বটজটার দোলন
রাখাল দাঁড়ায়ে ছিল
বটতলা ঘিরে,
হাতেতে পাঁচন বাড়ী,
টোকা বাঁধা শিরে;
দেখিতে আছিল সেই
আপনার মনে,
ভোরের ভানুর ছটা
বিভোর নয়নে;
পলকে পলকে রবি
থকে থকে উঠে,
ঝলকে ঝলকে বিভা
চারি দিকে ছুটে;
চাহিতে চাহিতে তার
চমক হইল,
এ উহার মুখ পানে
চাহিয়া দেখিল;
বটের শিকড়ে রাখি
টোকা আর বাড়ী
দোল খাইবারে সবে
করে তাড়াতাড়ি;
যে যার দোলনা চাপি
খাইতেছে দোল,
পায়ে পায়ে ঠেলাঠেলি,
বুকে বুকে কোল;
কালু মাথে টুসি দিয়া
দুলেছে কানাই,
ফিরিবার কালে কালু
তারে ছাড়ে নাই।
জটির জটার গেরো
গিয়াছে খুলিয়া
এক জটা এক হাতে
রহিল ঝুলিয়া,
তল দেশে তটিরাম
করয়ে বিহার;
তটির কাঁধেতে জটি
হৈল সওয়ার।
করতালি দিল যারা
ছিল তল-দেশে,
দোলনায় ছিল যারা
উঠে সব হেসে;
চট চটি করতালি,
খল খল রোল,
দমকে দোলনা পরি
দিল তাহে দোল।
বড় বড় বট শাখা
দুলিতে লাগিল,
থমকি থমকি পাতা
সিহরি উঠিল।
সুবাস বহিল বায়ু
সুধীর লহরী,
ছায়িল শাখীর গায়ে
সর সর করি;
সরোবরে তরতর
করে নীল জল;
কাঁপিল কমল-পাতা,
কলমীর দল;
পুরাণ তেঁতুলে, দেখি,
শোয়াস বহিল;
সুগোল বকুল তরু
মাথা দোলাইল।