দুই

বড়মামা নীচের উঠোনের ঢালাও রকে বসে আছেন। মাসিমা এটাকে বলেন আলস্যের পীঠস্থান। যে-কোনও মানুষের জীবন নষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট। প্রথমে বসলে, আড় হলে, শুয়ে পড়লে, ঘুম। কিছু দূরেই রান্নাঘর। মাসিমার এলাকা। সেখানে তাঁর বাহিনীর ওঠাবসা, কাটাছেঁড়া, ঘ্যাঁসঘেঁসে, ছ্যাঁ-ছোক। রকম রকম সুন্দর গন্ধ।

ফুল ড্রেস পরে বড়মামা বসে আছেন। গলার দুপাশে স্টেথিসকোপ দুলছে। পাশে পড়ে আছে ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্র। পাটকরা সাদা তোয়ালে। দেখতে টেরিফিক সুন্দর। যখন আমেরিকার হলিউডে ছিলেন তখন একজন চিত্রপরিচালক চেপে ধরেছিলেন—’টার্জেন অ্যান্ড দি এপম্যান’ সিনেমার নামভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। রিফিউজ, নো, নো, নো। শুনে মেজোমামা বলেছিলেন, গুলন্দাজ! ঘটনাটা আসলে এইরকম সিনেমাটার নাম—’দি এপম্যান অ্যান্ড টার্জেন’, এইবার নামভূমিকাটা কি বুঝে নাও। বড়মামা বললেন, ‘কোথায় থাকিস তোরা? আজ এত বড় একটা দিন!’

‘রক্ষাকালী পুজো তো রাত্তিরে!’

‘ওরে! রক্ষাকালী নয় রে! আজ এই বাড়িতে কে আসবে জানিস?’

আমরা তো কিছুই জানি না। বোকার মতো দাঁড়িয়ে।

‘কী খাচ্ছিস কি, এই অড টাইমে!’

চুমকি বললে, ‘তেঁতুলের আচার। ওই আচার খাবার এইটাই সময়। পড়নি? ভর দুপুর বেলা ভূতে মারে ঢেলা। তখন এই ট্যাকাস ট্যাকাস।’

‘আমাকে একটু দিবি না!’

‘বড়দের খেতে নেই। হ্যাংলার মতো চাইছ যখন তখন আর কি করি! যা সেজেগুজে বসে আছ, খাবে কী করে?’

‘ভীষণ লোভ হচ্ছে রে। জিভে জল এসে গেছে।’

‘দাঁড়াও। ব্যবস্থা করছি। চুমকি আমার নাম। সহজে হারব না।’ হাত ধুয়ে ছুটতে ছুটতে এল। বড়মামার কোলে তোয়ালে পাতা হল। পাশে বসে বললে, ‘চোখ বন্ধ করো। নাও আমার আঙুলটা চোষো। কামড়াবে না কিন্তু। মা বলে তোমার মতো দুষ্টু ভূ-ভারতে আর নেই।’

‘তোর মায়ের মাথা খারাপ।’

‘মা-ও তাই বলে, তোমার মাথাটা সবার আগে দেখানো দরকার।’ অনেকেই জানে না, এর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। চুমকির মায়ের সঙ্গে বড়মামারই বিয়ে হবে সেই কোন ছেলেবেলা থেকেই ঠিক করা ছিল। বড়মামা বড় হয়ে ঠিক করলে, বিয়ে করবেন না। হয়ে গেল। সেই না আর হ্যাঁ হল না। মেজোমামা মাঝে মাঝে ডাকেন—এই যে ডক্টর গ্যাণ্ডার। বড়মামা সঙ্গে সঙ্গে বলেন—ইয়েস প্রফেসর প্যানথার।’

চুমকি বললে, ‘অনেকক্ষণ আচার আঙুল খেয়েছ, এইবার বলো, কী কাজ!’

