২. সুখের পরিমাপ ও তার তাৎপর্য

যারা সুখ নিয়ে গবেষণা করছেন তারা সুখের বিষয়নির্ভর (objective) সংজ্ঞা নিয়ে আদৌ মাথা ঘামাতে রাজি নন। তাঁরা মনে করেন, সুখের ধারণা সম্পূর্ণভাবে মনোনির্ভর (subjective)। কাজেই সুখের ধারণা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হবে। একই সংজ্ঞার নিক্তিতে সবার সুখ মাপতে গেলে তা অনেকের কাছেই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ যা মাপা হবে তা গবেষকদের কাছে সুখ বলে মনে হলেও ভুক্তভোগীদের জন্য সুখকর না-ও হতে পারে। তবু গবেষণার সুবিধার্থে নেদারল্যান্ডের ইরাসমাস বিশ্ববিদ্যালয়ে World Database of Happiness সুখের নিম্নরূপ সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে : Happiness is defined as the subjective ‘enjoyment of one’s life as a whole. In other words how much one likes the life one leads. Current synonyms are life-satisfaction and ‘subjective well being.’ (‘সুখের সংজ্ঞা হলো ব্যক্তি নিজের মনোনির্ভর মূল্যায়নে সামগ্রিকভাবে যেভাবে জীবন উপভোগ করে। অন্য দিক থেকে দেখলে সুখ অর্থ হচ্ছে ব্যক্তি তার যাপিত জীবন কতটুকু পছন্দ করে। এর সমার্থক শব্দ হচ্ছে জীবন-সন্তুষ্টি ও ব্যক্তিগত মূল্যায়নে কুশলতা। রুট ভিনহোভেন, ২০০৪)। বিভিন্ন দেশে সমীক্ষাতে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সুখ পরিমাপে যেসব প্রবণতা দেখা যায় তার কিছু কৌতূহলোদ্দীপক উদাহরণ নিচে উল্লেখ করা হলো (ব্রুনো এস ফ্রে ও অলিয়েস স্ট্রটজার, ২০০২)।’

  • বয়সভেদে ভিন্নতা : যাদের বয়স কম ও যারা প্রবীণ (অথচ শারীরিকভাবে অসুস্থ নয়) তারা নিজেদের সুখী মনে করে। যাদের বয়স কম তারা না বুঝে সুখী। জীবনের অভিজ্ঞতা তাদের কম। কোনোমতেই তারা হতোদ্যম হয় না। যারা প্রবীণ তারা বুঝেশুনে সুখী। বৃদ্ধ বয়সে মানুষের প্রত্যাশা কমে আসে। তাই জীবনের গোধূলিলগ্নে প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার মধ্যে ব্যবধান হ্রাস পায়। এ বয়সের লোকেরা জীবনের চলার পথে ঘা খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তাই না পাওয়ার বেদনাবোধ তাদের অপেক্ষাকৃত কম। মধ্যবয়সীদের প্রত্যাশা বেশি। তাই না পাওয়ার দুঃখও তাদের থাকে অনেক বেশি। এ ধরনের ব্যর্থতাতেও তারা অভ্যস্ত নয়। তাই যারা মধ্যবয়সী তারা নিজেদের কম সুখী মনে করে। সবচেয়ে অসুখী হলো ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়স্ক লোকেরা।
  • লিঙ্গভেদে ভিন্নতা : মহিলারা পুরুষদের চেয়ে অধিকতর সুখী। মহিলারা অল্পেই তুষ্ট থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সমাজ তাদের ছোটকাল থেকেই শিক্ষা দেয় যে পুরুষদের চেয়ে কম অর্জনই তাদের নিয়তি। তাই তারা অল্প নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। মহিলারা নিজেদের অধিকতর সুখী বলে দাবি করলেও মহিলাদের মধ্যে পুরুষদের চেয়ে মনোবৈকল্যের হার অনেক বেশি। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো যে মহিলারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ। এরা যখন নিজেদের সুখী মনে করে, তখন নিজেদের খুবই সুখী মনে করে। যখন দুঃখ বোধ করে তখন তার তীব্রতা পুরুষদের চেয়ে বেশি হয়। কাজেই পুরুষেরা যে ধরনের মানসিক আঘাত সহ্য করতে পারে মেয়েরা তা পারে না।
  • বৈবাহিক অবস্থানভেদে ভিন্নতা : বিবাহিতরা অবিবাহিতদের চেয়ে নিজেদের সুখী মনে করে। এ প্রবণতা বিবাহিত পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিয়ে সুখের কারণ না-ও হতে পারে। এমনও হতে পারে, যারা সুখী তারাই জীবনসাথিদের বিয়েতে আকৃষ্ট করতে পারে। অসুখী ব্যক্তিরা নিঃসঙ্গ হয়, কেউ তাদের বিয়ে করতে চায় না। এ যুক্তি সঠিক হলে বিয়ে সুখের কারণ নয়, বরং সুখী মানুষেরাই বিয়ে করে থাকে।
  • শিক্ষা ও সুস্থতাভেদে ভিন্নতা : যারা যত বেশি শিক্ষিত তারা তত বেশি সুখী। যাদের স্বাস্থ্য ভালো তারা অপেক্ষাকৃত সুখী। যারা অসুস্থ তারা জীবন-কুশলতা নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকে। অন্যদিকে যারা সুখী তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, কারণ তারা দুশ্চিন্তা করে না।

