৩. দেশভেদে সুখের তারতম্য

সুখ সম্পর্কে বিভিন্ন সমীক্ষাতে বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে সুখের তারতম্য নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সব দেশে সুখ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট উপাত্ত সংগৃহীত হয়নি। জীবন-সন্তুষ্টি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি উপাত্ত সংগ্রহ করেছে ইরাসমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের World Database of Happiness। এই সমীক্ষাতে ১৪৯টি দেশে মানুষের জীবন-সন্তুষ্টি নিয়ে তথ্য রয়েছে। এসব তথ্য ২০০০-২০০৯ সময়কালে সংগৃহীত। এই সমীক্ষাতে জীবন-সন্তুষ্টি ১ থেকে ১০ মাত্রায় পরিমাপ করা হয়েছে। যেখানে সন্তুষ্টি সবচেয়ে কম তার মান ১; আর যেখানে সন্তুষ্টি সর্বোচ্চ সেখানে মান ১০। প্রতি দেশের উত্তরদাতাদের গড় মানের ভিত্তিতে দেশের সন্তুষ্টি পরিমাপ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সারণি ৩.২-এ দেখা যাবে।



সারণি ৩.২ অনুসারে পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষেরা মধ্য আমেরিকান দেশ কোস্টারিকাতে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (০.৩৫৪ শতাংশ) আয়তনবিশিষ্ট এই খুদে রাষ্ট্রে মোট ৫০ লাখ লোক বাস করে। এ দেশে ৯২ শতাংশ লোক খ্রিষ্টান। এ দেশের একমাত্র বিশেষত্ব হচ্ছে যে কোস্টারিকাতে কোনো সেনাবাহিনী নেই। (অবশ্য সুখের সঙ্গে সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতির কী সম্পর্ক তা আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না।) পক্ষান্তরে সারণি ৩.২ থেকে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে অসুখী মানুষেরা বাস করে আফ্রিকার তোগোতে। এর আয়তন বাংলাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ। এ দেশে প্রায় ৭০ লাখ লোক থাকে। এদের বেশির ভাগ স্থানীয় ধর্মে বিশ্বাস করে। তোগোর মাথা পিছু আয় কোস্টারিকার মাথাপিছু আয়ের ৭.৭ শতাংশ। তোগোর গড় আয়ুর প্রত্যাশা কোস্টারিকার চেয়ে প্রায় ২৪ শতাংশ কম।

সারণি ৩.২-এ সুখের মাত্রার সঙ্গে ক্রয়ক্ষমতার সমতাভিত্তিক ডলারে (PPP $) মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ুর প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রের গড় সুখের পরিমাপের সঙ্গে মাথাপিছু আয়ের সুস্পষ্ট ধনাত্মক সহগমনের সম্পর্ক রয়েছে। এ দুটি। চলকের সহগাঙ্ক (Correlation coefficient) হচ্ছে ০.৬৩৪। গড় সুখের পরিমাপের সঙ্গে গড় আয়ুর প্রত্যাশার ধনাত্মক সহগমন আরও নিবিড়। এই ক্ষেত্রে সহগাঙ্কের প্রাক্কলন হচ্ছে ০.৭২৯। অবশ্য মাথাপিছু আয় ও গড়। আয়ুর প্রত্যাশার মধ্যেও উচ্চ পর্যায়ের ধনাত্মক সহগমন রয়েছে (এ ক্ষেত্রে সহগাঙ্ক হচ্ছে ০.৬৯১)। এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সহগমনের একটি বড় কারণ হচ্ছে, যেখানে মাথাপিছু আয় বেশি সেখানে গড় আয়ুর প্রত্যাশাও বেশি হয়। মাথাপিছু আয় বেশি হলে পুষ্টিকর খাদ্য ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা লাভ করা সম্ভব হয়। সারণি ৩.২ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যেসব দেশে মাথাপিছু আয় বেশি সেসব দেশে মানুষ বেশি সুখী। উপরন্তু, যেসব দেশে গড় আয়ুর প্রত্যাশা বেশি, সেসব দেশে মানুষ নিজেকে বেশি সুখী মনে করে।

