বৃন্দা
শান্ত, নিস্তরঙ্গ গঙ্গা কুয়াশার চাদরে ঢাকা। এখন ভাঁটা। ছাব্বিশে ডিসেম্বরের ভোরবেলায় দুটো বালি তোলার নৌকা মাঝগঙ্গায় নোঙ্গর ফেলছে। প্রতি নৌকায় জনা চল্লিশেক মানুষ। এই শীতেও তারা নাগাড়ে গঙ্গার চর থেকে বালি তুলে নৌকোর খোল বোঝাই করছে। গোটা পাঁচেক স্টিমারও দাঁড়িয়ে। বৃন্দা মোবাইলে কয়েকটা ছবি তোলে। ভোরের আলোয় চমৎকার ছবি এল।
প্রিনসেপ ঘাটে বৃন্দা অতীতে একবারই এসেছে। স্যামি আর মন্দিরার সঙ্গে। ১৮৪১ সালে তৈরি এই স্থাপত্য অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান স্কলার এবং টাঁকশালের অ্যাসেয়ার জেমস প্রিনসেপের নামে উৎসর্গীকৃত। বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে এসে জায়গাটা এত ভালো লেগেছিল যে বৃন্দা ঠিক করে রেখেছিল সুযোগ পেলে একবার ঘুরে যাবে।
আজ সেই দিন। অ্যানাটমির সাপ্লি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর আগের দিন দময়ন্তী এত টেনসড ছিল যে শান্তিধামে ফোন করে মন্দিরার কাছে অনুমতি নিয়েছে যাতে বৃন্দাকে অন্তত এক রাতের জন্য লেডি আর্চার্স হোস্টেলে ছাড়া হয়।
মন্দিরা এখন তুমুল ব্যস্ত। বিধবাপুকুরের ওয়ার্কশপ চলছে শান্তিধামে। একগাদা কমবয়সি থিয়েটার আর্টিস্টদের সঙ্গে। ওয়ার্কশপ কনডাক্ট করছে কলকাতার নামজাদা নাট্যপরিচালক সোহাগিনী দে। জমিদারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন মুম্বইয়ের বিশাল কপুর। বিশালের দ্বিতীয় পরিচয়, তিনি অভিনেত্রী চন্দ্রিমার স্বামী। মুম্বইতে বিশালের বউ ও এক ছেলে আছে। ছেলের নাম ভিকি। বিশালের বউ চন্দ্রিমাকে দু’চক্ষে দেখতে না পারলেও ভিকির সঙ্গে চন্দ্রিমার সম্পর্ক ভালো। ভিকি কলকাতায় এলে চন্দ্রিমার লেক গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে ওঠে। ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানে যে ফ্ল্যাটটা বিশালের টাকায় কেনা।
বিশাল বাংলার ‘ব’ জানেন না। মদ খেয়ে এত মোটা হয়ে গেছেন যে এখন মুম্বইতে হিরোর বাবার রোলও পান না। তাই টলিউডে ছিপ ফেলেছেন। ফ্লপ বলিউড অভিনেতাদের আপন করে নেওয়ার জন্য চিৎপুরের যাত্রাপাড়া সব সময়ে রেডি।
বিশালের বাংলা বলা নিয়ে ওয়ার্কশপে রোজ খোরাক হচ্ছে। বিশালের মন্দিরাকে বলার কথা, ‘বেদানা, আমি খাব।’ তিনি বলেছেন, ‘বেদানা, হামি খাব!’ তাই নিয়ে প্রবল হাসাহাসি! ওয়ার্কশপের পাশাপাশি চলছে কস্টিউম আর প্রপ নির্বাচন। পুরনো দিনের গাড়ি, গাড়ির নাম্বার প্লেট, সিগারেট, দেশলাই, পাঁজি, বাসন, আসবাবপত্র —এই সব জোগাড় করা। মনোতোষের নেতৃত্বে এই সব রিসার্চ ওয়ার্ক শান্তিধামেই হচ্ছে। শান্তিধাম এখন প্রি-প্রোডাকশানের অফিস। মন্দিরার ছোটাছুটির অন্ত নেই। মায়াকমের তরফে হৈমবতী মাঝে মাঝে আসেন। ওয়ার্কশপে এসে ঘণ্টাচারেক চুপচাপ বসে থাকেন, একটা দুটো কমেন্ট করেন, চলে যান। মনোতোষ এক দিক দিয়ে নিশ্চিন্ত। তিনি যে রকম ভাবে ছবিটা ভেবেছেন, সেই ভাবেই হবে। আইটেম নাম্বার বা বেড সিন ঢোকানোর চাপ নেই। হৈমবতী বলেছেন ‘ডিরেক্টর্স কাট’ দেখার পরে যা বলার বলবেন।
মন্দিরা বেজায় ব্যস্ত। বৃন্দার হোস্টেলে থাকা নিয়ে দময়ন্তী অনুমতি চাইতেই ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছেন। রাত্তিরে শোবার সময় স্যামি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হঠাৎ হোস্টেলে থাকবে কেন? অন্য কোনও চক্কর নেই তো?’
