হরিদাসের গুপ্তকথা

সপ্তদশ কল্প : লালা বুকচাঁদ

দুর্গাবাড়ী-দর্শনের সাতদিন পরে আপনার বাসাঘরে আমি একাকী বোসে আছি, বেলা অপরাহ্ণ এমন সময় সেইখানে একটী লোক এলেন। দিব্য গৌরবর্ণ, বেশ মোটাসোটা, গায়ে চাপকান, চড়ীদার পায়জামা, কাণে বীরবৌলী, কপালে রক্তচন্দনের দীর্ঘ ফোঁটা, দিব্য কেয়ারীকরা গোঁফ, কাণেরContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

অষ্টাদশ কল্প : এরাই কি তীর্থবাসী?

আজ শনিবার। নিয়মমত গঙ্গাস্নান কোল্লেম, দেবদর্শন কোল্লেম, মনের দুঃখে আহার কোল্লেম না; অন্নপূর্ণা-পুরীতে আমি উপবাসী থাকলেম! বাসাঘরে চাবী দিয়ে, রাস্তায় বেরিয়ে, মন্দিরের দিকে চেয়ে, করযোড়ে জগন্মাতার উদ্দেশে সাশ্রু-লোচনে ডাকলেম, “মা অন্নপূর্ণে! শিব যখন ত্রিভুবনপরিভ্রমণ কোরেContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

উনবিংশ কল্প : কোথাকার পাপ কোথায়?

বড়বাবু প্রতি রবিবার বৈকালে বেড়াতে যান, সন্ধ্যার পর ফিরে আসেন। আজ রবিবার। বেলা পাঁচটা বাজবার পূর্ব্বেই তিনি বেরিয়ে গিয়েছেন, বৈঠকখানায় আমি একাকী আছি। মেজোবাবু আর বাড়ী আসেন না, ছোটবাবুও দু-তিনদিন আসেন নাই, বাড়ীতে তখন আমিContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

বিংশ কল্প : নূতন বন্ধু;—কামরূপদর্শন

নৌকায় আরোহণ কোল্লেম। ভাগীরথী আপন মনে উত্তরমুখে ছুটেছেন, মহাবিপদে আমি নিপতিত, কাতর-হৃদয়ে আমার অবস্থার কথা তাঁরে আমি জানালেম। ভাগীরথীর দ্রব-হৃদয় আমার দুঃখে আর অধিক দ্রবীভূত হলো না, আমার কাতরবচনে দ্রবময়ী দেবী কিছুই উত্তর দিলেন না,Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

একবিংশ কল্প : নূতন চাকরী

বাবু দীনবন্ধু চট্টোপাধ্যায়ের নিবাস মুর্শিদাবাদ, এ কথা পূর্ব্বেই উল্লেখ করা গিয়াছে, যথাসময়ে আমরা মুর্শিদাবাদে উপনীত হোলেম। রক্তদন্তের ভয়ে এ অঞ্চলে শীঘ্র ফিরে আসবার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু বিধাতার ইচ্ছায়, দীনবন্ধবাবুর যত্নে, অনুগ্রহে, অনুরোধে কাজে কাজেইContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

দ্বাবিংশ কল্প : কৃষ্ণকামিনী

পুজার মঙ্গলাচরণে পুজার পূর্ব্বে আগমনীগীত হয়; পূজাবাড়ীতেও আগমনী আনন্দ বর্দ্ধিত হয়ে থাকে; সম্পর্কীয় নানাস্থান থেকে কুটম্বসাক্ষাতের আগমন হয়। সচরাচর নারী-কুটুম্বিকাই অধিক। দীনবন্দুবাবুর বাড়ীতে প্রায় ২০/২৫টী কুটুম্বিকা এসেছিলেন, পুর্ণিমার পূর্ব্বেই কতকগুলি বিদায় হয়ে গিয়েছেন, কতকগুলি আছেন,Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