ব্যক্তিভেদে সুখের উৎস ভিন্ন হতে বাধ্য। অবশ্য জীববিজ্ঞানীরা আরেক দফা এগিয়ে গিয়ে বলেন যে, ব্যক্তির সুখের ওপর মানুষের কোনো হাত নেই। সুখ হচ্ছে একটি জৈব চেতনা। এই চেতনার সৃষ্টি হয় মানুষের মস্তিষ্কে। মগজের বাঁ ভাগে সামনের দিকে কপালের সন্নিহিত অংশে সুখের উপলব্ধি উৎপন্ন ও লালিত হয়। (লেয়ার্ড ২০০৫, ১৯) কোনো কারণে মস্তিষ্কের এই অংশ অকার্যকর হয়ে গেলে মানুষের কোনো সুখবোধ থাকে না। এ ধরনের ব্যক্তিরা সব সময়ই হতাশাগ্রস্ত হয়ে থাকে। দুঃখের আধার হচ্ছে মগজের ডান দিকে পেছনের অংশ। এ অংশ ঠিকমতো কাজ না করলে বেদনাবোধের অবলুপ্তি ঘটে। মগজের কোন অংশ অপেক্ষাকৃত সবল তা নির্ভর করে ব্যক্তির জিনের গঠনের ওপর, যা বংশানুক্রমে নির্ধারিত হয়। তাই জীববিজ্ঞানীরা দাবি করেন, সুখ মানুষের আয়ত্তের বাইরে। কোনো কোনো মনস্তত্ত্ববিদ এ মতের সঙ্গে একমত। তারা বলেন, প্রত্যেক মানুষেরই তার ব্যক্তিত্ব ও জিনের গঠনের ভিত্তিতে সুখের একটি নির্ধারিত মাত্রা (set point) রয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ (যথা দুর্ঘটনা বা বিবাহবিচ্ছেদ) ঘটলে বা অপ্রত্যাশিত কোনো প্রাপ্তি (যথা লটারি) ঘটলে সুখের নির্ধারিত মাত্রা হতে সাময়িক বিচ্যুতি দেখা দেয়, তবে দীর্ঘ মেয়াদে এসব বিচ্যুতি টিকে থাকে না। সাময়িক বিচ্যুতির প্রভাব কেটে গেলে মানুষের সুখ তার নির্ধারিত মাত্রায় ফিরে আসে। অবশ্য আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা পুরোপুরি এ মত মানেন না। তাঁরা মনে করেন যে ব্যক্তিজীবনে বড় ধরনের সুযোগ বা দুর্যোগের ক্ষেত্রে মানুষ অনেক সময়ই নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। তবে এই খাপ খাওয়ানোটা, যাকে পোশাকি ভাষায় বলে অভিযোজন, কখনো সম্পূর্ণ হয় না। ব্যক্তির ক্ষেত্রে সুখের নির্ধারিত মাত্রা থেকে বিচ্যুতির কিছু না কিছু প্রভাব থেকে যায়। এর অর্থ হলো, কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রভাব সম্পূর্ণ মুছে যায় না। সুখের ক্ষেত্রে অভিযোজনের ফলে নাটকীয় পরিবর্তন না হলেও ওঠানামা ঘটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। মানুষ নিজেও মনে করে যে তার পক্ষে সুখের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব। অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক দার্শনিকই মনে করেন যে সুখ বাড়ানোর সচেতন প্রয়াসই অসুখের একটি বড় কারণ।

মনস্তত্ত্ববিদেরা মানুষের ব্যক্তিগত সুখের নিয়ামকগুলি চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। ১৯৬০-এর দশকে প্রখ্যাত সামাজিক মনস্তত্ত্ববিদ হেডলি ক্যন্ট্রিল ১২টি দেশে সমীক্ষা পরিচালনা করেন। এই ১২টি দেশের মধ্যে উন্নত, উন্নয়নশীল, গণতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক এবং পাঁচটি মহাদেশের প্রতিটির কমপক্ষে একটি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ সমীক্ষার ফলাফল সারণি ৩.১-এ দেখা যাবে।