অবশ্য দেশভেদে ব্যক্তির মনোনির্ভর মূল্যায়নের ভিত্তিতে যে সুখের পরিমাপ করা হয়েছে তার কয়েকটি অন্তর্নিহিত দুর্বলতা রয়েছে। প্রথমত, সুখের মূল্যায়ন উত্তরদাতাদের মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে। এ ধরনের মূল্যবোধ আবার দেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলের ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, ফরাসিরা জীবন সম্পর্কে সাধারণত নৈরাশ্যবাদী হয়। তারা মনে করে যে বুদ্ধিমান লোকের পক্ষে সুখী হওয়া সম্ভব নয়। বিখ্যাত ফরাসি রাষ্ট্রপতি চার্লস দ্য-গল বলতেন, ‘সুখী ব্যক্তিরা আহাম্মক।’ সুখ সম্পর্কে ফ্রান্সে তাই ব্যাপক বিরূপ ধারণা রয়েছে। ফলে কোস্টারিকা, কলম্বিয়া বা পানামার তুলনায় মাথাপিছু আয় দ্বিগুণের বেশি হওয়া সত্ত্বেও এবং গড় আয়ুর প্রত্যাশা দীর্ঘতর হওয়া সত্ত্বেও ফরাসিরা নিজেদের অপেক্ষাকৃত কম সুখী মনে করে। এর কারণ কি এদের মূল্যবোধ? এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছার মতো উপাত্ত এখনো সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। জাপানিরা অতি বিনয়ী। তাই তারা সুখ নিয়ে বড়াই করা পছন্দ করে না। লক্ষণীয়, সমপর্যায়ের শিল্পোন্নত দেশগুলির তুলনায় সুখের পরিমাপে জাপানের অবস্থান অনেক নিচে। এর কারণও কি জাপানি মূল্যবোধ? পক্ষান্তরে মধ্য ও লাতিন আমেরিকান দেশগুলিতে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমপর্যায়ের রাষ্ট্রগুলির তুলনায় সুখের মাত্রা অনেক বেশি। সারণি ৩.২ থেকে দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী ২০টি দেশের মধ্যে ছয়টিই মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাতে অবস্থিত। অথচ এই অঞ্চলে মাথাপিছু আয় আহামরি গোছের নয়। এখানেও কি সুখের পরিমাপে মূল্যবোধের প্রতিফলন হয়েছে?

ধর্মীয় মূল্যবোধও সুখের মাত্রার নিয়ামক হতে পারে। সারণি ৩.২ থেকে দেখা যায় যে সবচেয়ে সুখী ৫০টি রাষ্ট্রের মধ্যে ৪৬টি রাষ্ট্রের অধিকাংশ বাসিন্দাই হচ্ছে খ্রিষ্টান। দুটি রাষ্ট্রে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে (সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুর্কমেনিস্তান); একটি ইহুদিপ্রধান (ইসরায়েল) ও একটি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী-প্রধান (থাইল্যান্ড)। ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে সুখের সম্পর্ক নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবে আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায়, খ্রিষ্টানরা অপেক্ষাকৃত বেশি সুখী।

সারণি ৩.২-এর আরেকটি লক্ষণীয় বিশেষত্ব হচ্ছে, ক্ষুদ্র দেশে সুখী লোকের হার বেশি। সবচেয়ে সুখী ১০টি দেশের মধ্যে একটি খুবই ছোট (আইসল্যান্ড); সাতটি দেশে জনসংখ্যা ১ কোটির কম। শুধু দুটি দেশ অপেক্ষাকৃত জনবহুল। কানাডাতে প্রায় ৩.৪ কোটি লোক থাকে আর মেক্সিকোতে রয়েছে ১০ কোটি লোক। সুখের সঙ্গে রাষ্ট্রের জনসংখ্যার আকারের সম্পর্কের কারণ এখনো আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।

অবশ্য এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, সুখ সম্পর্কে সংগৃহীত উপাত্তগুলি নির্ভরযোগ্য কি না। অনেক গবেষক মনে করেন, সুখ সম্পর্কে সংগৃহীত উপাত্তে সুখের মাত্রা অতিরঞ্জিত হয়ে থাকে। এ ধরনের সমীক্ষা মূলত শহরাঞ্চলে ও সহজে অধিগম্য পল্লি অঞ্চলে পরিচালিত হয়। অথচ অসুখী ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রে দুর্গম পল্লি অঞ্চলে বাস করে। তাদের মতামত তাই এ ধরনের সমীক্ষায় প্রতিফলিত হয় না।

