মামা সমগ্রউপন্যাস
চার
ফুল, লতা, পাতা, রঙিন কাগজ, লাল নীল পতাকা। সভা একেবার জমজমাট। লাউডস্পিকার কাসছে। মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে একজন চিৎকার করছেন, ‘টেস্টিং টেস্টিং। বড়মামা বললেন, ‘টেস্ট করে আর কী পাবে! এ তো ব্রংকাইটিসের কাসি। বুকে সর্দি জমেছে।’
যে ভদ্রলোক টেস্ট করছিলেন তিনি যেই ওয়ান, টু, থ্রি, বলতে গেলেন, মাইক চ্যাঁ করে চিৎকার করে উঠল। বড়মামা বললেন, ‘ফেলে দাও, ফেলে দাও। মাচান থেকে নামিয়ে দাও। অসুস্থ, অসুস্থ। হাসপাতালে পাঠাও।’
ফোর, ফাইভ, সিকস। সেভেনে এসে মাইক সুস্থ হল। স্বাভাবিক স্বর বেরোল। বড়মামা বুদ্ধদেবের মতো হাত তুললেন। মাইক নিয়ে ধস্তাধস্তি শেষ হল। সভা একেবারে লোকে লোকারণ্য। পুরুষ, মহিলা, ছেলে মেয়ে, কেমন একটা গজর-গজর, ভজর-ভজর শব্দ হচ্ছে। একসঙ্গে অনেক মাছি উড়লে যেমন হয়।
সুহাসবাবু বললেন, ‘সাইলেনস। সাইলেনস! সাইলেনস!’ প্রায় ধমকে উঠলেন, ‘একদম চুপ, একদম চুপ।’ ঠিক যেন আমাদের স্কুলের হেডমাস্টার! এখুনি পড়া ধরবেন। না পারলে মাথায় ডাস্টার।
সুহাসবাবু বললেন, ‘আজ আমাদের বড় আনন্দের দিন। আজ আমাদের বড় আনন্দের দিন।’
গুনুর গুনুর গোলমাল তখনও চলেছে। ছুঁচ পড়লে আওয়াজ হয় এমন নিস্তব্ধ তখনও হয়নি। একেবারে সামনের সারিয়ে দুটো বাচ্চা, এ ওর কান, ও এর কান ধরে কান-টানাটানি খেলা খেলছে। সুহাসবাবু মাইক ছেড়ে লাফিয়ে সভায় নামলেন। প্রথমেই দু’হাতে দুই থাপ্পড়। তারপর দুটোকেই বেড়াল-ছানার মতো নড়া ধরে তুলে ঝোলাতে ঝোলাতে সভার বাইরে ছেড়ে দিয়ে এলেন। এসেই আবার মাইক ধরলেন, ‘আজ আমাদের অতিশয় আনন্দের দিন। গত বছর ঠিক এমনি দিনে এই সমিতির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।’
পেছনের সারি থেকে একসঙ্গে অনেকে বলে উঠলেন, ‘এবার উঠে যাবে।’
বড়মামা তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বললেন, ‘কে বললে? কে বললে উঠে যাবে? কার এত সাহস? উঠে যাবে কেন?’
