৬
সন্ধ্যার সময় অনিল আসিল।
আমি খুকী আর অনিলের ছেলে সানুকে লইয়া কাছাকাছি একটু ঘুরিয়া আসিয়াছি। অম্বুরী গলায় আঁচল জড়াইয়া তুলসীতলায় প্রদীপ দিতেছিল, বলিল, “থামো ঠাকুরপো, আমি মাদুর পেতে দিই, রকে ঠাণ্ডায় একটু ব’স, তারপর…”
এমন সময় “মা-মণি কোথায় গো?”– বলিয়া শিশু-কন্যাকে আহ্বান করিতে করিতে অনিল প্রবেশ করিল। আমায় দেখিয়া বলিল, “মশাই? আমি বলি অম্বুরী আবার আধ আঁচরে কাকে বসায়?”
দার্শনিক শ্রেণীর মানুষ, কোন কিছুতেই উচ্ছ্বসিত হওয়া ওর ধাত নয়; জামা-কাপড় ছাড়িতে ছাড়িতে বলিল, “এসে পড়াতে তোর একটা ফাড়া কেটে গেল।”
প্রশ্ন করিলাম, “তার মানে?”
অনিল কোটের পকেটে হাত দিতে দিতে বলিল, “দাঁড়া দেখি…না, নেই। তোকে আজ একখানা চিঠি লিখে আবার টুকরো টুকরো ক’রে ছিঁড়ে ফেললাম, খামসুদ্ধ। পকেটে নেই একটাও টুকরো, নইলে দেখাতাম। ভাবলাম তোকে আর কখনও চিঠি দোব না, তারপর ভাবলাম, মা, অম্বুরী সবাইকে সুদ্ধ একদিন নিয়ে গিয়ে তোর ব্যারিস্টার-মনিবের বাড়িতে এমন বেয়াড়া তোলপাড় লাগিয়ে দোব যে তোকে তাড়াতে পথ পাবে না। কি করলে যে তোর ওপর শোধ নেওয়া হয় ঠিকমত ভেবে উঠতে পারছিলাম না, তবে লাগসই একটা মতলব খুঁজে বের করতামই, এমন সময় তুই বিপদ বুঝে এসে পড়লি।”
বলিলাম, “তুই বা কোন্ একবার গেলি? লিখেছিলাম একবার দেখা ক’রে আসতে, পারতিস্ না?”
অম্বুরী পাথা আনিয়া হাওয়া করিতে যাইতেছিল, অনিল তাহার হাত থেকে সেটা লইয়া বলিল, “দাও, থাক্, আমি শৈলকে নিজেই বলছি—রোজ সতী-সাবিত্রীর মত তুমি তোমার আধমরা স্বামীকে এমনি ক’রে বাঁচিয়ে তুলছ।”
অম্বুরী লজ্জিত হইয়া রান্নাঘরের দিকে চলিয়া গেলে বলিল, “যাওয়ার কথা বলছিস্ শৈল, তোর তো আর যমের বাড়ি নয়, যে চোর বুজলেই পৌঁছনো যাবে। তিনখানা চিঠি দিয়েছিস্ বলছিস্, পেয়েছি দুখানা তার মধ্যে—একখানাতেও ঠিকানার নামগন্ধ নেই। তাই তো অম্বুরীকে বললাম—‘শৈল এখন ব্যারিস্টারী কায়দায় নেমত্তন্ন করতে শিখেছে গো, পথ বন্ধ ক’রে খেয়ে আসতে বলে’…”
অম্বুরী বাহির হইয়া আসিয়া কলহের ভঙ্গিতে বলিল, “আমি তোমার হ’য়ে বলছি ঠাকুরপো, সব দোষ তোমার ঘাড়ে চাপাচ্ছেন যে, নিজে গেলে সত্যিই কি বাড়ি খুঁজে বের করতে পারতেন না? নড়বেন না বাড়ি থেকে, তা…।”
অনিল বলিল, “নড়ি না? আপিসে তুমি যাও কাছাকোচা এঁটে?”
অম্বুরী অনিলের মুখের উপর চোখ দুইটা বুলাইয়া লইয়া আমার দিকে চাহিয়া বলিল, “বাঁধা গৎ রোজ একবার ক’রে আপিসে যাওয়া—মস্ত বড় বাহাদুরি!”