আয়নার সামনে বসে মুখে ক্লিনিং-টোনিং-ময়েশ্চারিং-এর রুটিন ফলো করতে করতে মন্দিরা বলেছিলেন, ‘ওর রুমমেটের কালকে সাপ্লির রেজাল্ট বেরোবে। সে একা হোস্টেলে থাকতে পারবে না বলে বৃন্দাকে ডেকেছে। এর মধ্যে চক্কর থাকবে কেন?’
স্যামি অলরেডি কোহলঘুমে আচ্ছন্ন। মন্দিরার উত্তর শোনেননি।
সেকেন্ড এমবিবিএস-এর থিয়োরি ক্লাস শেষ করে বৃন্দা বাড়ি চলে গিয়েছিল। রাত ন’টার সময় সুলতান তাকে লেডি আর্চার্স হোস্টেলে ছেড়ে দিয়ে গেল। তেরো নম্বর ঘরে ঢুকে বৃন্দা দেখল দময়ন্তী নিজের খাটে বসে কানে তার গুঁজে গান শুনছে। চোখ বন্ধ। দময়ন্তীর পাশে বসে একটা তার খুলে নিজের কানে গুঁজে বৃন্দা অবাক। গম্ভীর এক পুরুষ কণ্ঠ বলছে, ‘শ্বাস নিন। নাক দিয়ে টেনে নিন নির্মল বাতাস। অনুভব করুন যে আপনার ফুসফুস বিশুদ্ধ অক্সিজেন ভরে যাচ্ছে…’
‘কী সব ভুলভাল শুনছিস?’ হাসতে হাসতে বলে বৃন্দা।
‘ডিপ ব্রিদিং টেকনিক। রিল্যাক্সেশান এক্সারসাইজ। স্ট্রেস কমায়।’ উত্তর দেয় দময়ন্তী। বৃন্দা কান থেকে তার খুলে নিয়ে বলে, ‘ন্যাকামো রাখ। খেতে চল। কাল আমি ভোরবেলা বেরোব।’
‘আমায় একলা ফেলে রেখে কোথায় যাবি?’
‘অভির সঙ্গে কাল ভোরবেলা প্রিনসেপ ঘাটে বেড়াতে যাব। টেনশানের চোটে বেচারার মুখচোখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে। আর তোকে একলা ফেলে রাখার কী আছে? তুই তো এক্ষুনি টপাং করে মুখে একটা অ্যালোপাম ফেলে সারারাত ভোঁসভোঁস করে ঘুমোবি।’
‘তা হলে তাই করা যাক।’ খেতে যাওয়ার আগে জিভের তলায় ওষুধ রেখেছিল দময়ন্তী। বৃন্দার সঙ্গে রাতে অভির দেখা হয়নি। ফোনে কথা হয়েছিল, ছ’টার সময় কলেজের সামনে বাসস্ট্যান্ডে দেখা হবে।
দু’জনেই ঠিক সময়ে এসেছিল। অভি পরেছে ফেডেড ব্লু জিনস, সাদা ভি-নেক সোয়েটার, পায়ে নীল-সাদা স্নিকার। গলায় লাল মাফলার জড়ানো। ভোরবেলা বেরোনোর আগে দাড়ি কামিয়েছে, স্নান করেছে, ভালো আফটার শেভ লাগিয়েছে। একটানা পড়াশুনা করে খানিকটা রোগা হয়েছে। যার ফলে ম্যাচিওরড লাগছে। একবছরের আগের মফসসলি তরুণ এখন তরতাজা যুবক।
বৃন্দা পরে আছে সাদা ডেনিম আর গোলাপি পুলওভার। মাথায় লাল টুপি, পায়ে লাল স্নিকার। ভোরবেলা ট্যাক্সি পাওয়া সোজা। প্রিনসেপ ঘাটের নাম শুনে ড্রাইভার বলল, ‘সে তো অনেক দূর মা জননী। দশটা টাকা একট্রা দেবেন।’
‘না।’ গম্ভীর গলায় বলে অভি।
‘ভাইটি, রাগ করে না, সকাল বেলা মন প্রশান্ত রাখতে হয়। পাঁচটা টাকা এক্সট্রা দিও।’
‘আমি ”মা জননী” আর ও ”ভাইটি”? আমার বেলা ”দেবেন” আর ওর বেলায় ”দিও”? যাব না আপনার ট্যাক্সিতে।’ গাঁকগাঁকিয়ে চ্যাঁচায় বৃন্দা।
ড্রাইভার আঁতকে উঠে বলে, ‘সক্কালবেলা সাক্ষাৎ মায়ের দর্শন পেলুম! আমার আজ আর কিচ্ছু লাগবে না। আপনারা বসুন। আমি পৌঁছে দিচ্ছি।’
প্রিনসেপ ঘাটে পৌঁছে ড্রাইভারকে গুনে গুনে টাকা দিয়েছে বৃন্দা। মাঠ পেরিয়ে, সৌধ পেরিয়ে দু’জনে বসেছে গঙ্গার ধারের বেঞ্চিতে। সারা রাস্তা বৃন্দা অভির সঙ্গে কথা বলেনি। এখন গঙ্গার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে বলল, ‘আজ থেকে ক্লাস শুরু করবি তো?’
