» » অষ্টম পরিচ্ছেদ

বর্ণাকার
🕮

চন্দন

‘আজকে আমরা পড়ব প্যাথলজি অব এনডোমেট্রিয়াম।’ বললেন রিনা দত্ত। তিনি বাড়িতে তিনকোনা লাল ফ্রেমের চশমা পরেন। এখন, ক্লাস নেওয়ার সময় নাকের ওপরে রয়েছে রিমলেস চশমা। পরনে সবুজ পাড়ওয়ালা সাদা কটনের শাড়ি আর লাল রঙের ব্লাউজ। এসএলটির গ্যালারিতে বসে দময়ন্তী বলল, ‘পরের ইলেকশানে কে ক্ষমতায় আসবে এই নিয়ে কনফিউজড। তাই লাল আর সবুজ দুটো রঙই রেখেছেন।’

সবাই ফার্স্ট এমবি পাশ করে গেছে। এক বছর ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজে সবাই কাটিয়ে দিল। এবার শুরু হয়েছে সেকেন্ড এমবি। সেটা চলবে সেকেন্ড ও থার্ড ইয়ার জুড়ে। চতুর্থ বছরে চলবে থার্ড এমবি পার্ট ওয়ান। পঞ্চম বা অন্তিম বছরে আসবে থার্ড এমবি পার্ট টু। সেটা পাশ করলে শুরু হবে ইন্টার্নশিপ।

দময়ন্তীর পাশে বসা চন্দন মুখ ভ্যাটকাল, ‘তোদের এই সুপারটা খুব পারভার্ট। হেবি উল্টোপাল্টা বকেন।’

দময়ন্তী নোট নেওয়ার অভিনয় করতে করতে বলল, ‘ওর বর পুশকিন বেড রিডন। মনে হয় রিনা ম্যাডাম ফিজিক্যালি ডিসস্যাটিসফায়েড। তাই নোংরা কথা বলে আনন্দ পান।’

‘শুনেছিলাম নিরোধ স্যারের সঙ্গে শান্টিং আছে! ওঁর বর পুশকিন সেটা জানেন।’ মন্তব্য করে চন্দন।

‘এটা সব্বাই জানে। তুই নতুন কোনও খবর দিলি না।’ চন্দনকে বলে দময়ন্তী। তার গলার আওয়াজ একটু চড়ে গিয়েছিল। দময়ন্তীর দিকে তাক করে চকের টুকরো ছুঁড়ে রিনা ম্যাডাম তীক্ষ্ন স্বরে বললেন, ‘ক্লাসের মধ্যে কথা বললে আমি কী শাস্তি দিই জানো?’

‘হোপফুলি ক্লাস থেকে বার করে দেন।’ ফুট কাটে দময়ন্তী।

‘ডোন্ট বি সো অপটিমিস্টিক। আমি পুরো ক্লাস করাই কিন্তু পার্সেন্টেজ দিই না। সো, নিজের দায়িত্বে বকবক কোরো।’ ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে ঘুরে যান রিনা।

দময়ন্তী অন্য পাশে বসা বৃন্দাকে বলে, ‘এ তো মহা অশান্তি হল। তোরা এর ক্লাস করছিস কী করে? হোস্টেলে ফিমেল দেবদাস আর কলেজে হান্টারওয়ালি!’

‘শশ!’ দময়ন্তীকে চুপ করিয়ে, বৃন্দা অন্য পাশে বসে থাকা অভির দিকে তাকায়। অভি গতকাল থেকে খুশিয়াল মুডে রয়েছে। কলেজ স্ট্রিটের দোকান থেকে এক ডজন অন্তহীন কিনে বন্ধুদের মধ্যে বিলিয়েছে। আগামী রোব্বার সুদিন চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা হবে, এই স্বপ্নে মশগুল। বন্ধুরা ম্যাগাজিন পেয়ে খুশি। বৃন্দা নিজের কপি ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখেছে। চন্দন ম্যাগাজিন উলটে বলেছে, ‘কবিতা আমার ট্যান যায় বস। এই বই অন্য কাউকে দে।’ চন্দনের কপি টিনটিনকে দিয়েছে অভি।

টিনটিনও কবিতা লেখে। সে বলেছে, ‘অন্তহীন খানদানি লিটল ম্যাগাজিন। গত পঞ্চাশ বছর ধরে রমরমিয়ে চলছে। সত্তর, আশি, নব্বই বা শূন্য দশকের সব কবিই কখনও না কখনও অন্তহীনে লিখেছেন। তুই জাতে উঠে গেলি অভি!’ শুনে অভির গাল লাল।

