৮
ছোট মেয়েটাকে বুকে করিয়া একটু ঘুরিলাম। ওর সব চেয়ে বিস্ময়ের বস্তু হইয়াছে আমার চশমা। মুখ ঘুরাইয়া-ফিরাইয়া অনেকক্ষণ পর্যন্ত দেখিল; তাহাতে রহস্য পরিষ্কার না হওয়াতে হাত বাড়াইল। আমি হাতটা ধরিয়া লইতে মুখ আগাইয়া আনিয়া যেই একটা কামড় দেওয়ার চেষ্টা করিয়াছে, খোকা চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া বলিয়া উঠিল, “ঠব্বনাশ! ওকে খেটে ডিও না শৈল টাকা, পেটের অসুখ করবে। খুকু টশমা খেও না! টেটো! বিচ্ছিরি!”
মুখটা কাল্পনিক তিক্তস্বাদে যতটা সম্ভব বিকৃত করিয়া বোনকে বিরত করিবার চেষ্টা করিল। খোকা অভিভাবক হইয়া উঠিতেছে। যাহার নীচে ছোট বোন রহিয়াছে সে কি নিজে আর ছোট থাকিতে পারে কখনও?
অম্বুরী চা আর হালুয়া তৈয়ার করিয়া আমার মাদুরের পাশে রাখিয়া নিজে আমার সামনে সিঁড়িটাতে বসিল। মাদুরে খোকা আর খুকীকে বসাইয়া লইয়া প্রশ্ন করিলাম, “জেঠাইমা কোথায়? –ওঠেননি এখনও?”
অম্বুরী বলিল, “উঠেছেন, হারাণীর মা ভেতরে পাট করছে, যতক্ষণ তার আওয়াজ পাবেন বকর বকর করবেন। এ সময়টা আমি নিশ্চিন্দি থাকি একটু। পাট সেরে হারাণীর মা-ও যাবে, ওঁকেও হাত-পা ধুইয়ে জপে বসিয়ে দোব। এই আমার রুটিন”—বলিয়া গর্বের অভিনয় করিয়া আমার পানে চাহিয়া বলিল, “দেখ, আমিও ইংরিজী জানি ঠাকুরপো।”
সানু মায়ের হাতটা টানিয়া ভীতভাবে বলিল, “খুকু শৈল টাকার টপমা খাবে মা, গলায় আট্টে যাবে না?”
তাহার নিজের হাতে মুঠাভরা হালুয়া; মা বলিল, “তুমিও তা বলে হালুয়া অতখানি খেয়ো না যেন, চশমার মত পেটে যেতে আটকায় না বলে ওতে পেটের অসুখ করবে না নাকি?”
তাহার পর গল্প শুনিবার ভঙ্গিতে আবার একচোট ভাগ করিয়া গুটাইয়া-সুটাইয়া বসিয়া বলিল, “এবার যা বলছিলাম—কেমন বাড়ি, কেমন লোক সব? তোমার ছাত্রী…”
হাসিয়া ফেলিয়া দুষ্টামির দৃষ্টিতে আমার পানে চাহিল। আমি না বুঝিবার ভান করিয়া গম্ভীরভাবে প্রশ্ন করিলাম, “বয়সের কথা জিজ্ঞেস করছ? —ন’ বছর। বেশ চমৎকার মেয়ে, একটুও বেগ পেতে হয় না অ’মার পড়াতে।”
অম্বুরী হাসিয়া একটু যেন অপ্রতিভ হইয়া গেল। একবার আমার পানে চাহিয়া দৃষ্টি নত করিয়া রকের উপর ধীরে ধীরে তর্জনীর ডগাটা ঘষিতে লাগিল।
কিন্তু মেয়েছেলেই তো? এসব বিষয়ে ওরা কবে হারিয়াছে কাহার কাছে? নিজেকে সামলাইয়া লইয়া মুখটা আমার মতই গম্ভীর করিয়া ফেলিল! বলিল, “বেশ ভাল হয়েছে—হাল্কা কাজ; আর তোমার বন্ধুর মুখে শুনেছিলাম বাড়িটাও ছিমছাম—কর্তা নিজে, গিন্নী, আর একটি মেয়ে—তোমার ছাত্রীর বোন। … কোথায় বিয়ে হয়েছে তার ঠাকুরপো? —খুব বড়লোকের বাড়ি? এদের তো শুনেছি দুটো মটরগাড়ি, তাদের?”
