» » সালাহুদ্দীন আয়ুবীর কমান্ডো অভিযান

বর্ণাকার

কাফ্রী দু’জন মেয়েটাকে নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেল। এখন আর ধরা পড়ার ভয় নেই। থামল ওরা। আরেকবার পালাতে চাইল মেয়েটা।

কাফ্রী বলল, ‘পালানোর বৃথা চেষ্টা করছ। পালাতে পারলেও এ বিজন মরু থেকে যেতে পারবে না। আমরা তোমার ইজ্জত নষ্ট করতে চাই না।’

অবশ্য এখন পর্যন্ত ওরা সে চেষ্টা করেনি। আশ্চর্য হল উম্মে আমারা।

তার মাদকতাময় দেহ ওদের আকর্ষণ করেনি। যে দু’জন মারা গেছে তাদের একজন তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে নিজেকে কষ্টে না ফেলার জন্য আবদার করেছিল। ও জিজ্ঞেস করল, ‘আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?’

ওরা বলল, ‘তুমি হবে আকাশের দেবতার রাণী।’

ওরা আমারার চোখ বেঁধে ঘোড়ায় তুলে নিল। পালানোর চেষ্টা করা বৃথা। ও আর মুক্ত হবার চেষ্টা করল না, ঘোড়ায় বসে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে লাগল।

এক জায়গায় থেমে ওকে পানি পান করান হল। অনেকক্ষণ পর বাতাসের শীতল স্পর্শ অনুভব করল ও। রাত হয়েছে, ভাবল ও। দীর্ঘ পথশ্রমে ও ক্লান্ত শ্ৰান্ত। ব্যথায় শরীর ভেঙে যাচ্ছে। ভয়ে আতঙ্কে চিন্তা শক্তি হারিয়ে ফেলছে।

ঘোড়া থামল। ভেসে এল চার পাঁচজন নারী পুরুষের কণ্ঠ। পথে কাফ্রীরা ওর সাথে আরবীতে কথা বলেছে। এখন ওদের ভাষা বোঝা যাচ্ছে না। ওরা ওর চোখের বাঁধন খুলল না।

বোবা হয়ে গেছে উন্মে আমারা। এক ব্যক্তি ওকে পাল্কীতে তুলে দিল। শুরু হল দ্বিতীয় যাত্রা।

দফের শব্দের সাথে ভেসে এল নারী কণ্ঠের গান। গানের ভাষা ও বুঝতে পারল না। সুরে এক মোহময় আবেশ।

আতঙ্ক বেড়ে গেল ওর। রাতের নিঃশব্দ প্রকৃতিতে এক মাতাল করা আবহ সৃষ্টি হল। উম্মে আমারা পালকি থেকে লাফিয়ে পালাতে চেয়েছিল, চেয়েছিল এরা ওকে মেরে ফেলুক। কিন্তু সাহস হল না।

ওর মনে হল এরা মানুষ নয়, ভিন গ্রহের অন্য কোন শক্তি। নিজের ইচ্ছায় সে এখন কিছুই করতে পারবে না।

বেহারারা সিঁড়ি ভাঙছে। প্রায় ত্ৰিশটা সিঁড়ি অতিক্রম করে সমতল ভূমিতে চলতে লাগল ওরা। থামল বেহারারা। কাঁধ থেকে পাল্কি নামাল।

চোখের বাঁধন খুলে একজন চোখের ওপর হাত রাখল। ধীরে ধীরে ফাঁক হল আঙ্গুল। ঝাঁপিয়ে পড়ল আলো। হাত সরে গেল। ও দাঁড়িয়ে আছে হাজার বছরের এক পুরনো বাড়িতে।

বাড়িটি পুরোনো হলেও আলোয় ঝলমল করছে বিরাট হলঘর। প্রাচীরের সাথে আটকানো লাঠির মাথায় মশাল জ্বলছে। দফ বাজছে। ভেসে আসছে নারী কণ্ঠের গান। কক্ষের বাতাসে অনাঘ্ৰাত সুবাস। এ যেন এক স্বপ্নপুরী।

সামনে তাকাল ও। উঁচু বেদী। আট দশটি সিঁড়ি রয়েছে। বেদীর ওপর অবাক করা এক পাথরের মূর্তি।

মাথা এবং মুখ বিশাল। থুতনির ঈষৎ নিচে গলা, ঘাড়। থুতনি থেকে মাথা পর্যন্ত উচ্চতা দু’জন মানুষের সমান। দাঁতের মাড়ি দেখলে মনে হয় মূর্তিটি হাসছে। হা করা মুখ। একজন মানুষের মাথা সে পথে ভেতরে ঢুকে যেতে পারে অনায়াসে।

