মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের সাফল্য

মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের কোনো সাধারণ সূত্র আছে কি? ৫০ বছর আগে আমি হবিগঞ্জে এসডিও ছিলাম। এই ৫০ বছরে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমি কাজ করেছি। তবে সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল মাঠপর্যায়ের প্রশাসন। এখানে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হতো। মানুষের সঙ্গে কাজ করা একটি জটিল কাজ। মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে শুধু ভালো প্রস্তুতি থাকলেই চলবে না, ভালো কপালও থাকতে হবে। ভালো কাজ করলেও নসিবের জেরে অনেক কর্মকর্তাকেই ব্যর্থ হতে হয়।

আমি হবিগঞ্জে এসডিও থাকাকালীন দুটি ঘটনা ঘটে। এ দুটি ঘটনাতেই আমার অসফল কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু কপালের জোরে দুটি ঘটনার কোনোটিই আমার ভাবমূর্তিকে স্নান করতে পারেনি।

প্রথম ঘটনাটি ঘটে ১৯৭০-এর প্রথম দিকে। হবিগঞ্জে তখন একমাত্র কলেজ ছিল বৃন্দাবন কলেজ। বৃন্দাবন কলেজের ছাত্রদের কোনো খেলার মাঠ ছিল না। তারা একটি খেলার মাঠ দাবি করে। কলেজের কাছেই একটি বড় মাঠ ছিল, যা ছিল সরকারি সম্পত্তি। এই মাঠে প্রতিবছর আনসারদের প্রশিক্ষণ হতো। আমি বৃন্দাবন কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতিশ্রুতি দিই যে এই মাঠ বৃন্দাবন কলেজের নামে বরাদ্দ করার ব্যবস্থা করব। তখন আমি জানতাম না যে কাছেই হবিগঞ্জ মুসলিম হাইস্কুল নামে একটি স্কুল ছিল এবং সেই স্কুলের একজন শিক্ষক এই মাঠ হবিগঞ্জ মুসলিম স্কুলের নামে বরাদ্দের চেষ্টা করছিলেন। তিনি যখন বৃন্দাবন কলেজের কাছে এই মাঠ বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা শুনতে পান, তখন তিনি স্কুলের ছাত্রদের খেপিয়ে তোলেন।

আমি একদিন সিলেটে উন্নয়নসংক্রান্ত সমন্বয় সভা এবং জেলা কাউন্সিলের সভায় উপস্থিত থাকার জন্য সিলেট যাই। জেলা কাউন্সিলের সভায় আমার কাছে হবিগঞ্জ থেকে বার্তা যায় যে হবিগঞ্জ স্কুলের ছাত্ররা মাঠে প্রশিক্ষণরত আনসারদের কাছ থেকে রাইফেল লুট করে নিয়ে গেছে এবং আনসারদের পিটিয়ে মাঠ থেকে বের করে দিয়েছে। সেখানে তারা হবিগঞ্জ মুসলিম হাইস্কুলের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়। আনসারদের রাইফেল উদ্ধার করার জন্য আমার সেকেন্ড অফিসার খন্দকার রকিবউদ্দিন আহমদ সেখানে যান। কিন্তু তাঁকেও তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই খবর পেয়ে ডেপুটি কমিশনার আমাকে সঙ্গে সঙ্গে হবিগঞ্জ ফিরে যেতে নির্দেশ দেন। আমার সঙ্গে তিনি ইপিআরের এক মেজরসহ একটি বাহিনীও পাঠিয়ে দেন।

