বৃন্দা
ভোরবেলা একটা বদখত স্বপ্ন থেকে ঘুম ভেঙেছে বৃন্দার। স্বপ্নে ছিল থ্রি উইচেস, লোনলি ওয়াইফ, কনট্রোল ফ্রিক, উওম্যান ফ্রাইডে আর সুপ্রভাত। সুপ্রভাত আর কনট্রোল ফ্রিক অসিযুদ্ধ করছিল। থ্রি উইচেস ঝাঁটায় চড়ে উড়তে উড়তে ছড়া কাটছিল। লোনলি ওয়াইফ আর উওম্যান ফ্রাইডে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, ‘গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস! গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস!’
এইরকম বিদঘুটে স্বপ্ন দেখে মনখারাপ হওয়ার কী আছে? ফার্স্ট এমবিবিএস পরীক্ষা দেওয়ার পরে সে আত্মহত্যা করেনি বা পাগল হয়ে যায়নি। শুধু দুঃস্বপ্ন দেখেছে। এ নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। বিছানায় পাশ ফিরে মোবাইলে সময় দেখল বৃন্দা। সকাল ছটা বাজে। এত সকালে সে ঘুম থেকে ওঠে না! তা হলে ঘুম কেন ভেঙে গেল! মোবাইলের স্ক্রিনে আজকের তারিখ দেখে বুক ধড়ধড় করে উঠল। তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে বসল বৃন্দা। আজ ছাব্বিশে সেপ্টেম্বর। আজ ফার্স্ট এমবিবিএসের রেজাল্ট বেরোবে! ওরে বাবা রে! আর শুয়ে থাকা সম্ভব নয়।
গত একমাস দিব্যি ছিল সে। এক লাইনও পড়াশুনো করেনি। খেয়েছে, ঘুমিয়েছে, সিনেমা দেখেছে, মোবাইলে বন্ধুদের সঙ্গে গপপো করেছে, ল্যাপটপে সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট ঘাঁটাঘাঁটি করেছে।
অভির সঙ্গে একদিন দেখা করেছিল। কলেজে নয়। তাহলে স্যামি জেনে যেত। দেখা হয়েছিল মাল্টিপ্লেক্সে। অভি আগের থেকে দুটো টিকিট কেটে হলের ভিতরে ঢুকে বসেছিল। সুলতান গাড়ি করে বৃন্দাকে শপিং মলে পৌঁছে দিয়ে একটা টিকিট কেটে তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। দুশো টাকার টিকিট। নষ্ট করতে খুব গায়ে লাগে। কিন্তু কী আর করা যাবে? বৃন্দা হলে ঢুকতেই অভি হাত নেড়ে ডেকে নিয়েছিল। অভির পাশে বসে বৃন্দা বলেছিল, ‘মুখটা প্যাঁচার মতো করে বসে আছিস কেন? মুড অফ?’
‘কে বলেছে?’ পর্দার দিকে তাকিয়ে বলেছিল অভি। বেছে বেছে একটা আর্ট-হাউস বাংলা ছবির টিকিট কাটা হয়েছে। বিদেশে পুরষ্কার পাওয়া, স্বদেশে সাংঘাতিক ফ্লপ ছবি। শুক্রবার ছবি রিলিজ করেছে, সোমবারের মধ্যেই শো-টাইম চেঞ্জ করে সারা দিনে একটা শো রাখা হয়েছে। আজ হলে সাকুল্যে তিরিশজন দর্শক। আর্ট ফিল্মে কথাবার্তা আর মিউজিক কম থাকে। বেশির ভাগ শুটিং ইনডোরে হয়। ছবি চলার সময়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে অসুবিধে হয় না।
‘কে আবার বলবে? মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।’ জবাব দিয়েছিল বৃন্দা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভি বলেছিল, ‘মনে হচ্ছে অ্যানাটমিতে ঝাড় খাব।’
‘সেটাই কারণ? না অন্য কোনও কারণ আছে?’ অভির নরম আঙুল নিজের হাতে নিয়েছিল বৃন্দা। রোগা রোগা, সরু আঙুল। নির্লোম হাত। অন্ধকারে মেয়েদের হাত বলে মনে হয়। বৃন্দা হাত ধরায় টেনশানের চোটে কুলকুল করে ঘামছে। বৃন্দা সন্তর্পণে হাত ছেড়ে দিয়েছিল। একটু রিল্যাক্সড হোক বেচারি!
‘অন্য একটা কারণও আছে। সেটা পারিবারিক।’
‘নির্ঘাৎ তোর দাদা! বিলুদা পলিটিকস নিয়ে বড্ড বাড়াবাড়ি করছে।’
‘দাদা না! বাবা।’
‘তোর বাবাও পলিটিকস করে?’
