দৈয়াল
দৈয়াল দুইটি ছিল
বকুলের ডালে,
জিলেতে মিলায়ে তান
তুলে এক কালে;
কাণেতে পশিলে সুর
চোখে আসে জল;
এলাইয়া যায় গিরা
দেহের সকল;
কিছুতে না রহে মন,
শরীরেতে বল,
হিয়ায় বিঁধিয়া করে
পরাণ বিকল;
শরীরে শোণিত গতি
হয় ধীরে ধীরে,
ঝিঁঝিঁ ঝিঁঝিঁ করি সুর
বাজে শিরে শিরে।
জিলের উপরে জিল
তুলিল দৈয়াল,
ঝিঁঝিঁল বটের তল,
থামিল রাখাল;
বট জটা ধরি সবে
অবশে দুলিল,
তলে যারা ছিল তারা
এলায়ে পড়িল;
গোকুলে চাহিয়া রহে,
বকুলেতে কাণ,
গাভীতে মজিল আঁখি,
পাখীতে পরাণ।
গোপের বিলাস বাস
সেই বট তল,
উপরে চাঁদোয়া তার
করে ঝল মল,
রাখালের মখমল
সেই তৃণ দল,
টানা পাখা দোলে পাতা
তাহে অবিরল,
সমুখে সুচারু ছবি
মাঠেতে গোপাল,
রাখালের কালোয়াত
বকুলে দৈয়াল।
বিলাস বিভোরে তার
হৃদয় ভরিল,
মেঠো সুরে রাখালেরা
গান জুড়ে দিল;
গগন পরশী গলা,
তীখন, রসাল,
নীরবে বিটপী পরে
শুনিছে দৈয়াল;
দূরে গাভী তৃণ মুখে
ফিরিয়া চাহিল,
কাল কাল ভাসা চোখ
ঝামরি আসিল;
কৃষকের বধূগণ
কাঁখেতে কলসী
দলে দলে আসে সবে
ডাকিয়া পড়সী;
তটি জটি কালু কানু
গাইতেছে গান,
সুবল যুগল তাহে
ধরিতেছে তান;—