পেছনের সারিতে পরপর দশ-বারোজন উঠে দাঁড়ালেন, ‘আমরা বলেছি স্যার। আজ আমাদের আনন্দের দিন নয়, দুঃখের দিন স্যার।’
‘কেন, কেন? দুঃখের দিন কেন? কোনও কিছু জন্মালে কেউ কি দুঃখ করে, না আনন্দ করে? আমি যখন জন্মেছিলুম তখন আমার বাড়ির সবাই হেসেছিল না কেঁদেছিল? আমি অবশ্য ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেছিলুম। সে তো ভাই তুলসীদাসজি বলেই গেছেন—তুমি যখন এসেছিলে, জগৎ হেসেছিল, তুমি কেঁদেছিলে। তুমি যখন যাবে, জগৎ কাঁদবে আর তুমি হাসবে।’
‘ডাক্তারবাবু, আমরা সে জন্ম বা মৃত্যুর কথা বলছি না, আমরা এই কুলতুলি মহিলা সমিতির কথা বলছি স্যার।’
‘অবশ্যই, অবশ্যই, সেই কথাই তো বলবেন। সেই কথা বলারই তো দিন আজ।’
‘তা হলে বলেই ফেলি।’
‘উঁহু, আপনারা তো শুনবেন। আমরা আজ বলব। সভাপতি বললেন, প্রধান অতিথি বলবেন। আপনারা শুধু কান খাড়া করে শুনবেন। শোনা শেষ হলে চটাপট পটাপট হাততালি দেবেন।’
‘সবই বুঝলুম। তবে আপনারা বলার আগে, আমরা যা বলতে চাই শোনা দরকার। অনেক টাকার ব্যাপার তো।’
‘ও, এই প্রতিষ্ঠানকে আপনারা অর্থ দান করতে চান? বাঃ বাঃ, অতি মহৎ প্রস্তাব। পৃথিবীতে দাতা তাহলে এখনও অছেন!’
‘ভালো করে শুনুন। আমরা নিতে এসেছি, দিতে আসিনি। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।’
‘ক্ষতিপূরণ! সে আবার কী রে ভাই! আমরা তো কারুর কোনও ক্ষতি করিনি। আমরা তো মানুষের উপকার করার জন্যেই বাজারে নেমেছি।’
‘ওই আনন্দেই থাকুন। এদিকে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।’
‘কী রকম, কী রকম?’
‘বলছি, বলছি। একে একে বলছি। আমিই প্রথমে বলি, তারপর এরা বলবে।’
বড়মামা ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ে বললেন, ‘সুহাস, সব যে বেসুরে বাজছে গো!’ মাইকে বড়মামার আস্তে মন্তব্য বড় হয়ে সভায় ছড়িয়ে পড়ল।
মেজোমামা বললেন, ‘তা তো একটু বাজতেই পারে। সব সময় সবকিছু কি সুরে বাজে?’
মেজোমামার মন্তব্যও সবাই শুনে ফেলল।
সুহাসবাবু মাইক টেনে নিয়ে বললেন, ‘আজ আমাদের জন্মদিন, বড় আনন্দের দিন, আজ কোনও গণ্ডগোল করা কি ঠিক কবে? আসুন আমরা হাতে হাত মেলাই।’
সঙ্গে সঙ্গে পেছনের সারি থেকে মন্তব্য হল, ‘জন্মদিন আর মৃত্যুদিন একই তো হয়ে যেতে পারে।’
‘মৃত্যুর কথা আসছে কেন ভাই। এই তো সবে এক বছর আমরা জন্মেছি।’
‘তা হলে শুনুন, আপনাদের কীর্তিকাহিনী শুনুন। আপনাদের সেই প্যাকেটে ভরা মুড়কি, যার নাম রেখেছিলেন হরিভোগ। সেই মুড়কি আমার দোকানের কী সর্বনাশ করেছে!’
‘ভাই, হরিভোগ তো সত্যিই হরির ভোগ। আমরা নিজেরা টেস্ট করে তবে বাজারে ছেড়েছি। ওতে বাদাম আছে, জিবেগজার সুস্বাদু টুকরো আছে, নকুলদানা আছে, আদার কুচি আছে। ভাবলেই আমার জিভে জল এসে যাচ্ছে রে ভাই!’
‘আপনার জিভে জল, আর আমার চোখে জল। যা মাল তুলেছিলুম দু-চার প্যাকেট মাত্র বেচতে পেরেছি। এ বাজারে ওসব বৈষ্ণব-পথ্য চলে না মশাই। এ হল মাটনরোল, ফিশরোল, মোগলাইয়ের যুগ। আপনাদের হরিভোগ সব ধেড়ে-ইঁদুর-ভোগ হয়ে গেছে। তাও ইঁদুরে ভোগ করে ছেড়ে দিলে বাঁচতুম। হরিভোগ খেয়ে, ধেড়েরা এমন খেপে আছে, আমার দোকানে সব কাঁচের জার তো ভেঙে চুরমাদ্দর করছেই, আমাকেও দোকান খুলতে দিচ্ছে না, তেড়ে তেড়ে আসছে। কামড়েও দিয়েছে পায়ের বুড়ো আঙুলে। তলপেটে এখন ইনজেকশান নিতে হচ্ছে?’
