রক্ত বাদল ঝরে
নবম পরিচ্ছেদ : মহাবীর গভর্নর
এইবার কাপ্তেন মর্গ্যানের পালা শুরু করা যাক। প্রথম পরিচ্ছেদেই মর্গ্যানের মোটামুটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও ছবি দিয়েছি। এই চাষার ছেলে মর্গ্যান বোম্বেটের ব্যবসায় অবলম্বন করেও কেমন করে ‘স্যার’ পদবি পেয়ে লাটের গদিতে বসেছিল তারই বিচিত্র ইতিহাস বলব। এ সত্য ইতিহাস যে-কোনও কাল্পনিক উপন্যাসেরও চেয়ে চিত্তাকর্ষক।
মর্গ্যানের আর একটা উপাধি হচ্ছে—’বোম্বেটের রাজা’! লোলোনেজের চেয়ে সে কম শক্তির পরিচয় তো দেয়নি বটেই, বরং সময়ে সময়ে তার কীর্তি লোলোনেজের যশগৌরবকেও ম্লান করে দিয়েছে!
হেনরি মর্গ্যানের জন্ম ইংলাণ্ডের ওয়েলস প্রদেশে। তার বাবা ছিলেন এক সাধু ও ধনী চাষি—নিজের সমাজে তিনি ছিলেন এক মাননীয় ব্যক্তি। কিন্তু ছেলেবয়স থেকেই বাপের কাজে মর্গ্যানের একটুও রুচি ছিল না। অতএব পিতার আশ্রয় ছেড়ে সে সাগরগামী জাহাজে একটা নীচু কাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
সেই কাজের মেয়াদ ফুরোবার পর মর্গ্যান এল জামাইকা দ্বীপে। এটি ছিল বোম্বেটেদের আর একটি প্রিয় দ্বীপ। বেকার হয়ে বসে না থেকে মর্গ্যান বোম্বেটেদের এক জাহাজে চাকুরি গ্রহণ করলে। সমুদ্রে তিন-চারবার বোম্বেটেধর্ম পালন করে সে এ বিষম ব্যবসায়ের যা কিছু শেখবার সব শিখে ফেললে—এমন ভালো ছাত্র বোম্বেটেরা খুব কমই পেয়েছে!
তারপর কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে পরামর্শের পর মর্গ্যান স্থির করলে, তারাও সকলে মিলে রোজগারের পয়সা দিয়ে একখানা জাহাজ ক্রয় করবে। রত্নাকর বহু রত্নের আকর—একখানা জাহাজ কিনলেই তা আহরণ করা ভারি সহজ।
জাহাজ কেনা হল। দলের ভিতরে মর্গ্যানই ছিল সকলের চেয়ে সাহসী, বিদ্বান ও বুদ্ধিমান। কাজেই দলের বাকি সবাই একবাক্যে তাকেই দলপতি বা কাপ্তেন বলে মেনে নিলে। সেইদিন মর্গ্যানের ছেলেবেলাকার স্বপ্ন সফল হল।
লোলোনেজের পরিণাম দেখে যেমন ধারণা হয় যে, কোনও একজন মহাবিচারক সর্বদা সজাগ হয়ে আছেন, মর্গ্যানের জীবনকাহিনি পড়লে তেমনই সন্দেহ হয় যে, মাঝে মাঝে সেই মহাবিচারকও হয়তো ঘুমিয়ে পড়েন!
প্রথমবারের সমুদ্রযাত্রাতেই নতুন কাপ্তেনের উপরে অদৃষ্ট সুপ্রসন্ন হল। সে একে একে অনেকগুলো জাহাজ দখল করে আবার জামাইকায় ফিরে এল। এবং এই অভাবিত সাফল্যে বোম্বেটেদের ভিতরে তার মানসম্ভ্রম বেড়ে উঠল অত্যন্ত!