টিনটিন দেখে বলল, ‘ব্লাশ করছিস? এ তো খাঁটি কবির লক্ষণ! তবে পাশাপাশি পড়াশুনোটাও চালা। কবিতা লিখে তো খেতে পাউরুটি আর ঝোলাগুড়ের খরচও উঠবে না।’

কলেজ স্ট্রিট থেকে কেনা কমিউনিটি মেডিসিনের ঢাউস বই দেখিয়ে অভি বলেছে, ‘এই দ্যাখো। আমি পড়াশুনোও করছি।’

বৃন্দা গতকাল কিনেছে হর্ষ মোহনের টেক্সট বুক অব প্যাথোলজি। ব্যাকপ্যাক থেকে বইটা বার করে জরায়ুর ঝিল্লির ছবি অভিকে দেখায় বৃন্দা।

‘মেনস্ট্রুয়েশান ইজ দ্য উইপিং অফ দ্য উম্ব,’ বললেন রিনা। ‘জরায়ু তার আসন সাজিয়ে, ডিম্বাণুকে কনেচন্দন পরিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। শ্রীমান শুক্রাণু এলে বর-কনের মিলন হবে। নিষিক্ত ডিম্বাণু আসন গ্রহণ করবে জরায়ুর ঝিল্লিতে। কিন্তু লগ্ন পেরিয়ে গেল। সে এল না। মনের দুঃখে ঝিল্লি খসিয়ে ফেলল জরায়ু। কিপ ইন মাইন্ড, শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মধুর মিলন হয়ে গেলে ওই ঝিল্লি ভ্রুণের বাসস্থান হিসেবে আগামী দশমাস পাতা থাকত জরায়ুর গায়ে। তখন মাসিক রক্তস্রাব হতো না। গর্ভবতীদের এই কারণেই পিরিয়ডস হয় না।’

‘রিনা ম্যাডাম প্রচুর ভাট বকে তো!’ বিরক্ত হয়ে বলে প্রবাল। সে চন্দনের সামনে বসে রয়েছে। ‘কঠিন বিষয় নিয়ে ফালতু হ্যাজাচ্ছে।’

সুরজ পাশ থেকে বলল, ‘লড়কি লোগোকে মহিনাকে বারেমে হমলোগ কিঁউ জাসুসি করে? হাম তো জেমসিকা ”সেফ পিরিয়ড” কা খেয়াল রাখতা হ্যায়। ব্যস!’

সঞ্জয় সুরজকে বলল, ‘চুপ হো জা! ইয়ে ম্যাডাম হারামি হ্যায়।’ রিনা ম্যাডাম ঘাড় ঘুরিয়ে আবার ধমক দিতে যাচ্ছিলেন। সঞ্জয়কে বাঁচানোর জন্যে ফার্স্ট বেঞ্চ থেকে দীপ জিজ্ঞাসা করল, ‘হরমোনাল চেঞ্জটা একটু বোঝাবেন ম্যাডাম।’

ব্ল্যাকবোর্ডে ছবি এঁকে নানান হর্মোনের নাম আওড়াচ্ছেন রিনা। চন্দন নোট নিতে নিতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল…

হোস্টেল বোর্ডার্স কমিটির ইলেকশানের আগে সুরজকে মারধোর করার প্ল্যানটা ব্যাক ফায়ার করায় রিপু এখন চুপচাপ। মন দিয়ে পড়াশুনা করছে। একশো পঁচিশ থেকে খুব একটা বেরোয় না। মেডিক্যাল কলেজে মারপিটের রাজনীতি ঢোকানোর জন্য জেলা কমিটির মিটিং-এ অধীর প্রচণ্ড ঝাড় খেয়েছেন। সঞ্জয়ের তোলা ভিডিও ক্লিপটার কথা সবাই জেনে গেছে। রিপু আর চন্দন ভয়ে ভয়ে আছে যে ওটার কপি সঞ্জয় স্টোর করে রেখেছে। ইউনিয়ন ইলেকশানের আগে বাজারে ছাড়বে।

রেজাল্ট বেরোনোর কয়েকদিন আগে অধীর চন্দনকে আনসারুদ্দিন স্ট্রিটের পার্টি অফিসে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। অধীরের কড়া নির্দেশ ছিল, রিপু যেন জানতে না পারে। রিপুর সঙ্গে ওখানে আগে গিয়েছে চন্দন। এইবার একা যেতে কেমন যেন লাগছিল।