বড়মামা ধড়মড় করে উঠলেন। জানা গেল, বিজয়বাবু একটা বিলিতি গরু উপহার পাঠাচ্ছেন—ইংলিশ কাউ। অ্যারাইভাল টাইম বিকেল ছ’টা। সেই সায়েব গরুকে বরণ করে নিতে হবে। চুমকির ওপর আদেশ হয়েছে—’সেজেগুজে এক্ষুনি আয়। আসার সময় তোদের কুরুক্ষেত্র শাঁকটা অবশ্যই আনবি।’

প্রতাপ মালা পরাবে। চুমকি বাজাবে। আমি ফুল ছড়াব। তারপর গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে। চার পায়েই ব্লাড-প্রেশার মাপা হবে। হার্ট-লাংস পরীক্ষা করা হবে। এসব করবে হরিদা। এরপর হবে গো ভোজন। বিলিতি গরু কি ঘাস খায়? প্রশ্ন। সঙ্গে সঙ্গে এক্সপার্টকে ফোন। ইয়েস, খায়। দুনিয়ার সব গরুই এক। বড়মামার ব্যাখ্যা—সেম হাম্বা, সেম খানা, সেম খ্যাস।’

এতক্ষণ মাসিমা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। চটি ফটফট করে বাইরে থেকে এলেন। কাঁধে একটা সাইড ব্যাগ। গায়ের রং আর চশমার সোনার ফ্রেমের রং এক হয়ে মিশে গেছে। পাড়ার বহুপ্রাচীন হিতকারী সমিতির মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি হয়েছেন। কতরকমের সমস্যা।

মাসিমা থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন, ‘কি হচ্ছে এখানে? সার্কাস?’

বড়মামা বললেন, ‘মা আসছেন মা। আজ এই গৃহ পবিত্র হবে। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, শ্যামলী, ধবলী, নতুন ধান্যে হবে নবান্ন।’

চুমকি যোগ করলে, ‘বিলেত থেকে মেম মা আসছে। এই দ্যাখো পোঁ-পোঁ করে শাঁক বাজাব, ওই দ্যাখো মালা।’

হঠাৎ দোতলার চওড়া বারান্দা থেকে ফেটে পড়ল ভীষণ কণ্ঠস্বর, দুপদাপ পায়ের শব্দ : ‘কে-রে, দে-রে, সতী দে আমার/সতি, সত্যি, কোথা সতী!’ আর একটি কণ্ঠস্বর :

পালাও পালাও, এল এল এল সবে

ব্রহ্মদৈত্য, ভৈরব, বেতাল,

ভূত প্রেত দৈত্য দানো

হর! হর! হর! ঝ্যাং

মাসিমা হাঁ হয়ে গেছেন। ওপর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওখানে কী হচ্ছে?’

‘দক্ষযজ্ঞ।’

‘সে তো দেখতেই পাচ্ছি।’

মেজোমামাকে দেখতে পাওয়া গেল। কাঁধে একটা ল্যাতপ্যাতে পাশ বালিশ হাতে একটা ত্রিশূল :

কোথা গেলে, কি দোষে ত্যাজিলে

প্রাণপ্রিয়ে কেন কর অভিমান?

আয় সতি, আয় রে হৃদয়ে!

বারান্দা থেকে মুখ ঝুলিয়ে বললেন, ‘বড়দা, তোমার পাশ বালিশটার কি ভাগ্য দ্যাখো, আমার কাঁধে সতী হয়েছে। উদ্ধার পেয়ে যাবে। সুদর্শন চক্র একান্ন টুকরো হবে। একান্ন সতীপীঠ।’

মাসিমাকে ডেকে বললেন, ‘ওপরে আয় না, শিব এইবার নৃত্য করবেন। হর, হর, ব্যোম, ব্যোম।’

‘ধা, ধা, ধিন ধা, ধ্যাৎ ধ্যাৎ, ত্যাৎ ত্যাৎ, তেরিকা।’

বড়মামা মাসিমাকে বললেন, ‘শাসনের অভাবে ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেল।’

ব্যাপারটা হল, দুর্গাপুজোর পর হয় যাত্রা, না হয় নাটক, একটু কিছু হবেই। এবছর হবে গিরিশচন্দ্রের দক্ষযজ্ঞ। মেজোমামাকে দেওয়া হয়েছে মহাদেবের ভূমিকা। ভুঁড়ি ছাড়া মহাদেব ভাবাই যায় না। নাটকের ডিরেকটার প্রিন্স কাকাতুয়া। ছদ্মনাম। নাম করতে হলে নামের বাহার থাকা চাই। সিনেমার লাইনে সত্যজিৎ বিশ্বসেরা। প্রিনস নাটকের জগতে এক নম্বর হতে চাইছেন।