বিভিন্ন দেশে মানুষের সুখের মাত্রা তুলনা করার একটি বড় অসুবিধা হলো, সমীক্ষাভেদে একই দেশের সুখের মাত্রায় বড় ধরনের তারতম্য দেখা যায়। সারণি ৩.৩-এ ১০টি সবচেয়ে সুখী দেশ নিয়ে ইরাসমাস বিশ্ববিদ্যালয় ও World Values Survey-এর মূল্যায়নের তুলনা দেখা যাবে।

সারণি ৩.৩

সারণি ৩.৩ থেকে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুটি সমীক্ষার মূল্যায়নে যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। তবে তিনটি ক্ষেত্রে (ফিনল্যান্ড, মেক্সিকো ও নরওয়ে) দুটি সমীক্ষার মূল্যায়নে যথেষ্ট ফারাকও রয়েছে।

সুখ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যেসব উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে তার ভিত্তিতে যত প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেছে তার চেয়ে অনেক বেশি নতুন প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। বিশেষ করে, সব দেশের উত্তরদাতাদের বক্তব্য সমরূপ কি না, সে সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

সুখ সম্পর্কে গবেষণায় শুধু নতুন প্রশ্নই উঠছে না; নতুন নতুন সমীক্ষা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশে দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল : সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১১তম। অবশ্য সংবাদটি পত্রিকাটির সম্পাদকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। দুই দিন পর ‘সুখী মানুষের দেশ’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয়তে তাই পত্রিকাটি লিখল : ‘জরিপটি কিছুটা বিভ্রান্তিকরও বটে।’

আসলে জরিপটি কিছুটা নয়, পুরোপুরিই বিভ্রান্তিকর। এ জরিপটি পরিচালনা করে লন্ডনের নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এদের পক্ষ থেকে দুবছর পর পর The Happy Planet Index (সুখী বিশ্বসূচক) নামে একটি সূচকের দেশভিত্তিক পরিমাপ প্রকাশ করা হয়। সূচকটি নিম্নরূপে প্রাক্কলন করা হয়।

Happy Planet Index (সুখী বিশ্ব সূচক) = [Experienced well being (অনুভূত কুশলতা) x Life Expectancy (আয়ুর প্রত্যাশা)] / [Ecological footprint (পরিবেশের ক্ষতি)]

এই সূচকে তিনটি উপাদান রয়েছে। একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের অনুভূত কুশলতা ১ থেকে ১০ মাত্রার মধ্যে পরিমাপ করা হয়। যে রাষ্ট্রে নাগরিকেরা সবচেয়ে সুখী, সে দেশে অনুভূত কুশলতার মাত্রা হলো ১০। যেখানে নাগরিকেরা সবচেয়ে কম সুখী, সেখানে অনুভূত কুশলতার মাত্রা ১। বাংলাদেশে অনুভূত কুশলতার পরিমাপ হচ্ছে ৫.৯। এই সমীক্ষা মোট ১৫১টি দেশে পরিচালিত হয়। ৫২টি দেশের নাগরিকদের মতে, তাদের দেশে সুখের মাত্রা ৫.৯-এর বেশি। তাই এই সমীক্ষার ফলাফল মেনে নিলেও সুখী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৩-এর উর্ধ্বে হয় না।

শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১১-তে টেনে নেওয়া হয়েছে। এই সূচকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় উপাদানে ফাঁকি রয়েছে। দ্বিতীয় উপাদান হচ্ছে আয়ুর প্রত্যাশা। মানুষ কতটুকু সুখী, তা পরিমাপ করার সময় সে আয়ুর প্রত্যাশাও বিবেচনায় নেয়। কাজেই অন্যান্য সমীক্ষায় একে স্বতন্ত্র উপাদান হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এতে অবশ্য বাংলাদেশের অবস্থানে বড় ধরনের হেরফের হয়নি। বাংলাদেশের সূচক অতিরঞ্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে পরিবেশের ক্ষতি-সম্পর্কিত উপাদান। এই হিসাব সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকেরা করেননি, এ হিসাব করেছেন কতিপয় বিশেষজ্ঞ। সূত্রটি এমনভাবে প্রণীত হয়েছে যে, বিশেষজ্ঞদের মতে, যে দেশে পরিবেশদূষণ কম সে দেশে অনুভূত কুশলতার পরিমাণ বেড়ে যাবে। আর পরিবেশদূষণ বাড়লে অনুভূত কুশলতার পরিমাপ কমে যাবে।