কিন্তু অত ঘুরাইয়া কথা বাহির করিবার দরকার ছিল না অম্বুরীর, কাল সন্ধ্যায় অনিলের কাছে যে সেই একবার গোপন করিবার চেষ্টা করিয়াছিলাম,তাহার পর হইতে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম এদের দু-জনের কাছে সমস্ত কথাই একটি একটি করিয়া মেলিয়া ধরিব, অবশ্য স্ত্রীলোক হিসাবে অম্বুরীর সামনে খানিকটা আব্রু রক্ষা করিয়া। আমার এই তিনমাসব্যাপী সমস্ত অভিজ্ঞতা বলিয়া গেলাম অম্বুরীকে—মিস্টার রায়ের কথা, অপর্ণা দেবীর পুত্রগত অদ্ভুত বেদনাময়-জীবনের কথা, ভুটানীর সহিত দরদের সমতার জন্য তাঁহাদের অসম সখিত্বের কথা, রাজু বেয়ারার গুরুত্বপূর্ণ শব্দপ্রীতি, ইমানুলের অদ্ভুত আত্ম-প্রবঞ্চনা, বিলাস-ঝির কথা। গভীর অভিনবেশের সহিত অম্বুরী সব শুনিয়া যাইতে লাগিল। ওর স্বভাবটাই এমন—আর বিবাহের পর থেকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ আর মুক্ত মেলা-মেশার মধ্য দিয়া অনিল এমন অভ্যাস করাইয়া দিয়াছে যে আমায় একটু সংকোচ করে না অম্বুরী, আজ যেন কোন দূরত্বই রাখিল না। গল্প শুনিতে শুনিতে হাসিল, কখনও চক্ষে বস্ত্র দিল। যখন প্রয়োজন মনে হইল, নিঃশব্দে নিজের মন্তব্য দিল—“আহা, নিজে সুন্দর নয় বলে সুন্দরকে চাইতে পারবে না বেচারি? অবিশ্যি মেমসাহেব বলে একটু বাড়াবাড়ি হ’য়ে গেছে।.. হাসিও পায় বাপু, করছিস্ মালীগিরি, বিয়ে করতে হবে পাদ্রীসাহেবের ভাইঝিকে!”
অম্বুরী ডুকরাইয়া হাসিয়া ওঠে। ঘরের মধ্যে ঝিয়ের ঘর-ঝাঁট দেওয়ার শব্দ থামিয়া যায়; বোধ হয় একটু বেখাপ্পা ঠেকে ওদের কানে।
তাহার পর বলি তরুর কথা এবং সব শেষে ও সবচেয়ে সবিস্তারে মীরার কথা। অবস্থা যেমন ভাবে অনিলকে বলিয়াছি অম্বুরীকে ঠিক সে ভাবে সে-ভাষায় বলা চলে না। কর্মে নিয়োগের দিন থেকে এখানে আসার আগে পর্যন্ত মীরা-ঘটিত সব কথাই এক রকম খুঁটিয়া খুঁটিয়া বলিলাম। শুধু মন লইয়া ব্যাপার যেখানে, সেই সব কথাগুলো বাদ দিয়া গেলাম। —যেমন অশ্রুর কথা বলিলাম না; যেমন, মীরাকে যে বলিয়াছিলাম—নিজের তাগিদেই থাকিয়া গেলাম সে কথাও উল্লেখ করিলাম না!
