দময়ন্তী
‘ডিফাইন রেপ।’ হুঙ্কার ছাড়লেন ডক্টর রেবতীভূষণ পট্টনায়েক। ফরেনসিক মেডিসিনের হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল। এক্স-আর্মি ম্যান। ছ’ফুট লম্বা, তাগড়াই চেহারা, হ্যান্ডল বার গোঁফ। একত্রিশে ডিসেম্বরের শীতেও পরে আছেন হাফহাতা শার্ট।
পঞ্চাশ বছরের রেবতীভূষণ সারা বছরই হাফহাতা জামা পরেন মুগুরভাঁজা হাতের গুলি দেখানোর জন্য। চক দিয়ে যখন ব্ল্যাক বোর্ডে লেখেন, পুটপুট করে জামার হাতার সেলাই ছিঁড়ে যাওয়ার আওয়াজ শোনা যায়। নিয়মিত পান খেয়ে ক্লাসে আসেন। ঠোঁটদুটি টকটকে লাল হয়ে থাকে। বাংলা ফর্মুলা ছবির ভিলেনদের মতো চেহারা।
এক্স-আর্মি ম্যানের হুঙ্কারে কেউ কোনও উত্তর দিল না। রেবতী বললেন, ‘আমি জানি যে আমার নামের আদ্যক্ষর, মানে রেবতীর ‘রে’ আর পট্টনায়েকের ‘প’ মিলিয়ে, আড়ালে তোমরা আমাকে ‘রেপকাকু’ বলে ডাকো। যতক্ষণ সামনা সামনি না বলছ, দ্যাটস ফাইন উইথ মি। তো, তোমাদের ‘রেপকাকু’ আজ রেপ পড়াবে। ডিফাইন রেপ। এনিবডি?’
‘কোনও মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে ইন্টারকোর্স করা…’ বলল চন্দন।
‘আঠেরো বছরের কম বয়সি মেয়ের ক্ষেত্রে সহবাসে সম্মতি বা ইচ্ছার প্রয়োজন নেই। ইন্টারকোর্স করলেই সেটা রেপ।’ বলল প্রবাল।
‘সহবাসে সম্মতি দেওয়ার সময়ে মেয়েটি ইনটক্সিকেটেড থাকলে সেটাও রেপ।’ বলল জেমসি।
‘প্রাণের ভয়ে সম্মতি দিলে সেটাও রেপ।’ বলল শ্রীপর্ণা।
খুশি হয়ে ঘাড় নাড়লেন রেবতী। ‘বাঃ! তোমরা বেশ কয়েকটা পয়েন্ট কভার করেছ। আমি কমপ্লিট ডেফিনিশনটা লিখছি। এটা আমি প্রত্যেক স্টুডেন্টকে ভাইভায় জিজ্ঞাসা করব। ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড বলতে না পারলে ফরেনসিক মেডিসিনে সাপ্লি নিশ্চিত।’
রেবতী খসখস করে বোর্ডে লিখলেন, ‘আ ম্যান ইজ সেইড টু কমিট রেপ ইফ হি হ্যাজ সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স উইথ এ উয়োম্যান ১) এগেইন্সট হার উইল, ২) উইদাউট হার কনসেন্ট, ৩) উইথ হার কনসেন্ট হোয়েন হার কনসেন্ট হ্যাজ বিন অবটেইনড বাই পুটিং হার অর এনি পারসন ইন হুম শি ইজ ইন্টারেস্টেড ইন ফিয়ার অফ ডেথ…’
রেবতীর দীর্ঘ সংজ্ঞা শেষ হওয়া মাত্র ফিসফিস গুজগুজে এসএলটি ভরে গেল। চন্দন বলল, ‘এটা ডেফিনিশন? এ তো এক মাইল লম্বা!’
দীপ বলল, ‘এক মাইল না ছইঞ্চি?’
জেমসি বলল, ‘শাট আপ!’
প্রবাল বলল, ‘এটা মুখস্থ করার থেকে রেপড হওয়া ভালো।’
শ্রীপর্ণা বলল, ‘শাট আপ!’
সবুজ বলল, ‘এই ডেফিনিশন কোনও ছেলের তৈরি।’
বৃন্দা বলল, ‘কেন তোর এইরকম মনে হচ্ছে?’
সবুজ উত্তর দিল, ‘কেন না কোনও ফাঁক নেই।’
সাবিনা বলল, ‘শাট আপ!’
রেবতী চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন। গুঞ্জন থামতে বললেন, ‘আমি জানি তোমাদের অনেক প্রশ্ন থাকবে। এক এক করে শুরু করো।’
‘অ্যাজ পার ডেফিনিশন, ওনলি আ ম্যান ক্যান কমিট রেপ। নট দ্য অপোসিট। এটা কি ঠিক?’ প্রথম প্রশ্ন করল সুরজ। ক্লাস জুড়ে ছেলেদের হাসির হররা। কোনও কোনও মেয়েও হাসছে।
‘এটা আইন। ইন্ডিয়ান পেনাল কোড। আমাদের সংবিধান ঠিক বা ভুলের ঊর্ধ্বে। নেক্সট কোয়েশ্চেন?’
