» » ভারতের দ্বিতীয় প্রভাতে

বর্ণাকার

হেমেন্দ্রকুমার রায়

ভারতের দ্বিতীয় প্রভাতে

একাদশ পরিচ্ছেদ

 হরিণ ছোটে অন্ধবনে,

সেই নিশানা-নেই ঠিকানা!

হায় সে ভীরু পায়নি খবর

ব্যাঘ্র কোথায় দিচ্ছে হানা!

মগধ সৈন্যের সঙ্গে মহাকান্তারের সৈন্যদের যুদ্ধ হচ্ছিল নগরের সিংহদ্বারের—অর্থাৎ সামনের দিকে।

সেখান থেকে বাঘগড়ে যেতে হলে নগরের পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে ক্রোশ তিনেক পথ পেরুতে হয়। এ পথ বাইরের কেউ চেনে না। কাজেই নগরে কোনও বিপদের সম্ভাবনা দেখলে ব্যাঘ্ররাজ এইখানে এসেই আশ্রয় গ্রহণ করত। এবং নিরাপদ বলেই সে দত্তাদেবীকে লুকিয়ে রেখেছিল বাঘগড়ে।

রাজধানী থেকে বাঘগড়ের পথ ক্রোশ তিনেকের বেশি নয় বটে, কিন্তু কোনও অপরিচিত ব্যক্তির পক্ষে ও-পথে হাঁটবার চেষ্টা করা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

মহাকান্তারের বিভীষণ মূর্তি এইখানেই ফুটে উঠেছে ভালো করে। কেবল অরণ্যই যে এখানে বেশি নিবিড় ও দুর্ভেদ্য, তা নয়। একটানা পাহাড়, চড়াই-উতরাই, গিরিসঙ্কট, জলপ্রপাত, নদী ও খাদ প্রভৃতি একত্রে মিলে এ স্থানটাকে মানুষের অগম্য করে তোলবার চেষ্টা করেছে। বনবাসী হাতিরা পর্যন্ত এদিকটা মাড়াতে চায় না। যদিও বনের অন্ধকার এখানে যখন-তখন কেঁপে ওঠে বাঘের ধমকে ও ভালুকের ঘুৎকারে এবং ভয়াবহ অজগররা নীরবে শিকার খুঁজে বেড়ায় এর যেখানে-সেখানে। যে মানুষ এখানকার গুপ্তপথ চেনে সেও যদি একবার অন্যমনস্ক হয় তাহলে সেই মুহূর্তেই তার মৃত্যুসম্ভাবনা।

শহর থেকে বাঘগড়ে যাওয়ার এই অতি দুর্গম পথটি রীতিমতো সুরক্ষিত। ব্যাঘ্ররাজ পথের উপরে পাহারা দেওয়ার জন্যে প্রায় চারিশত রক্ষী সৈন্য নিযুক্ত করেছেন। তাদের কারুকেই চোখে দেখা যায় না। অন্ধ গিরিগুহার ভিতরে, বড় বড় পাথরের আড়ালে, প্রকাণ্ড বনস্পতির পত্রবহুল ডালে ডালে নিঃশব্দ ছায়ার মতো তারা আত্মগোপন করে থাকে—হাতে তাদের ধারালো বর্শা, ধনুকবাণ! শত্রু কিছু জানবার-বোঝবার আগেই ইহলোকের গণ্ডি ছাড়িয়ে হাজির হবে একেবারে পরলোকের সীমানায়!

