ভাটির দেশ

বাঁচা

লুসিবাড়িতে যখন পৌঁছলাম তখনও আমার শরীর বেশ খারাপ। নীলিমা হরেনকে বকাবকি করতে লাগল। বলল, “তোমার জন্যেই এরকম হল। কেন বারবার ওকে টেনে নিয়ে যাও মরিচঝাঁপিতে? দেখো তো এখন, কীরকম অসুস্থ হয়ে পড়ল মানুষটা।” সুস্থ যেContinue Reading

ভাটির দেশ

রবিবারের ডাকঘর

সকাল সকালই শুয়ে পড়েছিল পিয়া। মাঝরাত্রে ঘুমটা চটে গেল হঠাৎ, উঠে বসে পড়ল বাঙ্কের ওপর। কয়েকটা মিনিট ধরে চেষ্টা করল যদি আবার ঘুম আসে। লাভ হল না। হাল ছেড়ে দিয়ে কম্বলটা গায়ে পেঁচিয়ে নিয়ে বেরিয়েContinue Reading

ভাটির দেশ

একটি হত্যা

মেঘার কেবিনগুলোর প্রত্যেকটার মধ্যেই একটা করে উঁচু প্ল্যাটফর্ম মতো জায়গা আছে, বাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করার জন্য। সেখানে কম্বল চাদর আর বালিশ পেতে একটা বিছানা বানিয়ে নিয়েছিল কানাই। খুব একটা শৌখিন কিছু না, তবে মোটামুটি আরামদায়ক।Continue Reading

ভাটির দেশ

জেরা

পিয়ারা যখন বোটে গিয়ে উঠল ততক্ষণে ভোর হয়ে এসেছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মেঘার নোঙর তুলে ইঞ্জিন চালু করে দিল হরেন। বলল, যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে সরে পড়া যায় ততই মঙ্গল। বাঘ মারার খবর ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টেরContinue Reading

ভাটির দেশ

মিস্টার স্লোয়েন

দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল, ভাটাও শেষ হতে চলেছে, এমন সময় দূরে দেখা গেল গর্জনতলা। আস্তে আস্তে মেঘা এগিয়ে চলল দহটার দিকে। দূরবিন হাতে ডেকের ওপর দাঁড়িয়েছিল পিয়া। ডলফিনের দঙ্গলটা চোখে পড়তেই খুশিতে ওর মনটা নেচেContinue Reading

ভাটির দেশ

ক্রেতি

বেলা বাড়ার সাথে সাথে দিক বদলাল নদীর স্রোত।  জল যেই বাড়তে আরম্ভ করল, শুশুকগুলোও সরে যেতে লাগল দহটা থেকে। আস্তে আস্তে শেষ ডলফিনটাও যখন চলে গেল, মেঘার দিকে ডিঙির মুখ ফিরিয়ে দাঁড় টানতে শুরু করলContinue Reading

ভাটির দেশ

চিহ্ন

আজকেও তাড়াতাড়ি শুতে চলে গেল পিয়া। আগের রাতে ঘুম ভাল হয়নি, তাই কানাইও একটু আগেভাগেই শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম বিশেষ হল না। বেশ জোরে হাওয়া বইছিল বাইরে, আর ভটভটির দুলুনির সাথে সাথে যেন ছেলেবেলার একটাContinue Reading

ভাটির দেশ

আলো

ডেটাশিটগুলো সরিয়ে রেখে পিয়া যখন কেবিন থেকে বেরিয়ে এল, ততক্ষণে আলো বেশ কমে এসেছে। বোটের সামনের দিকে যাওয়ার পথে কানাইয়ের কেবিনের সামনে এসে একটু দাঁড়াল ও, বোঝার চেষ্টা করল ভেতর থেকে কোনও আওয়াজ আসছে কিনা।Continue Reading

ভাটির দেশ

খোঁজ

ভোরবেলা কেবিন থেকে বেরিয়ে পিয়া দেখল ঘন কুয়াশা যেন মুড়ে রেখেছে মেঘাকে। কেবিনের সামনে থেকে বোটের দুই প্রান্ত দেখা যাচ্ছে না। ডেকের সামনের দিকে এগোতে গিয়ে আরেকটু হলেই কানাইয়ের গায়ের ওপর হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাচ্ছিল ও।Continue Reading

ভাটির দেশ

হতাহত

স্রোত তখন ঘুরতে শুরু করেছে, এমন সময় অবশেষে জলের ওপর উঠে থাকা একটা তেকোনা পাখনা চোখে পড়ল পিয়ার। ডিঙি থেকে প্রায় কিলোমিটারখানেক সামনে, পাড়ের কাছ ঘেঁষে। যন্ত্রে ডলফিনটার অবস্থান মেপে দেখা গেল গর্জনতলা থেকে দক্ষিণ-পুবেContinue Reading

