চন্দন
অ্যানাটমি প্র্যাকটিকাল শুরু হয়েছিল গত সোমবার। ফিজিওলজি প্র্যাকটিকাল শুরু হবে আজ। শনিবার। হোস্টেলাইটরা যখন বাড়ি ফেরার জন্য লাফাচ্ছে। বিশেষত চন্দন।
একশো পঁচিশ নম্বর ঘরে চন্দন অ্যাডজাস্ট হয়ে গেছে। প্রথম দিনের র্যাগিং কতটা মেন্টাল ট্রমা ঘটিয়েছে তা বোঝার উপায় নেই। রিপু আর লাটুর মতো দুই জাঁদরেল সিনিয়রের সঙ্গে দিব্যি আছে। নিজেই ঝাড়ু দিয়ে মেঝে ঝাঁট দিয়েছে, ন্যাতা দিয়ে মুছেছে, ঝুলঝাড়া দিয়ে ঝুল ঝেড়েছে। খাটের ওপরে পাঁজা পাঁজা ‘জনমত’ জমা হয়ে ছিল। কাগজ বেচে তিনশো টাকা পেয়েছে। সেই টাকার সঙ্গে আরও পাঁচশো টাকা যোগ করে শিয়ালদার ফুটপাথ থেকে সস্তার কাপড় কিনে জানলা দরজার পর্দা বানিয়েছে। রিপুর আর লাটুর বই কাবার্ডে সাজিয়ে রেখেছে। প্ল্যাকার্ডগুলো ঢুকিয়ে রেখেছে খাটের তলায়। মিটিং করার জন্য আনা চেয়ারগুলো একশো চব্বিশে শিফট করে দিয়েছে। টিনটিন আপত্তি করেছিল। চন্দন মোল্ডেড প্লাস্টিকের চেয়ারগুলো একটার ওপরে আর একটা রেখে দড়ি দিয়ে বেঁধে ওর খাটের তলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। টিনটিনকে প্রমিস করেছে, যতবার মিটিং হবে, ততবার চেয়ার পাতা ও তুলে রাখার দায়িত্ব তার।
গত এক সপ্তাহে কোনও মিটিং হয়নি। চন্দন আসার আগে একশো পঁচিশ ছিল অফিস ঘর। যে কেউ যখন খুশি ঢুকে পড়ত, যতক্ষণ খুশি থাকত, মেঝেয় সিগারেটের ছাই ফেলত, আলো পাখার সুইচ অফ না করে চলে যেত। সব সময় দরজা হাট করে খোলা। নোংরা অফিস ঘরে এইরকম আচরণ করতে বাধত না।
চন্দন যতক্ষণ ঘরে থাকে, করিডোরের দিকের জানলা ও দরজা বন্ধ রাখে। অন্তত তিনবার না ধাক্কালে দরজা খোলে না। কেউ সিগারেট খেলে অ্যাশট্রে এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘বস, এইটাতে মাল ফেলো। বাইরে ফেলো না।’ কেউ রিপু বা লাটুর খাটে ঠ্যাং তুলে বসলে বলে, ‘বস, ওরা তো এখন নেই। আমি একটু পড়ছিলাম। তুমি হেল্প করবে? হার্টের ব্লাড সাপ্লাই মাথায় ঢুকছে না। সুপিরিয়র করোনারি আর্টারির কোর্সটা একটু বোঝাও না!’
