধতন সেনা কর্মকর্তার খোঁজ করবে। সেন্ট্রি নিশ্চয় তাদের সন্দেহ করবে না। সেই ফাঁকে তাকে হত্যা করতে হবে মেয়েদের।
এই হত্যার কাজটা যদিও মেয়েদের জন্য কঠিন হবু এটা তাদেরই করতে হবে। কারণ পুরুষরা সেখানে গেরে সেন্ট্রি অবশ্যই তাদের সন্দেহ করবে। হত্যার পর তারাসেই খড়ের গাদার কাছে পৌঁছবে এবং সেখানে আগুন লাগাবে।
এরপর আলোচনা হলো প্রাসাদ আক্রমণ সম্বন্ধে। বারজেস এবং ইমাম সাহেবের পরামর্শ হল এ কাজে নয় জনের বেশী লোক নেওয়া ঠিক হবে না। এতে লোকের নজরে পড়ার যেমন ভয় আছে, তেমনি ধরা পড়ার আশংকাও রয়েছে।
মেয়েদের প্রসঙ্গে ওসমান বললো, ‘আমার ছোট বোন আল নূর অভিযানে অংশ নেবে’।
আরেক যুবক তার বোনের কথা বললো। অপর ছ’জনের কোনো বোন নেই। সিদ্ধান্ত হ’ল দু’বোন দুইজন বান্ধবীকে সঙ্গে নেবে।
মেয়েদেরকে কর্ম পরিকল্পনা বুঝানোর দায়িত্ব বারজেসকে দেওয়া হল।
আলোচনা শেষে ইমাম সাহেব প্রথমে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন। এরপর যুবকরা একজন একজন করে বাইরে বেরিয়ে গেল।
বারজেস বেরুলেন সবার শেষে। টুকরিটা মাথায় তুলে নিলেন তিনি। হাঁটতে লাগলেন মাথা নুইয়ে। ধীরে ধীরে। তাকে দেখে মনে হয় পৃথিবীর সকল দুঃখের বোঝা মাথায় নিয়ে একটা লোক এগিয়ে যাচ্ছে।
❀ ❀ ❀ ❀ ❀
ওসমান একাকী বাড়ির পথ ধরল। তার বাড়ি এখনও বেশ খানিকটা দূরে। হঠাৎই অন্ধকার ফুঁড়ে তর সামনে এসে দাঁড়াল কেউ।
ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল ওসমান। অন্ধকারে শোনা গেল কারো খিলখিল হাসির শব্দ।
ছায়মূর্তি এসে দাঁড়াল ওসমানের পাশে। ওসমান দেখল একটি নারীর মূর্তি।
ওসমান ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, ‘কে?’
ছায়ামূর্তি ওসমানের আরো কাছে সরে এসে বলল, ‘আমি’।
ওসমান তখনো তাকে চিনতে পারেনি। বলল, ‘আমি কে?’
রিনি আলেকজাণ্ডার মুখের কাপড় সরিয়ে বলল, ‘ওসমান, ভূত না আমি রিনি’।
রিনি আলেকজাণ্ডার পাশের বাড়ির সেই খ্রিষ্টান যুবতী যার সাথে আল নূরের বন্ধুত্ব। আশপাশের বাড়িগুলোর চাইতে ওসমানদের বাতেই ওর যাতায়াত বেশী। যখন তখন হুটহাট চলে আসে।
ভাই বোন দু’জনের সাথেই রিনির খোলামেলা সম্পর্ক। বিশেষ কাজে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে ওসমান চাইছে, ও আর এ বাড়িতে না আসুক। কিন্তু সরাসরি নিষেধ করে সন্দেহের পাত্র হতে চায় না বরে ইদানিং ওসমান তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।
রিনি সব সময় ওসমানের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে। এতদিন এ নিয়ে ওসমানের মনে কোন প্রশ্ন দেখা দেয়নি। কিন্তু মুজাহিদের কাতারে যেদিন নাম লেখালো সেদিন থেকেই তার মনে ভয় ঢুকল, মেয়েটা গোয়েন্দা নয়তো?
