নতুন বন্ধু

ঢাকা কলেজে আমার অনেক নতুন বন্ধু হয়। প্রথমে যার নাম উল্লেখ করতে হয়, সে হলো মরহুম কাজী মতলুব হোসেন। মতলুব এলিফ্যান্ট রোডে আমাদের প্রতিবেশী ছিল। শুধু তাই নয়, সে ছিল আমার ভাবির ফুফাতো বোনের ছেলে। ক্রিকেট খেলায় তার নেশা ছিল। দেশে রাজনীতি নিয়েও সে আলোচনা করতে ভালোবাসত। পরে ঢাকা কলেজ থেকে পাস করে আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই, তখন মতলুব সলিমুল্লাহ হলে অনাবাসিক ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়। আমি তখন সলিমুল্লাহ হলে আবাসিক ছাত্র। কাজেই এই নিবিড় সম্পর্ক পরবর্তী চার বছর ধরেও চলে। এরপর দুই বছর সে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস পড়ার জন্য বিলাত যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। সে সময়ে আমি সিভিল সার্ভিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এই সময়ও আমাদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল।

কলেজ হোস্টেলেও অনেক বন্ধু ছিল। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকায় আসেন মিজানুর রহমান। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব ভালো জমে ওঠে। আনিসুর রহমান নেত্রকোনা থেকে প্রবেশিকা পাস করে আসে। তার সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুজন ছাত্র ছিল অনাবাসিক। ফজলুল হক চাঁদপুরের ছেলে–ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় থাকত। নাসিমুল কামালের বাবা ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তখন তিনি ঢাকায় পদস্থ। নাসিমুল কামাল। বাড়ি থেকে কলেজে আসত। কামাল ও ফজলুর সঙ্গে আমার খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিল। বিশেষ করে ফজলুকে আমি খুবই পছন্দ করতাম। নবীনগর স্কুল থেকে। আমার সহপাঠী মোজাম্মেল হকও ঢাকা কলেজের আবাসিক ছাত্র ছিল। তার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

আইএ ক্লাসের অন্যান্য সহপাঠীর মধ্যে ছিলেন হুজ্জতুল ইসলাম লতিফি (তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন এবং বর্তমানে গ্রামীণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক), আবু আহমদ আবদুল্লাহ (বিআইডিএসের মহাপরিচালক হয়েছিলেন), শাহ মোহাম্মদ ফরিদ (পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হয়েছিলেন), আনিসুজ্জামান (তিনি পাকিস্তান। অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট সার্ভিসের সদস্য ছিলেন এবং ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন), নুরুজ্জামান (তিনি সেনাবাহিনীর শিক্ষা কোরের কর্নেল ছিলেন এবং কয়েকটি ক্যাডেট কলেজ ও রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন), মোক্তাদির এবং আবদুল মোতালিব (এরা দুজনই সম্ভবত কলেজের অধ্যাপক ছিলেন) ও আব্দুল কাইয়ুব ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। নজরুল ইসলাম ছিলেন খুবই প্রাণবন্ত। প্রেম করতে গিয়ে অনার্সের পরে আর পড়াশোনা করেননি। তিনি মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন। নাসিমুল কামালও অল্প বয়সে প্রেমে পড়ে লেখাপড়ার জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে নির্বাহী হিসেবে যোগ দিয়ে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। আরেকজন সহপাঠী ছিল নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তার একটি পা খোঁড়া ছিল। সে কলেজে থাকতেই কয়েকটি উপন্যাস প্রকাশ করেছিল। তবে উপন্যাসের মান ভালো ছিল না। সর্বদাই সে আমাদের কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য সচেষ্ট ছিল। এয়ারফোর্স থেকে বাদ পড়া শরিফ এসে আমাদের সঙ্গে আইএ ক্লাসে ভর্তি হয়। তবে আমাদের সঙ্গে পাস করেছিল কি না, তা মনে নেই। আইএসসি ক্লাসে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সেরা ছাত্ররা ভর্তি হয়েছিল। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল কম। পরবর্তীকালে তৌফিকে এলাহী চৌধুরী (যিনি আইএসসি পাস করে অর্থনীতি পড়েছেন) এবং ফজলুল আজিম (যিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করে এখন একজন বড় শিল্পপতি)–এ রকম কয়েকজনের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে। বন্ধুদের সংখ্যা আরও অনেক বাড়ে, যখন সলিমুল্লাহ হলে আমি আবাসিক ছাত্র ছিলাম।