বড়মামা হাসতে হাসতে বললেন, ‘এই ব্যাপার! আপনি আমাদের এই সমিতির তৈরি গোটাকতক আগমার্কা ইঁদুরকল ওই হরিভোগ দিয়েই পেতে রাখুন, সব ব্যাটা ঠান্ডা হয়ে যাবে।’
‘আগমার্কা ঘি হয় শুনেছি, ইঁদুরকলও হয় নাকি?’
‘আরেব্বাপু রে, সেরা জিনিস মানেই আগমার্কা। আমাদের ইঁদুরকল বাজারের এক নম্বর। নাম্বার ওয়ান। লিকপ্রূফ। ইঁদুর এদিক দিয়ে পড়ে ওদিক দিয়ে ফুড়ুত করে বেরিয়ে যাবে, সে আর হচ্ছে না। আমরা সব জিনিস টেস্ট করে তবে বাজারে ছাড়ি।’
‘ইঁদুরকল কী করে টেস্ট করবেন স্যার? ওটা তো খাদ্য নয়। কেক নয়, রুটি নয়।’
‘ওই কেক আর রুটির কথা যখন উঠল, তখন বলেই ফেলি।’ এবার দ্বিতীয় আর এক ভদ্রলোক। সুন্দর চেহারা। একমাথা কোঁকড়া কোঁকড়া চুল। বড়-বড় চোখ।
বড়মামা বললেন, ‘আপনার আবার কী অভিযোগ? এ দেখছি আমদরবার বসে গেল। অ্যাতো অভিযোগ সামলাই কী করে?’
‘আপনাদের ওই কেক আর রুটি স্যার আমার এতকালের ব্যবসার একেবারে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ও দুটোই কি টেস্ট করে ছেড়েছিলেন স্যার?’
‘অবশ্যই, অবশ্যই। আমি খাইনি, তবে এরা অবশ্যই খেয়েছে। খাবার জিনিস, না খেয়ে পারে?’
‘আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে বেশ খিদে পেয়েছে। আমাদের সামনে দয়া করে একটু চাখুন না।’
‘তা চাখতে পারি। আমার আবার খাওয়ার ব্যাপারে তেমন লজ্জাটজ্জা নেই।’
‘তা হলে সভাপতি, প্রধান অতিথি দু-জনেই একটু একটু টেস্ট করুন। আমরা দেখি।’
মেজোমামা লজ্জা-লজ্জা করে বললেন, ‘কী যে বলেন?’
সুহাসবাবু কেক আর রুটি নিয়ে এলেন। দেখেই মনে হল বেশ গরম গরম। সুন্দর গন্ধ নাকের পাশ দিয়ে ভেসে চলে গেল। যেন ডাকছে—আয়, আয় কপাকপ খেয়ে যা। বড়মামা এক টুকরো কেক ভেঙে মুখে পুরলেন। মুখে পোরার সঙ্গে চটাপট, পটাপট হাততালি। দেখতে দেখতে বড়মামার চোখ কপালে উঠে গেল। কী রে বাবা, এখুনি ফিট হয়ে যাবে নাকি।
সেই সুন্দরমতো ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন, ‘কী বুঝলেন স্যার? নুনে যবক্ষার। জিভ হেজে গেল। তাই না।’
বড়মামা ঢোক গিলেন ডাকলেন, ‘সুহাস।’
‘বলুন স্যার। পাশেই আছি।’
‘পাশেই আছ। আমি যে চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না।’
‘তা হতে পারে স্যার। অন্য কাজে ব্যস্ত রয়েছেন তো!’
‘আজ্ঞে না। সেজন্যে না। এমন বিদঘুটে স্বাদ হল কী করে? অমানুষিক টেস্ট।’
‘হতে পারে স্যার। খুব ভালো কারিগরের তৈরি কিনা!’
