মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে দুটি অনুমান

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হলেও মুজিবনগরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল সীমিত। মূলত দেশরক্ষা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত কার্যকর করাই ছিল এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। যুদ্ধের রণকৌশল এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করতেন মন্ত্রিসভা এবং সেনাবাহিনীর প্রধান। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কোনো কাজ হচ্ছিল না। আমি আমার নিজের উদ্যোগে এ সম্পর্কে কিছু পড়াশোনা করি এবং দুটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই। সিদ্ধান্ত দুটি নিয়ে তখন অনেকের সঙ্গে তর্কবিতর্কও করি।

৮ নম্বর থিয়েটার রোডের উল্টো দিকে ব্রিটিশ কাউন্সিলের পাঠাগার ছিল। তাই যেদিন মন্ত্রণালয়ে কাজ কম থাকত, সেদিন দুপুরের খাবার খেয়ে আমি ব্রিটিশ কাউন্সিল পাঠাগারে চলে যেতাম। সেখানে আমার প্রথম অনুসন্ধানের বিষয় ছিল মুক্তিবাহিনী কতটুকু কার্যকরভাবে কাজ করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে গেরিলাযুদ্ধে যদি প্রতিপক্ষের কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি শক্তি থাকে, তাহলে গেরিলাদের ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়। নিয়মিত বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর সদস্য নিয়ে বাংলাদেশের কমপক্ষে ১ লাখ ২৫ হাজার সৈনিক ছিল। এ ধরনের বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কমপক্ষে ১২ লাখ ৫০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের প্রয়োজন ছিল। ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পর দেখা যায় যে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈনিক এবং পুলিশ মিলে প্রায় ৯৩ হাজার জনবল ছিল। যদি ১ লাখ ২৫ হাজার গেরিলা কার্যকর হতো, তাহলে পাকিস্তান বাহিনীর কোনোমতেই টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। এ তথ্য থেকে দেখা যায়, অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী খুব কার্যকর হয়নি। এর কারণ ছিল মুক্তিবাহিনীর অধিকাংশ সদস্য ছিল ছাত্র। ছাত্ররা বয়সে তরুণ এবং অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়। আবেগপ্রবণ হয়ে যারা গেরিলাযুদ্ধ করতে আসে, তারা আশা করে যে অল্প দিনের মধ্যে জয় অর্জিত হবে। দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চললে এ ধরনের গেরিলারা টিকে থাকতে পারে না। বাংলাদেশে কিছু বয়স্ক সৈনিক ছিল কিন্তু নিয়মিত বাহিনীর এসব সদস্য চিরাচরিত যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল। গেরিলাযুদ্ধের পদ্ধতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। চিরাচরিত পদ্ধতির যুদ্ধ হতে গেরিলাপদ্ধতিতে যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণ এবং মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। এই পরিবর্তন তখন পর্যন্ত হয়নি। যদি দীর্ঘদিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই চলত, তাহলে প্রকৃত গেরিলাদের সংখ্যা অনেক কমে যেত। এর ফলে পাকিস্তান বাহিনীর বিপক্ষে এদের পক্ষে তাৎক্ষণিক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব ছিল না। গেরিলাযুদ্ধ সম্পর্কে চে গুয়েভারার বইটি আমার এই অনুসন্ধানে কাজে লেগেছে। চে গুয়েভারা যে দেশেই গেরিলাযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, সেখানে তিনি তরুণ ছাত্রদের বদলে বয়স্ক ব্যক্তিদের নির্বাচন করতেন। বয়স্কদের মধ্যে যাদের নির্ভরশীল স্ত্রী এবং সন্তান ছিল, তাদের অগ্রাধিকার দিতেন। এ ধরনের গেরিলারা আবেগের বশবর্তী হয়ে নয়, সবকিছু জেনেশুনে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নিতেন।

দ্বিতীয় অনুসন্ধেয় বিষয় ছিল ভারতের সক্রিয় সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব কি না? প্রথম অনুসন্ধেয় বিষয়টি সম্পর্কে গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের একার পক্ষে অদূর ভবিষ্যতে জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। সুতরাং ভারতের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব ছিল। না। বরং বাংলাদেশে পাকিস্তান বাহিনীর লুণ্ঠন ও অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। এখানে প্রশ্ন হলো যে ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য করবে কি না? পাকিস্তান ভেঙে গেলে ভারতের জন্য সেটি একটি বড় বিজয়। এ জন্য সবাই আশা করছিল ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। আমার কাছে মনে হয় যে শুধু পাকিস্তানকে দুর্বল করার জন্য নয়, ভারতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল অপরিহার্য। এক কোটির বেশি শরণার্থী নিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ছিল প্রায় অসম্ভব। এ প্রসঙ্গে আরও একটি প্রশ্ন প্রায়ই উত্থাপিত হতো; অনেকে বলতেন প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতি, সামরিক বাহিনীর হতাহত হওয়া এবং অস্ত্রের ব্যবহারের ফলে প্রচুর ব্যয় হতো। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য এবং ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগকে বাতিল করার জন্য ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীনতা না দিয়ে তার অঙ্গীভূত করতে পারে। এই আশঙ্কাও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। সাত কোটি বাঙালিকে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে ভারতের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। এতে ভারতে মুসলমান এবং বাঙালি জনসংখ্যা বেড়ে যেত। এর ফলে ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। তাই আমার বক্তব্য ছিল ভারতের সহায়তা নিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। আমার কাছে তাই মনে হয় ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা যেভাবে চলছে, সেটি সন্তোষজনক। আমার এ বক্তব্য সম্পর্কে আমি কোথাও লিখিনি, তবে সে সময়ে যেসব মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে, তাঁদের কাছে এই বক্তব্য তুলে ধরেছি।

পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা

জুন মাসে বাংলাদেশের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীরা কলকাতায় আশ্রয় নেন। এই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন প্রফেসর মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, প্রফেসর খান সরওয়ার মুরশিদ, প্রফেসর মোশাররফ হোসেন এবং ড. স্বদেশ রঞ্জন বোস। এঁদের নিয়ে বাংলাদেশ প্ল্যানিং বোর্ড স্থাপন করা হয়। এই বোর্ডের কয়েক জায়গায় অফিস ছিল। একটি অফিস ছিল পার্ক সার্কাসে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের উল্টো দিকে। আমি মাঝেমধ্যে ড. মোশাররফ হোসেনের অফিসে যেতাম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করতাম। নভেম্বরের দিকে যখন ভারত সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে, তখন ভারতীয় প্ল্যানিং কমিশন বাংলাদেশ প্ল্যানিং কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা বাংলাদেশ প্ল্যানিং কমিশনের সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষদের ত্রাণ এবং পুনর্বাসন ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন সম্বন্ধে তাদের বক্তব্য জানতে চায়। এই আলোচনার সময় ভারতীয় পরিকল্পনা কমিশন জানায় যে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে সব শরণার্থীকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে। অনেক হিন্দু শরণার্থী রয়েছে, যাদের সম্পত্তি বাংলাদেশে অবস্থানরত মুসলমানরা দখল করেছে। হিন্দুরা ফিরে গেলে তাদের সম্পত্তি উদ্ধার করা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে হিন্দু শরণার্থীরা বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাইবে না। তাই তাদের সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ড. মোশাররফ হোসেন এ সম্পর্কে আমার মত জানতে চান। আমি তাঁকে বলি যে মুক্তিবাহিনী যুদ্ধে জয়ী হলে এ ধরনের সমস্যা উদ্ভবের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ভারতীয় পরিকল্পনা কমিশন এ ব্যাপারে অবশ্যই একটি আইনি কাঠামো চান।

১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর মুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্কে উপপরিষদের বৈঠকে নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—

  1. রাজনৈতিক নির্দেশ–জনাব এ এফ এম ফতেহ (সভাপতি)
  2. পুলিশ যন্ত্রপাতির পুনরুদ্ধার–স্বরাষ্ট্রসচিব
  3. শত্রুপক্ষের সম্পত্তি নিষ্পত্তি এবং উদ্বাস্তু মানুষদের সম্পত্তির পুনরুদ্ধারবিষয়ক আইন–জনাব আকবর আলি খান
  4. সৈন্যবাহিনীর বেসামরিক যোগাযোগ, এফ এফ এবং মুক্তিবাহিনীর সদস্যগণের আত্তীকরণ–প্রতিরক্ষাসচিব।
  5. হানাদারদের সহযোগীদের ব্যবস্থাকরণ এবং বেসামরিক কর্মচারীদের সেবা প্রদান–মন্ত্রিসভা সচিব এবং প্রতিরক্ষাসচিব
  6. সরকারি চাকরির জন্য কমিশন, সরকারি চাকুরেদের নিয়োগ, নির্দিষ্ট স্থানে নিযুক্তি, বদলি ইত্যাদি– সচিব, মন্ত্রিসভা
  7. ছিন্নমূল মানুষদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন–ড. মোশাররফ হোসেন, সদস্য, পরিকল্পনা।
  8. অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং এর সঙ্গে জড়িত সমস্যাবলি–ড. মোশাররফ হোসেন, সদস্য, পরিকল্পনা
  9. উপায় এবং পথসমূহ–অর্থসচিব
  10. বেসামরিক প্রশাসন গঠন–অর্থসচিব।[১]

অনেক খেটে আমি শত্রুপক্ষের সম্পত্তি নিষ্পত্তি এবং উদ্বাস্তু মানুষদের সম্পত্তি পুনরুদ্ধারবিষয়ক আইনের খসড়া তৈরি করি। মন্ত্রিসভায় খসড়াটিকে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয় এবং এটিকে চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা জজ এবং ত্রাণ কমিশনার জয়গোবিন্দ ভৌমিককে। এপ্রিল মাসে এই আইনটি জারি করা হয়, তত দিনে আইন ছাড়াই হিন্দু উদ্বাস্তুরা তাদের সম্পত্তি পুনর্দখল করেন। আইনটি বিশেষ কোনো কাজে লাগেনি।