প্রতিক্রিয়া হয় নানাবিধ। দরজায় ধাক্কা দিয়ে কোনও উত্তর না পেয়ে অনেক ছেলে চলে যায়। অনেকে দমাদম লাথি মারে। বান্টি এবং সুব্রতর ফেভারিট কাজ দরজায় লাথি মারা। দরজা বন্ধ রাখার জন্য মঙ্গল এবং বুধবার সুব্রতর কাছে থাপ্পড় খেয়েছে চন্দন। বৃহষ্পতিবার রিপু দুপুরবেলায় ঘুমোচ্ছিল। তখন দুজনে মিলে লাথি মারার বদলে দরজার তলা দিয়ে বালতি বালতি জল ঢেলেছে। সঙ্গে অকথ্য গালিগালাজ। ঘুম থেকে উঠে, সদ্য সাফসুতরো হওয়া ঘরের অবস্থা দেখে রিপু খচে বোম! বান্টি আর সুব্রতকে বেদম ঝাড় দিয়েছে। তারপর থেকে দরজায় লাথালাথি বন্ধ।
সিগারেটখোরদের জন্য অ্যাশট্রের ট্রিকও সফল। মেঝেয় ছাই ফেলা বন্ধ হয়েছে। চন্দন নিজে সিগারেট খাচ্ছে বলে, মেঝে পরিষ্কার রাখার নৈতিক দায়িত্ব তার।
সিগারেট খাওয়া নিয়ে ধন্দে আছে সে। কেন স্মোক করছে নিজেই জানে না। থেকে থেকে কনফিডেন্সের অভাব বোধ করে। তখন হাত সুড়সুড় করে, ঠোঁট সুলসুল করে, মনে হয় আঙুলের ফাঁকে সাদাকাঠি থাকলে শিরদাঁড়া শক্ত হবে। একা থাকতে বোর লাগলেও সিগারেট খুব হেল্পফুল। পাঁচ-সাত মিনিট আরামসে কেটে যায়। তবে নেশার জন্য খরচ আছে। এক প্যাকেট সিগারেটের দাম পঁয়ত্রিশ টাকা। দুদিনে উড়ে যাচ্ছে। কেউ চাইলে ‘না’ বলা যায় না। চন্দন ঠিক করেছে বিড়ি ট্রাই করবে। জীবনদার ক্যান্টিনে’র ‘স্টুডেন্ট বিড়ি’ দারুণ পপুলার। বিড়ির নাম ‘স্টুডেন্ট’ কেন, এই নিয়ে জীবনদার একটা তত্ত্ব আছে। বিড়িটা ছোট। আড়াই টানে শেষ হয়ে যায়। দু’টান দেওয়ার পরে স্টুডেন্ট যখন দেখে যে টিচার আসছে, তখন হাফ সুখটান দিয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়ে।
একশো পঁচিশে যারা আড্ডা মারতে আসে তাদের পড়াশুনোর সঙ্গে সম্পর্ক নেই। সেমিস্টারের আগের পনেরো দিন গাঁতিয়ে পড়ে পাস করে যায়। চন্দনের অভ্যাস হল দিনে অন্তত ছ’ঘন্টা পড়া। যতক্ষণ সে হোস্টেলে থাকে, লেখাপড়া নিয়ে থাকে। অ্যানাটমির দাঁতভাঙা নাম মুখস্থ করতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে। সিনিয়র দাদাদের কাছে পড়াশুনো সংক্রান্ত হেল্প চাইলেই তারা খিস্তি করতে করতে পালায়।
আজ সকালে একটাই থিয়োরি ক্লাস। বায়োকেমিস্ট্রি। আরতি মুখার্জির ভাট শুনতে চন্দনের আগ্রহ নেই। সে প্রবালকে বলে দিয়েছে প্রক্সি দেওয়ার জন্য। দেড়শো জনের ক্লাসে অ্যাটেন্ডান্সের সময় যে কেউ ‘ইয়েস ম্যাম’ বলে দিলে এএমের পক্ষে ধরা সম্ভব নয়। ফিজিওলজি প্র্যাকটিকালে নার্ভ কনডাকশন সংক্রান্ত কিছু একটা হবে। সেটা পড়া যাক। স্নান খাওয়া করে ব্যাগ গুছিয়ে এগারোটার সময় বেরোবে। ক্লাস শেষ করেই হাওড়া স্টেশনের দিকে দৌড়।
ফিজিওলজি প্র্যাক্টিকাল ক্লাস অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর চারতলায়। ছ’তলা এই বিশাল বিল্ডিংটি তৈরি শুরু হয়েছিল নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে। স্বাস্থ্য দফতরের অর্কমণ্যতা, ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের কিপটেমি, পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের আলসেমি —যে কোনও একটি, দুটি, তিনটি বা সবকটি কারণেই বিল্ডিংটি শেষ হয়েছে দশ বছর বাদে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা নানা ডিপার্টমেন্টের প্র্যাকটিকাল ক্লাস এই বিল্ডিং-এ চলে এসেছে। কলেজের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিও অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এ। অবশ্য অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্ট আসেনি। এলে ক্যাডাভারের দুর্গন্ধে বাকি ডিপার্টমেন্টগুলো পালাবে।
অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর গ্রাউন্ড ফ্লোরের ক্যান্টিনে একবার উঁকি মেরে লিফটে চড়ে চন্দন। এগারোটা বাজে। দেরি করলে পিএম দাঁত খিঁচোবে।
প্র্যাকটিকাল ক্লাসরুমে ঢুকে চন্দন দেখল, জনাতিরিশেক ছেলেমেয়ে রয়েছে। শনিবার বলেই বোধহয়, বেশির ভাগ স্টুডেন্ট পালিয়েছে। পার্বতী মুখার্জি ওরফে পিএম চন্দনকে বললেন, ‘এসো। আজ আমরা হিমাটোলজি প্র্যাকটিকাল করছি।’
যা! জিভ কাটে চন্দন। বোকার মতো স্নায়ুতন্ত্র পড়ে এসেছে সে।
‘কী হল? জিভ কাটছিস কেন?’ পাশ থেকে বলে বৃন্দা।
‘আমি হিমাটোলজি পড়ে আসিনি।’
‘তো?’