মূর্তির দু’কানে গোঁজা লাঠির মাথায় মশাল। দু’হাত লম্বা চোখ। এক সময় চোখ দুটি জ্বলে উঠল। স্বচ্ছ নীল আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ল কক্ষে। বদলে গেল গানের সূর।

মূর্তির মুখের ভেতর আলোকিত হয়ে উঠল। তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল দু’জন লোক। পরনে আজানুলম্বিত জুব্বা। লোক দুটো কাল। মাথায় রং বেরঙের পালকের মুকুট।

চত্বর থেকে নীচে নামার তিনটে সিঁড়ি। লোক দুটো সিঁড়ির দুপাশে দাঁড়িয়ে পড়ল।

মূর্তির মুখ থেকে বেরিয়ে এল আরেকজন। বয়স্ক মানুষ, পরনে লাল জুব্বা। মাথায় মুকুট। দু’কাঁধে ফনা ধরে কুণ্ডুলি পাকিয়ে আছে দু’টো কাল সাপ।

বৃদ্ধ এ গোত্রের পুরোহিত। মোহাবিষ্টের মত দাঁড়িয়ে আছে উম্মে আমারা।

বৃদ্ধ সিঁড়ি ভেঙে নেমে এল। হাটু গেড়ে বসল মেয়েটার কাছে। ওর দু’হাত নিজের হাতে নিয়ে চুমো খেল। অনুচ্চ কণ্ঠে বলল, ‘তুমি ভাগ্যবতী। আমাদের দেবতা তোমাকে পসন্দ করেছেন। তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ।’

উম্মে আমারা কেঁদে বলল, ‘আমি দেবতা বিশ্বাস করি না। তোমরা যে দেবতাকে মানো তার দোহাই, আমায় ছেড়ে দাও। আমাকে এখানে কেন এনেছ?’

‘এখানে যে আসে প্রথম প্রথম সে এ কথাই বলে। যখন এ পবিত্র স্থান সম্পর্কে জানতে পারে আর যেতে চায় না।’

তুমি মুসলমানদের খলিফার প্রেমিকা, কিন্তু পৃথিবীর রাজা বাদশা এবং দেবদূতরা যার সামনে মাথা নোয়ায় তিনি তোমায় পসন্দ করেছেন। তুমি স্বর্গে এসেছ।

জুব্বার ভেতর থেকে একটা ফুল নিয়ে পুরোহিত মেয়েটার নাকের সামনে তুলে ধরল। উম্মে আমারা হারেমের রাজকুমারী। বিভিন্ন আতর গোলাপের গন্ধের সাথে পরিচিত। এ ফুলের ঘ্ৰাণ তার কাছে নতুন মনে হল। হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে গেল ফুলের সুবাস। তার দৃষ্টির পরিবর্তন ঘটল। বদলে গেল অভিব্যক্তি।

ফুলটা সরিয়ে নিয়ে পুরোহিত বলল, ‘দেবতার দেয়া উপহার।’

হাত প্রসারিত করল উম্মে আমারা। পুরোহিতের ফুল ধরা হাত টেনে আবার নাকের কাছে নিয়ে এল। জড়ানো কণ্ঠে বলল, ‘চমৎকার উপহার। আমায় দেবেন না?’

‘তুমি এ উপহার খুশি মনে গ্রহণ করছ?’ পুরোহিতের ঠোঁটে মৃদু হাসি।

‘হ্যাঁ, আমি এ উপহার আনন্দের সাথেই গ্রহণ করছি।’

ও আবার ফুল শুকল। আবেশে বন্ধ হল ওর চোখ দু’টো।

‘তুমি দেবতার ফুল গ্রহণ করেছ, দেবতাও তোমায় গ্রহণ করেছেন!’ পুরোহিত বলল, ‘এতক্ষণ তুমি কোথায় ছিলে?’

পুরোহিতের দিকে তাকাল মেয়েটা। স্মরণ করার চেষ্টা করছে। মাথা ঝুকিয়ে বলল, ‘এখানেই তো ছিলাম, নাকি অন্য এক কোথাও ছিলাম, কি জানি, কোথায় ছিলাম মনে করতে পারছি না।’

‘কে তোমাকে এখানে এনেছে?’

‘কেউ না, আমি নিজেই এসেছি।’

‘তুমি ঘোড়ায় চড়ে আসনি?’

‘না, আমি উড়ে এসেছি।’

‘আসার পথে বিজন মরু, পাহাড় আর বন জঙ্গল পড়েনি?’

‘না তো! চারদিকে ছিল সবুজের সমারোহ।’

‘তোমার চোখ বেঁধে দেয়া হয়েছিল?’

