» ছয় : চার বৎসর পরের কথা

চার বৎসর পরের কথা বলিতেছি। কলিকাতার একটা বড় বাড়িতে জমিদারের ছেলের অন্নপ্রাশন। খাওয়ানো-দাওয়ানোর বিরাট ব্যাপার শেষ হইয়া গিয়াছে। সন্ধ্যার পর বহির্বাটির প্রশস্ত প্রাঙ্গণে আসর করিয়া আমোদ-আহ্লাদ, নাচ-গানের উদ্যোগ-আয়োজন চলিতেছে। একধারে তিন-চারটি নর্তকী——ইহারাই নাচ-গান করিবে। দ্বিতলেরContinue Reading

» পাঁচ : সকালবেলা স্নান করিয়া

সকালবেলা স্নান করিয়া সত্য ধীরে ধীরে বাসায় ফিরিয়াছিল। তাহার দৃষ্টি ক্লান্ত, সজল। চোখের পাতা তখনও আর্দ্র। আজ চারদিন গত হইয়াছে, সেই অপরিচিতা প্রিয়তমাকে সে দেখিতে পায় নাই—আর তিনি গঙ্গাস্নানে আসেন না। আকাশ-পাতাল কত কি যেContinue Reading

» চার : জ্ঞানীরা কহিয়াছেন

জ্ঞানীরা কহিয়াছেন, অসম্ভব কাণ্ড চোখে দেখিলেও বলিবে না। কারণ, অজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে না। এই অপরাধেই শ্রীমন্ত বেচারা নাকি মশানে গিয়াছিল। সে যাই হোক, ইহা অতি সত্য কথা, সত্য লোকটা সেদিন বাসায় ফিরিয়া টেনিসন্‌ পড়িয়াছিল এবংContinue Reading

» তিন : রমণী যে প্রত্যহ

রমণী যে প্রত্যহ অতি প্রত্যুষে গঙ্গাস্নান করিতে আসেন, সত্য তাহা বুঝিয়া লইয়াছিল। এতদিন যে উভয়ের সাক্ষাৎ ঘটে নাই, তাহার একমাত্র হেতু—পূর্বে সত্য নিজে কতকটা বেলা করিয়াই স্নানে আসিত। জাহ্নবীতটে উপর্যুপরি আজ সাতদিন উভয়ের চারি চক্ষুContinue Reading

» দুই : একফোঁটা রাধারানীকে

একফোঁটা রাধারানীকে সজোরে ঝাড়িয়া ফেলিয়া দিয়া, সত্য এম. এ. পাশ করিতে কলিকাতায় চলিয়া আসিয়াছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পরীক্ষাগুলি উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ত কোন মতেই না, খুব সম্ভব পরেও না। সে বিবাহই করিবে না। কারণ, সংসারেContinue Reading

» এক : সে অনেকদিনের কথা

সে অনেকদিনের ঘটনা। সত্যেন্দ্র চৌধুরী জমিদারের ছেলে; বি.এ. পাশ করিয়া বাড়ি গিয়াছিল, তাহার মা বলিলেন, মেয়েটি বড় লক্ষ্মী—বাবা, কথা শোন্‌, একবার দেখে আয়। সত্যেন্দ্র মাথা নাড়িয়া বলিল, না মা, এখন আমি কোনমতেই পারব না। তাContinue Reading

» আঁধারে আলো

আঁধারে আলো গল্পটি ১৩২১ বঙ্গাব্দের মাঘ সংখ্যা “ভারতবর্ষ” পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় অগ্রহায়ণ, ১৩৩২ বঙ্গাব্দে (১২ই জুলাই, ১৯১৫)। গ্রন্থের নাম “মেজদিদি ও অন্যান্য গল্প”, প্রকাশক ‘গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স’, ২০১,Continue Reading

» আট : দিন পাঁচ-ছয় হইয়া গেল

দিন পাঁচ-ছয় হইয়া গেল, হেমাঙ্গিনীর জ্বর ছাড়ে নাই। কাল ডাক্তার বলিয়া গিয়াছিলেন, সর্দি বুকে বসিয়াছে। সন্ধ্যার দীপ সবেমাত্র জ্বালা হইয়াছিল, ললিত ভাল কাপড়-জামা পরিয়া ঘরে ঢুকিয়া কহিল, মা, দত্তদের বাড়ি পুতুল-নাচ হবে, দেখতে যাব? মাContinue Reading

» সাত : দিন পাঁচ-ছয় পরে

দিন পাঁচ-ছয় পরে একদিন বৈকালে বিপিন অত্যন্ত বিরক্ত-মুখে ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, এ-সব কি তুমি শুরু করলে মেজবৌ? কেষ্ট তোমার কে যে, একটা পরের ছেলে নিয়ে দিন-রাত আপনা-আপনির মধ্যে লড়াই করে বেড়াচ্চ! আজ দেখলাম, দাদা পর্যন্তContinue Reading

» ছয় : পরদিন সকালে

পরদিন সকালে জানালা খুলিতেই হেমাঙ্গিনীর কানে বড়জায়ের তীক্ষ্ণ-কণ্ঠের ঝঙ্কার প্রবেশ করিল। তিনি স্বামীকে সম্বোধন করিয়া বলিতেছেন, ছোঁড়াটা কাল থেকে পালিয়ে রইল, একবার খোঁজ নিলে না? স্বামী জবাব দিলেন, চুলোয় যাক। কি হবে খোঁজ করে? স্ত্রীContinue Reading