‘ছাঁটাই করো, ছাঁটাই করো। সব পাওনা-গণ্ডা মিটিয়ে, হাতে পায়ে ধরে আজই বিদায় করো!’
সেই সুন্দরমতো ভদ্রলোক বললেন, ‘তা হলে, আমার হাজার-পাঁচেক টাকা পাওনা হল। দোকান নতুন জায়গায় তুলে না নিয়ে গেলে, যেখানে আছি সেখানে আর ব্যবসা করে খেতে হবে না। সব খদ্দের ভয়ে সরে পড়েছে।’
বড়মামা বললেন, ‘মিথ্যে কথা। এমন কিছু খারাপ খেতে হয়নি।’
‘তা হলে আর-একটুকরো খান। আমরা বসছি।’
বড়মামা একটু ঘাবড়ে গিয়ে মেজোমামা আর মাসিমার মুখের দিকে করুণ মুখে তাকালেন।
মাসিমা বললেন, ‘পাঁচ হাজারের চেয়ে জীবন অনেক দামী বড়দা।’
বাইরে একটা হইচই শোনা গেল। ‘কোথায়, কোথায় সেই ডাক্তারবাবু? আমি তাঁকে একবার দেখে নিতে চাই।’
বড়মামা ভয়ে ভয়ে বললেন, ‘ওরে কুসি; আবার কে আসছে রে তেড়ে?’
মেজোমামা বললেন, ‘নাও এবার পরোপকারের ঠ্যালা বোঝো।’
মারমার করে রাগী চেহারার এক বৃদ্ধ সভায় এসে ঢুকলেন। ‘ডক্টর মুখার্জী নাকি এসেছেন। তিনি কোথায়?’
পেছনের সারির ভদ্রলোকরা একসঙ্গে বলে উঠলেন, ‘ওই যে, ওই যে মঞ্চে বসে আছেন। বসে বসে কেক খাচ্ছেন।’
‘হ্যাঁ, সকলকে দেখিয়ে দেখিয়ে কেক তো খাবেনই! কারুর সর্বনাশ, কারুর পোষ মাস। ডক্টর মুখার্জী।’
ভদ্রলোক বুক চিতিয়ে পা দুটো ফাঁক করে সামনে এসে দাঁড়ালেন। যেন যুদ্ধ করবেন!
বড়মামা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, ‘আপনার কী সর্বনাশ হয়েছে?’
‘কী সর্বনাশ হয়েছে দেখতে চাও ছোকরা? তোমাদের কৌশল কি আমি বুঝি না ভাবছ। সামনের চৈত্রে আমার বয়েস হবে সত্তর। দাঁতের ডাক্তারদের সঙ্গে ষড় করে তোমরা বাজারে টফি ছেড়েচ। ছেড়েচ কি না?’
‘আজ্ঞে হ্যাঁ, টফি আমরা ছেড়েচি, তবে দাঁতের ডাক্তারের সঙ্গে কোনও ষড় নেই।’
‘তাই যদি হবে মানিক, তাহলে এই বুড়োর বাঁধানো দাঁত দু’পাটির এ-হাল হবে কেন?’
পকেট থেকে খবরের কাগজের একটা মোড়ক বের করে টেবিলে মেলে ধরলেন। খিঁচিয়ে আছে দু’পাটি দাঁত। বাঁধানো সারি থেকে গোটা-দুই খুলে পড়ে গেছে।
বড়মামা ভয়ে ভয়ে বললেন, ‘আজ্ঞে টফি তো শিশুদের জন্যে, আপনি কেন খেতে গেলেন?’
‘এটা কী কথা তুমি বললে হে ডাক্তার! তুমি কি জানো না, আমার এখন দ্বিতীয় শৈশব চলেছে। টফি আমার নাতিও খায়, আমিও খাই। তুমি কি আইন করে আমার টফি খাওয়া ঠেকাবে? এ তো মজা মন্দ নয়!’