‘না…মানে…আগে থেকে পড়ে না এলে আমার একটা প্রবলেম হয়!’
‘তুই আর ক্লাস টুয়েলভের ফার্স্ট বয় নেই। প্রতি ইভেন্টে ফার্স্ট হওয়ার প্রবণতা বন্ধ কর।’
‘চেষ্টা করব।’ বিড়বিড় করে চন্দন।
‘নো সাইড টক!’ পিএম ধমক দেয় চন্দন আর বৃন্দাকে। ‘আজ আমরা স্লাইডে ব্লাড স্মেয়ার টেনে সেটাকে স্টেইন করা শিখব। ব্লাড স্লাইড কেন দেখা হয়? কে বলতে পারবে?’
‘আমি,’ হাত তোলে চন্দন। ‘ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট দেখার জন্য।’
‘আর কিছু?’
চন্দন চুপ করে থাকে। এদিক ওদিক থেকে টুকরো টাকরা উত্তর আসছে। কেউ বলছে, ব্লাড ক্যানসার, কেউ বলছে থ্যালাসেমিয়া, কেউ বলছে অ্যানিমিয়া। গুঞ্জন শেষ হলে পিএম বললেন, ‘কী দেখব সেটা পরে ভাবব। কী ভাবে দেখব সেটা আলোচনা করা যাক। তোমাদের আমি দুটো গ্রুপে ভাগ করছি। একদল হবে ভলান্টিয়ার, যারা ব্লাড দেবে। অন্যরা সেই ব্লাড থেকে স্লাইড টানবে। এরপরে রোল রিভার্সাল হবে। যারা ফার্স্ট রাউন্ডে ভলন্টিয়ার হতে চাও তারা হাত তোলো!’
কেউ হাত তুলল না।
‘কেউ যখন হাত তুলছ না, আমি তাহলে ভলান্টিয়ার বেছে নিচ্ছি,’ ভ্যাম্পায়ারের মতো বাঁকা হেসে, চন্দনের দিকে তাকিয়ে পিএম বললেন, ‘ভালো ছেলে, তুমি এসো।’
‘আমার নাম চন্দন সরকার।’ এক পা এগিয়ে বলে চন্দন।
‘আমি ওর সঙ্গে থাকছি।’ বৃন্দাও এক পা এগিয়ে আসে।
‘ওকে! এই ভাবে বাকিরা দুটো গ্রুপে ভাগ হয়ে যাও।’ পিএম নির্দেশ দিলেন। ‘পরিষ্কার গ্লাস স্লাইড আর স্টেরাইল নিডল প্রতি ডেস্কে রাখা রয়েছে। কীভাবে করবে দেখে নাও।’ নিজের বাঁ হাতের তর্জনীর ডগায় ডান হাত দিয়ে তড়িৎ গতিতে সূচ ফোটালেন পিএম। তর্জনীর ডগায় ফুটে উঠল প্রবাল রঙের রক্ত বিন্দু। স্লাইডে আঙুল স্পর্শ করিয়ে আঙুল তুলে নিলেন। স্লাইডের এক প্রান্তে এখন এক বিন্দু রক্ত আঁকা রয়েছে। লিউকোপ্লাস্ট আঙুলে সেঁটে পিএম বললেন, ‘ব্যাপারটা এতটাই সহজ। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
চন্দন অবাক হয়ে দেখছিল। মহিলার যন্ত্রণাবোধ বলে কিছু নেই নাকি? নিজের আঙুলে সূচ ফোটালেন। মুখের একটা পেশিও কাঁপল না। চন্দনের তো এখনই মুখ শুকিয়ে আসছে। সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। একটা সিগারেট…
‘এই দ্যাখো! এই ভাবে ব্লাড স্মেয়ার টানতে হয়।’ স্লাইডে রক্তের পাতলা লেয়ার তৈরি করেছেন পিএম। ‘এরপর এই ব্লাড ফিল্মকে বাতাসে শুকিয়ে নিয়ে স্টেইন করব। কিন্তু সেটা পরে হবে। আগে তোমরা স্মেয়ার টানো। চন্দন, এগিয়ে এসো।’
চন্দন ইতস্তত করছিল। পিএম ধমক দেওয়ার আগেই বৃন্দা চন্দনের হাত ধরে ডেস্কের কাছে নিয়ে গেল। র্যাগিং-এর সময় যেভাবে হাত ধরে টেনেছিল, অবিকল সেইভাবে। চন্দনের হাতে নিডল তুলে দিয়ে বলল, ‘প্রিক কর!’