তিনটে ভুঁড়ি মাপা হয়েছিল, মেজোমামা ফার্স্ট। অভিনয় কেমন করবেন, সে পরের কথা। বাঘছাল প্রিন্ট ভেলভেটের কাপড়। গলায় দড়ির সাপ। তামাটে রঙের জটা। সর্বাঙ্গে পাউডার। কপালে ত্রিনয়ন। হাতে ত্রিশূল। স্টেজ জুড়ে নৃত্য। ডায়ালগ বিশেষ কিছু নেই, কেবল, সতী দে, সতী দে, আমার সতী দে। ড্যানস ডিরেকটার পল্টুদা সাবধান করে দিয়েছেন, ‘মেজদা, আর যাই করুন, পড়ে যাবেন না। মনে রাখবেন, পালার নাম দক্ষযজ্ঞ। মহাদেব পতন নয়। আপনার পা-দুটো গদার মতো, ফ্রিলি খেলে না। ইনকেস যদি পড়ে যান, এই ডায়ালগটা দিয়ে ম্যানেজ করবেন, ‘সতী! আমি তোমার পতি, পড়ে আছি ভূতলে, কী হবে আর এই পরান ধরে রেখে! ওঃ হো, হো হো হো।’ আমরা তখন স্টেজ অন্ধকার করে নীল আলোর ফ্ল্যাশ চালাব। স্টেজটা ভূত-প্রেতে ভরে যাবে। ভূত হওয়ার জন্যে অনেকে চাঁদা দিয়েছে। রঙের খরচ, ভূতের ড্রেসের টাকা ভূতেরাই দেবে।’

মেজোমামা বললেন, ‘পড়ে যাওয়াটাই তো ভালো!’

‘চেষ্টা করবেন দাঁড়িয়ে থাকতে। না পারলে কী করা যাবে!’

ওপরে দক্ষযজ্ঞ। নীচে ইংলিশ কাউ। এই দুই পর্বের মাঝখানে মাসিমা।

বড়মামা বললেন, ‘আমার ইচ্ছে করছে ওপরে একটা আধলা ইট নিক্ষেপ করি!’

মাসিমা বললেন, ‘সেটা তোমারই মাথায় নেমে আসবে—গ্র্যাভিটি।’

চুমকি বললে, ‘শাঁখে একটা ফুঁ মেরে দেখব। ফার্স্ট ফুঁটা মিস করে।’

‘একদম না। তখন বাজাবি। জাস্ট ইন টাইম।’

মাসিমা সব সময় শান্ত। একপাশে গুছিয়ে বসে জিগ্যেস করলেন, ‘গরুটা থাকবে কোথায়?’

বড়মামা বললেন, ‘ঘোড়া হলে চাবুকের অভাব হয় না।’

‘এটা ঘোড়া নয় গরু।’

‘কোথায় থাকবে, তোমরাই সেটা ঠিক করবে। গরু তো আমার একার নয়। পরিবারের সকলের। পারিবারিক সম্পত্তি। আমরা যেমন তোর সদাব্রতে স্থান পেয়েছি, স্নেহ-ভালোবাসায় জর্জরিত হচ্ছি, গরুটাও সেইরকম তোর কোলে স্থান পাবে। মা মা বলে ডাকবে।’

মাসিমা শুনলেন? গম্ভীর মুখ। একটাও কথা বললেন না।

বড়মামা বললেন, ‘আমাদের ঠাকুরদার আমলে এই বাড়িতে পঞ্চাশটা গরু ছিল। গোবরের পাহাড়। তাল তাল গোবর।’

মাসিমা বললেন, ‘তাঁর ঠাকুরদা রাখাল ছিলেন। পাঁচশো গরু চরাতেন।’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, সত্য, ত্রেতা, এই দুটো বিরাট কাল দ্বাপরে এসে কি দেখল রাখাল ভগবান বাঁশি বাজাচ্ছেন, আর শুধু গরু। গরু আর গরু।’ মেজোমামা তাঁর রিহার্সালের দল নিয়ে নীচে নেমে এলেন।

‘প্রবলেমটা কি?’