অধীরের সঙ্গে কথা বলে চন্দন একটা জিনিস বুঝতে পেরেছে। পার্টির অবস্থা এখন বেশ খারাপ। পার্টি চেষ্টা করছে গণসংগঠনে এমন তরুণ নেতা তুলে আনতে, যার স্বচ্ছ এবং সৎ ভাবমূর্তি আছে। নতুন রক্ত যে কোনও সংগঠনের প্রাণ ভোমরা। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পরে স্বচ্ছ, সৎ, দুর্নীতিমুক্ত নেতা খোঁজা মানে খড়ের গাদায় সূচ খোঁজা। চন্দনের মধ্যে সূচের সন্ধান পেয়েছেন অধীর। চন্দনের গ্রুমিং-এর দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছেন।

রিনা ম্যাডামের ক্লাস শেষ। হুড়মুড় করে গ্যালারি থেকে নামছে ছেলেমেয়েদের দঙ্গল। এরপরে রয়েছে কমিউনিটি মেডিসিনের ক্লাস। ক্লাস নেবেন হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট নীরদ দে। শান্ত, সৌম্যদর্শন, অবিবাহিত মানুষটি সার্পেন্টাইন লেনে বাড়ি ভাড়া নিয়ে একা থাকেন। সামনের বছর রিটায়ারমেন্ট।

সাবজেক্ট হিসেবে কমিউনিটি মেডিসিন ছাত্রছাত্রীদের কাছে বেশ বোরিং। বিভিন্ন রোগের ইতিহাস, সমাজে তার প্রভাব, পরিশ্রুত পানীয় জল বা নির্মল বাতাসের গুরুত্ব জানতে কেউ আগ্রহী নয়। নীরদ আপ্রাণ চেষ্টা করেন বিষয়টিকে মনোগ্রাহী করতে। দুঃখের বিষয় হল তাঁকে রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের ক্লাসও নিতে হয়। তার মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কনডোম, ওরাল কনট্রাসেপটিভ পিল, কপার টি—এই সব জিনিস দেখাতে হয় প্র্যাকটিকাল ক্লাসে। নীরদের নাম হয়ে গেছে নিরোধ স্যার। প্যাথলজির রিনা ম্যাডাম আর বায়োকেমিস্ট্রির আরতী ম্যাডামের সঙ্গে ওঁর শারীরিক সম্পর্কের কথা সবাই জানে বলে নামটা আরও মান্যতা পেয়েছে।

গ্যালারি দিয়ে নামতে নামতে অভি বলল, ‘নিরোধ স্যারের ক্লাস করবি নাকি?’

‘নাঃ!’ জবাব দেয় চন্দন, ‘হেবি বোর! তুই যা! নতুন মুখ দেখলেই চিনে রাখবেন। পরে ধরা দেব। পারলে আমার প্রক্সিটা দিয়ে দিস।’

‘তুই কোথায় যাবি?’ এসএলটি থেকে বেরিয়ে প্রশ্ন করে অভি।

‘আমি হোস্টেলে ফিরে ঘুমোব। অ্যাই দময়ন্তী!’ অভির প্রশ্নের উত্তর দিয়ে হাঁক পাড়ে চন্দন।

‘কী?’ কান থেকে মোবাইলের ইয়ার প্লাগ খুলে জানতে চায় দময়ন্তী।

‘দিনরাত বিলুদার সঙ্গে দাঁড়ে বসে কী গুজুর গুজুর করিস? অভিকে পছন্দ হল না? এত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে। ওর দাদাকে পাকড়ালি!’ আওয়াজ দেয় চন্দন।

‘দ্যাটস নান অব ইয়োর বিজনেস।’ চন্দনকে ধমকে আবার কানে ইয়ার প্লাগ গোঁজে দময়ন্তী।

চন্দনের এই প্রশ্নের পিছনে দুটো উদ্দেশ্য আছে। অভিকে দময়ন্তীর সঙ্গে ভিড়িয়ে দিতে পারলে বৃন্দাকে খালি পাওয়া যায়। তা না হলে এটা ‘এক ফুল দো মালি’ কেস হয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া অন্য উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। দময়ন্তী পিএমএফ-এর নেতার সঙ্গে কেন ওঠাবসা করছে, সেটা জানা জরুরি। ন্যাবা পার্টির রমরমা কলেজে যথেষ্ট বেড়েছে। এই বাজারে পিএমএফ নিয়েও যদি মাথা ঘামাতে হয়, তা হলে বিপদ।

অভি আর বৃন্দা কমিউনিটি মেডিসিনের প্র্যাকটিকাল ক্লাসের দিকে এগোল। দময়ন্তী লাইব্রেরির দিকে। চন্দনের গন্তব্য বয়েজ হোস্টেল। অধীর গতকাল চন্দনকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘হ্যালো ডাক্তার!’

