» » মীরা-সৌদামিনী

বর্ণাকার

১১

পরদিন দুপুর বেলার কথা। অনিল আপিস গেছে। অম্বুরী খাওয়া-দাওয়া সারিয়া খুকীকে লইয়া পাড়ায় কাহার বাড়ি বেড়াইতে গেল। অম্বুরীর পুত্র একে বীর, তায় টাটকা কথকতা শুনিয়া আসিয়াছে, তাহার উপর আবার আমার মত আদর্শ শ্রোতা পাইয়াছে, জাপানী ভাঙা বন্দুকটা লইয়া হাত-পা নাড়িয়া আস্ফালন করিতেছে, “এবার যখন রাবণরাজা সীটাকে ঢরটে আসবে শৈল টাকা, আমি এই বণ্ডুক নিয়ে যাব, ডশটা মুণ্ডু হওয়া বের ক’রে ডোব। টুমি এই ভাঙাটা সেরে ডিয়োটো শৈল টাকা।”

বলিলাম, “তার চেয়ে একটা নতুন কিনে দিলে কেমন হয়?”

সানু উল্লসিত হইয়া কি বলিতে যাইতেছিল, এমন সময়ে বাইরের রকে আওয়াজ শোনা গেল, “বৌ আছিস?” এবং সঙ্গে সঙ্গে সদু আসিয়া প্রবেশ করিল।

জানা থাকিলেও যেন একটা অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন দেখিয়া অন্তরে চমকিয়া উঠিলাম। সিন্দুরহীন সীমন্ত, অধরে তাম্বুলরাগ নাই, বস্ত্রে পাড়ের স্নিগ্ধতা নাই, পায়ে আলতার চিহ্নমাত্র নাই; একটা অশুভ শুভ্রতায় সদু আসিয়া সামনে দাঁড়াইল। হঠাৎ যেন নূতন করিয়া উপলব্ধি করিলাম—কী রিক্ততাই আসিয়াছে ওর জীবনে।

ও-ই প্রথম কথা কহিল, “শৈলদা? কবে এলে?”

স্বপ্নোত্থিতের মত খানিকটা আবিষ্টভাবেই বলিলাম, “এই যে সদু—আমি কাল—হাঁ, ঠিক তো, কালই সন্ধ্যেয় এসেছি।”

“ভাল আছ তো?”—বলিয়া ফেলিতে যাইতেছিলাম, কিন্তু ততক্ষণে হুঁশ হইয়াছে। সদু বলিল, “বৌ কোথায় গেল? তার কাছে এসেছিলাম, একটু দরকার ছিল।”

“ও!”—বলিয়া চুপ করিয়া গেলাম। ভুলটা সংশোধন করিয়া সানু বলিল, “মা বেড়াটে গেছে…রাবণের গল্প শুনবে সডু পিসীমা?—টা-হলে শৈল টাকার কাছে বসো।”

সদু আমার পানে চাহিয়া বলিল, “না, রাবণের গল্প শুনলে চলবে না আমার, তোমার শৈল টাকাকে শোনাও।”

আমার বুকটা ঢিপ ঢিপ করিতে ছিল, সদুকে আটকান দরকার। সানুকে বলিলাম, “তুমি আরম্ভ তো ক’রে দাও, শুনলে কি যেতে পারবে তোমার পিসীমা?”

সদু হাসিয়া বলিল, “না, আরম্ভ ক’রে কাজ নেই সানু, শুনলে শেষকালে আবার যেতে পারব না! আমার কাজ আছে, অন্য দিন শুনব’খন।”

আমায় প্রশ্ন করিল, “তুমি এখন থাকবে শৈলদা?”