‘বিলিতি গরু আসছে নিউজার্সি থেকে।’

‘নিউজার্সি আবার বিলেত হল কবে? বিলেত হল ইংল্যান্ড। যাক খুব আশার কথা। ওরা বলছিল, স্টান্ডার্ড মহাদেবের ভুঁড়ির সাইজের চেয়ে আমারটা এখনও এক ইঞ্চি কম আছে। তাহলে আজ থেকেই ক্ষীর খাওয়া শুরু করি। জার্সি তেইশ কেজির কম ছাড়বে না। পাঁচ কেজি আমি পেতেই পারি। আমি শুধু পরিবারের গর্ব নই, আমি দেশ-গৌরব।’

বড়মামা খুব শান্ত গলায় জিগ্যেস করলেন, ‘কী কারণে?’

‘অনেক অনেক কারণ। শুনলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। নিজের ঢাক নিজে পেটাতে চাই না বন্ধু। বিনয়ই আমার ধর্ম। শুধু এইটুকু জেনে রাখ, আমার পরিচয়েই তোমার পরিচয় হবে। দক্ষযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসবে এ অদ্বিতীয় ইন্টারন্যাশনাল মহাদেব। ঈর্ষা কোরো না ভাই। ডাক্তারি একটা বিদ্যে। সে যে কেউ হতে পারে। রুগি-মারা-বিদ্যে। প্রতিভা সম্পূর্ণ আলাদা একটা জিনিস। গিফট অফ গড। হিংসা খুব খারাপ জিনিস। ভুসভুস করে চুল উঠতে শুরু করেছে। টাক দেখা দিয়েছে।’

‘তুই টাকের কি জানিস? একে বলে, জ্ঞানীর টাক—উইজডাম বল্ডনেস। কত কমের টাক আছে জানিস? জ্ঞানীর টাক, ধার্মিকের টাক, টাকার টাক, রাজনীতির টাক, মামলাবাজের টাক, ভোগীর টাক শয়তানের টাক। নির্বোধের চুল, ডাকাতের চুল, যাত্রার দলের অধিকারীর চুল। তুই একটা দিশি গরু। তোর গোয়ালে থাকা উচিত।’

‘তুমি একটা ষণ্ড।’

‘মহাদেবের বাহন।’

‘দ্যাটস রাইট! আমার বাহন।’

‘আমি রিয়েল মহাদেবের রিয়েল ষণ্ড—নন্দী বুল। একবার গুঁতিয়ে দিলে ওই ধামা পেট ফেঁসে যাবে।’

‘তোর দুধ আমার চাই না।’

‘আমি নর্দমায় ঢালব, তবু তোকে দেব না, না, না, না।’

‘আমি একটা পাটনাই গরু কিনব।’

‘তিন সের দুধ। ছিড়িক ছিড়িক।’

‘জার্সির জল নয়, বৃন্দাবনের ক্ষীর।’

প্রিনস বললে, ‘রেকর্ড হচ্ছে। খাঁটি, এক নম্বর দক্ষযজ্ঞ। সেদিন বাজানো হবে।’

মাসিমা বললেন, ‘এটা তো দক্ষযজ্ঞের বাড়ি। সারাদিন চলছে।’ ধরর, ঝরঝর শব্দে পেল্লায় একটা গাড়ি সামনের মাঠে এসে দাঁড়াল। বড়মামা লাফিয়ে উঠলেন, ‘ওরে, বাজা বাজা, শাঁক বাজা। ওরে মেজো কোথায় গেলি রে! তোর মা এসেছে মা। বাজা বাজা, বাজনা বাজা।’

পাড়ার বিশিষ্ট মানুষ পি. সি. সরকার, কোনও এক রাজ এস্টেটের দেওয়ান ছিলেন তাঁর ঠাকুরদা। সেই থেকে তাঁদের বিরাট বেঢপ বাড়িটাকে সবাই ‘দেওয়ান মহল’ বলে। এখন সব ভাগাভাগি হয়ে গেছে। বড়মামা সরকার বাড়ির ডাক্তার। মাঝে মাঝে সরকার বাড়ি থেকে নানারকম অদ্ভুত অদ্ভুত উপহার আসে। ‘অ্যান্টিক’।

হইহই শুনে সরকারবাবু এসেছেন। ইভনিংওয়াকের পোশাক। হাতে বার্নিশ করা ছড়ি। বেশ ফুটফুটে দেখতে। পাকা গোঁফ। ডান গালে একটা আঁচিল। জিগ্যেস করলেন, ‘ব্যাপারটা কী ভাই?’