‘উইল আর কনসেন্টের তফাত কী?’ বৃন্দা প্রশ্ন করে।
‘এক্সেলেন্ট কোয়েশ্চেন। ”ইচ্ছা” এবং ”অনুমতি” দুটো আলাদা জিনিস। তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যদি কোনও কাজ করা হয়, তা হলে সব সময়ই সেটা তোমার অনুমতি না নিয়ে করা হচ্ছে। কিন্তু উল্টোটা সত্যি না-ও হতে পারে। অজ্ঞান কোনও মহিলাকে ধর্ষণ করা হলে এটা বলা যাবে না যে তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। কিন্তু এটা অবশ্যই বলা যাবে, যে অনুমতি না নিয়ে করা হয়েছে। তাই না?’
‘ঠিক।’ ঘাড় নাড়ে বৃন্দা।
‘ম্যারাইটাল রেপ নিয়ে কাগজপত্র নানান লেখালেখি হয়। এটা তো ডেফিনিশনে নেই।’ দীপ প্রশ্ন করেছে।
‘ষোল বছরের কম বয়সি মেয়ের সঙ্গে সহবাস, বিবাহিতা স্ত্রী হলেও, তা ধর্ষণের মধ্যে পড়ে। কিন্তু বাল্যবিবাহের দেশে এই আইন মানা হয় না। থানাপুলিশও হয় না। ষোল বছরের বেশি বয়সি বিবাহিতা মহিলার ক্ষেত্রেই এই শব্দবন্ধ আজকাল বেশি ব্যবহৃত হয়। অজস্র বাংলা সিনেমায় এই দৃশ্য আছে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে। রেপের সংজ্ঞা এবং সহবাসের সম্মতির বয়স—এই দুটোই খুব শিগগির বদলাতে চলেছে। আগামী বছর, মানে ২০১৩ সালেই ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী সহবাসে সম্মতির বয়স হয়ে যাবে আঠেরো। রেপের সংজ্ঞাও দীর্ঘায়িত হবে। এনিওয়ে, আপাতত এইটুকু জেনে রাখো যে, বিবাহের মন্ত্রোচ্চারণের সময় মেয়েরা সহবাসের সম্মতি দিয়ে রাখে, এটা ধরে নেওয়া হয়।’
‘একটা মন্তর বললেই লাইফটাইম মস্তি? জিও কাকা!’ হাসতে হাসতে বলে সুরজ। রেবতী বলেন, ‘সাড়ে তিন মিনিটের মস্তির জন্যে কত টাকা খরচ হয়, তার আইডিয়া আছে? হ্যাভিং সেক্স উইদ ওয়াইফ ইজ দ্য কস্টলিয়েস্ট ইন্টারকোর্স ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। কল গার্লস আর মাচ মাচ চিপার।’
ধর্ষণ নিয়ে আলোচনা জোরকদমে চলছে। এই আলোচনার মধ্যে মাথা নিচু করে, দাঁতে দাঁত চিপে বসে রয়েছে দময়ন্তী। তার মাথার মধ্যে ছেঁড়া ছেঁড়া ছবি তৈরি হচ্ছে, স্বপ্নদৃশ্য চলে আসছে জেগে থাকা অবস্থায়। সেই গলি, সেই মহল্লা, সেই বৃষ্টির রাত, সেই খুপরি খুপরি দোকান, ভাঙা বাড়িতে নানান বয়সি সেই সব মেয়েদের মুখ, সেই সুরজের ছুটে আসা…
এই অ্যাকাডেমিক ডিসকাশনটা দময়ন্তী জাস্ট নিতে পারছে না। তার বুক ধড়ফড় করছে, তার খুলির মধ্যে আগুন ফুটছে, তার রগ দপদপ করছে, তার পেটে মোচড় দিচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে ড্যানিয়েল কিংবা শক্তিরূপার কোলে লুকিয়ে পড়তে। এই ক্লাস থেকে একছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
তা হওয়ার নয়। সংজ্ঞা পেরিয়ে ধর্ষণ এখন আনুষঙ্গিকে গড়িয়েছে। ভিকটিমের বয়স, অ্যাকিউজডের বয়স, পেনিট্রেশন ধর্ষণের জন্য জরুরি কি না, ভিকটিমের মেডিক্যাল একজামিনেশান কীভাবে হবে, কীভাবে হবে অ্যাকিউজডের একজামিনেশান, ইম্পোটেন্ট পুরুষ ধর্ষণ করতে পারে কি না—এইসব নিয়ে আলোচনা চলছে। ছাত্রছাত্রীদের এত গভীর মনোযোগ গত দেড় বছরে এক দিনের জন্যও দেখেনি দময়ন্তী। মাথাব্যথার চোটে চোখে অন্ধকার দেখছে সে। বাধ্য হয়ে ব্যাগ খুলে অ্যালোপাম বার করে মুখে ফেলল। আধঘণ্টার জন্য শান্তি। আশা করা যায়, তার মধ্যে এই ধর্ষণ প্রশিক্ষণ শিবির বন্ধ হবে।
মিনিট কুড়ির মধ্যে ক্লাস শেষ হয়ে গেল। আগামী দিন আনন্যাচরাল সেক্সুয়াল অফেন্স পড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেবতী ক্লাস থেকে বিদায় নিলেন। এসএলটি থেকে সবাই লাফাতে লাফাতে বেরোচ্ছে। আজ শনিবার, তায় একত্রিশে ডিসেম্বর। আর কোনও ক্লাস নেই। বয়েজ হোস্টেলে ইয়ার এন্ড পার্টি আছে। পার্টি আছে গার্লস হোস্টেলেও। কলকাতার বিভিন্ন নাইটক্লাব বা হোস্টেলে বর্ষবরণের পার্টি হয়। সেখানেও অনেকে পালাবে। এখন কলেজে থাকা মানে সময় নষ্ট করা।
চন্দন হোস্টেলের দিকে এগোচ্ছে। বৃন্দা অভির সঙ্গে গপপো করতে করতে দাঁড়ের দিকে যাচ্ছিল। দময়ন্তীকে বলল, ‘বাড়ি যাবি না?’