কখনো তার মনে হতো এ খ্রিষ্টান মেয়েটা তার নৈতিকতা নষ্ট করতে চাইছে নাতো? তার জাতীয় চেতনাবোধ বিনাশ করার জন্য কি একে তার পিছনে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে?
রিনিকে চিনতে পেরে মৃদু সৌজন্যের হাসি উপহার দিয়ে কিছু না বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইল ওসমান। সামনে একে পথ রোধ করে দাঁড়াল রিনি।
একজন খ্রিষ্টান যুবতীর সাথে কথা বলছে ওসমান, ধরা পড়লে শাস্তি পাবে, এমন কোন আশংকা নেই। বরং একজন সন্দেহভাজন মুসলিম যুবক এক যুবতীর ফাঁদে পা দিয়েছে ভেবে ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা খুশিই হবে।
থেকে গেল ওসমান। বললো, ‘আমার একটু তাড়া আছে রিনি’।
‘তোমর কোন তাড়া নেই’। কলকলিয়ে উঠল রিনির কণ্ঠ। ‘এত সহজে আমাকে ছাড়াতে পারবে?’
‘তোমাকে ছাড়ানোর কথা তো বলিনি!’
‘মিথ্যে বলো না ওসমান’। রিনির কণ্ঠে অভিমানের সুর।
‘এখন তোমাদের বাড়ি থেকেই আসছি। তোমার বোন স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে ‘তুমি আর এসো না। ভাইয়া রাগ করেন’। কেন ওসমান, এ কথা তো তুমিই আমায় বলতে পারতে!’
ওসমান নিশ্চুপ। বোনটা খুব তাড়াহুড়া করেছে। কি জবাব দেবে তাই ভাবছে ওসমান।
তাকে নিরব থাকতে দেখে রিনি বললো, ‘বর তো কেন তোমাদের বাড়ি যাব না?’
এসব কথা বলার বা শোনার সময় ওসমানের হাতে নেই। তার হৃদয়ে ঝড় বইছে। এক অন্ধ আবেগ পিষে মারছে তার অন্তর। কি জবাব দেবে ভেবে পেল না। হৃদয়ের সত্যি কথাটাই মুখ ফসকে বেরিয়ে এল।
‘আমাদের বাড়িতে আসতে কেন তোমায় নিষেধ করেছি জানি না। শোন রিনি, আমরা একজন আরেকজনকে যতই ভালবাসি তবুও আমরা পরস্পর দু’টি শত্রু জাতির অন্তর্ভূক্ত।
তুমি ব্যক্তিগত ভালবাসার কথা বলবে। আমি বলবো জাতীয় চেতনাবোধের কথা। ক্রুশ এবং কোরআন কখনো এক হতে পারে না।
এটা আমার দেশ। তোমর জাতি এখানে কি করছে? তোমার জাতির শেষ ব্যক্তিটি যতক্ষণ পর্যন্ত এখানে থাকবে আমাদের দু’জনের মধ্যে প্রেম তৈরী হতে পারে না। আমি আমার মনের কথাটাই তোমাকে বললাম’।
‘তা হলে আমার হৃদয়ে কি আছে তাও শুনে নাও। আমার হৃদয়ে রয়েছে তোমার জন্য ভালবাসা। ক্রুশ বা কোরআন সে ভালবাসার অন্তরায় হতে পারবে না।
তোমাকে না দেখলে আমার ভাল লাগে না। তোমাকে হাসিখুশি দেখলে আমার মন আনন্দে ভয়ে উঠে। ওসমান, তোমাদের বাড়িতে যেতে আমাকে নিষেধ করলে তা দু’জনের কারুর জন্যই ভাল হবে না’।
‘ভয় দেখাচ্ছো? তা দেখাতেই পার। কারণ তুমি যে শাসক জাতির মেয়ে’।
‘আমার মনে শাসকের অহমিকা থাকলে এতক্ষণ তুমি এখানে থাকতে না। থাকতে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। তুমি কি ভেবেছো তুমি কি করছো আমি কিছুই জানি না?