‘বলুন অধীরদা।’

‘আগামিকাল একটা ছেলেকে তোমার কাছে পাঠাব। হোস্টেলের রুমে মিট কোরো। বাইরে নয়।’

চন্দন চুপ। তার সঙ্গে অধীরের যোগাযোগের কথা রিপু যেন জানতে না পারে, এই রকম নির্দেশ দিয়েছেন খোদ অধীর। কিন্তু রিপু চন্দনের রুমমেট। রিপুর সামনে অতিথিকে রুমে ডাকা যাবে কি না সেটা অধীরই বলবেন।

‘ছেলেটার নাম চিকনা। মৌলালিতে থাকে। বিহারের সিওয়ান জেলার ছেলে। কলকাতায় এসেছিল মোটর মেকানিকের কাজ করতে। আমার হাতে তৈরি পার্টি কর্মী। মৌলালির বস্তি ফেডারেশানের তরুণ তুর্কি।’

একটা ছেলের নাম চিকনা? এমন নাম কখনও শোনেনি চন্দন। অধীর বলছেন, ‘ও তোমাকে ফোন করে হোস্টেলে ঢুকবে। তোমার কাছে যখন যাবে তখন যেন রিপু না থাকে।’

সমস্যার সমাধান অধীর করে দিয়েছেন। নিশ্চিন্ত হয়ে চন্দন জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘অধীরদা, চিকনাকে আমার কাছে কেন পাঠাচ্ছেন?’

‘অর্গানাইজেশান চালানো ছেলের হাতের মোয়া নয়। কর্পোরেট অফিস যেমন নিয়মের নিগড়ে বাঁধা, আমাদের পার্টিও তাই। ট্রিক অব দ্য ট্রেড শিখতে হয়। শুধু পোস্টার সেঁটে, মিছিল করে, স্ট্রিট কর্নারিং করে, লোকের বাড়ি গিয়ে ভোটার স্লিপের চোথা ধরিয়ে ইলেকশানে জেতা যায় না। মেডিক্যাল কলেজের এলিটিস্ট পলিটিক্স আর স্ট্রিট পলিটিক্স আলাদা বল গেম। রিপুকে বলে বলেও শেখাতে পারলাম না। দেখি, তোমাকে দিয়ে কদ্দুর হয়!’

একশো পঁচিশে ঢুকে চন্দন দেখল রিপু জানলা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরের এক কোণে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে পড়ছে। নিঃশব্দে জামা প্যান্ট ছেড়ে বারমুডা আর চে গেভারা আঁকা টি-শার্ট পরল চন্দন। দময়ন্তীকে এইরকম একটা টি-শার্ট পরতে দেখে সে-ও কিনেছে। বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে একশো চব্বিশে ঢুকল। অভির ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি তার কাছে সব সময় থাকে। ওর ক্লাস করে ফিরতে ফিরতে চারটে বাজবে। ততক্ষণে চিকনার সঙ্গে কথাবার্তা শেষ হয়ে যাবে।

একশো চব্বিশে ঢুকতে না ঢুকতে অজানা নম্বর থেকে ফোন। ‘চন্দনদা? আমি চিকনা।’

‘চলে এসো। আমি একশো চব্বিশে আছি। টপ ফ্লোর। বাঁদিকের উইং-এর শেষ ঘরের আগের ঘর।’

‘আচ্ছা।’ ফোন কাটে চিকনা। ছেলেটা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ফোন করছিল। ফোনালাপের মিনিট খানেকের মধ্যে দরজায় ঠকঠক করে আওয়াজ হল।

দরজায় খুলে চন্দন দেখল হিন্দি সিনেমার হিরোর মতো সুন্দর দেখতে এক যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে। লম্বা, টকটকে ফরসা, ক্লিন শেভড, চোখে সানগ্লাস। এক হাতের আঙুলে ঘুরছে বাইকের চাবি, অন্য হাতে হেলমেট। পরনে জিনস আর কালো টি-শার্ট। পায়ে, অবাক কাণ্ড, হাওয়াই চপ্পল! চন্দন খেয়াল করল ছোকরার পা অসম্ভব নোংরা। এত ধুলো-কাদা মাখা পা কয়লা খনির শ্রমিকদেরও থাকে না।

‘পা ধোবে না?’ ইতস্তত করে বলেই ফেলল চন্দন।

‘তোমাদের নিয়ে এই হল লফড়া!’ হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে বলল চিকনা, ‘শুধু থোবড়া দেখে ইম্প্রেস হও না। পা ভি দেখো।’ তার মুখে একগাল হাসি। হ্যান্ডশেক করে চন্দন বলল, ‘থোবড়া দেখেও ইমপ্রেসড হলাম না। পান মশলা খেয়ে দাঁতের বারোটা বাজিয়েছ।’

‘আরিত্তারা। পুরো হেডমাস্টার ফেস!’ চোখ মেরে চিকনা বলে, ‘বসব?’ তারপর উত্তরের প্রত্যাশা না করে অভির বিছানায় বডি ফেলে দেয়। হতাশ চন্দন সিগারেট ধরিয়ে বলে, ‘শুধুই পান মশলা খাও, না সিগ্রেটও চলে?’