‘কী করব?’ নিডল নিয়ে বোকার মতো বলে চন্দন।
‘প্রিক কর! আই মিন, সূচটা আমার আঙুলে ফোটা। পিএম যেমন করলেন।’ ফিশফিশ করে চন্দনকে ধমকায় বৃন্দা, ‘এত গাম্বাট হলে কী করে হবে? তাড়াতাড়ি কর! না হলে পিএম আমাকে বলবেন তোর আঙুলে সূচ ফোটাতে।’
চন্দনের দু আঙুলের ফাঁকে সূচ থরথর করে কাঁপছে। বৃন্দার ডান হাতের তর্জনী নিজের হাতে নিয়ে সে বলল, ‘আমাকে কেন বারবার সেভ করছিস?’
‘বেশ করছি। তোর কী?’ চন্দনের হাত থেকে সূচ নিয়ে নিজের তর্জনীর ডগায় গেঁথে দেয় বৃন্দা। ব্যথায় শিউরে উঠে দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। চন্দন দেখে বৃন্দার দু’চোখের কোলে জল টলটল করছে।
‘কেন করলি এরকম?’ বৃন্দার হাত চেপে ধরেছে চন্দন।
‘ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফেরার তাড়া আছে বলে।’ চন্দনের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলে বৃন্দা, ‘তাড়াতাড়ি চারটে স্লাইড টান। আমায় লিউকোপ্লাস্ট দে। নিজের আঙুলের লিউকোপ্লাস্ট লাগা। কুইক।’
বৃন্দার প্ল্যান বুঝতে পেরেছে চন্দন। সেটা কার্যকর করতে হলে, সব কিছু দ্রুত করতে হবে। কেন না প্র্যাকটিকাল রুমে পিএম পায়চারি করছেন পেয়াদার মতো। আপাতত তিনি একদম পিছনের ডেস্কে। সেখান থেকে এখানে আসতে বিশেষ সময় লাগবে না। তার মধ্যে চন্দন কি পারবে চারটে স্লাইডে নিখুঁত স্মেয়ার টানতে?
বৃন্দার তর্জনী টেনে নিয়ে ছটা স্লাইডে ঠেকায় চন্দন। সবকটা স্লাইডেই কম বেশি রক্তবিন্দু এসেছে। দুটো লিউকোপ্লাস্ট ছিঁড়ে একটা বৃন্দার তর্জনীতে লাগায়। একটা নিজের তর্জনীতে। নতুন একটা স্লাইড বৃন্দার হাতে ধরিয়ে বলে, ‘তুই তিনটে স্মেয়ার টান। আমি তিনটে টানছি।’
স্মেয়ার টানার কাজটা যত সোজা ভেবেছিল চন্দন, তত সোজা নয়। প্রথম স্লাইডের ওপরে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। সেটা নষ্ট হল। দ্বিতীয় স্লাইডের স্মেয়ার টানতে গিয়ে চন্দন স্লাইড মেঝেয় ফেলে দিল। সেটা ভেঙে গেল। সবেধন নীলমণি তিন নম্বর স্লাইডে কোনওরকমে স্মেয়ার টানল সে। দেখে মনে হচ্ছে রক্তের ওপরে ন্যাতা বুলোনো হয়েছে। এই স্মেয়ার দেখে পিএম তাকে বেদম ধাঁতানি দেবেন!
পিএম এখন তাদের পিছনে। বৃন্দাকে প্রশ্ন করছেন, ‘কেমন স্মেয়ার টানলে দেখি?’
‘এই যে ম্যাডাম,’ টেবিল রাখা দুটো স্লাইড দেখায় বৃন্দা। পিএম বৃন্দার স্মেয়ার পর্যবেক্ষণ করে বলেন, ‘নট ব্যাড! তোমার পার্টনার কেমন স্মেয়ার বানাল? শ্রীমান চন্দন?’
