হরিদাসের গুপ্তকথা

হরিদাসের গুপ্তকথা

গ্রন্থপরিচয় ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’ নামের বইটি বেশ দুষ্প্রাপ্য। বইটি সম্পর্কে অনেকের ধারণা যে এটি বোধহয় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আপাত নিষিদ্ধ ধরনের কোন বই। কিন্তু বইটি এককালে বেশ জনপ্রিয় ছিল। বইটির লেখক শ্রীভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

প্রথম খণ্ড : অতি আশ্চর্য্য

১৩১০ বঙ্গাব্দ। সূচনা : আমি কে? আমি হরিদাস। বত্রিশ বৎসর পূর্ব্বে আমি এই বাঙ্গালাদেশেই ছিলাম। সেই সময় আমার বাল্যজীবনের কতক কতক পরিচয় দিয়াছি। জন্মাবধি কতদিন পর্য্যন্ত মাতাপিতা জানিতাম না, আপন বলিয়া কাহাকেও চিনিতাম না, নানাContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

প্রথম কল্প : পাঠশালা

শিশুকাল থেকে চতুর্দ্দশ বর্ষ বয়সক্ৰম পৰ্য্যন্ত আমি গুরুগৃহে ছিলেম। আমার গুরুদেবের বাসস্থান কোথায় ছিল, শিশুকালে ঠিক জানতে না পেরে, পূর্ব্বে আমি বোলেছিলেম সুবর্ণগ্রাম। কথাটা ভুল ছিল; দেশের ভূগোলে তখন আমার জ্ঞান ছিল না, এখন বুঝ্‌তেContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

দ্বিতীয় কল্প : উপায় কি?

আরো দুই মাস কেটে গেল। গুরুপত্নী মুখ ফুটে আমাকে কিছু বোলতে পারেন না, আমিও নিজের ভাগ্যফল নিজে কিছু জানতে পারি না, মন কিন্তু সৰ্ব্বদাই অস্থির। যাঁর আশ্রয়ে থাকা, তাঁর অবস্থা প্রতিকূল, তিনি তাঁর নিজের আরContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

তৃতীয় কল্প : পরামর্শ

সন্ধ্যা হলো। পল্লীগ্রামের সন্ধ্যাকাল। সহরের সন্ধ্যাকালের ন্যায় রাজমার্গগুলি আলোর মণ্ডিত হয় না, জনকোলাহল বাড়ে না, ঢোলকতবলা বাজে না, স্বরলহরী উঠে না, পাহারার আঁটা-আঁটি হয় না, চোর-গাঁটকাটা ঘোরে না, গাড়ী-ঘোড়াও ছোটে না, এ প্রকার কিছুই হয়Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

চতুর্থ কল্প : দালালের বাড়ী

আমি বকুলতলায়। বাড়ীর পশ্চিমদিকে বকুলগাছ। যাকে আমি বাড়ীর ভিতর দেখেছিলেম, তার চেহারা-বর্ণনে বোলে রেখেছি, বর্ণ-ঘনশ্যাম। ঠাকুরাণীর সহিত তার যখন কথোপকথন হয়, তখন শুনেছি, ঠাকুরাণী তাকে ঘনশ্যাম বোলে সম্বোধন কোরেছিলেন। আমার বর্ণনা নিরর্থক হয় নাই। লোকটারContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

পঞ্চম কল্প : দালালী ইস্তাহার

ঘনশ্যাম হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা কোল্লেন, “কেমন ছোকরা! এখানকার কাজকর্মের ধরণ-ধারণ সব দেখলে শুনলে? অনেক লোক এখানে অনেক রকম কাজ করে, বেশ দশ টাকা রোজগার করে; কোন কাজে তোমার মন যায়, সেইটী জানবার জন্যই এই বাড়ীতেContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

ষষ্ঠ কল্প : নূতন আশ্রয়

রাস্তার ধারে ধারে অনেকগুলি বাড়ী। ঠাঁই ঠাঁই ভাল ভাল অট্টালিকা। কোন কোন বাড়ীতে কি কি রকমের লোক থাকেন, বোধ হয়, ঘনশ্যামের জানা ছিল, সে আমার হাত ধোরে ধীরে ধীরে এক একখানা বাড়ীর দেউড়ীতে গিয়ে দাঁড়ালো,Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

সপ্তম কল্প : জামাইবাবু

বাবুর নাম সর্ব্বানন্দ মুস্তফী;—বসু মস্তফী। পুত্রসন্তান নাই, তিনটী কন্যা। জ্যেষ্ঠা কন্যার নাম শ্যামাসুন্দরী, মধ্যমা উমাকালী, কনিষ্ঠা আশালতা। বড়মেয়েটী বিধবা, মেজোটী সধবা, ছোটটী অবিবাহিতা, বয়ঃক্রম প্রায় দশ বৎসর। বাবুর বাড়ীতেই আমি থাকলেম। বাবু মহৎলোক, নামলব্ধ জমীদার,Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

অষ্টম কল্প : সব নূতন

ভূমিষ্ঠ হবার পর ক্রমশঃ জ্ঞানোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশু যেমন জগৎসংসারের সমস্ত পদার্থই নূতন দেখে, বর্দ্ধমানে সর্ব্বানন্দবাবুর পবিত্র আশ্রমে আশ্রয় পেয়ে আমিও সেইরূপ সমস্ত পদাথই নূতন দেখতে লাগলেম। যা দেখি, সমস্তই নূতন; যা যা শুনি, আমারContinue Reading

নবম কল্প : খুন!!!