সারণি ৩.১ থেকে দেখা যায় যে সুখের সবচেয়ে বড় নিয়ামক হচ্ছে অর্থনৈতিক অবস্থা। ৬০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ অর্থনীতিকেই সুখের সবচেয়ে বড় নিয়ামক বলে গণ্য করে থাকে। মানুষ স্বার্থপর, পরার্থপর নয়। অথচ বাঙালি

কবি কামিনী রায় লিখেছেন :

পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি

এ জীবন মন সকলি দাও।

তার মত সুখ কোথাও কি আছে?

আপনার কথা ভুলিয়া যাও।

পরের কারণে মরণেও সুখ

‘সুখ’ ‘সুখ’ করি কেঁদো-না আর

যতই কাঁদিবে ততই ভাবিবে

ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।

সারণি ৩.১ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কবি কামিনী রায় যা-ই নসিহত করুন না কেন, মানুষ পরের কল্যাণ করে সুখ পায় না। তার সুখ তার নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ও নিজের পরিবারের মঙ্গলের ওপর নির্ভরশীল। মূল্যবোধ ও চরিত্র মাত্র ৯ থেকে ৪২ শতাংশ মানুষের সুখকে প্রভাবান্বিত করতে পারে। অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাস্থ্যের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।

মানুষের সুখ পরিমাপ করার জন্য প্রধানত দুই ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত, ঘটনাভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহ। এ ক্ষেত্রে মনস্তত্ত্ববিদেরা চার ধরনের কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। একটি কৌশল হলো প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পর ব্যক্তির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা। আরেকটি কৌশল হচ্ছে সুখের পরিমাপ-সংক্রান্ত সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের দৈনিক ডায়েরি থেকে উপাত্ত সংগ্রহকরণ। তৃতীয় কৌশল হলো, একজন ব্যক্তি দিনে কত সময় অপ্রীতিকর কাজ করেন, সে সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহ করা। সবশেষে, ব্যক্তির মানসিক প্রতিক্রিয়া নিরূপণ করার জন্য মস্তিষ্কের চিত্র ধারণ করে তার সুখের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে উপাত্ত সংগ্রহ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এসব পদ্ধতিতে সরাসরি সুখ পরিমাপ করা সম্ভব হয় না। তাই সমীক্ষা পদ্ধতিতে ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে সুখ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সহজ।

দ্বিতীয়ত, সমীক্ষা পদ্ধতিতে চার ধরনের কৌশল দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ সামাজিক সমীক্ষায় নির্বাচিত ব্যক্তিদের নিম্নরূপ প্রশ্ন করা হয় : সবকিছু বিবেচনা করে আপনি কি আজকাল নিজেকে অত্যন্ত সুখী, মোটামুটি সুখী বা খুব সুখী নয় বলে মনে করেন? এই প্রশ্নের উত্তর থেকে এক থেকে তিন মাত্রায় (scale) একটি জনগোষ্ঠীর সুখের পরিমাপ করা হয়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত বিশ্বমূল্যবোধ সমীক্ষায় নিম্নলিখিত প্রশ্ন করা হয় : ‘সবকিছু বিবেচনা করে আপনি আজকাল আপনার জীবন নিয়ে কতটুকু সন্তুষ্ট?’ এই উত্তর ১ থেকে ১০ মাত্রার মধ্যে প্রকাশ করা হয়। যারা সবচেয়ে অসন্তুষ্ট তাদের প্রতিক্রিয়াকে ১ মাপা হয়, আর যারা সবচেয়ে সুখী তাদের প্রতিক্রিয়াকে ১০ ধরে নেওয়া হয়। ইউরোপে ইয়োরো ব্যারোমিটার সমীক্ষায় উত্তরদাতাদের প্রশ্ন করা হয় : সামগ্রিকভাবে আপনি কি যে জীবন যাপন করছেন তা নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট, মোটামুটি সন্তুষ্ট, খুব সন্তুষ্ট নন বা একেবারেই সন্তুষ্ট নন? এই প্রশ্নের ভিত্তিতে এক থেকে চার মাত্রায় জীবন সন্তুষ্টি পরিমাপ করা হয়। জীবন-সন্তুষ্টি সম্পর্কে আরেকটি সমীক্ষায় একটির বদলে তিনটি প্রশ্ন করা হয় এবং উত্তরদাতাদের সুখ এক থেকে সাত মাত্রায় মূল্যায়ন করা হয়।