‘যাব। হোস্টেলে গিয়ে একটু রেস্ট নিই। তারপর।’ পাশ কাটানো উত্তর দিয়ে লেডি আর্চার্স হোস্টেলে ঢোকে দময়ন্তী। বছরের শেষ দুপুরে হোস্টেল ফাঁকা। বারান্দা পেরিয়ে শেষপ্রান্তে তেরো নম্বর ঘরে ঢোকে সে। এক ঘণ্টা রেস্ট নেওয়া যাক। তিনটের সময় বিলু ফোন করবে।
বিলুর ক্রমাগত চাপের কাছে অবশেষে দময়ন্তী নতি স্বীকার করেছে। প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার সে নতুনগ্রাম যাচ্ছে। রাতটা গোপাল নস্করের বাড়ি কাটিয়ে সারা দিন পেশেন্ট দেখে রবিবার বিকেলের মধ্যে কলকাতা চলে আসে। ড্যানিয়েল বা শক্তিরূপা ঘটনাটা জানেন। তাঁরা আপত্তি করেননি আবার আগ্রহও দেখাননি। ড্যানিয়েল শুধু বলেছেন, ‘আমি একদিন অনাবিল লাহিড়ী নামের যুবকটির সঙ্গে আলাপ করতে চাই।’
‘কেন?’ জানতে চেয়েছে দময়ন্তী।
‘আমার নাকে যে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে, তাকে একবার দেখব না?’ ড্যানিয়েলের কণ্ঠে বিস্ময়।
‘দেখাদেখির কিছু নেই। আমার থেকে সিনিয়র একটা দাদা। পড়াশুনোর পাশাপাশি গরিবদের নিয়ে ভাবে। তাকে জাস্ট হেল্প করছি। এর মধ্যে অন্য কিছু খুঁজো না।’
‘অন্য কিছু মানে কী দিঠি?’ নিষ্পাপ প্রশ্ন ড্যানিয়েলের। ‘একটা দাদা পড়াশুনোর পাশাপাশি গরিবদের নিয়ে ভাবে। তার সঙ্গে আলাপ করতে পারি না?’
‘ধ্যাত! তুমি না!’ জিভ কেটে স্টুডিও থেকে পালিয়েছিল দময়ন্তী।
গতকাল দাঁড়ে বসে চা খেতে খেতে বিলু বলেছে, ‘শনিবার বিকেলের ট্রেনে ভয়ঙ্কর ভিড় হয়। সারা সপ্তাহ যারা কলকাতা বা হাওড়ার মেসে থেকে অফিস করে, তারা শনিবার ওই ট্রেনে বাড়ি যায়। ডেলি প্যাসেঞ্জারের ভিড় তো থাকেই। একটাই সুবিধে, আমরা যাব হাওড়া-আদ্রা শিরোমণি প্যাসেঞ্জার ট্রেনে। ট্রেনটা গ্যালপিং। হাওড়া থেকে মেচেদা মোট একুশটা স্টেশান। এই ট্রেনটা তার মধ্যে সাঁত্রাগাছি, উলুবেড়িয়া আর বাগনান স্টেশানে দাঁড়ায়। তাই অনেক যাত্রী ওঠে না। একটু ফাঁকা থাকবে। হাওড়া থেকে পাঁচটা পয়তাল্লিশ মিনিটে ট্রেন ছাড়বে।’
‘ঠিক হ্যায়। আমি সাড়ে পাঁচটার মধ্যে হাওড়া স্টেশান পৌঁছে যাব।’ বলেছিল দময়ন্তী।
‘উনিশ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন ছাড়ে। আমি আর সব্যসাচীদা আগে পৌঁছে তোর জন্য সিট রাখব, না তুই লেডিজ কামরায় উঠবি?’