‘আগে রেজাল্ট দেখি।’ নির্লিপ্ত গলায় জবাব দেয় অভি।
‘প্যাথোলজির এইচওডি রিনা দত্ত আমাদের হোস্টেলের সুপার। খুব দিলখোলা মহিলা। রিপুদা আর চন্দনের সঙ্গে অলরেডি খুব র্যাপা।’
‘শুনেছি উনি ছাত্রনেতাদের সঙ্গে ভালো রিলেশান রাখেন। সুরজ, সঞ্জয়, সব্যসাচী, দাদা—এদের সঙ্গেও খুব দহরম মহরম।’
‘ওই দহরম মহরমের জোরেই চন্দন আর রিপুদা বেঁচে গেল। না হলে সঞ্জয়ের ভিডিওটা নিয়ে বিশাল কেলো হতো।’
সঞ্জয় ভিডিও ক্লিপটা নিয়ে কোনও বাড়াবাড়ি করেনি। ইউটিউব বা সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আপলোড করা, নিউজ চ্যানেলকে মেল করা, বন্ধুদের এমএমএস করা—কিস্যু করেনি। শুধু সন্ধে থেকে সারা রাত ধরে হোস্টেলের ঘরে ঘরে গিয়ে ভিডিওটা দেখিয়েছে। দশ মিনিটের ভিডিও। সব রুমে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রথমদিকে প্রতি রুমে চারজন করে ছেলে দেখেছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রুমে রুমে ছেলের সংখ্যা বেড়েছে। চন্দন এবং রিপু যখন হাসপাতালে, তখন অর্ধেক হোস্টেল ভিডিও দেখে ফেলেছে। সঞ্জয় বুদ্ধিমানের মতো দুটো কাজ করেছে। ছেলেদের অনুরোধ সত্ত্বেও ভিডিওটা শেয়ার করেনি। বলেছে, ‘এটা বাইরে গেলে দু’জনের কেরিয়ারের ক্ষতি হয়ে যাবে। সেটা আমি চাই না। আমি শুধু সত্যিটা দেখাতে চাই।’ ভোর পাঁচটার সময় জনা পঞ্চাশেক ছেলেকে সাক্ষী রেখে ক্লিপটা ডিলিট করে সঞ্জয় শুতে যায়।
বুদ্ধিমানের মতো দ্বিতীয় কাজটা হল, গোটা অপারেশানের সময় ও সুরজকে সামনে আনেনি। রূঢ় ব্যবহার এবং দাদাগিরির জন্য সুরজকে ছাত্ররা অপছন্দ করে। মোবাইলের মনিটরে রক্তমাখা সুরজের মুখই সিমপ্যাথি ওয়েভের জন্য যথেষ্ট। আসল সুরজ এই ওয়েভে নুইসেন্স ভ্যালু ছাড়া আর কিছু অ্যাড করবে না।
রাতজাগা সেই হুইসপারিং ক্যাম্পেনের ফলাফল পরদিন ভোটের সময় বোঝা গিয়েছিল। যাদের ভোট দেওয়ার কথা নয়, এমন সব ছেলেও ভোট দেবে বলে দূরের জেলা থেকে হাঁচোড় পাঁচোড় করে হোস্টেলে চলে এল। কলকাতার যেসব ছেলে কোনও দিন হোস্টেলে থাকেনি, নাম কা ওয়াস্তে একটা বেড অকুপাই করে রেখেছে, তারাও ভোট দেবে বলে চলে এল। হোস্টেল ইলেকশানে ষাট থেকে পঁয়ষট্টি শতাংশের বেশি ভোট পড়ে না। নব্বই শতাংশ ভোট পড়া অভূতপূর্ব ঘটনা। ভোটের রেজাল্ট বেরোতে দেখে গেল, বোর্ডার্স কমিটির অর্ধেক নবযুগ পার্টির দখলে। চন্দন ভোটে গোহারান হেরেছে। তার দলের যারা জিতেছে, তাদের মার্জিন তিন থেকে চার ভোটের।
হাং পার্লামেন্টের মতো হাং বোর্ডার্স কমিটি। দু’পক্ষই যুযুধান। মিটিং-এ এক পক্ষ কোনও সিদ্ধান্ত নিলে অন্য পক্ষ সেটা বাঞ্চাল করে দিচ্ছে। মেসের খাবারের কোয়ালিটি আবার খারাপ হতে শুরু করেছে। কেন না বোর্ডার্সরা মাসের শেষে টাকা না দিয়ে বলছে, ‘পরের মাসে দেব।’ রিপু আর চন্দন কাউকে চমকাতে গেলে ন্যাবা পার্টি তেড়ে আসে। সুরজ বা সঞ্জয় কাউকে টাকা ঠিক সময়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গেলে মোচাপার্টি তেড়ে যাচ্ছে। নেপু ব্লকের থার্ড ফ্লোরে আবার মিনি মেস শুরু হয়েছে। ব্যাডমিন্টন কোর্টে গাঁজাগাছ ফনফনিয়ে বাড়ছে। সন্ধে নাগাদ নেপু-ব্লক থেকে কড়া গাঁজার গন্ধ ভেসে আসে। দু-একজন প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল। সুরজ বলেছে, ‘ঘরের মধ্যে স্মোক করলে তোর কী? ফোট এখান থেকে।’
