» » গোচারণের মাঠ

বর্ণাকার
🕮

চাতক

তখন কাতরে রব

করিল চাতক;

নাড়িল চোয়াল গোপ,

হইল চমক।

এক মুটি লয়ে ফের

আর মুটি লয়,

চাতক ছাড়িছে গলা;

—থামিবার নয়;

‘ফটীক, ফটীক জল,’

বলে বার বার,—

চাল ছোলা চিবাইতে

হল তাহে ভার;

তাড়াতাড়ি থাবা থাবা

খেয়ে জলপান,

ঝরণায় মুখ ধুয়ে

করে জল পান,—

চীত হয়ে তরুতলে

শয়ন করিল;

পরাণ ভরিয়ে রব

শুনিতে লাগিল।

এক, দুই, তিন, চারি,

আসি দলে দলে,

চীত হয়ে শুল সবে

তরু-ছায়া-তলে;

দূর হতে হানে তীর

—‘ফটীঈক জল,’

দুই কাণে পশি করে

মগজ বিচল;

দূরেতে কাহার মিতা

ডাকে বুঝি কারে,

চেনা গলা বটে, তবু

চিনিবারে নারে;

তা না; মরা মানুষেতে

(যেন) কাহারেও ডাকে,

মানুষ মরিয়া কি গা,

আকাশেতে থাকে?

জটী বলি ডাকিল না?

  ‘জটীই দে জল,’

জটীর নয়ন দুটি

করে ছল ছল;

হয় ত ঠাকুর বাবা

জল চাহিয়াছে;

তবে কি আজিও বুড়া

আকাশেতে আছে?

আবার চলিল তীর—

‘তটীরে—যুগল,’

পুন শুন অই–‘তোরা–

দিবি রে এ জল?’

উঠিয়া বসিয়া সবে

চারিদিকে চায়,—

ঝোপের পাশেতে দেখে

পাহাড়ির গায়,

শুইয়াছে যত গাভী

শীতল ছায়ায়,

উগারি চিবান ঘাস

আবার চিবায়;

শপি শপি করি লেজ

ধীরেতে হেলায়,

দুই বার নাড়ে মুখ,

খানিক ঘুমায়।

‘দিবীঈরে জল’ পুন

করিল আকুল,

জলের ঝরণা পানে

চাহে গোপ-কুল।

যে খাদে পড়িয়া জল

উপচিয়া যায়,

তাহার তীরেতে যত

বাছুর দাঁড়ায়;

মুখ গুলি বাড়াইয়া

যাই দাঁড়াইল,

শাদা রাঙা ছবি বুঝি

দেখিতে পাইল;

চোখ হেলি, লেজ তুলি

যতেক বাছুর,

উভরড়ে যায় দৌড়ে

অতিশয় দূর।

‘রবীইই আয়’ বলি

ডাকিল সুবল,

আকাশে পুছিল পাখী

‘দিবিইরে জল?’

লাঠি লয়ে, ধেয়ে গিয়ে,

ফিরাল বাছুর,

পাখীরে ডাকিয়া তবে

ছাড়ি দিল সুর;—