বলিলাম, “না, আজই যাব।”

তাহার পর কথাটা আরম্ভ করিবার একটা সুবিধা পাইয়া বলিলাম, “ভয়ংকর দরকারী একটা কাজ আছে বলে অনিল ডেকে এনেছে।”—বলিয়া স্থিরদৃষ্টিতে সদুর মুখের পানে চাহিয়া রহিলাম। সদু ক্ষণমাত্র বিচলিত বা অপ্রতিভ না হইয়া হাসিয়া প্রশ্ন করিল, “ভয়ংকর কি এমন কাজ? আমি তো জানি সেইখানেই তুমি এমন ভয়ংকর কাজে থাক যে নড়বার ফুরসত থাকে না, দুনিয়ার কি হ’ল খোঁজ রাখতে পার না।…মুকুলে কি হবে?—আমি বৌয়ের কাছে সব শুনেছি”—বলিয়া সেই হাস্যদীপ্ত দৃষ্টিতে আমার পানে চাহিয়া রহিল। আমার চক্ষু নামাইতে হইল। যখন তুলিলাম তখন আমার চোখে জল ভরিয়া গেছে। বলিলাম, “সদু, মাফ করো আমায়! আমি খবর পেয়েছিলাম, কিন্তু সত্যিই খোঁজ নেওয়া যাকে বলে তা হ’য়ে ওঠেনি এখন পর্যন্ত। আর এ অপরাধের জবাবদিহিও নেই কোন আমার কাছে।”

সদু বারান্দার দরজায় পিঠ দিয়া, দুইটা হাত দুয়ারের মাথার উপর রাখিয়া দাঁড়াইয়া ছিল। বলিল, “দেখ কাণ্ড! বেটাছেলের চোখে জল!… কি এমন হয়েছে আমার যে…” আর অগ্রসর হইতে পারিল না; তাড়াতাড়ি হাত দুইটা নামাইয়া দুই হাতে আঁচল ঢাকিয়া কাঁদিয়া উঠিল।

চাপা, নীরব কান্না, সামলাইতে পারিতেছে না, ক্রমাগতই বাড়িয়া যাইতেছে, সমস্ত শরীরটা এক-একবার কাঁপিয়া উঠিতেছে, অঞ্চলের আগল ঠেলিয়া ক্ষুব্ধ স্বর এক একবার উচ্ছ্বসিত হইয়া বাহির হইয়া আসিতেছে।

কিছু বলিলাম না। একটু কাঁদুক। সমস্ত পৃথিবীতে ওর কাঁদিবার জায়গা মাত্র দুইটি—এক অনিলের আর এক আমার সামনে। এত বড় কথাটা ভুলিয়া ছিলাম কি করিয়া? কাঁদুক, বুকে যে পাষাণভার রহিয়াছে, অশ্রু-স্রোতে তাহার এককণাও যদি ক্ষয় করিয়া ধুইয়া লইয়া যাইতে পারে।

সদু অনেকক্ষণ কাঁদিয়া আঁচলটা সরাইয়া লইল; দোরে ঠেস দিয়া মুখটা বাহিরের দিকে করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। এক-একবার সমস্ত শরীরটা সঘন বিক্ষোভে কাঁপিয়া উঠিতেছে। সদু শোকের উচ্ছ্বাসে অপ্রতিভ হইয়া পড়িয়াছে। যাইতেও পা উঠিতেছে না।

সানু হতভম্ব হইয়া মুখ নীচু করিয়া ভাঙা বন্দুকটা নাড়াচাড়া করিতেছে, এক একবার চক্ষুপল্লব তুলিয়া আমাকে আর সদুকে দেখিয়া লইতেছে।

একটু পরে একবার কোনরকমে আমার মুখের পানে চাহিয়া সদু বলিল, “এখন যাই শৈলদা।”

পা বাড়াইতে আমি বলিলাম, “একটু দাঁড়াও সদু।”

মাথা নীচু করিয়া চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। আরও খানিকক্ষণ চুপ করিয়া রহিলাম দু-জনে, তাহার পরে আমি বলিলাম, “অনিলের কাছে সব শুনলাম সদু,—তুমি এখানে আসবে শুনে…”

সদু বাধা দিয়া বলিল, “না, আসছি না শৈলদা, সেই কথাই বলতে এসেছিলাম বৌকে।”

আমি অতিমাত্র বিস্ময়ান্বিত হইয়া ওর মুখের পানে চাহিয়া বলিলাম, “আসছ না!—কেন?”