সব থেকে দুশ্চিন্তার কথা হল হোস্টেলে অজানা এবং সন্দেহজনক চেহারার লোকের আনাগোনা বাড়ছে। সন্ধে হলেই কমবয়সি কিছু রোগাটে ছোকরা রিপু বা সুরজের ঘরে ঢুকে, দরজা বন্ধ করে গুজুর গুজুর করে। এখনই এই অবস্থা। জুলাই মাসে ইউনিয়ন নির্বাচন। তখন কী হবে, কে জানে!
‘ওই ভিডিওটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল।’ চা-ওয়ালার কাছ থেকে দু’ভাঁড় চা নিয়ে বলে বৃন্দা।
‘সেক্স অ্যান্ড ভায়োলেন্স অলওয়েজ সেলস!’ মুচকি হাসে অভি। অভির হাসি দেখে বৃন্দার বুক আনন্দে ভরে যায়। রোগাপাতলা, ভ্যাবলাটে, আনস্মার্ট ছেলেটার মধ্যে সে কী দেখেছে, নিজেও জানে না। অভিকে পৃথিবী শ্রেষ্ঠতম পুরুষ বলে মনে হয়। ইংরিজিতে একটা কথা আছে, ‘ইউ হ্যাভ টু কিস আ লট অব ফ্রগস বিফোর ইউ গেট ইয়োর প্রিন্স।’ বৃন্দার হয়তো আরও অনেক ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করা উচিত। কলেজে সিনিয়র দাদারা নানারকম ইঙ্গিত ও ইশারা নিয়মিত করে থাকে। কেউ এমডি, এমএস বা ডিএনবি করছে। কেউ ইংল্যান্ড যাচ্ছে, কেউ আমেরিকা। প্রতি বছর গাদাগাদা ছেলেমেয়ে ইংল্যান্ড পাড়ি দিচ্ছে ওখানকার ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে জয়েন করার জন্য। সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তাদের বৈভবের ছবি দেখতে পায় বৃন্দা। অনেকরকম অসুবিধে আছে। গায়ের রং সংক্রান্ত বৈষম্য, পে স্কেলের বৈষম্য, স্কিন হেডের ঘৃণা। কিন্তু শান্ত, নিরুপদ্রব জীবনযাপন। করাপশান নেই, পলিউশন নেই, রোজকার জীবনে অসহ্য রাজনীতি নেই, চোর-ডাকাতের ভয় নেই, রাস্তায় খানাখন্দ নেই। ওইরকম এনআরআই কোনও ডাক্তারকে পছন্দ করলে বৃন্দার জীবন অন্য খাতে বইবে। স্যামি সেই রকমটাই চান। মন্দিরাও তাই চান হয়তো। বৃন্দা কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নিল না তো? সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ালে বৃন্দা কি পারবে, দক্ষিণ কলকাতা ছেড়ে মফসসলে নিজেকে মানিয়ে নিতে? মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন ঢেউ খেলছে। মাথার মধ্যে ঘোঁট পাকাচ্ছে সংশয়ের কুয়াশা। গঙ্গার ধারের বেঞ্চিতে বসে ভাঁড়ে চুমুক দেয় বৃন্দা। দেখা যাক, কপালে কী আছে।
অভিও চায়ে চুমুক দিচ্ছে। আড়চোখে ঘড়ি দেখছে। চেহারায়, হাবেভাবে টেনশানের ছাপ। শরীরের ভাষায় অস্থিরচিত্ততা। বেচারা! ফুরিয়ে যাওয়া ভাঁড় বিনে ছুঁড়ে ফেলে বৃন্দা অভির হাত ধরল। বলল, ‘চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।’ বৃন্দা জানে, সে এই কথাগুলো শুধু অভিকে বলল না। নিজেকেও বলল।
অন্যদিনের মতো বৃন্দার স্পর্শ পেয়ে অভির হাত সিঁটিয়ে গেল না। নিজের দু’হাতের দুটি পাতা বৃন্দার হাতের পাতার মধ্যে ঢুকিয়ে অভি বলল, ‘আমার হাত কী ঠান্ডা! আর তোর হাত কী গরম!’