‘এই যে ম্যাডাম!’ রক্তের ন্যাতা বোলানো স্লাইডের দিকে আঙুল দেখায় চন্দন, ‘খুব একটা ভালো হয়নি।’
‘কে বলল ভালো হয়নি? বিউটিফুল স্মেয়ার হয়েছে। তোমার তো চমৎকার হাত হে!’ চন্দনের স্লাইড চোখের সামনে এনে পর্যবেক্ষণ করছেন পিএম।
অবাক হয়ে তাকাল চন্দন। ম্যাডামের হাতে ন্যাতা বোলানো স্লাইড নেই। অন্য একটা স্লাইড রয়েছে। ডেস্কের দিকে আড়চোখে তাকায় চন্দন। তার টানা স্মেয়ার ট্রে-র আড়ালে পড়ে রয়েছে। এবার বৃন্দার দিকে তাকায় চন্দন। বৃন্দা চোখের ইশারায় তাকে চুপ করে থাকতে বলছে।
এতক্ষণে বুঝতে পারে চন্দন। বৃন্দা তিনটে স্লাইড টেনেছিল। ম্যাডামকে দুটো দেখিয়েছে। যেটা সবচেয়ে ভালো হয়েছে, সেটা চন্দনকে দিয়েছে। লেখাপড়ার ব্যাপারে অন্যর কৃতিত্বকে নিজের বলে চালাতে কোনওদিনও শেখেনি চন্দন। কিন্তু আজ এই ঘটনা তার মন্দ লাগছে না।
‘বয়েজ অ্যান্ড গার্লস! এবার আমরা স্লাইড স্টেইন করা শিখব। মাইক্রোস্কোপের তলায় লিশম্যান স্টেইন করা স্লাইড দেখে চিনব লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা এবং অনুচক্রিকা। লিশম্যান স্টেইন নামটা এসেছে উইলিয়াম বুগি লিশম্যান থেকে। লিশম্যান একজন স্কটিশ প্যাথলজিস্ট যাঁর জন্ম গ্লাসগোতে। ব্রিটিশ আর্মিতে চাকরি করতেন এবং ইন্ডিয়াতেও এসেছিলেন। ওঁর তৈরি লিশম্যান স্টেনে রাঙানো স্লাইড দেখেই কলকাতা শহরে বসে স্যার রোনাল্ড রস ম্যালেরিয়ার মশার জীবনচক্র আবিষ্কার করেছিলেন।’
প্রবাল কাঁচুমাচু মুখে বলল, ‘ম্যাডাম, আজকে ছেড়ে দিন না! এক সপ্তাহ বাড়ি যাইনি। আজ শনিবার।’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ ম্যাডাম! আজ ছেড়ে দিন। প্লিজ!’ সমবেত গুঞ্জন ওঠে ফিজিওলজি প্র্যাকটিকাল রুম থেকে।
‘ঠিক আছে। আজ স্মেয়ার টানা শিখলে। আগামী বুধবার স্টেইন করা শিখবে। যাও। আজ ছুটি।’ পিএম প্র্যাকটিকাল রুম থেকে বেরিয়ে যান। বৃন্দা চন্দনকে বলে, ‘আঙুল থেকে লিউকোপ্লাস্ট খুলে ফেল। অনেক অ্যাক্টিং করেছিস।’
চন্দন বৃন্দার দিকে তাকিয়ে অভিমানী কণ্ঠে বলে, ‘আমি অ্যাক্টিং করতে পারি না। অ্যাক্টিং করছিস তুই।’
‘আমি?’ চড়াত করে নিজের তর্জনী থেকে লিউকোপ্লাস্ট খুলে বৃন্দা বলে, ‘সূচেরদাগটা অ্যাক্টিং বুঝি?’
‘জানি না।’ ফিজিওলজি প্র্যাকটিকাল রুম থেকে বেরোতে বেরোতে বলে চন্দন।
মেচেদা স্টেশনে চন্দন নামল দুপুর আড়াইটার সময়। কলেজ থেকে বেরিয়ে শিয়ালদা কোর্টের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্টেটবাসে উঠে হাওড়া স্টেশানে আসতে সময় লেগেছে আধঘণ্টা। দুপুরে মহাত্মা গাঁধী রোড মোটামুটি ফাঁকা থাকে। বড়বাজার এলাকায় সরু রাস্তা, একাধিক সিগন্যাল, ট্রামলাইন আর বেআইনি পার্কিং-এর কারণে বাঘমার্কা স্টেটবাসও কচ্ছপের গতিতে চলে। হাওড়া ব্রিজে উঠে লেট রান মেকাপ করে নেয় বাস।