অম্বুরী শুনিতেছে—একেবারে তদ্গত হইয়া; মাঝে মাঝে তীক্ষ্ণ অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি দিয়া আমার পানে চাহিতেছে, মুখের ভাব যে কত রকম বদলাইতেছে বলা যায় না। মাঝে মাঝে এক-একটা ছোট্ট প্রশ্ন করিয়া নিজের চিন্তার পথ প্রশস্ত করিয়া লইতেছে। গোড়াতেই খানিকটা শুনিয়া লইয়া প্রশ্ন করিল, “নাম বললে—মীরা? কি, শ্রীমতী মীরাসুন্দরী দেবী?”
বলিলাম, “না, মিস মীরা রায়।”
অম্বুরী চক্ষু দুইটা একবার উপরে তুলিয়া কি একটু ভাবিয়া লইল যেন। আবার কাহিনী শুনিয়া চলিল। খানিকটা শুনিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বিয়ে হয়নি বুঝলাম, কিন্তু কথাবার্তাও হচ্ছে না? যেমন বলছ—বেশ তো ডাগর মেয়ে…কত বয়স হবে ঠাকুরপো?”
নির্লিপ্তভাবে বলিলাম, “ওর বাপ-মা তো ওর ঠিকুজি গড়তে দেননি আমায়, কি ক’রে বলব? তবে আন্দাজে মনে হয়—এই আঠার-উনিশ-কুড়ি—।”
অম্বুরী হাসিয়া বলিল, “একুশ– বাইশ-তেইশ—সাতাশ—তিরিশ বেশ বুঝেছি বল।”
একবার অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই জিজ্ঞাসা করিয়া বসিল, “ওদের মেয়েরা তো নিজেরাই বর খুঁজে নেয়, কিছু টের পাওনি তুমি?”
নির্লিপ্তভাবে হাসিয়া বলিলাম, “কি ক’রে পাব বল? বর শিকার করতে কি ও আমায় সঙ্গী ক’রে নেয়?”
একটা জিনিস লক্ষ্য করি—আমার এই ঔদাসীন্যে অম্বুরী যেন তৃপ্ত হয়। প্রশ্নটা করিয়াই তীব্র আগ্রহে আমার পানে চাহিয়া থাকে, তাহার পর উত্তরটা পাইয়াই প্রাণ খুলিয়া হাসিয়া উঠে।
শুনিবার পাশে পাশে ওর চিত্তার ধারা বহিয়া চলিয়াছে। শেষ দিকে একবার প্রশ্ন করিয়া বসিল, “তুমি তো দু-জনকেই দেখেছ, সরমা বেশি সুন্দর, না মীরা বেশি সুন্দর ঠাকুরপো?”
এবারও নির্লিপ্তভাবেই, কতকটা যেন এড়াইবার চেষ্টা করিয়া বলিলাম, “এ বড় শক্ত প্রশ্ন করলে যে! আমি কি ক’রে বলি?—কারুর চোখে মীরা সুন্দরী, কারুর চোখে সরমা সুন্দরী।”
অম্বুরী হাসিয়া বলিল, “কি যে বলো ঠাকুরপো!—আচ্ছা বেশ, তোমার কথাই সই; তোমার চোখে কে বেশি সুন্দরী?”
স্পষ্ট জবাব দিলাম না, বলিলাম, “মীরা কালো হোক, কিন্তু শ্রী আছে! অবশ্য সরমার কথা আলাদা।”
অম্বুরী আবার দৃষ্টি নত করিয়া কানে তর্জনীর ডগাটা ঘষিতে ঘষিতে বলিল, “তার মানে ঠাকুরপোর চোখে মীরাই বেশি সুন্দরী।” বলিয়াই একবার হাসিয়া আমার পানে চক্ষু তুলিয়া চাহিল।
খোকা-খুকী খেলা করিতে করিতে রকের ওদিকটায় চলিয়া গিয়া ছিল। খোকা ডাকিল, “ওমা ঠিগ্গির এস,—টোমার মেয়ের কাণ্ড!”