» পাঁচ : পরদিন সকালেই

পরদিন সকালেই কেষ্ট হঠাৎ গুটিগুটি ঘরে ঢুকিয়া হেমাঙ্গিনীর পায়ের কাছে বিছানার একপাশে আসিয়া বসিল। হেমাঙ্গিনী পা দুইটি একটু গুটাইয়া লইয়া সস্নেহে বলিলেন, দোকানে যাসনি কেষ্ট? এইবার যাব। দেরি করিস নে দাদা, এইবেলা যা, নইলে এক্ষুনিContinue Reading

» চার : সর্দি উপলক্ষ করিয়া

সর্দি উপলক্ষ করিয়া হেমাঙ্গিনীর মাঝে মাঝে জ্বর হইত, দিন-দুই থাকিয়া আপনি ভাল হইয়া যাইত। দিন-কয়েক পরে এমনি একটু জ্বর বোধ হওয়ায় সন্ধ্যার পর বিছানায় পড়িয়া ছিলেন। ঘরে কেহ নাই, হঠাৎ মনে হইল, কে যেন অতিContinue Reading

» তিন : সন্ধ্যার সময়

সন্ধ্যার সময় কাদম্বিনী প্রশ্ন করিলেন, কি খেয়ে এলি রে কেষ্ট? কেষ্ট সলজ্জ নতমুখে কহিল, লুচি। কি দিয়ে খেলি? কেষ্ট তেমনিভাবে বলিল, রুইমাছের মুড়োর তরকারি, সন্দেশ, রসগোল্লা। ইস্‌! বলি মেজ-ঠাকরুন মুড়োটা কার পাতে দিলেন? হঠাৎ এইContinue Reading

» দুই : পৈতৃক বাড়িটা

পৈতৃক বাড়িটা দুই ভায়ে ভাগ করিয়া লইয়াছিল। পাশের দোতলা বাড়িটা মেজভাই বিপিনের। ছোটভায়ের অনেকদিন মৃত্যু হইয়াছিল। বিপিনেরও ধান-চালের কারবার। তাহার অবস্থাও ভাল, কিন্তু বড়ভাই নবীনের সমান নয়। তথাপি ইহার বাড়ীটাই দোতলা। মেজবৌ হেমাঙ্গিনী শহরের মেয়ে।Continue Reading

» এক : কেষ্টার মা

কেষ্টার মা মুড়ি-কড়াই ভাজিয়া, চাহিয়া-চিন্তিয়া, অনেক দুঃখে কেষ্টধনকে চোদ্দ বছরেরটি করিয়া মারা গেলে, গ্রামে তাহার আর দাঁড়াইবার স্থান রহিল না। বৈমাত্র বড় বোন কাদম্বিনীর অবস্থা ভাল। সবাই কহিল, যা কেষ্ট, তোর দিদির বাড়িতে গিয়ে থাকContinue Reading

» মেজদিদি

মেজদিদি গল্পটি ১৩২১ বঙ্গাব্দের ভাদ্র সংখ্যা “ভারতবর্ষ” পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় অগ্রহায়ণ, ১৩৩২ বঙ্গাব্দে (১২ই জুলাই, ১৯১৫)। গ্রন্থের নাম “মেজদিদি ও অন্যান্য গল্প”, প্রকাশক ‘গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স’, ২০১, কর্ণওয়ালিসContinue Reading

» নয় : সেদিন সন্ধ্যা

সেদিন সন্ধ্যা হইতেই সমস্ত আকাশ ঝাঁপিয়া মেঘ করিয়া বৃষ্টি পড়িতে লাগিল। ইন্দু মেয়ে লইয়া বিছানায় আসিয়া শুইয়া পড়িল। আজ তার ছোট-ভগিনীপতি আসিয়াছিলেন, পাশের ঘর হইতে তাঁহাকে খাওয়ানো-দাওয়ানো গল্প-গুজবের অস্ফুট কলধ্বনি যতই ভাসিয়া আসিতে লাগিল, ততইContinue Reading

» আট : ও কি ঠাকুরঝি

ও কি ঠাকুরঝি,—তোমরা কাঁদছিলে নাকি? চোখ দুটি তোমাদের যে জবাফুল হয়েচে? অম্বিকাবাবুর স্ত্রী শুনিতেছিলেন এবং বিমলা উপুড় হইয়া বই পড়িতেছিল; ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিয়া চোখ মুছিয়া হাসিল,—উঃ! দুর্গামণির দুঃখে বুক ফেটে যায় বৌ! ইন্দু জিজ্ঞাসাContinue Reading

» সাত : কথা শোনো বৌ

কথা শোনো বৌ, একবার পায়ে হাত দিয়ে তাঁর ক্ষমা চাও গে। কেন, কি দুঃখে? আমার মাথা কেটে ফেললেও আমি তা পারব না ঠাকুরঝি। কেন পারবে না? স্বামীর পায়ে হাত দিতে লজ্জা কি? বেশ ত, তোমারContinue Reading

» ছয় : ডাক্তারবাবু

ডাক্তারবাবু, পাঁচ-সাত শিশি ওষুধ খেলেন, কিন্তু বুকের ব্যথাটা ত গেল না। গেল না? কৈ, তিনি ত কিছু বলেন না? জানেন ত, ঐ তাঁর স্বভাব; কিন্তু, আমি নিশ্চয় জানি, একটু ব্যথা লেগেই আছে—তা ছাড়া, শরীর তContinue Reading