আইএ পরীক্ষার ফলাফল

আইএ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছি এবং স্টার মার্ক পেয়েছি। এই স্টার মার্ক পাওয়া ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের পূর্ববর্তী বছরে যিনি আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন, তিনি স্টার পাননি। আমাদের পরবর্তী বছরেও যিনি আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন, তিনিও স্টার পাননি। অথচ আমি আইএ পরীক্ষায় স্টারের চেয়ে ১৫ নম্বর বেশি পেয়েছিলাম। আমাদের বছর আইএ পরীক্ষায় প্রথম হন আবু আহমদ আবদুল্লাহ। তিনি সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করে ঢাকা কলেজে আইএ ক্লাসে ভর্তি হন। ইংরেজিতে তার ভালো দখল ছিল এবং ইংরেজি পরীক্ষায় আমার চেয়ে প্রায় ৩০ নম্বর বেশি পান। এর ফলে আমি ৭ নম্বর কম পেয়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করি। আমি বাধ্যতামূলক ইংরেজি এবং বাংলায় খুব ভালো নম্বর পাইনি। এ দুটি বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ ও কবিতা বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হয়েছে। তবে সব প্রবন্ধ আমার ভালো লাগেনি। তাই সেগুলো আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়িনি। আমি ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাই। ইতিহাস প্রথম পত্রে আমি ৭৫ নম্বর এবং দ্বিতীয় পত্রে ৮৩ নম্বর পাই। সাধারণত ইতিহাসে ৮০ শতাংশ নম্বর দেওয়া হতো না, আমিও পাইনি। দুটি পত্র মিলিয়ে। পেয়েছিলাম ৭৯ শতাংশ নম্বর। তর্কশাস্ত্রে আমি ৮৫ শতাংশ নম্বর পাই। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর ছিল। পৌরবিদ্যা ও অর্থনীতি দুটি বিষয় নিয়ে একটি পত্র নিয়েছিলাম। পরীক্ষায় পৌরবিদ্যায় খুবই ভালো উত্তর দিয়েছিলাম। ঢাকা কলেজে টেস্টে প্রায় একই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আমি ৭২ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলাম। আমি আশা করছিলাম যে পৌরনীতিতে হয় লেটার পাব, হয় তার কাছাকাছি নম্বর পাব। অন্যদিকে অর্থনীতিতে আমার পরীক্ষা খুবই খারাপ হয়। পাঁচটি প্রশ্নের মধ্যে দেড়টি প্রশ্ন সম্পর্কে আমার ভালো প্রস্তুতি ছিল। বাকি সাড়ে তিনটি প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার হলে বসে আমি তৈরি করেছি। আমার উত্তর পছন্দ না হলে খুবই খারাপ নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যখন ফল পেলাম, তখন দেখলাম অর্থনীতিতে আমি ৮৩ নম্বর পেয়েছি এবং আরও জানলাম সে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটি সর্বোচ্চ নম্বর। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারি আমার অর্থনীতির পরীক্ষক ছিলেন চৌমুহনী কলেজের অর্থনীতির একজন তরুণ অধ্যাপক। আমার উত্তরে অর্থনীতির প্রতিটি প্রশ্নের সঙ্গে সমাজে ধনবৈষম্যের সমস্যাকে বড় করে দেখাই। এটি তার কাছে ভালো লাগে। সে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন অর্থনীতির প্রধান পরীক্ষক। তিনি নিজে এ খাতা দেখেছেন এবং তার কাছেও উত্তর ভালো লেগেছিল। অথচ পৌরনীতিতে ভালো উত্তর দিয়েও কেন মাত্র ৫৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলাম, সেটা আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি। একটি কারণ হয়তো হতে পারে, সে বছর যদি ঢাকা কলেজের কোনো শিক্ষক প্রশ্ন করে থাকেন এবং প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কোনো গুজব রটে থাকে, তাহলে সে বছরের পৌরনীতির খাতা হয়তো বিশেষভাবে দেখা হয়ে থাকতে পারে। এখানে উল্লেখযোগ্য, শুধু আমিই নই, ঢাকা কলেজের আইএ ক্লাসের কোনো ছাত্রই পৌরনীতিতে ভালো নম্বর পায়নি। কারণ যা-ই হোক না কেন, পৌরনীতির নম্বরে আমি হতাশ হই এবং পরবর্তীকালে সাবসিডিয়ারি বিষয় হিসেবে আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান না পড়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ি।

১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা কলেজের ফলাফল ছিল খুবই ভালো। আইএ পরীক্ষায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই ছিল ঢাকা কলেজের। প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন আবদুল্লাহ, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলাম আমি, তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন শাহ মোহাম্মদ ফরিদ, চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিলেন মিজানুর রহমান, নবম স্থান অধিকার করেছিলেন ফজলুল হক এবং দশম স্থান অধিকার করেছিলেন এ কে নাসিমুল কামাল। আইএসসি পরীক্ষায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে চারটি স্থান পায় ঢাকা কলেজ। আইকম পরীক্ষায় প্রথম ১০টি স্থানের মধ্যে দুটি স্থান পায় ঢাকা কলেজ।