অম্বুরী গিয়া খুকীকে ধরিয়া আনিল। খুকীর কাণ্ড, সে একটা টিকটিকির বাচ্চা ধরিবার জন্য চেষ্টা করিতেছিল। খোকা চক্ষু কপালে তুলিয়া বলিল, “ঠব্বনাশ, টিটিকিটা যদি সাপ্ হোট শৈল টাকা!”
বলিলাম, “তোর মামা যদি তোর মেসো হ’ত খোকা!”
এ ঠাট্টাটা দিনকতক পরে মুখ দিয়া বাহির হইবে না বোধ হয়, যেমন কড়া রকম ভদ্র হইয়া উঠিতেছি। কিন্তু আপাতত এই আবেষ্টনীর মধ্যে ঠাট্টা করিয়া ফেলিবার লোভটুকু সংবরণ করিতে পারিলাম না।
অম্বুরী হাসিয়া বলিল, “ওর মামা-মাসীকে এর মধ্যে টানা কেন? তোমাদের ঘরে বোন দিয়েছে এই অপরাধে?”
তাহার পর গম্ভীর হইয়া বলিল, “আচ্ছা ঠাকুরপো, একটা কথা তুমি অভয় দাও তো বলি।”
বলিলাম, “আমার ভয়ের কথা না হয় তো অভয় দিই।”
অম্বুরী একটু চুপ করিয়া রহিল, তাহার পর চক্ষু দুইটি একটু কুঞ্চিত করিয়া লইয়া বলিল, “তুমি মীরাকে বিয়ে কর না কেন ঠাকুরপো—যতটা শুনলাম তাতে মনে হয় ওর যেন তোমাকে পছন্দ হয়েছে।”
হাসিয়া বলিলাম, “যদি ক’রেই বসি কোন দিন তো আশ্চর্য হয়ো না অম্বীরী।”
অম্বরীর মুখটা যেন এক মুহূর্তে ফ্যাকাশে হইয়া গেল। নামাইয়া লইয়া খোকার দিকে চাহিয়া একরকম বিনা কারণেই বলিল, “ও খোকা, কি হচ্ছে আবার?”
ওইটুকুর মধ্যে কিন্তু নিজেকে আবার সামলাইয়া লইল, অন্তত বাহিরে বাহিরে। খুকীকে বুকে চাপিয়া তাহার মুখের কাছে মুখ লইয়া বলিল, “খুকুমণি, তোমার কেমন রাঙা টুকটুকে কাকীমা আসবে!…”
খোকা ঐদিক থেকে প্রশ্ন করিল, “শৈল টাকীমা মা?”
অম্বুরী এতক্ষণে আমার পানে একটু চাহিল। হাসিয়া আমার পানে চাহিয়াই খোকার কাথার উত্তর দিল, “হ্যাঁ, শৈল কাকীমা। বেশ হবে ঠাকুরপো তাহ’লে। যাই, সন্ধ্যে হয়ে এল।”
আমি স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া রহিলাম।
অনেক ভাবিয়া মিলাইয়া পরে রহস্যটা বুঝিয়াছি; যাহা বুঝিয়াছি সেইটাই সত্য।
অম্বুরী সহ্য করিতে পারিল না। ঈর্ষা নয়। যে আমি একান্তভাবে ওদের মানুষ, মীরাকে লাভ করিয়া, মীরাকে অবলম্বন করিয়া কোন্ এক অপরিচিত উচ্চস্তরে উঠিয়া যাইব, যেখানে অম্বুরীর প্রবেশ নাই—এই কল্পনাটাই অসহ্য অম্বুরীর পক্ষে। ঈর্ষা নয়, আসন্ন বিচ্ছেদের টনটনানি, অম্বুরীর হৃদয়-তন্ত্রীতে যেন টান পড়িল। অনিল আমায় অতটা চায়, কিংবা আমি অনিলকে এতটা চাই তাহার অনেক কারণ আছে—আমাদের দুইজনের বাইশ-তেইশ বৎসরের প্রতি দিনটি যেন