হবিগঞ্জে এসে আমি লুট হয়ে যাওয়া বন্দুকগুলো উদ্ধারের জন্য ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমি স্কুলের হেডমাস্টারকে বলি বন্দুক যদি না পাওয়া যায়, তাহলে স্কুলের সব শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হবে এবং ইপিআরের সৈন্যরা এদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নেবে। সন্ধ্যার দিকে আমাকে হেডমাস্টার জানান যে সব বন্দুক একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেই পুকুর থেকে ডুবুরি দিয়ে সব বন্দুক উদ্ধার করা সম্ভব। এই খবরের ভিত্তিতে আমি ব্যবস্থা নিলাম এবং সব বন্দুক উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এত বড় ঘটনায় শুধু বন্দুক উদ্ধার করলেই হবে না, কার ব্যর্থতায় এ ঘটনা ঘটেছে, তার দায়িত্ব নিরূপণ করা প্রয়োজন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনসার বাহিনীর প্রধানকে সভাপতি করে একটি কমিটি করা হয়। এতে সামরিক বাহিনীর একজন মেজরকেও সদস্য করা হয়। তারা হবিগঞ্জে এসে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত করেন। তাঁদের তদন্ত রিপোর্ট অনুসারে এই ঘটনায় এসডিওর কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি ঘটেছে খন্দকার রকিবউদ্দিন আহমদের দুর্বলতার জন্য। সুতরাং তাকে যাতে ভবিষ্যতে কোনো মহকুমার দায়িত্ব দেওয়া না হয়, এই মর্মে সুপারিশ করা হয় এবং তাঁকে হবিগঞ্জ থেকে বদলি করে ঢাকা সচিবালয়ে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমি যদি হবিগঞ্জে উপস্থিত থাকতাম এবং আমার উপস্থিতিতে যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটত, তাহলে নিশ্চয়ই আমার ওপর দায়িত্ব বর্তাত। তবে আমি থাকলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা না-ও ঘটতে পারত।

দ্বিতীয় ঘটনাটিও ১৯৭০-এর দিকেই ঘটে। একদিন রোববার সকালবেলা বাসায় বসে আছি। এমন সময় ঢাকা থেকে একটি কল যায়। কলটি করেছেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব কর্নেল এম এম হক। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি জানেন আপনার জন্য পৃথিবী থেকে গুটিবসন্ত দূর করা যাচ্ছে না? উত্তরে আমি বললাম, এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে আমি। আদৌ কিছু জানি না। কর্নেল হক বললেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে পৃথিবীর সব দেশে গুটিবসন্ত নির্মূল করার জন্য সাফল্যের সঙ্গে টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। এই কর্মসূচি শুধু পাকিস্তানে বাস্তবায়ন করা যায়নি, পাকিস্তানের পূর্ব অঞ্চলের বাহুবল থানার একটি ইউনিয়নে জনগণ টিকা নিচ্ছে না এবং সেখানে এখনো গুটিবসন্ত হচ্ছে। এ ইউনিয়ন থেকে গুটিবসন্তের টিকা দিয়ে দূর করতে না পারলে বিশ্ব থেকে গুটিবসন্ত দূর করা যাবে না।

আমি তাকে বললাম যে স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কর্মকর্তা এ সম্পর্কে আমাকে আগে জানাননি। যেহেতু স্বাস্থ্যসচিব নিজে এখন আমাকে জানিয়েছেন, সেহেতু আমি আজই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। আমি কিছুক্ষণ পর বাহুবল চলে গেলাম। সেখানে সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন), থানার বড় দারোগা এবং টিকাদান কর্মসূচির প্রধান কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠাই। আলোচনা থেকে জানা যায় যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে একজন পীর সাহেব আছেন। তিনি ফতোয়া দিয়েছেন যে বসন্তের টিকা যারা নেবে, তারা সন্তানধারণের ক্ষমতা হারাবে। কোনো মুসলমানের পক্ষে সন্তানধারণের ক্ষমতা হারানো জায়েজ নয়। তাই তিনি তাঁর শাগরেদদের টিকা নিতে মানা করেছেন। তার শাগরেদদের টিকা নিতে বললে তারা পাল্টা টিকাদানকারীদের মারতে আসে। এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো পীর সাহেবকে টিকার বিরুদ্ধে তাঁর ফতোয়া প্রত্যাহার করতে বাধ্য করতে হবে।