‘দাদার থেকে বেশিই করে। কিন্তু সেটা ইস্যু নয়। বাবা বোধ হয় কোনও চক্করে ফেঁসেছে।’
‘কী চক্কর বল তো?’
‘রোজ দেরি করে অফিস থেকে বাড়ি আসে, আর বলে কল শো ছিল।’
‘কল শোটা কী জিনিস?’
‘উফ! নাটক নাটক! আমার বাবা অফিসের ইউনিয়নের কালচারাল সেক্রেটারি।
‘টিনটিনদার মতো?’
‘হ্যাঁ। তুই চুপ কর। আমাকে বলতে দে।’ বৃন্দার হাতে চিমটি কেটে থামায় অভি। বৃন্দা এই রকমটা আশা করেই সমানে ভুলভাল প্রশ্ন করছিল। অভি বৃন্দার হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়নি। বৃন্দা কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল।
অভি আপন মনে বকবক করছে, ‘বাবাদের নাটকের দল জীবন সংগ্রাম নিয়মিত বিভিন্ন জায়গায় কল শো করে। কয়েকদিন আগে জগদ্দলে শো করতে গিয়েছিল। আমাদের বলল, ট্রেনে করে ফিরেছে। অথচ আমি আর মা টিভিতে দেখলাম, সে দিন ট্রেন অবরোধ ছিল। পরে আমি খবর নিয়ে জেনেছি, ওই দিন জগদ্দলে বাবাদের ইউনিয়নের থেকে কোনও নাটকের শো ছিল না।’
‘তা হলে?’
‘আমি জানি না। মায়ের সন্দেহ বাবা কোনও মেয়েছেলের চক্করে পড়েছে।’
‘ও আবার কী ল্যাঙ্গোয়েজ? মেয়েছেলে?’ অভির হাতে থাপ্পড় কষায় বৃন্দা। ভেবেচিন্তে, মৃদু থাপ্পড়। যদি হাত সরিয়ে নেয়!
না। সরায়নি। শুধু বলল, ‘সরি! আমি কথাটাকে রি-ফ্রেজ করছি। মায়ের সন্দেহ, বাবা কোনও মহিলার চক্করে পড়েছে। ইনফ্যাক্ট, এন্টালিতে কল শোয়ের সময় ঋষিতা নামে একটা মেয়ে বাবার মোবাইল ধরে আমার সঙ্গে কথা বলেছিল।’
‘কী বলেছিল?’
‘বলেছিল যে বাবা এখন স্টেজে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি কে বলছেন। উত্তরে মেয়েটা বলেছিল, ওর নাম ঋষিতা। মৌলালিতে থাকে। ওরাই স্ট্রিট থিয়েটার অর্গানাইজ করেছিল।’
‘তোর কথা শুনে মেয়েটাকে ঠিকঠাক বলেই মনে হচ্ছে। ওকে সন্দেহ করছিস কেন?’
‘আমি সন্দেহ করিনি। মা করেছে। মা একটু প্যারানয়েড আছে।’
‘সব মানুষই অল্পবিস্তর প্যারানয়েড।’
‘মায়ের সন্দেহ, ঋষিতাই সেই মহিলা, যার চক্করে বাবা ফেঁসেছে।’
‘সন্দেহটা মিটিয়ে ফেল। ঋষিতার খোঁজপাত্তা লাগা।’
‘কী করে? কাগজে বিজ্ঞাপন দেব? না এন্টালি থানায় যাব?’
‘বোকার মতো কথা বলিস না। দময়ন্তীকে ফোন কর। ওর বাড়ি এন্টালিতে।’
‘এন্টালি বড় জায়গা। লাখলাখ লোকের মধ্যে ঋষিতাকে খুঁজে বার করা সোজা নাকি?’
‘তুইই তো বললি মেয়েটা স্ট্রিট থিয়েটার অর্গানাইজ করেছিল তার মানে নাটকের মেয়ে। প্লাস জনমোর্চা করে। একে ট্রেস করা শক্ত নয়।’
‘বাঃ। এটা ভালো বলেছিস।’ দু’হাতে বৃন্দার কনুই চেপে ধরে ধন্যবাদ জানায় অভি।
ওই একদিনই অভির সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ফোনে রেগুলার কথা হলেও মনোজ বা ঋষিতার প্রসঙ্গ ওঠেনি। দময়ন্তীর সঙ্গে এই নিয়ে অভি কথা বলেনি। সবাইকে বাড়ির কেচ্ছা বলা যায় না। যদিও, মনোজ রেগুলার দেরি করে ফিরছেন। অরুণা ডিপ্রেসনে ভুগছেন। বিলুর ধারণা অরুণার অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার হয়েছে। দিনরাত হাত-পা ধোয়, দরজা-জানলা বন্ধ আছে কি না চেক করে।
অভির জন্য কষ্ট হয় বৃন্দার। তার ওপরে আজ ফার্স্ট এমবিবিএস-এর রেজাল্ট বেরোবে। পরীক্ষা কেমন দিয়েছে কে জানে! ঝাড় না খেয়ে যায়!
বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গেল বৃন্দা। এই সময় লেকের এই দিকটা একদম নির্জন থাকে। আর কয়েকদিন বাদে পুজো। এই এলাকায় বড়বড় দুটো পুজো হয়। মুদিয়ালি আর শিবমন্দির। মুদিয়ালির পুজোটা তাদের বাড়ির গায়েই হয়। স্যামি অন্যান্য বারের মতো এবারও পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট। উদ্যোক্তারা প্রত্যেক বছর স্যামিকে সেক্রেটারি করতে চায়। স্যামি সময়ের দোহাই দিয়ে কেটে বেরিয়ে গেলেও অনেকগুলো কর্পোরেট স্পনসর জোগাড় করে দেন।
রাস্তায় বাঁশ পড়তে শুরু করেছে। ওপর থেকে বৃন্দা দেখল, সুপ্রভাত সুলতানের হাতে একগাদা কাগজ আর ম্যাগাজিন দিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলে গেল। এই ঝুনুই স্বপ্নে স্যামির সঙ্গে লড়াই করছিল। স্বপ্নটা মাথায় আসতে ফিক করে হেসে ফেলে বৃন্দা। যত্তো সব পাগলামি।
মন্দিরা ঘুম থেকে উঠে চা বানাচ্ছেন। বৃন্দাকে বলল, ‘চা খাবি?’
‘দাও।’ হাই তুলে চেয়ারে বসে বৃন্দা বলে, ‘মা, তুমি কিন্তু বেশ মুটিয়েছ।’
‘বলছিস?’ একগাল হেসে বলেন মন্দিরা।
‘এতে আনন্দের কী আছে?’ বিরক্ত হয়ে বলে বৃন্দা, ‘গত এক মাসে খাবার পাতে বেশি মাখন খেয়ে আর দুপুরে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তুমি না হোক দশ কেজি ওয়েট গেইন করেছ।’
‘তুই একদম ঠিক গেস করেছিস। পাক্কা দশ কেজি। এখন আমার ওজন বাহাত্তর। এটাকে পঁচাত্তর অবধি তুলে মেনটেন করব।’ বৃন্দাকে চা দিয়ে বলেন মন্দিরা।
‘পাগল নাকি? তোমার পেটে টায়ার দেখা যাচ্ছে। খাওয়া কমাও। এক্সারসাইজ করো।’ মন্দিরাকে ধমক দেয় বৃন্দা।
মন্দিরা নিজেও এককাপ চা নিয়েছেন। চেয়ারে বসে বললেন, ‘বিধবাপুকুর উপন্যাসে বেদানা দাসীর বর্ণনায় বিপিনদা লিখেছিলেন, ‘অল্প বয়সে বিধবা হইবার বড় জ্বালা। তাহা বেদানাকে দেখিয়া বুঝা যায়। বাড়ন্ত শরীরে সর্বদা খাইখাই ভাব। পাঠক, ভুল বুঝিবেন না। এ ক্ষুধা পেটের ক্ষুধা। জঠরাগ্নি নির্বাপণ করিতে বেদানা যাহা পাইত মুখে পুরিত। ফলতঃ, মধ্য চল্লিশে সে বিলক্ষণ পৃথুলা। তাহার ঊরুতে স্নেহ জাতীয় পদার্থ, কটিদেশে চর্বি, নিতম্বে চর্বি, মায় দুই বাহু চর্বির ওজনে দুলদুল করিতে থাকে। দেখিয়া কুৎসিত কদাকার ময়দার তাল বলিয়া ভ্রম হয়।’
চা খেতে খেতে বিষম খায় বৃন্দা। ‘মনোতোষ ঘোষ বিধবাপুকুর গপপোটা ফিলিম করছে নাকি?’
‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’ আনন্দে ডগোমগো মন্দিরার মুখ।
‘তুমি হিরোইন?’
‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’
‘প্রোডিউসার পেয়েছে?’