সার্কাস, থিয়েটার, সিনেমা

বাংলাদেশ সরকার তার কাজ শুরু করে সার্কাস অ্যাভিনিউয়ে পাকিস্তানের দূতাবাস ভবনে। তারপরে ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য মন্ত্রীসহ বেশির ভাগ দপ্তর চালু করা হয়। যুব ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রিন্সেফ স্ট্রিটে অফিস ভাড়া নেয়; তথ্য অধিদপ্তর বালুহক্কক লাইনে অফিস খোলে। পরিকল্পনা সেল অফিস খোলে বালিগঞ্জ প্রেসে এবং পার্ক সার্কাস রোডে। শিক্ষা দপ্তর চালু হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা ভবনে। বোর্ড অব ট্রেড অফিস খোলে অন্য জায়গায়। সরকারের কাজ বাড়তে থাকে। ফলে সরকার বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে অফিস করতে থাকে। থিয়েটার রোডের অফিসে স্থানাভাব দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকারের অসামরিক সচিবালয় স্থানান্তরিত হলো শরৎ চ্যাটার্জি অ্যাভিনিউয়ে বন্ধ সিনেমা হল দপ্তশ্রী’তে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান সেনাপতি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থিয়েটার রোডে থাকল। আর অন্য সব দপ্তর স্থানান্তরিত হলো ‘দপ্তশ্রীতে।

দেশের অনেক দূরে আমরা তখন, তবু দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য একের পর এক অফিস খোলা হতে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে আমরা গভর্নমেন্ট গভর্নমেন্ট খেলা বলতাম। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সরকারের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল সার্কাস অ্যাভিনিউতে। এই সার্কাসের নায়ক ছিলেন ইয়াহিয়া খান নামে এক অসুর, যা কামরুল হাসানের আঁকা পোস্টারে মূর্ত হয়ে উঠেছিল। এরপর অনেক স্বার্থগোষ্ঠী অভিনয় শুরু করলেন থিয়েটার রোডে। থিয়েটার রোডে সব স্বার্থগোষ্ঠীকে স্থান দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই অফিস শুরু হলো দপ্তশ্রী সিনেমা হলে। ওয়ালিউল ইসলাম যথার্থই লিখেছেন, ‘আমাদের এই যাদুকরি জগৎটি ছিল আপাতঃদৃষ্টিতে সার্কাস, থিয়েটার ও সিনেমার জগৎ।’[২]

যদিও সার্কাস রোড, থিয়েটার রোড এবং সিনেমা হলে বাংলাদেশ সরকার অবস্থিত ছিল, তবু মুজিবনগর সরকার বলতে যে ছবি মুজিবনগরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মনে ভেসে ওঠে, সেটি হলো ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের বাড়ি। ব্রিটিশ শাসনামলে ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে বাংলা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছিল। খাজা নাজিমউদ্দিন ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন তারা এই বাড়িতেই থাকতেন। ভারত বিভাগের পর এই বাড়িটি ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সকে দেওয়া হয়। তারা এই বাড়িটি অতিথিশালা হিসেবে ব্যবহার করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এই বাড়িটিতেই বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত ছিল। যদি কলকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশের স্মৃতি রক্ষার্থে কোনো জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাহলে তার উপযুক্ত স্থান হবে ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের বাড়ি। বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের কাছে অনেক কিছু চেয়েছে এবং পেয়েছেও। কিন্তু কখনো এই বাড়িটি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে। চাওয়া হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অরবিন্দ আশ্রম এই বাড়িটি তাদের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আবেদন করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অরবিন্দ আশ্রমকে বাড়িটি বরাদ্দ দেয় এবং এই বাড়িটিতে অরবিন্দ আশ্রমের একটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এখন যদি এই বাড়িটি কিনতে হয়, তাহলে অরবিন্দ আশ্রমকে রাজি করাতে হবে। অরবিন্দ আশ্রম একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান এবং তাদের সম্পত্তি তারা বিক্রয় করতে রাজি হবেন কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান স্মরণ করে ঢাকার রেসকোর্সে ইন্দিরা মঞ্চ স্থাপন করেছে। বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ হাউস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অথচ মুজিবনগর সরকার বলতে যে স্থানটিকে বোঝানো হয়, সে স্থানটি সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মুজিবনগর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির মায়াবী জগতে বেঁচে থাকবে কিন্তু বাস্তবে এটি লোপ পেতে যাচ্ছে।[৩]

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. আফসান চৌধুরী, মুজিবনগর কাঠামো ও কার্যবিবরণ, ২০২১, (ঢাকা : কথাপ্রকাশ), পৃষ্ঠা-২৬৬
  2. ওয়ালিউল ইসলাম, (প্রকাশিতব্য)। প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-১৯৯
  3. Faruq Aziz Khan, Op.Cit, 1993, P-194