আমি একটু ভেবে থানার দারোগাকে বললাম, ‘আজ রাতে আপনি পীর সাহেব এবং তার ৮-১০ জন খলিফাঁকে গ্রেপ্তার করে কাল সকালে আমার আদালতে পাঠিয়ে দেবেন। দারোগা রাজি হলেন। আমি হবিগঞ্জে ফিরে এলাম। পরদিন সকালে যখন আদালতে যাই, তখন দেখতে পাই অনেক মোল্লা শ্রেণির লোকজন আদালতের বাইরে ভিড় করেছেন। একটু পরে হবিগঞ্জের সব বিশিষ্ট উকিল ও মোক্তার একসঙ্গে আমার খাসকামরায় আসেন। তারা অভিযোগ করেন যে বাহুবলের মহামান্য পীর সাহেব এবং তার অনুচরদের বাহুবলের দারোগা গ্রেপ্তার করে এনেছেন। এটি অত্যন্ত অন্যায় কাজ হয়েছে। দারোগার বিচার হওয়া উচিত এবং পীর সাহেব ও তাঁর অনুচরদের অবিলম্বে জামিনে মুক্তি দেওয়া উচিত।

আমি তখন আইজীবীদের বললাম, ‘আসলে মামলাটি সহজ নয়, এই মামলার সাফল্যের ওপর পাকিস্তান রাষ্ট্রের সুনাম নির্ভর করছে। আমি তাঁদের আরও বললাম, ‘পীর সাহেবকে আমি শুধু একটি শর্তে ছেড়ে দিতে পারি।

আইজীবীরা বললেন, ‘সে শর্ত কী?’ আমি বললাম, পীর সাহেব এবং তার অনুচরেরা আদালতে যদি সবার সামনে টিকা নেন, তাহলে তাদের সবাইকে আমি বেকসুর খালাস করে দেব। আর যদি তারা টিকা না নেন, তাহলে তাদেরকে জেলে পাঠানো হবে। শেষে আমি আইনজীবীদের সহযোগিতা কামনা করি।

তাঁরা ব্যাপারটির গুরুত্ব বুঝতে পেরে আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ঘণ্টাখানেক পরে এসে তাঁরা জানান যে পীর সাহেব এবং তাঁর সহযোগীরা টিকা নিতে রাজি হয়েছেন।

আমি আদালতের এজলাসে গিয়ে বসলাম। পীর সাহেব এবং তার অনুসারীদের হাজির করা হলো। আমি তাঁদের বললাম, ‘টিকায় আদৌ পরিবার-পরিকল্পনার কোনো ওষুধ নেই। আমি নিজে টিকা নিই এবং এর কোনো কুফল নেই। আপনারা মেহেরবানি করে টিকা নিন এবং টিকার বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করুন।’ হবিগঞ্জ পৌরসভার টিকাদানকারী সেখানে। উপস্থিত ছিলেন। তিনি পীর সাহেব এবং তাঁর অনুসারীদের টিকা দেন। তাঁরা বাহুবলে ফিরে যান। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সেখানে টিকাদান কর্মসূচি সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হয়।

আপাতদৃষ্টে সমস্যার সমাধান ছিল খুব সহজ। কিন্তু যদি পুলিশ গভীর রাতে গিয়ে পীর সাহেব এবং তাঁর অনুসারীদের গ্রেপ্তার না করত, তাহলে বড় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারত। পীর সাহেবের অনুসারীরা পুলিশকে পাল্টা আক্রমণ করতে পারতেন এবং সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারত। অথবা যদি পীর সাহেব হবিগঞ্জে এসে টিকা নিতে রাজি না হতেন, তাহলে শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারত। এ ধরনের অনেক ঘটনাই ঘটতে পারত। কিন্তু আমার কপাল ভালো এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে যারা কাজ করেন, তাদের সাফল্য সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা নেই। সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বনের পরও দেখা যায় পরিস্থিতি বদলে গেছে। আদেশের একটু হেরফেরের জন্য অনেক ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কাজেই জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুধু সফল হওয়ার চেষ্টা করলে চলবে না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তাদের দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি জনগণের কাছে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তবু তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে, অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা থাকবে। ব্যর্থতার ভয়ে দায়িত্ব পালনে থেমে গেলে চলবে না।