সৌদামিনীর মুখটা যেন একটা মাত্র ভাব-ফোটানো পাত্থরের মূর্তির মত কঠিন হইয়া উঠিল, “কেন আসব শৈলদা? আমার দুখে অনিলদা ‘আহা’ বলতে গেছেন বলে এই প্রতিদান দোব আমি? ওঁর সর্বনাশ করব, ওঁর স্ত্রীর সর্বনাশ করব, ওঁর সন্তানদের কপালে কলঙ্কের ছাপ দিয়ে বংশটাকে চিরকালের জন্য দাগী ক’রে দোব? আমি যে এক সময় এটা ভাবতে পেরেছিলাম কি ক’রে, অনিলদার কথায় কি ক’রে ‘হাঁ’ বলতে পারলাম, তাই ভেবে সারা হচ্ছি।…আমার দোষ নেই শৈলদা, আমি অনিলদাকে বলেইছিলাম আমার মাথার ঠিক নেই, ভেবে কাজ করবার, ভেবে কথা বলবার শক্তি আমি হারিয়েছি। কিন্তু ওঁর সঙ্গে দেখা ক’রে ফেরবার পর আমি স্থির মনে কথাটা ভেবে দেখেছি, যতই ভেবেছি ততই আশ্চর্য হয়েছি—ওঁর এতবড় সর্বনাশ আমি কি ক’রে করতে যাচ্ছিলাম! আমি তাই ছুটে এসেছি এই অসময়ে, যতক্ষণ না বৌকে বলতে পারছি ততক্ষণ আমার মনে একটু শান্তি নেই শৈলদা। বৌ জানে কথাটা, দু-জনে মিলে আমায় দিয়ে এই পাপটা করাতে বসেছিল। আশ্চর্য!—ওদের দু-জনকে কি এক ধাতুতে গড়েছিলেন বিধাতা? বৌ মেয়েছেলে, একটু পরামর্শ দিতে পারলে না অনিলদাকে? আর কিছু না হোক নিজের স্বার্থটাও তো দেখা উচিত ছিল। বুঝলাম ও নিজের স্বামীকে খুব ভাল ক’রে চেনে, সেদিক দিয়ে ভয় নেই এর, কিন্তু স্ত্রীর ঈর্ষা বলে তো একটা জিনিস থাকতে হয়? এর তাও নেই?—ও একেবারে সব ধুয়ে মুছে বসে আছে?”

আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম, প্রশ্ন করিলাম, “বেশ, এলে না, তারপর?”

সদু বলিল, “এর আর তারপর নেই শৈলদা। না-আসা মানে নিজের অদৃষ্টকে মেনে নেওয়া। ভেবে দেখলাম সেইটেই মানুষের স্বধর্ম;—এই নিজের অদৃষ্টকে চিনে তাকে মেনে। আমি এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমার জীবনের গতি কোন্ দিকে। যার এই রকম বিয়ে, এই রকম বিধবা হওয়া, এই রকম ভাবে চিরজন্ম এমন একজনের অন্নদাসী হ’য়ে থাকা যার সঙ্গে কোন সম্বন্ধ নেই—তাকে ভগবান কিসের জন্যে সৃষ্টি করেছেন সে তো স্পষ্ট। ভাগবত-কাকা সময় সময় আমাকে গীতা, ভাগবত—এই সব থেকে শ্লোক শোনান—হ্যাঁ, ঠিক কথা, মন্ত্রও দিয়েছেন আমায়।—তুমি আশ্চর্য হচ্ছ?— বলিদানের পাঁঠার কানে পুরুত মন্ত্র দিয়ে দেয় না? তাঁর সবচেয়ে প্রিয় শ্লোক হচ্ছে—‘ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন যথা নিযুক্তোঽস্মি তথা করোমি’। আজ সাত বছর ধ’রে এই মারাত্মক শ্লোকটার বিরুদ্ধে লড়েছি শৈলদা, কিন্তু আর না, এবার হৃষীকেশ আর তাঁর ভক্তেরই শরণ নোব ঠিক করেছি। ভেবে দেখলাম অনিলদার মত মানুষকে ধ্বংস করার চেয়ে সে ঢের ভাল। কেননা এই আমার স্বধর্ম, আর তা বোধ হয় একেই ‘স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ’ বলে প্রশংসা করেছেন। সত্যিই তো—সব রকমে মরাই যদি আমার স্বধর্ম হয় তো আমিই মরব—একজন; অনিলা মরবে কেন? বৌ মরবে কেন, আর সবচেয়ে—ঐ দুগ্ধপোষ্য শিশুও কি করেছে যে……”