ভাটির দেশ

উপহার

সন্ধে নামার সময় জিপিএস-এ ডিঙির অবস্থান মেপে পিয়া দেখল গর্জনতলা তখনও প্রায় বারো কিলোমিটার দূরে। বোঝাই যাচ্ছিল রাতের মধ্যে ওখানে গিয়ে আর পৌঁছনো যাবে না। কিন্তু পিয়ার মনে হল তাতে ভাবনার কিছু নেই। হরেন মনেContinue Reading

ভাটির দেশ

মিঠে জল, নোনা জল

রাতে এত গরম পড়েছিল যে মাঝখানে একবার উঠে গিয়ে কেবিনের দরজাটা খুলে দিল কানাই–যদি হাওয়া ঢোকে খানিকটা। তারপর দরজা খোলা রেখেই আবার গিয়ে শুল বাঙ্কের ওপর। পাল্লার ফাঁক দিয়ে বাইরের একটা ফালি চোখে পড়ছে। নরমContinue Reading

ভাটির দেশ

দিগন্তে

ভোরবেলা ঘুম ভাঙতে পিয়া দেখল মুখ মাথা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে রাতের শিশিরে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, সকালের দিকটায় জলের ওপর রোজ যেমন কুয়াশা থাকে আজকে তার চিহ্নমাত্র দেখা যাচ্ছে না। আগের রাতে এত গরম ছিল,Continue Reading

ভাটির দেশ

ক্ষয়ক্ষতি

খাঁড়ির মুখ থেকে ফকির যখন ডিঙিটাকে ঠেলে বের করল, তখন সবে মাত্র সাড়ে পাঁচটা বেজেছে। বাতাসের বেগ বেড়েছে, কিন্তু আকাশের বেশিরভাগটাই পরিষ্কার দেখে একটু ভরসা পেল পিয়া। এমনকী শুরুর দিকে একটু সুবিধাই হল ওদের, যেদিকেContinue Reading

ভাটির দেশ

তরী থেকে তীরে

নৌকো যখন গর্জনতলায় পৌঁছল, এমনিতে তখন ভাটার সময়। কিন্তু ঝড়ের টানে এমন ফুলে উঠেছে নদী যে ভরা জোয়ারেও অতটা জল উঠতে কখনও দেখেনি পিয়া। হাওয়ার তোড়ে নদীটা যেন খানিকটা হেলে পড়েছে একদিকে। জলটাকে যেন ক্রমশContinue Reading

ভাটির দেশ

ঢেউ

একটা একটা করে মিনিট যাচ্ছে আর ক্রমশ বড় হচ্ছে উড়ে আসা জঞ্জালের মাপ। শুরুতে শুধু ছোট ছোট ডালপালা আর কাঠকুটো উড়ে আসছিল হাওয়ার মুখে, তাদের জায়গায় এখন পাক খেতে খেতে ধেয়ে আসছে গোটা গোটা নারকেলContinue Reading

ভাটির দেশ

পরদিন

খুবই ধীর গতিতে চলছিল মেঘা। গর্জনতলার দিকে দু’ভাগ পথ এগোনোর পর দূরে একটা ডিঙি চোখে পড়ল–গত কয়েক ঘণ্টায় এই প্রথম। ঝকঝকে পরিষ্কার দিন; একটু ঠান্ডা আছে, তবে হাওয়া নেই। ঝড় কেটে যাওয়ার পর জল আস্তেContinue Reading

ভাটির দেশ

বাড়ি : একটি উপসংহার

মাসখানেক কেটে গেছে ঝড়ের পর। একদিন দুপুরে নিজের ডেস্কে বসে কাজ করছে নীলিমা, এমন সময় হাসপাতাল থেকে একজন নার্স ছুটতে ছুটতে এসে খবর দিল বাসন্তীর লঞ্চ থেকে ‘পিয়াদিদিকে’ নামতে দেখেছে ও, এই ট্রাস্টের অফিসের দিকেইContinue Reading

ভাটির দেশ

লেখকের কথা

এই উপন্যাসের সব চরিত্রই কাল্পনিক। প্রধান দুই পটভূমি–লুসিবাড়ি এবং গর্জনতলারও বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই। কাহিনিতে উল্লিখিত অন্য কয়েকটা স্থাননাম, যেমন ক্যানিং, গোসাবা, সাতজেলিয়া, মরিচঝাঁপি এবং এমিলিবাড়ি, অবশ্য লেখকের কল্পনাপ্রসূত নয়। উপন্যাসে যেমনভাবে  লেখা হয়েছে, সেইভাবেইContinue Reading

ভাটির দেশ

অনুবাদ প্রসঙ্গে

তারপর, যেতে যেতে যেতে যেতে এক নদীর সঙ্গে দেখা। এক নয়, অনেক। শত শত শাখাপ্রশাখা নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে দখিন বাংলার সীমানা জুড়ে। ছোট বড় একশোরও বেশি দ্বীপ জড়িয়ে, ডাইনে ঘুরে বয়ে বেঁকে এই মোহনা সেইContinue Reading