ত্রয়োবিংশ কল্প : আমার ভূতের ভয়

কার্ত্তিকমাসে দুর্গাপূজা হয়ে গিয়েছে, সুতরাং অগ্রহায়ণমাসে রাসযাত্রা। মাঝের রাসের দিন বৈকালে পশুপতিবাবু আমারে বোল্লেন, “হরিদাস, রাস দেখতে যাবে?” রাস কখনো আমি দেখি নাই; কি রকম রাস, রাসে কি কি দেখা যায়, কেহ কখনো আমারে সেContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

চতুর্ব্বিংশ কল্প : নূতন আনন্দ;—নূতন ভয়।

ঘর থেকে বেরিয়ে ছোটবাবুর সম্মুখে গিয়ে আমি দাঁড়ালেম। যে ঘরখানি আমার শয়নের জন্য নির্দ্দিষ্ট হয়েছিল, সে ঘরে প্রবেশ না কোরে, মণিভূষণের সঙ্গে তিনি আর একটী ঘরে গিয়ে বোসলেন, আমিও তাদের সঙ্গে সঙ্গে সেই ঘরে গেলেম।Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

পঞ্চবিংশ কল্প : নূতন তীর্থ

বহরমপুরের আদালতে মোকদ্দমা। কতদিনে সে মোকদ্দমা শেষ হবে, কতদিনে অমরকুমারীকে পাওয়া যাবে, কতদিনে আমি আবার অমরকুমারীর দর্শন পাবো, দর্শনের আশা কতদিনে আমারে শান্তি দান কোরবে, সমস্তই ভবিষ্যতের গর্ভগত। নিষ্কর্ম্মা হয়ে বহরমপুরে বোসে থাকা আমি আরContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

ষড়্‌বিংশ কল্প : নূতন বিপত্তি!

বরদায় জঙ্গল অনেক। বুদ্ধির ভ্রমে একদিন আমি একাকী সন্ধ্যার পূর্ব্বে ভ্রমণে বহির্গত হই, পথেই সন্ধ্যা হয়, পথ ভুলে আমি বনের দিকে গিয়ে পড়ি। বরদা বাস্তবিক তীর্থস্থান নয়, কিন্তু অনেক দেশের অনেক লোক নানা কার্য্যে এইContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

সপ্তবিংশ কল্প : এ সকল কি ব্যাপার?

ডাকাতের আড্ডায় একটি দয়াময় সাধপুরষ। তিনি ডাকাত নন, সে কথা ঠিক। ডাকাতের চেহারা ভয়ঙ্কর হয়, ডাকাতেরা কালো হয়, এটা যেন একরকম বাঁধাকথার মধ্যেই গণ্য। যে সকল মূর্ত্তি আমরা দেখতে পাই না, অথচ যাদের নাম শুনলে,Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

অষ্টাবিংশ কল্প : গ্রহ সুপ্রসন্ন

গভীর নিশীথকালেও বনবাসী শৃগালেরা রব করে। নিশাকালে প্রহরে প্রহরে শৃগালের রব শুনা যায়। আমাদের সঙ্গীত-শাস্ত্রের গুরুমহাশয়েরা দিবা-রজনীর কালভেদে ভিন্ন ভিন্ন রাগরাগিণীর ভেদ নির্দ্ধারণ কোরে রেখেছেন, শৃগালের রবেও সেইরূপ কালভেদ স্বরভেদ বুঝা যায়; কিঞ্চিৎ অভিনিবেশ পূর্ব্বকContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

ঊনত্রিংশ কল্প : রহস্য প্রকাশ

রাজপুত্রের নিকেতনে আমি উপস্থিত। যে ঘরে গিয়ে আমি প্রবেশ কোল্লেম, কুমার বাহাদুর তখন সে ঘরে ছিলেন না। দেখলেম, একটি নূতন লোক। সেই লোক আমারে অভ্যর্থনা কোরে সেইখানে বসালেন। আমি হরিদাস, আমার অসাক্ষাতে সে কথা তিনিContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