‘পেয়েছে। আজ একটু বাদেই মনোতোষদা আর প্রোডিউসার আমাদের বাড়ি আসছেন। স্ক্রিপ্ট ন্যারেশান করতে।’
‘ওরেব্বাবা! স্ক্রিপ্টও রেডি?’
‘মনোতোষদা গত একবছর ধরে চিত্রনাট্যর খসড়া করেছে। এটা নাকি টুয়েন্টি ফিফথ ড্রাফট।’
‘প্রোডিউসারটি কে? নির্ঘাত অগাবগা কেউ! কয়লার ব্যবসা থেকে কালচারের লাইনে আসছে।’
‘তুই আমাকে এত আন্ডার এস্টিমেট কেন করছিস বৃন্দা? আমি একসময় টলিউডের এক নম্বর হিরোইন ছিলাম। তোর জন্যই স্পটলাইট ছেড়েছি। তুই যদি এরকম বলিস…’
মন্দিরার মুখে আষাঢ়ের মেঘ। দেখে মনে হচ্ছে আর কিছু বললেই কেঁদে ফেলবে! বৃন্দা চেয়ার থেকে উঠে মন্দিরাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘সরি মা। আসলে তোমার অ্যাক্টিং নিয়ে আমরা হাল্কা চালেই কথা বলি। এটা অন্যায়। আর কোনও দিনও এই ভুল হবে না। এবার বলো প্রডিউসার কে?’
‘মায়াকম। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পরে এবার ওরা অডিও-ভিজুয়াল মিডিয়ায় ঢুকছে। বাংলা সিনেমায় কর্পোরেট হাউসের এনট্রিও এই প্রথম। ওঁদের পলিসি হল, সাহিত্যভিত্তিক ছবি করবেন। পাশাপাশি রুচিসম্মত ফর্মুলা ফিল্মও বানাবেন। ওঁদের সিইও হৈমবতী সান্যাল এই ছবির প্রডিউসার।’
চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বৃন্দা বলল, ‘বাবা জানে?’
ঝুনুর মা এসে গেছে। তাকে জলখাবারের নির্দেশ দেওয়ার সময়ে মন্দিরা মুচকি হাসলেন। ‘তোর বাবাকে এখনও বলিনি। খেতে বসার সময়ে বলব।’
বৃন্দা নিজের ঘরে দৌড়য়। স্নান করে ফেলা যাক। আজ তাড়াতাড়ি কলেজে যেতে হবে। ভয়ের চোটে পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছে। যদি সাপ্লি হয়, তাহলে পাহাড়প্রমাণ বই আবার পড়তে হবে। বাবা গো! ওয়াক তুলতে গিয়ে নিজেকে সামলায় বৃন্দা। নিজের ঘরে ঢুকতে গিয়ে মাস্টার বেডরুমে উঁকি মারে। স্যামি ঘুম থেকে উঠে খাটে বসে আছেন। মুখ দেখে বোঝা যায়, হ্যাংওভার কাটেনি।
স্নান করে পোশাক পরে রেডি হয়ে খাবার টেবিলে এল বৃন্দা। সাড়ে আটটা বাজে। স্যামি এখনও বিছানা ছেড়ে ওঠেননি। আজ স্যামির গাড়িতে যাওয়া হবে না। ঝুনুর মা চিজ স্যান্ডুইচ বানিয়েছে। এটা বৃন্দার প্রিয় খাবার। কিন্ত আজ মুখে রুচি নেই। একটা স্যান্ডুইচ মুখে পুরে গরুর মতো জাবর কাটতে কাটতে বলল, ‘ওঁরা কখন আসবেন?’
‘বিকেল সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যে। তুই ততক্ষণে চলে আসবি তো?’
‘হুম।’ মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে ঘাড় নাড়ে বৃন্দা। এক চুমুক কফি দিয়ে স্যান্ডুইচ নরম করে গিলতে গিলতে বলে, ‘কী রেজাল্ট হবে কে জানে! পাস করে গেলে ওঁদের সামনে আসব। ঝাড় খেলে মুড অফ থাকবে। তখন আমার কাছ থেকে সোশাল ভিজিট এক্সপেক্ট কোরো না।’
মন্দিরা সামান্যক্ষণ বৃন্দার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘টেনশান করিস না। তোর রেজাল্ট ভালো হয়েছে। আর একটা স্যান্ডুইচ খা।’
মন্দিরার দিকে তাকিয়ে বৃন্দা বলল, ‘বাবা বলেছে?’
‘হ্যাঁ। তোকে বলতে বারণ করেছিল। তোর মুখ-চোখের অবস্থা দেখে মায়া হল। তাই বলে দিলাম। বাবাকে বলিস না। খুব রেগে যাবে।’
‘বলব না।’ আর একটা স্যান্ডুইচ নিয়ে বৃন্দা বলে, ‘বাই এনি চান্স, বাবা আমার হয়ে ক্যাচ মারেনি তো?’