বাঘগড়ের পিছনেও আর একটা দুর্গম গুপ্তপথ আছে। কিন্তু সেদিক দিয়ে বাইরের শত্রু আসবার সম্ভাবনা নেই, কারণ বাইরের কেউ তার অস্তিত্ব জানে না। ভবিষ্যতে যদি কখনও চূড়ান্ত বিপদে দরকার হয়, ব্যাঘ্ররাজ সেইজন্যে নিজের ব্যবহারের জন্যে এই পালাবার পথটি তৈরি করে রেখেছে। এদিকে পঞ্চাশ ক্রোশের মধ্যে কোনও লোকালয় নেই বলে পথে পাহারা দেওয়ার জন্যে রক্ষী রাখবারও দরকার হয়নি।

হয়তো সবদিকে আটঘাট বাঁধা বলেই দুর্গ হিসাবে বাঘগড়কে দুর্ভেদ্য করবার চেষ্টা হয়নি। ধরতে গেলে তাকে গড় না বলে প্রাসাদ বলাই উচিত। সেকালে কেবল রাজবাড়ি নয়, অধিকাংশ সাধারণ ধনীর চারিদিকে গড়খাই কাটা উঁচু পাঁচিল ঘেরা অট্টালিকাকেও দুর্গ বলে মনে হত। প্রাচীনকালে, এমনকি মধ্যযুগেও আইনের বাঁধন এমন কঠিন ছিল না, দেশে সর্বদাই ছিল অশান্তির সম্ভাবনা। কেবল বিদেশি শত্রু নয়—বড় বড় ডাকাতদের সশস্ত্র দলও যখন তখন গৃহস্থদের করত আক্রমণ। এই সব কারণে যার কিছুমাত্র সঙ্গতি ছিল, সেই-ই নিজের বাড়িকে যতটা সম্ভব দুর্গের আদর্শে গড়ে তোলবার চেষ্টা করত।

এই বাঘগড়ে বন্দিনী হয়েছেন মালব রাজকুমারী দত্তাদেবী।

প্রাসাদের তিনতলার ছাদে সুদূর অরণ্য ও পর্বতমালার দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দত্তাদেবী দাঁড়িয়েছিলেন। পাশেই তাঁর পরিচারিকা বা সহচরী লক্ষ্মী। ইনিও মালব দেশের মেয়ে, দত্তাদেবীর সঙ্গে বন্দিত্ব স্বীকার করেছেন।

দত্তা বললেন, ‘আজ আমার শেষ স্বাধীনতার দিন, লক্ষ্মী!’

‘দেবী, আজও কি আপনি নিজেকে স্বাধীন বলে মনে করছেন? আপনি যে বন্দিনী, এ কথা কি ভুলে গিয়েছেন?’

একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে দত্তা বললেন, ‘কিছুই ভুলিনি লক্ষ্মী! ব্যাঘ্ররাজ বন্দি করেছে কেবল আমার দেহকে, এখনও মন আমার নিজেরই আছে। কিন্তু সে আমাকে আজ পর্যন্ত সময় দিয়েছে, আজ যদি এখান থেকে উদ্ধার না পাই, তবে কাল সে আমাকে বিবাহ করবে—তখন আমার দেহ আর মন দুই-ই হবে বন্দি!’

ভাঙা-ভাঙা গলায় লক্ষ্মী বললেন, ‘দেবী, সেই অসীম দুর্ভাগ্যের জন্যই প্রস্তুত হন। যাঁর আশায় আপনি পথ চেয়ে আছেন, সেই সমুদ্রগুপ্ত তো আজও এলেন না!’

‘ব্যাঘ্ররাজের এক সর্দারকে আমার গায়ের সমস্ত অলঙ্কারের লোভ দেখিয়ে বশীভূত করেছি। সে যে মহারাজা সমুদ্রগুপ্তকে আহ্বান করতে গিয়েছে সে বিষয়ে কোনওই সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার বিশ্বাস, হয় সে পথে কোনও বিপদে পড়েছে, নয় মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি।’

‘দেবী, এটাও তো হতে পারে যে মহারাজা সমুদ্রগুপ্ত আপনার দূতের প্রস্তাবে কর্ণপাত করেননি?’

‘অসম্ভব লক্ষ্মী, অসম্ভব! মনের চোখে আমি দ্বাপরের ভীষ্ম, কর্ণ, অর্জুনের যেসব বীরমূর্তি দেখতে পাই, সমুদ্রগুপ্তের কথা ভাবলে তাঁদের কথাই স্মরণ হয়! যে মহাবীর আর্যাবর্তের অতীত গৌরবকে ফিরিয়ে আনবার জন্যে দৃঢ় পণ করেছেন, অনার্য নররাক্ষসের কবলে বন্দিনী আর্যকন্যার কাতর ক্রন্দনে তিনি কর্ণপাত করবেন না, এ অসম্ভব কথা তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে বোলো না!’