‘না, না, আমার চোখ খোলাই ছিল? পথে কত রঙবেরঙের সুন্দর সুন্দর পাখী, ফুল, প্রজাপতি দেখেছি।’

পুরোহিত তারপর কি যেন বলল, উম্মে আমারা বুঝতে পারল না। উন্মে আমারা দেখল তার চারদিক থেকে এগিয়ে আসছে চারটি মেয়ে।

ওরা তার কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসল। তারপর হাত দিল উম্মে আমারার গায়ে। মেয়েগুলো তার দেহের সব কাপড় খুলে নিল। উম্মে আমারা বিবস্ত্র হয়ে পড়ল।

মৃদু হেসে উন্মে আমারা বলল, ‘দেবতা এভাবে আমাকে পসন্দ করবেন?’

‘না, তোমাকে দেবতাদের কাপড় পরানো হবে।’

মেয়েরা তার কাঁধের উপর চাদর বিছিয়ে দিল। কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে গেল সে চাদরে।

চাদরের মাথায় বেঁধে দেয়া হল রঙিন ফিতা। উম্মে আমারার সোনালী চুল আঁচড়ে কাঁধে ছড়িয়ে দিল একটা মেয়ে।

পুরোহিত মুচকি হেসে ঘুরে মূর্তির দিকে হাঁটা দিল। মেয়েরা উন্মে আমারার হাত ধরে পুরোহিতের পিছু নিল।

রাজকুমারীর মত এগিয়ে চলল ও। কোন দিকে তাকাচ্ছে না।

গানের সুর আরও আকর্ষণীয় মনে হল তার কাছে। সিঁড়িতে পা রাখল ও। মূর্তির মুখে প্রবেশ করল পুরোহিত। সিঁড়ি পেরিয়ে ঢুকে গেল মূর্তির ভেতরে।

মূর্তির কাছে এসে থেমে গেল মেয়েরা। মূর্তির গলা থেকে সিঁড়ি নীচের দিকে নেমে গেছে। ও সিঁড়ি ভেঙে একটা অপ্রশস্ত কক্ষে এল।

সুবাসিত কক্ষে আলো জ্বলছে। দেয়াল এবং ছাদ গাছের পাতা ফুলে ঢাকা। একপাশে সুন্দর সোরাহী এবং গ্লাস।

পুরোহিত সোরাহী থেকে দু’টো গ্লাস ভরল। উম্মে আমারাকে একটা দিয়ে নিজে অন্যটা ঠোঁটে ছোয়াল।

‘দেবতা কখন আসবেন?’ প্রশ্ন করল ও।

‘তুমি এখনও তাকে চিনতে পারনি? তোমার সামনে কে দাঁড়িয়ে আছেন?’

তার পায়ের কাছে বসে ও বলল, ‘হ্যা, চিনতে পেরেছি। তুমি উপরের সে লোক নও। তুমি দেবতা। তুমি কি আমায় গ্রহণ করেছ?’

‘হ্যাঁ, আজ থেকে তুমি আমার স্ত্রী।’

‘বাবার কাছে শুনেছি, পুরোহিত মেয়েটাকে ফুল শুকতে দেয়। সে তখন নিজের পরিচয় ভুলে যায়। কোত্থেকে এসেছে, কিভাবে আনা হয়েছে কিছুই মনে থাকে না। পুরোহিত যা বলে তাই করে। নিকৃষ্ট জিনিসও তার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়। পুরোহিতের সাথে মাটির নীচের কক্ষে থাকতে হয় তিন দিন। এর বেশী আমি আপনাকে বলতে পারব না।’ পাঁচজন কাফ্রীর একজন বলল আলী বিন সুফিয়ানকে।

উম্মে আমারা অপহরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনি খলিফার পাঁচজন দেহরক্ষীকে নিয়ে এসেছিলেন। এরা ছিল সে জংলী গোত্রের লোক।

গোয়েন্দা প্রধান ওদেরকে মেয়েটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। অজ্ঞতা প্রকাশ করল ওরা।

তিনি ওদের লোভ দেখালেন। বললেন, তোমাদেরকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না। কিন্তু মুখ খুলল না ওরা।

ওদের গোত্র ছিল জংলী এবং হিংস্র প্রকৃতির। শাস্তির ভয়ে ভীত নয়। পাঁচজনই অনড়। কেউ মেয়েটার ব্যাপারে কিছুই জানে না।

আলী ওদের পাঠিয়ে দিলেন ‘শাস্তি সেলে’। সেখানে মূর্তির মুখ থেকেও কথা বের হয়। পাঁচজন সুদানী ছিল অত্যন্ত কঠোর প্রাণ। রাতভর ওদেরকে শাস্তি দেয়া হল। ওদের সাথে জেগে রইলেন আলী।