‘তোদের এই ”ক্যাচ” শব্দটা আমার জঘন্য লাগে। ডাক্তারদের মধ্যে চেনাশুনো থাকে বলে কেউ যদি তার কোলিগকে বলে, ‘আমার ছেলে বা মেয়েটাকে একটু দেখিস’, তা হলে সেটাকে অন্য অনেক নামে ডাকা যায়। ”ক্যাচ” কেন?’
‘কখনও ভাবিনি। এটাই চালু ডায়ালগ। তুমি শব্দ ও তার নিগূঢ়ার্থ নিয়ে মাথা ঘামাও। আমি বেরোলাম। সুলতানচাচুর যাওয়ার দরকার নেই। আমি মেট্রোয় চলে যাব।’ ব্যাকপ্যাক কাঁধে লটকে শোওয়ার ঘরে উঁকি মারে বৃন্দা। স্যামি এখন বাথরুমে। মা আর ঝুনুর মাকে টাটা করে সিঁড়ি দিয়ে টপাটপ নামতে থাকে সে।
কলেজে ঢোকার মুখে দেখা হয়ে গেল প্রবাল আর শ্রীপর্ণার সঙ্গে। দু’জনে টেনশান-টেনশান মুখ করে দাঁড়ে বসে চা খাচ্ছে। বৃন্দাকে দেখে শ্রীপর্ণা বলল, ‘বারোটায় রেজাল্ট আউট হবে। আপাতত আড়াই ঘণ্টা মুখ শুকিয়ে ঘুরে বেড়া!’
শ্রীপর্ণার পাশে বসে বৃন্দা বলল, ‘তুই হোস্টেলে ফিরলি কবে?’
‘গতকাল রাতে। সবাই ফিরে এসেছে। ফার্স্ট ইয়ার জয়েন করেছে। তাদের র্যাগিং করবে বলে সবাই, যাকে বলে, ‘ওয়েটিং উইদ বেটেড ব্রেদ!”
‘কোনও ভালো দেখতে ছেলে দেখলি?’
‘না না! সব শালা চিকনা টাইপ! চুলে জেল, লো ওয়েস্ট জিনস, ক্লিন শেভড, ফাঙ্কি টি-শার্ট পরা মেনিমুখো মেট্রোসেক্সুয়ালের পাল। না হলে গ্রামের ভেজিটেবিল। এবিসিডি বলতে গিয়ে পটি করে ফেলবে। কিন্তু কানে ঠিক ইয়ারফোন গোঁজা। একটাও আইএসআই ছাপযুক্ত মরদ দেখতে পেলাম না।’
শ্রীপর্ণার ডেসক্রিপশান শুনে বৃন্দা হিহি করে হাসে। প্রবাল বলে, ‘তোদের ছামের কালেকশান কী রকম?’
‘মেয়েরা ভালোই হয়। আজকাল গ্রাম বা মফসসলের মেয়েরাও নিজেদের ঠিকঠাক ক্যারি করে। মুখ খুললেই অবশ্য বিপদ। বলবে, ”আমি শ্যারদের খুব রেশপেক্ট করি।”‘
আবারও একপ্রস্ত হাসে সবাই। একভাঁড় চা নিয়ে বৃন্দা বলে, ‘স্টানিংলি বিউটিফুল কেউ আসেনি?’
‘মানে তোর মিস আইএমসির ক্রাউনের উত্তরাধিকারী? দিল্লির একটা মেয়ে এসেছে। কাইরা সিনহা। প্রায় ছ’ফুট হাইট। রেগুলার মডেলিং করে। ওই এবারের ক্রাউন পাবে।’ জানায় শ্রীপর্ণা।
তিনজনের আড্ডার মধ্যে প্রবাল বলল, ‘ওই যে! মোচার লিডার আসছেন।’
বৃন্দাও দেখেছিল। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হনহন করে ঢুকছে চন্দন। শ্রীপর্ণার দিকে হাত নেড়ে হাঁটা লাগাল। বৃন্দা বলল, ‘হ্যাঁ রে! আমি কি এতই কুচ্ছিত যে মুখ দেখলে দিন খারাপ যাবে?’
চন্দন দাঁড়াল। একটা সিগারেট ধরাল। এগিয়ে এসে দাঁড়ে বসে বলল, ‘আমি তোকে খেয়াল করিনি। আর, কারও মুখ দেখলে দিন খারাপ যায়, এই কথা বিশ্বাস করি না।’
‘ওসব ছাড়!’ প্রবাল চন্দনকে জিজ্ঞাসা করে, ‘রেজাল্টের কোনও খবর পেলি?’