সুখ বা জীবন-সন্তুষ্টি সম্পর্কে সমীক্ষার একটি সুবিধা হলো, এ ক্ষেত্রে উত্তরদাতাদের মূল্যায়ন সরাসরি জানা যায়। তবে সমীক্ষা-পদ্ধতি নিয়ে কয়েকটি বড় প্রশ্ন রয়েছে। এসব মূল্যায়ন নৈর্ব্যক্তিক নয়। উত্তরদাতার মেজাজ-মর্জি ও প্রেক্ষিতভেদে সুখের মূল্যায়ন ভিন্ন হতে পারে। তাই উত্তরদাতাকে কখন, কীভাবে, কী ভাষায় প্রশ্ন করা হয় তার ওপর অনেক ক্ষেত্রেই মূল্যায়ন নির্ভর করে। সুখ সম্পর্কে সব প্রশ্নের উত্তরই স্মৃতি থেকে দেওয়া হয়। অতীতে যা ঘটে তা সবই সুখদ নয়। সুখ-দুঃখে ও কান্না-হাসিতে নিরন্তর দোলায়িত মানুষের বাস্তব জীবন। জর্জ বার্নাড শ’ যথার্থই বলেছেন, ‘A lifetime of happiness: no man alive can bear it, it would be hell on earth.’ (সারা জীবন ধরে সুখ : কোনো জীবিত মানুষই তা সইতে পারবে না, এটি হবে মর্ত্যে নরক)। সুখের পর দুঃখ আসে, আবার দুঃখের পর সুখ আসে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সুখ বেশি না দুঃখ বেশি, তা মূল্যায়ন করা শক্ত। এ ধরনের মূল্যায়নের জন্য উত্তরদাতাকে তার অভিজ্ঞতালব্ধ সুখ ও দুঃখের আপেক্ষিক মূল্যায়ন করতে হয়। এ ধরনের মূল্যায়ন ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। তাই এ ধরনের মূল্যায়ন কতটুকু গ্রহণযোগ্য, সে সম্পর্কে প্রশ্ন রয়েছে।

বিভিন্ন সমীক্ষার মাধ্যমে সুখ সম্পর্কে সংগৃহীত উপাত্তের উপযোগিতা মনোবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করেছেন। ক্যায়নেম্যান ও তার সহযোগীরা (২০০৬) সমীক্ষার ভিত্তিতে সুখ সম্পর্কে সংগৃহীত উপাত্তের গ্রহণযোগ্যতার পক্ষে নিম্নলিখিত যুক্তিগুলি উপস্থাপন করেছেন। প্রথমত, সমীক্ষায় যারা নিজেদের সুখী বলে দাবি করছেন, তাঁদের সুখী হওয়ার সত্যি সত্যি কারণ আছে। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে যারা সমীক্ষায় নিজেদের অতি সুখী বলে দাবি করেছেন তারা প্রায়ই হাসেন, তাঁদের বন্ধুবান্ধবেরাও মনে করেন যে তারা সুখী, তাদের স্বাস্থ্য ভালো, তাদের আয় বেশি, তারা বহির্মুখী ও মিশুক, তাঁদের আত্মীয়স্বজনও সুখী, তাঁদের ভালো ঘুম হয় এবং তারা ধনাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথা বলেন। অর্থাৎ সুখী মানুষ সম্পর্কে আমাদের মনে যে ভাবমূর্তি রয়েছে তার সঙ্গে সমীক্ষায় যারা সুখী বলে দাবি করেন তাদের খুবই মিল রয়েছে। কাজেই সুখ-সম্পর্কিত সমীক্ষার ফলাফল বাস্তব বলে মনে হয়। দ্বিতীয়ত, মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় যারা সুখী তারা সুখ সম্পর্কিত সমীক্ষাতেও নিজেদের সুখী বলে দাবি করেন। দৈনিক ডায়েরির ভিত্তিতে যারা সুখী বলে বিবেচিত হন, তাঁরা অতীতের স্মৃতিভিত্তিক মূল্যায়নেও একই ধরনের আচরণ প্রদর্শন করেন। তৃতীয়ত, যারা নিজেদের সুখী বলে দাবি করেন তাদের মগজ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তাদের মগজের বাঁ দিকের সম্মুখভাগ অধিকতর সক্রিয়। এ ধরনের উপাত্ত চিকিৎসাশাস্ত্রের ভিত্তিতে সুখ পরিমাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সামগ্রিক বিবেচনায় মনস্তত্ত্ববিদেরা সমীক্ষার মাধ্যমে সুখ সম্পর্কে সংগৃহীত উপাত্তকে বৈজ্ঞানিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিয়েছেন।