পাহাড়
সমুখে পাষাণ বর,
মাথায় টোপর,
বিশাল কঠিন দেহ
—ভূধর শিখর;
যুগ যুগ শত আছে,
সমভাবে খাড়া,
নাহি নাড়ে শির, নাহি
দেয় দেহ ঝাড়া;
অকাতরে জানু পাতি
বসি আছে বীর,
দেবতার দিকে মুখ
অভয় শরীর;
বরষার কালে কত
নব জলধরে,
আশে পাশে ঘুরে বুলে
অনুরাগ-ভরে;
চুপি চুপি ঝোপে ঝাপে
লুকাইয়া রয়,
অভিলাস—পাহাড়ের সনে
কথা কয়;
কাণের কুহরে তার
মৃদু মৃদু বলে,
ভিজায়ে ভিজায়ে হৃদি
ধীরি ধীরি চলে,
তাতে কি পাহাড় ভুলে?
যোগে নিমগন,
নিসাড় নিচল ভাবে,
করযে যাপন;
গর গর করে মেঘ,
নয়ন রাঙায়,
চৌদিকে নিকলে আলো,
তড়িত খেলায়;
বাজ বরিষণ করে
বীরের মাথায়,
না নড়ে ভূধর-বর,
নাহি দেয় সায়।
গরজি বরষি মেঘ,
চলি যায় দূরে,
আশা নাহি ছাড়ে তবু
পুন আসে ঘুরে,
পীড়নে নড়ে না শৈল,
মরমে বিচল,
উছলিয়া উঠে হৃদি—
ফুয়ারার জল।
ধবল শীতল জল
উঠে গুঁড়ি গুঁড়ি,
ঝামরি ছাতার মত
পড়ে সুঁড়ি সুঁড়ি।
তাহার নীচেতে গিয়া
দাঁড়ায় রাখাল,
মাথায় ঘেরিয়া পড়ে
মুকুতার জাল।
বারির কণাতে মিশি
রবির কিরণ,
মনোহর রামধনু
দেয় দরশন।
পিয়িল শীতল জল,
ধুয়িল শরীর,
দেখিতে দেপিতে সবে
চলে ধীরি ধীর।
শিয়াকুল ঝোপে পাখী
বাস করিয়াছে;
ছানাগুলি বুকে ঢাকি
গোপনেতে আছে।
রাখালের চোখে চোখে
যেমন হইল,
আকুল হইয়া পাখী
সরিয়া বসিল।
ছানাগুলি চিঁচি চিঁচি
করিয়া চেঁচায়,
ঘাড় তুলি চারিদিকে
কাতরে তাকায়।
না ছুঁইল ছানাগুলি
রাখাল মায়ায়,
ধীরে ধীরে গুটি গুটি
আর দিকে যায়।
নারাঙী নেবুর তরু
ঘিরেছে লতায়,
শাখা পাতা কিছু তার
নাহি দেখা যায়।
সুগোল সবুজ ঘোর
ছাপর মতন,
মনোহর, সুকৌশল,
—দেখায় কেমন।
মাঝে মাঝে সুঙা সুঙা
লতা উঠিয়াছে,
মুখে মুখে চুমি তারা
বিভোরেতে আছে।
পবন আসিয়া ধীরে
করে অনুযোগ,
দুটি দুটি মাথা নাড়ে
নাহি ভাঙে যোগ।
ছোট ছোট শাদা ফুল
লাগান ছাপরে,
পাতার ভিতর থাকি
মিটি মিটি করে।
থোলো থোলো ফুটা
ফুল কিনারায় ঝুলে,
ভোমরা মৌমাছি বসে,
—থক থক দুলে।