অবশ্য মাঠ প্রশাসনে সাফল্যের সংজ্ঞা সব সময় সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। আজকে যা মনে হবে সফল, কালের বিবর্তনে তা অসফল প্রমাণিতও হতে পারে। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা মনে পড়ে। আমি যখন হবিগঞ্জে মহকুমা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিই, তখন একটি সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে মাধবপুরের দুর্গম অঞ্চলে জুয়া খেলার রমরমা ব্যবসা চলছে। আমি টেলিফোনে থানার বড় দারোগাকে জুয়া খেলা বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিই। পরদিন সকালবেলা আমি যখন অফিসে যাই, তখন আর কেউ অফিসে ছিলেন না। হঠাৎ স্যুটকোট পরা এক ভদ্রলোক একটি ব্রিফকেস হাতে আমার সামনে এসে দাঁড়ান। পরিচয় জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন যে তিনি মাধবপুর থানার লোক। তারপর তিনি বলেন, মহকুমা পরিচালনার জন্য এসডিওদের অনেক অর্থের প্রয়োজন, সরকার সব অর্থ বরাদ্দ দেয় না। তাই মহকুমা প্রশাসককে অর্থের ব্যবস্থা করতে হয়। তিনি মহকুমা প্রশাসককে সাহায্য করতে চান। এই ব্রিফকেসে তিনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন। এ টাকা যদি এসডিও সাহেব গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি অত্যন্ত বাধিত হবেন। তবে হুজুর যদি মেহেরবানি করে মাধবপুর থানার জুয়া খেলা বন্ধ না করেন, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অর্থের ব্যবস্থা করা হবে।

আমি বেল বাজিয়ে পিয়নকে ডাকলাম। বেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে লোকটি চলে যায়। আমি পিয়নকে লোকটিকে ধরে আনতে বললাম। কিছুক্ষণ পর পিয়ন এসে বলল লোকটি পালিয়ে গেছে, তাকে ধরা সম্ভব হয়নি।

এরপর আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মধ্যাহ্নভোজনের পরে ঘটে ঘটনাটি, আমার মনে পড়ে। আমি মাধবপুর থানার ওসিকে জুয়াড়িরা এখনো কাজ করছে কি না, তা জানাতে আদেশ দিলাম। বিকেলে ওসি জানালেন যে বেলা ১১টার দিকে জুয়াড়িরা তাদের তাবু গুটিয়ে চলে গেছে। তাদের সম্পর্কে আর কোনো খোঁজখবর সংগ্রহ করা যায়নি। আমি মনে মনে আক্ষেপ করতে থাকি যে কেন আমি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মাধবপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। যদি যোগাযোগ করতে পারতাম, তাহলে হয়তো দুবৃত্তকে ধরতে পারতাম। এখন ভাবি, যদি দুবৃত্তকে ধরতে পারতাম, তাহলে কি আমি সফল হতাম! এই প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর আমার জানা নেই। দুবৃত্তকে ধরে শাস্তি দিলে সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতে পারত, আবার অন্যদিকে আমার সঙ্গে দুবৃত্তের যোগাযোগ আছে–এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে নিয়ে আসতে পারত। সে ক্ষেত্রে অনেকেই হয়তো তার বক্তব্য বিশ্বাস করতে পারত।

সাফল্যই সবচেয়ে বড় কথা নয়, সবচেয়ে বড় সত্য হলো প্রশাসনকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাঠপর্যায়ের প্রত্যেক প্রশাসককেই রবীন্দ্রনাথের কর্ণকুন্তীসংবাদ’ কবিতায় কর্ণ তার মাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাকেই ধ্রুব সত্য হিসেবে গণ্য করতে হবে :

‘শুধু এই আশীর্বাদ দিয়ে যাও মোরে,

জয়লোভে যশোলোভে রাজ্যলোভে, অয়ি,

বীরের সদগতি হতে ভ্রষ্ট নাহি হই।’

তিরস্কারের ভয় অথবা পুরস্কারের মোহ জেলা প্রশাসকের জন্য বড় কথা। নয়। তাকে বীরের সদ্গতি থেকে বা মূল্যবোধ থেকে কখনো ভ্রষ্ট হলে চলবে না। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বীরের সদ্গতি হলো আইনের শাসন।