জামাইকা দ্বীপে ছিল এক বুড়ো বোম্বেটে, তার নাম ম্যানসভেল্ট। সে এই সময়ে খুব বড় এক নৌবাহিনী গঠন করে চারিদিকে লুটপাট করবার আয়োজনে ব্যস্ত ছিল। সে দেখলে, মর্গ্যান হচ্ছে একজন মস্ত কাজের লোক। অতএব তাকে সে নিজের ভাইস আডমিরালের পদে নির্বাচন করে নিলে। ভুল নির্বাচন হয়নি! এই হল মর্গ্যানের বোম্বেটে জীবনের দ্বিতীয় উন্নতি।
পনেরোখানা জাহাজ ও পাঁচশো বোম্বেটে নিয়ে ম্যানসভেল্ট ও মর্গ্যান সমুদ্রে পাড়ি দিলে। তারা প্রথমেই স্পানিয়ার্ডদের দ্বারা অধিকৃতসেন্ট কাথারাইন দ্বীপে গিয়ে নামল। তারপর লড়াই করে স্পানিয়ার্ডদের কাছ থেকে সেই দ্বীপটা কেড়ে নিলে।
কিন্তু তার অল্পদিন পরেই বুড়ো বোম্বেটে ম্যানসভেল্ট পৃথিবীর লীলাখেলা সাঙ্গ করে ভগবানের কাছে জবাবদিহি করতে চলে গেল।
তারপর কাপ্তেন মর্গ্যান নিজেই এক নৌবাহিনী গঠন করলে। বারোখানা ছোট বড় জাহাজ ও সাতশো লোক নিয়ে আবার সে বেরিয়ে পড়ল। দু-একটা ছোটখাটো শহর লুট করলে। কিন্তু লুটের মাল ভাগ করবার সময়ে বোম্বেটেদের মধ্যে এমন মনকষাকষি হল যে, কাপ্তেন মর্গ্যানের কাছ ছেড়ে একদল লোক রাগ করে চলে গেল। তাদের সন্দেহ হয়েছিল, মর্গ্যান জুয়াচুরি করে অনেক টাকা সরিয়ে ফেলেছে। খুব সম্ভব, তাদের সে সন্দেহ মিথ্যা নয়। যারা দল ছাড়ল তারা সবাই ফরাসি। মর্গ্যানের সঙ্গে রইল কেবল ইংরেজ বোম্বেটেরা।
কিন্তু দল ছোট হয়ে গেল বলে মর্গ্যান একটুও দমল না। আরও কিছু লোক ও জাহাজ সংগ্রহ করে মর্গ্যান আর একদিকে আবার পাড়ি দিলে। কোথায় যাওয়া হবে সেকথা কারুর কাছে প্রকাশ করলে না। খালি বললে, ‘আমি তোমাদের সরদার, তোমাদের ভালোমন্দের জন্যে আমিই দায়ী রইলুম। আমাকে বিশ্বাস করো, তাহলেই চটপট তোমরা ধনী হতে পারবে।’
বোম্বেটেরা মর্গ্যানের কথায় বিশ্বাস করলে!
দিন কয় পরে তারা কোস্টারিকা দ্বীপে গিয়ে উপস্থিত হল।
তখন মর্গ্যান বললে, ‘আমরা পোর্টো বেলো শহর লুট করতে যাচ্ছি। এ-কথা আমি আর কারুকে বলিনি, সুতরাং চরের মুখে খবর পেয়ে শত্রুরা সাবধান হওয়ার সময়ও পায়নি।’
দু-একজন প্রধান বোম্বেটে বললে, ‘পোর্টো বেলো হচ্ছে মস্ত শহর, সেখানে অনেক সৈন্য আছে। আমাদের লোকসংখ্যা মোটে সাড়ে চারশো। কেমন করে আমরা অতবড় শহর দখল করব?’
মর্গ্যান বললে, ‘আমাদের দল ছোট বটে, কিন্তু আমাদের জান খুব বড়। দল ছোট হলেই একতা আর লাভের সম্ভাবনা বেশি। কুছ পরোয়া নেই;—এগিয়ে চলো!’