‘আমাদের টফি একটু কড়াপাক ধরনের। বেশ পাকলে-পাকলে ধৈর্য ধরে না খেলে দাঁত আপনার ভাঙবেই। এ আপনার নকল দাঁতের জিনিস নয়, আসল দাঁত চাই।’
‘দ্যাখো বাপু, শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকতে চেও না। আমি এই দাঁতে এখনও মাংসের হাড় চিবোই বৎস। যৌবনে সত্তর-আশি পাউণ্ড ওজনের বারবেল তুলতুম। এখনও নেমন্তন্ন বাড়িতে গিয়ে ছাপান্ন খানা লুচি মেরে দি। কী উলটোপালটা বোঝাতে চাইছ আমাকে? শোনো ডাক্তার, পাঁচশোটি টাকা আমি গুনে নিয়ে এখান থেকে যাব। আমাকে তুমি চেনো না। আমার নাম চিদানন্দ বণিক। আমার ঠাকুরদার ঠাকুরদা সিপাহী বিদ্রোহের সময় ঘোড়ার পিঠে চড়ে তলোয়ার দিয়ে ইংরেজদের মুণ্ডু উড়িয়েছিল ক্যাচাক্যাচ।’
বড়মামা ঢোঁক গিলে মেজোমামার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালেন। মেজোমামা চোখের ইশারা করলেন। কী তার মানে কে জানে। বড়মামা আজ বেজায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। পাশে দাঁড়াবার মতো কেউ নেই। সুহাসবাবু কোন ফাঁকে সরে পড়েছেন।
হঠাৎ আশুবাবু এগিয়ে এলেন। মরেছে, ইনি আবার কৌটো-সমস্যা তুলবেন নাকি? আশুবাবু মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, ‘ভদ্র-মহোদয়গণ, আপনারা এইভাবে আজকের অনুষ্ঠান পণ্ড করবেন না। যার যা পাওনা, ডাক্তারবাবু সবই মিটিয়ে দেবেন। আপনারা একটা করে দরখাস্ত পেশ করুন।’
‘দরখাস্ত? তার মানে? এ কি সরকারি দপ্তরে ডোলের আবেদন নাকি? আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা আগে বুঝে নোব, তারপর আমাদের অন্য কথা। ফেলো কড়ি মাখো তেল।’
দাঁতভাঙা বৃদ্ধ বললেন, ‘অ্যাঃ, সব উলটোপালটা বকছ। এ-কথায় ওই কথা আসে কী করে? ফেলো কড়ি মাখো তেল। এর পরেই মূর্খরা বলবে, গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।’
পেছনের সারির ওঁরা তড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন, ‘তার মানে? আমরা মূর্খ! কী আমার জ্ঞানী, মহাপণ্ডিত বৃদ্ধ রে! দাঁত ভেঙেছে, দাঁত! প্রমাণ কী, টফি খেয়ে দাঁত ভেঙেছে! ডাক্তারের সার্টিফিকেট কোথায়?’
‘ওরে মূর্খের দল। এর আবার সার্টিফিকেট কী?’
‘বাঃ, মানুষ মরলে পোড়াবার আগে সার্টিফিকেট লাগে না!’
‘আরে গাধা, মানুষ মরা আর মানুষের দাঁত ভাঙা এক হল?’
‘মানুষের দাঁত কেমন করে হল মানিক? ও তো ছাঁচে ঢালাই নকল দাঁত। তাঁর জন্যে পাঁচশো। টাকা যেন খোলামকুচি রে।’
‘যা না ব্যাটারা, একবার খবর নিয়ে দেখ না, দু পাটি দাঁত বাঁধাবার খরচ কত? এ তোদের খাতা বাঁধানো নয়, ছবি বাঁধানো নয়, গবেটের দল।’
‘যা তা গালগাল তখন থেকে চলেছে। এবার আমরা আর চুপ করে থাকব না। অ্যাকশান নিয়ে নোব।’
‘একবার চেষ্টা করে দ্যাখ না চামচিকের দল।’
‘তবে রে!’
মহা গোলমাল শুরু হয়ে গেল। আশুবাবু বড়মামার কানে কানে বললেন, ‘পেছনের দরজা দিয়ে সরে পড়ুন। হাওয়া খুব ভালো নয়। এলোমেলো বইছে।’