বল তো তোমার গোপন তৎপরতার কথা বলে দিই। আমার জাতি এবং দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য যে অস্ত্রসম্বার তোমার ঘরের মাটির নীচে লুকিয়ে রেখেছ সে খবর কি তোমায় বলবো? আল নূরকে তুমি সামরিক ট্রেনিং দিয়েছ। তোমার সঙ্গীদের অনেককেই আমি চিনি। তুমি জান না ওসমান তোমার এবং জেলের মাঝে আমিই এখন বাঁধা হয়ে আছি।
তুমি জান কে আমার পিতা। কতবার তিনি বলেছেন, ‘ওসমানকে গ্রেফতার করা জরুরী হয়ে পড়েছে’।
প্রতিবারই আমি অনুনয়-বিনয় করে বলেছি, ‘ওসমানের বোন আবার বন্ধু। তা ছাড়া ওর পিতার একটা পা নেই’।
আব্বা আমায় শাসিয়ে বলেছেন, ‘ওদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো। মুসলমানরা ভালবাসার পাত্র নয়’।
আমি আমার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। এ জন্য তার আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারছেন না। নইলে কবেই তুমি অন্ধকার প্রকোষ্ঠ ঢুকে যেতে’।
রিনির কথা শুনে ওসমান পাথরের মত জমে গেল। তার ঠোঁট দু’টো যেন কেউ শক্ত আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে। সে কিছু বরতে চাইল, কিন্তু কিছুতেই ঠোঁট দু’টো আলাদা করতে পারল না।
রিনির চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রুর ফোটা পড়তে লাগল। গলা বসে এল তারও। আর কোন কথা না বলে সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
ওসমান আবারও কথা বলতে চেষ্টা করল, কিন্তু এবারও তার গলা দিয়ে কোন স্বর বের হলো না।
সূর্য ডুবেছে অনেক আগে। জেঁকে বসে আছে রাতের আঁধার। পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ওরা দুই যুবক যুবতী। কারো মুখে কোন কথা নেই।
ওসমান বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর যখন সম্বিত ফিরে পেল রিনিকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। সে এক পা এগুতেই রিনি আবার তার সামনে এসে তার পথ রোধ করে দাঁড়াল।
পলকে দু’জনের মাঝের সব ব্যবধান ঘুচে গেল। ওসমানের বুকের সাথে মিশে গেল রিনি। ওর দু’টো হাত ওসমানের কোমর পেঁচিয়ে ধরলো। ওর শরীরের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ল ওসমানের চারপাশে। দু’জনের নিঃশ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। ওসমানের গাল স্পর্শ করেছে রিনির রেশম কোমল চুল।
ওসমান মুক্ত হবার চেষ্টা করতেই রিনি ছেড়ে দিল তাকে।
‘আমায় মুক্তি দাও রিনি’। ওসমানের বিধ্বস্ত কণ্ঠ। ‘আমায় পাথর হতে দাও। আমার আর তোমার পথ এক নয়। দু’জন কখণও একত্রে চলতে পারবো না। তোমার বাপ-মা যেমন এটা মেনে নেবে না তেমনি আমারও। আমরা নিরূপায় রিনি। আমাকে তুমি ক্ষমা করো, তোমার প্রেম-বন্ধন থেকে মুক্তি দাও আমায়’।
‘ওসমান, এই কি তোমার মনের কথা? তুমি কি পারবে তোমার হৃদয়ের গোপন কুঠরীতে আমার যে ছবি আকাঁ আছে তা মুছে ফেলতে? বল, পারবে?’
‘এ ছাড়া আমি আর কি করতে পারি রিনি! আবেগ দিয়ে তো জগত চলে না। বাস্তবতাকে অস্বীকার করবো সে শক্তি আমার কোথায়?’