সদু আর পারিল না। মুখটা বাহিরের দিকে ঘুরাইয়া লইল। দেখিতেছি কান্না চাপিবার জন্য নীচের ঠোঁটটাকে এক-একবার নিষ্ঠুরভাবে কামড়াইয়া ধরিয়েছে। আর পারিল না; অশ্বস্তির মাঝে পড়িয়া সানু চোরের মত নামিয়া বাহিরে চলিয়া যাইতেছিল, তাহাকে বুকে চাপিয়া উদ্বেলিত কান্নার মাঝে বলিয়া উঠিল, “আমার কি দশা হবে সানু?…ওঃ, বাবা গো, আর সহ্য হয় না কষ্ট!”

সানুকে বুকে চাপিয়া কপালটা কপাটে লাগাইয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কাঁদিতে লাগিল।

সে এক অসহ্য দৃশ্য,—পাষাণও বোধ হয় গলিয়া যায়; আমার সমস্ত শরীর-মন চাপিয়া যেন একটা জোয়ার ঠেলিয়া উঠিতেছে। একটা সর্বব্যাপী বিরাট দুঃখের উচ্ছ্বাস যাহা আর সব থেকেই যেন আমায় বহু ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়াছে—ক্ষুদ্র সুখ-দুঃখ, ক্ষুদ্র ভালবাসা, ক্ষুদ্র বিচার-কল্পনা, সব থেকেই। আমি আর থাকিতে পারিলাম না; উঠিয়া গিয়া সদুর পাশে দাঁড়াইয়া গাঢ়স্বরে বলিলাম, “অত নিরাশ হ’য়ো না সদু, আরও একটা উপায় আছে।”

কোন উত্তর হইল না, সহানুভূতির কথায় কান্নাটা শুধু আরও বাড়িয়া গেল। একটু চুপ করিয়া আবার বলিলাম, “আরও একটা উপায় আছে সদু, একেবারেই উপায়হীন করেন না ভগবান।”

সৌদামিনী ধীরে ধীরে মুখটা তুলিতে যাইতেছিল, আবার কি ভাবিয়া নামাইয়া লইল, প্রশ্ন করিল, “কি?”

কি ভাবে যে বলিব কথাটা প্রথমটা ঠিক করিতে পারিলাম না; তাহার পর নিজের মনটা গুছাইয়া লইয়া বলিলাম, “তোমায় আর আমায় নিয়ে কথা সদু, অবশ্য ধর্ম থাকবেন মাঝখানে।”

সদু কোন উত্তর দিল না। তেমনই ভাবে দাঁড়াইয়া রহিল।

সানুকে বুকে লইয়া, কপাটলগ্ন করতলে কপাল দিয়া কোন উত্তর দিল না। শুধু একটু পরে বুঝিতে পারিলাম অশ্রুধারা আরো প্রবলতর হইয়া নামিয়াছে।

বলিলাম, “থাক্ সদু, ভেবে দেখ, তোমার উত্তরের জন্যে না হয় আর একদিন আসব শীগ্‌গির।”

আর একদিন থাকিয়া গেলাম। পরদিন অনিল আহার করিয়া আপিসে বাহির হইয়া গেলে, অম্বুরী আমার সামনে আসিয়া জানালার খিলানের নীচে বসিল, একটু ইতস্ততঃ করিয়া বলিল, “সব শুনেছ তো ঠাকুরপো? কি হবে?”

কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই ওর চেহারাটা হইয়া পড়িল ভীত-ত্রস্ত হরিণীর মত। বুঝিলাম এই ওর এখনকার আসল চেহারা, যদিও অনিলের যাওয়ার আগে পর্যন্ত ও ছিল সেই চিরকালের হাস্যমুখরা অম্বুরী। এই এক নারী যে উদয়াস্ত অভিনয় করিয়া পরিশ্রান্ত হইয়া পড়িতেছে। আমি জানি অম্বুরীর এ কাজ নয়, এত বড় স্বার্থত্যাগ ওর দ্বারা সম্ভব নয়। যে একটা বড় স্বার্থত্যাগ করিবে তাহার তেমনই বড় একটা পৃথক সত্তা থাকা দরকার। সে সত্তা অম্বুরীর কোথায়?

একটা উপায় ঠাহর করিয়াছি বলিয়াই একটা পরিহাস করিলাম, বলিলাম, “বাঃ, এই শুনলাম তুমি নিজেই একটি সতীনের জন্যে…”

অম্বুরী অসহিষ্ণুভাবে বলিয়া উঠিল, “ঠাট্টা রাখো, ঠাট্টার ঢের সময় আছে ঠাকুরপো। ওঁকে যদি বাঁচাতে না পারে তো সদু-ঠাকুরঝি যে পথ ধরেছিল আমিও সেই পথ ধরব ঠিক করে ফেলেছি।”

অম্বুরীর চেহারা দেখিয়া ভীত হইয়া উঠিলাম। একটু ক্ষুণ্ণ হইয়াই বলিলাম, “বাড়াবাড়ি হ’য়ে যাচ্ছে অম্বুরী। তাহলে তুমি রাজি হ’লে কেন সদুকে জায়গা দিতে?”

অম্বুরী মরিয়া হইয়া উঠিয়াছে, বলিল, “কিছু শুনব না। ওঁকে বাঁচাও, নইলে ঐ কথা;—অম্বুরীকে তোমরা আর বেশি দিন পাবে না।”

খানিকক্ষণ উভয়েই চুপ করিয়া রহিলাম। অম্বুরীর রাজি হওয়ার অন্তরালে এই সঙ্কল্প। আমি ধীরে ধীরে বলিলাম, “উপায় একটা ঠাউরেছি অম্বুরী।”

অম্বুরী উৎকণ্ঠিত ভাবে বলিল, “কি, বলো!”

সঙ্গে সঙ্গে নিজেই বলিল, “ও বুঝেছি, উনি বলেছিলেন বটে একবার।”

তাহার পর আমার উপর স্থিরভাবে চাহিয়া বলিল, “না, সেও হবে না; বংশে একটা দাগ লাগাবে ওর জন্যে?”

ব্যথিত কণ্ঠে বলিলাম, “তাহলে সৌদামিনী যায় কোথায়?”

অম্বুরী দৃঢ় অথচ অনায়াসকণ্ঠে বলিল, “ঢের পথ আছে; একবার ফিরে আসতে হয়েছে বলে বার বারই কিছু ফিরতে হবে না।”

অম্বুরীর উপর রাগ করিতে পারিলাম না। সংস্কারের ডেলা বাঙালী ঘরের আদর্শ গৃহস্থ বধু,—কিন্তু সেই সংস্কার একদিকে যেমন ওর অন্তরে স্বর্গের অমৃত সঞ্চয় করিয়া রাখিয়াছে, অন্য দিকে দুর্বলও তো করিয়াছে, তেমনই!

জন্ম-জন্মান্তরের ভালবাসা অম্বুরীর মত মেয়েই পারে দিতে, কিন্তু মনে রাখিতে হইবে অম্বুরী শৃঙ্খল, ওর কাছে কর্মের মুক্তি নাই, এমন কি চিন্তারও মুক্তি নাই।