অবশেষে শেষ চেষ্টা করা হল। উপুড় করে শুইয়ে হাত পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হল। পা আটকানো হল আংটার সাথে। হাতের রশির প্রান্ত বাঁধা হল একটা চাকার সাথে।

এ শাস্তিতে চাকা ঘুরলেই বাহু কাঁধ থেকে এবং পা উরুর গোড়া থেকে ছিঁড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। হঠাৎ চাকা থামিয়ে দেয়া হয়। ঘুরানো হয় আবার। অজ্ঞান হয়ে যায় অপরাধী। ওদের উপর এ শাস্তি চলল।

শেষ রাতে মাঝ বয়েসী এক কাফ্রী বলল, ‘আমি সব জানি, কিন্তু দেবতার ভয়ে কিছুই বলব না। দেবতা আমায় নিকৃষ্ট মৃত্যু দেবেন।’

‘যে ভাবে তোমাদের মারা হচ্ছে এরচে’ ভয়ঙ্কর মৃত্যুও কি হতে পারে?’ আলী বললেন, ‘তোমাদের দেবতা সত্যি হলে এ শাস্তি থেকে তোমাদের সে অবশ্যই রক্ষা করত। তোমরা যদি সত্যি কথা বল, তাহলে আমাদের কাছে এমন দেবতা আছে যে তোমাদেরকে তোমাদের দেবতার আক্রোশ থেকে রক্ষা করবেন।’

বন্দীর চোখে দেবতার পরিবর্তে ভেসে উঠছিল মৃত্যুর বিভীষিকা। মুখ খুলতে রাজি হল কাফ্রী। তার বাঁধন খুলে দেয়া হল। তাকে খাবার ও পানি দেয়া হল। খাওয়ার পর শুইয়ে দেয়া হল আলাদা এক ঘরে।

লম্বা ঘুম দিল লোকটা। ঘুম থেকে জেগে সে স্বীকার করল, তার গোত্রের লোকেরাই উম্মে আমারাকে অপহরণ করেছে। চারজন ছুটিতে যাওয়ার সময় অপহরণের বিস্তারিত পরিকল্পনা করেছিল। সে রাতে এ পাঁচজনের ডিউটি ছিল। চারজনের দু’জন ভেতরে এসেছিল। অপহরণে এরা পুরো সহযোগিতা করেছে।

প্রতি তিন বছর পর মেলা হয়। বলি দিতে হয় একটা মেয়ে। তবে শর্ত হচ্ছে, মেয়ে সে গোত্রের হতে পারবে না। সে হবে বিদেশী কোন উঁচুবংশের। ফর্সা এবং সুন্দরী। এমন সুন্দরী যার দিকে দর্শকরা হতভম্বের মত তাকিয়ে থাকে।

‘তার মানে প্রতি তিন বছর পর তোমাদের গোত্র একটা মেয়েকে বলি দেয়, আর তোমরা একটা সুন্দরী যুবতী অপহরণ কর!’

‘তা ঠিক নয়। তিন বছর পর মেলা বসে। প্রতি পাঁচ মেলার পর একটা মেয়ে বলি দেয়া হয়। যারা জানে না প্রতি মেলায় বলি দেয়া হয় এ কুথা কেবল তারাই বলে।’

‘বলিটা কোথায় দেয়া হয়?’

বলির স্থানের বর্ণনা করল কাফ্রী। পুরোহিতকে মনে করা হয় দেবতার সন্তান। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে মাইল দেড়েক দূরে পার্বত্য এলাকা। সে পার্বত্য এলাকার এক দূর্গম জঙ্গলে দেবতা থাকেন। দেবতার সেবার জন্য আছে অন্সরী।

ধুধু মরুভূমির মাঝে দ্বীপের মত এক জায়গায় দেখা যাবে সবুজের সমারোহ। মনে হবে প্রকৃতির লীলা।

ওখানে রয়েছে ফেরাউনের সময়কার পুরাকীর্তি। ঝিলে রয়েছে ছোট ছোট কুমীর। গোত্রের কেউ মারাত্মক অপরাধ করলে পুরোহিতের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। পুরোহিত তাকে নিক্ষেপ করে ঝিলে।

তিনি ওই প্রাচীন বাড়ীতেই থাকেন। প্রতি পনর বছরের শেষ দিন বাইরে থেকে একটা মেয়ে চুরি করে বলি দেয়া হয়। মেয়েটা তার সাথে থাকে কয়েকদিন। এছাড়া থাকে চারজন পুরুষ এবং চারজন সুন্দরী তরুণী।

অন্য কেউ ওখানে যেতে পারে না। বেদিতে নেয়ার সময় মেয়েটা বুঝতেই পারে না তাকে হত্যা করার জন্য নেয়া হচ্ছে। তার চেহারায় থাকে আনন্দ এবং গর্ব। দেহ থেকে মাথা কেটে দেহটা ফেলে দেয়া হয় ঝিলে। চুলগুলো গোত্রের লোকদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হয়। এ চুল ওদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।