‘আমার সব চলে।’ খ্যাকখ্যাক করে হাসছে চিকনা। চন্দনের বাড়িয়ে দেওয়া সিগারেট ধরিয়ে হুশহুশ করে ধোঁয়া ছেড়ে বলল, ‘শেয়ালদা স্টেশনটা অধীরদা দেখে। রিসেন্টলি অধীরদা ডান হাত হ্যাপি তিওয়ারি নবযুগ পার্টিতে জয়েন করেছে। বখরার ঝামেলা শুরু হয়ে গেছে। এই লফড়া অনেকদূর গড়াবে।’

‘অধীরদা শেয়ালদা স্টেশন দেখেন? মানে?’ চন্দন অবাক।

‘রেলওয়ের স্ক্র্যাপইয়ার্ড, ছাঁট লোহা, গোডাউন, গুডস ট্রেন, হকার, পাতার ব্যবসা, মেয়েছেলে, ছক্কাপার্টি-রোজ করোড় রুপাইয়ার লেনদেন হয় শেয়ালদায়। হ্যাপি তিওয়ারিকে ডায়না হাত করে অধীরদা খুদ বিজনেস সামহালতো। হ্যাপিকে বেশি ভরোসা করেছিল। সব কনট্যাক্ট হ্যাপির হাতে ছিল। এখন অধীরদাকে লেঙ্গি মেরে হ্যাপি মৃন্ময় চ্যাটার্জির ধুতির তলায় ঘুসেছে।’

চন্দনের এইসব শুনতে খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে। রাজনীতি আর আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সম্পর্ক নিয়ে বেশ কয়েকটা সিনেমা সে গত এক বছরে দেখেছে। হলে গিয়ে বা কম্পিউটারে! সত্য, কোম্পানি, ডি কোম্পানি। চিকনা সেই কানেকশানের গল্প বলছে। মেডিক্যাল কলেজের রাজনীতির সঙ্গে চিকনাদের রাজনীতি কোনওদিনও মিলবে না। চন্দনই মেলাতে দেবে না। চন্দন ঠিক করে নিয়েছে যে চিকনার সঙ্গে তার এটাই প্রথম ও শেষ মুলাকাত। তবে যতক্ষণ ছেলেটা আছে, ততক্ষণ মশলাদার গপপো শুনে নেওয়া যাক। বেশ একটা রিং সাইড ভিউ পাওয়া যাচ্ছে। চিকনাকে উশকে দিতে চন্দন বলল, ‘তোমাদের গ্রুপবাজির মধ্যে আমরা কীভাবে আসছি?’

‘কেন আসছ না? অধীরদা শেয়ালদা এলাকায় সমস্ত ফ্রন্টের ইউনিয়ন লিডার। রিক্সাওয়ালা ইউনিয়ন, ঠেলাওয়ালা ইউনিয়ন, রেন্ডি ইউনিয়ন, লেবার ইউনিয়ন, পোর্টার ইউনিয়ন, ব্যবসায়ী সমিতি, বস্তি ফেডারেশান। রেলওয়ে স্টাফেদের আলাদা ইউনিয়ন তো আছেই। প্লাস শেয়ালদা চত্বরে সব কলেজের ইউনিয়ন। নেক্সট বিধানসভা ইলেকশানের আগে এইসব ইউনিয়ন হাতে না রাখলে শেয়ালদা থেকে অধীরদা আউট। হ্যাপি তিওয়ারি ইন। পার্টি ফান্ডে রোজ লাখো রুপিয়া জমা পড়ে বলেই পার্টিতে অধীরদা জামাইরাজা। রুপিয়ার সোর্স শুকিয়ে গেলে স্টেট কমটি আর কলকাত্তা ডিসট্রিক্ট কমটিতে অধীরদার বারফাট্টাই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই, অধীরদার কাছে এ লড়াই বাঁচার লড়াই। এ লড়াই জিততে হবে।’

‘এইসব ইনফর্মেশান যদি আমাদের ভোটাররা জানতে পারে, তাহলে আমরা একটাও ভোট পাব না।’