চৈত্রমাস অতিক্রান্ত। বৈশাখ মাস আগত। বৈশাখে গ্রীষ্মাতিশয্য অনুভব হয়, প্রায় প্রত্যহ অপরাহ্ণে, আকাশে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের মেঘোদয় হয়, এক একদিন বাতাসে উড়ায়, এক একদিন বৃষ্টি পড়ে; ছোট ঝটিকা প্রায় প্রতিদিন; তথাপি এ দেশে বৈশাখমাসে বসন্ত-ঋতুরContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

দশম কল্প : উইলপাঠ

মোহনলালবাবু সৰ্ব্বদাই ব্যস্ত, সৰ্ব্বক্ষণ চঞ্চল। কি জন্য যে তত ব্যস্ততা, সকল লোকে সেটা অনুভব কোত্তে পাল্লে না। মোহনলালের শোক অপেক্ষা উদ্বেগ অধিক, সেটা আমি বেশ বুঝতে পাল্লেম। সংসারের প্রকৃতি এই যে, যাদের সঙ্গে শোণিত-সম্পর্ক, যাদেরContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

একাদশ কল্প : মামা!

পাঁচদিন গেল। সেই পাঁচদিন আমি জামাইবাবুর কাছে কাছে থাকতে শিখলেম, ঘনিষ্ঠতা করবার ইচ্ছা হলো। কেন হলো, পাঠক-মহাশয় বোধ হয়, সেটা অনুভবে বুঝেতে পেরে থাকবেন। নিরাশ্রয় আমি, উত্তম আশ্রয় পেয়েছিলেম, কৰ্ত্তা আমাকে ভালবেসেছিলেন, বাড়ীর পরিবারেরাও আদরContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

দ্বাদশ কল্প : অমরকুমারী

বাড়ীখানা অনেকদিনের পুরাতন। দেয়ালে দেয়ালে নোণা ধোরেছে, ঠাঁই ঠাঁই চূণবালী খোসে পোড়েছে, ছাদের মাথায় ছোট ছোট গাছ বোসেছে, এক এক জায়গায় ফাট ধরেছে। একতালা বাড়ী বটে, কিন্তু দুমহল। সদরমহলে একখানি ঘর, সেই ঘরের সম্মুখে একটাContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

ত্রয়োদশ কল্প : নারীবেশ

ঘরের ভিতর অন্ধকারে আমি বোসে আছি, অন্যঘরে অমরের জননী শুয়ে আছেন। জাগরিতা কি নিদ্রিতা, জানি না, রাত্রি এক প্রহর অতীত হয়ে গেছে, কোন দিকে আর কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছি না, জ্যোৎস্না রাত্রে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ কিছুContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

চতুর্দ্দশ কল্প : রাজধানী

গঙ্গার পূর্ব্বতীরে কলিকাতা সহর। এই সহরটী এখন ভারতবর্ষের রাজধানী। ইংরেজেরা এখানে মা গঙ্গার নাম রেখেছেন হুগলী। ইংরেজী অক্ষরে গঙ্গানামটী লেখা যায় না, এমন কথা নয়; গঙ্গাকে আমরা দেবতা বলি, সেই কারণ গঙ্গানাম লিখনে বা উচ্চারণেContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

পঞ্চদশ কল্প : এ আবার কি কাণ্ড?

যে বাড়ীতে আমার চাকরী হলো, সেই বাড়ীখানি দোতালা; সম্মুখে ঝিলিমিলি দেওয়া টানা বারান্দা; সদরবাড়ীতে অনেকগুলি ঘর। উপরের একটী ঘরে বাবু বসেন, আর সব ঘরগুলি প্রায় সৰ্ব্বদাই শূন্য থাকে, ক্রিয়াকর্মোপলক্ষে জনপূর্ণ হয়। সব ঘরগুলি কিন্তু সমভাবেContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

ষোড়শ কল্প : কাশীধাম

কোথায় আমি যাব, অপরে কি জানবে, নিজেই আমি জানি না। কিছুই ঠিক নাই। ঠিক নাই, অথচ আমি কলিকাতার নূতন আশ্রয়টী পরিত্যাগ কোল্লেম! মনে বড় ভয়, কখন কোথায় কি বিপদ ঘটে, কখন দুৰ্বিপাকে বৈরিহস্তে ধরা পড়ি,Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

সপ্তদশ কল্প : লালা বুলকচাঁদ

দুর্গাবাড়ী-দর্শনের সাতদিন পরে আপনার বাসাঘরে আমি একাকী বোসে আছি, বেলা অপরাহ্ণ এমন সময় সেইখানে একটী লোক এলেন। দিব্য গৌরবর্ণ, বেশ মোটাসোটা, গায়ে চাপকান, চড়ীদার পায়জামা, কাণে বীরবৌলী, কপালে রক্তচন্দনের দীর্ঘ ফোঁটা, দিব্য কেয়ারীকরা গোঁফ, কাণেরContinue Reading