এরপর কাটা মাথা শুকিয়ে একটা গুহায় রেখে দেয়া হয়। পনর বছর পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এখন মেয়ে বলি দেয়া হবে। আমরা একই গোত্রের নয়জন সেনাবাহিনীতে ভর্তি হয়েছিলাম। সাহসী এবং জংলী বলে আমাদেরকে গার্ড বাহিনীতে নেয়া হয়েছে। দু’মাস আগে মেয়েটাকে দেখে আমরা অভিভূত হয়ে পড়ি। এত রূপসী মেয়ে আমরা আর কখনও দেখিনি।

আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে বলি দেয়ার জন্য চুরি করব। আমাদের একজন গোত্রের সর্দারকে বলেছে বলি দেয়ার জন্য এবার আমরা মেয়ে দেব। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা উম্মে আমারাকে অপহরণ করেছি।’

○             ○             ○

এসব কথা সালাহুদ্দীন আয়ুবীকে শোনান হল। গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন তিনি। আলী বিন সুফিয়ান তার নির্দেশের অপেক্ষায় রইলেন। এলাকার ম্যাপ খুলে সুলতান বললেন, ‘এ স্থান আমাদের সীমানার বাইরে। আলী! তোমার দেয়া তথ্য শুনে মনে হয় ফেরাউন মরে গেলেও এখনও ফেরাউনের প্রেতাত্মা বেঁচে আছে। মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য সর্বপ্রকার শিরক এবং কুফরের মূলোৎপাটন করা, আজ পর্যন্ত কত নিষ্পাপ মেয়ে বলি দেয়া হয়েছে, মেলায় বিক্রির জন্য অপহৃত হয়েছে কত যুবতী তার হিসেব নেই। মানুষের মন থেকে দেবতার ভয় দূর করতে হবে। এদের ধর্মীয় গুরুরা মেয়েদের অপহরণ করিয়ে ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে।’

‘আমাদের কিছু ফৌজি অফিসার এবং শহরের বিত্তশালীরা মেয়েদের কিনে নিয়ে আসে।’ আলী বললেন, ‘সমাজের চরিত্র নষ্ট হওয়া ছাড়াও আমাদের সাবেক সুদানী ফৌজের সাথে বর্তমান সেনা সদস্যরা মেলামেশা করছে। এর পরিণতি শুভ নয়।’

এরপর খানিকটা সংকোচের সাথে আলী বললেন, ‘মেয়েটাকে জীবিত এনে খলিফার হাতে তুলে দেয়া জরুরী। তাহলে খলিফা বুঝবেন আপনাকে দেয়া অপবাদ ভিত্তিহীন।’

‘খলিফা কি বলল না বলল তার পরোয়া করি না। আমি নিজকে নিয়ে ভাবি না। ইসলামের কাজ করতে গিয়ে আমাকে যে যত নিকৃষ্টই বলুক তাতে কিছু যায় আসে না।

আলী, নিজের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নাও। নিবদ্ধ কর দেশের কল্যাণের দিকে। ইসলাম এবং দেশ রক্ষার দায়িত্ব খলিফার। কিন্তু এখন আমাদের খলিফারা আত্মপূজায় হারিয়ে গেছে। ওরাই এখন ইসলামের সবচে; দুর্বল দিক। এ দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে খ্রিষ্টান শক্তি। সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করতে চাইলে নিজের কথা ভুলে যাও।

খলিফার দেয়া অপবাদ আমি অনেক কষ্টে বরদাশত করেছি। এর জবাব দিতে পারতাম। কিন্তু এতে রাজনীতি ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার হতে থাকবে। আমার আশংকা ছিল, মুসলিম বিশ্ব কোন এক সময় ক্ষমতাসীনদের ব্যক্তিপূজা, আত্মম্ভরিতা, স্বার্থপরতা এবং ক্ষমতালিন্সার ক্রীড়নকে পরিণত হবে।’

‘অপরাধ ক্ষমা করুন সম্মানিত আমীর। মেয়েটাকে বাঁচাতে চাইলে আমাদের হাতে সময় খুব কম। আগামী পরশু মেলা শুরু হবে।’

‘কোন সেনা সদস্য মেলায় শরীক হতে পারবে না, আমার এ নির্দেশ এখনি ছাউনিতে পৌঁছে দাও। নির্দেশ অমান্যকারীর শাস্তি পঞ্চাশ বেত্ৰাঘাত। এ জন্য কারও পদমর্যাদা দেখা হবে না।’