অনিলও আমাকেই সাক্ষী মানিল, বলিল “তুই তো থাকবি দুটো দিন শৈল? মিলিয়ে দেখ, আমার পক্ষে আপিসে যাওয়াটা মস্ত বড় একটা বাহাদুরি কি না, আর বাইরে যাওয়াটা প্রায় অসম্ভব কি না।”
এক বর্ণও ভুল নয়। যখন থেকে বাড়ি আসিল, অনিল যেন শত বাঁদীর মধ্যে বাদশাহ। নিজেকে একটি কুটা নাড়িতে হইল না, যখন যেটি দরকার একেবারে হাতের কাছে জোগান। কোন জিনিসটির জন্য তাহাকে মুখ ফুটিয়া একটা ফরমাস পর্যন্ত করিতে হইল না। অম্বুরীকে একবার শুধু বাতাস করিতে বারণ করিয়াছিল। ঐ একটু ছন্দপতন, তা ভিন্ন ঠিক যেন দু-জনে মিলিয়া বেশ ভাল করিয়া রিহার্সাল-দেওয়া একটা পার্ট করিয়া যাইতেছে।
শাশুড়ীকে অম্বুরী জপে বসাইয়া আসিয়াছিল একবার গিয়া তুলিয়া লইয়া আসিল। আমাদের সঙ্গে গল্প করিতে করিতে তিনি রাত্রিকালীন জলযোগ সারিলেন; শেষ হইলে অম্বুরী তাহাকে আর সানুকে বিছানায় দিয়া আসিল! এইবার যত রাজ্যের রাজকুমার, কোটালপুত্র, কেশবতী কন্যে, রাক্ষস, হুমো জড় হইবে, তাহাদের ভিড়ের মধ্য দিয়া নাতি-ঠাকুমা স্বপ্ন-বুড়ীর রাজ্যে গিয়া হাজির হইবে।
অনিল বলিল, “চল এবার ছাদে যাই, শৈল। অম্বুরী, তুমি এস শীগগীর।”
আমার অবর্তমানে কি হয় জানি না, কিন্তু আমি থাকিলে অনিলও ওকে ‘অম্বুরী’ বলিয়া ডাকে। ওর আসল নাম মুক্তকেশী।
অম্বুরী রান্নাঘরের দিকে যাইতে যাইতে ঘুরিয়া হাসিয়া বলিল, “কেউ তাহলে শাড়ি প’ড়ে হেঁসেলে ঢুকুক। আমার একটু দেরি হবে আজ আসতে।”
উপরে উঠিয়া বেশ খানিকটা আশ্চর্য হইয়া গেলাম, এ-বাড়িতে অম্বুরী আছে জানিয়াও। ছোট ছাদটা বেশ ভাল করিয়া জল দিয়া ধোওয়া; প্রথম তাপটা কাটিয়া গিয়া এখন বেশ ঠাণ্ডা হইয়া গিয়াছে। মাঝখানে একটা মাদুরের উপর একটা শীতলপাটি পাতা। দুইটা তাকিয়া, এক বাটা পান, দুইখানা পাখা আর সবচেয়ে যা চমৎকার—শীতলপাটির একপাশে একটা কাসার রেকাবি করিয়া এক রেকাবি টাট্কা বেলফুল।
প্রশ্ন করিলাম, “অম্বুরীর বশে কোন দৈত্য আছে নাকি অনিল? এ যে রীতিমত আরব্য রজনীর ব্যাপার ক’রে তুললে। নীচ থেকে একবারও যে ওপরে এসেছে মনে পড়ে না তো।”
অনিল গিয়া একটা তাকিয়া আশ্রয় করিল, বলিল, “এর মধ্যে একটাও তোর জন্যে বিশেষ ক’রে আয়োজন নয় শৈল। এই ক’রে বাইরে আমার একটা বদনাম ধরিয়ে দিয়েছে—বৌয়ের আঁচল ধরা। অবশ্য আমার গতিবিধি আছে সব জায়গায়, ওই বরং ‘কুনো হ’য়ে গেলে’, বলে ঠেলে পাঠায়, কিন্তু থাকতে পারি না। দোষ দিতে পারিস সে জন্যে? …তোর খবর কি বল এবার। …নে, পান খা, তুই রাঁধুনি দেওয়া পান ভালবাসিস—প্রায়ই বলে। তোর জীবনে একটা পরিবর্তন এসেছে শৈল, লক্ষ্য করেছি। মনে করিস্ নে শুধুই চোখ বুজে এই রকম অম্বুরী-সেবন করে যাচ্ছি। করেছি লক্ষ্য। কি ব্যাপার বল্ দিকিন? সোঁদা ছেলে, ছাত্রীর টুইশ্যন নিতে গেলি কেন? আমরা গরীন…”
আমি তাড়াতাড়ি বলিলাম, “ছাত্রীর আমার বয়স ন’ বছর।”
অনিল থমকিয়া আমার মুখের পানে চাহিল। ও যে একটা অন্যায়, অশোভন ধারণা করিয়া বসিয়াছিল সেইজন্য একটু রাগিয়া বলিল, “চিঠিতে আগে লিখিস নি তো?”