দুপুরের মেচেদা লোকাল একদম ফাঁকা। গোটা কামরায় দুটো লোক। সিটে শুয়ে, মাথার নীচে ব্যাকপ্যাক রেখে চন্দন একপ্রস্ত ঘুমিয়ে নিল। বাগনান স্টেশনে একগাদা স্কুলছাত্রী উঠল। তাদের বসার জায়গা দিতে গিয়ে চন্দনের ঘুম ভেঙে গেল। বেজায় খিদে পেয়েছে। তিন টাকা দিয়ে এক প্যাকেট বাদাম কেনে চন্দন। এই রুটে মেচেদার সিঙাড়া আর ভেজিটেবিল চপ খুব বিখ্যাত। তবে চন্দন ওগুলো খায় না। চপ বা সিঙাড়া পাঁশকুড়ার একটা দোকানে তৈরি হয়। সেখান থেকে পাইকারি হারে কিনে সব হকার বিক্রি করে। তারা যেমন খুশি দাম নেয়। তিনটে চপের দাম অফিস টাইমে দশ টাকা। অন্য সময়ে ছ’টাকা। দিঘার ট্রেনে, যেখানে সবাই ট্যুরিস্ট, তিনটে চপের দাম হয়ে যায় পনেরো টাকা।
ঘুম ভাঙার পরে চন্দনের মনে পড়ল, সে এতক্ষণ একটা স্বপ্ন দেখছিল। ওড়নার মতো হালকা, কুয়াশার মতো ক্ষণস্থায়ী স্বপ্নটি স্কুলপড়ুয়াদের কলকলানিতে ভেঙে গেছে। মিষ্টি ব্যথার মতো সেটা বুকের বাঁদিকে তপতপ করছে।
এক ফোঁটা রক্ত! চাঁপার কলির মতো একটি তর্জনী। নরম একটা হাত। চোখের হালকা ইশারা। একটা মেয়ে। তার দু’গালে টোল।
বৃন্দা ব্যানার্জি।
মেচেদা স্টেশনের ফ্লাইওভার দিয়ে দৌড়ানোর সময় চন্দন দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে রাখল। ‘কাল হো না হো’ সিনেমায় ‘হর ঘড়ি বদল রহি হ্যায় রূপ জিন্দেগি’ গানটা গাইবার সময় শাহরুখ খান এই কায়দায় দৌড়েছিল। তবে শাহরুখের জন্য ম্যানহাটানের রাস্তা আছে, মনীশ মলহোত্রর বানানো ডিজাইনার পোশাক আছে, সোনু নিগমের মখমলি গলা আছে। চন্দনের কিসসু নেই। বৃন্দার গালে প্রীতি জিন্টার মতো টোলের স্মৃতি ছাড়া।
সবজিউলির ধমকানিতে হুঁশে এল চন্দন। দৌড়তে দৌড়তে সে ফ্লাইওভারের সিঁড়ি বেয়ে নেমে বাসস্ট্যান্ডে চলে এসেছে। আর একটু হলেই রাস্তায় সাজানো পাতিলেবুর ডালা উলটে দিচ্ছিল। তাড়াতাড়ি সবজিউলির কাছে ক্ষমা চেয়ে তড়াক করে নতুনগ্রামের বাসে উঠে জানলার ধারে বসে। পৌঁছতে আধঘন্টা লাগবে। পকেট থেকে মোবাইল বার করে নন্দনকে ফোন করে। দাদাকে বলে দেওয়া যাক যে দুপুরে বাড়ি ফিরে ভাত খাবে।
‘বল।’ ভারী গলায় ওপার থেকে বলে নন্দন।
‘আমি দুপুরে খাব। মাকে বলে দে।’
‘আগে বলিসনি কেন? আড়াইটের সময় ভাত থাকে?’
‘ঠিক আছে। আমি হোটেলে খেয়ে বাড়ি ঢুকছি।’
‘পাকামি না করে বাড়ি আয়।’ নন্দন ফোন কেটে দিয়েছে। চন্দন জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়। হুহু করে পেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক জনপদ। বুড়ারি, কাঁকটিয়া, ডিমারি, রত্নালি, মানিকতলা। ধানখেত, কাঁচাবাড়ি, পাকাবাড়ি, দোকানপাট, গরু-ছাগল চলে যাচ্ছে পিছন পানে। কলকাতা শহর মুছে যাচ্ছে। চন্দন সরকার ফিরে আসছে পুরনো ঠিকানায়। নতুনগ্রামে। সঙ্গে নিয়ে আসছে একজনের চোখের ইশারা, গালের টোল, চুলের উড়ে যাওয়া।