‘জায়গা রাখতে হবে না।’ বলেছিল দময়ন্তী।
ঘুম পাচ্ছে। রুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ল দময়ন্তী। ক্রমাগত অ্যালোপাম খাওয়ার এফেক্ট। মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রাখল পৌনে পাঁচটায়। এখান থেকে হাওড়া স্টেশনে যেতে পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগবে। গোলমহলে বলা আছে, সে আজ নতুনগ্রাম যাবে।
গ্যালপিং ট্রেনের লেডিজ কামরা ফাঁকা। বিলু আর সব্যসাচী জেনারেল কামরায় সিট রাখলেও সেখানে না বসে মেয়েদের কামরায় আরামে বসে একঘণ্টার মধ্যে মেচেদা পৌঁছে গেল দময়ন্তী। সেখান থেকে বাসে চেপে নতুনগ্রাম আরও আধঘণ্টা। বাঁজাপলাশ গ্রামে গোপাল নস্করের বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে পৌনে আটটা। নতুনগ্রাম এবং বাঁজাপলাশ গ্রামে এখন লোডশেডিং। চারিদিকে কুপকুপে অন্ধকার। নেহাত নতুনগ্রামের বাস স্ট্যান্ডে গোপাল টর্চ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তা না হলে বাড়ি চিনতে অসুবিধা হতো।
এই বাড়ির দোতলার একটা ঘর আগে থেকেই দময়ন্তীর জন্য নির্দিষ্ট। অ্যাটাচড বাথরুম আছে। বাথরুমে ঢুকে স্নান করে, পোশাক বদলে নীচে নামল দময়ন্তী। বিলু আর সব্যসাচী কোথায় গেল দেখা যাক। পুরো রাস্তা সে লেডিজ কামরায় ঘুমোতে ঘুমোতে এসেছে। বাসেও ঢুলছিল। ওদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়নি। স্নান করার পরে ঘুমঘুম ভাব কেটেছে।
বাগানে কাঠকুটো আর শুকনো পাতা জড়ো করে বন-ফায়ারের আয়োজন করা হচ্ছে। একগাদা চেয়ার পাতা। গায়ে চাদর জড়িয়ে চেয়ারে বসল দময়ন্তী। আজকে ভালো ঠান্ডা আছে। তাপমাত্রা দশের নীচে হবে।
বিলু কোথায় ছিল কে জানে! হঠাৎ তার পাশে এসে বসল। ‘আজ এখানে বর্ষবরণ পালন হবে। কেউ নাচবে, কেউ গাইবে, কেউ পারফর্ম করবে। তুই কী করবি?’
‘আমি কিছু পারি না। হাততালি দেব। এখানে অ্যালকোহলের ব্যবস্থা নেই?’
‘আছে। দিশি হাঁড়িয়া। তোর সহ্য হবে না।’
‘সবার সহ্য হলে আমার হবে না কেন? এখানকার লোকেদের লিভার কি সোনা দিয়ে বাঁধানো?’
‘কাল সকালে হ্যাংওভার হলে কাজ করতে পারবি না।’
‘দিব্যি পারব। তোমার ওই গোপাল নস্করকে বলো, আমাকেও যেন দেয়।’ দময়ন্তীর কথার মধ্যে গোপাল তার পাশে এসে বসলেন। বললেন, ‘হাঁড়িয়া এখানে বাড়ির বউ-ঝিরা খায়। তুমি খেতে পারো। কোনও অসুবিধে হবে না।’
দময়ন্তী খেয়াল করল একগাদা কেলোকুলো বামন লোক, মোটাসোটা বামন বউ-ঝি, আর ক্যাঁওম্যাও করা বামন বাচ্চা এসে শতরঞ্চিতে বসেছে। সবার গায়ে কম্বল জড়ানো। লোকেদের হাতে হাতে গাঁজার কল্কে ঘুরছে। বউগুলো ঘোমটার আড়ালে ফুকফুক করে বিড়ি টানছে। বাচ্চাগুলো ছেঁড়া মাফলার আর ময়লা দোলাই জড়িয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে।
এরা বাঁজাপলাশ গ্রামের বাসিন্দা। এরা জোয়াকিম। দময়ন্তীর পেশেন্ট। এদেরকে বাস্তুচ্যুত করে তৈরি হবে ওয়েলনেস সেন্টার। গোপাল তার হাতে এক গেলাস হাঁড়িয়া তুলে দিয়েছেন। ছোট্ট চুমুক দিয়ে দময়ন্তী ভাবে, ওয়েলনেস কাকে বলে? ভালো থাকা মানে কী? হাজার একর জায়গা জুড়ে, সমুদ্রের ধারে তৈরি হবে অত্যাধুনিক ডি-টক্সিফিকেশান সেন্টার, ইস্থেটিক সার্জারি ক্লিনিক, এইট্টিন হোল গলফ কোর্স, স্পা, মাসাজ পার্লার। সুইডিস মাসাজ, কেরালিয়ান আয়ুর্বেদিক মাসাজ, ডিপ টিসু মাসাজ, থাই মাসাজ, সিয়াৎ সু। এখানে থাকবে ওল্ড-এজ হোম, মেডিক্যাল ট্যুরিজম, হসপাইস কেয়ার। শেষ কথাটির অর্থ, যেসব রোগী মৃত্যু পথযাত্রী, তাদের অন্তিম দিনগুলিকে যতটা সম্ভব বেদনাহীন ও স্বচ্ছন্দ রাখা। নিউ এজ ডাক্তারির আড়ালে এখানে সেক্স ট্যুরিজম শুরু হবে বলে দাবি করছে মিডিয়ার একটা অংশ।
