মরিচঝাঁপি
সবে ভোর হয়েছে। জানালায় পর্দা নেই, তাই নরম রোদে ধুয়ে যাচ্ছে ঘরটা। সাতসকালেই ঘুম ভেঙে গেল কানাইয়ের। মুখহাত ধুয়ে জামাকাপড় পালটে একটু বাদে নীচে নেমে এল ও। টোকা দিল নীলিমার দরজায়। “কে?” কেমন যেন কাঁপাContinue Reading
সবে ভোর হয়েছে। জানালায় পর্দা নেই, তাই নরম রোদে ধুয়ে যাচ্ছে ঘরটা। সাতসকালেই ঘুম ভেঙে গেল কানাইয়ের। মুখহাত ধুয়ে জামাকাপড় পালটে একটু বাদে নীচে নেমে এল ও। টোকা দিল নীলিমার দরজায়। “কে?” কেমন যেন কাঁপাContinue Reading
দুপুরের দিকে জল যখন বাড়তে শুরু করল, পিয়া লক্ষ করল আগের মতো অত ঘন ঘন আর দেখা যাচ্ছে না ডলফিনগুলোকে। ডেটাশিটটা এক ঝলক দেখে নিঃসন্দেহ হল ও জোয়ার আসার সাথে সাথে মনে হচ্ছে চারিদিকে ছড়িয়েContinue Reading
কানাই নীলিমার দরজায় গিয়ে আবার যখন কড়া নাড়ল তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে বিছানা থেকে উঠে মাসি জামাকাপড় পালটে নিয়েছে দেখে ভাল লাগল ওর। “আরে কানাই,” নীলিমা ডাকল হাসিমুখে, “আয় আয়, ভেতরে আয়।” সকালেরContinue Reading
ঠিক দুপুর নাগাদ, জল বেশ খানিকটা বেড়ে ওঠার পর পরিষ্কারই বোঝা গেল আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে শুশুকগুলো। শেষের কয়েকবার মা আর ছানার জুড়িটাকেই শুধু দেখতে পেল পিয়া। জলের ওপর নানারকম সব কসরত দেখাল তারা।Continue Reading
গেস্ট হাউসে ফিরে কানাই দেখল টিফিন ক্যারিয়ারে করে দুপুরের খাবার রেখে গেছে। ময়না। সাদামাটা খাবার ভাত, মুসুরির ডাল, একটা চচ্চড়ি আলু, মাছের কাটা আর কী একটা শাক দিয়ে। শাকটা ঠিক চিনতে পারল না কানাই। আরContinue Reading
শেষবার নদী পেরোনোর পর ফকিরের নৌকো এসে থামল অগভীর জলে, পাড় থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে। পিয়ার আন্দাজ একেবারে ঠিক প্রমাণিত হয়েছে, সন্দেহের কোনও অবকাশই নেই আর–সাউন্ডিং-এর ফলাফল অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে বাঁকের মুখে, নদীর কনুইয়েরContinue Reading
হঠাৎ দপদপ করতে করতে নিভে গেল টেবিলের ওপরের আলোটা। তখনও মেসোর ঘরে বসে একমনে লেখাটা পড়ছিল কানাই। একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে খানিকক্ষণ বসে রইল চুপ করে। বাইরে জেনারেটারের ধকধক শব্দটা কমতে কমতে মিলিয়ে গেল। একটা নিঝুমContinue Reading
ডলফিনগুলোর ধীর নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দে একটু ঝিমুনি মতো এসে গিয়েছিল পিয়ার। হঠাৎ যেন স্বপ্নের মধ্যে থেকে ভেসে আসা প্রচণ্ড একটা গুমগুম আওয়াজে চটকাটা ভেঙে গেল। চোখ খুলে উঠে বসতে বসতেই আবার চারদিক চুপচাপ। প্রতিধ্বনির রেশটুকুওContinue Reading
অবশেষে কুমিরমারি। সেখানেই সেদিন মরিচঝাঁপির কথা প্রথম শুনলাম আমি। দুটো দ্বীপের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। যে স্কুলটায় গিয়েছিলাম সেখানকার মাস্টারমশাইদের মধ্যেও অনেকেই দেখেছেন যখন রিফিউজিরা আসে। হাজারে হাজারে লোক নাকি এসেছে–বড় নৌকোয়, ছোট নৌকোয়–যেContinue Reading