‘আমি কী করে খবর পাব?’ চন্দন অবাক।
‘তুই শালা নেতা। প্রিন্সি তোকে ঠিক বলে দিয়েছে।’
‘ফালতু কথা বন্ধ কর।’ প্রবালকে ধমকায় চন্দন, ‘চা শেষ করে অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং চল। ওখানেই রেজাল্ট ঝোলাবে।’
‘এখন নয় বস। দুপুর বারোটায়। হাতে অনেক সময় আছে।’ শ্রীপর্ণা বলে। তার হাত থেকে ভাঁড় কেড়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে চন্দন বলে, ‘তা হলেও চল। ওখানেই সবাই বসে আছে। চল বৃন্দা। অ্যাই প্রবাল, পয়সা মিটিয়ে দে।’
‘আমি কেন মেটাব?’ কাঁইমাই করে ওঠে প্রবাল, ‘শ্রীপর্ণা আমাকে চা খাওয়াতে নিয়ে এসেছিল।’
‘শ্রীপর্ণাকে আমি হাইজ্যাক করে নিয়ে চললাম। এবার সামলা।’ শ্রীপর্ণার কবজি ধরে হাঁটছে চন্দন। পাশে পাশে বৃন্দা।
অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর সামনে মেলা বসেছে। দেড়শো ছেলেমেয়ে হাজির। আর একটু বাদেই পাস ফেলের হিসেব হয়ে যাবে। এই বাজারে কে মোচা, কে ন্যাবা, কে ছেঁদো, কে পিএমএফ-এইসব বাছবিচার উধাও। চন্দন সুরজের থেকে সিগারেট নিচ্ছে, সঞ্জয় আর অভি গল্প করছে, প্রবাল, দীপ, সাবিনা আর জেমসি সময় কাটানোর জন্য ডাম শ্যারাড খেলছে। সাবিনা আর শ্রীপর্ণা মোবাইলের ভিডিও গেমে মত্ত।
দেড়শো ছেলেমেয়ে এক জায়গায় হলে একটা ভোঁভোঁ আওয়াজ হয়। ভালো বাংলায় যাকে বলে গুঞ্জন। সেই গুঞ্জন হঠাৎ থেমে গেল। বৃন্দা দেখল, এনজি, এএম আর পিএম মিলে লাইন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এসে নোটিশ বোর্ডে চারটে এ-ফোর সাইজের কাগজ আঠা দিয়ে সাঁটাচ্ছেন। দেড়শো ছেলেমেয়ের একজনও নিজের আসন থেকে নড়ল না। কাগজ সাঁটা শেষ করে এনজি ঘুরে দাঁড়ালেন। ‘বয়েজ অ্যান্ড গার্লস, তোমাদের জানিয়ে রাখি, আমার ট্রান্সফার অর্ডার চলে এসেছে। অ্যায়াম গোইং টু নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ। অ্যানাটমিতে এ বছর সাপ্লি পেয়েছে দশজন। এই দশজনের পরীক্ষা নিতে তিন মাস পরে আমি আবার আসব। টিল দেন, গুডবাই।’
দেড়শো ছেলেমেয়ে একসঙ্গে উঠে দাঁড়াল। সুরজ এক পা এগিয়ে বলল, ‘একটা ফেয়ারওয়েল দেওয়ার চান্স দিলেন না স্যার।’
এনজি সুরজকে পাঁচ সেকেন্ড মাপলেন। বললেন, ‘না। দিলাম না। বাই।’ তারপর অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলেন।
সুরজ টুকটুক করে নোটিশ বোর্ডের দিকে এগোচ্ছিল। এমন সময় পিএম বললেন, ‘আমিও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছি। তবে তোমাদের একটা খুশির খবর জানাই। ফিজিওলজিতে এই বছরে কেউ সাপ্লি পাওনি। সুতরাং অ্যাজ আ টিচার, এটাই তোমাদের সঙ্গে আমার শেষ দেখা। ভালো থেকো।’
বিপুল করতালির মধ্যে পিএম অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর দিকে এগোলেন। এএম বললেন, ‘পার্বতী ম্যাডামের মতো সুখবর আমি তোমাদের দিতে পারছি না। বায়োকেমিস্ট্রিতে পাঁচজনের সাপ্লি আছে। আর আমি এই কলেজেই থাকছি। কাজেই তোমরা না চাইলেও দেখা হবে।’
এএম অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর দিকে এগোলেন। গোটা চত্বর জুড়ে নীরবতা। কেউ সাহস করে নোটিস দেখতে এগোচ্ছে না।
সবার আগে উঠল চন্দন। টুকটুক করে নোটিস বোর্ডের সামনে পৌঁছল। তিনপাতা নোটিসে চোখ বুলিয়ে আকাশের দিকে লাফিয়ে, ফিস্ট পাম্পিং করতে করতে চ্যাঁচাল, ‘পাস!’