বলিলাম, “জানতাম দেখা হ’লেই শুনবি। বয়সের কথা ওঠে কোথা থেকে?”
অনিল একটু হাসিয়া ভ্রু কুঞ্চিত করিয়া ব্যঙ্গের স্বরে বলিল, “তাও তো বটে, আদর্শ শিক্ষক!”
আমি হাসিলাম। অনিল প্রশ্ন করিল, “তাহ’লে? কিছু একটা ব্যাপার তো হচ্ছেই।”
এড়াইবার যো আছে ও ছোঁড়াকে? একে ওর দৃষ্টি, তার আমার অন্তস্তলের প্রত্যেক অলিগলি নখদর্পণে। কিন্তু মীরার কথা যেন মনে হয় মনের আরও গহনের জিনিস।
জ্যোৎস্না রাত্রি। একটা হাওয়া উঠিয়াছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় রেঙ্গুন-লতার ফুলের গন্ধ কোথা থেকে মাঝে মাঝে ভাসিয়া আসিতেছে—টাটকা চন্দনের মত এক-একবার কাছের বেলফুলের মিঠেকড়া গন্ধের সঙ্গে মিশিয়া যাইতেছে…মীরার কথা যেন ভীরু অবগুণ্ঠনে আমার চিত্তের নিভৃততম কোন এক জায়গায়।
আমি একবার জড়িত দৃষ্টিতে চাহিলাম অনিলের পানে। ওর “তাহলে?”-র উত্তর দিতে পারিতেছি না।
অনিল যেন একটু নিরাশ হইল, ব্যথিত হইল, একটু অপ্রতিভ ও হইল যেন; বলিল, “থাক তবে, অন্য সময় ও কথা হবে’খন। তোর এম-এ পড়ার কত দূর কি করছিস?”
আমার সমস্ত অন্তঃকরণটা যেন মোচড় দিয়া উঠিল।—এ কি করিলাম। অনিলকে জীবনে কখনও এত আলাদা করিয়া দেখিব, এ-ধরনের একটা বৈষম্যের আঘাত দিতে পারিব, কবে ভাবিতে পারিয়াছিলাম এ-কথা? চিরকালই বিশ্বাস ছিল আমার অন্তরের যদি খুব কাছে কেউ আসে তো অনিলের পাশে আসিয়া দাঁড়াইবে, তাহার চেয়েও কাছে আর জায়গা কই?
সেই অনিলের কাছে মীরার কথা গোপন করিলাম।
নীচে অম্বুরীর গলা, “খোকন, যেন তুমি ঘুমিয়ে প’ড়ো না বাবা, আমার হ’ল বলে।” মনে পড়িয়া গেল ঠিক এই জিনিসটি অনিল নিজের জীবনে দাঁড় করাইয়াছে—অণুমাত্রও ব্যবধান রাখে নাই ওর, অম্বুরীর, আর আমার মাঝধানে ওর দৃষ্টি তীক্ষ্ণ, ঠিক ধরিয়াছে আমি বদলাইয়া গিয়াছি, বরং বোধ হয় পূর্ণভাবে ধরিতে পারে নাই যে কত বদলাইয়া গিয়াছি।
আমি অনিলের শেষ প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। একবার এদিক-ওদিক চাহিয়া একটু কুণ্ঠার সহিত ওর মুখের উপর দৃষ্টি রাখিলাম। ওর প্রশ্ন সেই “তাহ’লে?”-র উত্তরেই বলিলাম, “ঠিক যে কি ক’রে আরম্ভ করব বুঝতে পাচ্ছি না অনিল। মীরা বলে একটি মেয়ের উল্লেখ ছিল কি আমার চিঠিতে?”