‘নতুনগাঁ, নতুনগাঁ…’ হাঁক পাড়ছে কন্ডাক্টর। বৃন্দার কথা ভাবতে ভাবতে ভাড়া দিতে ভুলে গিয়েছিল চন্দন। বাস থেকে নামার সময় কন্ডাক্টারের হাতে পাঁচ টাকা গুঁজে দিয়ে নেমে যায়।
পাঁশকুড়ার সিঙাড়ার মতো এই রুটের বাসভাড়াও চন্দনের আগ্রহের বিষয়। মেচেদা থেকে নতুনগাঁ, এই পনেরো কিলোমিটার দূরত্বের জন্য অন্তত তিন রকমের ভাড়া আছে। কন্ডাক্টর প্যাসেঞ্জারের কাছে ভাড়া চাওয়ার পরে, প্যাসেঞ্জার যদি বলে ‘ছ’টাকা’, তাহলে কন্ডাক্টার বুঝে যায় যে এ ডেলি প্যাসেঞ্জার। তার কাছ থেকে ছ’টাকাই নেয়। যদি প্যাসেঞ্জার বলে ‘নতুনগাঁ’, তাহলে কন্ডাক্টার বুঝতে পারে, এ নতুন যাত্রী। তার কাছ থেকে আট টাকা নেয়। যদি কোনও প্যাসেঞ্জার বলে ‘স্টুডেন্ট’, তাহলে কনসেশন করে তার কাছ থেকে পাঁচ টাকা নেয়। চন্দনের মতো স্কুলড্রেসহীন কলেজ ছাত্ররা পুরনো অভ্যাসবশত পাঁচ টাকা ধরালে কন্ডাক্টর আইকার্ড দেখতে চায়। তখন একপ্রস্ত ঝগড়া হয়।
চন্দন ঝগড়ার সুযোগ দিল না। কন্ডাক্টরের হাতে টাকা গুঁজে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে সে। এক সপ্তাহ বাদে বাড়ি ফিরতে পেরে মনটা খুশি খুশি লাগছে। বিজয় মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে ‘দ্য গ্রেট অলিম্পিক সার্কাস’ এসেছে। সার্কাসের তিনজন বামন রাস্তার ধারে গাছের গুঁড়ির ওপরে বসে রোদ পোয়াচ্ছিল। তাদের মধ্যে থেকে একজন তড়াক করে লাফিয়ে চন্দনের কাছে এসে বলল, ‘বেশি পাকা হয়েছিস, না? হোটেলে ভাত খেয়ে বাড়ি ঢুকবি? মা তোর কথা শুনে খুব খচে আছে!’
নন্দনের কথা শুনে ফিক করে হেসে চন্দন বলে, ‘ঝামেলাটা তো তুই শুরু করলি দাদা!’
বিজয় মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডের উল্টোদিকের সরু রাস্তা ধরে দুই ভাই। অল্প একটু রাস্তা হেঁটে দুজনে আবাসবাড়ি ঢুকল।
শনিবারে হাওড়া কোর্টে ছুটি। পবন বেরোননি। বাড়িতে বসে বেলাকূল পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যা নিয়ে মিটিং করছেন সম্পাদক গোপাল নস্করের সঙ্গে।
পবন বলছেন, ‘দেখো গোপাল, সামনেই পুজো। এই সময় রাজনৈতিক কচকচি কম করা উচিৎ। মানুষ এই সময় ফিল গুড ফ্যাক্টর চায়। একটু নস্ট্যালজিয়া, একটু খাওয়া দাওয়া, একটু বেড়ানো-এইসব। আগামী সংখ্যায় ”পুজোর বেড়ানো”, ”পুজোর সিনেমা”, ”স্বর্ণযুগের বাংলা গান”-এই রকম কতগুলো আর্টিকল থাক। সঙ্গে ছবি। কাশফুল, শিউলি গাছ, দুর্গার কাঠামো। ইস্যু হিট হতে বাধ্য।’
গোপাল বললেন, ‘ভাই পবন, তুমিও সাম্রাজ্যবাদী ফরমুলার শিকার হলে?’
‘এর মধ্যে সাম্রাজ্যবাদ কোথায় দাদা? পুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। বেলাকূল সেটা সেলিব্রেট করবে না?’