মেডিক্যাল ট্যুরিজম যে ভারতবর্ষের একটা বড় বিজনেস মডেল, বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে দময়ন্তী জানে। ইওরোপ, আমেরিকায় চিকিৎসার খরচ সাংঘাতিক। তার থেকেও বড় কথা, মেডিক্যাল ইনসিয়োরেন্স করা না থাকলে ওখানে ডাক্তাররা পেশেন্ট দেখে না। গত এক দশক ধরে উন্নত দেশগুলির অনেক মানুষ দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুতে এসে সার্জারি করিয়ে যাচ্ছে। দেশ ভ্রমণ হল, কম পয়সায় সুচিকিৎসাও হল। এতদিন পশ্চিমবঙ্গ এই মার্কেট ট্যাপ করেনি। এখন করছে। ভালো কথা।
মেডিক্যাল ট্যুরিজমের মতো সেক্স ট্যুরিজম নিয়েও দময়ন্তীর শুচিবায়ু নেই। হংকং বা ব্যাংকক-এ আলাদা সেক্স ডিসট্রিক্ট আছে। সেখানে ছেলে, মেয়ে, সমকামী, বিষমকামী, লিঙ্গান্তরকামী, উভলিঙ্গ, টয়বয়, ফ্যাগহ্যাগ, বিডিএসএম চর্চাকারী—সব রকমের প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। নিজে অংশগ্রহণ করতে পারো, চেয়ারে বসে অন্যদের পারফরম্যান্স দেখতে পারো। যার যেটা মর্জি। খোলা বাজারে যৌনতাও পণ্য। ফেলো কড়ি মাখো মুড়ি।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের এই ওয়েলনেস হাব প্রজেক্টকে দময়ন্তী নিরানব্বই শতাংশ সমর্থন করে। এক শতাংশ বিরোধের কারণ এদের স্থান নির্বাচন। নতুনগ্রাম-মেচেদা জাতীয় সড়কের দক্ষিণদিকে আর একটু এগিয়ে জমি অধিগ্রহণ করলে কোনও মানুষকে স্থানচ্যুত হতে হতো না। ওখানে ধুধু করছে বালিয়াড়ি। সমুদ্র, বেলাভূমি, নদী, মোহনা, আকাশ, ফাঁকা জমি—সব রেডি ছিল। ওখানে কেউ থাকে না। সমুদ্রের ধারে ওয়েলনেস সেন্টার চলত রমরমিয়ে। কিন্তু এদের এত লোভ, এরা জেলে পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করবে। যারা সার্ভে করেছিল, তারা ঘুষ খায় না ঘোড়ার ঘাস—এই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে দময়ন্তী।
চিন্তায় ছেদ ঘটল গান শুনে। পুরুষমানুষগুলো ধামসা আর মাদল বাজিয়ে একটা গান ধরেছে। ভাষা বুঝতে পারছে না দময়ন্তী। এই এলাকায় বাংলার উপভাষা আর ওড়িয়া ভাষার মিশ্রণ কাজ করে। অল্পবিস্তর উর্দুও থাকে। একই পংক্তি বার বার পাওয়া হচ্ছে বলে দময়ন্তী কিছুক্ষণ বাদে বুঝতে পারল, বলা হচ্ছে,
‘সাবিসাবি, তু তো মোরঅ নালি পানঅ বিবি।
চিড়িয়া, ইস্কা, রুহি লয় গো নালি পানঅ বিবি।
সাবি সাবি…’
‘কুইন অব হার্টস! চিড়েতন, ইস্কাপন বা রুহিতন নয়। আমার সাবি কুইন অব হার্টস।’ কুলকুল করে হাসতে হাসতে দময়ন্তী দেখল, একটি কমবয়সি বউ নাচতে আরম্ভ করেছে। মাজা মাজা রং, পাথরে কোঁদা শরীর, গর্জন তেলে পালিশ করা মুখমণ্ডলী। গাছকোমর করে শাড়ি পরা বউটি একে একে অন্য বউদেরও নাচাতে আরম্ভ করেছে। পাশ থেকে বিলু বলল, ‘যে লোকটা ধামসা বাজাচ্ছে, ওর নাম মাইকেল ধীবর। বাঁজাপলাশ গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান। আর এই মেয়েটা ওর বউ।’
‘বউয়ের নাম কী?’ হাঁড়িয়ার গ্লাস শেষ করে জানতে চায় দময়ন্তী।
‘জুলি ধীবর। ও আমাদের কমিউনে রান্না করে।’
‘উচ্ছেদ হওয়া নিয়ে ওদের কী বক্তব্য?’