অতঃপর পোর্টো বেলো নগরের একটু বর্ণনা দিতে হবে। ওয়েস্ট ইণ্ডিজে স্পেনীয় রাজ্যের মধ্যে পোর্টো বেলো তখন দুর্ভেদ্য নগর হিসাবে হাভানা ও কার্টেজেনার পরেই তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল। বন্দরের পিছনেই নগরকে রক্ষা করবার জন্যে দুটি বড় বড় দুর্গ আছে। এই দুর্গ দুটির অজ্ঞাতসারে বন্দরের মধ্যে কোনও জাহাজ বা নৌকো প্রবেশ করতে পারে না। দুর্গ দুটিও এমন সুরক্ষিত যে, সকলে তাদের অজেয় বলে মনে করে। প্রথম দুর্গটির মধ্যে তিনশো সৈন্য থাকে। নগরের এখনকার জনসংখ্যা সাড়ে নয় হাজারের উপরে, তখন কম ছিল।
মর্গ্যান সরাসরি বন্দরে প্রবেশ না করে, সেখান থেকে তিরিশ মাইল দূরে সমুদ্রকূলে চুপিসাড়ে জাহাজ লাগালে। তারপর স্থলে পদব্রজে ও নদীতে নৌকোয় চড়ে তারা প্রথম দুর্গটির কাছে এসে পড়ল। দুর্গের অধিবাসীদের বলে পাঠালে—হয় আত্মসমর্পণ করো নয় মরবার জন্যে প্রস্তুত হও।
উত্তরে দুর্গের কামানগুলো ভৈরব হুংকারে অগ্নিবর্ষণ করলে। কামানগর্জন শুনে দূর থেকে নগরের বাসিন্দারা সভয়ে বুঝতে পারলে যে, কাছেই কোনও মস্ত বিপদ এসে আবির্ভূত হয়েছে।
নিকটবর্তী অঞ্চলের স্পানিয়ার্ডরা বোম্বেটেদের বাধা দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করলে। কিন্তু কোনও ফল হল না, তারা হেরে গেল, অনেকে বন্দি হল। দুর্গের ভিতরের সৈন্যরাও শেষ পর্যন্ত দুর্গ রক্ষা করতে পারলে না। কোনওরকম পূর্বাভাস না দিয়ে শত্রু এমন অতর্কিতে শিয়রে এসে পড়েছিল যে, তার কবল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভবপর হল না। মর্গ্যান দুর্গ দখল করলে।
মর্গ্যান হুকুম দিলে, ‘প্রত্যেক বন্দিকে কেটে দুখানা করে ফেল! শহরের লোকরা তাহলে বুঝতে পারবে, আমরা বড় লক্ষ্মীছেলে নই—আমাদের বাধা দিলে তাদেরও নিশ্চিত মরণ!’—বন্দিদের মাথাগুলো উড়ে গেল।
দুর্গের ভিতরের সে সকল সৈন্য ও সৈন্যাধ্যক্ষরা ধরা পড়েছিল, তাদের একটা ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এইবার বারুদখানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল, দুর্গসুদ্ধ সমস্ত প্রাণী শূন্যে উড়ে পঞ্চভূতে মিলিয়ে গেল। কেবল দুর্গের অধ্যক্ষ প্রাণ নিয়ে নগরে প্রস্থান করতে পারলেন।
বোম্বেটেরা নগর আক্রমণ করতে চলল। সেখানকার বাসিন্দারা তখনও আত্মরক্ষার সময় পায়নি—তারা আত্মরক্ষা করতে পারলেও না। পোর্টো বেলোর গভর্নর তাদের কোনওরকমে উত্তেজিত করতে না পেরে, বাকি যে দুর্গটা তখনও শত্রুহস্তগত হয়নি, তার মধ্যে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করলেন।
