ঊষাকাল
যোগ সাধনের কাল
রাতি পোহাইল,
সোণার দুয়ার খুলি
ঊষা দেখা দিল;
পবন বলিল মৃদু
সবাকার কাছে,
ঊষা দেখা দিল আর,
ঘুমাতে কি আছে?
যোগীদের পাহারায়
তাল আছে খাড়া,
দেহ বাড়ি, মাথা নাড়ি,
দিল তার সাড়া;
তালপাত অসি তুলি
ঝনাৎ করিল,
সেই রবে শাখীদের
সমাধি ভাঙিল।
মাথা তুলি, চোখ মেলি,
চৌদিকে চাহিল,
কুসুম কুমারী ঊষা
নয়নে হেরিল;
লাজ পেয়ে ধীরি ধীরি
শিরে দিল তাজ,
হীরা মরকত তাহে
মুকুতার কাজ;
তাজ পরি সমাদরে
মাথা নোয়াইল,
লোহিত কপোলে
ঊষা ঈষৎ হাসিল।
ঊষাপতি হাসে তাহে
ঊষার আদরে,
উজলে অরুণ আঁখি
নব-রাগ ভরে;
সে হৈম হাসিতে বন
ভাসিয়া উঠিল,
শামল সবুজে হাসি
গড়ায়ে চলিল।
আকাশের হাসি গিয়া
মিশিল আকাশে,
সুনীল আকাশে হাসি
আপনিই হাসে।
জগতে জাগাতে গতি
করিল সমীর,
ঈষৎ কুপিত তবু
অতীব সুধীর;
দুলালী লতারে ধরি
ধীরে দুলাইল,
পাতার ভিতর হতে
ফুল দেখা দিল।
তরুরে তাড়না করি
যায় বায়ু চলি,
শাখীর কোলেতে পাখী
করিল কাকলি।
চলিল কাকের সারি
পাখা দুলাইয়া,
আগেতে রসিল আসি
বাঁশঝাড়ে গিয়া,
মহাশোর গোল করি
তথা হতে উড়ে
বসিল চালের পরে,
মরায়ের চূড়ে;
সারকুড়ে পড়ে গেল
অতিশয় ধূম,
কাকারবে কৃষকের
ভাঙাইল ঘুম;
পিঁড়িতে ননদী উঠি
বিছানা তুলিল,
দুয়ার খুলিয়া বধূ
বাহির হইল।
দুহাতে দুগাছি কড়
গায়ের গহনা,
নাহি বেশ, রুখু কেশ,
মলিন বসনা;
কপালে সীঁদুর হেরি
মনে লয় হেন,
শীত ঋতু রাতি শেষে
শুকতারা যেন;
সতীভাব, সরলতা
ভাসাল নয়নে,
অশোক বনের সীতা
কৃষক ভবনে।
কাঁখেতে কলসী লয়ে
চলে ধীরে ধীরে,
চুপে চুপে নামে বালা
সরোবর তীরে,
কে যেন কাহার কথা
কাণেতে বলিল,
সমবয়সীরে হেরি
সলাজ হাসিল।
চোখ মুছে, মুখ ধুয়ে
উঠে জল লয়ে,
বাঁকা হয়ে গুটি গুটি
চলিল আলয়ে।
উঠেছে কৃষক ভায়া
হুঁকা ধরিয়াছে,
তার সনে করে এবে
তুলনা বা আছে?