লক্ষ্মী কথা শুনতে শুনতে কান পেতে যেন আরও কিছু শুনছিলেন। তিনি বললেন, ‘খুব দূর থেকে অস্পষ্ট সমুদ্রগর্জনের মতো একটা কোলাহল শুনতে পাচ্ছেন কি?’

সেটা হচ্ছে রাজধানীর অনতিদূরে যে যুদ্ধ চলছে তারই গোলমাল। দুই পক্ষের প্রায় পঁচাশি হাজার সৈনিকের সিংহনাদ বা আর্তনাদ ও অস্ত্রঝঞ্ঝনা, মহাকান্তারের তিন-চার ক্রোশব্যাপী নদী-জঙ্গল-পাহাড়ের উপর দিয়ে বাতাস বহন করে আনছে তারই কিছু কিছু নমুনা!

দত্তাও শুনলেন। হতাশভাবে বললেন, ‘কাল আমার বলিদান। রাজধানীর রাক্ষসরা তাই হয়তো আজ থেকেই উৎসব আরম্ভ করেছে!’

সেই নিরাশা-মাখা কণ্ঠস্বর শুনে লক্ষ্মীর চোখে এল জল। পাছে দত্তা দেখতে পান তাই তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন তাড়াতাড়ি। কিন্তু পরমুহূর্তেই আর একটা শব্দ শুনে লক্ষ্মী দ্রুতপদে ছাদের ধারে ছুটে গেলেন। সেখান থেকে একবার সামনের দিকে চেয়েই তিনি আর্তস্বরে বলে উঠলেন, ‘দেবী, দেবী!’

‘কী লক্ষ্মী?’

‘দূরে বনের পথে চারজন অশ্বারোহী!’

দত্তাও ছুটে গিয়ে দেখলেন।

‘দেবী, ওদের একজনের চেহারা দেখুন! প্রকাণ্ড মানুষের মতো মূর্তি, বাঘছালের পোশাক! ব্যাঘ্ররাজ আসছে।’

‘হুঁ, আমার বলির আয়োজন করতে!’ বলতে বলতে দত্তাদেবীর দুই চক্ষে জ্বলে উঠল অগ্নিশিখা! তীব্র স্বরে আবার তিনি বললেন, ‘লক্ষ্মী, প্রাণ বড়, না মান বড়?’

‘মান বড় দেবী, মান বড়!’

‘তাহলে তুমি কি আমার সঙ্গে যেতে পারবে?’

‘কোথায়?’

‘বাঘগড়ের পিছনকার বনে? ওখানে কেউ পাহারা দেয় না।’

‘দেয় দেবী। ওখানে পাহারা দেয় হিংস্র জন্তুরা—বাঘ, ভালুক, বরাহ, অজগর।’

‘কিন্তু ব্যাঘ্ররাজের চেয়ে তারা ভয়ানক নয়! তারা মানুষের মান কেড়ে নেয় না। আমি প্রাণ দিতে প্রস্তুত আছি।…লক্ষ্মী, লক্ষ্মী, আর দেরি নয়! ওই শোনো, ঘোড়ার পায়ের শব্দ কত কাছে এসে পড়ল! আর দেরি করলে পালাবারও সময় পাব না। আমি পিছনের দরজা দিয়ে এখনই বেরিয়ে যাব—তোমার যদি ভয় তবে তুমি এখানেই থাকো। বিদায় লক্ষ্মী!’

‘আপনার সঙ্গে যখন এখানে এসেছি, তখন অন্য কোথাও যেতে আমার ভয় হবে না!’