সকালেও দেখা গেল বাড়ি যাওয়ার কোনও উদ্যোগ করছে না ফকির। পিয়াও তাড়া দেওয়ার প্রয়োজন মনে করল নাঃ যতক্ষণ এই ডলফিনগুলোর সঙ্গে কাটাতে পারে ততই ওর ভাল। খানিকটা বেলায় জল ফের বাড়তে শুরু করা পর্যন্ত দহটারContinue Reading
বাইরে ঝড়ের গর্জন থামার কোনও লক্ষণ নেই। বোঝা গেল সে রাতে আর লুসিবাড়ি ফেরা সম্ভব নয়। “সার,” একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অবশেষে বলল হরেন, “মনে হচ্ছে কুসুমের ঘরের মেঝেতেই আজকের রাতটা কাটাতে হবে আমাদের।” “যা ভালContinue Reading
খাঁড়ির মধ্যে মা ডলফিন আর তার ছানা যখন মাছ ধরতে ব্যস্ত, তখন পাশের খালে ডিঙিটাকে স্থির রাখতে দম বেরিয়ে যাচ্ছিল ফকিরের। স্রোত খুব বেশি এখানে, তার মধ্যেই কোনওরকমে একই জায়গায় চক্কর কেটে যাচ্ছিল ফকির, যাতেContinue Reading
ভেবেছিলাম মরিচঝাঁপির সাময়িক উত্তেজনা আমার চেহারায় যে ছাপ ফেলেছে, লুসিবাড়িতে ফিরতে ফিরতে তা মিলিয়ে যাবে : নদীর হাওয়ায় শরীরও স্নিগ্ধ হবে, আর হরেনের নৌকোর দুলুনিতে ধীর হয়ে আসবে আমার উত্তেজিত হৃৎস্পন্দন। কিন্তু কই? দেখা গেলContinue Reading
শুরুতে জলের স্রোত ছিল উলটোদিকে, আর দাঁড় টানছিল ফকির একা, ফলে খুবই ধীরে এগোচ্ছিল নৌকো। প্রায় ঘণ্টাখানেক চলার পর জিপিএস-এ নৌকোর অবস্থান মেপে পিয়া দেখল এতটা সময়ে মাত্র তিন কিলোমিটার এসেছে ওরা। এতক্ষণে হঠাৎ ওরContinue Reading
যে-কোনও একটা ছুতো পেলেই আবার মরিচঝাঁপি যাওয়ার জন্য মনে মনে তৈরিই। ছিলাম আমি, কিন্তু হরেন যে সুযোগ করে দিল তার চেয়ে ভাল অজুহাত আর কিছু হতে পারত না। ইতোমধ্যে ওর ছেলের ভর্তির ব্যবস্থাও করে দিয়েছি,Continue Reading
স্নান সেরে জানালার পাশে চেয়ারটায় গা ডুবিয়ে বসল পিয়া। খানিক পরে দেখল ওর আর ওঠার ক্ষমতা নেই। এই কদিন স্রেফ উবু হয়ে আর আসন করে বসে থাকার পর একটা হেলান দেওয়ার জায়গা পেয়ে কেমন যেনContinue Reading
পরের সপ্তাহেই আবার মরিচঝাঁপি যাব ঠিক করেছিলাম, কিন্তু হেডমাস্টারের রিটায়ার করার সময় অনেক টুকিটাকি কাজ আর নিয়মমাফিক অনুষ্ঠান থাকে–সেই সবের মধ্যে আটকে গেলাম আমি। অবশেষে সব ঝামেলা মিটল, সরকারিভাবে শেষ হয়ে গেল আমার কর্মজীবন। কয়েকদিনContinue Reading
লুসিবাড়ি হাসপাতালের ট্রেনি নার্সদের জন্যও স্টাফ কোয়ার্টার্সের ব্যবস্থা আছে। ময়না সেখানেই থাকে। বাঁধের পাশেই একটা টানা লম্বা ব্যারাকের মতো বাড়িতে পরপর সব কোয়ার্টার্স। ট্রাস্টের সীমানার একপ্রান্তে মিনিট পাঁচেক লাগে গেস্ট হাউস থেকে হেঁটে যেতে। বাড়িটারContinue Reading
কুসুম লুসিবাড়িতে আসায় আদৌ খুশি হয়নি নীলিমা। সেইদিন সন্ধেবেলা আমাকে বলল, “জানো, কুসুম আজকে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। ওই মরিচঝাঁপির ঝামেলায় ট্রাস্টকে জড়াতে চাইছিল। ওরা চায় ওখানে কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ট্রাস্ট ওদের সাহায্যContinue Reading
© All Right Reserved by Eduliture ২০২৫