» » জিরো জিরো জিরো

বর্ণাকার

রণধীর স্মার্ট হয়ে হাসিমুখে ঢুকল। নমস্তে করে বসল। কিষাণ সিং তার প্রাথমিক পরিচয় যথারীতি নিয়ে জেরাপর্বে চলে গেলেন। লক্ষ্য করলুম, দিব্যর সঙ্গে ওর ঝগড়া বা দীপ্তিসংক্রান্ত কোনও প্রশ্নই করছেন না। আজ সকালের ঘটনাই তুলছেন।

—আচ্ছা মিঃ চোপরা, আপনি যখন পুবদিকে বড় রাস্তায় গেলেন, সেখান থেকে আপনাদের মার্ডার ফানের জায়গাটা কি দেখা যচ্ছিল?

—হ্যাঁ। কারণ ওখানটা উঁচুতে। এই টিলার দক্ষিণ অংশ ওটা। আর আমি ছিলুম অনেকটা ফাঁকা বড় রাস্তায়। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল জায়গাটা।

—কাকেও দেখতে পেয়েছিলেন। মানে—আপনি চলে আসার পর?

—হ্যাঁ।

কর্নেল সোজা হয়ে বসলেন। কিষাণ সিং বললেন—দেখতে পেয়েছিলেন?

—হ্যাঁ।

—সে কে?

—চিনতে পারিনি। সবুজ ফুলহাতা জামা ছিল গায়ে। প্যান্ট দেখা যাচ্ছিল না ঝোপের আড়ালে। মুখটা ওপাশে ছিল বলে দেখতে পাইনি। বেশ মোটাসোটা লোক।

—মানে ফ্যাটি?

—হ্যাঁ। প্রকাণ্ড। তবে বেঁটে বলেই মনে হচ্ছিল।

—তাকে দেখে আপনার কিছু মনে হয়নি?

—হয়েছিল। ভাবলুম, খেলাটা বরবাদ হয়ে গেল হয়তো। এক্ষুণি হুলুস্থুল বাধবে। কিন্তু লোকটা ঝোপের আড়ালে ডুবে গেল। তখন ভাবলুম, কেউ বেড়াতে বেরিয়েছে। উপত্যকার দিকে সোজাসুজি নেমে গেল। তারপর আর তাকে দেখিনি।

—সবুজ ঝোপঝাড়ের মধ্যে সবুজ জামা! চোখে পড়া তো অস্বাভাবিক!

চোপরা একটু ইতস্তত করে বলল—না, মানে—তখন আমার ওখানেই মন পড়ে ছিল কি না! দ্যাটস ন্যাচারাল। তাই না স্যার?

কিষাণ সিং জবাব দিলেন না। কর্নেল বললেন রাইট, রাইট।

তাছাড়া স্যার, ব্যাপারটা আমার খুব গোলমেলে লাগছিল।

কর্নেল বললেন—কেন বলুন তো?

দীপ্তির মার্ডার মোটিভটা শুনে যদিও খুব ফানি মনে হয়েছিল। পরে মনে হলো—দীপ্তি কি কোনও ইঙ্গিত দিচ্ছে। মানে আমাকেই যেন

—ইঙ্গিত? কিসের?

—মানে, অয়েল রিফাইনারিতে সাবোটাজের। দ্যাটস অলসো ন্যাচারাল।

—ঠিক বলেছেন। কিন্তু দীপ্তির সঙ্গে তো আপনার ইদানিং ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল?

—হ্যাঁ। একটু একটু। আই লাইকড হার।

—দুজনে একসঙ্গে ঘুরেছেন, কিংবা নিভৃতে মেলামেশার সুযোগ পেয়েছেন?

—হুঁউ। দ্যাটস ন্যাচারাল।

—ওইসব সময় দীপ্তি আপনাকে অনায়াসে তেমন কিছু গুপ্ত ব্যাপার থাকলে জানাতে পারত?

—তা তো পারতই।

—কিন্তু জানায়নি। তাই না?

—না। সম্ভবত গত রাতেই ও তেমন কিছু আঁচ করে থাকবে। তাই…।

—এক মিনিট। তাহলে তো আজ ভোরে ওকে যখন নিয়ে এবাড়ি এলেন, তখন বলতে পারত আপনাকে?

ও চাপা মেয়ে ছিল। কিংবা হয়তো সাবোটাজকারীদের কেউ গতরাতে বারান্দায় আমাদের মধ্যে উপস্থিত ছিল। তাকেই দীপ্তি সতর্ক করতে চেয়েছিল।

মিঃ চোপরা! আপনি বয়সে তরুণ হলেও খুব বুদ্ধিমান। খুবই যুক্তিপূর্ণ কথা বলেছেন। কিন্তু ভেবে দেখুন, কারা উপস্থিত ছিল তখন? জয়ন্তবাবু, দিব্য, রত্না আর সোনালী। এখন বলুন—আপনার ধারণা অনুযায়ী কে সাবোটাজকারী দলের লোক হতে পারে? খুব ভেবে বলবেন কিন্তু।

চোপরা একটু ভেবে নিয়ে বললে—আমি কিন্তু স্ট্রেটকাট কথাবার্তা বলা পছন্দ করি। এজন্যই দিব্যের সঙ্গে আমার মাঝে মাঝে বেধে যায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দিব্যকেই সতর্ক করতে চেয়েছিল দীপ্তি। এই সঙ্গে লক্ষ্য করবেন, দিব্যের সঙ্গে ওর বিয়ে প্রায় ঠিক। অথচ ও দিব্যকে এড়িয়ে চলছিল ইদানিং। অতএব আমার ডিসিশানে দাঁড়াচ্ছে, দীপ্তি দিব্যের কার্যকলাপ টের পেয়েই ঘৃণা করে সরে এসেছিল।

—এবং আপনার ঘনিষ্ঠ হয়েছিল!

—কারেক্ট স্যার। ভেরি ভেরি কারেক্ট। দিব্যের উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আমি। আমি ছাড়া দিব্যের সঙ্গে লড়ার তাকত এখানে কারো নেই, দীপ্তি জানত। কিংবা এও হতে পারে, আমি অয়েলরিফাইনারির ডিরেক্টরের পি.এ.। আমার সঙ্গে মেশার মধ্যে দীপ্তির একটা উদ্দেশ্য থাকতেও পারে। তা হলো- দিব্যকে সতর্ক করে দেওয়া সাবধান, জানি কর্তৃপক্ষের কানে তুলে দিতে পারি! ইজ ইট ইল্লজিক্যাল?

কর্নেল সায় দিয়ে বললেন রাইট, রাইট। মিঃ সিং! এবার আপনি কিছু জানতে চাইলে প্রশ্ন করুন।

কিষাণ সিং বললেন না। আমার প্রশ্ন নেই। নেক্সট রত্না চ্যাটার্জি।…