ঐতিহাসিক সমগ্র
বর্গি এল দেশে : ছয়
কিন্তু বর্গি এল, আবার বর্গি এল দেশে। এই নিয়ে চারবার এবং শেষবার।
সেনাধ্যক্ষ ভাস্করের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে এবার সসৈন্যে আসছেন স্বয়ং নাগপুরের রাজা রঘুজি ভোঁসলে। গত পনেরো মাস ধরে তোড়জোড় ও সাজসজ্জা করে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়ে তিনি কার্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলেন।
বর্গিদের কাছে বাংলা দেশ হয়ে উঠেছিল যেন কামধেনুর মতো। দোহন করলেই দুগ্ধ!
রঘুজি আগে উড়িষ্যা হস্তগত করে বাংলার নানা জেলায় নিজের প্রভুত্ব বিস্তার করতে করতে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
আলিবর্দী বুঝলেন, এবার আর মুখের কথায় চিড়ে ভিজবে না। অতঃপর লড়াই ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু পনেরো মাস সময় পেয়ে তিনিও যুদ্ধের জন্যে রীতিমতো প্রস্তুত হয়ে উঠেছিলেন।
প্রথমে দুই পক্ষে হল একটা ছোটখাটো ঠোকাঠুকি। রঘুজি পিছিয়ে গেলেন বটে, কিন্তু তাঁর বিষদাঁত ভাঙল না। তারপর তিনি দশহাজার বর্গি ঘোড়সওয়ার ও চার হাজার আফগান সৈনিক নিয়ে মুর্শিদাবাদের কাছে এসে পড়লেন। সেখানে নবাবি সৈন্যদের প্রস্তুত দেখে পশ্চাদপদ হয়ে ছাউনি ফেললেন কাটোয়া নগরে গিয়ে।
কাটোয়ার পশ্চিমে রানীদীঘির কাছে আলিবর্দীর সঙ্গে রঘুজির চরম শক্তিপরীক্ষা হয়। এক তুমুল যুদ্ধের পর বর্গিরা যুদ্ধক্ষেত্রে বহু হতাহতকে ফেলে ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করে। ইহা ১৭৪৫ খ্রিস্টাব্দের কথা।
শেষপর্যন্ত আলিবর্দী বর্গিদের বাংলা দেশের সীমান্তের বাইরে তাড়িয়ে না দিয়ে নিশ্চিন্ত হননি।
বর্গিরা শিকড় গেড়ে বসে উড়িষ্যায়। তারপরেও কয়েক বৎসর ধরে নবাবী ফৌজের সঙ্গে তাদের ঘাত-প্রতিঘাত হয়ে বটে, কিন্তু খাস বাংলার উপরে আর তারা চড়াও হয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে আসেনি।
না আসবার কারণও ছিল। ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে বর্গিদের সঙ্গে আলিবর্দীর যে শেষ সন্ধি হয় তার একটা শর্ত এই :
‘বাংলার নবাব রাজা রঘুজিকে বাৎসরিক বারো লক্ষ টাকা চৌথ প্রদান করবেন’।