‘সবারই খুব আপত্তি।’
দময়ন্তী গোবিন্দ নস্করের কাছ থেকে আর এক গ্লাস হাড়িয়া চেয়ে নেয়। বিলু বলে, ‘তুই বাড়াবাড়ি করছিস। কাল সকালে উঠতে পারবি না।’
হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দময়ন্তী দেখে, রাত পৌনে এগারোটা বাজে। গল্পে, গানে, নাচে, আড্ডায় কখন যে এতটা সময় পেরিয়ে গেছে, খেয়াল করেনি। বিলুকে সে বলে, ‘সব্যসাচী কোথায়?’
‘ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন!’ মুচকি হেসে গম্ভীর হয়ে গেল বিলু।
‘উত্তরদাতারা যে সব প্রশ্নকে ”ইন্টারেস্টিং” বলে থাকে, সেই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না।’ হাই তোলে দময়ন্তী।
‘বাঃ! ভালো বললি।’
‘উরিব্বাস! আর একটা নন-স্পেসিফিক উত্তর। তাহলে তো জানতেই হচ্ছে সব্যদা কোথায়।’ বিলুর কলার খিমচে ধরেছে দময়ন্তী।
‘তুই আমার কথা শোন…’ কলার ছাড়াতে ছাড়াতে বিলু থামছে, ‘এর আগে একদিন আমি আর তুই একসঙ্গে মাতাল হয়ে গিয়েছিলাম। ফ্রেশার্স ওয়েলকামের রাতে। সেদিন একটা কেলোর কিত্তি হয়েছিল। সেকেন্ড এমবিতে উঠে নতুন কোনও কেলো বাঁধাস না। প্লিজ।’
বিলুকে ছেড়ে দিয়ে দময়ন্তী চেয়ার থেকে ওঠে। মাইকেল ধীবরের ধামসার বোলে এখন দ্রুতি। জুলি এবং অন্য বউরা হাঁড়িয়া খেয়ে টলমল করে নাচছে। তাদের চোখের ইশারায়, দেহের ভাষায় লাস্য। দময়ন্তীকে দেখে জুলি হাত ধরে টেনে নাচিয়েদের দঙ্গলে ঢুকিয়ে নেয়। দময়ন্তী হাত-পা ছুঁড়ে প্রতিবাদ করে। ‘আমি নাচতে পারি না। প্লিজ ছেড়ে দাও!’
জুলি কোনও কথা শুনছে না। নিজের হাতে দময়ন্তীর হাত জড়িয়ে রেখে নেচে যাচ্ছে। দময়ন্তীর মনে হয়, এই অনুষ্ঠানে নাচতে জানা বা না-জানাটা ইস্যু নয়। বছরকার শেষ দিনে হাত-পা ছুঁড়ে আনন্দ করাটাই প্রধান। মনে মনে সে বলে, ‘এনিবডি ক্যান ডান্স।’ ব্যস! এবার আর নাচতে কোনও অসুবিধে নেই।
মিনিট দশেক নেচে হাঁপিয়ে গেল দময়ন্তী। চেয়ারে বসে বিলুকে বলল, ‘এক গ্লাস জল খাওয়াবি?’
‘বারোটা বাজতে আর দশ মিনিট বাকি। এই সময়ে জল খাবি? আর এক গ্লাস হাঁড়িয়া খা বরং।’ দময়ন্তীর হাতে গেলাস তুলে দেয় বিলু।
‘তিন গ্লাস হাঁড়িয়া? মরে যদি না-ও যাই, তাহলে আগামিকাল হ্যাংওভারের চোটে বিছানা ছাড়তে পারব না।’ চুমুক দিয়ে বলে দময়ন্তী। কিছুক্ষণ নাচ দেখে বিলুকে বলে, ‘আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে।’
‘কেন?’
‘জনমোর্চা সরকারের হার্টলেসনেস দেখে। জোয়াকিমরা পৃথিবীর বিলীয়মান সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়ে। ওলন্দাজ নাবিক এবং বাংলার নারীদের ক্রস ব্রিডিং-এর ফলে এই সম্প্রদায়ের জন্ম। এদের নিজস্ব ভাষা আছে। আছে নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব গান, ছবি, কবিতা, বিবাহরীতি। সরকার এদের পুনর্বাসন না করে উৎখাত করছে কেন? এদের তরফে কোনও প্রতিবাদ নেই কেন?’