এবার উঠল সুরজ। নোটিশ বোর্ডের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। নিজের রেজাল্ট দেখে কপাল চাপড়ে বলল, ‘শিট!’
মেয়েরা কেউই উঠছে না। ছেলেরা নোটিস বোর্ডের চারদিকে গুঁতোগুঁতি করছে। দশ মিনিটের মধ্যে এলাকা ফাঁকা হয়ে গেছে। এবার উঠল মেয়েরা। গোটা দশেক মেয়ে নোটিশ বোর্ডের কাছে যাওয়ার পরে জেমসি বলল, ‘ফাইটিং করে কোনও ফয়দা নেই। আমি সবারটা চেঁচিয়ে পড়লে কোনও আপত্তি আছে?’
‘না।’ ন’জন ঘাড় নেড়ে পিছিয়ে আসে।
‘ওকে দেন…’ জেমসি শুরু করল, ‘রোল নাম্বার ওয়ান, অভিজ্ঞান লাহিড়ী, সাপ্লি ইন অ্যানাটমি! শিট! হোয়াট আ ব্যাড স্টার্ট!’
বৃন্দা আড়চোখে অভির দিকে তাকাল। নোটিশ বোর্ডে গুঁতোগুঁতি করে অভি যখন রেজাল্ট দেখছিল, তখন ওর মুখ দেখেই বৃন্দা বুঝেছে, সাপ্লি আছে। বেচারি মাথা নিচু করে বসে আছে। পিঠে চন্দনের হাত রাখা। বৃন্দার উচিত এখনই ওর পাশে যাওয়া।
‘রোল নাম্বার টু, বৃন্দা ব্যানার্জি। পাস। রোল নাম্বার থ্রি…’ জেমসি মেশিনের মতো পড়ে যাচ্ছে। বৃন্দা প্রয়োজনীয় কয়েকটা তথ্য পিক আপ করল। দময়ন্তী এবং সুরজ, দু’জনেই অ্যানাটমিতে সাপ্লি পেয়েছে। শ্রীপর্ণা, সাবিনা, জেমসি—সবাই পাস। দীপ, প্রবাল আর সঞ্জয়ও পাস। দুটো সাবজেক্টই ঝাড় খেয়েছে এমন ছাত্রের সংখ্যা মাত্র দুই। তাদের মধ্যে একজন হল সুরজ।
অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর সামনেটা খালি হয়ে যাচ্ছে। অভি চন্দনের সঙ্গে হোস্টেলে যাচ্ছিল। পথ আটকাল বৃন্দা। ‘শোন। তোর সঙ্গে দরকার আছে।’
‘কী?’ নিজের পা দেখতে দেখতে বলল অভি।
‘এখন হোস্টেলে গিয়ে ডিপ্রেশান কাটাতে মাল না খেলেই নয়?’
‘আমি মদ খুব একটা খাই না।’
‘আজ খাবি। আমি সিওর। সুরজ অলরেডি গ্রুপ বানিয়ে ফেলেছে। একটু পরে তোর কাছেও আসবে। এটা আইএমসির ট্র্যাডিশান। ফেলুরা রেজাল্ট বেরোনোর দিন মদ খায়। এই অনুষ্ঠানের নাম, ‘মাল্যদান’। যারা পাস করেছে তাদের কাছে টাকা চেয়ে খায়। এ সবের মধ্যে তোকে থাকতে হবে না। বেটার অপশন হল, তুই আমাদের বাড়ি চল। পরিবেশ বদলালে মন ভালো হবে।’
বৃন্দার কথা শুনে চন্দন বলল, ‘সুপার সাকসেসফুল ডাক্তারের বাড়িতে গেলে, আর কিছু না হোক ইনফিরিয়টি কমপ্লেক্সটা জোরদার হবে। ভেবে দ্যাখ অভি।’
অভি একবার বৃন্দার দিকে তাকাল। একবার চন্দনের দিকে। চন্দন তার বন্ধু। বৃন্দা কি তার প্রেমিকা? এখনও সে নিশ্চিত নয়। তবে ওয়েল উইশার তো বটে! যাওয়া যাক না একবার ওদের বাড়ি। বৈভব দেখে মাথা ঘুরে যাবে, এমন ইমম্যাচিওর অভি নয়। তবে, এই মুহূর্তে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে না। বাড়ি গেলেই মায়ের বিষণ্ণ মুখ, রাধা আর মানদার কুচ্ছিত ঝগড়া আর বাবার দেরি করে বাড়ি ফেরা! ধুস!