নির্দেশ পৌঁছে দেয়া হল। সেনা অফিসারদের ডেকে সালাহুদ্দীন আয়ুবী বললেন, ‘ওদের কুসংস্কার ভেঙে দিতে হবে। মনে হচ্ছে এটিই ফেরাউনের শেষ চিহ্ন।’

প্রথমেই সেনা অভিযানের প্রস্তাব এল। কিন্তু এতে গোত্রের লোকেরা সামরিক আক্রমণ ভেবে বেঁকে যেতে পারে। ফলে মারা পড়বে অনেক দর্শক এবং নিরপরাধ নারী ও শিশু।

কাফ্রী পাঁচজনকে সাথে নিয়ে যাবার প্রস্তাব করল কেউ। সুলতান এ প্রস্তাবও নাকচ করলেন। ‘কাফ্রীরা মুসলমানদের সাথে প্রতারণা করতে পারে।’

উপসামরিক প্রধান আল নাসের এবং আলী বিন সুফিয়ান বললেন, ‘পার্বত্য এলাকায় যাবে বারজন কমাণ্ডো সদস্য। কাফ্রীদের দেয়া তথ্যে মনে হয় মেলা হয় জাঁকজমকের সাথে। অথচ মেয়েটাকে কোথায় বলি দেয়া হয় দর্শকদের কেউ তা জানে না।’

তাই সাধারণ পোশাকে পাঁচশত সশস্ত্র সৈনিক দর্শকদের সাথে মিশে যাবে। বলির স্থান খুঁজে বের করবে এরা।

ওদের দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কমাণ্ডোরা অভিযান চালাবে। কমাণ্ডোরা কাপড়ে আগুন লাগিয়ে উপরের দিকে নিক্ষেপ করলেই কেবল পাঁচশত সৈনিক সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করবে।

কমাণ্ডো বাহিনীর সদস্যদের বলা হল, মেয়েটাকে যখন বেদীতে চড়ানো হবে তখনই কেবল হামলা করবে। এর আগে পাহারাদারদের মেরে ফেলতে হবে। আক্রমণ আগে হলে ওরা হয়ত মেয়েটাকে বন্ধ কক্ষেই হত্যা করবে অথবা লুকিয়ে ফেলবে।

মেয়েটাকে বলি দেয়া হবে মাঝ রাতে। কমাণ্ডো বাহিনীকে তার পূর্বেই পৌঁছতে হবে পার্বত্য এলাকায়। ধরা পড়লে সমগ্র পরিকল্পনাই পণ্ড।

নুরুদ্দীন জঙ্গীর পাঠানো বাহিনী থেকে অভিযানের জন্য সদস্য নির্বাচন করা হল। এরা ছিল আরব। সুদানের নোংরা রাজনীতি এবং কুসংস্কার থেকে মুক্ত। ইসলাম ছিল ওদের একমাত্র লক্ষ্য। ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী প্রতিটি কাজের বিরুদ্ধে এরা ছিল সোচ্চার।

ওদেরকে অভিযানের গুরুত্ব এবং কর্মপদ্ধতি বুঝিয়ে দেয়া হল। এ অভিযানে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে ঠিকই, আবার এমনও হতে পারে, হয়ত কোন সংঘর্ষই হবে না।

বলিদানের আর মাত্র ছ’দিন বাকী। তিনদিন তিন রাত ওদের ট্রেনিং দেয়া হল। চতুর্থ দিন কমাণ্ডো বাহিনীকে পাঠানো হল উটে চড়িয়ে।

দেড় দিনের সফর। উটের চালককে নির্দেশ দেয়া হল ওদেরকে পাহাড় থেকে খানিক দূরে নামিয়ে ফিরে আসতে।

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে পাঁচশ সৈন্য রওয়ানা হল উট ও ঘোড়ায় চড়ে। বাহন এবং অস্ত্রশস্ত্র ওদেরকে সাথে রাখতে হবে। ছদ্মবেশে সৈন্যদের সঙ্গী হলেন কমাণ্ডার।

○             ○             ○

মেলার শেষ রাত। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় হাসছে মরুর বালুকারাশি। মেলায় উপচে পড়া ভিড়। কোথাও নাচছে অর্ধ-উলঙ্গ মেয়েরা। গানের আসর জমেছে কোথাও।

সবচে বেশী ভিড় মেয়ে বিক্রির হাটে। একটা মেয়ে তুলে আনা হয় চত্বরে। গ্রাহকরা দেখে।

কেউ দেখে দাঁত, কেউ চুল। দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখার পর নিলামে ডাক উঠে। সবচে’ বেশী দরদাতার হাতে মেয়েটাকে তুলে দেয়া হয়।