‘আমি দু’হাতে চায়ের ভাঁড় ধরেছিলাম তো! তাই গরম।’ অভির হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বলে বৃন্দা। অভির গলা থেকে লাল টুকটুকে মাফলার টেনে নিজের হাতের তালু মুছে বলে, ‘আমারও শীত করছে।’
ঠিক তখনই গঙ্গার থেকে বয়ে এল এক ঝলক ভিজে বাতাস। ঠিক তখনই বটগাছের পাতায় পাতায় দোলা লাগল। ঠিক তখনই মাফলারের মতো এক চিলতে মেঘ সূর্যদেবকে ঢেকে দিল। চা-ওয়ালা মুখ ঘুরিয়ে বসল। পুলিশের কিয়স্কে বসে থাকা পুলিশকর্মী খবরের কাগজের শব্দজব্দ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মাঝেরহাটগামী ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াল, কিন্তু হর্ন দিল না। দু-একজন অফিসযাত্রী প্ল্যাটফর্মে নেমে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
এতসব আয়োজন যার জন্য, সেই অভি এখন বৃন্দার দিকে তাকিয়ে। চোখে চোখ। অবশেষে অভির দৃষ্টি নামে বৃন্দার ওষ্ঠে। বৃন্দার হাত থেকে নিজের হাত বার করে নিয়ে দু’গালে রাখে সে। যেভাবে একটু আগে গরম ভাঁড় বৃন্দা তার হাতের মধ্যে রেখেছিল, সেইভাবে বৃন্দাকে ধরে অভি। এখনও তার মনে দ্বিধা।
আবার গঙ্গার দিক থেকে একঝলক বাতাস বয়ে আসে। আবারও বটগাছের পাতায় দোলা লাগে। টুপটাপ করে অধৈর্য পাতারা ঝরে পড়তে থাকে। ভল্লের মতো একফালি রোদ ছুঁড়ে দিয়ে সূর্যদেব আবার মেঘের আড়ালে চলে যায়। চা-ওয়ালা নিজের জন্য এক ভাঁড় চা নেয়। পুলিশকর্মী নরম সুরে গলা খাঁকরায়। বেচারি আর কতক্ষণ মাথা নিচু করে থাকবে!
শুধু অফিসযাত্রীরা হাঁটা লাগায়। তাদের অত সময় নেই।
অভি ঠোঁট নামিয়ে আনে। বৃন্দা চোখ বন্ধ করে তুলে ধরে নিজের ঠোঁট। একের ওষ্ঠ ও অধর অপরের ওষ্ঠ ও অধর স্পর্শ করে, ছুঁয়ে পরস্পরকে চিনতে থাকে, জেনে নিতে চায়। দু’জনের কাছেই এ এক নতুন অনুভূতি। দু’জনের কাছেই এ এক অজানা মহাদেশে প্রবেশের পাসপোর্ট।
চুম্বনপর্ব চলল সামান্যক্ষণ। চমকে উঠে পরস্পরের থেকে দূরে সরে বসে বৃন্দা আর অভি। বৃন্দা মাথা নিচু করে দু’হাতে নিজের মুখ ঢাকে। অভি বেঞ্চির অন্য প্রান্তে চলে যায়। ট্রেনের ড্রাইভার খুশি হয়ে লম্বা হর্ন বাজায়। শব্দছকের কঠিন সূত্রে বিরক্ত হয়ে পুলিশ কিয়স্ক থেকে বেরিয়ে এসে আড়মোড়া ভাঙে। চা-ওয়ালা তাকে এক ভাঁড় চা দেয়। আকাশে এখন সূর্য গনগন করছে। গঙ্গার থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস আর রোদের মিশেলে চমৎকার পরিবেশ। পুলিশ এক গাল হেসে বললেন, ‘চা খান! খুব ভালো চা!’