‘খুব রাগ হচ্ছে?’
‘খুব। হাড়িয়া খেয়ে নেশা করে বলছি না। সত্যিই আমি খচে আছি।’
‘তাহলে,’ হাই তুলে বলে বিলু, ‘কী করা উচিত বলে তোর মনে হয়?’
‘রেজিস্ট করা উচিত। অবশ্যই। গোলমহল থেকে আমাকে যদি কোনও এলিতেলি তাড়াতে আসে, তাহলে আমি তাকে বাঁশপেটা করব।’
‘এ এলিতেলি নয়। এর নাম রাষ্ট্র। এদের বিরুদ্ধে মুখ খোলা মানে দেশদ্রোহিতা। ধরা পড়লে সাত দিনের ফাঁসি আর তিন মাসের জেল।’
‘ইয়ার্কি মেরো না বিলুদা। বোকার মতো ডাক্তারি করে কী লাভ? দু’দিন বাদে এই গ্রামে আর কোনও রুগিই তো থাকবে না। কেন না গ্রামটাই থাকবে না। তোমার পিএমএফ তখন কাদের জন্য মেডিক্যাল ক্যাম্প চালাবে?’
বিলু এতক্ষণ মন দিয়ে দময়ন্তীকে দেখছিল। হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আয়।’
‘কোথায়?’ টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়েছে দময়ন্তী। বিলু তার হাত ধরে নাচগানের মজলিশ থেকে টেনে বার করে। গোপাল নস্করের বাড়ির কম্পাউন্ড ছেড়ে বেরিয়ে মাঠের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে থাকে। মাঠের পরে ঝোপঝাড়। সেসব পেরিয়ে পুরোদস্তুর জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
‘কোথায় যাচ্ছ?’ ফিশফিশ করে বলে দময়ন্তী। ‘এ তো জঙ্গল!’
‘রাত বলে জঙ্গল মনে হচ্ছে। এগুলো ক্যাশুরিনা গাছ। আমরা সি বিচের দিকে যাচ্ছি।’
ভিজে হাওয়ার ঝাপটায় দময়ন্তী বুঝতে পারল, বিলু ঠিকই বলেছে। শোঁশোঁ করে হাওয়া আসছে সমুদ্র থেকে। পায়ের নীচে শুরু হয়ে গেছে ভিজে বালি। হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে। শুনতেও অসুবিধে হচ্ছে। সামনে দেখা যাচ্ছে ফসফরাসের মালায় সজ্জিত তরঙ্গমালা। আকাশকে দেখে মনে হচ্ছে সলমা চুমকি জড়ানো ওড়না।
ধপ করে একটা শব্দ হল। কী রে বাবা! আঁতকে উঠে দময়ন্তী বিলুর হাত চেপে ধরে বলে, ‘কী হল?’ উত্তর না দিয়ে বিলু একটা বালিয়াড়ির ওপরে চড়ে।
আবার সেই শব্দ। ধপ! তারপর শব্দের চরিত্র বদলাল? আওয়াজ হল, ফট! হাওয়ার কারণে শব্দ কি তার চরিত্র বদলাল? নাকি অন্য কোনও আওয়াজ? দময়ন্তীর মাথা কাজ করছে না।
বালিয়াড়ি থেকে নামতে গিয়ে দময়ন্তী অবাক। অন্ধকারের মধ্যে হ্যাজাক জ্বেলে অন্তত একশোজন জোয়াকিম বসে। তাদের মধ্যে একমাত্র লম্বা লোক সব্যসাচী। তাই তাকে দূর থেকেও চেনা যাচ্ছে। কিন্তু এরা এখানে কী করছে? একাধিক হ্যাজাক একটা বড় আলোকবৃত্ত তৈরি করেছে। সেই বৃত্তের মধ্যে যা ঘটছে, দেখতে থাকে দময়ন্তী।
খড় দিয়ে তৈরি একজন মানুষ। একে বাংলায় কুশপুতুল বলা হয়। সেটি কাকতাড়ুয়ার কায়দায় লাঠি দিয়ে বালিতে পোঁতা। পুতুলের বুকে, এত দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে, ফায়ার আর্মসের টার্গেট প্র্যাকটিসের বুলস আই লাগানো। টার্গেটের পঞ্চাশ মিটার দূরে বালির বস্তা দিয়ে তৈরি হাঁটুর সমান ব্যারিকেড। ব্যারিকেডের পিছনে বসে সব্যসাচী যে আগ্নেয়াস্ত্রটি ফায়ার করল, সেটি দময়ন্তী চেনে। এ কে ফর্টি সেভেন। ‘অ্যাটমোভ্যাট কালাশানিকভা সাতচল্লিশ’। বা ‘কালাশনিকভ অটোমেটিক রাইফেল’। ফায়ারিং-এর শব্দ এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। আগের মতো ‘ধপ’ বা ‘ফট’ নয়। নিখুঁত ধাতব শব্দ। বুলস আইয়ের ভিতরে লাগল গুলি।