জুয়ার আড্ডা এবং মদের আসরও জমে উঠেছে। এসব ব্যাপারে এখানে আইনের কোন কড়াকড়ি নেই।

মেলার চারপাশে দর্শকদের জন্য টানানো তাঁবু। নীতি-নৈতিকতা, ধর্ম এবং সামাজিকতার বাঁধন থেকে মুক্ত এরা। এরা এসেছে অবাধ স্ফুর্তি ও আনন্দের জন্য। পাশের পাহাড়ে কি হচ্ছে তা জানার কোন আগ্রহ নেই তাদের।

ওরা জানত, পাহাড় ঘেরা স্থানটি দেবতাদের আবাস। দেবতাদের পাহারা দেয় জীন এবং ভূতের দল। কোন মানুষ ওখানে গেলে জীবন নিয়ে ফিরতে পারে না। ওরা জানে না খানিক দূরের সেই পাহাড়ের কোলে এক সুন্দরী যুবতীকে বলি দেয়ার জন্য তৈরী করা হচ্ছে। দেবতা হচ্ছেন একজন মানুষ। ওরা এও জানত না, দর্শক বেশে মেলায় রয়েছে পাঁচশ খোদার সৈনিক। বারজন কমাণ্ডো সদস্য পৌঁছে গেছে দেবতাদের পাহাড় ঘেরা আস্তানায়।

কমাণ্ডো বাহিনীকে বলা হয়েছিল পাহাড়ের আশপাশে দৃশ্যতঃ কোন পাহারা থাকবে না। ওখানে পাহারা দেয় অদৃশ্য জীন ও ভুত। কিন্তু দেখা গেল কাফ্রীর বক্তব্য ঠিক নয়। আস্তানার চার পাশে সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা রয়েছে।

পার্বত্য এ এলাকাটা মাইলখানেক দীর্ঘ এবং প্রশস্ত। কমাণ্ডো সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এগিয়ে চলল আস্তানার দিকে।

হঠাৎ একজন দেখল গাছের কাছে একটা ছায়া নড়ছে। হামাগুড়ি দিয়ে ছায়ার পেছনে চলে গেল সে। ঝাঁপিয়ে পড়ল ছায়াটার ওপর। এক হাতে পেচিয়ে ধরল গলা। অন্য হাতের খঞ্জর তার বুকে ছুইয়ে বলল, ‘এখানে কি করছ? কিভাবে পাহারা দিচ্ছ তোমরা?’

আরবী বুঝল না কাফ্রীটা ততক্ষণে আরেকজন কমাণ্ডো চলে এসেছে। এবার তাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করা হল, কিন্তু কিছু বলল না সে।

আরও পাহারাদার আছে বলে সন্দেহ হল ওদের। কাফ্রিটাকে নিকেশ করে ওরা সতর্ক পায়ে এগিয়ে চলল। কিছুদূর গিয়েই আবার দেখা পেল পাহারাদারের। এভাবে বেশ কয়েকটা বাধা ডিঙিয়ে ওরা জঙ্গলের প্রান্তে এসে পৌঁছল।

সামনে জঙ্গল, তারপর পাহাড়। চাঁদ উঠে আসছে উপরে। ওরা গাছের ছায়ায় লুকিয়ে লুকিয়ে জঙ্গল পেরিয়ে পাহাড়ে চড়তে শুরু করল।

আস্তানার ভেতরে ওরা দেখতে পেল পাথরের মূর্তি। সামনের চত্বরে কার্পেট বিছানো। সে কার্পেটের ওপরে ফুল ছড়ানো। ফুলের ওপর পাশাপশি রাখা আছে চওড়া তরবার ও পেতলের থালা।

চত্বরের চারপাশে মশাল জ্বলছে। চারজন তরুণী দাঁড়িয়ে আছে চার কোণায়। ওদের সারা দেহ অনাবৃত। গাছের দুটি পাতা দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকা। এক জায়গায় শরীরে শাদা চাদর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে চারজন কাফ্রী।

উম্মে আমারা তখনও নীচের অন্ধকার কামরায়। পুরোহিত তার চুল নিয়ে খেলা করছিল। নেশায় ঢুলুঢুলু চোখ, জড়ানো কণ্ঠে ও বলে যাচ্ছে, ‘আমি আঙ্গুকের মা। তুমি আঙ্গুকের পিতা। আমাদের সন্তান হবে মিসর এবং সুদানের সম্রাট। ওদেরকে আমার রক্ত পান করতে দাও। প্রতিটি ঘরে বিলিয়ে দাও আমার সোনালী চুল। তুমি দূরে কেন? কাছে এস।’

‘আঙ্গুক’ গোত্রের দেবতা। নেশার ঘোরে এক আরব মেয়ে হয়েছে জংলী গোত্রের মা এবং পুরোহিতের স্ত্রী। দেবতার নামে বলি দেয়ার জন্য পুরোহিত নানা রকম রসম রেওয়াজ পালন করছিল।