দ্বিতীয় খণ্ড

গ্রন্থপরিচয় ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’ নামের বইটি বেশ দুষ্প্রাপ্য। বইটি সম্পর্কে অনেকের ধারণা যে এটি বোধহয় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আপাত নিষিদ্ধ ধরনের কোন বই। কিন্তু বইটি এককালে বেশ জনপ্রিয় ছিল। বইটির লেখক শ্রীভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

প্রথম কল্প : বঙ্গে প্রত্যাগমন

পথে কোন বিঘ্ন উপস্থিত হলো না, যথাযোগ্য যানবাহনে আমরা যথাসময়ে মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হোলেম। বাড়ীর কর্ত্তার অদর্শনে সকলেই উদ্বিগ্ন ছিলেন, যদিও মধ্যে মধ্যে ডাকবাহকেরা উদ্বেগশান্তির দৌত্যকার্য্য কোরেছিল, তথাপি প্রভু সশরীরে উপস্থিত না থাকলে পরিবারবর্গের আকাঙ্ক্ষিত শান্তিContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

দ্বিতীয় কল্প : কুমারী-অন্বেষণ

আমি মাণিকগঞ্জে যাব। হেতু কি, দীনবন্ধুবাবুকে আর পশুপতিবাবুকে সেটি জানালেম; নিশ্চয় অমরকুমারীকে সেখানে পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে তাঁদের প্রতীতি জন্মিল না, তথাপি অন্বেষণ করা কর্ত্তব্য, এই বিবেচনায় তাঁরা আমারে অনুমতি দিলেন। মণিভূষণকে সংবাদ দেওয়া গেল,Continue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

তৃতীয় কল্প : আর এক আবর্তন

ভারতবর্ষের উত্তরে গিরিরাজ হিমালয়; পুরাণে পাওয়া যায়, হিমালয়ের উপর দিয়ে স্বর্গে যাবার পথ। আমি মাণিকগঞ্জের উত্তরে এসেছি; এখানে স্বর্গের পথ নাই; এখানে যদি আমি অমরকুমারীর সন্ধান পাই, এখানে যদি আমি অমরকুমারীর দর্শন পাই, তা হোলেContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

চতুর্থ কল্প : চণ্ডেশ্বর

আমি চোলেছি;—কি সন্ধান কোরে এলেম, লক্ষ্য বস্তু পেলেম কি না, ভাবতে ভাবতে চোলেছি। অমরকুমারীর নাম এখনো ব্রজকিশোরী। আমার মুখে অবগুণ্ঠন না থাকলে ব্রজকিশোরী আমারে চিনতেন; অবগুণ্ঠন রেখে আমি এক প্রকার ভালই কোরেছিলেম; আমার চেনাই দরকারContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

পঞ্চম কল্প : পদ্মায় প্রাণ যায়

যে বজরায় ঢাকায় আসা হয়েছিল, সেই বজরায় আরোহণ কোরে আমরা মাণিকগঞ্জে চোল্লেম। আমরা ছয় জন;—আমি, মণিভূষণ, অমরকুমারী, হরিহরবাবুর সরকার, হরিহরবাবুর চাপরাসী আর ঢাকার পুলিশ-প্রহরী। মনে আনন্দ আছে, অথচ আসামীরা ধরা পোড়ছে না, গুপ্তভাবে কোথায় কিContinue Reading

হরিদাসের গুপ্তকথা

ষষ্ঠ কল্প : আমি নাগরদোলায়

আবার আমরা ঢাকায়। বোম্বেটেরা ফৌজদারী আদালতে চালান হয়ে গেল, জখমী লোকেরা হাসপাতালে প্রেরিত হলো, আমরা ডেপুটিবাবুর বাড়ীতে আশ্রয় পেলেম। হরিহরবাবুর আটজন পাইকের মধ্যে জলযুদ্ধের সময় দুজন নিহত হয়েছিল, বাকী ছিল ছয়জন, তাদের ইচ্ছা ছিল, মাণিকগঞ্জেContinue Reading