বোম্বেটেরা নগর দখল ও লুট করে অনেক পাদরিকে সপরিবারে বন্দি করলে। ওদিকে দুর্গ থেকে তাদের উপরে গোলাগুলি-বৃষ্টি হচ্ছিল অজস্রধারে। ব্যতিব্যস্ত হয়ে বোম্বেটেরাও দুর্গ আক্রমণ করলে। তাদের এ-আক্রমণের আর এক উদ্দেশ্য, শহর থেকে অনেক নাগরিক বহু ধনসম্পত্তি নিয়ে কেল্লার ভিতরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।
সারাদিন যুদ্ধ চলল—কোন পক্ষের জয় হবে তখনও তা অনিশ্চিত। অনেক বোম্বেটে মারা পড়ল—তবু তারা কেল্লার কাছ ঘেঁষতে পারলে না। তারা বোমা ছোড়বার সুযোগ পর্যন্ত পেলে না—কেল্লার পাঁচিলের কাছে গেলেই উপর থেকে হুড়মুড় করে ভারী ভারী পাথর ও জ্বলন্ত বারুদ এসে পড়ে তাদের যমালয়ে পাঠিয়ে দেয়।
মর্গ্যান প্রায় হতাশ হয়ে পড়ে শেষ উপায় অবলম্বন করলে।
সে আগে কেল্লার পাঁচিলে ওঠবার জন্যে খুব উঁচু দশ-বারোখানা মই তৈরি করালে। তারপর বন্দি পাদরি ও তাঁদের স্ত্রী-কন্যাদের বললে, সেই মইগুলো পাঁচিলের গাঁয়ে লাগিয়ে দিয়ে আসতে।
গভর্নরকে জানানো হল, ‘এখনও আত্মসমর্পণ করো।’
গভর্নর বললেন, ‘প্রাণ থাকতে নয়।’
তখন মই নিয়ে যাওয়ার হুকুম হল। মর্গ্যান ভেবেছিল, সপরিবারে ধর্মযাজকেরা মই নিয়ে অগ্রসর হলে গভর্নর তাঁদের উপরে আর গুলিবৃষ্টি করতে পারবেন না।
বোম্বেটের দল পাদরিদের পিছনে পিছনে এগিয়ে পিস্তল উঁচিয়ে বললে, শীঘ্র পাঁচিলে গিয়ে মই লাগাও। নইলে গুলি করে মেরে ফেলব।’
কেল্লার পাঁচিলের উপরেও গভর্নর সৈন্য সাজিয়ে রেখেছিলেন, তারাও বন্দুক তুললে।
পাদরি ও তাঁদের পরিবারবর্গ করুণ চিৎকারে স্পানিয়ার্ডদের বললেন, ‘আমরা তোমাদেরই ধর্মযাজক বাবা, আমাদের মেরো না।’
কিন্তু মর্গ্যান এই বীর ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ গভর্নরকে ভুল বুঝেছিল—সৈনিকধর্ম পালনের জন্যে তিনি আর সব ধর্মকে বর্জন করতে প্রস্তুত।
সপরিবারে ধর্মযাজকেরা কাঁধে মই নিয়ে অগ্রসর হলেন, সঙ্গে সঙ্গে কেল্লার উপর থেকে শিলাবৃষ্টির মতো গোলাগুলি এসে তাঁদের ভূতলশায়ী করতে লাগল। বাইরে থেকে শত্রুই হোক আর মিত্রই হোক, কেল্লার ত্রিসীমানায় কারুকে আসতে দেওয়া হবে না—এই ছিল গভর্নরের প্রতিজ্ঞা।
পাদরি ও তাঁদের পরিবারবর্গের দেহ একে একে মাটির উপরে আছড়ে পড়তে লাগল। কিন্তু তবু তাঁরা কোনওরকমে পাঁচিলের গায়ে মই লাগিয়ে পালিয়ে এলেন। তখন বোম্বেটেরা বোমা ও বারুদের পাত্র হাতে করে পাঁচিলের উপরে গিয়ে দাঁড়াল এবং কেল্লার ভিতরে সেইসব নিক্ষেপ করতে লাগল।
স্পানিয়ার্ডরা তখন বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করলে।
কিন্তু সেই বীর গভর্নর! কোনও আশা নেই, তবু তিনি অটল! তখনও নিজের সৈন্যদের ডেকে তিনি বলছেন, ‘অস্ত্র নাও, অস্ত্র নাও! শত্রুবধ করো!’