বারজন কমাণ্ডো সদস্য পাহাড় বেয়ে এগিয়ে আসছিল। কাঁটা ঝোপে ভরা এবড়ো থেবড়ো পাহাড় পেরুতে কষ্ট হচ্ছিল ওদের। চাঁদ মাথার উপর উঠে এসেছে। গাছের ছায়ার কারণে ওদের দেখা যাচ্ছে না।

ওরা দেখল, পাহাড়ের ওপর চাঁদের আলোয় দাঁড়িয়ে আছে এক কাফ্রী। এক হাতে বর্শা, অন্য হাতে ঢাল।

মনে হচ্ছে প্রহরী। এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, পেছন থেকে তাকে আক্রমণ করা সম্ভব নয়। আবার সামনাসামনি সংঘর্ষে যাওয়াও ঠিক হবে না। কিন্তু তাকে হত্যা করা জরুরী।

একজন কমাণ্ডো সদস্য লুকিয়ে পড়ল। আর একজন তার সামনে পাথর নিক্ষেপ করল।

আকস্মিক শব্দে চমকে উঠল কাফ্রী। এগোল পাথর নিক্ষিপ্ত স্থানের দিকে।

ঝোপের কাছে আসতেই কমাণ্ডো সদস্য জাপটে ধরে বুকে খঞ্জর সেঁধিয়ে দিল। নিঃশব্দে লুটিয়ে পড়ল কাফ্রীর লাশ। সতর্ক পায়ে আবার এগিয়ে চলল কমাণ্ডো বাহিনী।

উম্মে আমারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। পুরোহিত ওকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করল। এরপর হাত ধরে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে চলল। চারজন উলঙ্গ যুবতী এবং চারজন কাফ্রী তাকিয়ে আছে। উজ্জ্বল হয়ে উঠল মূর্তির মুখ। সিজদায় লুটিয়ে পড়ল ওরা।

পুরোহিত তার আগমন ঘোষণা করে বেরিয়ে এল। সঙ্গে উন্মে আমারা। ওকে চত্বরে তুলে দেয়া হল। ঘিরে দাঁড়াল কাফ্রী এবং যুবতীরা।

মেয়েটা আরবী ভাষায় বলল, ‘আমি আঙ্গুকের সন্তানদের জন্য আমার মাথা কাটাচ্ছি। ওদের পাপের প্রায়শ্চিত করছি। আমার মাথা কেটে ফেল। দেবতার পদতলে রেখে দাও কাটা মস্তক। দেবতা এ মাথার উপর মিসর এবং সুদানের মস্তক স্থাপন করবেন।’

যুবতী এবং কাফ্রীরা আবার সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। পুরোহিত উম্মে আমারাকে হাটু গেড়ে বসাল। মাথা নোয়াল ও। হাতে তরবার তুলে নিল পুরোহিত।

পর্বত চূড়া থেকে এক কমাণ্ডো সদস্যের দৃষ্টি পড়ল চত্বরে। অনুচ্চ কণ্ঠে সঙ্গীদের বলল সে, ‘মেয়েটা মাথা নুইয়ে বসে আছে, উলঙ্গ।’

ঝকঝকে জোসনা আর মশালের আলোয় ওরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল সবকিছু। পাহাড় চুড়া থেকে নিক্ষিপ্ত তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে পারে। পাহাড়ের গা ঢালু নয়, খাড়া দেয়ালের মত।

হাতে সময় নেই। উড়ে গেলেও ওকে বাঁচানো সম্ভব নয়। চূড়া থেকে নীচে তাকাল ওরা। ঝিল। শুনেছে ঝিলে কুমির থাকে।

ডানদিক কিছুটা ঢালু হলেও মসৃণ দেয়ালের মত। কিছু ঝোপঝাড় রয়েছে। কমাণ্ডোরা একে অপরের হাত ধরে নামতে লাগল। সর্বশেষ আরোহীর দৃষ্টি পড়ল এক কাফ্রীর উপর। দাঁড়িয়ে আছে বর্শা নিয়ে। হাত উঁচিয়ে আছে নিক্ষেপের জন্য।

হয়ত সে সন্দেহ করেছে কিছু। কমাণ্ডো সদস্যদের দেখা যাচ্ছে না। একজন তীর ছুঁড়ল। শোঁ শোঁ শব্দ তুলে ছুটে গেল তীর। বক্ষ ভেদ করল কাফ্রির। পড়ে গিয়ে গড়াতে লাগল দেহটা।

কমাণ্ডোরা নেমে আসছে খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে। যে কোন মুহুর্তে পা পিছলে পড়ে যেতে পারে অনেক নীচের টলটলে পানির ঝিলে।

○             ○             ○