চন্দনের হাত ছেড়ে, বৃন্দাকে অভি বলে, ‘চল।’
‘ঠিক হ্যায় বস! আমি চললাম।’ চন্দন হোস্টেলের দিকে এগোয়।
হোস্টেল থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি নেয় বৃন্দা। আজ বাসে-ট্রামে বাদুড়ঝোলা হয়ে যাবার কোনও মানে হয় না। বিকেলবেলা রাস্তাঘাট ফাঁকা। সাড়ে চারটের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে গেল বৃন্দা। ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া মেটানোর সময় অভি বলল, ‘তোর বাড়িতে কিছু বলবে না তো?’
‘কেন বলবে? কলেজের বন্ধু বাড়িতে এলে কোন মহাভারতটা অশুদ্ধ হয়?’ অভিকে নিয়ে শান্তিধামের গেট পার হয় বৃন্দা। সুলতান তার দিকে তাকিয়ে একগাল হাসলেও অভির দিকে ভুরু কুঁচকে তাকায়।
ড্রয়িংরুমে মন্দিরা আর মনোতোষ ছাড়া এক মহিলা বসে রয়েছেন। শাড়ি পরা মহিলাকে দেখে বৃন্দা আন্দাজ করল, ইনি হৈমবতী সান্যাল। তিনজনের কেউ তাদের পাত্তা দিল না।
মনোতোষ ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘সিন টুয়েলভ। ডে। এক্সটিরিয়ার। জমিদার অনন্তনারায়ণের এলাকায় মা কালীর মন্দির সংলগ্ন পুকুরপাড়। বেদানাদাসী ও যশোমতী। বেদানা বলছেন, ”বড়বাবু নতুন এক লেঠেল রেকেচেন। তাকে দেকেচিস?” যশোমতী বলছেন, ”কাল রাতে সব্বো অঙ্গ দিয়ে তার লাঠিখেলা দেকেচি। আজ তোমরা মনিমেন্টের নীচে চড়ুইভাতি করতে যাচ্চ, যাও। আমাকে যেতে বোলো না। মনিমেন্ট দেখার সাধ আমার মিটে গেচে।”‘
মনোতোষকে থামিয়ে হৈমবতী বললেন, ‘মন্দির সংলগ্ন পুকুর কোথায় পাবেন? রেকি করেছেন?’
‘করেছি। পুকুরপাড়ে মন্দির আছে অনেক জায়গাতেই। তবে আমি ভারজিন লোক্যালিটি চাইছি। একটা নতুন জায়গার সন্ধানও পেয়েছি। বর্গভীমার মন্দির।’
‘এই মন্দিরটা কোথায়?’
‘নতুনগ্রাম বলে একটা জায়গায়। কলকাতা থেকে একশো কিলোমিটারের মধ্যে। শুটিং ইউনিট থাকার মতো ভালো কোয়ালিটির হোটেল আছে। বেলাবেলি শুটিং শেষ হলে কলকাতায় ফেরাও করা যায়।’
‘জায়গাটার খবর কীভাবে পেলেন?’
‘এই নার্সিং হোমের যিনি মেট্রন, তাঁর বাড়ি নতুনগ্রামে। উনিই আমাকে বলেছেন। আমি স্ক্রিপ্ট লেখার মধ্যে একদিন রেকি করে এসেছি। বর্গভীমার মন্দিরে শুটিং-এর পারমিশান জোগাড় করতে অসুবিধে হবে না।’
‘ওখানে কী একটা পলিটিকাল আনরেস্ট চলছে না?’
‘সেটা প্রোডাকশান ম্যানেজার বুঝবে। এনিওয়ে, বেদানা বললেন…’
বৃন্দা অভিকে নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে যায়। ঝুনুর মা এখন নেই। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে বৃন্দা বলে, ‘মন খারাপ?’
‘খুব।’ অভির চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে।
‘কাঁদিস না।’ অভির চোখের জল মুছিয়ে দেয় বৃন্দা। অভি কাঁদতে কাঁদতে বৃন্দার হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে, ‘আরও তিনমাস অ্যানাটমি পড়তে হবে। এই চাপ আমি নিতে পারব না। আমি পাগল হয়ে যাব।’
অভির মাথা নিজের বুকে নিয়ে, বৃন্দা অভির পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। বলে, ‘চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।’