‘প্রেম উৎসর্গ চায়’। রিনির কণ্ঠে মাদকতা। ‘বল কি ত্যাগ চাও তুমি আমার কাছে?’
‘এ মুহুর্তে তোমার কাছে আমার চাওয়ার কিছু নেই। শুধু চাই, আমাকে ভুলে যাও, ক্ষমা করো আমাকে’।
‘অসম্ভব। তুমিই আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ মনের মানুষ। তোমাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়।
তবে তুবি চাও বা না চাও, আমি কথা দিচ্ছি, আজ থেকে তোমার যা ইচ্ছে তুমি করে বেড়াও, এতে তোমার যে বিপদ আসবে সে বিপদ আমার। তোমায় আমি কখনও গ্রেফতার হতে দেব না’।
ওসমান গভীর হতাশা ছড়িয়ে বলল, ‘আর বাস্তবতা আমাকে বলছে, ওসমান, এ মাদকতাময় দেহ আর রেশম কোমল চুলের ফাঁকে তুমি কোনদিন জড়াতে পারো না। এ অনুচিত, এ অসম্ভব।
আর তাই আমিও প্রতিজ্ঞা করছি, আমার মনে কি আছে তা তোমাকে কখনোই বলবো না। প্রাণ গেলেও আমি আমার জাতির শত্রুপক্ষের কোন ঘরের কোন যুবতীর প্রেমের ফাঁদে পা দেবো না’।
‘ঠিক আছে ওসমান, তোমার প্রতিজ্ঞা তোমার কাছে জমা থাক। আমার ভালবাসার জন্য আমি কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারি আজ থেকে সে পরীক্ষায় আমি দিয়ে যাবো।
যাও ওসমান, তোমার খুব তাড়া। তোমাকে অনেকক্ষণ আটকে রেখেছি বলে দুঃখিত। তবে তুমি চাও বা না চাও তোমার বাড়ি আসা আমি কখনোই বন্ধ করবো না’।
পথ ছেড়ে দাঁড়াল রিনি। দ্রুত পা চালাল ওসমান। তার অনেক সময় এরই মাঝে নষ্ট হয়ে গেছে।
ওসমানের গমন পথের দিকে অনেকক্ষণ বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রিনি। ওসমানের পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে গেলে নিজেও বাড়ির দিকে হাঁটা দিল রিনি।
❀ ❀ ❀ ❀ ❀
ওসমান সালেম বাড়িতে পৌঁছে দেখল বারজেস বসে আছেন।
অন্দরে ঢুকে পিতা-মাতা এবং আল নূরকে সব কথা খুলে বললো। বললো, ‘আমাদের সাথে আল নূরকেও যেতে হবে’।
ওসমানের পিতার একটা পা নেই। যৌবনে খ্রিষ্টানদের সাথে যুদ্ধে তিনি তার পা টা হারিয়েছেন। তার দুঃখ ছিল আর কোন দিন জেহাদে যেতে পারবেন না বলে।
সব শুনে তিনি ওসমান বললেন, ‘তোমরা এক বিপজ্জনক অভিযানে যাচ্ছ। আমাকে যেন শুনতে না হয় তুমি বন্ধুদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছ।
এ অভিযানে ধরা পড়ার ভয় সবচে’ বেশী। তুমি ধরা পড়লে যদি তোমার সঙ্গীরা পালিয়ে আসতে পারে তবে জীবন দেবে কিন্তু সঙ্গীদের নাম বলবে না।
আমি সুলতান সালাহুদ্দীনের সেনাবাহিনীর জন্য তোমাকে বড় করেছি। ভেবেছিলাম, আল নূরের বিয়ের কাজটা সেরে তোমাকে বিদেয় করবো। যাও। আমার হৃদয় শান্ত করো। আবারো বলছি, শোন, কেউ যেন আমায় বলতে না পারে ওসমানের দেহে সালেমের রক্ত নেই’।