অনিল সংশোধনের ভঙ্গিতে বলিল, “মীরা দেবী।”
আমি হাসিয়া বলিলাম, “হ্যা, মীরা দেবী। সে আমার ছাত্রীর বোন।”
অনিল পূরণ করিয়া লইল,, “বড় বোন।”
“হ্যাঁ, বড় বোন।”
“অবিবাহিতা।”
“হ্যাঁ, অবিবাহিতা, কিন্তু তুই জানলি কি ক’রে?
“আগে চিঠি পড়ে ভেবেছিলাম বিবাহিতা, কিংবা বোধ হয় কিছুই ভাবিনি, ছাত্রী ছেড়ে ওদিকে খেয়ালই যায়নি। এখন বুঝছি অবিবাহিতা!”
প্রশ্ন করিলাম, “কি ক’রে বুঝলি?”
অনিল বলিল, “খুবই সহজে। তুই প্রেমিক, তোর বুদ্ধির জড়তা এসেছে; আমার বন্ধুর জীবন-মরণ সমস্যা, কাজেই আমার বুদ্ধিটা আরও খুলে গেছে। … তারপর?”
একবার বাঁধ ভাঙিলে আর কিছু আটকাইল না। একটি একটি করিয়া অনিলকে সব কথা বলিলাম—প্রথমদিনের সাক্ষাৎ হইতে শেষ দিনের অশ্রু পর্যন্ত। ওর ঘৃণার কথাও বলিলাম; বলিলাম, যখনই আমার খুব কাছে আসিয়া পড়িয়াছে, মীরা যেন ধাক্কা দিয়া সঙ্গে সঙ্গে দূরে চলিয়া যাইতে চাহিয়াছে। এক আশ্চর্য কাণ্ড। অপর্ণা দেবীর কথা বলিলাম—হেরিডিটি সম্বন্ধে তাঁর থিয়োরি। মীরার স্তাবকদের কথা বলিলাম, বিশেষ করিয়া স্তাবক-চূড়ামণি নিশীথের কথা। সরমার কথা বলিলাম; সরমাকে লইয়া মীরার সেদিনকার সেই অসূয়ার কথা, প্রায় যাহার জন্য ঘটনা-পরম্পরায় এখানে আসা আমার। মীরার কথা খুঁটাইয়া খুঁটাইয়া বলিবার মধ্যে যে এত মধু লুকানো ছিল জানিতাম না। শেষকালে সত্যই কতকটা আবেগ-ব্যাকুল কণ্ঠে বলিলাম, “এখন আমি কি করি অনিল ও কখনও আমার স্তরে নামতে পারবে না; যখনই অজান্তে নেমে আসে, কতখানি নামতে হয়েছে দেখে শিউরে ওঠে। আমি যতদূর বুঝতে পেরেছি এই ওর ঘৃণার রহস্য। বোধ হয় ও আমায় ঘৃণা করে না; যেটাকে-ঘৃণা বলছি সেটা হয়তো ওর আতঙ্ক, কিন্তু, তবুও আরও একটা কথা, —আমার দিক থেকে দেখতে গেলেও আরও দরকারী কথা। আমি ওর স্তরে উঠি কি করে? আর সবচেয়ে যা দরকারী কথা তা এই যে—কেন উঠতে যাব? অনিল, যখন প্রথম বিজ্ঞাপনটা দেখেছিলাম, একটা আশা মনে জেগেছিল বড়লোকের যদি আকর্ষণ করতে পারি কত কী-ই না হ’তে পারে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হ’য়ে যেতে পারি। এমন তো হচ্ছে! কিন্তু এখন সেই সব প্রায় হাতের মধ্যে—আমি এম্-এ বেশ ভাল ক’রে পাশ করব নিশ্চয়,—মিস্টার রায়, অপর্ণা দেবী আমায় খুব ভালবাসেন—যেন, মনে হয় মাঝে মাঝে আমায় একটু বিচার ক’রে তৌল ক’রে দেখেন। আমার দিকে মীরার ঝোঁক ওঁদের খুব সম্ভব জানা—আমায় যে মিস্টার রায় বিলেত পাঠাতে চান এমন ইঙ্গিতও দু-একবার পেয়েছি আমি। সবই অনুকূল। রাজকন্যা আর অর্ধেক রাজ্যের স্বপ্ন গোড়ায় দেখেছিলাম, এখন যেন শুধু স্বয়ংবর সভায় গিয়ে বলা একবার! কিন্তু ঠিক এই সময়টায় আমারও মন বিরূপ হ’য়ে উঠেছে; অবশ্য রাজকন্যায় নয়, রাজ্যে। মনে হচ্ছে আমিই বা কেন উঠতে যাব নিজের জায়গা ছেড়ে মীরার সামাজিক স্তরে?—মীরাকে পাওয়ার একটা উপায় হিসেবে কেন মিস্টার রায়ের সাহায্য নিতে যাব? মীরাকে আমি ভালবাসি, নিজের মধ্য দিয়ে যোগ্যতা অর্জন ক’রে ওকে পাব; আমার ভালবাসাকে আমি বেচাকেনার জিনিস করব কেন?”