বৃন্দার গাল লজ্জায় লাল হয়ে আছে। সে বলল, ‘এই তো একবার খেলাম।’
‘খান তো! আমি পয়সা দেবো। বাবুঘাটের চা হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চা। আসাম, দার্জিলিং, নীলগিরি, কামস্কাটকা, গুয়াতামেলা—সব ফেল!’ হাসতে হাসতে বলে পুলিশ। চা-ওয়ালা দু’ভাঁড় চা বৃন্দা আর অভির হাতে তুলে দেয়। চায়ে চুমুক দিয়ে বৃন্দা বলে, ‘খুব ভালো চা। কিন্তু আপনি পয়সা দেবেন এটা কি ঠিক?’
‘একদম ঠিক নয়। তবে দুনিয়ায় কটা ঠিক কাজ হয় বলো? পুলিশে ঘুষ খায়, ডাক্তার রোগীকে মেরে ফেলে, উকিল টাকা খেয়ে কেস হেরে যায়, এমএলএ জনগণের টাকায় বাড়িগাড়ি করে। এত বেঠিকের মধ্যে আর একটা বেঠিক যোগ করে দিলাম।’ মুচকি হেসে বলে পুলিশ। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বৃন্দা আর অভি স্ট্র্যান্ড রোডে আসে। সাড়ে আটটা বাজে। এবার হোস্টেলে ফেরা যাক।
মেটিয়াবুরুজ-শেয়ালদার মিনিবাসে শেয়ালদা আসতে সময় লাগল আধঘণ্টা। যাত্রাপথে কেউ কোনও কথা বলেনি। ফাঁকা বাসে দু’জনে দু’জনের হাত ধরে বসেছিল। নিজেকে ভীষণ পূর্ণ, ভীষণ শান্ত লাগছে বৃন্দার। অনেকদিন ধরে পথ চলতে চলতে হঠাৎ কোনও মুসাফিরখানার সন্ধান পেলে ক্লান্ত যাত্রী যেমন নিশ্চিন্ত বোধ করে, বৃন্দাও এখন তেমনই চিন্তাহীন। মনের কথা মনে পুষে রাখা, ইশারা, কাগজের হাত বদল, ইঙ্গিত, চোখের ভাষা পড়ে নেওয়া—এই সব অনিশ্চয়তার শেষে সম্পর্কটা কোথাও পৌঁছল। যাকে বলা যায়, ‘সিলড উইদ আ কিস’।’
মেডিক্যাল কলেজে ঢুকে অভি বয়েজ হোস্টেলের দিকে এগোল। বলল, ‘বারোটার সময় অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর সামনে আসছি।’
‘আচ্ছা।’ টাটা করে লেডি আর্চার্স হোস্টেলে ঢোকে বৃন্দা। তেরো নম্বর ঘরে দময়ন্তী খাটে বসে রয়েছে, আর ফুলমতিয়া মেঝেতে বসে বকবক করছে। বৃন্দা বলল, ‘কী বলছ ফুলমতিয়া?’
‘দিদিমনিকে গোলপো শোনাচ্ছি। হমাদের নদিয়া কি পারের গোলপো।’ হাসতে হাসতে বলে ফুলমতিয়া। ‘শ্যামলাল হেলা নামে এক সুইপার ছিল। পচাস সাল উমর হয়ে গেছে কিন্তু আলুর দোষ যায়নি।’
‘আঃ! ফুলমতিয়া!’ আপত্তি করে দময়ন্তী।
‘আলুর দোষকে বেগুনের দোষ বললে ভালো লাগবে?’ মুখঝামটা দেয় ফুলমতিয়া, ‘তো, শ্যামলালের ছেলে রাজুর বিশ-বাইশ সাল উমর হল। সে রোজ নতুন নতুন মেয়েকে লাইন মারে। রাত্তিরে আড়ালে ডেকে বসে শ্যামলাল রাজুকে বলে, ”পিঙ্কির সঙ্গে পিকচার গেলি? ভালো কথা। লেকিন পেয়ার মতো কর না। উও তেরা বহিন হ্যায়। পিঙ্কি কি মা-কি সাথ মেরি চলতি থি।”‘
‘পরের দিন রাজু নতুন লেড়কি ঢুঁড়ল। রাতে শ্যামলাল বলল, ”আজ টিনার সংগে আইস কিরিম খাচ্ছিলি। ভালো কথা। কিন্তু প্যায়ার মহব্বত করিস না। ও তোর বোন আছে। টিনার মায়ের সঙ্গে আমার আশনাই ছিল।” এরপরে যাদের পিছনেই রাজু হিড়িক মারে, শ্যামলাল বলে, ”ও তোর বহিন আছে”।’
‘তারপর?’ অবাক হয়ে বলে বৃন্দা।