এবার একজন জোয়াকিম অস্ত্র তুলে নিল। বামন মানুষটি কাঁধে অস্ত্র তুলে, ওজনের ভারে টলমল করে উঠল। তারপর বালির বস্তার ওপরে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে টার্গেট ফিক্স করল। এক ঝলক আগুন, বাতাস কাটার হিসস শব্দ, ফায়ারিং-এর আওয়াজ। কুশপুতুল কেঁপে উঠল। আবার বুলস আই।
‘সব্যসাচী কী করছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর পেলি?’ দময়ন্তীর কানে ফিসফিস করে বলে বিলু। দময়ন্তীর মাথার মধ্যে তিনপাত্র কোহল ঢেউ তুলেছে। সে বিলুর হাত ছেড়ে টলোমলো পায়ে বালিয়াড়ি বেয়ে নামে। তাকে দেখে জোয়াকিমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সব্যসাচী আধবসা অবস্থায় স্থির।
‘হাই!’ সব্যসাচীর পাশে বসে হাসে দময়ন্তী।
‘একে এখানে নিয়ে এলি?’ ভুরু কুঁচকে সব্যসাচী বিলুর দিকে তাকিয়ে। বিলু কিন্তু-কিন্তু মুখে বলল, ‘খুব জোরাজুরি করল। তাই নিয়ে এলাম।’ দময়ন্তী এর মধ্যে জোয়াকিমের হাত থেকে একে সাতচল্লিশ কেড়ে নিয়েছে।
দময়ন্তীর হাত থেকে অস্ত্র কাড়তে যায় সব্যসাচী। বলে, ‘মদ খেয়ে অস্ত্র নিয়ে ছেলেমানুষি ঠিক না। সব্যসাচীকে ক্যাজুয়ালি ধাক্কা মেরে সরিয়ে নিশানা ঠিক করে ট্রিগার টেপে দময়ন্তী। আবার এক ঝলক আগুন, আবার বাতাস কাটার শিস, আবার বিস্ফোরণ। বিলু আর সব্যসাচী অবাক হয়ে দেখল, নিখুঁত বুলস আই করেছে দময়ন্তী। জোয়াকিমরা হর্ষধ্বনি দিচ্ছে।
‘ফায়ার আর্মস ট্রেনিং আমার স্কুলের কারিকুলামে ছিল।’ শ্রাগ করল দময়ন্তী। আকাশে আতসবাজির রোশনাই দেখে বলল, ”জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক!’ নতুন বছর এসে গেল।’
ঋষিতা নামে কোনও মেয়ের সঙ্গে সত্যিই গোপন অ্যাফেয়ার আছে মনোজের? নাকি সবটাই শূচিবায়ুগ্রস্থ অরুণার কল্পনা? অভি আর বৃন্দার প্রেম ভেঙে গেল কেন?
স্যামি ব্যানার্জি মদ্যপ অবস্থায় অপারেশান করতে গিয়ে পেশেন্ট মেরে ফেললেন। মন্দিরা ‘বিধবাপুকুর’ সিনেমায় অভিনয় করে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেলেন। বৃন্দা আর অভির প্রেম ভেঙে গেল কার জন্যে?
বাঁজাপলাশ গ্রামে হেলথ হাবের জন্যে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে পবন আর গোপাল নস্করের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। গোপাল চাইছেন সশস্ত্র বিরোধীতা। পবন চাইছেন মানুষকে বোঝাতে। চন্দন পড়েছে দোটানায়। কলেজ নির্বাচনের নমিনেশান পেপার জমা দেওয়ার দিন কলেজে ঘটে গেল ভয়ানক রাজনৈতিক হত্যা। কে খুন হলেন? জনমোর্চা সরকার এবং কেন্দ্রীয় যৌথ বাহিনী মিলে বাঁজাপলাশ গ্রামে দশজন আন্দোলনকারীকে হত্যা করল। তাদের মধ্যে একজন ডাক্তারি ছাত্র। কে সে?
দময়ন্তীকে খুঁজছে পুলিশ। শক্তিরূপা সম্পাদিত সংবাদ সাপ্তাহিকে ‘উইকেন্ড’-এ অশান্তি শুরু হয়েছে। ড্যানিয়েল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন কেন? কী হয়েছে তাঁর?
জনমোর্চা সরকার বিদায় নিয়েছে। এখন ক্ষমতায় নবযুগ সরকার। বন্ধুত্ব আর শত্রুতার হিসেব পালটে যাচ্ছে দ্রুত। এই দোলাচলের মধ্যে অভি আর বৃন্দার প্রেম কি জোড়া লাগবে? দময়ন্তীর প্রতি বিলুর মুগ্ধতা কি আদৌ কোনও পরিণতি পাবে? জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া যার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, সেই চন্দন কি প্রেমে সফল হল?
.
আসছে পরবর্তী সিক্যুয়েল।