‘তারা জানবে না। এইবার চুনাও নিয়ে কোনও রিস্ক নেওয়া যাবে না। সুরজ আর তার চেলালোগ যেন নমিনেশান ফর্ম জমা দিতে না পারে তার বেবোস্থা করতে হবে।’

‘কীভাবে ব্যবস্থা করবে?’ জানতে চায় চন্দন। চিকনাকে তার একদম পছন্দ হচ্ছে না। নেহাত অধীরের গেস্ট। তাই উঠে যেতে বলতে পারছে না। কিন্তু এবার একে কায়দা করে ফোটাতে হবে।

‘সে সব নিয়ে তোমাকে পসিনা বাহাতে হবে না। তোমরা হলে পার্টির লালটু মাল। বংলায় যাকে বলে রাঙা মুলি। পাস করার পরে দেখবে, অধীরদা তোমার কাছে হর মাহিনা মোটা টাকার লেভি চাইছে। কিন্তু মরিজ হয়ে নিজে আসছে না। কাউকে পাঠাচ্ছেও না। কিঁউকি ও তোমাকে ডাক্তার বলেও মনে করে না, পার্টি ক্যাডার বলেও মনে করে না।’

‘আর আমার বন্ধুরা?’

‘তোমার ডাক্তার দোস্তরা তাদের বাড়ির পার্টি-শার্টিতে তোমায় হরগিজ ডাকবে না। লেকিন চুপকে চুপকে সন্ধেবেলা তোমার সঙ্গে ফোনে আনশান ভাটিং করবে। ভালো পোস্টিং পাওয়ার সময় তোমার হেল্প লাগবে তো!’

‘ভালো বললে বস!’ হাই তুলে বলে চন্দন।

‘তোমার টি-শার্টে যে লোকটার ছবি আঁকা আছে ও ডাক্তার ছিল। কিন্তু ওই ডাক্তার আর তোমার মধ্যে যতখানি ফারাক, ততখানিই ফারাক ‘ইনকিলাব’ আর ভোট ব্যাংক পলিটিক্সের মধ্যে। কাজেই সব জিনিস নিয়ে ভেজা গরম কোরো না। মন দিয়ে পড়ালিখা করো। স্টুডেন্টদের টাচে থাকো। বাকিটা আমি দেখছি।’ লম্বা জ্ঞান দিয়ে তড়াক করে খাট থেকে লাফিয়ে উঠেছে চিকনা। হাতে ঝোলানো হেলমেটের মধ্যে থেকে টেনে বার করেছে একটা আগ্নেয়াস্ত্র। সেটা অভির খাটে রেখে বলছে, ‘এটা এখানে থাক। পরে এসে নিয়ে যাব।’

চন্দন অবাক হয়ে অস্ত্রটার দিকে তাকাল। নিয়মিত খবরের কাগজে ছবি দেখে এ জিনিস তার চেনা। দিশি ওয়ান শটার। আগে বিহারের মুঙ্গের থেকে বাংলায় ঢুকত। এখন অস্ত্র তৈরি করা বাংলার ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের মধ্যে পড়ে। নতুনগ্রামেই এই জিনিস তৈরি হয়।

‘এটা এখানে রাখা যাবে না।’ ক্যাজুয়ালি বলে চন্দন।

‘রাখা যাবে না? কিঁউ?’

‘আমি বলছি, তাই।’

‘লেকিন অধীরদা বলছিল…’

‘অধীরদা যাই বলুন না কেন, এ জিনিস এখানে রাখা যাবে না। তুমি নিয়ে যাও।’

চিকনা কিছুক্ষণ স্থির চোখে চন্দনের দিকে তাকিয়ে রইল। ওয়ান শটার খাট থেকে তুলে হেলমেটের মধ্যে রেখে বলল, ‘সুরজদের ঘরে রেগুলার মাল ঢুকছে। সে খবর রাখো?’

‘আমি সুরজের সঙ্গে কথা বলে নেব। দরকার হলে হোস্টেলের সুপার, হসপিটালের সুপার, কলেজের প্রিন্সিপাল, থানার ওসি—সবার সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু আমাদের কলেজ ইলেকশানে এই সব চলবে না। ভোটে হারি বা জিতি, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে বেরোব। হোস্টেলে অস্ত্র রেখে কেরিয়ার মায়ের ভোগে পাঠাতে চাই না।’

‘ঠিক হ্যায় বস। লেকচার ঝাড়ার দরকার নেই। আমি পাতলা হলাম। বাই।’ হেলমেট হাতে নিয়ে ঝড়ের গতিতে একশো চব্বিশ থেকে বিদায় নেয় চিকনা। ফাঁকা ঘরে চন্দন থম মেরে কিছুক্ষণ বসে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় তার মাথা কাজ করছে না। নিঃশব্দে গভীর শ্বাস নিতে থাকে সে। মনে মনে গুনতে থাকে, এক…দুই…তিন…

ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করলে টেনশান কমে। মন শান্ত হয়। এখন তার মাথা গরম। মনে হাজার রকমের কনফিউশান…

পারুলের মুখে চন্দন শুনেছে, বড় ছেলে বামন হওয়ার পরে সবাই পারুলকে বলেছিল দ্বিতীয় বাচ্চা না নিতে। কিন্তু চন্দন তখন পেটে এসে গেছে। পবন পারুলকে পরামর্শ দিয়েছিল এবর্শান করার জন্য। পারুল সে কথা শোনেনি। যদি শুনত তাহলে রক্ত মাংসের ডেলা হয়ে চন্দন পড়ে থাকত কোনও ডাস্টবিনে। আজকের এই সময় সে দেখতেই পেত না। তার জীবনের সূত্রপাত সংগ্রাম দিয়ে। সেই সংগ্রাম পরবর্তী কালেও জারি রইল। কৃষক পরিবারের ছেলে, কলকাতা থেকে অনেক দূরের জেলার অখ্যাত ইস্কুলের ছাত্র, প্রাইভেট টিউটরহীন ও গাইডেন্সহীন ভাবে পড়াশুনো করে প্রতি বছর পরীক্ষাতে ফার্স্ট হল। হাড়ভাঙা পরিশ্রম, দাঁতে দাঁত চাপা জেদ, অদম্য ইচ্ছাশক্তি চন্দনকে পৌঁছে দিল নতুনগ্রাম থেকে কলকাতা শহরে। এখানে এসেও সংগ্রাম জারি আছে। ‘চাষা’ সম্বোধন, ইংরিজি উচ্চারণ নিয়ে বাঁকা মন্তব্য, আচার আচরণ নিয়ে মজা করা—সমস্ত ইটের জবাব চন্দন দিয়েছে পাটকেল পাঠিয়ে। পড়াশুনোয় এখন সে ক্লাসের প্রথম তিনজনের মধ্যে একজন। রাজনীতিতে কলেজের এক নম্বর নেতা। কিন্তু এক জায়গায় সে হেরে বসে আছে। প্রেম।

হেরে যাওয়া চন্দনের স্বভাবে নেই। হারা বলে কিছু হয়—এটাই সে মনে করে না। একটা চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে মানে অসীম সংখ্যক চেষ্টা বাকি আছে।

ডিপ ব্রিদিং কাজ করছে। চিকনার কটু স্বাদ মুখ থেকে মিলিয়ে যাচ্ছে। পাতলা হাসি ফুটে ওঠে চন্দনের ঠোঁটের কোণে। আজ বৃন্দাকে নিয়ে একটা এসপার-ওসপার হয়ে যাক। অনেকদিন বিটিং অ্যারাউন্ড দ্য বুশ হল। এবার সরাসরি কথা বলে দেখতে হবে।

একশো চব্বিশে তালা মেরে একশো পঁচিশে ঢোকে চন্দন। রিপু আলো নিবিয়ে ঘুমোচ্ছে। ঘর অন্ধকার। নিজের টেবিলের ল্যাম্প জ্বালে চন্দন। এখন তার প্ল্যানের প্রস্তুতি পর্ব।

চন্দন স্নান করে। দাড়ি কামায়। ফেডেড ব্লু জিনস, ডার্ক ব্লু টি-শার্ট আর স্নিকার গলায়। পরিপাটি চুল আঁচড়ে, আফটার শেভ আর ডিও লাগিয়ে মোবাইল নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বৃন্দাকে ফোন করে। মেয়েটা কি এখনও নিরোধ স্যারের ক্লাস করছে?

‘বল!’ চন্দনের কানে মধুবর্ষণ করে বৃন্দা। ‘হঠাৎ তলব?’

‘একটা দরকার ছিল।’

‘আমি এখন ট্রামের জন্য দাঁড়িয়ে।’

‘দাঁড়ে বোস। একটা চা খা। আমি আসছি।’ ফোন কেটে হনহন করে হাঁটা লাগায় চন্দন। দাঁড়ে পৌঁছে দেখে, বৃন্দা এক ভাঁড় চা নিয়ে রেলিং-এ বসে পা দোলাচ্ছে। চন্দনকে দেখে বলল, ‘কী ব্যাপার বল তো, হঠাৎ এত মাঞ্জা?’