‘তারপরে আর কী? রাজু কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে গিয়ে পড়ল। রাজুর মা বলল, ”তোর কীসের দুখ বেটা? তুই হমাকে বল।” রাজু মাকে সব খোলসা করে বলল। মা শুনে খুব একচোট হেসে বলল, ”পিঙ্কি, টিনা, নিশা, নেহা—নদিয়া কা পারের যত লেড়কি আছে, তুই সব্বাইকে লাইন মার। ওরা শ্যামলালের মেয়ে হতে পারে, কিন্তু তুই শ্যামলালের ছেলে নোস। আমি তোকে গ্রান্টি দিয়ে বলছি”।’
ফুলমতিয়ার গপপো শুনে হাসতে হাসতে বৃন্দা আর দময়ন্তীর পেট ফেটে যাবার জোগাড়, কোনওরকমে ফুলমতিয়াকে তেরো নম্বর থেকে বার করে বৃন্দা বলল, ‘চান কর। ব্রেকফাস্ট কর। কলেজ চল। ঘরে ভুতনির মতো বসে থাকিস না। রেজাল্ট দেখে প্যাথোলজি প্র্যাকটিকাল ক্লাসে যেতে হবে। তুই পাস করে গেছিস। এটা হামি গ্রান্টি দিয়ে বলছি।’
‘আ-চছা।’ লম্বা হাই তুলে বিছানা থেকে উঠল দময়ন্তী।
রেজাল্ট দেখার সময় খুব অ্যান্টি-ক্লাইম্যাক্স হল। সাড়ে এগারোটার সময় বৃন্দা অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এ পৌঁছে শুনল, রেজাল্ট অলরেডি বেরিয়ে গেছে। বায়োকেমিস্ট্রির আরতী ম্যাডাম জানিয়ে দিয়েছেন, যাদের সাপ্লি ছিল, তারা সবাই পাস করে গেছে। সুরজ এক বাক্স লাড্ডু এনে বিলোচ্ছে।
দময়ন্তী আপনমনে বলল, ‘থ্যাংক গড। এবার বাড়ি যাব।’
‘ক্লাস করবি না?’ প্রশ্ন করে বৃন্দা।
‘আজ না। কাল থেকে।’ ব্যাকপ্যাক কাঁধে ঝুলিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয় দময়ন্তী। ‘রাত্তিরে ফোন করে তোর কাছ থেকে বুকলিস্টটা লিখে নেব।’
অভি সুরজের দেওয়া লাড্ডু খেতে খেতে মোবাইলে কথা বলছিল। বৃন্দা পাশে গিয়ে দাঁড়াল। সাপ্লির পাওয়ার খবর অভি বাড়িতে জানায়নি। কাজেই এটা বাড়ির ফোন নয়। বিলু একটু আগেই ছোটভাইকে পিঠ চাপড়ে দিয়ে গেছে। কাজেই এটা বিলুর ফোনও নয়। এক মনে মোবাইলে কথা শুনছিল অভি। বলল, ‘ঠিক আছে। আমি এখনই কিনছি।’ তারপর ফোন কাটল।
‘বই কিনবি?’ জানতে চায় বৃন্দা।
‘হ্যাঁ। চল কলেজ স্ট্রিট চল।’ একগাল হেসে বলে অভি।
‘এক্ষুনি?’ বৃন্দা অবাক। ‘তোর সঙ্গে টাকা আছে? অনেক টাকার ধাক্কা কিন্তু। রবিনস আর হর্ষ মোহনের প্যাথোলজি; ত্রিপাঠি,শানবাগ আর লরেন্সের ফার্মাকোলজি, পানিক্করের মাইক্রোবায়োলজি, পার্ক অ্যান্ড পার্কের কমিউনিটি মেডিসিন, রেড্ডি আর গৌতম বিশ্বাসের ফরেনসিক মেডিসিন…’
‘সেলাই দিদিমনির মতো জ্ঞান দেওয়া বন্ধ কর। আমি দাদার বইগুলো পড়ি। শুধু যে বইগুলোর নতুন এডিশান হয়, সেগুলো কিনি। আজ শুধু পার্ক কিনব।’ বৃন্দাকে ধমক দেয় অভি। তার হাত পাকড়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে রাস্তা পেরিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বলে, ‘কলেজ স্ট্রিট।’
ট্যাক্সিওয়ালা গাঁইগুঁই করল না। দুপুরের জ্যামের মধ্যে শেয়ালদা ফ্লাইওভারে গুটিগুটি উঠল। বাঁদিকে ঘুরে মহাত্মা গাঁধী রোডে পড়ল। এই রাস্তাতে সব সময়ই বেদম জ্যাম। ট্রাম, রিকশা, সরকারি আর বেসরকারি বাস, অটো মিলে নরক গুলজার করে রেখেছে।