অনিল হাসিয়া বলিল, “যৌতুক নেয় না বিবাহে?”
আমি ভাবের ঘোরে বাধা পাইয়া ওর মুখের পানে চাহিলাম, প্রশ্ন করিলাম, “যা বললি, তুই নিজে সে-কথায় বিশ্বাস করিস্?”
অনিল হাসিয়া বলিল, “সে উত্তর পরে দোব, তোর নিজের মতটাই আগে শুনি না।”
আমি বলিলাম, “যৌতুক নেওয়া চলে বিবাহে; কিন্তু এটা ঠিক তো যৌতুক নয়। আমি অযোগ্য; অর্থ, প্রতিষ্ঠা আর ওদের দৃষ্টিতে কালচার হিসেবে আমি নীচে, তাই আমায় মীরার যোগ্য ক’রে নেওয়া … এটাকে যৌতুক বলব, না অপমান? শুধু তো অপমান নয়—আমি যেখানে মানুষ হয়েছি তাদের সকলকেই অপমান।… অনিল, আমি কোন রকম হীনতার কালি মেখে ওকে স্পর্শ করতে পারব না। ওরা যেটাকে যোগ্যতা বলে—মীরা পর্যন্ত—বোধ হয় এক মীরার মা ছাড়া আর সকলেই—আমি জানি সেইটেই হবে আমার দারুণ অযোগ্যতা, আমি এ রঙচঙে কাগজের বরমাল্য গলায় দিয়ে বিয়ের আসনে বসতে পারব না।”
অনিল হাসিল, হাসিয়াই জানাইল ওর-ও মনের কথা এই।
আমি বলিতে লাগিলাম, “আমার অসহ্য হ’য়ে উঠেছিল অনিল, কী একটা অসহ্য আবহাওয়ার মধ্যে যে পড়েছিলাম! এমন সময় তোর চিঠি পেয়ে যেন স্বর্গ পেলাম হাতে। আমি হঠাৎ যেন বুঝতে পারলাম কাদের অভাবে, কিসের অভাবে আমার এমন অবস্থা হয়েছে। মীরা যদি আমায় ভালবাসেই তো আমার যা দেশ, যা পরিজন আমার মন জুড়ে যারা অষ্টপ্রহর রয়েছে তাদের সুদ্ধু আমায় নিতে হবে ওকে। ঠিক বোধ হয় গুছিয়ে বলতে পারলাম না, অনিল। মনের অবস্থা ভাল ছিল না; নেই এখন; কিন্তু বোধ হয় কতকটা এই রকম। মোট কথা…”
অম্বুরী উঠিয়া আসিল। বলিল, “মোট কথা শোনবার আর একজন অংশীদার এল। ঠাকুরপো কি আগের মত একটু রাত ক’রে খাও, না ব্যারিস্টার-বাড়িতে ঘড়ির অভ্যেস হয়েছে?”
অর্থাৎ বেশ খানিকক্ষণ গল্প চলুক। বলিলাম, “ধর বদ অভ্যেসই যদি হ’য়ে থাকে একটা, তো ছাড়া উচিত নয় কি সৎসঙ্গে পড়ে?”