জড়াইয়া-মিশাইয়া রহিয়াছে। অম্বুরী আমায় চায় অনিলের মধ্যে দিয়াও, তাহার উপর আরও একটা অন্য কারণে। শ্বশুরবাড়ির দিকে ওর কেহ আত্মীয় নাই, অনাত্মীয় হইয়াও আমি একা এই জায়গাটি পূরণ করিয়া আছি। আমি ওর দেবর, স্বামীর অভিন্নহৃদয় বন্ধু বলিয়া দেবরের চেয়ে বেশি কিছু। স্বামী-পুত্র-কন্যা লইয়া অম্বুরী আমায় চারিদিক দিয়া ঘিরিয়া ফেলিয়াছে। অনাত্মীয় যখন আত্মীয় হয়, তার সঙ্গে যোগটা হয় আরও নিবিড়, কেননা সদাই একটা বিচ্ছেদের ভয় লাগিয়া থাকে—অল্প কারণেই অম্বুরী ঠিক এই রকম একটা আশঙ্কার সম্মুখীন হইয়াছে।
মীরা অন্য স্তরের জীব। রূপে, সম্পদে, শিক্ষায়, বিলাসে অম্বুরীর জগতের চেয়ে মীরার জগৎ অনেক উচ্চে, বোধ হয় স্বর্গ আর মর্ত্যের মাঝামাঝি একটা জায়গা; যতটা শুনিয়াছে অম্বুরী, তাহাতে ওর মনে হয় মর্ত্যের চেয়ে স্বর্গেরই বেশী কাছে। কিন্তু হাজার দুঃখ-বেদনা থাকাতেও মানুষ যেমন মর্ত্যকেই বুকে আঁকড়াইয়া ধরিতে চায়, স্বর্গকে পরিহার করিয়াই চলে, মীরার জগৎ সম্বন্ধে অম্বুরীর মনের ভাবটাও সেই রকম—বেশ প্রশংসা করা চলে, আশ্চর্য হওয়া চলে, এমন কি আকাঙ্খা পর্যন্ত করা চলে, কিন্তু পাওয়া চলে না। তখন দেখা যায় শত দোষ থাকা সত্ত্বেও এই মাটিমাখা জীবনই ভাল। যাহাদের আপন বলিয়া বুকে জড়াইয়াছে তাহাদের কেহই এই গণ্ডীর বাহিরে যায়, অম্বুরী এটা সহ্য করিবে কি করিয়া?
মীরার নামটা শুনিয়াও অম্বুরী খুশি হইতে পারে নাই—বেশ মনে আছে। নামেও যেন সম্পূর্ণ এক অন্য সুর। অম্বুরী নিজে যে জগতের মানুষ সেখানকার মেয়েরা কমলা, লক্ষ্মী, শিবকালী, কিরণ, খুব বেশি হইল তো নয়নতারা, নিভাননী—অঙ্গুরীর নিজের নাম মুক্তকেশী।
ওদের যে-কেহ অম্বুরীর দেবরকে অধিকার করুক, অঙ্গুরী তাহাকে বরণ করিয়া বুকে করিয়া লইবে। এদের মধ্যে কেহ আসিলে অম্বুরীর আর একজন বাড়িবে, মীরার আবির্ভাবে কিন্তু বাড়া দূরের কথা, আমি সুদ্ধু লুপ্ত হইয়া যাইব অম্বুরীর জগৎ হইতে।
মনে আছে এর আগের বারে আমি যখন আসিয়াছিলাম—মাস ছয়েক পূর্বে, অম্বুরী বলিয়াছিল, “আমাদের গ্রামে একটি মেয়ে আছে ঠাকুরপো, তোমার জন্যে আমি এঁচে রেখেছি। তুমি বিয়ে কর; তারপর আবার এখানে ফিরে এস, আমরা দুটি বোনে কাছাকাছি থাকি।… কী পশ্চিমে পড়ে আছ বাপু? বুঝি না—”
মীরা অম্বুরীর সেই স্বপন ভাঙিয়া দিবে। তাই মীরার নামে অম্বুরীর মুখ শুকাইল।