শেষের পরিচয়

শেষের পরিচয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অসমাপ্ত উপন্যাস। ‘ভারতবর্ষ’ মাসিক পত্রে—১৩৩৯ বঙ্গাব্দের আষাঢ় থেকে আশ্বিন, অগ্রহায়ণ, ফাল্গুন ও চৈত্র; ১৩৪০ বঙ্গাব্দের বৈশাখ, আশ্বিন ও অগ্রহায়ণ; ১৩৪১ বঙ্গাব্দের আষাঢ়, শ্রাবণ, কার্তিক, ফাল্গুন এবং ১৩৪২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায় ‘শেষেরContinue Reading

এক

রাখাল-রাজের নূতন বন্ধু জুটিয়াছে তারকনাথ। পরিচয় মাস-তিনেকের, কিন্তু ‘আপনি’র পালা শেষ হইয়া সম্ভাষণ নামিয়াছে ‘তুমি’তে। আর এক ধাপ নীচে আসিলেও কোন পক্ষের আপত্তি নাই ভাবটা সম্প্রতি এইরূপ। বেলা আড়াইটায় তারকের নিশ্চয় পৌঁছিবার কথা, তাহারই কি-একটাContinue Reading

দুই

রাখাল জামা খুলিয়া ফেলিল। তারক প্রশ্ন করিল, বেরুবে না? না। কিন্তু তুমি? যাচ্চো আজই বর্ধমানে? না। তুমি কি করো দেখবো,—স্বেচ্ছায় না করো জোর করে করাবো। চায়ের কেট্‌লিটা আর একবার চড়িয়ে দিই,—কি বলো? দাও। কিছু জলখাবারContinue Reading

তিন

পরদিন অপরাহ্নের কাছাকাছি দুই বন্ধু চায়ের সরঞ্জাম সম্মুখের লইয়া টেবিলে আসিয়া বসিল। টি-পটে চায়ের জল তৈরি হইয়া উঠিতে বিলম্ব দেখিয়া রাখাল চামচে ডুবাইয়া ঘন ঘন তাগিদ দিতে লাগিল। তারক কহিল, নামের মাহাত্ম্য দেখলে তো? রাখালContinue Reading

চার

নতুন-মা ডাকেন নাই, রাখাল নিজে যাচিয়া তাঁহার সাহায্য করিতে চলিয়াছে। তখনকার দিনে রমণীবাবু রাখাল-রাজকে ভালো করিয়াই চিনিতেন। তাহার পরে দীর্ঘ তের বৎসর গত হইয়াছে এবং উভয় পক্ষেই পরিবর্তন ঘটিয়াছে বিস্তর, কিন্তু তাহাকে না চিনিবারও হেতুContinue Reading

পাঁচ

বাসায় পৌঁছিয়া রাখাল দুইখানা পত্র পাইল—দুই-ই বিবাহের ব্যাপার। একখানায় ব্রজবিহারী জানাইয়াছেন, রেণুর বিবাহ এখন স্থগিত রহিল এবং সংবাদটা নতুন-বৌকে যেন জানানো হয়। অন্যান্য কয়েকটা মামুলি কথার পরে তিনি চিঠির শেষের দিকে লিখিয়াছেন, নানা হাঙ্গামায় সম্প্রতিContinue Reading

ছয়

বিবাহ দিয়া রাখাল দিন দশ-বার পরে দিল্লী হইতে ফিরিয়া আসিল। বলা বাহুল্য, বরকর্তার কর্তব্যে তাহার ত্রুটি ঘটে নাই এবং কর্তা-গিন্নী অর্থাৎ মনিব ও মনিব-গৃহিণী তাহার কার্যকুশলতায় যৎপরোনাস্তি আনন্দ লাভ করিলেন। কিন্তু তাহার এই কয়টা দিনেরContinue Reading

সাত

সারদা বলিল, মা খাবেন না কিছু? না। এক গেলাস জল আর একটা পান দিয়ে যেতে বলবো? না, দরকার নেই। আলোটা নিবিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে যাবো? তাই যাও সারদা, তোমার রাত হয়ে যাচ্চে। তথাপি উঠি-উঠিContinue Reading

আট

ঠাকুরঘরের ভিতরে ব্রজবাবু এবং বাহিরে মুক্ত দ্বারের অনতিদূরে বসিয়া সবিতা অপলক-চক্ষে চাহিয়া স্বামীর কাজগুলি নিরীক্ষণ করিতেছিল। একদিন এই ঠাকুরের সকল দায়িত্ব ছিল তাহার নিজের, সে না করিলে স্বামীর পছন্দ হইত না। তখন সময়াভাবে অন্যান্য বহুContinue Reading

নয়

এতবড় কথাটা জানাজানি হইতে বাকি রহিল না, প্রভাত না হইতেই ভাড়াটেরা সবাই শুনিল কাল রাত্রে কর্তা ও গৃহিণীতে তুমুল কলহ হইয়া গেছে ও নতুন-মা প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন কালই এ-গৃহ পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইবেন। অন্য কেহ হইলেContinue Reading

দশ

সবিতা যতই চাহিলেন কান্না চাপিতে ততই গেল সে শাসনের বাহিরে। ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ আপ্রান্ত আলোড়িত সাগরজল কিছুতেই যেন শেষ হইতে চাহে না। মেয়েটি কিন্তু সান্ত্বনা দিবার চেষ্টা করিল না, দুর্বল ক্লান্ত হাতে যেমন ধীরে ধীরে তরকারি কুটিতেছিলContinue Reading

এগার

এক সপ্তাহ পূর্বে রাখাল আসিয়া বলিয়াছিল, নতুন-মা, সতেরো নম্বর বাড়িতে আপনি তো যাবেন না—আজ সন্ধ্যাবেলায় যদি আমার বাসায় একবার পায়ের ধুলো দেন। কেন রাজু? কাকাবাবুর জন্যে কিছু ফল-মূল কিনে এনেচি—ইচ্ছে তাঁকে একটু জল খাওয়াই—তিনি রাজীContinue Reading