সালেম আল নূরকেও এ অভিযানে অংশ গ্রহণের জন্য সানন্দে অনুমতি দিলেন।
ওসমান বললো, ‘বারজেস বৈঠকখানায় রয়েছেন। এ অভযানের নেতৃত্ব তিনি দেবেন’।
ওসমানের পিতা সালেম বরজেসের কাছে চলে গেলেন।
‘আল নূর!’ ওসমান বললো, ‘এ অভিযানে যেতে পারে তোমার এমন দু’জন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে এসো’।
বেরিয়ে গেল আল নূর। খানিক পর ফিরল দু’জন বান্ধবীকে নিয়ে। ততোক্ষণে ওসমানের সঙ্গীর বোনও এসে গেছে। এরপর একজন একজন করে এসে পৌঁছল সাতজন যুবক।
কোন পথে যেতে হবে মেয়েদেরকে বুঝিয়ে বললেন বারজেস। বললেন, ‘পথে সেন্ট্রি তোমাদেরকে বাঁধা দেবে। তখন তোমরা সেন্ট্রিকে উপরে যাবার পথ জিজ্ঞেস করে বলবে, সম্রাট রিমাণ্ড ডেকে পাঠিয়েছেন।
সেন্ট্রি বলবে, এটা সম্রাট রিমাণ্ডের কাছে যাবার পথ নয়।
তোমরা বলবে, তাহলে কোন দিকে? এভাবে তার সাথে আলাপ জমিয়ে তাকে ঘিরে ফেলবে।
চারজনের একজন থাকবে চাকরানী। মাথায় রেশমী রুমালে ঢাকা থাকবে একটি ঝাকা। ঝাকায়থাকবে জ্বালানী। সেন্ট্রিকে ঘিরে ফেলার পর এক ফাঁকে তাকে মেরে ফেলতে হবে। আগুন লাগাবে তারপর।
অনেকগুলো ঘোড়ার পায়ে বাধা রশি একত্রিত করে একেকটা খুটির সাথে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ রশি কেটে দিতে হবে।
রশি কাটার পর কয়েকটা ঘোড়াকে খঞ্জর দিয়ে আঘাত করবে। এরপর সুযোগ পেলে উটের রশিও কেটে দেবে’।
বারজেস মেয়েদের পোশাক পাল্টে দিলেন। একজনকে চাকরানী সাজিয়ে তারহাতে মুখে ছাই মেখে দেওয়া হল।
এরপর বারজেস ওসমান এবং তার সঙ্গীদের সাথে কথা বললেন। তাদেরকে অভিযানের সমস্ত পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিলেন।
প্রত্যেককে একটি করে খঞ্জর দেওয়া হল। প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। অনেক সময় কেটে গেছে। ওসমানের সঙ্গীরা ছটফট করতে লাগল।
বারজেস বললেন, ‘এখনও শহর জেগে আছে। শহর ঘুমুলেই কেবল জেগে উঠে প্রাসাদের পানশালা’।
রাত আরেকটু গভীর হলো। কমে এলো শহরের কোলাহল। এক সময় বারজেস বললেন, ‘এবার উঠা যায়’।
একজন একজন করে বেরিয়ে পড়ল সবাই। ছেলে এবং মেয়েদের পথ ভিন্ন। ওরা যে যার পথে পা বাড়াল।
আগুন লাগানোর জন্য মেয়েদেরকে একটা নির্দিস্ট সময় ঠিক করেদেয়া হল। সে মুহুর্তে ওসমানরা থাকবে প্রাসাদের কাছে।
বিপজ্জনক অভিযান। সামান্য ভুল বা সময়ের ঈষৎ হেরফের হলেই অভিযান ব্যর্থ হয়ে যাবে। ওদের ভাগ্যে ঘটবে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু।
মেয়েদের কাজ ছিল আরও বিপজ্জনক। ধরা পড়লে ওদের কি অবস্থা হবে কল্পনাও করা যায় না। আল নূর বললো, ‘ধরা পড়লে আমরা আত্মহত্যা করবো। জীবিত থেকে কিছুতেই বেঈমানদের ভোগের সামগ্রী হবো না’।