কেউ তাঁর কথায় কান পাতলে না, তারা বোম্বেটেদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে জীবনভিক্ষা করতে লাগল।
‘তবে মর কাপুরুষ কুকুরের দল!’—এই বলে তাঁর যেসব সৈন্য কাছাকাছি ছিল, মুক্ত তরবারি নিয়ে তিনি তাদের উপরে গিয়ে পড়লেন এবং নিজের হাতেই নিজের সৈন্যদের বধ করতে লাগলেন।
বোম্বেটেদের নীচহৃদয় পর্যন্ত এই অসাধারণ বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে গেল। তারা সসম্ভ্রমে বললে, ‘এখন আপনি আত্মসমর্পণ করবেন তো?’
গভর্নর দৃঢ়হস্তে অসিধারণ করে সগর্বে মাথা তুলে বললেন, ‘নিশ্চয়ই নয়! কাপুরুষের মতো তোদের হাতে আমি ফাঁসিতে মরব না—আমি মরতে চাই লড়াই করতে করতে বীর সৈনিকের মতো।’—বলেই তিনি আবার তাদের আক্রমণ করলেন।
গভর্নরের সহধর্মিণী ও কন্যা কাঁদতে কাঁদতে কাকুতিমিনতি করতে লাগলেন—’ওগো তুমি অস্ত্র ছাড়ো! আত্মহত্যা করে আমাদের পথে বসিও না!’
কিন্তু সেই বীরের পাথর-প্রাণ কোনও অশ্রুই নরম করতে পারলে না—সিংহের মতো একলাই তিনি অগুণতি শত্রুর সঙ্গে যুঝতে লাগলেন।
বোম্বেটেরা তাঁকে জীবন্ত অবস্থায় বন্দি করবার জন্যে অনেক চেষ্টা করলে-কিন্তু পারলে না। শেষ পর্যন্ত শত্রু মারতে মারতে নিজের শেষ রক্তপাত করে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে অন্তিম নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। যে জাতির মধ্যে এমন বীরের জন্ম হয় সে জাতি ধন্য!
তারপর যা হওয়ার তা হল। অত্যাচার, লুণ্ঠন, হত্যা। পোর্টো বেলোর যত ঐশ্বর্য দুর্গের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল, সমস্তই বোম্বেটেরা হস্তগত করলে। অত বড় বীর গভর্নরের হাত থেকে অমন অজেয় দুর্ভেদ্য দুর্গ এত কম সৈন্য নিয়ে মর্গ্যান যে কী করে কেড়ে নিলে, সকলেরই কাছে সেটা প্রহেলিকার মতো বোধ হল।
পানামা নগরের স্পানিয়ার্ড গভর্নর সবিস্ময়ে বোম্বেটেদের কাছে দূত পাঠিয়ে জানতে চাইলেন,—’কোন আশ্চর্য হাতিয়ার দিয়ে তোমরা দুর্গের অত বড় বড় কামান ব্যর্থ করে দিয়েছ?’
মর্গ্যান সহাস্যে দূতের হাতে একটা ছোট পিস্তল দিয়ে বলে পাঠালে, ‘কেবল এই আশ্চর্য হাতিয়ার দিয়ে আমি কেল্লা ফতে করেছি! এই অস্ত্র আমি এক বৎসরের জন্যে আপনাকে দান করলুম। তারপর নিজেই পানামায় গিয়ে আমার অস্ত্র আবার আমি ফিরিয়ে আনব।’
পানামার গভর্নর তখনই সেই পিস্তল ফেরত পাঠিয়ে বললেন, ‘এ অস্ত্রে আমার দরকার নেই। তোমাকে আর কষ্ট করে পানামায় আসতে হবে না। কারণ পোর্টো বেলোর মতো এত সহজে পানামা আত্মদান করবে না।’
পোর্টো বেলো (পানামা প্রদেশের একটি নগর।) শহরে শরীরী মড়কের মতো এক পক্ষকাল বাস করে চারিদিকে হাহাকার তুলে মর্গ্যান সদলবলে আবার জাহাজে এসে উঠল। বিপুল ঐশ্বর্য নিয়ে তারা কিউবা দ্বীপে ফিরে এল। বোম্বেটেদের সবাই বুঝলে, লোলোনেজের অভাব পূরণ করতে পারে এখন কেবল এই কাপ্তেন মর্গ্যান! তার তারকা আজ উদীয়মান!