কলেজ স্ট্রিটের মোড়ের একটু আগে নেমে ভাড়া মেটাল অভি। বৃন্দার হাত ধরে রাস্তা পেরোল। বৃন্দা হাসতে হাসতে বলল, ‘ওই দিকে বেনারসি শাড়ির দোকান। মেডিক্যাল বুকস এই দিকে। সাগর দত্ত লেনে।’
‘কথা কম বলা প্র্যাকটিস কর।’ ঝাঁকুনি দিয়ে বৃন্দাকে নিজের কাছে টানে অভি। বেনারসি শাড়ির দোকানের ফুটপাথে উঠে পানবিড়ির দোকান টপকে পত্রিকার দোকানের সামনে দাঁড়ায়। পুঁচকে দোকানটায় অদ্ভুত নামের সব ম্যাগাজিন বিক্রি হচ্ছে। বৃন্দা কখনও নাম শোনেনি। অনুষ্টুপ, প্রমা, বিভাব, কবিতীর্থ, ভাষাবন্ধন, ভাষানগর, রক্তমাংস, কোরক, কৌরব…
একজন মোটামতো লোক চশমা পরে ঝিমোচ্ছে। দেওয়ালে ঝুলছে লম্বাটে পোস্টার। তাতে উমাবার্তো একোর বই সংক্রান্ত কোটেশান রয়েছে। এখানে অভি কী খুঁজছে?
গাদাগাদা ম্যাগাজিনের মধ্য থেকে অভি অন্তহীন নামের একটা পত্রিকা তুলে নেয়। মোটাসোটা ম্যাগাজিনের ওপরে লেখা, ‘কবিতা ও কবিতা বিষয়ক পত্রিকা।’ অন্তহীন শব্দটির হরফগুলো বিভিন্ন ধরনের ফন্টে সাজিয়ে চমৎকার প্রচ্ছদ করা হয়েছে। বৃন্দা এতক্ষণে ব্যাপারটা আন্দাজ করল। এই ম্যাগাজিনটাই স্যামির বন্ধু সুদিন চক্রবর্তী সম্পাদনা করেন।
অভি ম্যাগাজিনের দাম মেটাচ্ছে। বৃন্দা সূচীপত্রে চোখ বোলায়। সে ঠিকই আন্দাজ করছিল। এই সংখ্যায় নামি ও অনামি কবিদের সঙ্গে, ‘দুটি কবিতা’ বিভাগে অভিজ্ঞান লাহিড়ীর কবিতা ছাপা হয়েছে। একটা তার পড়া। অ্যানাটমি থিয়োরি পরীক্ষার সময়ে পাওয়া সেই প্রেমপত্র। অন্যটা পড়ছে, এমন সময় অভি তার হাত থেকে ম্যাগাজিন কেড়ে নিয়ে বলল, ‘আসল জিনিসটাই দেখিসনি। এই দ্যাখ।’ অন্তহীন পত্রিকা উল্টে ফোর্থ কভার দেখায় সে।
পাতাজোড়া বিজ্ঞাপনের বক্তব্য, ‘প্রতি সংখ্যায় আমরা এক নবীন কবিকে তার কাব্য প্রতিভার জন্য পুরস্কৃত করি। এবার সেই পুরস্কার পাচ্ছেন কবি অভিজ্ঞান লাহিড়ী। পুরষ্কার—এক হাজার টাকার কবিতার বই। কবিকে আমাদের দফতরে এসে পুরষ্কার নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’
‘জীবনের প্রথম কবিতা লিখে পুরষ্কার?’ বৃন্দা অবাক হয়ে বসে।
‘হ্যাঁ, কলেজের ওই ফোনটা সুদিন চক্রবর্তীর ছিল। উনি আগামী রোব্বার সকালবেলা ওঁর বাড়ি যেতে বললেন। ওঁর বাড়িটাই অন্তহীনের অফিস।’
বৃন্দা বলতে যাচ্ছিল, ‘শনিবার সন্ধেবেলা আমার বাড়ি এলেও তুই সুদিনের দেখা পাবি।’ বলল না। কেননা অভি হঠাৎ বৃন্দাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়েছে। ভোরবেলার ফাঁকা প্রিন্সেপ ঘাটের নরম চুমু নয়। এখন দাঁত দিয়ে বৃন্দার নীচের ঠোঁট কামড়াচ্ছে, জিভ দিয়ে হামলাবাজি করছে মুখের ভিতরে। নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বৃন্দা ভাবল, পুরুষমানুষ এক আজব প্রাণী। কে যে কী মন্ত্রে বশীভূত হয়, ভগবানও জানেন না।