কে বললে, ‘গরু’।

বয়েস হয়েছে। কানে কম শোনেন।

বললেন, ‘সরু? কি সরু? কাপড়?’

‘সরু নয় গরু।’

গাড়ির পেছনের ডালাটা খোলা হয়েছে। ভেতরে সেই মস্ত গরু। সরকারমশাই বললেন, ‘তাই বলো? গরু। জার্সি। এ তো রাখা মুশকিল। প্রচুর যত্ন চাই। খরচ আছে। এসব হাঙ্গামা কে সামলাবে? ডাক্তার! এ খেয়াল তোমার হল কেন?’

‘ওই যে আগরওয়াল পাঠিয়েছে।’

‘কে পাঠিয়েছে?’

চিৎকার করে বলতে হল, ‘আগরওয়াল।’

গরুর সঙ্গে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা বললেন, ‘গরু নামতে চাইছে না।’

আর একবার বললেন, ‘খিঁচো।’

বড়মামা মেজোমামাকে বললেন, ‘তোর গলাটা খুব মিষ্টি। আদর করে ডাক না, সোহাগী এসো এসো।’

সরকার মশাই যতই হোক দেওয়ানের রক্ত শরীরে। অনেক কিছু জানেন। মাসিমাকে খুব ভালোবাসেন। নিজের মেয়ের মতো। মাসিমার কাছে সরে এসে বললেন, ‘অতি উত্তম ডাক্তার, কিন্তু আবেগে চলে। এখন আইন হয়েছে, লোকালয়ে গরু রাখা যাবে না।’

এদিকে গরু নামছে না। খাড়া দাঁড়িয়ে আছে। মেজোমামা অনেকক্ষণ ধরে হর হর মহাদেব করছেন। ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

বড়মামা হঠাৎ জিগ্যেস করলেন, ‘গাড়িটার কত দাম?’

‘কেন, কী করবেন?’

‘আমার তো একটা গোয়ালের দরকার। এটা যখন ওর পছন্দ হয়েছে, এটাকেই গোয়াল করা যেতে পারে।’

কে একজন বললে, ‘আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’

গরুর দলে পল্টুদা ছিল। ভালো ছেলে কাজের ছেলে। আগরওয়াল গ্রুপে কাজ করে। ক’মাস আগে বিয়ে করেছে। মাসিমা একটা বেনারসি দিয়েছেন। পল্টুদা মাসিমাকে বললে, ‘দিদি, এ গরুটার ডিফেকট আছে। কোনও দিন দুধ দেবে না।’

‘দাদাকে তো চেনো। একটা ব্যবস্থা করো ভাই।’

পল্টুদার অন্যরূপ বেরল। এবার লিডার। বেশ জোর গলায় বললে, ‘বড়দা, এ গরু এখানকার নয়। তাই নামছে না।’ এইবার গাড়িওয়ালাদের বললে, ‘ওঠাও, চলো।’

গাড়ি স্টার্ট নিল। চলে যাচ্ছে। বড়মামা ছেলেমানুষের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। চুমকি দু-হাতে গলা জড়িয়ে ধরে বলছে, ‘কেঁদো না, কেঁদো না। আমি বড় হয়ে তোমাকে এর চেয়েও একটা ভালো গরু কিনে দেব।’

মেজোমামারও খুব দুঃখ হয়েছে বড়দার জন্যে। আসলে দুটো মানুষই তো ভীষণ ভালো। মেজোমামা বলছেন, ‘বড়, আমি সোনপুরের মেলা থেকে তোকে গরু আনিয়ে দেব। আমার ছাত্র রাজেশ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে।’

একটা সাদা অ্যামবাসডার ঘচ করে থামল। ডক্টর বোস।

‘মুখার্জি! তুমি এখনও বসে আছ? তুমিই আজকের প্রধান বক্তা।’

‘কোথায়?’

‘সে কী? ভুলে মেরে দিয়েছ! আই. এম. এতে তুমি জন্ডিসের ওপর বলবে। চলো চলো।’