দুজনে প্রাণপণে ছুটে ছাদ থেকে নেমে গেলেন।

ওদিকে ঘোড়ার পায়ের শব্দ বাঘগড়ের ভিতরে এসে থামল।

একলাফে ঘোড়া থেকে নেমে পড়ে ব্যাঘ্ররাজ প্রাসাদের উপরে উঠে এল এবং একেবারে প্রবেশ করলে দত্তাদেবীর ঘরে।

ঘরে কেউ নেই। ব্যাঘ্ররাজ চিৎকার করে ডাকলে, ‘দত্তাদেবী, দত্তাদেবী কোথায়? আমি এসেছি, শুনতে পাচ্ছ না?’

তবু কারুর সাড়া নেই।

‘প্রহরী, প্রহরী! শিগগির দত্তাদেবীকে ডেকে আন!’

প্রহরীরা চারিদিকে ছুটল। ব্যাঘ্ররাজ দুম দুম শব্দে মেঝে কাঁপিয়ে ঘরময় ঘুরে বেড়াতে লাগল। প্রহরীরা খানিক পরে এসে ভয়ে ভয়ে জানালে, প্রাসাদের কোথাও দত্তাদেবীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ব্যাঘ্ররাজ কটমট করে দুই চোখ পাকিয়ে এবং দুই পাটি দাঁত বার করে খিঁচিয়ে বলে উঠল, ‘কী! খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? আমার সামনে এত বড় অলক্ষুণে কথা বলবার সাহস হল তোদের? জানিস, এখুনি সবাইকে শূলে চড়িয়ে দেব?’

এমন সময় হন্তদন্তের মতো মন্ত্রীমহাশয়ের প্রবেশ।

ব্যাঘ্ররাজ তেড়ে উঠে বললে, ‘হেঃ! তুমি আবার আমার পিছুপিছু এখানে মরতে এলে কেন? কে তোমাকে ডেকেছে?’

‘মহারাজ, মহারাজ!’

‘চুপ করো মন্ত্রী, বাজে কথা এখন ভালো লাগছে না। জানো, দত্তাদেবীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

‘মহারাজ, ওদিকে যে সর্বনাশ উপস্থিত!’

‘মন্ত্রী, গদার বাড়ি দু-এক ঘা না খেলে তোমার মুখ বন্ধ হবে না বুঝি!’

‘মহারাজ, এতক্ষণে বোধ হয় মগধ সৈন্যরা রাজধানী দখল করেছে।’

ব্যাঘ্ররাজ এবারে গর্জন না করে অট্টহাস্যে ঘর কাঁপিয়ে বললে, ‘আমার সঙ্গে এসেছ ঠাট্টা করতে? স্বচক্ষে দেখে এলুম—’

‘স্বচক্ষে যা দেখেছেন ভুল দেখেছেন। মগধ সৈন্যরা পালাচ্ছিল বটে, কিন্তু সেটা হচ্ছে তাদের কৌশল!’

ব্যাঘ্ররাজের রাগ এইবারে জল হয়ে এল। হতভম্বের মতো বললে, ‘কৌশল?’

‘আজ্ঞে হ্যাঁ মহারাজ! যুদ্ধক্ষেত্রের দুইপাশে ছিল গভীর বন। মগধের হাজার কুড়ি সৈন্য মাঝখানে ছিল অর্ধচন্দ্রের আকারে। আমরা আক্রমণ করতেই আপনি তাদের পালিয়ে যেতে দেখেছেন তো?—কিন্তু তারা পালায়নি,—মহাকান্তারের সৈন্যদের ভুলিয়ে নিজেদের অর্ধচন্দ্র বূহ্যের আরও ভিতরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।’

‘তারপর মন্ত্রী, তারপর?’