‘বাঙালি নয়, বলো হিন্দু বাঙালি। দুর্গাপুজো মুসলমানদের উৎসব নয়।’ আপত্তি করেন গোপাল।
‘আচ্ছা তাই সই। হিন্দু বাঙালির উৎসব। কিন্তু সেটা উদযাপন করতে অসুবিধে কোথায়? আমরা তো ইদ সংখ্যাও বার করি।’
‘দুটোই ট্র্যাপ। দেশের একটা বড় অংশের মানুষ খেতে পাচ্ছে না। তাদের বাসস্থান নেই। পানীয় জল নেই। ইস্কুল নেই। অসুখ হলে ডাক্তার নেই। তা নিয়ে স্টেটের কোনও মাথাব্যথা নেই। তারা জমিবাড়ির দালালি করছে। বহুজাতিক কোম্পানিকে জমি সরবরাহ করা কি সরকারের কাজ? একচেটিয়া পুঁজিপতির পোষা কুত্তা হয়ে সন্দীপ সামন্ত ঘেউঘেউ করে কৃষকদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। ভূমিপুত্রদের উচ্ছেদ করে বলছে, এর নাম শিল্পায়ন। এই বিষয়টা নিয়ে আমি একটা বড় লেখা লিখব। খুকুগদ্যে মা-মাসিদের জন্য এলোমেলো ড্রামা তুমি লেখো।’
দুই বন্ধুর ঝগড়ায় কান না দিয়ে চন্দন নিজের ঘরে ঢোকে। সেখানে ভাতের থালা নিয়ে অপেক্ষা করছেন পারুল। পাশে এক মাঝবয়সি মহিলা। একে চন্দন আগে কখনও দেখেনি।
‘বাবাঃ! কলকাতার জল খেয়ে কী ঝোড়োকাকের মতো চেহারা হয়েছে তোর?’ মৃদু বকুনি দিলেন পারুল।
‘ভ্যাট!’ লজ্জা লজ্জা মুখ করে ব্যাকপ্যাক খাটের ওপরে ফেলে চন্দন বলে, ‘আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসছি। খেয়েদেয়ে ঘুমোব।’
‘আগে দিদিকে প্রণাম কর। তারপর হাত-পা ধুবি।’ মহিলার পায়ের দিকে ইশারা করেন পারুল। চন্দন ঢক করে একটা পেন্নাম ঠুকে দেয়।
‘এমা বৌদি! একি করলে?’ মহিলা আঁতকে উঠে দাঁড়িয়েছে। ‘আমি সিস্টার। চন্দন দুদিন বাদে ডাক্তার হবে। ওর স্থান আমার অনেক ওপরে!’
‘যখন হবে, তখন হবে। তুই চুপ কর তো তাপসী!’ মহিলাকে ধমক দিলেন পারুল। চন্দন কলতলায় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে ঘরে চলে এসেছে। জামাকাপড় পরে ছাড়া যাবে। আপাতত ভাত খাওয়া যাক। পেটে ছুঁচোয় ডন বৈঠক দিচ্ছে।
মুসুর ডাল আর পোস্তবাটা দিয়ে ভাত মাখছে চন্দন। পারুল বললেন, ‘কাকে প্রণাম করলি জানিস?’
‘না!’ মুখে এক গ্রাস ভাত চালান করে চন্দন।
‘তাপসীদি গোপালদার ছোটবোন। ছোটবেলায় বিয়ে হয়েছিল। বর মারা যায়। এখন কলকাতায় থাকে। কোন একটা নার্সিংহোমের হেড নার্স। মাসে একবার বাড়ি আসে। আমাদের বাড়ি আগে কখনও আসেনি। তাই চিনিস না।’ গড়গড় করে বলেন পারুল।
‘হেড নার্স নয়। মেট্রন।’ পারুলকে সংশোধন করে তাপসী। ‘আজকে তোমার বাড়ি আসার একটা কারণ আছে। আমার দাদা যখন তোমাদের বাড়ি আসবে বলে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে, তখন পবনদার ফোন এসেছিল। পবনদার মুখে শুনলাম যে চন্দন বাড়ি আসছে। আমার বসের মেয়েও ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হয়েছে। ভাবলাম, যাই তার সহপাঠীর সঙ্গে আলাপ করে আসি। ফিরে গিয়ে বলব, ‘তুমি যার সঙ্গে পড়ো, সেই চন্দন আমার গাঁয়ের ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফার্স্ট বয়।”
‘কী নাম?’ ভাত খাওয়া শেষ করে পারুলের হাতে থালা ধরিয়ে জানতে চায় চন্দন। এখন একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু খাওয়া যাবে না।
‘বসের নাম সমীরণ ব্যানার্জি। উনি ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজের সার্জারির হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট। আর আমি যে নার্সিংহোমের মেট্রন, তার নাম শান্তিধাম।’
‘না না, আমি মেয়েটার কথা বলছি।’ হাতমুখ ধুতে ঘর থেকে বেরোচ্ছে চন্দন।
‘ওর নাম বৃন্দা ব্যানার্জি। ডল পুতুলের মতো দেখতে। হাসলে গালে প্রীতি জিন্টার মতো টোল পড়ে। চেনো? ওকে?’ জানতে চাইছে তাপসী।
মাথার মধ্যে সোনু নিগম গান ধরলেন, ‘হর ঘড়ি বদল রহি হ্যায় রূপ জিন্দেগি…’ ম্যানহাটানের ল্যান্ডস্কেপ পিছনে রেখে লাল গাউন পরা প্রীতি জিন্টা এক পাক নেচে নিল। তার গালে টোল। তার চোখে অজানা ইশারা। তার তর্জনীতে এক ফোঁটা রক্ত।
‘চিনিস রে?’ জানতে চাইছেন পারুল।
‘চিনি।’ ঘড়ঘড়ে গলায় জবাব দেয় চন্দন।