বাংলাদেশের সৌভাগ্য, এই সূচকের বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে কম দূষিত পাঁচটি দেশের একটি। তাই বাংলাদেশের মানুষের মত অনুসারে, সুখী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৩ হলেও, তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের অভিমত বিবেচনা করে বাংলাদেশের অবস্থান ১১-তে টেনে তোলা হয়েছে। যদি প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশে পরিবেশদূষণের হার যুক্তরাষ্ট্রের সমান, তবে সুখী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৩-এর অনেক নিচে নেমে যাবে। আসলে বাংলাদেশে পরিবেশদূষণের মাত্রা অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঢাকাসহ শহরসমূহ আন্তর্জাতিক মানে বাসের অযোগ্য।

এ বিশ্লেষণ থেকে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রথমত, সুখ পরিমাপ করার জন্য যেসব সমীক্ষা করা হচ্ছে, তাদের লক্ষ্য ভিন্ন। কাজেই এসব সমীক্ষা একে অপরের সাথে তুলনীয় নয়। ওপরে সারণি ৩.২-এ বিভিন্ন রাষ্ট্রে সুখের যে পরিমাপ উপস্থাপন করা হয়েছে, তা হিসাব করা হয়েছে সেসব রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবন-সন্তুষ্টি বা কুশলতার মূল্যায়নের ভিত্তিতে। এতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সুখের তুলনামূলক বিশ্লেষণ সম্ভব। অথচ Happy Planet Index-এ নাগরিকদের কুশলতার মূল্যায়ন ওই দেশে পরিবেশ অবক্ষয়ের মূল্যায়নের ভিত্তিতে সংশোধন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সুখ শুধু নাগরিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিমাপ করা হয়নি; এখানে বৈশ্বিক পরিবেশের দৃষ্টিকোণ থেকে সুখ কতটুকু টেকসই, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। Happiness Planet Index তাই সুখ পরিমাপ করে না, মূল্যায়ন করে ‘environmental efficiency of supporting well-being in a given country’ wparts একটি বিশেষ দেশে মানুষের কুশলতা টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবেশের কর্মক্ষমতা। কাজেই এ সমীক্ষার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশে মানুষের সুখের তুলনা সম্ভব নয়।

দ্বিতীয় সমস্যা হলো, এসব সূচক পরিমাপ করার জন্য যে ধরনের উপাত্ত প্রয়োজন, তা সব সময় পাওয়া যায় না। তাই অনেক ক্ষেত্রে জেনেশুনে ত্রুটিপূর্ণ উপাত্তের ভিত্তিতে সূচক পরিমাপ করা হয় । Happy Planet Index এ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো Ecological Footprint বা দেশভিত্তিক পরিবেশের ক্ষতির পরিমাপ । Happy Planet Index: 2012 Report (নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশন, ২০১২, ৮) স্পষ্ট স্বীকার করছে যে পরিবেশের ওপর প্রভাব সম্পর্কে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই, এসব তথ্য সংগ্রহের প্রণালি ত্রুটিপূর্ণ এবং তাতে অনেক ধরনের পরিবেশদূষণ বিবেচনা করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু পরিবেশ সম্পর্কে অন্য কোনো প্রামাণ্য তথ্য নেই, তাই ত্রুটিপূর্ণ উপাত্ত দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে।

Happy Planet Index-এ বাংলাদেশে পরিবেশদূষণ অতি নিম্ন পর্যায়ের অনুমান করে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ওপরে টেনে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু সুখের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান একাদশ দাবি করেনি। বাংলাদেশে পরিবেশদূষণ পৃথিবীর নিম্নতম পর্যায়ে–এ অজুহাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৩ থেকে ১১-তে তোলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে পরিবেশের সমস্যা অত্যন্ত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে পরিবেশদূষণ নিম্নতম পর্যায়ে নয়, বরং অত্যন্ত উচ্চ স্তরে রয়েছে। ভুল সংজ্ঞার ভিত্তিতে ও ভুল উপাত্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশে সুখের পরিমাপ ফাঁপানো হয়েছে। গবেষকদের এ ধরনের সমীক্ষা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।