‘তারপর হঠাৎ দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রের দুইধারের বন থেকে পিল পিল করে মগধ সৈন্য বেরিয়ে আসছে। যেসব শত্রু পালাচ্ছিল আচমকা তারা ফিরে দাঁড়িয়ে আমাদের সৈন্যদের আক্রমণ করলে। আমরা সে আক্রমণও হয়তো সহ্য করতে পারতুম, কিন্তু দেখতে দেখতে দুইধারের বন থেকে আরও প্রায় হাজার তিরিশ মগধ সৈন্য বেরিয়ে মহাকান্তারের সৈন্যদের ডান, বাম ও পিছন দিক থেকে ঘিরে ফেললে। সেই পঞ্চাশ হাজার সৈন্যের যে অবস্থা হল তা আর বলবার নয়। মগধের জয়নাদে আর মহাকান্তারের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভরে গেল! আমি আর সইতে না পেরে আপনাকে খবর দেওয়ার জন্যে প্রাণপণে ছুটে আসছি। এতক্ষণে আমাদের সব সৈন্য যে হত বা বন্দি হয়েছে সে বিষয়ে কোনওই সন্দেহ নেই—হয়তো মগধ সৈন্যরা আমাদের রাজধানীও অধিকার করেছে।’

রবারের বলের ভিতর থেকে হাওয়া বেরিয়ে গেলে সেটা যেমন চুপসে যায়, মন্ত্রীর কথা শুনতে শুনতে ব্যাঘ্ররাজের মুখের অবস্থাও হল কতকটা সেইরকম। হাঁপাতে হাঁপাতে সে বললে, ‘মন্ত্রী, তোমার বাক্যি শুনে আমার পিলে ভয়ানক চমকে যাচ্ছে যে। মহাকান্তারের রাজধানীতে মগধের সৈন্য! আজ আমি কার মুখ দেখে উঠেছি?’

আচম্বিতে বাঘগড়ের প্রাকার থেকে ভোঁ ভোঁ রবে বেজে উঠল প্রহরীর ভেরি!

ব্যাঘ্ররাজ চমকে লাফ মেরে বললে, ‘মন্ত্রী, ও আবার কী বাবা?’

একজন লোক দৌড়ে এসে সভয়ে খবর দিলে, ‘মহারাজ! বাঘগড়ের পিছনকার বনের ভিতর দিয়ে দলে দলে শত্রু আসছে!’

—মন্ত্রী, মন্ত্রী, একী শুনি? বাঘগড়ের পিছনকার বনের গুপ্তপথের সন্ধান শত্রুরা জানলে কেমন করে?’

—মহারাজ, আমাদের রাজ্যে নিশ্চয় কোনও বিশ্বাসঘাতক আছে!’

আবার ভেরি বাজল ভোঁ ভোঁ!

আবার আর একটা লোক এসে খবর দিলে, ‘মহারাজ, হাজার হাজার শত্রু রাজধানীর দিক থেকে বাঘগড়ের পথ দিয়ে ছুটে আসছে!’

ব্যাঘ্ররাজ ধপাস করে একখানা আসনের উপরে বসে পড়ে বললে, ‘কী হবে মন্ত্রী, এখন কী হবে? সামনে শত্রু, পিছনে শত্রু! বাঘগড় তো নামে মাত্র কেল্লা! শত্রুদের ঠেকাই কেমন করে? ও বাবা, এ আমার কি হল গো!’

মন্ত্রী বললে, ‘মহারাজ, শত্রুদের দৃষ্টি দেখছি বাঘগড়ের দিকেই! ওরা নিশ্চয় দত্তাদেবীর খোঁজেই এদিকে আসছে!’

ব্যাঘ্ররাজ মাথায় করাঘাত করে বললে, ‘হায় রে আমার পোড়াকপাল! কেন ও কালসাপিনিকে ধরতে গিয়েছিলুম!’

‘মহারাজ, আর আক্ষেপ করারও সময় নেই! যদি বাঁচতে চান তো তাড়াতাড়ি বাঘগড়ের পিছনকার গুপ্তদ্বার খুলে বনের ভিতরে গিয়ে লুকিয়ে থাকবেন চলুন!’

মন্ত্রী ছুট মারলে—পিছনে ব্যাঘ্ররাজও!

গুপ্তদ্বার খুলে বাইরে যেতে তাদের কিছুমাত্র দেরি হল না।

দত্তাদেবী আর লক্ষ্মীও এই পথেই পলায়ন করেছেন। একই পথ ধরে ছুটল বাঘ ও হরিণ!