চন্দন সিগারেট ধরায়। আবার ডিপ ব্রিদিং শুরু করে। এক ভাঁড় চা নিয়ে বৃন্দার পাশে বসে বলে, ‘আমি তোকে কয়েকটা কথা বলতে চাই।’

বৃন্দা কী একটা বলতে যাচ্ছিল। চন্দন হাত নেড়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘ম্যাক্সিমাম নম্বর পেয়ে আমাদের ব্যাচে আমিই ফার্স্ট হব। কেউ আমাকে রুখতে পারবে না। তুই মিলিয়ে নিস।’

‘তো?’ খিলখিল করে হাসছে বৃন্দা।

‘আমি সার্জারিতে হাউসজব করব। কারণ ফিউচারে সার্জারি নিয়ে নিয়ে পড়ার কোনও ইচ্ছে নেই। তাই বেসিকটা শিখে রাখব। হাউসজব শেষ করে মেডিসিনে এমডি করব। এখন পর্যন্ত এতদূর পর্যন্ত ঠিক করা আছে।’

বৃন্দা চন্দনের দিকে তাকিয়ে। চন্দন বৃন্দার চোখে চোখ রেখে বলল, ‘আমার গ্রামের ব্যাকগ্রাউন্ড ভুলে যা। আমাকে ইউনিভার্সিটির টপার হিসেবে দ্যাখ। এনআরআই ডাক্তার হিসেবে দ্যাখ। দেখতে পাচ্ছিস?’

‘হ্যাঁ।’ অবলীলায় ঘাড় নাড়ে বৃন্দা। ‘তোর যোগ্যতা নিয়ে আমার কোনও কনফিউশান নেই।’

‘তাহলে আমাকে তোর অপছন্দ কেন? আমি কালো? আমি বেঁটে? আমার মধ্যে পালিশ নেই?’

‘কে বলল তোকে আমার অপছন্দ?’

‘তাহলে তো মিটেই গেল।’ উত্তেজিত চন্দন হাত থেকে সিগারেট ফেলে বলে। ‘আমার তোকে ভালো লাগে। তোরও আমাকে ভালো লাগে। তাহলে অভির সঙ্গে ঘুরছিস কেন? ওকে ছাড়।’

চন্দনের কথায় বৃন্দার মুখে ছায়া ঘনিয়ে আসে। দৃষ্টিতে ছড়িয়ে পড়ে বিষণ্ণতা। দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁট কামড়ে বলে, ‘আসলে… আমি তোর যোগ্য নই রে চন্দন। আমি এত সাধারণ, এত অর্ডিনারি। এত মিডিওকার… আমাকে ভালোবেসে তুই কখনও সুখী হবি না। আমি বাড়ির চাপে ডাক্তারি পড়ছি। পাস করার পরে সব ভুলে গিয়ে ঘর সংসার করব। তোর অনেক অ্যাম্বিশান। তোর সঙ্গী হওয়া উচিৎ কোনও অ্যাম্বিশাস মেয়ের। আমি দময়ন্তীর সঙ্গে কথা বলব?’

বৃন্দার নিপুণ অভিনয় মন দিয়ে দেখছে চন্দন। কীভাবে ঝাড় নামাতে হয়, সেটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেল মেয়েটা। চন্দনের বলা কথাগুলোকে চন্দনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অস্ত্রহীন করে দিল। এরপর আর কোনও কথা চলে না।

সোজা আঙুলে ঘি উঠল না। এবার আঙুল বাঁকাতে হবে। চন্দন হারতে জানে না। সংগ্রাম তার রক্তে। মনে মনে সে নিজেকে প্রতিশ্রুতি দেয়—ছক কষতে হবে, ম্যানিপুলেট করতে হবে, অভিনয় করতে হবে। কারণ বৃন্দাকে তার চাই। বাই হুক, অর বাই ক্রুক!

দাঁড় থেকে নেমে চন্দন বৃন্দাকে বলল, ‘তা হলে আর কী? আমারই কপাল খারাপ। এক কাজ করা যাক। লেটস বি ফ্রেন্ডস। নাকি সেটাও অ্যালাউড নয়?’

মুহূর্তে বৃন্দার মুখ-চোখ থেকে বিষণ্ণতার মুখোশ উধাও। ঝলমলে হেসে সে হাত বাড়িয়ে বলল, ‘দ্যাটস লাইক আ গুড বয়।’

একদলা থুতু গিলতে গিলতে, দুঃখ চাপতে চাপতে, বুকের ভিতরে হাউহাউ কান্নার মুখে কাপড় চাপা দিতে দিতে চন্দন অভিনয় শুরু করল। হ্যান্ডশেক করে বলল, ‘বিএফএফ। বেস্ট ফ্রেন্ডস ফরএভার!’